একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৮

0
7250

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৮
#লাবিবা_তানহা_লিজা

?
শহীদ স্যারের ক্লাস । স্যার পাটি গনিত করতে দিয়েছে ক্লাস পরিক্ষায়। যা লাবিবার একদমি পছন্দ না । পাটিগনিত কিছুতেই মাথায় ঢুকে না । লাবিবা কলম মুখে দিয়েএদিক ওদিক তাকিতুকি করছে । নুপুর কলমের হেট মুখে দিয়ে মাথা চুলকাতে থাকে । সাদিয়াদের বেঞ্চিতে চোখ পড়তেই মুখ হা হয়ে যায় । খাতার নিচে নকল রেখে দিব্বি পরিক্ষা দিচ্ছে । এরা ক্লাস পরীক্ষাতেই নকল করে তো ফাইনালে কি করবে ?তবে নকল তো করতেই হবে । কারন শহীদ স্যার final exam এ কিছু বলে না but class test এ ফাটিয়ে মারে একেকটাকে । সেজন্য আজকের নকল । তিথী লাবিবার দিকে তাকিয়ে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে । ইশারায় বলে নকল লাগবে কিনা ? লাবিবা কাচুমাচু করতে থাকে । নকল আর ও কখনোই মিলে নি । কিভাবে করতে হয় তাও জানে না । তিথী স্যারের আড়ালে লাবিবার হাতে গুজে দেয়। লাবিবার হাত কাপতে থাকে । কি করবে ভেবে পায়না । ফেলে দিবে নাকি রাখবে ? রেখে কি করবে ? কিভাবে স্যারের সামনে দেখে দেখে লেখবে ? সব তালগোল পাকিয়ে যায় । চোখ ফেটে যেন কান্না চলে আসে ।
স্যার – হাতে কি ?
চমকে উঠে লাবিবা। ও আমার আল্লাহ এখন কি করি ?
স্যার – দেখাও দেখি ।
লাবিবা হাত এগিয়ে দেয় । স্যার হাতে নিয়ে দেখে নকল । রাগে ফুসতে ফুসতে এক ছাত্রীকে বলে
– হেড স্যার কে ডেকে আনো । তার শালিকার কর্মকান্ড দেখে যাক।
মুক্তা স্যার এসে মুখ লুকানোর জায়গা পায় না । মান সম্মানে টুট পড়লো । লাবিবাকে হেচকা টানে ক্লাসের সামনে এনে দাড় করায় । বলে – কান ধর । এক পায়ে দাড়িয়ে থাক।
লাবিবা কেদে ফেলে । কান ধরতে ধরতে বলে – আমি কিছু করিনি । আমি পাটি গনিত পারিনা ।
– তার জন্য তুই নকল করবি ??
– আমি করিনি ।
– তাহলে আসলো কোথা থেকে ? দাড়িয়ে থাক তুই ।
লাবিবা অসহায় ভাবে দরজায় দাড়িয়ে থাকা নুপুর, তিথি, সাদিয়া, নুরেজার দিকে তাকিয়ে থাকে । তারাও চুপ হয়ে থাকে । কিছু বললে তাদের ও দাড়িয়ে থাকতে হবে । নুপুর আসতে চাইলেও পারছেনা । কারন স্কুলের পেছনে তার আব্বুকে দেখেছে একটু আগে । জানতে পারলেই হলো ।

