একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৪৮
#লাবিবা_তানহা_লিজা
?
শ্বশুর বাড়িতে ড্রয়িং রুমে বসানো হয়েছে লাবিবাকে। আশে পাশে অনেকেই আছেন । সবাই লাবিবার দিকে তাকিয়ে লাবিবার কান্না দেখছে । আসার সময় আব্বু আম্মুকে ধরে যে কি পরিমান কান্না করেছে তার রেস এখনো বিন্দু মাত্র কমে নি । সবাই হা হয়ে সেই কান্না সিক্ত মুখটাই দেখছে । তবে একটু আগের হৃদয় বিদারক কান্না একটু সফটলি হয়েছে । সবাই বুঝাচ্ছে লাবিবাকে মেয়েদের একদিন পরের বাড়ি আসতেই হয় । আর সে তো কাল আব্বুর আম্মুর কাছে যাচ্ছেই। পাশাপাশি এলাকা ইচ্ছা হলেই চলে যেতে পারবে ।
কারো কোন কথাই কান দিয়ে যাচ্ছে না লাবিবার । তানিয়া আর লাবিবা দুজনেই নতুন বউ অথচ লাবিবা বসে বসে কাদছে আর তানিয়া খুশি মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে ।তানিয়ার বাসর রাতের আয়োজন এখানেই করা হয়েছে । তানভীর নাঈম তাদের ফ্রেন্ডদের সাথে দাড়িয়ে গল্প করছে । তানিয়া কিছুক্ষন পর পর কুক , জুস, কফি পাঠিয়ে দিচ্ছে । আনন্দ যেনো আর ধরে না । লাফাতে লাফাতে ছেলেদের আড্ডাতেই চলে এলো । পেছন থেকে তানভীরের গলা জড়িয়ে আদুরে গলায় বলে –থ্যাংক ইউ সো মাচ ভাইয়া । আই লাভ ইউ ভুরিভুরি । তানভীর কিছু না বলে মুচকি হাসে । গলায় তানিয়ার হাতে হাত রেখে দাড়িয়ে গল্প করে । নাঈম তানয়িরা কান্ড দেখে মুচকি হেসে বলে পাগলি আমার একটা । সব শেষে লাবিবাকে তানভীরের রুমে আনা হয় । রুমের অবস্থা দেখে লাবিবা আরো কেদে ফেলে । পুরো রুম অর্কিডে সাজানো । বেডের মাঝখানে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে তানভীর❤লাবিবা লেখা । লাবিবা মস্তিস্ক জানান দিয়ে উঠে লাব্বু আজ তোর আর ডলফিনের বাসর রাত । এতো স্পেশাল একটা রাত তাও এতো সুন্দর করে সাজিয়েছে রুমটা অথচ এগুলোর কিছুই চায় না লাবিবা । একগুচ্ছ কালো গোলাপ চেয়েছিলো দিলো না ডলফিনটা । কাদতে কাদতেই বলে সকাল হোক তোর গাছ যদি আমি না কেটেছি তাহলে আমিও রানী এলিজাবেথ না হুহ..। বাই দ্যা রাস্তা এলিজাবেথ কি বিয়ে করেছে ? তার কি ছেলে মেয়ে আছে ? তিনি কি নাতির ঘরের পুতি ,পুতির ঘরের হুতি , হুতির ঘরের মুতি, মুতির ঘরের গুতির মুখ দেখেছে ? না দেখলে নাইবা দেখবে কিন্তু আমি তো দেখবোই । আমার রেডিমেট বাচ্চা চাই । ঐ স্যারের কাছে তো যাবোই না একদম । যে ভারি আল্লাগো আল্লাহ যেভাবে চিপকাইয়া