একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৫২
#লাবিবা_তানহা_লিজা
?
তানিয়া এসে লাবিবার কান্ডকারখানা দেখে শুনে তানভীরকে সবটা জানায় । তানভীরের মাথা পুরো খারাপ হয়ে যায় । এমনিতেই ভার্সিটির নিউ বিল্ডিং এর কন্সট্রাকশনের কাজের পারমিশন আর কেশ পেতে বেগ পেতে হচ্ছে । তার উপর আবার লাবিবার অবস্থা । ইচ্ছা করছে বিড়ালটাকে ধরে কুচি কুচি করে ফেলতে । যেখানে সে অযথা একটু কষ্ট ও দিতে পারে না লাবিবাকে সেখানে বিড়ালটার সাহস হয় কি করে লাবিবাকে আচডে দেওয়ার । কাজ সারতে সারতে তিন দিন লেগে যায় । এর মধ্যে সোহানাকে ফোন দিয়ে দিয়ে পাগল করে দিচ্ছে লাবিবার এটা করো ওটা করো বলে । সোহানা এবার ফোন ধরাই বাদ দিয়েছে । সাথে মিটি মিটি হাসি আর ফিরোজ কে গিয়ে বার বার বলে “তোমার ছেলে তোমার মতোই হয়েছে । তিনটা দিন বাইরে বউএর জন্য অস্থির হয়ে যাচ্ছে । আর আমার মাথা খাচ্ছে । এখনো তো তুমি কয়েকদিনের জন্য বাইরে গেলে অস্থির হয়ে উঠো । মনেই হয় না যে আমাদের সংসার জীবনের চৌত্রিশ বছর কেটে গেছে । ” ফিরোজ দাত বের করে হেসে বলে ” কার ছেলে দেখতে হবে তো । ছেলের বউ ও তো তোমার মতো হয়েছে । একটু পর পর স্যার মিস ইউ ভুরি ভুরি হা হা হা ।” লাবিবা ফোন ধরলেই চুপ চাপ থাকে আর তানভীরের ধমক সহ্য করে নেয় । বাসায় আসলে না জানি কি করে সেটা ভেবেই লাবিবার মাথা ঘুরে । আসার পর লাবিবাকে পেটাবে নাকি আদর করবে সেই ভাবনায় ঢুবে থাকে । একবার তো মাথা ঘুরেই পড়ে যায় । সাথে সাথে তানভীরের কাছে ফোন —
তানভীর..বিয়ের কয়দিন হলো এর মধ্যেই এসব কি ? না হলেও তো এক দুই মাস পর এই সুখবর পাওয়া যায় । এর মধ্যেই কিসের কি ? সীতাকুন্ডু গিয়ে কিছু করিস নি তো আবার ? এসব শুনে তানভীর লাবিবার একসাথে মাথা ঘুরতে শুরু করে । তানভীর না পারে কাজ ঠিক ঠাক করতে না পারে লাবিবার কাছে চলে আসতে । উভয় সংকটে দিন যায় তার । অবশেষে পাচ দিন পর তানভীর বাসায় ফিরছে । লাবিবা আলমারি ঘেটে সব থেকে সুন্দর শাড়িটা বের করে নেয় ।টকটকে লাল আর সবুজের মিক্স শাড়িটা আয়নার সামনে দাড়িয়ে গায়ের উপর দিয়ে সিউর হয়ে নেয় ভালো লাগবে নাকি । মনে হাজারো ভয় । শাড়ি নিয়ে মমতার রুমে গিয়ে হাজির । মমতার সামনে গিয়ে বলে –ছোট মাম্মা কি করছো ?
–ফেসবুকিং উইথ তোর ছোট মামা ।
–আমাকে শাড়ি পড়া শিখাবে ?
