একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৯

0
6670

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৯
#লাবিবা_তানহা_লিজা

{ ভূত পর্ব ??}

?
লাবিবা আর মুক্তা সকালে খেয়ে স্কুলে চলে আসছে । বিনাকে আসতে বলেছে কিন্তু বিনা বলে দিয়েছে সে আর ঐ বাড়ি যাবেনা । মুক্তা রাগারাগী করে গেছে যাওয়ার সময় । এর জন্য লাবিবা মুক্তা দুজনের ই মন খারাপ । ক্লাসে এসে লাবিবার মন খারাপ দেখে সবাই ভাবছে কালকের জন্য মন খারাপ করে আছে এখনো । টিফিন পিরিয়ড়ে সবাই মিলে পুকুর ধারে গোল হয়ে বসে । নানান কথা বলে লাবিবার মুখ থেকে কথা বের করতে চায় । কিন্তু পারে না । তিথী একসময় বুদ্ধি করে বলে – জানিস আমার দাদা ভুতের বিয়ে পড়িয়েছে । চমকে অবাক হয়ে তাকায় লাবিবা । বাকিরা মনে মনে হাসে ।
লাবিবা – সত্যি ?? কাজী হয়ে বিয়ে পড়িয়েছে ?
তিথি মনে মনে মিট মিটিয়ে হাসে। কিন্তু দিনের বেলাতেও ওর দাদার আর জিনের বিয়ের কথা বলতে ভয় পাচ্ছিলো । একটু চেপে বসে তাই।
নুপুর – কিভাবে বিয়ে পড়ালো ? ওরাও কি কবুল বলে ?
তিথী – শোন তাহলে । আমার দাদা তো রাত করে ক্ষেতে পানি দিতো । তখন শীতকাল ছিলো ।দাদা কাপতে কাপতে চাদর মুড়ি দিয়ে পানি দেওয়ার জন্য বেড়িয়ে যায় বারোটার পর । ক্ষেতের পাশে বসে ড্রেইনে পানির আসা দেখছিলো টর্চ লাইট জালিয়ে । হটাৎ হাত থেকে টর্চ পড়ে যায় । দাদা পানিতেই হাতিয়ে তুলে টর্চটা । কিন্তু নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো । হটাৎ পাশে এসে একজন বললো ফকির মিয়া যে । দাদা চমকে উঠে পাশে তাকিয়ে অন্ধকারে একটা ইয়া বড় মানুষের মতো দেখলো । তার শরীর থেকে ফুলের গন্ধ আসছিলো।
– হয় । আপনি কেঠা?
– আমার নাম শরীয়তউল্লাহ জ্বীন ।
– জ্বীন ??
– হ্যা । আমার সাথে চল ।
– কোথায় ? আমি কেন যাবো ?
– বিয়ে পড়াবি আমার ছেলের । আয় আমার পিছু ।
দাদা ভয় পায়নি । না গেলে ক্ষতি করবে তাই পিছু পিছু যায় । জ্বীনটা একটা চকচকে প্রাসাদে নিয়ে যায় দাদাকে । বিয়ে বাড়ি ফুলে ফুলে সাজানো । সুন্দর স্মেল পাচ্ছিলো দাদা । বর কনেকে দেখে দাদা হা করে ছিলো । জ্বীনরা অনেক সুন্দর হয়। বর ছিলো জ্বীন আর বউ ছিলো পরী । শরীয়ত উল্লাহ ধমক দেয় দাদাকে ।
– বিয়ে পড়াও ফকির মিয়া । আমার ছেলের বউয়ের দিকে আর এক সেকেন্ডের কম সময় তাকিয়ে থাকলে তার রুপের ছটায় তুমি এখনি পাগল হয়ে যাবে ।
দাদা তারপর বিয়ে পড়ায় । দাদাকে কলাপাতায় খিচুড়ি মাংস খেতে দেয় । কিন্তু দাদা খায় না । হাতে করে ফিরে আসে একদিন পর । এদিকে আমরা খুজতে খুজতে অহারন দাদাকে । দাদা এসে আমাদের সব বলে আর দাদীর হাত কলাপাতায় মোড়ানো খিচুরিটা দেয় । দাদি খুলেই হাত থেকে ফেলে দেয় । মাংসের বদলে হাড্ডি ছিলো আর খিচুরীর বদলে মানুষের পটি .ছিলো।.yackk…{ সত্য ঘটনা }
লাবিবা – ওদের কখন পাওয়া যায় ?
সাদিয়া – শুনেছি ওরা নাকি রাত বারোটার পর বের হয় । শিউলি তলা , বেলী তলা, গন্নরাজ তলায় আরো অনেক ফুল তরায় এসে থাকে । কারন স‌ফুলে ফুলে পরীরা বসে থাকে জ্বিনদের জন্য ।
নুপুর আর লাবিবা তাকিতুকি করে কিছুক্ষন । ক্লাসের বেল পড়ে যায় । সবাই উঠে পড়ে ।

