একটাই তুমি ??,নবম_পর্ব
লেখনীতে: ইনায়াত আহসান (ছদ্মনাম)
সকাল বেলার মিষ্টি রোদের সোনালী আলোর ঝলকানি চোখে পড়তেই পিটপিট করে তাকায় ইনায়াত। চোখ খুলেই খেয়াল করে সে বিছানায় শোয়া। কিন্তু যেটুকু মনে পড়ছে খুব সম্ভবত সে গতকাল রাতে ব্যালকনিতে বসে বসে স্পন্দনের গলায় গান শুনছিল আর তার মাঝেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। তবে কি স্পন্দন ই তাকে নিয়ে এসেছে! ভাবতেই একরাশ লজ্জা এসে ভীড় জমায়।
শাওয়ার শেষ করে ওয়াশরুম থেকে বের হয় স্পন্দন। স্পন্দনের দিকে চোখ যেতেই ইনায়াতের চোখ যেন চড়কগাছ।
খালি গায়ে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। ফর্সা শরীরে যেগুলো দেখতে একদম মুক্তোর মতো মনে হচ্ছে। ভেজা চুলগুলোও কপালের সাথে লেপ্টে রয়েছে। যার কারণে সবচেয়ে আকর্ষণীয় লাগছে।
‘আমাকে দেখা শেষ হলে এবার নিজে ফ্রেশ হয়ে আসো। অবশ্য দেখতেই পারিস, আফটার অল সব মেয়েদের ক্রাশ আমি।’
কথাটা একটু ভাব নিয়ে বললো স্পন্দন। আর এদিকে ইনায়াত পারে না নিজের মাথার চুল নিজে ছিঁড়ে ফেলতে।
‘ তোর হয়েছে টা কি ইনায়াত! যখন তখন ড্যাবড্যাব করে এই খবিশ ব্যাটার দিকে তাকিয়ে থাকিস।
আর আমারি দোষ টা কোথায়। এমন ভাবে আমার সামনে এসে দাড়ালে তো চোখ যাবেই। আর ইনার কথা তো বাদই দিলাম। সময় পেলেই লজ্জায় ফেলে দেয় আমাকে।’
কথাগুলো বিড়বিড় করতে করতে ওয়াশরুমে চলে যায় ইনায়াত।
ডাইনিং টেবিলে বসে বসে সবাই নাশতা করছে। স্পন্দনের মা মিসেস সাবিনা সযত্নে ইনায়াতের প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছেন।
নাশতা করার এক পর্যায়ে স্পন্দন বলে উঠে,
স্পন্দন: ‘ ইনায়াত, তারাতাড়ি খেয়ে রেডি হয়ে নাও ভার্সিটির জন্য।’
এবার মিসেস সাবিনা খেতে খেতে বলে উঠেন,
মিসেস সাবিনা: ‘ আহা স্পন্দন! মেয়েটার তো রেস্টের প্রয়োজন। একদিনে এত দৌড় ঝাঁপ , ওর উপর তো প্রেশার পড়েছে। ওকে বরং দুদিন রেস্ট নিতে দাও। পরে না হয় ও নিধির কাছ থেকে নোটস গুলো নিয়ে নিবে।’
ইনায়াত: ‘ না,না ফুপি। আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি যেতে পারব।’
মিসেস সাবিনা: ‘তা ভালো কথা। কিন্তু তুমি এখনো ফুপি বলো কেন? এখন থেকে স্পন্দনের মতো তুমিও আমায় মা বলে ডাকবে! মনে থাকবে?’
কথাগুলো মিসেস সাবিনা ইনায়াতের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন। ইনায়াতও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করছে স্পন্দন। আর তার পাশের সিটে বসে আছে ইনায়াত। ড্রাইভিং এর মাঝে হঠাৎ ইনায়াত প্রশ্ন করে বসে,
ইনায়াত: ‘ আচ্ছা, স্পন্দন ভাই আপনি এখনো কিন্তু আমায় বললেন না যে আপনি কিভাবে ঐ আদ্র স্যার আর আমার কথাগুলো কিভাবে জানলেন!’
স্পন্দন দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
স্পন্দন: ‘ এই মেয়ে এই! তোমার সমস্যাটা কি? খালি ভাই ভাই করো! আমি কি তোমার মায়ের পেটের ভাই লাগি!
আর সবচেয়ে বড় কথা, নিজের হাসবেন্ড কে কেউ ভাই বলে?’
ইনায়াত মুখ ফুলিয়ে বলে উঠে,
ইনায়াত: ‘ আমি তো ছোট বেলা থেকেই আপনাকে ভাই বলে এসেছি । আমার কি দোষ, হুহ!’
