একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৪৯

0
6159

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৪৯
#লাবিবা_তানহা_লিজা

?

বিকালে তানভীর লাবিবাকে নিয়ে শ্বশুড় বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ে । এবারেও বিদায়ের সময় লাবিবা এলোপাথাড়ি কান্না শুরু করেছে আর থামার নাম নেই বললেই চলে । মাঝ রাস্তায় তানভীর গাড়ি থামিয়ে দেয় । লাবিবা চমকে উঠে কান্না অফ করে দেয় । তানভীর রাগে লাবিবার দিক ঘুরে বসে ধমক দিয়ে বলে –থামলে কেনো ? ভ্যা ভ্যা বন্ধ হলে তো চলবে না? এই ভ্যা ভ্যা শুনেই তো তোমাকে চেনা যায় যে তুমি মিসেস তানভীর খান ,চার দিন হয়েছে তোমার বিয়ের, নতুন বউ তুমি , না জানি আর কত দিন নতুন থাকবে আর এভাবে ভ্যা ভ্যা করে যাবে ।
লাবিবা ভয়ে অসহায় লুক দিয়ে ভেজা চোখ দুটো পিট পিট করছে বার বার । ঐ দু চোখের পিট পিটানি চাহনি দেখে নিমেষেই রাগ চলে যায় । তবুও রাগ দেখিয়ে বলে –আর একবার যদি ভ্যা ভ্যা করছো সোজা একটা অচেনা রাস্তায় ফেলে রেখে যাবো । আর যদি চুপ করে বসে থাকো তাহলে ..তাহলে গিফ্ট পাবে । লাবিবা আচ্ছা বলে সামনের দিকে তাকায় । বাকিটা সময় আর কিছুই বলে না । একদম চুপ হয়ে যাওয়াতে তানভীরের খারাপ লাগছে । বেশি বকা দেওয়া হয়ে গেলো নাকি! লাবিবাকে একহাতে টেনে জড়িয়ে ধরে বুকে । কপালে চুমু একে দেয় । লাবিবা অভিমানী স্বরে বলে –কেউ ভালুপাসেনা ।
তানভীরের হাসি পেয়ে যায় এমন আল্হাদি স্বরে । আরো চেপে ধরে বলে — কই আমিতো তোমাকে অনেক ভালুপাসি । অনেকগুলা ভালুপাসা দিতে চাই তুমি নাওনা কেনো গো ?
–গিফ্ট পেলেই চলবে ।
–এর জন্য বক বক স্টপ করেছো ।
–পরে যদি বলেন দুষ্টু পুতুল তুমি কথা বলেছো তোমাকে আর গিফ্ট দিবো না তখন কি হপ্পে?
তানভীর আর কথা বাড়ায় না । একটা বড়ো হোটেলে এসে গাড়ি থামে । এতোক্ষন খেয়াল করেনি লাবিবা শ্বশুর বাড়ি না গিয়ে যে ও হোটেলে চলে আসছে । তানভীর গাড়ি পার্কিং করে লাবিবার হাত ধরে লিফটে উঠে যায় । রিসিপসন থেকে রুমের চাবি নিয়ে একটা রুমে চলে আসে। লাবিবা হা করে তাকিয়ে আছে রুমের দিকে । তানভীরকে জিজ্জাসা করে –আমরা কি আজ এখানে থাকবো ?
–অনলি টু আওয়ারস ।
–দেন?
–দেন সিক্সথ ফ্লোরে পার্টিতে এটেন্ড করবো ।
–কিসের পার্টি?
