একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৪৭

0
5712

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৪৭
#লাবিবা_তানহা_লিজা

?
তানিয়া নাঈম ভিষন জগড়া করছে তাও আবার খান বাড়ির গেইটে দাড়িয়ে । তানিয়ার পাপা আর বড় পাপা দুতলা থেকে দাড়িয়ে দেখছে । ছেলে মেয়ের ভেজালে যাওয়া উচিত নয় জন্য তানভীরকে ডাক পাঠায় । তানভীর গেইটে এসে দাড়াতেই তানিয়া নাঈম বিচার দিতে দৌড়ে আসে তানভীরের কাছে । তানিয়া তানভীরের হাত ধরে বলে — ভাইয়া নাঈম আমার বি এফ হয়ে কনের বাড়ির লোক কেনো হবে ? এ বাড়ির হবু জামাই সে । বর পক্ষ হয়ে থাকবে তা নয় কনে পক্ষ হয়ে যাবে । ও দুদিন থেকে কনে বাড়িতে কি করছে এখানে না থেকে ।
নাঈম তানভীরের আরেক হাত ধরে বলে –ভাইয়া আপনি বুঝান এই পাগলী টাকে । এ বাড়িতে এসে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব ? তানিয়া আমার জীবনে আসার আগে লাবিবা আমার জীবনে এসেছে ।আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ও ।ওর বাসায় অনেক রাত থেকেছি আমি । আমার ফেমেলিও বিয়েতে কনে পক্ষ হয়ে আছে । আমি কিভাবে এখানে থাকবো ?
তানিয়া রাগ নিয়ে বলে –কেনো থাকতে পারবেনা শুনি ? এ বাড়ির হবু জামাই তুমি । তুমি আলবাদ থাকবে। তোমার বড় শেলকের বিয়েতে তুমি বর পক্ষ হবে । এই নিয়ে আবার দুজনের জগড়া লেগে যায় । তানভীর দুজনকে থামিয়ে বলে –রাস্তায় দাড়িয়ে এসব কি হচ্ছে ? নাঈম হবু জামাই..জামাইতো নয় । বাংলাদেশ এখনো এতো ডিজিটাল হয়ে উঠেনি যে হবু জামাই হবু শশ্বুর বাড়ি এসে থাকবে । বিয়ে বাড়ি অনেকেই আসে থাকে নাঈম থাকলেও কেউ কিছুই ভাববে না । কিন্তু তার একটা আত্মসম্মান আছে তাই ও থাকবেনা ।
তানিয়া মন খারাপ করে বলে –ওও আমার বেলায় যতো যা..ভাবির বেলায় তো হয়নি । ভাবি তো অনেক দিন ই থেকেছে এখানে। তুমি লন্ডনে থাকতেও তো ভাবী এখানে এসে থেকেছে।
–হা থেকেছে কিন্তু সে তোমার ভাবী হবার পর ই থেকেছে হবু ভাবী হয়ে নয় । এখন তুমি যদি নাঈমকে রাখতে চাও তাহলে হয় বিয়ের পর রাখবে নয়তো ভাই হিসেবে রাখবে । নাউ ইউর চয়েজ ।
–কিহহহ ও আমার ভাই হবে কোন সুখে ? আমার তো একটা মাত্র ভাই তুমি আর একটা মাত্র জামাই ও ।
–পাগলামী অনেক করেছিস এখন বাসায় যা । হাতে কি রে তোর?
