একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৫১
#লাবিবা_তানহা_লিজা
?
ফুপানো কান্নার আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় তানভীরের । কিছুক্ষন হলো ঘুমিয়েছে এখনি ঘুমের ডিস্টাব । সকালের রোদের আলো সরাসরি চোখে পড়ছে ।খুব কষ্টে চোখ খুলে দেখে লাবিবা বিছানায় পা দুটো ভাজ করে বসে বসে ফুপিয়ে কাদছে । পড়নে শুধু কাল রাতের পড়া তানভীরের শার্ট উরু পর্যন্ত এসে ইতি ঘটিয়েছে । সদ্য গোছল করা ভেজা চুল গুলো থেকে টুপ টুপ করে পানি পড়ছে । অর্ধেক শার্ট ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে রয়েছে। মুখের উপর ভেজা ছোট চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে । নিমেষেই তানভীরের ঘুম চলে যায় । লাফ দিয়ে উঠে বসে । লাবিবাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে –পুতুল বউ..কাদছো কেনো তুমি ? কি হয়েছে তোমার ? বলো আমাকে ।
লাবিবা ফুপাতে ফুপাতে বলে –আমি নড়াচড়া করতে পারছি না । আপনি কেনো আমাকে চিপকাইয়া ধরলেন ? আই এম নো নডিং নো চড়িং করতে পারছি । কোন মতে গোছল টা সেডে নিয়েছি ।
তানভীর
তানভীরের মাথা ব্যথা করছে এবার । লাবিবাকে কিছু না বলে উঠে বাথরুমে চলে যায় । শাওয়ার নিয়ে টাওয়েল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বেড়িয়ে আসে । লাবিবাকে পাজাকোলে নিয়ে বেলকনিতে এসে ডিভানে বসে । টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে থাকে । হাত পা মুছতে মুছতে বলে –তুমি তো দেখছি গা না মুছেই শার্ট পড়েছো । শার্ট ভিজিয়ে ফেলেছো । ঠান্ডা লেগে যাবে তো । ক্যবিনেট ভর্তি শাড়ি রেখে শার্ট পড়েছো কেনো ?
— আমি শাড়ি পড়তে পারি নাতো । আপনি তো ঘুমাচ্ছিলেন । তাহলে কে পড়িয়ে দিবে আমাকে ?
–গাউন তো আছে অনেকগুলা । দেখোনি তুমি?
–শার্ট পড়ে ভালোলাগছে । জানেন আপনার শার্ট প্যান্ট পড়তে আমার খুব ভালো লাগে । মনে হয় আপনি নিজেই আমাকে জড়িয়ে আছেন।কাধে ছুতেই লাবিবা ব্যথা পেয়ে আহ করে উঠে । তানভীর সফটলি ধরে বলে
–খুব ব্যথা করছে ? কোথায় ব্যথা করছে দেখি ?
–এখানে ওখানে এদিকে সেদিকে সেথায় যেথায় ..।
সারা অঙ্গে ব্যথা , মলম লাগাবেন কোথা ?
— সারা অঙ্গেই লাগাবো । প্রচুর মাথা ধরেছে । কিচেনে চলো। কিছু খেয়ে ট্যাবলেট খেয়ে নাও দেখবে ব্যথা কমে যাবে ।