মমতা ফোন থেকে চোখ তুলে দেখে লাবিবা শাড়ি হাতে দাড়িয়ে । শাড়ি দেখে মমতা খুশি হয়ে যায় । ফোন রেখে শাড়ি হাতে নিয়ে বলে — তুই কিভাবে জানলি এই শাড়িটা আমি তোকে দিয়েছি ? মলে গিয়েই এই শাড়িটা আমার চোখে পড়েছে । একজন তো নিয়েই চলে যাচ্ছিলো কেড়ে কুড়ে নিয়ে আসছি বলতে গেলে । দাড়া এইখানে শিখিয়ে দিচ্ছি ।
লাবিবা সুন্দর করে হাসি দেয় । সেতো জানতোই না এটা মমতা দিয়েছে । শাড়ি দেখেই খুশি হয়ে গেছে । উফ.. লাভলি?।
মমতা লাবিবাকে হাতে ধরিয়ে ধরিয়ে শিখিয়েও দেয় পড়িয়েও দেয় । আচলটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে সামনে বসিয়ে চুলে চিরুনি করে সব গুলো চুল নিয়ে উপরে লুজ দিয়ে পিঠে খোপা করে দেয় । সকালের তোলা বাগানের কিছু টাটকা লাল গোলাপ মালার মতো করে খোপায় পেচিয়ে দেয় । চোখে মোটা করে কাজল পরিয়ে দেয় । লিপিস্টিক নিয়ে লাবিবার হাতে দেয় । লাবিবা নিজেই ঠোটে লিপিস্টিক পড়ে । মমমতা গাল দুটো ধরে বলে –মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর আমাদের মেয়েটা । লাবিবা মিস্টি হেসে বলে –আমি নিচে মমের কাছে যাচ্ছি তুমি আসো ।
লাবিবা কিচেনে গিয়ে সোহানার পাশে দাড়াতেই সোহানা তাকায় । লাবিবাকে আপাদমস্তক দেখে মুচকি হাসি দেয় । হাতে পিঠার বাটি দিয়ে বলে
— গাউনগুলো সরানোর ব্যবস্থা করে শাড়ি দিয়ে আলমারি ভর্তি করার ব্যবস্থা করছি । আর যেনো শাড়ি ছাড়া না দেখি ।
–মম এটা ঝামেলা লাগে । কিরকম সাপের মতো পেচিয়ে রাখতে হয় সব সময় ।
–পড়তে পড়তে অভ্যাস হয়ে যাবে । শাড়ি পড়ে সারাবাড়ি ঘুরে বেড়াবে কতো সুন্দর লাগবে । আমাদের ও চোখ জুড়াবে । তানভীরকে বলছি দারাও এবার থেকে শাড়িই পড়াবে তোমায় ।
লাবিবা ঠোট ভেঙে দিয়ে সোহানার দিকে তাকাতেই সোহানা বুকে জড়িয়ে নেয় । মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে –অভ্যাস হয়ে যাবে তো আম্মুটা । সুন্দর করে বউ সেজে থাকবে সব সময় দেখেই মন জুড়িয়ে যাবে । তোমার পাপার সাথে ছোট পাপার সাথে ছোট মমের সাথে গিয়ে কথা বলবে হাতে হাতে কাজ এগিয়ে দিবে কতো ভালোবাসবে ওরা তোমাকে দেখে নিও । বলবে এইতো আমাদের বউমা । তুমি যদি গাউন পড়ে থাকো তাহলে দেখবে তোমাকে দেখে ওদের তেমন ফিলিংস আসবেনা যেমনটা এখন আসবে । বাড়ির মেয়েদের থেকে বউমাদের আদর বেশি হয় সেটা জানো তো ?আর আমি যতদূর জানি তানভীর তোমাকে শাড়িই পড়তে বলবে সব সময় । আগে আমার সাথে সবসময় শপিং এ যেতো । আমার যতো শাড়ী কিনতাম সব ও চয়েজ করে দিতো । তোমার পাপা তো আমাকে দেখার আগে শাড়ি দেখে বলতো ছেলে পছন্দ করেছে তাই না ? ছেলেও বলতো মম তোমাকে শাড়িতে সুন্দর লাগে । এখন আর বলে না । এখন তো তোকে বলবে । বুজলে ?
লাবিবা মাথা নাড়িয়ে জানান দেয় ।সোহানা লাবিবাকে ছেড়ে কাজে নেমে পড়ে । লাবিবাও হেল্প করে ।
ঠিক ঠাক লাঞ্চ টাইমে তানভীর এসে পৌছায় । সাথে একজন মহিলা দুজন পুরুষ । একজনকে তো দেখেই লাবিবা চিনে ফেলে । এগিয়ে এসে সালাম দিয়ে বলে
— আরে মুইন ভাই যে । কেমন আছেন ?