ধরে মনে তো হয় মরেই গেছি অলরেডি । আমার আবার মরার শখ নাই । আমার বিয়ে হয়ে গেছে । জামাইকে এখনি বিধবা করতে চাই না । বিছানার মাঝখানে বসেই ফোন হাতে নেয় । ফোনের ওয়ালপেপারে ফেমেলি ফটো দেখে লাবিবা আবার কান্না শুরু করে আব্বু…আম্মুনি.. আব্বু .. বলে । লাবিবাকে নিয়ে তানভীরের আর কোন চিন্তা নেই । লাবিবা এখন থেকে তানভীরের বুকেই থাকবে । পুতুল বউটা বাচ্চাদের মতো করে কাদছে । তানিয়া এসে তানভীরকে হাত ধরে টেনে বাসর ঘরে নিয়ে যায় । এভাবে ফ্রেন্ড দের সামনে দিয়ে আনাতে তানভীর ভাবে কাজ টা ঠিক হলো না তাই বিরক্ত প্রকাশ করে । কিন্তু ফ্রেন্ডরা সাথে সাথেই আসে । দরজার সামনে দাড়াতেই কয়েকজন পথ আটকায় । সবাই হাসতে শুরু করে । একজন বলে –টাকা ছাড়া কিভাবে ঢুকছেন ভাইয়া ? এতো সুন্দর করে বাসরঘর সাজালাম এতো কষ্ট করলাম অথচো আমাদের টা না বুঝিয়ে দিয়েই বউয়ের কাছে চলে যাবেন তা কি করে হয় ? তানভীর ভিতরে উকি দিয়ে দেখে বেশ ভালোই সাজিয়েছে এরা বেডের মাঝখানে লাবিবা কাদছে আর ফোনে কথা বলছে । তানভীর সিউর আব্বু আম্মুনির সাথে কথা বলছে । কাউকে কিছু না বলেই তানভীর চলে যেতে নেয় । সবাই অবাক হয়ে পিছু দৌড়িয়ে আটকে দেয় তানভীরকে । তানভীর হেসে বলে –তোমরা শুধু শুধু সাজিয়েছো। আজকে তো আমার বাসর হবে না । আজ ঘুম হবে । তোমরা যদি নাও ঢুকতে দাও তাহলে আমি অন্যরুমে ঘুমিয়ে নিচ্ছি । সবাই রাগ দেখিয়ে বলে –টাকা না দেওয়ার ধান্দা তাই না ? তানভীর হেসে বলে –আজ আমার বোনের বাসর রাত । চলো তাকে বাসর ঘরে পৌছে দিয়ে আসি । তানিয়া লজ্জায় লাল হয়ে গেলো । তানভীর হো হো করে হেসে বলে –তোকে আপেলের মতো লাগছে । কিন্তু তুই লাল হচ্ছিস কেনো টমেটোর মতো ? টমেটো শুধু তোর ভাবিই অন্য কেউ হবে না মনে রাখিস । চল রুমে চল ।
তানিয়া তানভীর খাটে বসে, নাঈম রাজিব আখি সোফায় বসে । রাজিব একপ্রকার রেগেই বললো –এটা কি শুরু করেছিস তানভীর ? লাবিবা কাদছে ওকে চুপ না করিয়ে তুই এদিক সেদিক করে ঘুরছিস ?
আখি বললো –এতোদিনের ভালোবাসা কই গিয়ে একসাথে টাইম স্পেন্ড করবে তা না বলে অন্য রুমে ঘুমোবে ।
তানিয়া গাল ফুলিয়ে বলে –তুমি টাকা দিবেনা জন্য অমন করছো তাই না ?
তানভীর পকেট থেকে কার্ড বের করে তানিয়ার হাতে দিয়ে বলে –যতো ইচ্ছা ততো খরচ করিস । আজ তোর ভাবি কেদেই রাত পার করবে । বাসরের কথা মাথাতেও আনা যাবে না ।
–কেনো যাবেনা ?