তানভীর লাবিবাকে কোলে নিয়ে কিচেনে চলে আসে ।ডাউন ক্যবিনেটের উপর বসিয়ে দেয় । কফি ম্যাকারে কফি বানিয়ে লাবিবার দিকে আসে । লাবিবা বসে বসে পা দুলিয়ে খেলা করছে । এক কাপ লাবিবাকে দিয়ে আরেক কাপ খেতে খেতে পাসতা রেড়ি করে ফেলে। লাবিবা বসে বসে পাসতা বানানো দেখে । আস্তে করে নেমে দাড়িয়ে হেটে হেটে ড্রয়িং রুমে চলে আসে । টিভি অন করে বসে পড়ে । কার্টুন চ্যেনেল দিয়ে ওগি দেখতে থাকে । তানভীর প্লেটে পাসতা এনে টি টেবিলে রেখে সোফায় বসে লাবিবাকে কোলে বসিয়ে দেয় । প্লেট নিয়ে কার্টুন দেখতে দেখতে দুজনেই খাওয়া শেষ করে । লাবিবাকে ট্যাবলেট খাইয়ে দেয় । ফোনের আওয়াজ পেয়ে লাবিবাকে কোল থেকে নামিয়ে বেডরুমে চলে যায় । কথা শেষ করে এসে বলে –বউপাখি তুমি কার্টুন দেখো আমি একটু শোব নয়তো ভালো লাগছে না । তিনটার দিকে বের হবো তোমাকে বাসায় দিয়ে রাতেই আমাকে ঢাকা যেতে হবে একটা অফিসিয়াল কাজে ।
তানভীর এসে শুয়ে পড়ে । লাবিবা কিছুক্ষন কার্টুন দেখে আর ভালো লাগে না । উঠে চলে আসে বেড রুমে । তানভীরের পাশে শুয়ে কম্বল টেনে নেয় গায়ে । দু হাতে তানভীরকে জাপটে ধরে । তানভীরের মতো একটু জোরেই ধরে । একমনে তানভীরের ঘুমন্ত মুখটা দেখতে থাকে । খোচা খোচা দাড়ি গুলো একটু বড়ই হয়ে গেছে । এতেই যেনো আরো সুন্দর লাগছে । হাত দিয়ে হালকা ছুয়ে দিতেই তানভীর নড়ে উঠে । লাবিবা মুচকি হাসে । নাকে হাত দিয়ে টিপে দেয় যেভাবে কাল তাকে টিপে দিয়েছিলো । তানভীর ঘুমের ঘোরেই হা সরিয়ে দিয়ে বলে –প্লিজ কলিজাটা ঘুমোতে দাও । লাবিবার খুব ভালো লাগে ঘুমু ঘুমু ভয়েজটা । নাক ছেড়ে হাত দুটো বুকে নিয়ে আসে । লোমস বুকে পিপড়ার কামড়ের মতো চিমটি কাটতে থাকে । তানভীরের রেসপন্স না পেয়ে কামড় বসিয়ে দেয় । তানভীর বিরক্তি স্বরে উবু হয়ে শোয়ে বলে
–প্লিজ লিভ মি ।আই ওয়ানা স্লিভ ।
তানভীরের বিরক্তি স্বরে লাবিবা মুখ টিপে হাসে । আলতো করে তানভীরের পিঠের উপরে উঠে সটান শোয়ে পড়ে । দুহাতে জড়িয়ে ধরে । কানের কাছে এসে চুমু খায় । ঘাড়েও চুমু খায় । পিঠের উপর ও চুমু খেতে থাকে । পুরো পিঠ চুমু খাওয়ার পর মুখ গুজে দেয় পিঠে । তানভীর ঘুরে শোয়ে লাবিবাকে বুকে টেনে নেয় । কপালে চুমু খেয়ে বলে –কি হয়েছে আমার বউটার?
–আপনাকে মিস করবো ভুরি ভুরি । না গেলে হয় না ? জব বাদ দিয়ে বাসাতেই থাকুননা আমার সাথে ।
–এত্তো প্রেম ? তুমি তো পালিয়ে বেড়াও । আমি না থাকলেই তো তোমার ভালো । এখন আবার এতো প্রেম দেখানো হচ্ছে যে ..
— প্রেম আছে তাই দেখাই আপনার কি ?