তানিয়া ব্যাগটা আরো পিছু লুকিয়ে বললো –নাঈম দিয়েছে। আজ পরবো । আমাকে কেমন লাগে পরে দেখতে চায় ।
নাঈম লজ্জা পেয়ে বলে –ভাইয়া আমি তাহলে আসি । বিকালে দেখা হচ্ছে । নাঈম চলে যেতেই তানিয়া এক দৌড়ে বাসার ভিতরে চলে আসে ।
রাজীবের গাড়ি এসে ঢুকে খান বাড়িতে । রাজীব আর রাজন এসেছে । রাজীব এসেই সরি সরি বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে । সবার একটাই অভিযোগ আগে কেনোএলো না । সবাইকে সরি বলতে বলতে নাজেহাল অবস্থা । রাজন রাজিবের পিছু পিছু চুপটি করে ঘুরছে।তানভীর রাজনের পিঠে দু থাপ্পর দিয়ে বলে –এই যে হ্যান্ডসাম । হাউ আর ইউ ? অনেক দিন পর..মনে আছে তো আমাকে ? রাজিব হেসে বলে –তোকে ভুললেও তোর পাঞ্চটা কখনো ভুলেনি । এমন ঐষধ দিয়েছিস আজ পর্যন্ত একটা প্রেম ও করে নি । পাপা মেয়ে ঠিক করেছে ওর জন্য । তার সাথেই একটু আধটু চলে আর কি ।
–বাহহ গুড বয় ।
–হুম । তুই না করেছিলি তাই আসতে চায়নি খুব জোর করে ধরে এনেছি ।
দুজনে হেসে ফেলে । রাজন এখনো লজ্জা পাচ্ছে । সোহানা কফির মগ হাতে এনে বলে –রাজীব তুমি তো ছেলে পক্ষ কিন্তু আখি তো কনে পক্ষ হয়ে গেলো। দুইজন দুই দিকে এটা কেমন ব্যপার বলোতো ?
রাজীব হাতে মগ নিয়ে বলে –ও আন্টি আপনি আখির কথা বলছেন ? ও তো এখন আমার সুন্দরী বেইয়ান । ইনজয় হপ্পে খুব । সোহানা কান মলে দিয়ে হাসতে হাসতে চলে যায় ।
লাবিবা বিয়ের লেহেংগা গহনা হাতে নিয়ে লাফাচ্ছে । এসবের জন্য ই তো বিয়ে করতে চেয়েছিলো ?। সবাই কতো কতো গিফ্ট দিয়ে যাচ্ছে ..উফ লাভলি? আই লাভ গিফ্ট। দরজায় একের পর এক নক করেই যাচ্ছে । দরজা খুলে দিতেই সাবিনা সখিনা ঢুকে হাতে খাবার নিয়ে । ব্যপারটা কি বুঝতে পারে না । অনান্য দিন বকেই একবারে খাটের নিচে ঢুকিয়ে দিতো আর আজ কিছুই বললো না । খাটে বসিয়ে সাবিনা একের পর এক লোকমা খাইয়ে দিচ্ছে । সখিনা মাথায় হাত বুলিয়ে আদর দিচ্ছে । মাঝে মাঝে আচল দিয়ে আঢ়ালে মুখ মুঝছে । এতোক্ষন না বুঝলেও এবার লাবিবা ঠিক ই বুঝে নিয়েছে । তার চোখ থেকেও দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়ছে । সাবিনা চোখ মুছিয়ে দিয়ে পানি খাইয়ে চলে যায় । অনেককিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু কিছুই বলতে পারলো না । বাইরে এসে দেখে সবার মুখে হাসি হৈ হুল্লোড় লেগেই আছে শুধু নিজের মানুষ গুলোর ই নেই । তবে মুখ জুড়ে আছে তৃপ্ত ভাব। লাবিবা ইসমাইলের পাশে গিয়ে বসে । বাবার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে অশান্ত তৃপ ভেজা মুখটি । ইসমাইল লাবিবার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে –আম্মু খেয়েছো ?
–হুম । আচ্ছা আমাকে কি এখনি বিদায় করে দিচ্ছো তোমরা ? সবাই এমন মুখ করে থাকলে আমি কিন্তু কাদবো এখনি পরে বিয়েই করবো না ।
ইসমাইল কিছু বলতে পারে না কথা আটকে আটকে আসছে । না পেরে কেদেই দেয় লাবিবাকে বুকে নিয়ে । বাবা মেয়ের কান্না শুনে অনেকেই দৌড়ে আসে । বেলাল লাবিবাকে আলাদা করে ইসমাইলকে বকতে থাকে এমন করার জন্য অথচো তার দু চোখ ও ভেজা ‌ । শারমিন নুপুর লাবিবাকে নিয়ে রুমে চলে আসে । লাবিবা কাদতে থাকে । একে চুপ করানো বড্ড দায় । সাজানোর জন্য মেয়েরাও চলে আসে । অথচ লাবিবাকে চুপ করানো যায় না । উপায় না পেয়ে আখি রাজিবকে ফোন দেয় । রাজিব ফোন ধরতেই বলে –তানভীর ভাইয়াকে দাও তো ।
–ও এখন বর সাঝছে । কি বলবে আমাকে বলো ।
–তুমি ভাইয়াকে দাও তো । বর পরে সাঝবে আগে কথা আছে ।
তানিয়া রেড়ি হয়ে তানভীরের রুমে এসে দেখে তানভীর শেরওয়ানি পড়ছে । তানিয়া বলে উঠে –ভাইয়া তোমার এখনো শেরওয়ানি পড়া হয়নি ..পরে দেখবে বড় পাপা চিল্লাবে নাম নাম বলে । তানভীর তানিয়ার দিকে তাকিয়ে অবাক । পুরো বউয়ের সাজে আছে তানিয়া । হাতে দোপাট্টা ভাজ করে নেওয়া । তানভীর হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঢ়াথায় ঘোমটা দিয়ে দেয় । ভ্রু উচিয়ে বলে –বরের বোনের সাজ নয় এটা কনের সাঝ এটা । বউ সেজেছিস তুই ?