–বুঝিস না তোরা ? মান সম্মান খোয়াতে চাস নাকি আমার । অন্য কোথাও হলে ভাবা যেতো বাট এই বাড়িতে দুষ্টু পুতুলের সাথে বাসর আমার ভাবনারো উপরে । আখি আমার রুমে কয়েক প্যাকেট টিস্যু বক্স পাঠানোর ব্যবস্থা করো । যে মেয়ে রোমান্স করার ভয়ে এতো ভালোবাসার পরও বলে বিয়ে করবেনা তাকে …ছাড় ওসব কথা ।
কেউ কিছু বললোনা । কারন লাবিবা সম্পর্কে সবাই অবগতো । সে যদি না চায় তাহলে তার ধারে কাছে যাওয়া মুশকিল । চিল্লিয়ে পুরো খান বাড়ি তুলে ফেলা তার জন্য কিছুই না । তানভীরের জন্য মায়া লাগছে । তানভীর উঠে দাড়িয়ে কলার ঠিক করে বললো –আমার ঘুম পাচ্ছে । আমি আসছি প্লিজ । তানভীর নিজের রুমে আসতেই আখি কয়েক প্যাকেট টিস্যু বক্স দিয়ে যায় । তানভীর অবলিলায় টিস্যু বের করে লাবিবার সামনে ধরে । লাবিবা নিয়ে চোখ নাক সহ মুছে ফেলে দেয় । তানভীর আবারো বের করে সামনে ধরে । এভাবে একের পর এক টিস্যু বক্স খালি হতে থাকে । তানভীরের মুখে মৃদু হাসি । সে একমনে তার কান্না কুমারিকেই দেখতে ব্যস্ত । কাদলে যে কাউকে এতো কিউট লাগে লাবিবাকে না দেখলে জানাই হতো না । বিয়ের সাজে এত্তো সুন্দর কাদতে পারো তুমি পুতুল বউ.. । তোমার এই রুপ দেখেই রাতের পর রাত কাটাতে পারি আমি । আর কিচ্ছু চাই না তোমাকে ছাড়া । তোমার হাসিটা যেমন সুন্দর তেমনি সুন্দর তোমার কান্না । আমার মাঝে মাঝে এই কিউট কান্নাটা দেখতে ইচ্ছা হলে কিন্তু তোমাকে কাদাবো । কোন অভিযোগ রাখতে পারবে না ।
লাবিবা শুনে বলে –এতো কেনো ভালুপাসেন আমায় ?
–ভালুপাসার কারনে ভালুপাসি আর কিছুই জানিনা।
–থ্যাংকু । আমি এখন কাদবো স্যার । আব্বুকে দেখতে ইচ্ছে করছে । একটু কাদি ?
তানভীর লাবিবার কোলে মাথা রেখে লাবিবার হাত দুটো নিজের মাথায় রেখে দেয় । যার অর্থ চুল টেনে দিতে দিতে কাদো। লাবিবা তাই করে । তানভীরের চুল টেনে দেয় আর আব্বু আব্বু করে কাদে । তানভীর লাবিবার চোখ মুছে দেয় বার বার । চোখে ঘুম চলে আসে । আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পরে ।
সকালে সোহানা এসে ঢেকে গেছে একবার । ঘুম থেকে উঠতে দেড়ি হচ্ছে তাই মমতা আসে ঢাকতে । একের পর এক দরজা ধাক্কাতে থাকে । তানভীর জেগে যায় । আসি বলে উঠতে নিলে দেখে লাবিবার কোলে শোয়ে আর লাবিবা ওভাবেই সোজা হয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে । উঠে একবার লাবিবার ঘুমন্ত মুখটা দেখে নেয় । কতো নিষ্পাপ লাগছে দেখতে । দরজা খুলে দিয়ে বলে –ওহ ছোট মাম্মা আসো ভিতরে আসো । মমতা ভিতরে না গিয়ে দরজা থেকেই লাবিবিকে দেখে চোখ উপরে । তারাহুরো করে ভিতরে ঢুকে বলে –একি লাবিবা এখনো বিয়ের সাজেই আছে ! এতো ভারি ড্রেস গহনায় মেয়েটা ঘুমোতেও পারেনি হয়তো ভালোকরে । বালিশ ছাড়া কিভাবে ঘুমুচ্ছে দেখো । লাবিবার পাশে বসে লাবিবাকে ঘুম থেকে উঠায় । ঠেলে বাথরুমে পাঠিয়ে দেয় । যত্ম করে শাড়ি পড়িয়ে নিচে নিয়ে আসে । সবার সাথে বসে ব্রেকফাস্ট করে । সবাই খুব মজা