একটাই তুমি ??,দ্বিতীয়_পর্ব

0
3251

একটাই তুমি ??,দ্বিতীয়_পর্ব
লেখনীতে: ইনায়াত আহসান (ছদ্মনাম)

বৃষ্টি শেষে এক শীতলতার পরশ মাখা সকালে বাহিরের পরিবেশটাও বেশ ঠান্ডা হয়ে উঠেছে। বাইকে থাকার কারণে শো শো বাতাস যেন শরীরে আছড়ে পড়ছে বারবার। আর সেটা খুব তৃপ্তির সাথে উপভোগ করছে ইনায়াত। সে যে বর্তমানে স্পন্দনের সাথে রয়েছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই তার। সে তো প্রকৃতি নিয়ে মত্ত।

বাইকটি ব্রেক কষতেই হুঁশ ফিরে ইনায়াতের। খেয়াল করে দেখে তারা ভার্সিটিতে পৌঁছে গিয়েছে। এতক্ষণ খেয়াল না করলেও এবার স্পন্দনের দিকে নজর পড়ে ইনায়াতের। পড়নে ব্ল্যাক জিন্স , ডার্ক ব্লু রঙের শার্ট, শার্টের হাতাটা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা আর ব্ল্যাক ওয়াচ। সব মিলিয়ে যেন অসাধারণ।

কারো হাতের তুড়ি বাজানোর শব্দ কানে আসতেই ভাবনার সুতো কেটে যায় ইনায়াতের। চেয়ে দেখে স্পন্দন তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। যা দেখে নিজেরই লজ্জা লাগে তার।
কিছু বলার পূর্বেই পেছন থেকে নিধির কন্ঠস্বর শুনে ঘুরে তাকায় ইনায়াত। তাকিয়ে দেখে নিধি দাঁড়িয়ে আছে এবং হাতের ইশারায় তাকে ডাকছে।
তাই আর কথা না বাড়িয়ে স্পন্দকে উদ্দেশ্য করে শুধু ‘যাচ্ছি’ বলে নেয় ইনায়াত।
আর স্পন্দন ও বিনিময়ে একটা মুচকি হাসি দেয়।

ইনায়াত যেতেই পেছন থেকে কেউ স্পন্দনের কাঁধে হাত রাখে। পেছন দিকে নজর দিতেই স্পন্দনের মেজাজ বিগড়ে যায়। কেননা তার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে রিধিতা। তার ব্যাচেরই ক্লাসমেট। তবে স্পন্দন রিধিতাকে একদম সহ্য করতে পারে না তার বিহেভিয়ার এর জন্য।
সবসময় গায়ে পড়ে থাকে। আর রিধিতার ন্যাকা ন‌্যাকা কথা শুনে আরো রাগ লাগে স্পন্দনের। বোঝেনা সে এত অপমান করার পরেও কিভাবে একটা মেয়ে তার পেছনে পড়ে থাকে।
চোখ গরম করে তাকাতেই রিধিতা হাত নামিয়ে নেয়। তারপর বলে,
রিধিতা: ‘হেই স্পন্দন! কখন এলে তুমি! জানো আমি তোমাকে কতো মিস করেছি? আই এম ভেরি হ্যাপি। আই মিস ইউ স্পন্দন!’

স্পন্দন এবার বেশ বিরক্ত বোধ করছে। সে রিধিতাকে উপেক্ষা করে চলে যেতে নেয় তখনি পেছন থেকে রিধিতা বলে উঠে,
রিধিতা‌: ‘ আরে স্পন্দন কোথায় যাচ্ছো! আর তোমার সাথে একটু আগে যে মেয়েটাকে দেখলাম সে কে! এমন ক্লোজলি দাঁড়িয়ে কি কথা বলছিলে। দেখতে তো মেয়েটা পুরোই গেয়ে।’
একথা শুনে স্পন্দনের মাথায় ধপ করে আগুন জ্বেলে উঠলো! কর্কশ শব্দে রিধিতাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,

স্পন্দন: ‘ ডোন্ট ডেয়ার রিধিতা! ইনাফ ইজ ইনাফ! তোমার সাহস হয় কি করে ইনায়াতকে গেয়ে বলার? এতদিন কিছু বলিনি তাই ভেবো না মাথায় চড়ে বসেছো। এভরিথিং হ্যাজ এ লিমিট। আর তুমি তোমার লিমিট ক্রস করে যাচ্ছো!’
এবার রিধিতা রাগে চিৎকার করে বলে,
রিধিতা‌: ‘ কেন!‌ ঐ মেয়ে কে হয় তোমার! যে আমাকে ঐ ইডিয়ট মেয়ের জন্য এত কথা শোনাচ্ছো। হু দ্যা হেল ইজ সি!’
স্পন্দন এবার না পেরে ঠাস করে একটা থাপ্পর বসিয়ে দেয় রিধিতার গালে। ভার্সিটির সবাই যেন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্পন্দন আর রিধিতার দিকে।
স্পন্দন গর্জে বলে উঠে,
স্পন্দন: ‘ জাস্ট শাট আপ রিধিতা! অনেক হয়েছে। আর না। ইউ ওয়ান্ট টু নো হু ইজ সি , রাইট! নাও লিসেন।
সি ইজ লাভ। ইয়েস আই লাভ হার।
আর তোমার সাহস হয় কি করে ইনায়াতকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করার!’
সবাই অবাক হয়ে আছে কেননা যে স্পন্দন কি না আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের সাথে ভালো করে কথা বলে নি, যে কি না সবার ক্রাশ সে একজনকে ভালোবাসে।
রিধিতার গাল বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।তবে সে যে হিংস্র হয়ে উঠছে মনে মনে তা অজানা।
ওখান থেকে রাগে গজগজ করতে চলতে আসে সে। হাতে থাকা ফোনটা মেঝেতে ছুড়ে মারতেই তা খন্ড খন্ড হয়ে যায়।
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,
রিধিতা:’ ঐ লো ক্লাস মেয়ের জন্য আমাকে অপমান করলে তাই না স্পন্দন! আমার মধ্যে কি নেই যা ওর মধ্যে রয়েছে। ভালোবাসা! হাহ! ভালোবাসা মাই ফুট!
গুড়িয়ে দেবো আমি ঐ ভালোবাসা মিস্টার স্পন্দন। আর ইনায়াত! সে তো বুঝতেও পারবে না তার সাথে কি হতে চলেছে। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ!’

