একটাই তুমি ??,অষ্টম_পর্ব

0
3110

একটাই তুমি ??,অষ্টম_পর্ব
লেখনীতে: ইনায়াত আহসান (ছদ্মনাম)

বলুন মা কবুল!
কাজী সাহেবের কথায় মিশ্র অনুভূতিরা এসে জড়ো হয় ইনায়াতের মনে।
বিয়ে! দুই অক্ষরের শব্দটার মাঝে লুকিয়ে আছে হাজারো প্রতিশ্রুতি। কবুল বলা আর কাবিননামায় স্বাক্ষর করার মাধ্যমেই দুজন, দুটি আত্মা বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়। আর শুরু হয় নতুন করে পথ চলা। সূচনা ঘটে জীবনের নতুন আরেকটি অধ্যায়ের।

লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে মাথা নিচু করে বলে উঠে,
‘কবুল’
সাথে সাথে সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে। খুব ঘটা করেই পরিবারের মধ্যে আর দু এক জন ফ্রেন্ড নিয়ে ইনায়াত আর স্পন্দনের বিয়েটা সম্পন্ন হলো।

ভাবতেই অবাক লাগছে! এখন থেকে ইনায়াত স্পন্দনের স্ত্রী। তার অর্ধাঙ্গিনী। স্পন্দনের প্রতি সবটুকু অধিকার রয়েছে ইনায়াতের।

বাসর ঘরে চুপটি করে বসে আছে ইনায়াত। মনের মধ্যে নানা রকম চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। সাথে ভয় ও লাগছে। স্পন্দন কি আজও ধমকাবে নাকি।
এটা তো শিওর যে বিয়েটা স্পন্দন কোনো একটা কারণে হুট করেই করেছে। কিন্তু সেই কারণটা কি? আদ্র!

এদিকে আদ্র একের পর একটা ওয়াইনের বোতল মেঝেতে ছুড়ে ফেলছে। লাস্টের একটা বোতল রুমে থাকা বড় আয়না টায় ছুড়ে মারতেই সেটা চুরচুর করে ভেঙে পড়লো। মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আয়নার টুকরো গুলোর মধ্যে আদ্রের হিংস্র চেহারাটা ভেসে উঠছে।

‘না, না! এ হতে পারে না! ঐ স্পন্দন আবারও আমার প্ল্যান ফ্লপ করে দিল! আর ইনায়াত; তোমাকে তো আমি আমার করে ছাড়বোই। যে করে হোক!
আর স্পন্দন তোমার জন্য আমি আমার পাওয়ার হারিয়েছি। তোমার আসল চেহারাটাও আমি সবার সামনে এনে ছাড়বো!’

রাত প্রায় এক টা বাজে। ঘুমুঘুমু ভাবে বারবার ঢুলে‌ পড়ছে ইনায়াত। একটু পর খট করে দরজা খোলার আওয়াজ পেতেই মস্তিষ্ক তার আপনাআপনি সজাগ হয়ে যায়। স্পন্দন রুমে প্রবেশ করে ইনায়াতের দিকে নজর যেতেই ভ্রু দুটি কুঁচকে নেয়।
তারপর সামনে যেয়ে বলে,

স্পন্দন: ‘ কিরে তুই এখনো ফ্রেশ না হয়ে এখানে বসে ঘুমে ঢুলছিস কেন? যা ফ্রেশ হয়ে আয়।’
স্পন্দনের কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় ইনায়াত। ব্যাটা খবিশ, শালা আনরোমান্টিক খরগোশের বাচ্চা। মনে মনে গালি দিতে থাকে ইনায়াত।
চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলে,
ইনায়াত: ‘ আমি কি ইচ্ছে করে বসে ছিলাম নাকি। ওটা তো শুধু মা আর নিধি বলেছিল তাই। ‘
স্পন্দন এবার খাটের উপর বসে পড়ল।
স্পন্দন: ‘তা আর কি কি বলেছে মা আর নিধি! আমাকেও একটু বল, আমিও শুনি।’

ইনায়াত মুখ বাঁকিয়ে উঠে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।

রাতের টিমটিমে আলো জানালা ভেদ করে ব্যালকনির মেঝেতে এসে পড়ছে। ইনায়াত বের হয়ে আসলো। পরনে হালকা লেমন রঙের লং কামিজ, সাদা পাজামা আর ওরনা।
স্পন্দন ল্যাপটপে কিছু একটা খুব গভীর ভাবে দেখছে। তারপর ফাইলটা পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করে রাখলো। হঠাৎ ইনায়াতের দিকে চোখ যেতে থমকে যায়। রাতের হালকা আলোতে একদম যেন শুভ্র পরী লাগছে ইনায়াতকে। এটা খেয়াল করে ইনায়াত কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গলা খাঁকারি দিয়ে উঠে সে। আর তা শুনে স্পন্দনের ও হুঁশ ফিরে।
ইনায়াত আসতেই স্পন্দন বলে,
স্পন্দন: ‘ নে এবার ঘুমিয়ে পড়। অনেক রাত হয়েছে।’

ইনায়াত: ‘ আপনি ঘুমাবেন না?’