তারপর থেকে পুরোটা সময় লাবিবার মাথায় শুধু জীনদের কথাই ঘুরপাক খায় । জীন দেখা তার অনেকদিনের শখ । তার খুব ইচ্ছা জীনের সাথে পুতুল খেলবে । আর জীনের পুতুলের সাথে তার পুতুল বিয়ে দিয়ে জীনের শাশুড়ী হবে । জীনকে কিভাবে দেখবে ? খালি চোখে কি জীনকে দেখা যায় ? ভাবতে ভাবতেই নুপুর বলে – জানিস তোর মতো আমারো ইচ্ছা জীন জামাইয়ের খালা শাশুড়ী হওয়া ।
লাবিবা – আজকে আমার সাথে থাকবি ? জীন ধরবো ।
নুপুর – আব্বুকে বলে প্রাইভেট পড়ার সময় একেবারে চলে আসবো । জীনরা কি আসলেই এতো সুন্দর ?
লাবিবা – শুনেছি ওরা নাকি নুরের তৈরী । অনেক সুন্দর । পরীরা আরো সুন্দর । যে ব্যক্তী পরি দেখে তারা নাকি পাগল হয়ে যায় পরীর প্রেমে । পরীদের শরীরের চামড়া ভেদ করে তাদের হাড় দেখা যায় । ওরা নাকি আমার মতো গাউন পড়ে থাকে । দামী পাথরের জুয়েলারি পড়ে । অনেক ম্যাজিক জানে ‌ । আকাশে উড়ে উড়ে বেড়ায় ।
নুপুর- ইস আমি যদি পরী হতাম ..
লাবিবা মিটি মিটি হাসে ।
নুপু – হাসস ক্যা ?
লাবি -আমিই তো পরী ।
নুপু – কিহ ?
লাবিবা তার সপ্নের কথা বলে । দুজনে imagine করে সপ্নটাকে । শরীর শির শির করে উঠে । চোখ মুখ অন্তর আত্মা ছুয়ে ভালোলাগারা ছুয়ে দেয় । নুপুর আফসোস করে সে কেন এই সপ্ন দেখলোনা ।

