একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৫৪
#লাবিবা_তানহা_লিজা
?
দেখতে দেখতে লাস্ট ইয়ারের ক্লাস শুরু হয় । এতোদিন লাবিবার জন্য তানভীরকে ভার্সিটি থেকে বাসা এতোদূর কষ্ট করে যাতায়াত করতে হয়েছে । বাড়ির লোক নতুন বউকে আসতে দিতে চায়নি । এখন তারা চাইলেও রাখতে পারবেনা । লাবিবাকে সাথে নিয়ে রওনা হয় তানভীর । এতোদিন পর ভার্সিটির দেখা মিলবে বলে খুবই খুশি । তানভীর চুপচাপ লাবিবার হাসি মুখ দেখে যায় । লাবিবা তানভীরের বুকে মাথা রেখে ঘাড় উচিয়ে তানভীরের গালের খোচা খোচা দাড়ি নিয়ে খেলতে থাকে । তানভীর ড্রাইভ করতে করতে বার বার লাবিবার চোখে চোখ রাখে । লাবিবা মুখ উচিয়ে গালে চুমুও দিয়ে দেয় । ঠোটের কোনে দুষ্টুমির হাসি রেখা ফুটিয়ে তুলে । তানভীর চোখে চোখ রেখে বলে –এক্সিডেন্ট হলে ?? তখন কাকে চুমু দিবে ? সামনের দিকে তাকাও আর চুপটি করে বসে থাকো ।
লাবিবা কিছু না বলে গলা জড়িয়ে ঘাড়ে মাথা রেখে চুপটি করে থাকে । ভার্সিটির এরিয়া তে ডুকেই তানভীর জিজ্জাসা করে –হোস্টেলে উঠবে তো ? নাকি কোয়ার্টারে ? –হোস্টেলে ম্যারিড দের তো থাকতে দেয় না। কিভাবে থাকবো তাহলে ?
–প্রিন্সিপালের অনারে থাকবে ।
–প্রিন্সিপালকে সাথে নিয়ে একবিছানায় থাকতে পারবো তো ? যদি সেই ব্যবস্থা করে দেন তাহলে থাকতে পারি ।
–আপনি কোয়ার্টারে থাকতে পারেন । একরুমে একবিছানায় । কেউ মানা করবে না ।
–আমিতো আপনার পাওয়ার দেখতে চাইছি । চলেন হোস্টেলেই থাকি দুজন । একটা রুম নিয়ে নেন ।
গাড়ি থামিয়ে লাবিবার দিকে ঘুরে বসে তানভীর । চোখ উচিয়ে বলে –হোস্টেলের রুম নিবো নাকি হোটেলের ? কোনটা?
লাবিবা লজ্জায় টমেটো হয়ে সামনের দিকে মুখ করে সোজা হয়ে বসে । তানভীর হা হা করে হেসে ফেলে । নাকটা টেনে দিয়ে বলে –যাবো ? তাহলে হোটেলে থাকছি নাকি আজ ?
–না থাক কোয়ার্টারেই থাকবো । এটাই বা হোটেলের থেকে কম কি ? সাজিয়ে রাখলে এটাও বেস্ট।
–হোটেলের প্রতি এতো প্রেম কই থেকে আসলো ?
–আসল প্রেমটাতো সেখানেই ধরা দিয়েছিলো তাই আর কি ।
–কোথায় ? কিভাবে?
–আপনার সাথে অনেকসময় হোটেলে টাইম স্পেন্ড করা হয়েছে। সেই মুহুর্তে আপনার উপস্থিতি , ব্যবহার,লাভ, কেয়ারিং গুলো একটু একটু করে দানা বেধে আমার হৃদপৃন্ডে জমা হয়েছে । ভুলবার নয় কোনকিছু ।
তানভীর মুচকি হেসে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে । লাবিবাও নেমে পড়ে । ঝালমুড়ি মামা সেখান দিয়েই যাচ্ছিলো । লাবিবাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসে । ঠোট প্রসস্ত করে বলে –আরে মামুনিযে । অনেক দিন পর । ক্লাস শুরু হয়ে গেছে । এবার মা আমার ঝালমুড়ি মিস করবে না ।
–মামা আজ থেকে ডেইলি বিশ টাকার ঝালমুড়ি নিবো । একটা আমি খাবো আরেকটা আপনাদের প্রিন্সিপাল খাবে । টাকাও প্রিন্সিপাল দিবে ।
–হ মা আমি শুনছি । তুমি প্রিন্সিপালের মিসেস এখন । দোয়া করি অনেক সুখি হও । তোমাদের জন্য ঝালমুড়ি বানাই ।
দুজনে ঝালমুড়ি খেতে খেতে কোয়ার্টারে ঢুকে যায় । লাবিবা নিজের মতো করে পুরো কোয়ার্টার গুছিয়ে নেয় ।তানভীর অবশ্য বাইরে যায় খাবার আনার জন্য। পরদিন থেকে শুরু হয় রেগুলার ক্লাস আর ডিউটিস ।লাবিবা রেড়ি হয়ে গুটি গুটি পায়ে ভার্সিটির দাড় গোড়ায় এসে দাড়ায় । সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই একে একে অনেকেই লাবিবাকে দেখে হাসি মুখে সালাম দিয়ে জিজ্জাসা করে –মেডাম কেমন আছেন ? মেডাম অনেকদিন পর দেখলাম । মেডাম ট্রিট কিন্তু বাকি ছিলো । মেডাম কোয়ার্টারে থেকে আসলেন নাকি ? ব্লা ব্লা ব্লা …..। কোনমতে লাবিবা পা ঠেলে ঠুলে ক্লাস রুমে এসে থামে । ব্রেঞ্চের উপর থম করে বসে পড়ে । জোরে শ্বাস ফেলে বলে –ও আমার আল্লাহ। বাচলাম । এরা যা শুরু করেছে মেডাম মেডাম বলে.. বিরক্ত খাইয়া ফেলছি একদম । পেছন থেকে জবা এসে বলে মেডাম কে বিরক্ত করেছে ? জাস্ট নামটা বলেন একবার । লাবিবা বড় বড় চোখ করে তাকায় ।
–তুইও মেডাম মেডাম করছিস ? আজজবব।
–কেনো কি সমস্যা মেডাম ?
