একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ পর্ব_৫৫ (শেষ পর্ব)

1
8902

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ পর্ব_৫৫ (শেষ পর্ব)
#লাবিবা_তানহা_লিজা

?

ক্যান্টিন থেকে বের হতেই বাবু সামনে এসে দাড়ায় । লাবিবা চমকে উঠে দু পা পিছিয়ে যায় । বুকে থু থু দিয়ে জিজ্জাসু দিষ্টিতে তাকায় । মামুন এসে বলে –কি ব্যপার বাবু ? পথ আটকিয়েছিস কেনো ? খুড়া হয়েও পথ আটকানোর স্বভাব গেলো না বুঝি তোর ? বাবু মামুনের কোন কথার জবাব না দিয়ে লাবিবাকে বলে -উত্তর টা না দিয়ে চলে গিয়েছিলে তাই অপেক্ষা করছিলাম। আমি জানি আমি ক্ষমার যোগ্য নই তবুও ক্ষমা চাইছি ।
–বাবু ভাই ..ক্ষমা একটি মহৎ গুন । আমি অনেক আগেই আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি । আপনার কৃতকর্মের সঠিক শাস্তিটি পেয়েছেন আপনি । আমাদের নতুন জীবনের জন্য দোয়া করবেন । আর দোয়া করি আপনার পা অতি শিঘ্রই ভালো হয়ে উঠুক আর বিয়ে করে সুখি হন।
–ধন্যবাদ তোমাকে ।
মামুন বিরক্তি ফিল করে খুব । মিলির হাত ধরে বলে –এলিজা আসো তো । আমার লেইট হচ্ছে । মামুনের পিছু পিছু লাবিবাও চলে আসে । কোয়ার্টারে ফিরে এসে ক্লাসের পড়া গুলো দেখে । কিছুক্ষন পর তানভীর আসে । লাবিবা তানভীরকে দেখেই মুচকি হাসি দেয় । তানভীর বিরক্তি নিয়ে লাবিবার দিকে একবার তাকিয়েই আবার মুখ সরিয়ে নেয় । ওয়াড্রোব থেকে কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়ে । লাবিবার এমন ব্যবহার দেখে তো আত্মা যায় যায় ভাব । তানভীর বেরিয়ে এলে আমি খাবার গরম করে রেখেছি খেতে আসুন । তানভীর কিছু না বলেই দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায় । লাবিবা হতাশ মুখে বুকে হাত চেপে বসে পড়ে । একমিনিটের মাথায় তানভীর আবার ফিরে আসে । এসেই লাবিবার সামনে চেয়ার টেনে ধপ করে বসে পড়ে। রক্ত চক্ষু দেখে লাবিবার অন্তরাত্মা সহ কেপে উঠে । থুতনি উচিয়ে ধরে দাতে দাত চেপে বলে –বাবুর সামনে কেনো গিয়েছিলে ? কে বলেছিলো তার সাথে কথা বলতে ? কিসের মাফ চাওয়া চাওয়ি ? মাফ চাওয়ার নামে তার কলুষিতো চোখ আমার বউয়ের দিকে বিধিয়ে দিবে সেটা আমি কেনো মানবো ? কেনো কথা বলেছিলে বলো ? কিসের ক্ষমা চায় ও ?
লাবিবা কাপতে কাপতে বলে — বাবু ভাই ভালো হয়ে গেছে । আমার সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করেনি । শুধু ক্ষমা চেয়েছে । আমি ক্ষমা করে দিয়েছি ।
চেয়ারে লাথি দিয়ে উঠে পড়ে তানভীর । রাগ সামলাতে না পেড়ে খাটে সজোরে লাথি দেয়। লাবিবার পা ঝোলানো ছিলো বলে পায়ে একটু লাগার সাথে সাথে চিৎকার করে বিছানায় উঠে বসে। মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে এলোমেলো করে পকেট থেকে ফোন বের করে সামনে ধরে বলে –যদি ক্ষমা চাইতেই যেতো তাহলে এই ভিডিওটা লিংকটা আমাকে কেনো পাঠালো ? নিচে আবার লিখে দিয়েছে হটাৎ প্রেয়সির সাথে দেখা ..প্রেয়সির সাথে কফিশপে এককাপ কফি খেয়ে বের হওয়ার সময় । মামুন লিংকটা না দিলে তো জানতেই পারতাম না আমি। কফি খেয়েছিস ওর সাথে তাই না ? তোর জনমের কফি খাওয়াবো আমি । শয়তান কোন দিন মানুষ হতে পারে না । ঐ বাবু কোনদিন ভালো হবে না ।
–আমি কফি খাই নি । শুধু কথা বলছি ।
— ঐ বাবুর সাথে যদি কথা বলিস তাহলে আর আমার সাথে কথা বলবিনা কোন দিন । অন্যের প্রেয়সির সাথে কথা বলবোনা আমি । মিনিমাম লজ্জা থাকলে ঐ বাবুর সাথে কথা বলতিনা তুই । নিলজ্জ কথাকার । এখন কত ভেজাল করতে হবে আমার সোশাল মিডিয়া থেকে এই ভিডিও ডিলিট দেওয়ার জন্য ।
রাগে গজ গজ করতে করতে তানভীর চলে যায় । লাবিবা সেখানে বসেই কস্টের জল বের করে দেয় চোখ থেকে ।
রাতে হাতে এক ব্যাগ বাজার নিয়ে কোয়ার্টারে ফিরে তানভীর । লাবিবাকে কয়েকবার ডাকার পর ও সাড়া পায় না । কিচেনে বাজার রেখে বেডরুমে এসে দেখে কম্বল মোড়া দিয়ে লাবিবা ঘুমোচ্ছে । এই গরমে কম্বল মোড়া দেওয়াতে ভয় পেয়ে যায় তানভীর । জর টর এলো নাকি ভেবে মুখ থেকে কম্বল সরাতেই লাবিবা বড় বড় করে তাকায় । চোখ মুখ পুরো ফুলে লাল হয়ে আছে । চোখের কোনায় এখনো জল । কাদছিলো যে আর বুঝতে দেরি হয়না তানভীরের । নিজেকে এবার অপরাধী মনে হচ্ছে । কেনো যে এই কাজটি করতে গেলো বুঝে উঠতে পারছে না । কপালে হাত দিতে গেলেই জোরে ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দেয় লাবিবা । হাত গরম দেখে বুঝতে পারে জর চলে এসেছে । হুটহাট জর কেনো চলে আসবে ? লাবিবাকে আবার ছোতে গেলে আবার ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দেয় । তানভীর বলে –পুতুল বউ আমি সরি । তখন মাথা ঠিক ছিলো না আমার । তোমাকে বকে ফেলেছি বেশি । সরি বউ । আমি বুঝি নি । জানি না কি বলেছি । তোমার জর কিভাবে আসলো বলোতো ? দেখি টেম্পারাচার । হুট হাট জর তো আসার কথা নয় । আবার হাত এগিয়ে দিতেই লাবিবা কম্বল ছেড়ে উঠে আসে । বিছানা থেকে পা দুটো নামাতেই আহ করে উঠে । তানভীর সাথে সাথে পায়ের কাছে গিয়ে দেখে লাল হয়ে আছে গোড়ালির দিকে । লাবিবা ওভাবেই খুড়োতে খুড়োতে অন্য রুমে চলে যায় । তানভীরের ঘাম ছুটে যায় । এবার তো তার চোখে পানি চলে আসছে । তখন তাহলে এর জন্য চিৎকার করেছিলো। আঘাত করেছে তার বউপাখি টাকে । কিভাবে পারলো এটা করতে । এতো রেগে ছিলো যে আঘাত করে দিলো লাবিবাকে। এর জন্য ই জর চলে আসছে । এর আগেও মেরেছিলো তাখনো জর এসেছিলো। লাস্ট বার যখন চড় দিয়েছিলো ভয়ে তখনি ঔষধ খাইয়ে দিয়েছিলো যাতে জর আসার আগেই চলে যায় । এবার কি হবে ? লাবিবাতো কথাও বলছেনা তার সাথে । উঠে গিয়ে বক্স থেকে ট্যাবলেট বের করে পানি নিয়ে লাবিবার কাছে চলে আসে । সামনে বসে এগিয়ে দিয়ে বলে –কলিজাটা আমি সরি ট্যাবলেট টা খেয়ে নাও প্লিজ । লাবিবা ঘুড়ে বসে অন্যদিকে । তানভীর ঘুড়ে এসেই আবার বলে –জানটা আমার প্লিজ খেয়ে নাও । আমি আর বকবোনা তোমাকে । একটুও হার্ট করবোনা । আমি সরি । আমি খাইয়ে দিচ্ছি । হা করো প্লিজ । প্লিজ সোনা বউটা আমার হা করো । দেখো কতো জর গায়ে ।
হাতের দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ ঘুরিয়ে নেয় । উবু হয়ে পায়ে মলম লাগায় ।
তানভীর ব্যস্ত হয়ে বলে — আমি লাগিয়ে দিচ্ছি । তুমি ট্যাবলেটটা খাও প্লিজ দেন আমি লাগিয়ে দিচ্ছি ।
লাবিবা চুপ চাপ পায়ে মলম লাগিয়ে উঠে যায় । তানভীর কি করবে ভেবে পায় না । বেলকনিতে এসে মামুনের নাম্বারে কল দেয় । দুইবার রিং হওয়ার পর ফোন রিসিভ করে বলে
–হ্যালো । বোন বলো ।
–বাবু ভাই কি বেচে আছে ?
একটা জোরালো নিশ্বাস ছেড়ে বলে –হুম বেচে আছে মড়ার মতো । একেবারে পঙ্গু হয়ে গেছে এবার ।
–ওহ রাখছি । বলেই ফোন কেটে দেয় । রুমে আসলে তানভীর আরো জোর করে কিন্তু একটা কাজ ও হয় না । সারারাত জরে কাতর লাবিবাকে দেখে দেখে কাটাতে হয়েছে । একটু কাছে পর্যন্ত ঘেসতে পারেনি । কাছে এলেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় না পারলে অন্য রুমে গিয়ে দরজা লক করে দেয় । মুখ তো একেবারে বন্ধ টু শব্দ অব্দি করে না ।
পরদিন ক্লাস শেষে বের হতে সময় মামুন সামনে দাড়ানো। লাবিবাকে বলে আসো আমার সাথে । দুজনে গিয়ে বকুলতলায় বসে । মামুন ই প্রথম কথা বলে –শরীর কেমন তোমার ? জর কমেছে?
–কমেছে । ঔষধ খেয়েছি ।
–কথা বলছোনা কেনো স্যারের সাথে ? স্যার কেমন পাগল তোমার জন্য জানো তো । কষ্ট দিচ্ছো কেনো এইভাবে ?
–ভিডিও টা কেনো দিয়েছো ? এরজন্য কতো বকেছে আমায় । কথাও বলতে না করেছে ।
–শোন এলিজা । আমি তোমার ভাই তোমাকে নিয়ে গিয়েছি খাওয়াতে । সেখানে সামনে কেউ এলে তোমাকে আমি প্রটেক্ট করবো । কিন্তু সেইটা ভিডিও করে সোস্যাল মিডিয়ায় আপলোড করবে এটা তোমার হাজবেন্ডকে কি করে না জানিয়ে থাকি আমি বলোতো ? তোমার সব কিছু উনার জানা প্রয়োজন । এইসব দেখলে মাথা এমনিতেই ঠিক থাকে না । তুমিতো অবুঝ নও তাহলে শুধু শুধু কেনো কষ্ট দিচ্ছ ?
–উনার একটু কষ্ট পাওয়া উচিত । আমাকে কষ্ট দিলে তো কষ্ট পাবেই তাই না ? আমাকে কাল ঝালমুড়ি খাইতে দেয়নি , সেদিন মুখ ফুটে বললাম হোটেলে যাবো তাও নিয়ে যায়নি , আমাকে মুইন ভাইয়ের বাসায় যেতে দেয়নি । কাল আবার বলেছে আমি যাতে কথা না বলি । বাবু ভাইয়ের সাথে যখন আমি কথা বলেছি তখন আর কোনদিন উনার সাথে কথা বলবো না ।
–এতো কিছুর প্রতিশোধ একটা দিয়েই তুলছো ?
–আলবাদ ।
–মাথা ঘুরছে আমার । স্যার আপনার অনেক অপরাধ। আমার বোন শাস্তি দিচ্ছে আপনাকে ।
–স্যার অফিস থেকে শুনতে পাবে না । জোরে চিল্লিয়ে বলতে হবে।
আমি সবি শুনেছি চিল্লানোর প্রয়োজন নেই ।