বিকালে নুপুর এক সেট জামা ব্যাগে তুলে ওর আম্মুকে বলে চলে আসে । মোরে লাবিবার সাথে দেখা হতেই দুজনে হাত ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে এগোতে থাকে । দুজনেই খুব খুশি একসাথে থাকবে আরো ভুত ধরবে ।
পড়তে বসে তানভীর যখন পড়া চায় তখন দুজনের ই খেয়াল হয় ভুরের টেনশনে সব ভুলে গেছে। হাজার চেষ্টা করেও মনে করতে পারে না । তানভীর সামনে বই খুলে দেয় একবার দেখে নেওয়ার জন্য । বার বার চোখ ঘুরিয়েও মাথায় ঢুকাতে পারে না । আরএকটু দেখেই বলে পারবে । লাবিবা চোখ বন্ধ করে পড়া বলতে থাকে । মাঝখানে তানভীরের ধমকে থমকে যায়।
তানভীর – পড়ার ভিতর fairy’s wed with jin কোথায় দেখাওতো ।
লাবিবা চুপ ।
তানভীর – পড়া না শিখে উল্টা পাল্টা চিন্তা ভাবনা নিয়ে ঘুরে শুধু । আবার থাকলো । কাল না পারলে দেইখো তোমার কি অবস্থা করি ।
লাবিবা চুপসে যায় । পড়া পারে না জন্য সবাই বকে । কেউ ভালুপাসেনা । মাথা নিচু করে থাকে । তানভীর পাটি গনিত বুঝাতে থাকে । যা লাবিবার মাথায় কিছুই ডুকে না । আনিস আসে ছুটির সময় । তানভীর সালাম দেয় । – আসসালামু আলায়কুম আংকেল ।
– ওয়ালাইকুম সালাম । কেমন আছো বাবা ?
– এইতো আংকেল আলহামদুলিল্লাহ ।
– যাক যাক ভালোই । তুমি করেই ডাকলাম কিছু মনে করো না বাবা । তোমরা বড় মানুষ বড় মন ।
– ছি ছি আংকেল কি বলছেন ?
– ওরা খুবই দুষ্টু । কথা শুনে না । পড়াশুনায় ভালো । একজন আরেকজন ছাড়া চলে না । একটু দেখ বাবা ।সামনে তো এক্সাম ।
– হ্যা । আমি চেষ্টা করছি ।
– আমার বড় মেয়ে আখি । ওও তোমার কাছে পড়তে চাইছে । ক্লাস টেন এ পড়ে ।
তানভীরের ভালো লাগে না কথাটা । সেকি প্রাইভেট টিচার হয়ে আসছে নাকি ? দুষ্টু পুতুলটাকে দেখতে ইচ্ছা করে তাই পড়াতে চেয়েছে । সাথে নুপুর এসেছে ঠিক আছে বান্ধুবী । এখন তার বোন ও পড়বে নাকি ?
– আংকেল আমি শুধু লাবিবাকেই পড়াতে চেয়েছিলাম পড়ে না জন্য ।ওদের সাথে আমাদের কেমন সম্পর্ক জানেন আপনি । তানিয়া আর লাবিবা ওদের বন্ডিং ভালো একসঙ্গে পড়লে ভালো হয় । আমি তো প্রাইভেট পড়াচ্ছিনা আংকেল ।
আনিস আর কিছু বলে না । ছুটি দেওয়ার পর নুপুরকে বলে – অন্যদিন থাকবে । আমি সকালে ঢাকা যাবো । আজ বাইরে থাকা যাবে না ।
লাবিবা আটকাতে গেলেও আনিস নুপুরকে নিয়ে চলে যায় । নুপুর পিছু তাকিয়ে হাত কানে ধরে ফোনের ইশারা দিয়ে চলে যায়। লাবিবা মন খারাপ করে বাসার দিকে রোওনা দেয় । একটু আগের খুশি গুলো এখন বিষন্নতায় পরিনত হয়ে গেছে ।