–ঢাকা থেকে এসে প্রেম দেখবো কেমন ? এবার কলিজাটা সুন্দর করে ঘুমিয়ে পড়ো তো । আমি যতোক্ষন ঘুমোবো ততোক্ষন ঘুমোবে ।
ঠোটে চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ে দুজনে ।
___________________
ক্যবিনেট থেকে একটা গাউন বের করে পড়ে নেয় লাবিবা । প্রবলেম হলো স্কার্ফ নেই এখানে । তানভীর শার্টের হাতা ফ্লোড করতে করতে রুমে ডুকে দেখে লাবিবা মিররের সামনে দাড়িয়ে আছে চুপ চাপ। তানভীর এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আপেলের মতো গালটায় টুপ করে চুমু খায় । লাবিবা মাথা ঘুরিয়ে তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলে –স্কার্ফ কিনতে ভুলে গেছেন আপনি । এখন কি আপনার বউ এভাবেই বাইরে যাবে ? তানভীর লাবিবাকে এক নজর দেখে হাত ছেড়ে দেয় । ক্যাবিনেট থেকে জিন্সের একটা কটি বের করে আনে । লাবিবার হাতে দিয়ে বলে –এটা পরে দেখতে পারো। লাবিবা পড়ে নেয় । লুকিং পারফেক্ট। গাল ফুলিয়ে বলে –আপনার জন্য আমার চুলগুলো সবাই দেখে নিচ্ছে । –বাসায় যাও । আজকের পর থেকে আমি ছাড়া আর কেউ দেখবেনা।
এবার চলো দেড়ি হয়ে যাচ্ছে ।
ফ্ল্যাট লক করে নিচে নেমে আসে লিফটে । গেইটের সামনে লাবিবা দাড়ায় । তানভীর গাড়ি নিয়ে আসে পার্কিং থেকে । লাবিবা উঠে বসলেই তানভীর গাড়ি স্টার্ট দেয় । লাবিবা চুল গুলো হাত খোপা করে জানালার বাইরে তাকায় । তানভীর পকেট থেকে চকলেট বের করে লাবিবার সামনে ধরতেই লাবিবা খুশিতে হাতে নিয়ে খেতে থাকে । তানভীর বার বার তাকিয়ে লাবিবার খাওয়া দেখতে থাকে ।
–এটা ছাড়া অপূর্ণ লাগছিলো ।
–চকলেট খেতে খেতে চকলেটের জমজ বোন হয়ে যাবো তারপর দেখবো আপনি কিভাবে আমাকে ছেড়ে বাইরে থাকেন ।
–আপনি চকলেট হন আর হরলিক্স হন আপনাকে ছেড়ে থাকা আমার কর্ম নয় । তবে বাধ্যবাধ্যকতায় তো থাকতেই হবে । এতো মন খারাপ করলে আমি কি থাকতে পারবো ? দুটো দিন প্লিজ । চলে আসবো তো।
–এতো কিছু রেখে আমাকে ফ্ল্যাট কেনো গিফট করলেন ? কিভাবে জানলেন আমি ফ্ল্যাট লাইক করি?
–মুইনের থেকে । তুমি আর নুপুর নাকি ফ্ল্যাট লাইক করো ..তার জন্য বাবাকে বলে নুপুরের জন্য ফ্ল্যাট ও কিনে ফেলেছিলো মুইন । সেই ফ্ল্যাটে আজো থাকা হয়নি তার নুপুরকে নিয়ে থাকবে বলে ।
–রাজিব ভাইয়াই পারে ওদেরকে এক করতে । বড় জামাইয়ের কথা আংকেল ফেলতে পারবে না । আপনি হেল্প করেন না একটু প্লিজ ।
–ওকে আসার সময় রাজিবের সাথে কথা বলে আসবো ।
বাসায় আসতেই সোহানা মমতা নতুন বউকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে । তানিয়ার কথা জিজ্জাসা করতেই সোহানা বলে গতকাল তানিয়ার শ্বশুর শাশুড়ি ননাশ ননদাই এসে শ্বশুর বাড়ি নিয়ে চলে গেছে । তানভীর সাথে সাথেই তানিয়াকে ফোন দেয় । একবার রিং হতেই তানিয়া কল রিসিভ করে ।
–হ্যালো ভাইয়া ।
–আমাকে না জানিয়েই চলে গেলি !
— আরে বাবা আসবো তো । একঘন্টার হাটার রাস্তা মাত্র ওয়ান টু ব্যপার ।
— মানুষ শ্বশুর বাড়ি গেলে বাপের বাড়ির কেউ ফোন দিলেই মন খারাপ করে, কাদে ,চলে আসতে চায় আর আমার বোন দিব্যি হাসি খুশি আছে ।
–ভাবির মতো কাদবো নাকি ?
–একদম না ।তোর ভাবির সাথে তোর তুলনা নয় । তোর ভাবির দিক থেকে তোর ভাবি ঠিক আর তোর দিক থেকে তুই ঠিক । সারাজীবন এরোকম হাসি খুশি থাকিস । রাখছি । মাত্র আসলাম । পরে কথা হবে ।
–ওকে ভাইয়া ।
রাতে বের হবার সময় লাবিবা দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। রুম থেকে সোহানা মমতা চলে গেলে ফোনটা পকেটে নিয়ে এক হাত বাড়িয়ে দেয় লাবিবার দিকে । লাবিবা রুমের বাইরে একবার দেখেই দৌড়ে এসে তানভীরের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে । দুহাতে লাবিবাকে জড়িয়ে ধরে বলে –সাবধানে থেকো হুম ?? কালো গোলাপের গাছটা কিন্তু তোমার । ছাদে উঠে হাত দিয়ে ফুল নিতে পারবে । আবার কাটা ফুটিয়ে বসো না ।
–আমার জন্য কি নিয়ে আসবেন ?