— কনগ্রাচুলেশনস পার্টি । তোমার আমার নিউ লাইফ স্টার্টিং এর জন্য আমার কলিগরা স্পনসার করেছে । আফটার টু আওয়ারস লেটার আমরা পার্টিতে যাচ্ছি । রেডি হয়ে নাও । একটু বাইরে যাচ্ছি চলে আসবো এক্ষুনি ।
লাবিবা এখনো হা হয়ে আছে । তানভীর বেরিয়ে যেতেই মিররের সামনে এসে দাড়ায় । ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিজেকে দেখছে । কেনো দেখছে তার কোন কারন নেই । খাটের উপর গিয়ে বসে পড়ে । রুমটাকে হানিমুনে এলে কাপলদের জন্য যেমন সাজানো থাকে তেমনি সাজানো । অনেক সুন্দর । এখানে আজ থাকলে কি হতো ? যেতেই তো ইচ্ছা করছে না । এই বেডে ফুলের মাঝে ঘুমাতাম স্যার আর আমি ? আল্লাগো কি শরম?। দরজায় নক শুনে দরজা খুলে লাবিবা । একটা ছেলে দাড়িয়ে দুটো প্যাকেট হাতে। লাবিবার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে–ম্যাম স্যার পাঠিয়েছেন আপনার জন্য । লাবিবা মাথা নেড়ে প্যাক দুটো নিয়ে দরজা লক করে দেয় । একটা প্যাকেট খুলে কিছু সাজগোজের জন্য কসমেটিক্স পায় । আরেকটা প্যাকেট খুলতেই একটা ব্লাক শাড়ি পায় সাথে ডিজাইনার ব্লাউজ পেডিকোট । একটা চিরকুট ও আছে । সেখানে লেখা ” তাড়াতাড়ি রেড়ি হয়ে নাও । হাতে আর একঘন্টা টাইম । আমি একটু কাজে আছি একটু পরে আসছি । ”
লাবিবা চিরকুট রেখে তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে নেয় । মিররের সামনে এসে বসে পড়ে সাজতে । অনেক কিছু থাকলেও লাবিবা মুখে পাউডার দেয় । চোখে কাজল দিয়ে ডার্ক আই শেডো দেয় । তার পর নুড লিপিস্টিক দিয়ে নেয় । চুল গুলো আচড়ে নেয় ভালো করে । কাটা দিয়ে বেধে শাড়ির প্যাকেট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় । ব্লাউজ পেডিকোট পরার পর শাড়ি পড়তে গিয়ে মনে পড়ে সেতো শাড়িই পড়তে জানে না । মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে । এবার কি হপ্পে ?? কেউতো নেই হেল্প করার জন্য । লাবিবা টেনশনে অবস্থা খারাপ । এখন কি আর পার্টিতে যেতে পারবেনা ? তানভীর এসে কি মারবে লাবিবাকে ? কি জোরেই না চড় দেয় আল্লাহ যে না খেয়েছে সে বুঝবেনা । নিজের গালে নিজে চড়াতে ইচ্ছা করছে । মেরিড় মেয়ে তাও শাড়ি পড়তে পারে না । কান্না চলে আসছে এবার কিন্তু কাদতেও পারতেছেনা যদি পরে গিফ্ট না দেয় তখন কি হপ্পে??
তানভীর রুমে এসে লাবিবাকে না পেয়ে ওয়াশরুমে ভেবে ডাক দেয় –পুতুল বউ তুমি রেড়ি ?
লাবিবা তানভীরের গলার আওয়াজ শুনেই লাফ দিয়ে উঠে । দরজার কাছে এসে দরজা খুলে মুখটা বের করে বলে –স্যার…
তানভীর পেছন দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে যায় মুখ টা দেখে । একটু সাজলেই মারাত্মক সুন্দরী লাগে লাবিবাকে । লাবিবা চোখ নামিয়ে বলে
–স্যার. আমি পার্টিতে যাবো না ।
–কেনো ? প্রবলেম কি?