রাতে বিনা খেতে আসে না । সকালে মুক্তা বের হয়েছে আর কল দেয় নি । ভিষন খারাপ লাগছে । বসে থাকতে থাকতে এক পর্যায়ে কেদেই ফেলে । লাবিবার এসব ন্যাকা ন্যাকা লাগে । মুখ ভেঙচিয়ে বলে – এখন কাদিস কেন ? আমি যে এনে দিলাম সাথে যেতে পারলিনা ?
লাবিবা তেজ দেখিয়ে উঠে রুমে চলে যায় । প্রহর গুনতে থাকে কখন বারোটা বাজবে আর ভুত দেখা শুরু করবে । আলমারি থেকে একটা নতুন ওরনা নিয়ে নেয় । নতুন কাপড় লাগে নাকি ভুত ধরতে শুনেছিলো একবার । ওযূ করে এসে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বারান্দায় এসে দেখে দেখে ইয়াসিন সূরা পড়ে । সময় হয়ে এলে কল আসে । নুপুরের কল । রিসিভ করে বলে
– – কি করিস ?
– ইয়াসিন পড়লাম ।
– হ আমিও ।
– সময় হয়ে গেছে বাগানে যা । আমি বাগানে।
– যাচ্ছি ।
লাবিবা আস্তে করে কেচি গেইট খুলে বেড়িয়ে পড়ে । হাতে ওরনা । বাগানে এসে বসে ।
– দোস্ত । আসছি ।পরী কই? জিন কই ?
– আরেহ দোস্ত ..পরী জিন তো আসবো । অপেক্ষা কর । দোয়া পড়ছোস এখন দেখতে পাবি ?
– দোস্ত জিন কালো নাকি সাদা ?
– আমি তো জানি সাদা ।
– দোস্ত পা নাকি উল্টা ?
– হ । ভয় পাস না । আমরা দুজন সাহসী । তোর সাথে থাকলে ভালো হইতো ।
– জানু সব অন্ধকার । কিছু দেখি নাতো ।
– বসে থাক দেখবি ।
তখনি লাবিবা দেখে সাদা কি জানি একটা আসছে এই দিকে এগিয়ে । গা ফুলে উঠে ।
– দোস্ত আমি পাইছি । দেখছি । ভুত আসতাছে । ফোন রাখ ।
লাবিবা ফোন রেখে চুপি চুপি পেছন দিকে চলে যায় । হোচট খেয়ে চিৎকার করে নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরে । ওড়না নিয়ে পায়ে পায়ে হেটে সাদা জিনিসটার কাছে এসে পেছন থেকে ঝাপিয়ে পড়ে । শক্তিতে না পেড়ে উপরে উঠে পড়ে আর ইয়াসিন পড়তে থাকে ।
এদিকে উম উম উম শব্দ কানে আসছে । আওয়াজ মানুষের মতো তাই আরো চেপে ধরে উপরে উঠে বসে বলে
– ও জিন তুমি মানুষের মতো গলায় কথা বলো ? তোমার ভয়েজটা চেনা চেনা লাগছে । আচ্ছা তুমি কি আমার চেনা কেউ যে মরে ভুত হয়ে গেছো ?
– উম উম উম …
– উম উম করো কেন ? তুমি কি বেচে থাকতে মুরগী ছিলে ? ডিমদের উম দিতে গিয়ে বোধহয় মরে গেছো তাইনা ?
দম আটকে আসছে বার বার । আরেকটু হলে মরে যাবে বুঝতে পেরে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ঝটকা দিয়ে এক চিৎকার করে উঠে – লাবিবা?????
লাবিবা ছিটকে পড়ে মাটিতে । এমন গলা কাপানো আওয়াজ শুনে ভয়ে জোরে কেদে উঠে – ভুত ভুত বলে।
চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখে মুক্তা সাদা শার্ট গায়ে বসে আছে । এদিকে ওদিকে তাকিয়ে খুজতে খুজতে বলে – কোথায় ভুত কোথাই ?
এদিকে আওয়াজ শুনে বাসার সবাই চলে আসছে । লাইট জালানো হয়েছে । আশে পাশের বাড়ি থেকেও লোকজন এসে জড়ো হয়েছে । বিনা এসে বলে
– তুমি বসে আছো কেন ? আর গায়ে এই উড়না কেন ? লাবিবা তুই ??
একটু আগে বিনার সাথে মুক্তার কথা হয় । বিনা কান্নাকাটি করলে মুক্তা বলে আসছি আমি । এসেই এই অবস্থা ।
লাবিবা কাদো কাদো ফেইস করে দাড়িয়ে পড়ে । আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকে যেন ইসমাইল না বকে । কিন্তু ইসমাইল কিছু না বলে ভিতরে চলে যায় হন হন করে । এখানে থাকলে রাগ উঠবে পরে মেয়েকে মারতে হবে তাই আগেই চলে যায় ।
বেলাল – লাবিবা কি করছিলে তুমি ?
লাবিবা- জিন পরী দেখতে আসছিলাম ।
মুক্রা – তুই জিন দেখতে আসছোস নাকি আমাকে মারতে আসছোস ? ডাইনি কথাকার ।
সখিনা – আচ্ছা যা হবার হয়েছে । এবার চলো ঘরে চলো ।
লাবিবা আর বিনা মুক্তাকে ধরে তুলে ঘরে নিয়ে যায় ।

To be continue ______

®লাবিবা______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here