–অনেক ভালো । তুমি নাকি ডেইলি একটা করে ইনজেকশন দিচ্ছো শুনলাম । কেউ ভালুপাসেনা আহারে ….।
— মজা করবেন না । এতোটাও ব্যথা পাওয়া যায় না যতটা ভয় পাই । ডেইলি দিচ্ছি এখন আর ভয় লাগে না । পিপড়া কামড়ের মতো লাগে ।
–বাহ । বিয়ে হয়ে ভয় আস্তে আস্তে দূর হয়ে যাচ্ছে দেখছি। সুবহান আল্লাহ।
লাবিবা আর কথা না বলে মুইনের আম্মুর কাজে যায় । সবাই খাতির যত্ম করে মুইনের বাবা মা আর মুইনকে । তানভীর এসেই রুমে চলে গেছে । সোহানা এসেই লাবিবাকে চোখের ইশারায় উপরে যেতে বলে । লাবিবা রুমের সামনে দাড়াতেই তানভীরের সাথে ধাক্কা খায় । দুজনেই ব্যালেন্স ঠিক রেখে দাড়িয়ে পড়ে । তানভীর মাত্র সাওয়ার নিয়েছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে । ভেজা চুল গুলো সামনে এসে লেপ্টে আছে । লাবিবা হাত দিয়ে ঝেকে ঠিক করে দেয় । তানভীর দুই পকেটে হাত গুজে ঠোট বাকিয়ে একটু হাসি দিয়ে নিচে চলে আসে । লাবিবার বুকে আবার ভয় জেগে উঠে । কিছু তো বলতে পারতো । একবার জড়িয়ে ধরলে কি হয়? ভাব দেখিয়ে চলে গেলো । আমি কি দোষ করেছি নাকি? পিছু পিছু সেও নেমে আসে । ডাইনিং এ খাওয়া গল্প দুটোই জমে উঠেছে । মুইনের বাবা বলছে –ছেলের বিয়ে টা দিয়েই অআবার ব্যাক করবো । রাজিব ও আসছে আগামীকাল । দেখি আনিসুর কে মানানো যায় কিনা ।
মুইন বলে উঠে –টেনশন নিও না বাবা । আংকেল শুধু জানে মুইনের কাছে বিয়ে দিবে না মেয়েকে । কিন্তু মুইন নাম টা ছাড়া আপাদত কিছুই জানেনা । আমার ভালো না ফাহাদ রহমান ই বলবে ওদেরকে । আরেঞ্জ ম্যারিজ এর মতো ব্যপার টা ঘটবে ।
তানভীর বলে –বাকি টা আমি আর রাজিব ই ম্যানেজ করে নিবো । আংকেল ওসব নিয়ে ভাববেন না ।
–ভাবি কি আর সাধে বাবা ? আনিসুরের মেয়ের সাথে বিয়ে না হলে যে আমার রাজপুত্তুর চিরকুমার হয়ে নির্বাসনে যাবে ঘোষনা দিয়ে দিয়েছে । তখন এই রাজ্যের হাল কে বইবে বলো …রাজপুত্তুর তো আমার একজন ই ।
মুইন নিচের দিক হয়ে হাসছে । তানভীর বলে –তাও ঠিক আংকেল । আজ আমাদের বাসায় থেকেই যান আংকেল ।পাপা আসুক পাপার সাথে কথা বলে যান ।
–তোমার পাপা ব্যস্ত মানুষ । অন্যদিন এসে অবশ্যই দেখা করে যাবো । আমাদের দেশের একজন সম্মানীয় ব্যক্তি উনি । দেশের কাজে কতোইনা শ্রম দিচ্ছেন উনি । তুমার লাঞ্চ অফার টা মিস করতে মন চায়নি তাই আসা । কাছেই তো বাসা যতোদিন আছি আমাদের বাসায় যাবে ।
–তাতো অবশ্য ই আংকেল । বিয়েতে ঘটকালি করছি আমাকে তো যেতেই হবে ।
খাওয়া শেষে মুইনরা চলে যায় । তানিয়া দৌড়ে এসে গ্লাস থেকে পানি খেয়ে বলে –ফাইনালি তুমি এসেছো ভাইয়া । আমি তো ঘুমুচ্ছিলাম তাই জানতেই পারিনি তুমি এসেছো । যা গেলো এই কয়দিন । এর পর তো আবার এমন হবে ।
–এর পর থেকে যেখানে যাবো বউ নিয়েই যাবো । শিক্ষা হয়ে গেছে আমার। বিড়ালটার কি করেছিস?