–আমি তিন নাম্বার কাপড়টা পড়তে পারি না কুচি দিতেও পারিনা ।
তানভীর কি বলবে ভেবে পায় না ।
–এক আর দুই নাম্বার কাপড় পড়ে বেরিয়ে আসো তিন নাম্বার টা আমি পড়িয়ে দিচ্ছি ।
লাবিবাকে ওভাবেই দাড়িয়ে থাকতে দেখে আবার বলে –সময় বসে থাকে না মনে রেখো ।
লাবিবা হাত শাড়িটা নিয়ে দরজা খুলে একপা দুপা করে এগিয়ে আসে । লাবিবাকে এই অবস্থায় দেখে তানভীর চোখ বন্ধ করে নেয় । এক পলকের দেখায় মাথা পুরো নষ্ট হয়ে যায় । লাবিবা নিচ দিকে তাকিয়ে তানভীরের সামনে এসে দাড়ায় । তানভীর মাথা থেকে মুখ হাত বুলিয়ে লাবিবার হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে পড়াতে থাকে । কুচি ধরে লাবিবার হাতে দেয় । লাবিবা গুজার আগেই ছেড়ে দেয় হাত ফসকে । তানভীর রাগ না দেখিয়ে আবারো কুচি করে একহাতে কোমড়টা নিজের কাছে টেনে গুজে দিয়েই উঠে বেড়িয়ে যায় । বেড়োনোর সময় বলে –বাকিটা তুমি করো আর তাড়াতাড়ি এসো । লাবিবা থরথর করে কাপছে এখনো । চুল গুলো খুলে দেয়। নিজেকে ঠিক করে তানভীরের সাথে পার্টিতে চলে আসে । এক হাতে ফোন আরেক হাতে তানভীরের হাত জড়িয়ে হাটতে থাকে । তানভীরকে আড় চোখে দেখতে দেখতে পা বাড়ায় । তানভীর কে পুরোপুরি গেট আপ চেঞ্জ করেছে এটি খেয়াল ই করেনি । খুব মিস করছে গাউন কে । যদি এখন গাউন পড়া থাকতো তাহলে হুবুহু জ্যাক আর রোজ লাগতো তাদেরকে । আর এই হোটেলটা টাইটানিক হয়ে গেলে অনেক ভালো হতো ।
তানভীর লাবিবাকে সবাই ওয়েলকাম জানায় ফুল দিয়ে । এর মধ্যে লাবিবা বেশির ভাগ প্রফেসরদের কেই দেখতে পায় আর তাদের ফ্যামেলি । সবাই এসে কথা বলছে তাদের সাথে গিফট দিচ্ছে । চারিদিকের আলো ফুল দেখে লাবিবার এত্তো আনন্দ হচ্ছে যা বলার মতো না । তানভীর না থাকলে এতোক্ষনে একশটার উপর লাফ দেওয়া হয়ে যেতো । লাবিবাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তানভীর বলে –লাফ দিতে ইচ্ছা করছে ? লাবিবা হা করে তাকিয়ে চোখ পিট পিট করে । তানভীর হেসে বলে –সব ই বুঝি । চলো ডিনার করবো । পার্টিতে ডিনার শেষে তানভীর লাবিবাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে । লাবিবা আঙুল কামড়া তে কামডাতে বলে –গিফট গুলো রেখে চলে এলেন ?কতো গুলো গিফট । তানভীর হাসে কিছু না বলে । লাবিবার মুখ থেকে আঙুল নিয়ে নিজের মুখে পুড়ে দেয় । লাবিবার মুখ আবারো হা হয়ে যায় । লাবিবাকে নিয়ে নেমে দারোয়ানকে বলে পার্কিং করতে । লাবিবা এবারো অবাক হয়ে যায় । বিষ্ময়ের যেনো শেষ নেই । তানভির লাবিবাকে নিয়ে একটা ফ্ল্যাটের দরজার সামনে চলে আসে । একটা হাত চাবি দিয়ে বলে –টেক ইউর গিফট মাই কুইন । নিউ ফ্ল্যাট অনলি ফর ইউ।
লাবিবা কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না । ডোর আনলক করে ভিতরের দিকে পা বাড়ায় । তানভীর রুমের লাইট গুলো জালিয়ে দেয় । সামনে পার্টির গিফট গুলো দেখে লাফিয়ে উঠে লাবিবা । তানভীর হেসে বলে –যতো ইচ্ছা লাফাও এবার । লাবিবা দৌড়ে এসে তানভীরের গালে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে ভিতরে চলে যায় । ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে আর আনন্দে লাফাতে থাকে । দেখতে দেখতে বেডরুমে ঢুকে । তানভীর লাইক জালিয়ে দিতেই লাবিবা থমকে যায় । পুরো রুম দেখে চোখ ধাধিয়ে যায় । পুরো রুম কালো গোলাপ সাজানো । পেছন ঘুরে তানভীরের দিক তাকায় । তানভীরের ঠোটের কোনে মিটি মিটি হাসি অবাক নয়নে দেখতে থাকে । তানভীর এগিয়ে এসে পেছন থেকে দু হাত সামনে এনে লাবিবার সামনে ধরে । আনন্দে লাবিবার চোখ থেকে পানি বেরিয়ে আসে । লাবিবার একহাত উঠিয়ে দিয়ে বলে — টেক দিজ । #একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ। ইউর অনলি লাভ । লাবিবা কাপা হাতে ফুলগুলো হাতে নেয় । সাথে সাথে উপর থেকে কালো গোলাপের পাপড়ির বর্ষন শুরু হয় । লাবিবা চোখ বন্ধ করে উপর দিকে তাকিয়ে বসে পড়ে। তানভীর লাবিবার আরো কাছে এসে বলে — তুমি এতোদিন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে যে সপ্নটা দেখছিলে আমি তা আজ রিয়েলিটিতে দেখছি । একটা ব্লাক ফেয়ারি একটা ফ্লাউয়ার ব্যাকের মাঝে বসে । তার এরাউন্ডে অজস্র ব্লাক রোজ । পাশে দাড়িয়ে তার ডেবিল তার উপর ব্লাক রোজের বর্ষন সৃষ্টি করছে ।
লাবিবা চোখ খুলে তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলে –একটু বসবেন আমার পাশে ?