এসব বলেই ভার্সিটি প্রস্থান করে রিধিতা।

ওদিকে ইনায়াতের ক্লাস চলছে। মনোবিজ্ঞান বিভাগের টিচার ক্লাস নিচ্ছেন আর টপিক বুঝাচ্ছেন। কিন্তু তাতেও যেন কোনো হেলদোল নেই ইনায়াতের। সবচেয়ে বিরক্তিকর ক্লাস হলো তার কাছে এটা। পড়াশোনায় একদম ভালোও না একদম খারাপও না। মোটামুটি ধরনের স্টুডেন্ট সে।
চোখে ঘুমঘুম ভাব এসে জড়ো হতেই পাশ থেকে নিধি কলমের খোঁচা দেয় ইনায়াতকে।
বিরক্তিকর চেহারা নিয়ে তাকাতেই নিধি ফিসফিস করে বলে উঠে,
নিধি: ‘ আরে দোস্ত, ঘুমিয়ে পড়িস না। এই টাকলা বেডা যদি তোকে ঘুমাতে দেখে। নির্ঘাত ক্লাস থেকে বের করে দিবে।
সাথে কথা বলার অপরাধে আমাকেও বের করে দিবে।’
নিধির এমন কথায় না হেসে পারে না ইনায়াত। তখনি ক্লাসে দৌড়াতে দৌড়াতে আসে বাঁধন। বাঁধন হলো ইনায়াতের আর নিধির ফ্রেন্ড। বাঁধন হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
বাঁধন:’ মে আই কাম ইন স্যার?

এতক্ষণ স্যার ক্লাসে টপিকস বোঝিচ্ছিলেন। কারো ডাকে পেছনে ফিরতেই দেখে বাঁধন দাঁড়িয়ে আছে। চশমাটা একটু ঠিক করে বলে উঠলেন

স্যার: ‘ আরে বাঁধন মিয়া! আপনি! আরে আমি তো অমাবস্যার রাতে পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে পাচ্ছি। আমি কি একাই দেখছি নাকি বাকি সবাই ও তাই দেখছো?’

সাথে সাথে ক্লাসে হাসির রোল পড়ে যায়। কেননা বাঁধন একদিন আসে তো আবার একমাস ভার্সিটিতে আসে না। যার কারণে তাকে নিয়ে বেশি সমালোচনা হয়ে থাকে।
বাঁধন মুখটা কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে। একটু পর স্যার বলে কাম ইন।
সাথে সাথে সে ক্লাসে প্রবেশ করে আর ইনায়াত, নিধির ঠিক সামনের সিটটায় গিয়ে বসে। যথারীতি সময়ে ক্লাস শেষ হবার পর বাঁধন ইনায়াতকে ডাক দেয়,
বাঁধন: ‘ আরে জানিস আজ ভার্সিটিতে কি হয়েছে! আরে আমাদের সিনিয়র ব্যাচের সব মেয়েদের ক্রাশ আজকে এ রিধিতাকে চড় মেরেছে।
কথাটা শুনতে দেরি কিন্তু বুঝতে দেরি হয়ে না ইনায়াতের যে এ আর কেউ নয় স্পন্দন।

বাঁধনের মুখে সব ঘটনা শুনে অবাক হয়ে যায় ইনায়াত। কেননা তার মতে স্পন্দন কোনো মেয়ের দিকে ভালো করে তাকায় ও না । আর সে নাকি রিধিতাকে চড় মেরেছে!

ক্লাস শেষে ক্যান্টিনে বসে আড্ডায় ব্যস্ত থাকে সবাই। আর সেখানে ইনায়াত আর নিধিও কম নয়। আড্ডার এক পর্যায়ে সেখানে উপস্থিত হয় স্পন্দন। সাথে তার ব্যাচ ও।
নিধি গল্পের এক পর্যায়ে থমকে যায়। চোখ দুটো যেন স্থির হয়ে আছে কোনো এক প্রান্তে। ইনায়াত বসে বসে কফি খাচ্ছিলো। নিধির দিকে চোখ পড়তেই সে দেখে আনমনে বসে একদৃষ্টে কোনো কিছুর দিকে তাকিয়ে আছে সে। নিধিকে অনুসরণ করে পাশে তাকাতেই পাশের টেবিলে বসা রয়েছে স্পন্দন আর তার ফ্রেন্ড আয়ান।
নিধিকে হালকা খোঁচা দিতেই বাস্তবে ফিরে আসে সে। কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই নিধি ইনায়াতকে বলে,
নিধি: ‘ সরি ইনু। আমার একটা কাজ মনে পড়ে গেছে। আমাকে যেতে হবে। ‘
এটুকু বলেই নিধি চলে যায়। আর ইনায়াত ভাবতে থাকে
কি হলো মেয়েটার!….

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here