বাড়িতে ডুকে লাবিবা মন খারাপ করে । সখিনা জিজ্জাসা করে – কিরে পরিক্ষা কেমন হলো ?
– কচুর মাথা।
রুমে গিয়ে ফ্রেস হলো । গোসল করে আসে । সাবিনা খাবার দিলেও খায় না । ফোন দেয় বিনাকে । ফোন ধরতেই বলে
– বিনাপু তোমার বুইড়া জামাই কই ?
– বুইড়া কস ক্যা ?
– দেড়শ বার কমু । শালা কচু কাটা ব্যাঙের ডিম, মুরগের বাচ্চা, বলদের ছানা , মানুষের ডিম, করল্লার বেগুনী,মিষ্টির টক,খরগোস কথাকার ।
– কি করছেটা কি ?
– তিথী নকল করে আমার হাতে নকল ধরিয়ে দিছে । আমি নকল করি নাই কতবার বললাম he is not করল belive . Front the classroom আমাকে দাড় করিয়ে রাখলো with কান ধরে উপরে তুলে one leg.
– ভালো করছে । আরো punishment দেওয়া উচিত তোকে ।
– হায় হায় ও আমার আল্লাহ এই বুইড়া ভিম দেখি আমার sis কে বিয়ে করে আমার থেকে kidnap করে নিলো ।
– বুইড়া বলবিনা বলে দিচ্ছি ।
– তো কি বলবো ? আব্বুর বন্ধু ছিলো । তোমাকে বিয়ে না করলে তো আমার কাকু হতো । ভাগ্যিস আমি পেটে ছিলাম নয়তো কোনদিন কাকুর সাথে বোনের বিয়ে দিতাম না ।
– তুই দুনিয়াতে থাকলে আমার বিয়েই হতো না। এখন যা হয় ঐটাই ডাকবি ।
– হতো হতো । আমি পছন্দ করে বিয়ে দিতাম ।
– তাহলে আমার কপালে আর সংসার থাকতো না ।
– সেটা বড় কথা না । কথা হচ্ছে সাবধান করে দিবে next time থেকে যেন do me belive . Bye.

লাবিবা আর নুপুর চুপ চাপ বসে । কেউ কোন কথা বলে না । তানভীর ব্যপারটা খেয়াল করে । দুস্টু পুতুল চুপ করেও থাকতে পারে দেখে তানভীর খুশিই হলো । কিন্তু বললো – মন খারাপ ?লাবিবা মাথা নাড়িয়ে না করে। পড়া দেয় দুজনেই । তানিয়া বলে উঠে – লাবিপু তুমি কান ধরে নিল ডাউন হয়ে দাড়িয়ে ছিলে কেনো গো ?
লাবিবা তানিয়ার উৎসুক মুখের দিকে তাকায় । লাবিবার কান্না চলে আসে । যে কাজ সে করবেনা সেটা র জন্য punishment পেলে তার খুব খারাপ লাগে। তানভীর জিজ্জাসা করে – দুষ্টু পুতুল ..কি দুষ্টুমি করেছিলে তুমি ?
– আমি কিছু করিনি । নকল না করতেই নকলের জন্য দুলাভাই punished করেছে আমায় । হাতে নকল ছিলো তিথী দিয়েছিলো ।
– কিসের নকল ছিলো ?
– পাটি গনিতের । আমি পাটিগনিত পারি না।
– আগে বলবে তো । text book বের করো । পাটি গনিত শিখিয়ে দিবো সব পারবে । কয়েকদিনেই শেষ করবো । টেনশন নিও না ।
লাবিবা আড় চোখে নুপুরের দিকে তাকাতেই নুপুর চোখ মারে । আস্তে আস্তে দুজনেই বলে – বাচলাম ।সূত্র একটাও শিখিনি ।
নুপুর – জানু একসাথে বললাম । guest আসবে ।
লাবিবা -আমাদের guest তো একজন ই । মুক্তা ভাই।
তানভীর কয়েকটা অংক বুঝিয়ে দেয় । ছুটি দিয়ে দেয় । আজ অনেকক্ষন অংক বুঝিয়েছে তাই বিকেল গড়িয়ে গেছে। একটু পর সন্ধ্যা নামবে । এতোক্ষনে খেয়াল হলো তানভীরের । এগিয়ে দিয়ে আসা উচিত ছিলো ।রাস্তা ভালো না । সন্ধ্যে লাগলে আবার সমস্যা । দুটো মেয়ে ..যে দুষ্টু কিছু হয়ে গেলে ইসমাইলকে কি জবাব দিবে ? গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরে তানভীর ।