তানভীর বসে পড়ে। তানভীর বলে –আমার ব্লাক রোজ ট্রি টা আজ থেকে তোমার পুতুল বউ। যানো আমি ছাড়া ঐ গাছটা কাউকে ধরতে দিতাম না । ফুল গুলো দেখে আমার মনে হতো আমার জীবনের ই একটা অংশ এই ফুল গুলো । টুটালি ইউনিক এই ফুল গুলো । তুমি খেয়াল করে দেখবে অনান্য কালো গোলাপের মতো এই কালো গোলাপ ছোট আকৃতির নয় । বরং বড় আকৃতির ইন্ডিয়ার রেড় রোজের মতো । তুমি খেয়াল করে দেখবে এর স্থায়িত্বকাল একটু বেশি সময় । আমি যখন দু তিন বছরের তখন এই গাছ লাগানোর সময় নিজের হাতে লাগিয়েছি । আজ সেই গাছের বয়স প্রায় ত্রিশ বছর অথচ এখনো বেচে আছে আর একি ভাবে ফুল দিয়ে আসছে । এজন্যই এতো স্পেশাল আমার কাছে । আমি তোমাকে ফুল দেইনি কেনো জানো ? আমি ভেবেছিলাম তুমি এর অধিকার পাবে না । আমার যে অর্ধাঙ্গিনী সেই পাবে এর অধিকার । তাকেই দিবো আমি #একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ। তুমি যখন লাফিয়ে লাফিয়ে ব্যথা পেতে হাত পা কাটা দিয়ে ছিলে ফেলতে আমার খুব কষ্ট হতো । আজ আমি সেই ফুল তোমার হাতে দিলাম । দেখো একটা কাটাও পাবে না । তোমার আর ব্যথা লাগবেনা কখনো সব কাটা আমি সরিয়ে দিবো। তুমি আমার কাছে একগুচ্ছ কালো গোলাপ চেয়েছো আমি তোমাকে অজস্র গোলাপে ভরিয়ে দিলাম এরপর ও বলবে তোমাকে ভালুপাসি না ?
লাবিবা চোখ মুছে মাথা নেড়া না করে । তানভীরের কোলে এসে বসে পড়ে । হাত দিয়ে দাড়ি ছোয়ে বলে
— আমার ব্লাক রোজ না পেয়ে মন খারাপ হতো । আর যে ব্লাক রোজ না পেয়ে মন খারাপ হতো তার মলিক কে না পেয়ে প্রচুর কষ্ট হতো । আব্বু বলে আমি বড় কপাল করে জন্মেছি । আমি সত্যিই বড় কপাল করে জন্মেছি । আজ সবটা আমার এই গোলাপ আর গোলাপের মালিক দুটোই আমার ।
তানভীর তিনটা গোলাপ নিয়ে কানের পাশে গুজে দিয়ে বলে
–এতো গুলো গিফট দিলাম তোমাকে এবার আমাকে কি গিফট দিবে পুতুল বউ?
লাবিবার গলা শুকিয়ে যায় । ঢুক গিলে বলে –কি কি কি দিবো?

To be continue ____

©লাবিবা___?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here