একটাই তুমি ??,দশম_পর্ব
লেখনীতে: ইনায়াত আহসান (ছদ্মনাম)
দিশেহারা হয়ে ড্রাইভ করছে স্পন্দন। চুলগুলো এলোমেলো। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে চেহারাটা বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে।
মনের ভেতর শুধু একটা কথাই বারবার চলছে,
স্পন্দন: ‘ কোথায় তুই, ইনায়াত? চিন্তা করিস না। আমি, তোর স্পন্দন তোকে ঠিকই খুঁজে বের করবে!’
চোখের উপর পানির ছিটা পড়তেই কিছু টা নড়েচড়ে বসে ইনায়াত। আধো আধো চোখে তাকিয়ে দেখে নেয় বর্তমানে সে কোথায় রয়েছে। না তেমন কোনো লাভ হলো না। কিন্তু পরমুহূর্তেই সামনে যাকে দেখলো তাতে যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে ইনায়াত।
মৃদু আলোতে আদ্রের হিংস্র মুখটা ভেসে উঠছে।
কম্পনরত কন্ঠে বলে উঠে,
ইনায়াত: ‘ আদ্র স্যার, আপনি!’
আদ্র: ‘ ইয়াহ, ইনায়াত বেব্স আমি। দ্যা গ্রেটেস্ট এ.ডি ওরফে আদ্র জুহায়ের।’
ইনায়াত: ‘ এসবের মানে কি! আমাকে এভাবে এখানে তুলে নিয়ে এসেছেন কেন?
আদ্র: ‘ আরে কুল ডাউন! এতো হাইপার হলে হয় নাকি! ‘
আদ্র এবার কিছুটা ইনায়াতের দিকে ঝুঁকে যায়। ইনায়াতের চোখে চোখ রেখে বলে,
আদ্র: ‘ আমি তোমাকে কেন নিয়ে এসেছি জানো? আমার তোমাকে চাই! সেটা যদি একরাতের জন্য হয় তবুও চলবে। বাট আই নিড ইউ!’
আদ্রের কথার অর্থ বুঝতে পেরে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয় ইনায়াত।
মনে মনে বলে,
ইনায়াত: ‘ স্পন্দন কোথায় আপনি! প্লিজ তারাতাড়ি আসুন। এই শয়তানের হাত থেকে আমায় রক্ষা করুন।’
সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরতেই মাঝ রাস্তায় হঠাৎ একটা কালো রঙের মাইক্রোবাস এসে থামে ইনায়াতের সামনে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই কেউ একজন তার মুখ বরাবর স্প্রে করে। তারপর ই ধীরে ধীরে শরীর ও চোখ অসাড় হয়ে আসে তার। এরপর আর কিছু মনে নেই।
বর্তমানে,,
আদ্র বাঁকা হেসে ইনায়াতের দিকে হাত এগোতেই কেউ দরজাটায় সজোরে ধাক্কা মেরে খুলে ফেলে।
ইনায়াত যেন আশার আলো দেখতে পায়। স্পন্দনের আগমনে আদ্র একটা ডেভিল হাসি দেয়। তারপর বলে উঠে,
আদ্র: ‘ অবশেষে আপনার আগমন ঘটলো মিস্টার স্পন্দন, ওপ্স সরি!
দ্যা গ্রেটেস্ট মাফিয়া কিং এসআর চৌধুরী! এম আই রাইট স্পন্দন?’
আদ্রের মুখে এসব কথা শুনে ইনায়াত যেন অবাক হওয়ার শেষ পর্যায়ে চলে গিয়েছে।
‘মাফিয়া কিং! তাও আবার স্পন্দন? এ কি করে সম্ভব! না, না হতে পারে না! আদ্র নিশ্চয়ই ভুল কিছু বলেছে! যাতে আমি স্পন্দনকে ভুল বুঝি!’
কিন্তু ইনায়াতের আস্থাটুকু কে নিঃশেষ করে দিয়ে স্পন্দন বলে উঠে,
আদ্র: ‘ যাক তাহলে জেনে গিয়েছিস!
অবশ্য তোর জানার ই কথা, তাইনা এ. ডি?’
আদ্র এবার উচ্চ গলায় বলে,
আদ্র: ‘ শুধু তোর জন্য, শুধু মাত্র তোর জন্য আমি সব হারিয়েছি!
আমার মাফিয়া পাওয়ার, রাজত্ব সবকিছু!
তুই আমার কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়েছিস! তোর জন্য আমাকে পাঁচ বছর দেশের বাইরে পালিয়ে পালিয়ে থাকতে হয়েছে!
আর তুই ভাবছিস আমি এত সহজেই তোকে ছেড়ে দেবো!
নো, মিস্টার স্পন্দন নো। তুই আমার কাছ থেকে আমার পাওয়ার কেড়ে নিয়েছিস, আমিও তোর কাছ থেকে তোর সবচেয়ে প্রিয় জিনিস; তোর ইনায়াতকে কেড়ে নিবো!