স্পন্দন এবার কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
স্পন্দন: ‘ তোর এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই।
কথাটা বলেই রহস্যময় হাসি দেয় স্পন্দন।
ভার্সিটির উত্তর দিকে ছোট একটা লেকের পাড় রয়েছে। আর তার পাশেই দু একটা বেঞ্চ। সেখানেই বসে বহীয়মান স্রোতের দিকে আনমনে তাকিয়ে রয়েছে নিধি। ফোনে কল আসতেই চমকে উঠে সে। খেয়াল করে দেখে আননোন নাম্বার থেকে পরপর ১২ টা মিসড কল এসেছে। এতবার কল আসায় চিন্তায় পড়ে যায় নিধি। লাস্ট কল আসার সাথে সাথেই সে রিসিভ করে। রিসিভ করে অপর পাশের ব্যক্তি যা বলে তা শুনে ফোনটা হাত থেকে পড়ে যায়। চোখের কোণে জল জমা শুরু করে দেয়।মুখ দিয়ে শুধু অস্পষ্ট স্বরে বেরিয়ে আসে,
‘আ,আয়ান..’
হসপিটালের করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে নিধি। অস্থির ভাবে পায়চারী করছে সে। একটু পর ডক্টর বেরিয়ে আসে। বলে,
ডক্টর: ‘ এখানে পেশেন্ট এর বাড়ির লোক কে!’
নিধি কোনো কিছু না ভেবেই এগিয়ে যায়। বলে উঠে,
নিধি: ‘ আমি ডক্টর! আয়ান কেমন আছে? ওর কিছু হয়নি তো!
ডক্টর: ‘ সিরিয়াস কিছু নয়। তবে এক্সিডেন্ট এর কারণে শরীরে বেশ খানিকটা রক্ত বেরিয়ে গিয়েছে। সোমবার উনার এখন ইমিডিয়েটলি রক্ত লাগবে। এখানে এবি নেগেটিভ রক্ত কার । আমাদের সাথে আসুন!’
নিধি: ‘ ডক্টর আমার রক্তের গ্রুপ এবি নেগেটিভ। আমায় নিয়ে চলুন।’
এদিকে স্পন্দন ইনায়াতকে পাঠিয়ে দিয়ে নিধির সাথে রয়েছে। কেননা ইনায়াতের রক্তের ফোবিয়া আছে যার কারণে স্পন্দন একা থেকে যায়।
দেখতে দেখতে প্রায় বিকেল পেরিয়ে যায়। নিধি আয়ানের সাথে বসে রয়েছে। কেবিনে শিফট করা হয়েছে তাকে। এক হাতে ক্যানেলা লাগানো।
একটু পর আধো আধো চোখে তাকায় আয়ান। চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে সে হসপিটালে কেবিনে শোয়া অবস্থায়। বাম হাতে টান লাগতেই হালকা শব্দে ‘ আহ্’ করে উঠে।
নিধির চোখটা মাত্রই লেগে এসেছিল। হঠাৎ মৃদু শব্দ পেয়ে একলাফে উঠে বসে সে।
আয়ানের হুঁশ ফিরতে দেখে তার কাছে গিয়ে তার হাতের উপর হাত রেখে বলে উঠে,
নিধি: ‘ আপনি ঠিক আছেন! একটু সাবধানে থাকা যায় না নাকি? জানেন কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি!’
নিধির কান্নারত স্বর দেখে আয়ান তার ডান হাত আলতো করে নিধির গালে রাখে আর বলে উঠে,
আয়ান: ‘ এই নিধিপাখি! তাকাও আমার দিকে। দেখো কিছু হয়নি তো আমার! কান্না থামাও, প্লিজ!’
নিধি এবার আয়ানের বুকে মাথা রেখে আনমনে বলে বসে,
নিধি: ‘ ভালোবাসি আয়ান, ভালোবাসি!’
আয়ানও এক হাতে নিধিকে জড়িয়ে ধরে বলে,
আয়ান: ‘ আমিও ভালোবাসি নিধি পাখি!’
সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরে স্পন্দন। বাসার সবাই চিন্তিত হয়ে বসে আছে। যা দেখে স্পন্দনের মনে খটকা লাগলো।
স্পন্দন আসতেই মিসেস সাবিনা ওকে গিয়ে বলে,
মিসেস সাবিনা: ‘ স্পন্দন, ইনায়াত কোথায়! ও তো এখনো বাড়ি ফিরে নি।’
মায়ের মুখে এমন কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ল স্পন্দন। কোথায় গিয়েছে ইনায়াত?
কি হয়েছে তার!
স্পন্দনের ফোনে তখনি রিং হয়। রিসিভ করে যা শোনে তাতে ধীরে ধীরে তার চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। রাগে হাত মুঠো করে ফেলে।
অন্ধকার কোনো এক জায়গায় একটা চেয়ারে হাত পা বাঁধা অবস্থায় বসে আছে ইনায়াত। জায়গাটাকে মূলত গোডাউন ই বলা যায়। চারপাশে শুধু সারি সারি বাক্স । শুধু একটা লাইট রয়েছে তাও স্বল্প আলোর।
একটু পর খট করে দরজা খোলার শব্দ হয়। কেউ একজন সিটি বাজাতে বাজাতে প্রবেশ করে।…..
চলবে ?