লাবিবা চুপচাপ হাটছে । নুপুরের আর ভালো লাগছে না । – জানু … কথা বলবিনা ?
– ……..
– ঐ জানু। sorry 100 টা।
– ……….
– একটা জিনিস আনছি for you and me .
– দেখা ।
নুপুর ব্যাগ থেকে দুইটা টাইগার বের করে একটা লাবিবার হাতে দিলো ।
লাবিবা – টাইগার । এইটা খেলে কি হয় ? মানুষ টাইগার হয়ে যায়?
নুপু – নারে । খেলে energy পাওয়া যায় । টাইগারের মতো ।
লাবিবা বোতলের মুখ খুলে মুখের কাছে নিতেই গন্ধটা নাকে যায়। বোতল ফেলে ওক ওক করতে থাকে । নুপু হাসতে থাকে ।
– জানু এইটাতেও তোর বমি পায় ?
– চুপ থাক ছেমড়ি । এগুলো কি খাস ? মদের গন্ধ। ওয়াক ..
– ধর এইটা the tiger wine? আজ আমরা এটা খাবো ।
– কাভি নেহি । বমি আসে আমার ।কোক না এনে কি আনসোস এটা ?
– মাতাল হমু তো । দেক আমি খাই । বলেই এক চুমুকে পুরোটা শেষ করে দিলো নুপুর । লাবিবা নাক ধরে শুধু চেয়ে দেখলো ।মনে মনে বললো আহা কত সুন্দর করে এক চুমুকে খেয়ে দিলো । আমি যদি খেতে পারতাম । নুপুর মাতালের অভিনয় করে সামনে এসে একটা হালকা ছোয়া দিলো । মাতলামো ভান ধরে বলতে লাগলো – আজকে আমি মাতাল । পুরো বিশ্ব কাপিয়ে দিবো আমি । সব শেষ করে দিবো । মুক্তা স্যারের পেন্টে ফুটো করে দিবো । তোকে ভালুপাসবো জানু ।
লাবিবা মজা পেয়ে গেল । বোতলটির দিকে তাকিয়ে বললো – এখানে এক মিনিট দারা আর আধা তিন মিনিটের মধ্যে আসতেছি । লাবিবা দৌড়ে এক বাড়িতে ঢুকে পড়ে । বোতলের পানি ফেলে দিয়ে ভালো করে ধুইয়ে পানি ভরে আনে । এনে নুপুরের সামনে গিয়ে এক চুমুকে অর্ধেক বোতল সাফ করে । হাটতে হাটতে দুজনেই মাতালের অভিনয় করে । রাস্তা ফাকা দেখে দুলতে দুলতে মাতলামো করতে করতে হাটতে থাকে ।
লাবিবা – আমি হলাম এই জাহানের শাহজাদি । তোকে ভৎস করে দিবো আমি । আমার অনেক ক্ষমতা ।
নুপু – আমি এই জাহানের সুলতানা । তোকে সানডে মানডে ক্লোজ করে দিবো ।
লাবিবা – তোর টা হয় নাই । তাইলে তো তুই আমার মা হবি ।
নুপু – তাইতো । আবার শুরু কর ।
লাবিবা – হি হি হি আমি হিটলার । বাংলাদেশের প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে আমি যুদ্ধের জন্য তেল মবেল পাঠিয়ে দিবো । আমি মাছের পেট থেকে বাচ্চা বের করবো । আমি নীলতিমির গোডাউন দিবো ।
নুপু – দোস্ত আমি কি করবো ?
লাবিবা – দূর ছেমড়ি তোক দিয়ে কিচ্ছু হবো না। বল আমি বলদের পেট থেকে ডিম বের করবো , সেই ডিম ভেজে এই জাহানের সুলতানা লাবিবাকে খাওয়াবো।
নুপু – আমি কি তোর রাধুনী নাকি ?
লাবিবা – নাহ তোরে মানুষ করতে পারলাম না । আমি যা যা করমু তুইও তাই করবি ।
দুজনে – হা হা হা মাছের পেটে বাচ্চিকা ধরছে । ছাগলের পেটে ডিম ডুকছে ।ইন্দুর খালা চেয়্যারমেনের চেয়ার কেটে ফেলছে । তুই দেখছোস না ?
নুপু – হ আমি তাকাইয়া ছিলাম তুই দেখছস ।