–মুন্ডু কেটে রেখে দিয়েছি তোমার জন্য। তুমি কি এখন দেখবে ? তাহলে চলো ।
–এনিমিকে দেখতে চাই না । আপাদত অনেক টায়ার্ড ঘুমোবো ।
লাবিবার দিকে তাকিয়ে বলে –বিছানা রেড়ি করো যাও । ঘুমোবো আমি ।
লাবিবা থ দাড়িয়ে থাকে । ঘুমোনোর জন্য কি বিছানা রেড়ি করতে হয়? স্যার কি বাচ্চা ? সোহানার চোখের ইশারায় টপাটপ চলে আসে রুমে । বিছানার দিকে তাকিয়ে থাকে । এগিয়ে এসে আবার ঝাড়ু দেয় । তারপর বালিশ ঠিক ঠাক রাখে । বিছানার উপরে উঠে দাড়িয়ে দেখে ঠিক ঠাক আছে কি না । তখনি তানভীর রুমে আসে । লাবিবাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলে –এতো সেজেছো কেনো ? সুন্দর লাগছে তো ।
–আপনার জন্য ।
ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করে আনে ।
–ব্যথা পেয়েছিলে বেশি ? দেখি কোথায় কামড় দিয়েছে ?
লাবিবা শাড়িটা একটু উপরে তুলে পা এগিয়ে দেয় । তানভীর একহাতে পা মুঠি করে ধরে আচড়ের দাগটা দেখে । হেচকা টান দিয়ে লাবিবাকে বিছানায় ফেলে দেয় । লাবিবা আআ… করে চিল্লিয়ে উঠে । ফ্রমের বিছানায় ব্যথা পাবে না মাথায় আসতেই চুপ হয়ে যায়। তানভীর আরেকহাতে শাড়ি আরো উপরে তুলে দেয় । আচড়ের দাগে ঠোটের স্পর্শ দিতেই কেপে উঠে লাবিবা । বিছানার চাদর ঘামচে ধরে । পুরো পায়ে ঠোট বুলাতে থাকে তানভীর । পকেট থেকে প্রসার সুন্দর স্টোনের এঙ্কলেট বের করে লাবিবার দু পায়ে পড়িয়ে দেয় । এঙ্কলেট সহ দু পায়ে চুমু দিয়ে উপরের দিক উঠে যায় । লাবিবা হাত দুটো চুমুতে ভরিয়ে দিয়ে প্যাকেট থেকে কাচের লাল সবুজ চুড়ি বের করে পরিয়ে দেয় । হাত ছেড়ে গলায় মুখ গুজে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে। ঘাড়ে তানভীরের দুষ্টুমির ছোয়ায় কাপতে কাপতে দু হাত ভর্তি চুড়ি নিয়ে ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে ঝুন ঝুন শব্দে হাসতে থাকে । –হুয়াট এ কু এক্সিডেন্ট! আপনি কি করে জানলেন আমি লাল সবুজ শাড়ি পড়বো ? –জানিনিতো। দেখেছি। সব কালারের চুড়ি এনেছি তোমার জন্য । এখন শুধু লাল সবুজ পড়ালাম শাড়ির সাথে মেচ করে।
তানভীর কিছুক্ষন সেই হাসি উপভোগ করে । তারপর হাত ধরে একটা চুড়ি খুলতেই লাবিবা আটকে দিয়ে বলে –খুলছেন কেনো ? সুন্দর লাগছে তো ।
— পরে পড়ে নিও হুম ?? এখন না খুললে দেখবে সব গুলো ভেঙে তোমার হাত নয়তো আমার পিঠ কেটে যাবে । এমনিতেই তোমার নখ বড় হয়ে গেছে দেখছি । আমার পিঠের বারোটা বাজতে যাচ্ছে ।
লাবিবা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলে । গাল দুটো লাল হয়ে যায় । লোভ সামলানোর প্রশ্নই উঠে না ভেবেই তানভীর কামড় বসিয়ে দেয় ।
To be continue _____
®লাবিবা______?