স্পন্দন: ‘ আমার একটু কাজ আছে, আমি পরে ঘুমাবো। তুই ঘুমা!’

ইনায়াত: ‘ উঁহু, আমিও ঘুমাবো না।’

স্পন্দন এবার একটু সামনে এগিয়ে যায় ইনায়াতের দিকে। চোখে মুখে দুষ্টুমির ভাব এনে বলে,

স্পন্দন: ‘ কেন? অন্য কিছু করার মতলব আছে নাকি!’

স্পন্দনের কথার অর্থ বোঝা মাত্র লজ্জায় মিইয়ে পড়ল ইনায়াত। মনে মনে বলে,

ইনায়াত: ‘ এই লোকটার মুখে কিছু আটকায় না নাকি! মুখের উপর ই সবকিছু বলে দেয়।’

কিছু একটা ভেবে ফট করে বলে দেয়,

ইনায়াত: ‘ গান শোনাবেন?’
হঠাৎ গান শোনানোর আবদারে কি বলবে খুঁজে পায়না স্পন্দন।

স্পন্দন: ‘ আমি খালি গলায় গান পারি না!’

ইনায়াত: ‘ কেন, কেন! আপনার সেই গিটারে টুংটাং শব্দ তুলবেন আর গান গাইবেন। ঠিক যেমন মাঝরাতে হুটহাট সুর তোলেন!’

লাস্টের কথাটা বলে থতমত খেয়ে গেল ইনায়াত।
‘না না এটা কি বললাম আমি! এখন যদি জিজ্ঞেস করে যে আমি চুপি চুপি মাঝরাতে তার গান শুনি, তখন কি হবে? আমি কি বলবো এখন!’

এদিকে স্পন্দন গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে ইনায়াতের দিকে।

স্পন্দন: ‘ তুই কি করে জানলি যে আমি মাঝরাতে হুটহাট গান ধরি। বাই এনি চান্স তুই কি চুপি চুপি আমার গান শুনতি!’

যেটার ভয় পাচ্ছিল সেটাই হলো। কি বলবে এখন ইনায়াত। যদি ধমক দিয়ে বসে তখন!

কিছুটা আমতা আমতা করে বলে,

ইনায়াত: ‘ দু একবার শুনেছি।’

রাতের আকাশের দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে নিধি। জীবনটা সত্যিই অদ্ভুত!
আচ্ছা তার আর আয়ানের সম্পর্কটা স্বাভাবিক ভাবে থাকলেও পারতো। তবে বিচ্ছেদ কেন হলো। এখন কি আর চাইলেই খুব সহজে তাকে আবারো মেনে নিতে পারবে?
আজকেও বিয়ের অনুষ্ঠানের ফাঁকে হঠাৎ করে আয়ান নিধির সামনে এসে দাঁড়ায়। তারপর সবার থেকে আড়াল করে নিয়ে যায় নিধি কে।

আয়ান: ‘ প্লিজ, নিধি! এভাবে আমাকে আর কষ্ট দিও না। আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিও না। আমি জানি আমি ভুল করেছি, কিন্তু একটিবার সুযোগ দাও! কোনোদিন কোনো কষ্ট দেবো না, কখনো অভিযোগ তুলতে পারবে না!’

নিধি এবার ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে,
নিধি: ‘ এতোই যখন ভালোবেসেছিলে তাহলে সেদিন আমায় আর আমার তোমার প্রতি ভালোবাসাটাকে প্রত্যাখ্যানিত হতে হয়েছিল কেন! আমি তো তোমার যোগ্য ছিলাম না, তবে আজ কেন এসেছো আবার!

আয়ানকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সেখান থেকে চলে আসে নিধি। কিন্তু মনটা যে তার ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছিল তা কিভাবে বোঝাবে সে!

হাতে গিটার নিয়ে ব্যালকনিতে বসে পড়ে স্পন্দন। সামনেই বসে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ইনায়াত।
গিটারের টুংটাং শব্দ তোলে স্পন্দন। দৃষ্টি তার প্রেয়সীর চোখের দিকে।

অবুঝ মনের ঠিকানা
তুমি কি হবে!
মুগ্ধ আমার প্রেমে
জড়িয়ে রবে

আমি তোমাকে বেসেছি কত ভালো,, ওওও..

তুমি আমার, তুমি আমার
এ সুখে হবে যে মরণ

বেঁচে আছি এ পৃথিবীতে
একটাই তুমি যে কারণ!

গান শেষ হতেই স্পন্দন খেয়াল করে ইনায়াত ঘুমিয়ে পড়েছে। তা দেখে মুচকি হাসি দেয় সে।…..

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here