এদিকে ইনায়াত নির্বাক শ্রোতা হয়ে বসে আছে। সে যে তার কান দুটোকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সে তো কল্পনায়ও ভাবে নি স্পন্দনের এসব কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে।
আচমকা আদ্র তার পকেট থেকে একটা ধারালো নাইফ বের করে ইনায়াতের গলা বরাবর ধরলো। হঠাৎ করে গলায় ছুরি ধরায় কিছুটা ভয় পেয়ে যায় ইনায়াত। ছুরি টা ধারালো হওয়ায় গলার সাথে ধরতেই সাইড থেকে কিছুটা অংশ কেটে যায় ইনায়াতের। সাথে সাথে মৃদু শব্দে ইনায়াতের মুখ থেকে ‘ আহ’ শব্দ বেরিয়ে এলো।
যা দেখে স্পন্দনের মাথায় রাগেরা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে উঠে,
স্পন্দন: ‘ আদ্র! হাউ ডেয়ার ইউ !
তোর সাহস হয় কি করে ইনায়াতের গায়ে আঘাত করার! ছেড়ে দে নাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না!’
আদ্র: ‘ সো স্যাড, তাইনা স্পন্দন! দেখো এবার, নিজের প্রিয় জিনিসটা কে তিলে তিলে শেষ শেষ হয়ে যেতে দেখো!’
আদ্রের কথায় হঠাৎ করে হো হো করে হেসে দেয় স্পন্দন! হঠাৎ এমন হাসির কারণ খুঁজে পায়না আদ্র।
স্পন্দন এবার কিছুটা বাঁকা হেসে বলে উঠে,
স্পন্দন: ‘ আহা আদ্র, তুমি এখনো বোকাই রয়ে গেলে! তোমার কি মনে হয় তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার প্রেয়সীকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে?
তাহলে তো আমি , দ্যা গ্রেট মাফিয়া কিং হতাম না!
বাট তুমি সেই রহস্যটা জানার আগেই তোমাকে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হবে!’
বলেই শার্টের পেছন থেকে গান বের করে পরপর তিনটা গুলি শুট করে দেয় আদ্রকে।
এদিকে রক্তের কয়েকটা ফোঁটা ছিটে পরে ইনায়াতের হাতে যা দেখে আঁতকে উঠে সে।
আজ আয়ানকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়েছে। শরীরটা দুর্বল হওয়ার কারণে বাসায় গিয়ে প্রোপার রেস্ট নিতে বলেছে ডক্টর। নিধিও আয়ানের সঙ্গে তাকে বাসায় ড্রপ করে দিয়ে আসবে। গাড়িতে বসতেই নিধি আলতো করে তার মাথাটা আয়ানের কাঁধে রাখে। আয়ানও তার হাতটা নিধির হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। তারপর মৃদু স্বরে বলে উঠে,
আয়ান: ‘ নিধিপাখি! ‘
এতদিন পর আয়ানের কন্ঠে নিধিপাখি নামটা শুনে শিউরে উঠে নিধি। মনের মধ্যে অদ্ভুত ভালো লাগা এসে জমা হয়। আলতো কন্ঠে বলে,
নিধি: ‘ হুম!’
আয়ান: ‘ মাফ করে দিও আমায় নিধিপাখি! অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমায়।
ভালোবাসি নিধি পাখি!’
নিধি: ‘ আমিও ভালোবাসি প্রিয়!’
আদ্রের নিথর লাশটার সামনে নির্বাক হয়ে বসে আছে ইনায়াত। সে যেন অনুভূতিহীন। তারই সামনে স্পন্দন আদ্রকে মেরে ফেললো।
সে তো সবসময় এই খুনাখুনি থেকে দশ হাত দূরে থাকতো। তবে আজ এসব কি!
স্পন্দন এগিয়ে এসে ইনায়াতের গলায় কাঁটা জায়গায় হাত রাখতেই ছিটকে সরে যায় ইনায়াত। স্পন্দন ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকালে বলে উঠে,
ইনায়াত: ‘ আপনি আমায় ছুঁবেন না, আপনি, আপনি একজন খু,খু,খুনি! আর আপনি তো একজন মাফিয়া!’
স্পন্দন খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে যে ইনায়াত এখনো শকের ভেতর রয়েছে। আর সেই ফোবিয়া ও কিছু টা পড়েছে। ইনায়াতকে বারবার বোঝানোর পরও সে একই প্রলাপ বারবার বকে চলেছে।
এক পর্যায়ে না পেরে স্পন্দন ইনায়াতের ঠোঁট দুটো নিজ দখলে নিয়ে নেয়। আকস্মিক ঘটনায় ইনায়াত একদম বিড়াল ছানার মতো চুপটি মেরে যায় আর চোখ দুটো আবেশে বন্ধ করে ফেলে!……
চলবে ?