–মেডাম ডাকবিনা একদম । তোর কোথাকার মেডাম আমি ?
–কেনো স্যারের ওয়াইফদের মেডাম ই তো বলতে হয়।
–কিন্তু আমাকে বলবিনা ।
–আচ্ছা মেডাম ।
–আবার মেডাম ।
দরজা দিয়ে হাসিমুখ নিয়ে ক্লাসরুমে ঢুকে মলি । লাবিবা জবা মলিকে দেখে হা । ম
মলি এসে দুজনের মুখ লাগিয়ে দিয়ে বলে –কিরে কেমন আছিছ জবা আর মেডাম কেমন আছেন?
–তুইও মেডাম !!
–মেডামকে তো মেডাম ই বলবো তাইনা ?
জবা এগিয়ে এসে বলে –দোস্ত …এইগুলা কি ?? নাকে বড় নাকফুল কেনো ? মাথা ঘুরতাছে আমার ।
মলি লজ্জা মুখ করে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে –আসলে..আসলে পরিক্ষার পর এতোদিন মামুনকে না দেখে থাকতে পারছিলাম না । এতোগুলো দিন একা একা থাকা যায় নাকি ! তাই বাবা মা কে রাজি করিয়ে বিয়েটা সেরেই নিয়েছি ।
–মানে কি ? কিভাবে কি ?আমরা জানলাম না কেনো?
–আসলে সময় ই পায় নি জানানোর । এতো বিজি ছিলাম মামুনকে নিয়ে যে কাউকে জানিতেই পারিনি ।
–আম্মাজান আফনে কি আব্বাজানের থাইকা দুইডা মিনিট ও সময় পান নাই ?
–আঙ্গে না । এক মিনিট ও পায় নি। সরিরে ।
লাবিবা রেগে গিয়ে বলে ঐ মামুন ভাইয়ারে ফোন দে । আসতে বল । বাথরুমে গেলেও একসাথে পাঠামু তোদের দুইটাকে । শালী তুই এক মিনিট টাইম পাস নাই তাইনা ? বিয়ে করে ভুলে গেছিস আমাদের ।
জবা চটপট মামুনকে ফোন দেয় । আর লাবিবা মিলির উপর রিতীমতো রাগের ফুলঝুড়ি ফুটাতে থাকে । মামুন হন্তদন্ত হয়ে ক্লাসরুমে ঢুকে লাবিবার রাগ ঝাড়ানো দেখে লাবিবাকে থামাতেই লাবিবা মামুনের উপর রাগ ঝাড়ে । একটা ফোন করতে পারে না । এতোই বিজি তারা । দুজনকে আলাদা হতেই দেওয়া হয় না । অপারগ মামুন মিলির সাথেই মাথা নিচু করে কেপ পড়ে ক্লাস করে । মামুন বুঝতে পেরে বলে –চলো রেস্টুরেন্টে যাওয়া যাক । জবা আর লাবিবার ঠোটে হাসি খেলা করে । আবার দুজনেই আফসোস করে শারমিনের জন্য । গাধীটা এখনো জামাইয়ের বাড়ি থেকে বেরোতে পারে নি । আফসোস ।
রেস্টুরেন্টে যেতেই বাবুর মুখোমুখি হয় । বাবু ক্রাচের উপর ভর দিয়ে হেটে রেস্টুরেন্ট থেকে চলে যাচ্ছিলো। লাবিবাকে দেখেই থমকে দাড়ায়। মামুন বাবুকে দেখেও না দেখার ভান করে ভিতরে ঢুকে পড়ে । কিন্তু লাবিবা চলে না গিয়ে বাবুর সামনে গিয়ে দাড়ায় । বাবু নির্লিপ্ত চোখে লাবিবাকে দেখে চোখ ঘুরিয়ে নেয় । লাবিবাই প্রথম কথা বলে –কেমন আছেন বাবু ভাই ?
বাবুর মুখ থেকে চাপা আর্তনাদ বেরিয়ে আসতে চাইলেও সংযত করে । লাবিবা আবারো বলে –বাবু ভাই । রাতে ঘুম হয় আপনার ? কথাটা বিদ্রুপের বুঝতে পারে বাবু। লাবিবা মুচকি হেসে বাবুকে ক্রস করতেই বাবু বলে উঠে –আই এম সরি । সরি ফর এভরিথিং । থমকে দাড়ায় লাবিবা । কিন্তু বাবুর দিকে না তাকিয়ে চলে আসে মিলিদের কাছে। চারজনে জমপেশ ভুড়ি ভুজ করে ।
চলবে __?
{ অনেক চেষ্টা করেও আর লিখতে পারলাম না। মাথা ব্যথা করছে সন্ধ্যা থেকে । বলেছিলাম গল্প দিবো তাই দিলাম । গল্পটি কাল লাস্ট পার্ট দিবো । এই গল্পটি অনেক প্রিয় একটা গল্প ছিলো আমার । লেখার সময় অতীতে ফিরে যেতাম । অনেক মজা করে নিজের ব্যপারে আর জল্পনা কল্পনা গুলো লিখতাম । সত্যি প্রচুর মিস করবো গল্পটাকে । ভাবতেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমার । }