একগুচ্ছ_ভালোবাসা,০৬,০৭

0
339

#একগুচ্ছ_ভালোবাসা,০৬,০৭
লেখনীতে : আনিশা সাবিহা (ছদ্মবেশী)
পর্ব : ৬

–“আর কয়েকদিন অপেক্ষা করতে পারলি না নুড়ি? বিদেশে যাওয়ার সাথে সাথে পর হয়ে গেলাম তাই না রে?”
বর্ণদার কথায় উত্তর দিলাম না আমি। গলা থেকে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। মনে হচ্ছে আমি কয়েক মূহুর্তের জন্য বোবা হয়ে গেছি। মুখ থেকে আওয়াজ বের করার চেষ্টা করতেই বর্ণদা আবারও বলে উঠল,,,,
–“চোখ লাল করে কি বোঝাতে চাইছিস? আমায় মিস করেছিস? না নুড়ি আমার কথা হয়ত এই কয়েক বছরে ভুলতে বসেছিস তুই। মনে নেই তাই না আমাকে দেওয়া কথাগুলো?”

–“ন…না ব…বর্ণদা! আসলে….
বাকি আর বলতে পারলাম না অনুরাগসহ নৌশিন আর অর্ণব এসে হাজির হলো। সবাই আমার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ল। আমি কি বর্ণদাকে চিনি? আমি গলা খাঁকারি দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলাম। কাঁপতে কাঁপতে বললাম,,,
–“হুমম চিনি আমি। সে বর্ণ রাহমান। আমার মামাতো ভাই। ওই মামি মার ছেলে। এতোদিন বিদেশে ছিলো। হয়ত সবে ফিরেছে।”
আমার কথায় অনুরাগ ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। হঠাৎ বলে উঠলেন,,,,
–“তোমার চোখ লাল কেন? কি হয়েছে?”
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,,,
–“কিছু না তো।”
আমার কথা বিশ্বাস হলো না উনার। সেটা উনার দৃষ্টিতেই ভালোভাবে বুঝতে পারছি। তবুও উনি কিছু বললেন না। হুট করে সরু গলায় বর্ণদা বলে উঠল,,,
–“আমি কি শুধু তোর মামাতো ভাই হই নুড়ি? আমাদের সম্পর্কটা ভাইবোনের মাঝেই কি সীমাবদ্ধ?”

আমি বর্ণদার কথায় ভয়ার্ত চোখে বাড়ির সবার দিকে তাকালাম। সবাই আমাদের দিকে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আর অনুরাগের দৃষ্টিতে একরাশ বিরক্তি! বর্ণদা এবার হাসলো শব্দ করে তাতে চমকে গেলাম আমি। তারপর হাসোজ্জল গলায় বলল,,,
–“আরে নুড়ি! আমরা যে ছোট থেকে একসাথে বড় হয়েছি। একে ওপরের সাথে চিপকে লেগে থাকতাম সব সময়। বেস্টফ্রেন্ড আমরা। আমি বিদেশ যাওয়াতে দেখি তুইও আমায় ভুলে গেছিস।”

বর্ণদার কথায় খানিকটা থতমত খেয়ে আমি বললাম,,,
–“হ্যাঁ হ্যাঁ তাই তো।
–“নতুন ভাবি! তো সে তো আমার বাড়ির মেহমান। সো তাকে এভাবে বাড়ির দরজার কাছে দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন করে চলেছি। এটা একদমই ঠিক নয়। বর্ণ ভাই তুমি বরণ ভেতরে এসো।”
বর্ণদা মলিন হেসে আমার দিকে একনজরে তাকায়। তারপর সবার সাথে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ে।

আমি যেন নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছি না। বর্ণদা সত্যিই দেশে ফিরেছে? ফিরেছে সে এবং সাথে নিজের মনে থাকা এক পাহাড় সমান প্রশ্ন নিয়ে সেটা আমার অজানা নয়। এতো মানুষের সামনে আমায় সেসব কথা বলতে পারল না সে। তার সামনে যেতেই হাত পা কাঁপছে আমার। তার চোখে আমি বেইমান। কিন্তু আমার চোখে সে বেইমান! আসলে বেইমানটা কে?

ফ্লোরের দিকে একনজরে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আমার ভাবনার সমাপ্তি ঘটালো অর্ণব।
–“নতুন ভাবি এভাবে দাঁড়িয়ে কি ভাবছো? সবাই সোফায় বসে আড্ডা দিচ্ছে তুমিও এসো না। ঠিক করে পরিচয় করিয়ে দেবে বর্ণের সাথে। কথাটা বলে আমাকে এক প্রকার জোর করে নিয়ে গেল অর্ণব তারপর অনুরাগের গা ঘেঁষে বসিয়ে দিল সে।
এতোক্ষণ বেশ আয়েশ করে বসে ছিলেন অনুরাগ। আমাকে অর্ণব অনুরাগের কাছে বসিয়ে দিতেই সোজা হয়ে বসে কিছুটা দূরে সরে বসলেন অনুরাগ। হালকা কাশি দিয়ে সবার সাথে কথা বলাতে মনোযোগ দিলেন। ব্যাপারটা বেশ ভালোভাবে লক্ষ্য করল বর্ণদা। তারপর আমার চোখের দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলল,,,
–“তা নুড়ি তুই তোর বরের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলি না যে।”
আমি বাঁকা চোখে অনুরাগের দিকে তাকালাম। উনিও গম্ভীর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। আমি কিছু বলার আগেই অনুরাগ বলে উঠলেন,,,
–“আচ্ছা বর্ণ তুমি অনুশ্রীকে নুড়ি বলে সম্মোধন করছো কেন? ওর নাম তো অনুশ্রী! তুমি আমার বয়সে ছোট তাই তুমি করেই বললাম।”
বর্ণদা আমার দিকে তাকিয়ে পিনপিনে গলায় উত্তর দিলো,,,
–“আমি ওকে ছোট থেকেই নুড়ি বলে ডাকি। ছোট থেকে ওর একটা অভ্যেস ছিল। নানানরঙের ডিজাইনের নুড়িপাথর নিয়ে এসে নিজের কাছে জমা করত সে। তখন থেকেই নুড়ি ডাকি আমি। আর ওকে শুধু এই নামে আমিই ডাকি এবং আমিই ডাকব।”
শেষের কথাটা বেশ জোর দিয়ে বলল বর্ণদা। এভাবেই চলছিল কথাবার্তা। আমি কথা বলতে গিয়েও আটকে যাচ্ছি বারে বারে। বর্ণদার চাহনি আমাকে আটকে দিচ্ছে। তাই না পেরে উঠে চলে এলাম আমি।

রুমে আসতেই দেখি অদ্রিজাকে। মেয়েটা খেলছে দোলনায় শুয়ে শুয়ে। ওকে কোলে তুলে নিয়ে ওর গালে চুমু একে দিলাম। ওকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলাম আমি। চোখ থেকে আপনা-আপনি পানি গড়িয়ে পড়ল। চোখের সামনে ভাসতে লাগল রঙিন অতীতগুলো। বর্ণদা আর আমার বোনা স্বপ্নগুলো একে একে চোখের সামনে ধরা দিতে শুরু করল। আস্তে আস্তে কান্নার বেগ বাড়তে থাকল। আমার কান্না কিছুক্ষণ হা করে চেয়ে দেখল অদ্রিজা। অতঃপর সে নিজেও কাঁদতে আরম্ভ করল। ওর কান্নায় নিজের চোখ থেকে পানি মুছে নিলাম আমি। ওর সামনে কাঁদা উচিত হয়নি আমার। বড্ড ভয় পেয়েছে সে। ওকে থামাতে থামাতে নিচে নিয়ে এলাম আমি। তখনও সবাই গল্পে মগ্ন।

আমাকে দেখে নৌশিন হুট করে বলে উঠল,,,
–“তুমি এসেছো অনু ভাবি? অদ্রিজাকেও নিয়ে এসেছো? এসো বসো। বর্ণ ভাইয়া তোমার আর উনার কাটানো সেই ছোটবেলার কথাগুলো শেয়ার করছেন।”
আমি জোর করে হাসলাম। তারপর অদ্রিজাকে নিয়ে বসতেই অদ্রিজা আরো জোরে কেঁদে উঠল। আমি ওকে থামানোর জন্য অস্থির হয়ে পড়লাম। ওদিকে অদ্রিজার কান্না দেখে অনুরাগও অস্থির হয়ে অদ্রিজার দিকে নিজের মুখটা আনতেই উনার মাথার সাথে আমার মাথা ঢিপ লাগল। সাথে সাথে অনুরাগ সরে গিয়ে নিজের মাথা নাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আমিও চোখ বন্ধ করে নিলাম। উনার শক্ত বাঁশের মতো মাথাটা আমার মাথার সাথে ঢিপ খেয়ে আমার মাথা যেন চিনচিন করছে।

বর্ণদা উত্তেজিত হয়ে সোফা থেকে উঠে এসে আমায় বলল,,,
–“তোর লাগেনি তো? সাবধানে কোনো কাজ করতে পারিস না? দেখি কোথায় লেগেছে।”
কথাটা বলে আমার মাথায় হাত দিতে আসল বর্ণদা। আমি মাথা ঘুড়িয়ে নিলাম। সাথে সাথে বর্ণদার হুঁশ এলো। সবার দিকে তাকিয়ে সোফায় বসে পড়ল সে। আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম।

–“অনুশ্রী! আমি অফিসে যাব। মিটিং আছে রাইট টাইমে না গেলেই নয়। অর্ণব তুইও রেডি হয়ে নে। মেয়েদের মতো টাইম লাগালে খবর আছে তোর। আর বর্ণ তুমি যেহেতু এখানে এসেই পড়েছো সেহেতু কয়েকদিন থেকেই যাও এখানে।”
বর্ণদা মাথা নাড়িয়ে বলল,,,
–“হুমম আমিও ভাবছি থেকেই যাব। অনেকদিন পর নুড়ির সাথে দেখা ভালো করে কথা না বললে কি হয়?”
–“তবে ভাবাভাবি না করে থাকো ইচ্ছেমতো। আর অনুশ্রী ওপরে এসো তো অদ্রিজাকে নিয়ে।”
কথাটা বলে সোফা থেকে উঠে নিজের ভার মুখ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে চলে গেলেন অনুরাগ। আমিও অদ্রিজাকে নিয়ে যেতেই বর্ণদা বলল….
–“কোথায় যাচ্ছিস? আমার রুমটা দেখিয়ে দিবি না?”
আমি ভয়ার্ত গলায় বললাম,,,
–“ন..নৌশিন তুমি একটু বর্ণদাকে গেস্টরুমে নিয়ে যাও না প্লিজ। অনুরাগ ডাকছেন সো…!”
–“হ্যাঁ অনু ভাবি আমি দেখিয়ে দিচ্ছি। বর্ণ ভাইয়া আপনি আমার সাথে আসুন।”
কথাটা বলে মুচকি হেসে হাঁটতে লাগল নৌশিন। বর্ণদা আমার দিকে তাকাতেই আমি সিঁড়ি দিয়ে উঠতে নিলাম। পেছন থেকে তার শক্ত গলা শুনতে পেলাম,,,
–“বার বার পালিয়ে বাঁচা যায় না। আমার প্রশ্ন এড়াতে পারবি না তুই। আমার সামনাসামনি তোকে হতেই হবে।”
আমি বর্ণদার কথায় কোনো জবাব দিলাম না। সিঁড়ি দিয়ে উঠে দ্রুত রুমে এসে ঢুকলাম। অতঃপর সামনে তাকাতেই দেখলাম অনুরাগ সন্দেহি নজর নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।

আমি অদ্রিজাকে বেডে বসাতেই অনুরাগ বললেন,,,
–“একটা কথা বলো তো!”
–“জ্বি? কি কথা?”
উনার দিকে তাকালাম আমি। উনি আলমারি খুলে নিজের অফিসের ড্রেসগুলো বের করতে করতে বললেন,,,,
–“বর্ণ কি আসলেও শুধু তোমার মামাতো ভাই হয়?”
অনুরাগের কথায় থতমত খেয়ে গেলাম আমি। নিজের ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে বললাম,,,
–“তো কি মনে হয়? ও আমার বেস্টফ্রেন্ডও হয় বলেছে তো।”
–“কিন্তু বর্ণ আসার পর থেকে তোমার ব্যবহার অন্যকথা বলছে অনুশ্রী! ওর নুড়ি ডাকে বিদ্যুৎতের গতিতে ছুটে যাওয়া। ইভেন ওকে দেখে কেঁদে দিয়েছিলে তুমি।”
উনার কথায় আমি ফ্যালফ্যাল করে উনার দিকে চেয়ে রইলাম। উনি কি করে জানলেন যে আমি বর্ণদাকে দেখে কেঁদে দিয়েছি?
আমার চাহনি দেখে উনি কিছু একটা আন্দাজ করে বললেন,,,
–“অবাক হচ্ছো? কি করে জানলাম এসব? তোমার চোখজোড়া যখন লাল হয়ে গিয়েছিল বিষয়টা তখনই বুঝতে পেরেছিলাম আমি। কারণ এই দুই দিনে একটু হলেও চিনেছি তোমায়। তুমি নিজেকে শক্ত মনে করো। তবে তুমি সেটা মটেই নও।”
–“যাক তাও যে এতোটুকু চিনেছেন!” (বিরবির করে)
–“কিছু বললে?”
ঘাড় ঘুড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন অনুরাগ। আমি নাবোধক মাথা নাড়িয়ে অদ্রিজার কাপড় চেঞ্জ করতে লাগলাম। অনুরাগ শার্ট পড়ে বোতাম লাগাতে লাগাতে আমার দিকে তাকিয়ে ফিচেল গলায় বললেন,,,
–“তোমার আর বর্ণের মধ্যে কিছু ছিল?”
উনার আচমকা প্রশ্নে আমি থমকে গেলাম। এই প্রচন্ড শীতের মাঝেও আমার কপাল থেকে ঘাম গড়িয়ে পড়তেই অনুরাগ আমার দিকে রুমাল ছুঁড়ে মেরে বললেন,,,
–“ঘাম মুছে নাও।”
আমি ঘাম না মুছে রুমাল এক সাইডে রেখে দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। বেশ কড়া গলায় বললাম,,,
–“কি থাকবে আমার আর বর্ণদার মধ্যে? কিছু নেই। আর থাকলেও বা কি? আপনি তো অনামিকা কে ভালোবাসেন তাই না? তাহলে আমার আর বর্ণদার সম্পর্ক জানার জন্য এতো উতলা হওয়ার দরকার নেই।”

এবার পুরোপুরি দমে গেলেন উনি। আর কোনোরকম প্রশ্ন না করে রেডি হয়ে নিলেন। তারপর অদ্রিজাকে আদর করে নিচে চলে গেলেন। আমি ধপ করে মাথা ধরে বসে পড়লাম। কেন আবারও ফিরে এলো বর্ণদা আমার জীবনে? আর দেশে ফিরতেই কেন ডাইরেক্ট আমার শ্বশুড়বাড়িতে পা রাখতে হলো তাকে?
এসব প্রশ্নের উত্তর আমার অজানা। তাই খুঁজতে গিয়ে নিজের মাথা ব্যাথা করতে চাই না আমি। অদ্রিজাকে নিয়ে নিচে নামলাম আমি।

সবাই যে যার মতো ব্রেকফাস্ট করে নিল। অনুরাগ আর অর্ণব বেরিয়ে পড়ল অফিসের উদ্দেশ্য। অনুরাগ আর অর্ণব যাওয়ার পর পরই মাও গ্রামের বাড়ি চলে গেলেন। বাড়িতে রয়ে গেলাম আমি, নৌশিন, অদ্রিজা আর বর্ণদা।

আমি আর নৌশিন মিলে রান্নাবান্না সেড়ে যে যার ঘরে চলে আসলাম। তখন অদ্রিজা ঘুমিয়ে আছে দোলনায়। ওকে ঠিক ভাবে শুইয়ে দিয়ে হাতে একটা শাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়লাম ওয়াশরুমে।

শাওয়ার নিয়ে বের হলাম আমি। ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে ড্রেসিংটেবিলের দিকে এগিয়ে আসতেই বেডে বসে থাকা বর্ণদাকে দেখে আঁতকে উঠলাম। তুতলিয়ে কোনো মতে বললাম,,,,
–“তু…তুমি?”
–“কেন আসতে পারি না?”
কথাটা বলে আমাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করে নিল সে। আমি খানিকটা অস্বস্তিকর কন্ঠে বললাম….
–“এতোদিন যখন আসতে পারোনি ধরে নাও আসতে পারো না বর্ণদা।”
–“কেন আসতে পারিনি সেটা তুই খুব ভালো করে জানিস নুড়ি!”

আমি হাসলাম। শুধু হাসলাম না তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলাম। তবে বর্ণদার কথার পরিবর্তে কোনো প্রতিত্তোর দিলাম না। আমার উত্তর না পেয়ে সে নিজেই বলে উঠল,,,,
–“বড্ড পাল্টে গেছিস তুই। তোর আচরণ চেহারা দুটোতেই বউ বউ ভাব স্পষ্ট!”
–“তো বউ হয়েছি কি শুধু নামে? কাজের তো হতে হবে!”
–“ঠিকই বলেছিস। কিন্তু এই বউটা আমার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আফসোস তাকে হওয়াতে পারলাম না নিজের বউ।” (মলিন কন্ঠে)

আমাদের কথাবার্তাতে তিরিং বিরিং করে ঘুম থেকে উঠে পড়ল অদ্রিজা। আর ঘুম ভাঙার সাথে সাথে তার দৈনিক রুটিনটা হলো আগে নিজের পূর্ণ কন্ঠস্বরের মাধ্যমে কান্না করা। সেকেন্ডের মাঝেই তীক্ষ্ণ আওয়াজে কাঁদতে লাগল মেয়েটা আর হাত বাড়ালো আমার দিকে। এর মানে এখনই ও আমার কোলে আসবে। নিজের মাথায় তোয়ালে পেঁচিয়ে অদ্রিজার দিকে এগিয়ে এলাম আমি। ওকে কোলে তুলে নিয়ে থামানোর চেষ্টা করলাম।
–“অদ্রিজা সোনা কাঁদে না! তুমি তে ভালো মেয়ে। আর ভালো মেয়েরা তো কাঁদে না। এইতো দেখো তোমার মাম্মা তো এখানেই আছে।”
কথাটা বলে ওর পিঠ বুলিয়ে দিতে লাগলাম আমি। আস্তে আস্তে ওর কান্নার সুর হালকা হলো। কিছুক্ষণের মাঝেই থেমে গেল। তারপর আধো আধো গলায় বলল,,,
–“মা..মাম মা!”
আমি ওর কথায় মাথা নাড়িয়ে বললাম,,,
–“হুম মাম্মা! মাম্মা!”
এভাবেই অদ্রিজার ভঙি দেখছিলাম আমি। হঠাৎই বর্ণদা বলল,,,
–“শুনেছিলাম তোর বিয়ের মাত্র ৩ দিন হয়েছে। এর মাঝে বাচ্চাও হয়ে গেল? হাউ ইন্টারেস্টিং!”
আমি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলাম। কারণ বর্ণদা আমায় টিজ করছে সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছি। তবুও যথা সম্ভব শান্ত গলায় বললাম,,,
–“হুমম ও আমারই মেয়ে। আর আমার মেয়ে হয়েই থাকবে।”

বর্ণদা হাসলো গা কাঁপিয়ে। হাসতে হাসতে আধশোয়া হয়ে পড়ল। তাতে রাগটা আরো বেড়ে গেল আমার। অদ্রিজাকে কোল থেকে নামিয়ে ওর হাতে কিছু খেলনা ধরিয়ে দিয়ে ভ্রু কুঁচকে বর্ণদার দিকে তাকিয়ে রইলাম আমি। বর্ণদা আমার চাহনি দেখে হাসি থামিয়ে বলল,,,
–“নুড়ি! তুই মিথ্যে বলতে পারিস না। তাই অযথা মিথ্যে বলার চেষ্টা করিস না। তোর আর তোর সো কলড হাজবেন্ড অনুরাগ চৌধুরীর এই বেডরুমে থাকা দেয়ালের ছবিগুলো প্রমাণ করে দিচ্ছে যে ও কার মেয়ে।”
বর্ণদার কথায় উৎসুক হয়ে দেয়ালের ছবিগুলোর দিকে তাকালাম। দেয়ালে তো অনামিকার ছবি আছে। সেসব দেখেছে বর্ণদা তাই এমন ভাবে বলছে। আমার চুপ থাকা যেন মেনে নিতে পারলো না সে। নিজের চোখমুখ শক্ত করে আমার দিকে তাকালো ও বলল,,,
–“দ্বিতীয় বিয়ে কখনো কাউকে সুখি করতে পারে না নুড়ি। তার ওপর প্রথমপক্ষের বাচ্চা তোকে মানুষ করতে হচ্ছে। তুই কি সুখে আছিস? কোনো মেয়ে কি এভাবে সুখি হতে পারে?”
বর্ণদার কথায় মনে হলো আসলেও তো আমি সুখি নেই। যেই জায়গায় আমার স্বামীর বুকে থাকার কথা সেই জায়গায় আমি ফ্লোরে শুয়ে কাঁপতে থাকি আর আমার স্বামী ঘুমিয়ে থাকেন বেডে। আমি অনুরাগের স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও এখনও উনি আমায় স্ত্রী বলে তো মানেনই নি। আমি যে সুখি নেই। নাহ তবুও সেটা বর্ণদাকে বুঝতে দেব না। তাই ঝটপট করে বললাম,,,
–“হ্যাঁ সুখি আছি। কে বলেছে অন্যের বাচ্চাকে নিয়ে সুখি হওয়া যায় না? অবশ্যই যায়। যদি তাকে অন্যের বাচ্চা না ভেবে নিজের বাচ্চা ভাবা হয় তাহলে সুখি হওয়া যায় বর্ণদা। আর আমার স্বামী আমাকে খুব সুখে রেখেছে যা কেউ কল্পনা করতে পারবে না। সে অন্তত তোমার মতো বেইমান নয়।”

‘বেইমান’ শব্দটা যেন বড্ড গায়ে লাগল বর্ণদার। রাগের চোটে আমার বাহু চেপে ধরল সে। শক্ত গলায় বলে উঠল,,,
–“আমি বেইমান? কোন দিক থেকে আমি বেইমান হলাম তোর কাছে? অপেক্ষা করেছি তোর জন্য। তোর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। তুই তো নিজেই যোগাযোগ করিসনি। আমার নম্বরে একবারের জন্যও কল করে দেখেছিস? তোর বর্ণদা বেঁচে আছে না মরে গেছে? দেখিসনি। ঢ্যাং ঢ্যাং করে বিয়ের পীড়িতে বসে পড়লি। বিয়েও করে ফেললি যেই লোকের সাথে জীবনেও সুখি হতে পারবি না তুই। আমার বুকের মাঝে তিলতিক করে গড়ে তোলা ভালোবাসা প্রকাশ করার আগেই শেষ করে দিলি তুই নিজে। এক কষ্টের সমুদ্রে ভাসিয়ে দিলি তুই। তাও আমি বেইমান? বেইমান তো তুই নুড়ি। তুই বেইমান।”

আমি ওর কথা শুনলাম দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে। ওর কথা শেষ হতেই বলে উঠলাম,,,
–“অনেক বলে ফেলেছো তুমি। চলে যাও এখান থেকে।”
–“কেন ভয় পাচ্ছিস?” (জোরে চেঁচিয়ে)
আমি কিছু বলার আগেই অনুরাগের কন্ঠস্বর শুনে দরজার দিকে তাকালাম।
–“হোয়াট দ্যা হেল? এসব কি?”

চলবে…..??
বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
____________________________________________

#একগুচ্ছ_ভালোবাসা
লেখনীতে : আনিশা সাবিহা (ছদ্মবেশী)
পর্ব : ৭
অনুরাগের কঠোর দৃষ্টি এবং শক্ত গলা শুনে বর্ণদার কাছ থেকে সরে দাঁড়ালাম আমি। আমি তড়িঘড়ি করে কিছু বলার আগেই অনুরাগ হাত দিয়ে ইশারা করে আমায় থামিয়ে দিলেন।
কয়েক সেকেন্ডের মাঝে নিজের দৃষ্টি শান্ত করে ফেললেন উনি। তারপর বর্ণদার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,,,,
–“হঠাৎ আমার রুমে? কোনো দরকার ছিল?”
–“না তেমন কিছু না। জানেনই তো আমি আর নুড়ি সেই ছোটবেলা থেকে একসাথেই থাকতাম। সো গল্প করে শান্তি মিটেনি তাই চলে এলাম।”
থমথমে গলার বর্ণদার কথা শুনে অনুরাগ একটু কাশলেন। তারপর বললেন,,,,
–“ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন এটা আমার বেডরুম। এবার থেকে আড্ডা দিতে হলে আড্ডা দেওয়ার জায়গায় আই মিন ড্রয়িংরুমে করবে। এতে ভালো হবে। সো প্লিজ এখন এসো।”

আমি দাঁড়িয়ে থেকে উনার কথাগুলো শুনছি। আজকে উনি এতো তাড়াতাড়ি ফিরে এলেন কেন সেটাও ভাবছি। না জানি বর্ণদাকে আমার কাছাকাছি দেখে কি না কি মনে করেছেন! কথাটা ভেবে হালকা ভয়ও লাগছে আমার। বর্ণদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বাইরে চলে গেল।
অনুরাগ নিজের সুট খুলে খানিকটা রাগের সাথেই সোফার দিকে ছুঁড়লেন। আমি চমকে উঠলাম। কাঁপা কাঁপা সুরে বললাম,,,
–“আ…আজকে এতো তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরলেন যে? মানে আপনি তো সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরেন।”
আমার কথা উনার কান পর্যন্ত পৌঁছাতেই অগ্নিদৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন আমার দিকে। আমি একটা শুকনো ছোটখাটো ঢক গিলতেই উনি রাগের সাথে বলে উঠলেন,,,,
–“কেন? তাড়াতাড়ি ফিরেছি বলে তোমাদের প্রেমকথন করতে অসুবিধে হয়ে গেল বুঝি?”
যা ভেবেছিলাম তাই হলো। উনি ভুল বুঝলেন আমায়। আমি তড়িঘড়ি করে বলতে নিলাম….
–“আ..আপনি ভুল ভা….”
পুরাটা বলার আগেই আমার দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলেন,,,
–“নো মোর এক্সকিউজ! তোমার কাছ থেকে আমি কোনো কথা শুনতে চাইনি। একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো বিয়ের আগে তোমার যা ছিল সেটা ভুলে যেতে হবে। এখন তোমার বিয়ে হয়েছে। সো আমি আমার বাড়িতে কোনোভাবেই এসব নোংরামি এলাও করব না।”

উনার কথা হতভম্ব হয়ে শুনছিলাম আমি। বেশ স্বাভাবিক হয়েই শুনছিলাম। কিন্তু উনার শেষ কথাগুলো বড্ড বিদঘুটে শোনালো। যার কারণে গায়ে আগুন ধরে গেল। নোংরামি মানে? আমরা নোংরামি করেছি?
তেতে বলে উঠলাম ,,,
–“কি বলতে চাইছেন আপনি? আমরা নোংরামি করি? হ্যাঁ বিয়ে হয়েছে আমাদের। কিন্তু আদোও এই বিয়েটাকে বিয়ে বলে সম্মোধন করেন আপনি? মনে তো হয় না। বিয়ে হয়েছে আমাদের কিন্তু আপনি আপনার মনে ভেতরে এখনও আপনার পাস্ট পুষে রেখেছেন। কেন বলুন তো? কারণ আপনি অনামিকা কে ভালোবাসেন। সেই কারণে আপনি আমাকে দিনের পর দিন ছোট করেছেন। কিছু বলেছি আপনাকে? কিছু বলিনি তাও আপনি খুশি থাকুন। এই বিয়েতে আমার কোনো স্বার্থ নেই অনুরাগ চৌধুরী। স্বার্থ আছে আপনার! তাই আপনি আমাকে এভাবে ছোট করতে পারেন না। হ্যাঁ আমি ভালোবাসি বর্ণদাকে আর সারাজীবন ভালোবাসব। আর বর্ণদা আমার সাথে যা ইচ্ছে করুক তাতে আপনার কি? কে হই আমি আপনার?”

–“কারণ তুমি আমার ব….”
বাকি কথা রহস্যের গণ্ডিতে বেঁধে দিলেন উনি। আমাকে ভাবুক রেখে উনি তোয়ালে নিয়ে চলে গেলেন ওয়াশরুমে। আমার কাছে উনার এই অস্পষ্ট কথাটা রহস্যময়ই থেকে গেল। কি বলতে চেয়েছিলেন উনি? ‘কারণ তুমি আমার বউ?’ এই কথায় কি তবে বলতে চেয়েছিলেন? কে জানে!

ওয়াশরুমের বাথটবের পানি ছেড়ে ধপ করে বসে পড়ল অনুরাগ। চোখমুখ লাল হয়ে আছে তার। কোনো এক অজানা কারণে খুব রাগ লাগছে তার। বুকের বাম পাশটাই যেন দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। বার বার মনে হচ্ছে কেন অনুশ্রীকে ধরবে বর্ণ? কেন এতো ক্লোজ হবে অনুশ্রীর? আবার মনে হচ্ছে তার তো এসব ভাবার কথা নয়। তাহলে কেন ভাবছে? সে তো অনুশ্রীকে কখনো বউ হিসেবে স্বীকার অবধি করেনি তবে কেন সে এসব ভাবছে? এসব ভাবনা তার প্রতি হয় যাদের আমরা ভালোবাসি। সে নিজে নিজেকে বলে উঠল,,
–“কিন্তু আমিতো অনামিকাকে ভালোবাসি তাহলে এসব হচ্ছে কেন? নাহ আজকে একটু বেশি খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি অনুশ্রীর সাথে এমনটা করা উচিত হয়নি আমার। ভালোবাসা তো অপরাধ নয়। আমি জানি ভালোবাসা হারালে কতখানি কষ্ট লাগে। তাকে চিরজীবনের মতো হারিয়ে ফেললে যা যন্ত্রণা লাগে সেটা আমি জানি। আর অনুশ্রী তো আমার পরিবারের জন্য অনেক কিছু করেছে। তার জন্য ওর জন্য আমি কিছুই করতে পারিনি। এবার তো কিছু কর অনুরাগ! ইউ হ্যাভ তো ডু সামথিং ফর হার।”
কথাটা বলে পানিতে নিজের মুখ ডুবিয়ে দিল অনুরাগ। মুখটা ঠান্ডা হওয়ার সাথে সাথে নিজের মাথাটাও ঠান্ডা হয়ে গেল তার। রাগটাও হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। সত্যিই তো রাগ যে মাঝে মাঝে কোথা থেকে আসে ভেবে কূলকিনারা পায় না অনুরাগ। এই রাগের ফলে অনুশ্রীকেও কষ্ট দিয়ে ফেলে সে।

অনেকক্ষণ ধরে শাওয়ার নিল অনুরাগ। তারপর ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। নিজের চুলগুলো ঝেড়ে আসেপাশে তাকালো সে। অনুশ্রীকে খুঁজছে দুই চোখ জোড়া। কিন্তু অনুশ্রী নেই। অদ্রিজা বসে বসে খেলছে। হতাশ হয়ে গেঞ্জি আর প্যান্ট পড়ে নিল সে। তোয়ালে দিয়ে নিজের চুল মুছতে শুরু করল।

রান্নাঘরে অদ্রিজার জন্য দুধ গরম করছি আমি। অনুরাগের কথাগুলো বেশ পোড়াচ্ছে আমায়। সত্যিই কি অনুরাগ আমায় নোংরা মেয়ে ভাবছেন? নাকি উনি মূলত আমায় আগের থেকেই পছন্দ করেন না? কি জানি? উনার মায়ার জালে আমি জড়িয়ে যাচ্ছি। মায়া ভীষণ খারাপ জিনিস। এ মায়া নামক জালে যখন কেউ ছড়ায় তখন সেটা কাটিয়ে ওঠা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই এই ভয়ানক মায়া খেলায় আমি জড়িয়ে পড়তে চাই না। কিন্তু কিছু কিছু লোকের প্রতি আমাদের মায়া আপনাআপনি জন্মে যায়। তাহলে কি অনুরাগ এর প্রতি আমারও ঠিক তেমনি মায়া জন্মাচ্ছে এবং সেই সাথে ভালবাসাও? না না আমি তো শুধু বর্ণদাকে ভালোবাসি।

এমনই নানান রকম ভাবনা আমার মনের উথাল পাতাল করছিল। হঠাৎ দেখলাম দুধের বলক উঠেছে। সাথে সাথে বন্ধ করে দিলাম চুলোটা। দুধের পাতিল নামিয়ে সেটা ঠান্ডা করে নিলাম। অতঃপর অদ্রিজার পটে ভরে নিলাম। তারপর ছুটলাম ঘরের দিকে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই মেয়েটার বড্ড খিদে পেয়েছে। হয়তো কান্নাও শুরু করে দিয়েছে। তারাতারি পা চালিয়ে রুমে প্রবেশ করতেই আমার বেহায়া চোখজোড়া চলে গেল অনুরাগ এর উপর। চোখ জোড়া যেন মুগ্ধ হয়ে গেল উনাকে দেখে। নেভি ব্লু কালারের গেঞ্জি সাথে সাদা রঙের প্যান্টে উনার চেহারায় অন্যরকম উজ্জলতা ফুটে উঠেছে। তৎক্ষণাৎ মনে পড়ে গেল উনার বলার সব বিদঘুটে কথা গুলো। আমি বিদ্যুতের গতিতে চোখ সরিয়ে নিলাম। খাটে বসে অদ্রিজা কে কোলে তুলে নিলাম। অদ্রিজার মুখে পট ধরতেই উনি এসে আমার পাশ ঘেঁষে বসে পড়লেন। আমি হকচকিয়ে উঠলাম। উনি গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,,,, –“ভালোবাসো বর্ণকে?”
আমি চমকে উঠলাম আতঙ্কে ভরা মুখ নিয়ে উনার দিকে তাকালাম। আমার সারা শরীর কাঁপতে শুরু করল হাত থেকে অদ্রিজার পট টা পড়ে গেল। রুমের মেঝেতে অদ্রিজার জন্য আনা খাবারগুলো ছড়িয়ে পরল। আপনি অদ্রিজা কে বেডে বসিয়ে দিলাম। তারপর তাড়াহুড়ো করে দাঁড়িয়ে পরলাম। ঝটপট করে বললাম,,,,
–” সরি আসলে খেয়াল করিনি আমি এক্ষুনি পরিস্কার করে দিচ্ছি।”
কথাটা বলে রুমের বাইরের দিকে যেতে নিলাম। আমি কিন্তু বাইরে আর যাওয়া হলো না অনুরাগ আমার হাত চেপে ধরলেন। উনার স্পর্শে পা আর চলতে পারল না দাড়িয়ে পড়লাম। উনি থমথমে গলায় বললেন,,,,
–” আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। আই নিড অ্যান্সার! ভয় পেয়ো না আমাকে তোমার বন্ধু ভাবতে পারো।”
আমি ঢোক গিলে পিছন ঘুরে উনার দিকে তাকালাম। উনি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছেন। আমি মুখটা প্রশস্ত করলাম আর বললাম,,,,
–” আগে মেঝে পরিষ্কার করে নিই নয়তো পুরো ঘরে ছরিয়ে যাবে।”
উনি আমার হাত ইতস্ত বোধ করে ছেড়ে দিয়ে বললেন,,,
–“ওকে।এজ ইউর উইশ।”
তারপর উনি অদ্রিজা কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। মেঝে পরিষ্কার করে ফেললাম। কাজ সেরে এসে অদ্রিজার দিকে তাকাতেই দেখলাম মেয়েটা ঘুমিয়ে গেছে।লো আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। ও এভাবে না খেয়েই ঘুমিয়ে গেল? অনুরাগ এর কন্ঠে পাশ ফিরে তাকালাম আমি।
–“সমস্যা নেই ও ঘুম থেকে উঠে গেলে খাইয়ে দিও। এখন ফ্রি আছো?”
আমি হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালাম। উনি একপলক অদ্রিজার দিকে তাকিয়ে আমার দিকে তাকালেন। –“বেলকনিতে এসো।

কথাটা বল উনি সোজা বেলকনিতে চলে গেলেন। আমিও গুটি গুটি পায়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। অনুরাগ আয়েশ করে বসলেন চেয়ারে আমার দিকে না তাকিয়েই অদ্ভুত আবদার করলেন উনি। বিনয়ী সুরে বললেন,,,
–“চেয়ারে আমি বসলে মাঝখানে সবসময় একটুখানি জায়গা ফাঁকা থাকে জানো তো আগে এখানে সব সময় অনামিকা বসতো। আজকে তুমি বসবে…?”
আমি আনমনেই বলে ফেললাম,,,
–” আপনি অনুরাগই তো?”
আমার কথায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। উনি উনার দৃষ্টি দেখে আমার হুঁশ এলো আমি তুতলিয়ে বললাম….
–“আসলে আমার বলার মানে ছিল যে আপনি তো আমাদের বিয়ের রাত থেকে ড্রেসিং টেবিল, আলমারি আর কাবার্ড এসব জিনিস অনামিকার বলে আমাকে হাত লাগাতে পর্যন্ত দিতেন না। এবং বিয়ের পরপরই তো বলে দিয়েছিলেন যাতে আপনার থেকে ন্যূনতম একহাত দূরে থাকি!আজ হঠাৎ কি হল আপনার??”
আমার বলা শেষ কথাগুলো তাচ্ছিল্যের সুর হয়ে বেরিয়ে এল। উনি কিছু একটা ভেবে আমার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলেন। যথাসম্ভব শান্ত গলায় বললেন…..
–“সত্যি বলব?”
–“হুম বলুন।”
–” সত্যিটা যে আমি নিজেই জানিনা। নিজেকে বড্ড অগোছালো লাগছে আমার। তুমি না বসলে থাক!”
আমি কয়েক সেকেন্ড ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর দুম করে বসে পড়লাম। উনি আমার উপস্থিতি অনুভব করে চোখ মেললেন এবং মুচকি হাসলেন। এবার আবারও আগের মতই একটা অদ্ভুত আবদার করলেন উনি। উনার এই আবদারটা আগের চেয়েও বেশি অদ্ভুত। বাচ্চামো গলায় বললেন,,,
–“আমার না খুব ঠান্ডা লাগছে!”
আমি তড়িঘড়ি করে বললাম…..
–“ঠান্ডা লাগছে তো গায়ের চাদর বা সোয়েটার পড়েননি কেন? দেখি দাঁড়ান আমি এনে দিচ্ছি।”
এই বলে চেয়ার থেকে উঠতে নিলাম আমি উনি সেকেন্ড এর মাঝে সোজা হয়ে বসলেন এবং আমার দুই বাহু চেপে ধরলেন। এই প্রথম উনার ছোঁয়াগুলো আমার কাছে ভালোবাসাময় বলে মনে হল। আমার হৃদপিণ্ড চুপি চুপি তার বেগ বাড়িয়ে চলেছে। এরই মাঝে অনুরাগ শীতল কন্ঠে বললেন,,,
–“এই সামান্য ব্যাপার এর জন্য তোমায় রুমে যেতে হবে না। তোমার গায়ে তো চাদর আছে সেটা আমায় দাও।”
–“তাহলে আমি কি পড়বো?” (চোখ বড় বড় করে)

উনি আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে আমার গায়ে লেপ্টে থাকা চাদরটি একপ্রকার ছিনিয়েই নিলেন। তারপর নিজের গায়ে জড়িয়ে নিলেন চাদরটি ফাঁক করে আমাকেও ঢুকিয়ে নিলেন চাদরের ভেতরে। আমি হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলাম লোকটার দিকে। এবার আমার সত্যিই সন্দেহ হচ্ছে এটাই কি সেই বদমেজাজী, খিটখিটে অনুরাগ চৌধুরী? নিজের হতভম্বতা কাটিয়ে হাত বের করে ওনার কপালে হাত রাখলাম। উনি ভ্রু যুগল কুচকে রাখলেন। বিরক্তিকর কন্ঠে বললেন,,,
–“কি করছো টা কি তুমি…?”
–“আপনার জ্বর বা কোনো অসুখ করেছে কিনা সেটাই চেক করছি।”
উনি নিজের কপাল থেকে হাত সরিয়ে নিলেন। কিছুটা ধমকের সুরে বললেন…..
–“আমার কিছু হয়নি। এখন আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। ভালোবাসো বর্ণকে?”
উনার করা এই প্রশ্নটাই আমাকে বারবার চুপ করিয়ে দেয়। এই মুহূর্তেও আমি চঞ্চল থেকে একেবারে শান্ত হয়ে গেলাম। আমার শান্ত হওয়া দেখে অনুরাগ হালকা ধাক্কা দিয়ে বললেন,,,
–“আমি কিছু জানতে চেয়েছি অনুশ্রী!!”
আমি আনমনে বলে উঠলাম….
–“হ্যাঁ ভালোবাসি বর্ণদাকে।সে ই সেই মানুষ যাকে নিয়ে আমি ছোটবেলা থেকে নিজের ভালবাসার স্বপ্ন বুনে চলেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ….”
বাকিটুকু না বলেই থেমে গেলাম আমি। অনুরাগ আমায় নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলেন। ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে অনুনয়ের সুরে বললেন,,,,,
–“থেমে গেলে কেন আমি শুনতে চাই।”
আমি এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্যদিকে ফিরে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম…..
–” কি লাভ সেইসব কাহিনী শুনে? যা কখনো পূর্ণতায় পাবে না।
উনি আশা ভরা কন্ঠে বললেন….
–“পেতেও তো পারে পূর্ণতা। আমরা যা আশা করি না সেটাই সব সময় আমাদের সাথে হয়। এখন আমায় বলবে?”
আমি নিজের মুখটা ভার করলাম। কারন জানি অনুরাগের কথাগুলো সবসময় আশায় দেবে। সত্যিতে রূপান্তরিত হবেনা। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলাম…..
–“আমার মা-বাবার বিয়েটা প্রেম করেই হয়েছিল। সেই হিসেবে তাদের জীবনটা ভালোবাসায় ভরা ছিল। কিন্তু আমার নানু বাড়ির লোকেরা আমার মা-বাবার সম্পর্ককে মেনে না নেওয়ার কারণে কাউকে না জানিয়েই বিয়ে করে ফেলেছিল তারা। তবুও আমার নানু বাড়ির লোকেরা মেনে নিলেন না তাদের বিয়ে। তাই আমার বাবা আমার মাকে নিয়ে তার বাড়ি চলে আসে। আমার দাদু এবং দাদীমা তাদেরকে হাসিমুখে মেনে নিয়েছিল। খুব ভাল ভাবেই কাটছিল তাদের জীবন তারপরেই জন্ম নিলাম আমি। বলা যায়,,, সোনার চামচ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলাম! আমি কোন কিছু মুখ ফুটে বলার আগেই আমার বাবা আমার সামনে সেই জিনিসটি এনে দিত। দুঃখ-কষ্ট কি জিনিস সেটা বুঝিনি কখনো। তবে আমার মামা আমার মাকে খুব ভালোবাসতো। একমাত্র বোন বলে কথা….! মামার চোখের মনি ছিল আমার মা। তাই মামা মাঝেমাঝেই আমাদের বাড়িতে চলে আসত। মামার ছেলে বর্ণদা বড় হওয়ার পর ওকে ভালো জায়গায় পড়াশোনা করানোর জন্য শহরে নিয়ে আসা হল। তারপর থেকেই বর্ণদার একমাত্র খেলার সাথে হলাম আমি। যাকে বলে বেস্ট ফ্রেন্ড। বর্ণদা আমাকে সে ছাড়া কারো সাথে খেলতেই দিত না। তখন বর্ণদার বয়স তেরো কি চৌদ্দ বছর! এই ব্যপারগুলো বাড়ির বড়রাও খেয়াল করতো। মামি মা আর মামা এবং আমার বাবা-মা মিলে ঠিক করে ফেললেন আমার সাথে বর্ণদার বিয়ে দেবেন। শুধু একবার বর্ণদার পড়াশোনা কমপ্লিট হোক তারপর এই বিয়েটা সারবেন উনারা। বর্ণদা সারাদিন আমার বউ আমার বউ বলে সারাবাড়ি চিৎকার করত। আমিও তখন বেশ ছোট বয়স আট কি নয় বছর। শুধু আমার ছোট্ট মনটায় বিয়ে নিয়ে নানান রকম প্রশ্ন জাগতো সেসব প্রশ্ন আমি বর্ণদাকে করেও ফেলতাম! বর্ণদা শুধু হাসত আর বলতো ‘বড় হো নুড়ী একদিন সব নিজেই বুঝে যাবি।’
এভাবেই চলছিল আমাদের জীবন কিন্তু এটা বুঝতে পারিনি এত সুখ আমাদের কপালে সইবে না হঠাৎ একদিন…..

অতীত….
সময়টা হালকা গরম এবং হালকা ঠান্ডা। তখন আমি ক্লাস ফোরে। পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরছে সবে। পেছনের সিটে বসে ফোন নিয়ে দেদারসে গেমস খেলছিলাম। হঠাৎই ড্রাইভার কাকু হালকা কেশে মন মরা কন্ঠে বলে উঠলেন….
–” অনুমা, তুমি কি জানো ম্যাডাম জি আগের থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন?”
আমি হকচকিয়ে উঠে ভয়ার্ত কন্ঠে বললাম….
–“কি বলছেন আপনি কাকু? মা তো আগে থেকেই অসুস্থ ছিল। কি হয়েছে মায়ের?”
–“সেটা তো বলতে পারছি মা তুমি বাড়ি গেলেই বুঝতে পারবে!”
আমার মনে ভয় জাগলো। বাবা তো দেশের বাইরে কাজে গেছে। একা কি করে সামলাবো আমি?

বাড়িতে পৌঁছতেই এক দৌড়ে ঘরে গেলাম। মা শুয়ে শুয়ে কাঁপছে। মায়ের চেহারাই বলে দিচ্ছে কতটা অসুস্থ ভেতর থেকে। আমি অস্থির হয়ে মায়ের পাশে বসলাম অসহায় গলায় বললাম…..
–“ওমা কি হয়েছে তোমার বলো না!
আমাকে দেখে মা দুর্বলভাবে হাসলো। উঠার চেষ্টা করল মা। আমি সাহায্য করলাম মাকে উঠে বসতে সাহায্য করলাম। মা উঠে বসে আমার গালে মুখে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল….
–“আমার আবার কি হবে? বললাম তো হালকা জ্বর! আজকে একটু জ্বরটা এঁটেছে। তোর পরিক্ষা কেমন হয়েছে?”
আমি কিছু না বলে মাকে জড়িয়ে ধরলাম। এবার কেঁদেই দিলাম। মা আমার কান্নাতে শান্তনা দিয়ে বলল,,,
–“কি হয়েছে পাগলি মেয়ে? এভাবে কাঁদছিস কেন?”
–“আমার না খুব ভয় করছে মা!”
মা আমার মাথায় চুমু খেল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,,,
–“ধুর বোকা মেয়ে। আমি আছি তোর বাবা আছে ভয় করবে কেন?”
এমন আরো কথা বলে মা আমার কান্না থামাতে সক্ষম হলো।
এভাবে কাটলো আরো ১০ দিন। আমি শেষ পরিক্ষা শেষ করে বাড়ি ফিরছি। জানালা দিয়ে আনমনে বাইরের প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ আমার চোখে পড়ল কয়েকজন লোক দৌড়িয়ে আমার বাড়ির দিকে যাচ্ছে। সামনে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। বাড়ির সামনে ৪-৫ টা গাড়ি। গাড়ি দেখতেই মনে পড়ল আজকে তো বাবার বাড়ি ফেরার কথা! তাহলে হয়ত বাবাই বাড়ি ফিরে এসেছে। মনটা খুশিতে নেচে উঠল। অতঃপরই মনে হলো এসব লোক দৌড়াচ্ছে কেন?

গাড়ি বাড়ির সামনে দাঁড় করাতেই আমি নিচে নামলাম। গার্ডেনে প্রবেশ করতেই আমার চোখ গেল বর্ণদার দিকে। বর্ণদার কাছে যেতেই বর্ণদার মুখ ভার মনে হলো আমার। আমি তার হাত ধরে হেসে জিজ্ঞেস করলাম,,,
–“কি হয়েছে তোমার? এভাবে মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে আছো কেন শুনি?”
বর্ণদা কিছু বলল না। আমি চোখ ছোটছোট করে তাকালাম।
–“রাগ করেছো আমার ওপর বর্ণদা?”
এবারও বর্ণদা কিছু না বলে বাড়ির দিকে যাওয়ার জন্য ইশারা করল। আমি মুখ ফুলিয়ে বাড়ির দিকে ছুটলাম। বাড়ির সদর দরজা পেরিয়ে ড্রয়িংরুমে পা রাখতেই লোকজনের ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেললাম। মাথা চুলকাতে থাকলাম। আসলে আমার বাড়িতে হচ্ছে টা কি? সবাই নিজের মুখটা গম্ভীর করে দাঁড়িয়ে আছে। একজন প্রতিবেশি আন্টি তো আমায় দেখে বলেই ফেলল,,,
–“আহা রে! মেয়েটার বয়সই বা কত হবে? এই বয়সে মা হারিয়ে বসল মেয়ে?”
আমি উনার কথায় কিছুই বুঝলাম না। ভীড় ঠেলে সামনে এগোতেই চোখ আটকে গেল আমার। বাবা দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে। আমি দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম। মিনমিনে আওয়াজে বললাম,,,
–“কি হয়েছে বাবা?”
বাবা হাঁটু গেঁড়ে বসে আমাকে জড়িয়ে ধরে ভাঙা ভাঙা গলায় বলল,,,
–“সব শেষ হয়ে গেছে অনু মা।”
আমি কিছুই না বুঝে বেক্কল হয়ে চারিপাশে তাকালাম। তখনই মামাকে দেখলাম। শুধু মামা নয় আরো কয়েকজন লোক মিলে একটা খাটিয়া নিয়ে নিচে নামছে। খাটিয়া এনে নিচে রাখা হলো। আমার ছোট্ট হৃদয়টাও ধুক করে উঠল। আশেপাশে সবাইকে দেখছি কিন্তু মাকে তো দেখছি না!

আমি আশেপাশে খুঁজলাম মাকে। শেষমেশ বর্ণদার সাথে ধাক্কা খেলাম। বর্ণদাকে দেখে ওর হাত নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,
–“আমার মা কোথায় বর্ণদা? আমি না খুঁজে পাচ্ছি না।”
আমার কথা শুনে দুঃখ ভারাক্রান্ত চেহারায় তাকালো সে। আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে এলো খাটিয়ার সামনে। সাদা কাপড় দিয়ে সারা শরীর এবং মুখমণ্ডল মোড়ানো কারো। আমি বর্ণদার দিকে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকাতেই সে ইশারা করল। তারপর খাটিয়াতে থাকা ব্যক্তির মুখ থেকে সাদা কাপড় সরানো হলো।
পুরো দুনিয়া থমকে গেল আমার। সাদা কাপড়ে মোড়ানো ব্যক্তিটা আর কেউ না আমার মা! কি সুন্দরভাবে ঘুমিয়ে আছে মা। সাদা কাপড়ে কত সুন্দর লাগছে তাকে ঘুমন্ত অবস্থায়!

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here