–তুমি বলো ।
–কাচের চুড়ি ।
–আর?
–আপনার যা যা ইচ্ছা ।
–ওকে । আসি। আমি ফোন না দিলে আবার গাল ফুলিয়ে বসো না । পাকা টমেটোতে কিন্তু সত্যি সত্যি কামড় বসাবো । পরে আবার ফ্যাস ফ্যাস করে কাদতে পারবে না । এটা কিন্তু ট্যাবলেটে কাজ করবে না ।
–হুম। মিস ইউ ভুরি ভুরি।
–মিস ইউ অনেকমাচ।
যেতে নিয়ে আবার ঘুরে এসে ঠোটে গাঢ করে একটুখানি সময় চুমু খেয়ে বাই বলে বেড়িয়ে যায় ।
কিচেনে মমতাকে রান্নায় হেল্প করছে লাবিবা। মমতার ফোন বেজে উঠাতে ফোন হাতে নিয়ে দেখে তানিয়া ফোন দিয়েছে । লাবিবাকে বলে –তানিয়া ফোন দিয়েছে । আমি কথা বলে আসছি । মমতা চলে যাওয়ার পর লাবিবা ওভেন থেকে পপকর্ন বের করে । মোডা এনে বসে বসে পপকর্ন খেতে থাকে । জানালা দিয়ে একটা সাদা বিডাল উকি দেয় । লাবিবা সাদা বিড়াল দেখে খুশি হয়ে যায় । এরা কি বিডাল পোষে? কই আগে তো জানতাম না । নতুন মনে হয় পোষে । আমার তুতুটাকে কতদিন দেখি না । আম্মুনি ঠিক ঠাক খাবার দিচ্ছে কিনা কে জানে ।শুকিয়ে গেছে মনে হয় । বিড়াল জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ে । ঢুকেই মিও মিও বলতে বলতে ক্যবিনেটের উপর দিয়ে হাটতে থাকে । জগে যে দুধ ছিলো তা জানতো না লাবিবা । বিডাল জগে মুখ দিতেই দুধ দেখে চিল্লিয়ে উঠে লাবিবা । শয়তান বিডাল বলে দুধ সরাতে গেলেই বিড়াল রেগে লাফ দিয়ে নামতেই লাবিবার পায়ে আচড় লাগে । লাবিবা সাথে সাথে চিল্লিয়ে উঠে । পা ধরে বসে পড়ে । মমতা সোহানা দৌড়ে আসে । পা দেখে ছাল উঠে গেছে একটু কিন্তু ব্লাড বের হয়নি । ফিরোজ মাত্র ই ফিরেছে । সাথে সাথেই ডক্টরকে ফোন দেয় । লাবিবাকে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসানো হয় । কাজের লোক ইতো মধ্যে বিডাল টাকেও ধরে ফেলে । লাবিবা ঝুড়িতে বিড়াল দেখে চিল্লানি দিয়ে বলে ঐ বিল্লির মুন্ডু কাটা হোক । আমাকে ব্যথা দিয়েছে ওর মৃত্যু অনিবার্য । শয়তান বিল্লি আমার এতোসুন্দর নরম পা দেখে তুই আচড়ে দিলি..স্যার ও তো আমায় আচড়ে দেই নি কখনো শুধু বাইট দেয়। আর তুই আমার স্যার উম উম…..
সোহানা মুখ চেপে ধরে কানে কানে বলে –আম্মুটা এসব বলতে নেই । চুপ কর। সামনে তোর পাপা আর ডক্টর আংকেল আছে তো । মান সম্মান আকাশে তুলিশ না ।
ডক্টর ইনজেকশন বের করে বলে ভাবি বউমাকে ধরুন । নড়া চড়া করা যাবে না । বিষ কাটাতে ছয়টা ইনজেকশন দিতেই হবে মা
লাবিবা লাফিয়ে উঠে–ওমাগো ছয়টা ?আমি ইনজেকশন দিবো না ব্যথা । স্যার…কোথায় আপনি…আমাকে ইনজেকশন দিচ্ছে.. তানভীর..?
ফিরোজের ইশারায় শক্ত করে ধরতে বললে সোহানা মমতা লাবিবার চোখ সহ শক্ত করে ধরে । ডক্টর ইনজেকশন পোস্ট করে দেয় ।
To be continue____
®লাবিবা____?