করে ব্রেকফাস্ট টেবিলে নতুন দুই দম্পতিকে নিয়ে । একে একে সব আত্মীয় স্বজন চলে যায় । মমতা শুধু ভাবছে আর ভাবছে । ভাবুক মুখটা সোহানা অনেকবার খেয়াল করেছে । এবার কিচেন ফাকা পেয়ে জিজ্জাসা করেই বসলো –মমতা কি হয়েছে ? তোকে খুব টেন্টস লাগছে। মমতা ফিস ফিস করে বলে –আপু গো আমাদের মেয়ের তো বাসর হয়েছে সিউর কিন্তু ছেলের তো বাসর হয়নি । সকালে দেখি বিয়ের সাজেই আছে । একথা শুনে সোহানা একদম হেসে নিলো । মমতাকে ঠোকা দিয়ে বলে –তো কি হয়েছে ? তোর কি নিজের বাসর রাতের কথা মনে পড়ে গেছে ?আজ হয়নি তো কাল হবে । মমতা লজ্জা পেয়ে কিচেন ছেড়ে পালায় । তার নিজের বাসর রাতেও বাসর হয়নি । হয়েছিলো পরের রাতে । মনে হতেই একা একা হাসতে থাকে ।
দুপুরে ইসমাইল বেলাল আসে মেয়ে আর জামাইকে নিয়ে যেতে । লাবিবা ইসমাইলকে দেখেই খুশিতে ইসমাইলের পাশে পাশেই থাকে যতোক্ষন খান বাড়িতে ছিলো । বিকাল দিকে লাবিবা তানভীরকে নিয়ে ইসমাইল বাড়ি চলে আসে । মুক্তা তানভীরের যত্মাতিতে কোন ত্রুটি রাখে না সাবিনা সখিনা। মেয়েদের জামাইদের নাতি নাতনীদের নিয়ে মোল্লা বাড়ি জমে উঠেছে । রাতে শোয়ার সময় লাবিবার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে । লাবিবা ভয়ে ভয়ে রুমে ঢুকেই বালিশ নিয়ে দৌড় । কিন্তু তানভীর ঠিক ধরে ফেলে । দু হাত ধরে দরজায় পিঠ লাগিয়ে দাড়ায় । ভ্রু কুচকে জিজ্জাসা করে
–কোথায় যাচ্ছ?
–আম্মুনির সাথে ঘুমোবো । আম্মুনি আমার জন্য অপেক্ষা করছে । ছাড়ুন আমাকে যেতে হবে ।
তানভীর মুচকি হেসে লাবিবার গালে নিজের গাল দিয়ে ঘসা দেয় । লাবিবা দাড়ি দিয়ে হালকা ব্যথা পেয়ে আহ করে উঠে ।
–বিয়ে পর হাজবেন্ডের সাথে থাকতে হয় । পুতুল বউ পালিয়ে বেড়াচ্ছো কেনো ? এমন করো না প্লিজ ।আম্মুনি অনেক আগেই ঘুমিয়ে গেছে ।
–আরে আপনি তো জানেন না ব্যপার টা । কাল তো চলেই যাবো । একটা রাত আম্মুনির সাথে থাকি । কাল সারা রাত তো আপনার সাথেই ছিলাম ।
— ঐটাকে থাকা বলে ?
লাবিবা পেছন দিকে তাকিয়ে বলে –দেখুন বারান্দায় আম্মুনি । তানভীর ফট করে পিছে তাকায় । ততোক্ষনে লাবিবা পগারপার । তানভীর ধরতে গেলেও ধরতে পারে না । সারারাত ছটফট করে কাটায় । আরেকটা রাত থাকতে হয় এ বাড়িতে তানভীর লাবিবাকে । লাবিবা সারাদিন কাছে আসেনি । তার আগের লাইফের মতোই খেলে খেলে বেড়াচ্ছে । রাতে শোবার সময় লাবিবার মুখটাও দেখতে পায় না । লাবিবা থাকতে চলে গেছে পাশের বাসায় মুন্নির কাছে । অনেকদিন পর মুন্নি এসেছে বেড়াতে তাই জিদ মুন্নির কাছে নাকি তাকে থাকতেই হবে। তানভীরকে নিয়ে যেতে বললে না নিয়েই চলে যায় । লাবিবা যে ইচ্ছে করে এমন করছে তানভীরের বুঝতে বাকি নেই । এরোকম পাগলামী কে করে ..তানভীর হো হো করে হেসে উঠে । শুয়ে পড়ে মাথায় হাত রেখে বলে –আই নিড ইউ পুতুল বউ । তোমাকে চাই চায়ই আমার ।
To be continue____
®লাবিবা____
{ গল্প প্রায় শেষের দিকে । আর দু/ তিন পার্ট করবো ভাবছি । }