তানভীর গাড়ীতে ছিলো। দেখে দুটোয় রাস্তায় দোলতে দোলতে হাটছে আর উচ্চস্বরে হেসে কথা বলে মাতলামো করছে। হাতে বোতল দেখে চমকে উঠে । আজকাল 7up , tiger এগুলোর বোতল করে মদ বিক্রি হয় । দুষ্টু দুইটার হাতে ওরোকম ই বোতল দেখতে পায়। গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে আসে । হাত থেকে বোতল কেড়ে নিয়ে দেয় এক ধমক
– কি খেয়েছো তুমরা ? রাস্তায় মাতালের মতো করছো ।
লাবিবা নুপুর থমকে দাড়ায় । তানভীর গন্ধ নিয়ে দেখে কোন গন্ধ নেই । একটু মুখে নিয়ে দেখে পানি । কি বলবে সে বলার ভাষা খুজে পায়না।দাতে দাত চেপে বলে- এবার চলেন মাতালপরী , অনেক মাতলামো করেছেন । লাবিবা নুপুরকে নিয়ে গাড়িতে উঠায় । বাসায় পৌছে দিয়ে আসে ।

লাবিবা বাসায় এসে দেখে শোরগোল এ ভরা । ভিতরে রুমে যেতেই দেখে বীনা কান্নাকাটি করছে । আর সবাই নিজেদের কাজ করছে । মেয়ে যে কাদছে কারো কোন খেয়াল নেই । এরা কি পরিবার ? সন্দেহে ভরপুর ।লাবিবা গিয়ে জিজ্জাসা করে – আপু কাদছো কেন?
বিনা কান্নার জোর আরো বাড়িয়ে লাবিবাকে জড়িয়ে ধরে । – তুই ঠিক ই বলেছিলি বোন । তোর ভাই একদম ভালো না । বুড়ো হোওয়ার সাথে সাথে ঙ্গান বুদ্ধিও লোপ পাইছে । আজকে আমাকে খুব বকছে ।
– তাই বলে তুমি চলে আসবা ?
– হুম । আর যামু না ওর বাড়ি ।
– এই ডায়লগ কতোক্ষনের জন্য ?
– মানে ? কি বলতে চাস তুই ?
– উর্ধে দুইদিন মেয়াদ । ব্যাগ থেকে অযথা কাপড় নামিও না । এখানে যে গুলো আছে সেগুলাই পড় ।
– সব গুলাই আমাকে তাড়াতে চায় ‌।
বেলাল মুচকি হাসে । পাগলী মেয়ে তার । লাবিবা রুমে গিয়ে মুক্তাকে ফোন দিতেই মুক্তা ফোন রিসিভ করেই অস্থির হয়ে বলে – তোর আপু কই ?
– ওর রুমে । কাদতেছে বসে বসে ।
মুক্তা দীর্ঘশ্বাস ফেলে । বুকের উপর থেকে যেন পাথর সরে গেলো ।
লাবিবা – miss you .
মুক্তা হাসে । – আসতেছি ।
রাত এগারোটার দিকে মুক্তা আসে । লাবিবা বসে বসে oggy দেখতেছিলো । মুক্তার ডাকে বিনা লাবিবার পাশ থেকে উঠে রুমে চলে যায় । মুক্তা ভিতরে ঢুকেই বলে – ক্ষুধা লাগছে লাবি । খাবার দে । মুক্তা ভালো করেই জানে বিনা না খেয়ে বসে থাকবে । টেবিলে খাবার দিয়ে সখিনা বিনাকে জোর করে টেবিলে আনে খাওয়ার জন্য । মুক্তা আর বিনা পালাপাশি বসে খাচ্ছে । লাবিবা মুক্তার ফোন নিয়ে games খেলতে শুরু করে । নিঃশব্দে খাওয়া দেখে মুক্তার আর ভালো লাগে না । জোরে জোরে বলে – আমার কিউট শালিকাটাকে দেখতে ইচ্ছা করছিল তাই আসছি । নয়তো আসতাম না । বিনা মুক বাকিয়ে ভেংচি কাটে । খাওয়া শেষ করে রুমে চলে যায় । পিছু পিছু মুক্তাও যায়

to be continue ____

®লাবিবা___

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here