তানিয়া রাজিব তানভীরের দিক তাকিয়ে কাচু মাচু করতে থাকে । তানভীর ধমক দিয়ে বলে –অমন করবিনা আমার সামনে । এই ড্র্যাস নাঈম দিয়েছে সকালে ? কেনো ?
— ভাবি বউ সাঝবে সুন্দর লাগবে । আমাকেও বউ সাঝলে কেমন লাগে দেখতে চায় ও। মিনমিনিয়ে বলে।তানভীরকে রাজিব ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলে
–ধমকা ধমকি পরে কর আগে কথা বল আখি কি জানি বলবে।
তানভীর ফোন ধরে হ্যালো বলতেই আখি বলে উঠে –আপনি বর সাজছেন আর এদিকে আপনার বউকে সাজানোই যাচ্ছে না । কন্টিনিউয়াসলি কেদে যাচ্ছে ।
তানভীর মুচকি হেসে তানিয়ার মাথায় হাত রেখে বলে
–কাদতে দাও ওকে । আজকেই তো কাদবে । যতো ইচ্ছা কাদুক । ওইভাবেই সাজাও।ওকে ফোনটা দাও তো ।
আখি অবাক হয়ে যায় । যাকে ফোন দিলো কান্না থামানোর জন্য সেই বলছে কাদতে । কাদলে মেকাব করবে কিভাবে মাথা কাজ করছে না । লাবিবা ফোন নিয়ে কানে ধরতেই তানভীর বলে উঠে –তুমি নাকি কাদছো ? যত ইচ্ছা কাদো কোন প্রবলেম নেই বাট কাদতে কাদতে বউ সাজতে হবে আর ওরা যখন মেকাব করবে তখন চোখের পানি স্টপ করতে হবে পারবেনা ?
— হুম ।
–তাহলে ওদের সাজাতে দাও কেমন ? রাখছি ।
লাবিবাকে ওভাবেই সাজানো হলো । মেকাবের সময় লাবিবা চুপ চাপ ছিলো দেখে সবাই হেসে ফেলে ।
বর যাত্রীকে নামানোর জন্য ছেলেদের থেকে মেয়েরাই আগে হুমড়ি খেয়ে পড়ে । নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা আদায় করে ফিতা কেটে ঢুকতে দেয় । রাজিব তো এসছে থেকে আখিকে জালিয়ে মারছে । বেইনি বেইনি করে কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে । মাঝে মাঝে বেজায়গায় চিমটিও দিচ্ছে । আখি প্রানপন দূরে থাকার ট্রাই করছে । কেউ এসব দুষ্টু মি দেখে ফেললে কান কাটা যাবে লজ্জায় । রাজিব একদমি পিছু ছাড়ছে না । মুইন এসেছে বিয়েতে । তানভীরের পাশে বসে এক ধ্যানে নুপুরের দিকে তাকিয়ে । আনিস থাকায় ধারে কাছে ঘেসতে সাহস পাচ্ছে না অথচ দুজনের চোখে দুজনে আটকে আছে । কাজী সাহেব এসেছে বিয়ে পড়ানোর জন্য । কনেকে আনতে বললে শারমিন জেমি বিনা যায় লাবিবাকে আনতে । লাবিবাকে নিয়ে এসে তানভীরের পাশে বসিয়ে দেয় । সবাই দেখে মাশাআল্লাহ বলে নতুন জুটির জন্য দোয়া করে । তানভীর এক ধ্যানে লাবিবার দিকে তাকিয়ে । লাবিবার চোখে চোখ পড়তেই বলে– মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর আমার বউটা । লাবিবা লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে তাকায় । দুজনের বিয়ে পড়াতে বসে কাজী সাহেব । উকিল বাবা হন বেলাল সাহেব । তানভীর এক মিনিট বলে উঠে । আখিকে জিজ্জাসা করে তানিয়া কোথায় ? আশে