পিছু ঘাড় ঘোড়াতেই দেখে তানভীর পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে । সাথে সাথেই ঘাড় ঘুড়িয়ে চোখ শক্ত করে বন্ধ করে সোজা টনটনে হয়ে বসে পড়ে । তানভীর পকেট থেকে হাত বের করে লাবিবার হাত ধরে এসো বলে গেইটের দিক হাটতে থাকে । ইশারায় মামুনকেও আসতে বলে । ঝালমুড়িমামার কাছে গিয়ে বলে –মামা ঝালমুড়ি বানান । ঝালমুড়ি মামা ঝালমুড়ি বানাতে থাকে । লাবিবা একবার বানানো দেখে তো একবার তানভীরের দিকে তাকায় । মামুন মিটি মিটি হাসছে । লাবিবা অবাক হয়ে বলে মামা..আপনিতো লেবুই দিতে চান না এখন এগুলো কি দিচ্ছেন ? ঝালমুড়ি মামা হাসি দিয়ে বলে –ব্রয়লার মুরগীর কুচি কুচি করা কষা স্যুপ আর পাঙ্গাস মাছের তেলের মসলা । স্যার বলে দিয়েছিলো এখন থেকে আপনারা এই ঝালমুড়ি খাবেন ।
–মামা আপনার খরচ কতো পড়বে জানেন তো ? দশ টাকায় এতো কিছু দিয়ে ঝালমুড়ি ?? ভাভাগো ভাভা ভাবা যায় এগ্লা??
–পঞ্চাশ টাকা করে বিক্রি করছি তো ।
–কিহহহ দশ টাকার ঝালমুড়ি পঞ্চাশ টাকা ? এটা কেমন কথা ? এতো লাভ করতে আসছেন আপনি ?
ধমকে উঠে তানভীর । এক ধমকেই চুপ হয়ে যায় । মামুনকে বলে –মলি কি চলে গেছে ?
–না স্যার । আমার জন্য অপেক্ষা করছে ।
–আসতে বলো । একসাথে ঝালমুড়ি খেয়ে যাক ।
মলি এলে ঝালমুড়ি নিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়ে সবাই । লাবিবা দু একবার মুখে দিয়েই ঝালমুড়ি মামার কাছে এসে বলে –আল্লাহ মামা এত্তো মজা করে কেমনে বানান আপনি ? অসাধারন ইয়াম্মি ইয়াম্মি । আপনাকে পঞ্চাশ টাকার জায়গায় একশ টাকা দেওয়া উচিত । আমি যখন রোজগার করবো তখন একশ টাকা করে খাবো । এখন বুঝেন তো হাজবেন্ডের টাকার দরদ বেশি ।
“দুষ্টু পুতুল নন স্টপ বকবকানি রেখে চেয়ারে বসে চুপটি করে খাও এসে । ”
লাবিবা চুপচাপ এসে চেয়ারে বসে খেতে থাকে ।
তানভীর বলে –রাগ কমেছে ? আজ থেকে এই ঝালমুড়িটাই খাবে তুমি । এইটা খাওয়ানোর জন্য কাল না করেছিলাম ।
উত্তরে লাবিবা মুচকি হাসে ।
রাতে ডিনারের পর তানভীর বলে –চলো ছাদে যাই ।
–আজ তো আকাশে চাদ নেই । আমার ঘুম পাচ্ছে ।
–চলোতো ।
হাত ধরে টেনেই ছাদে নিয়ে আসে । তারা ভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে –চাদ নেই তো । আজকে কি আমরা তারা গুনবো ? আমি যদি বেশি গুনি তাহলে আমাকে কি দিবেন ?
–#একগুচ্ছ কালো গোলাপের অসীম ভালোবাসা।
লাবিবা তানভীরে দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বুকের উপর পিঠ লাগিয়ে দাড়ায়। পেছন থেকে হাত সামনে এনে ধরতেই লাবিবা আনন্দে ব্লাক রোজ বলে চিৎকার করে ফুলের তোড়া হাতে নেয় । তানভীরের গালে টুপ করে চুমু খেয়ে নেয় । তানভীর দুহাতে পেছন থেকে জড়িয়ে নিয়ে কাধে থুতনি রেখে বলে
— আমার পুতুল বউ কি হ্যাপি ?
— অনেকমাচ ভুরি ভুরি ? ।

? So sweet ?

1 COMMENT

  1. Thank you so much ato shondor akta golpo dear Jonno ❤️❤️❤️❤️ Karon golpota Onek Onek shondor sweet cute hoyeche?????????argolper labibar vasha gula shune hashte hashte Pete betha hoye geche????????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here