পাশে তানিয়াকে দেখা যায় না । খেয়াল করে নাইম ও নিরুদ্দেশ। তানভীর ফোন দেয় তানিয়ার ফোনে । কিছুক্ষনের মধ্যেই নাঈম তানিয়া মাথা নিচু করে এসে দাড়ায় কারন সবার দৃষ্টি তাদের দিকেই । তানভীর বলে –আমার বোন এসে গেছে । কাজী সাহেব বিয়ে পড়ান আপনি । কাজী তানভীরের থেকে কবুল নিয়ে লাবিবাকে কবুল বলতে বলে । লাবিবা ইসমাইলের দিকে তাকিয়ে ঠোট ভেঙে কাদে । ইসমাইল ভিড় ঠেলে লাবিবার পাশে এসে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে কান্না বন্ধ করতে বলে । কান্না বন্ধ করে কবুল বলে আবারো কেদে দেয় । কাজী সাহেব উঠতে নিলে তানভীর আটকে দিয়ে বলে –কাজী সাহেব আরেকটা বিয়ে পড়াতে হবে আপনাকে এখন । সবাই অবাক হয়। আবার কাকে বিয়ে পড়াবে ? তানভীর আসন থেকে উঠে লাবিবাকেও উঠিয়ে দেয় । তানিয়া নাঈমকে বলে বসে পড়তে । দুজনেই অবাক হয় তানভীরের এমন কাজে । বসতেই তানভীর খান ফেমেলি আর নাঈমের ফ্যামিলিকে উদ্দেশ্য করে বলে
— আমি জানি সবাই আমার কথায় অবাক হয়েছেন । তানিয়া আর নাঈম দুজন দুজনকে ভালোবাসে গত চার বছর ধরে । আমাদের দুই পরিবার ই ওদের সম্পর্কে সম্মতি দিয়েছেন। ওরা নেহাত ছোট কিন্তু বিবাহযোগ্য । আমি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে ওদের বিয়ের দেরি করতে চাই না । দুবছর পর সময় টা কম মনে হলেও তাদের কাছে কতটা বিশাল তা আমি ভালো ভাবেই জানি । তাই আরসময় নষ্ট করতে চাই না । ভাই হিসেবে আমি আমার বোনকে সুপাত্রের হাতে তুলে দিতে চাই । আশা করি আপনারা সবাই অমত করবেন না ।
সবাই ভাবনায় পড়ে যায় । তানিয়া নাঈম মনে মনে দোয়া পড়তে থাকে যেনো কেউ না না বলে দেয় । নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ফিরোজ সায় দেয় বিয়ে পড়ানোর জন্য । তানিয়া নাঈম দু দুজনের দিক তাকিয়ে হাসে । তাদের বর কনের গেট আপ নেওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো তানভীরের চোখে পড়ার । তানভীর ই পারে তাদের এক করে দিতে । বছরের পর বছর দুরে থাকা খুবই কষ্টের হয়ে যাচ্ছে ।
কাজী নাঈম তানিয়ার বিয়ে পড়ায় ।
মুইন এসে ভিড়ের মধ্যে নুপুরের হাত ধরে । নুপুর চিল্লাতে গিয়ে পাশে ফিরে দেখে মুইন দাড়িয়ে । মুইন চুপ চাপ শক্ত করে নুপুরের হাত ধরে দাড়িয়ে থাকে। কেউ কোনো কথা বলে না । মুইন আনিসকে না দেখতে পেয়ে সাহস পায় অনেক । নুপুর ও কিছুক্ষন পর শক্ত করে ধরে মুইনের হাত । মুইনের ঠোটে মিস্টি হাসি রেখা ফুটে উঠে যা দৃষ্টিগোচর হয় না নুপুরের ।

To be continue_____

@লাবিবা______?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here