একটাই তুমি ??পর্ব-3+4

0
3061

একটাই তুমি ??পর্ব-3+4
লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
পর্ব-3

রাস্তায় আনমনে হেঁটে চলেছে নিধি। মাথার ভেতর শুধু একটাই চেহারা বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। সে বারংবার ভেবে চলেছে একটা কথা!
– সে এখানে কিভাবে এলো। কেন এলো? এতোটা বছর ! নিজেকে সামলে নিয়েছি আমি তবে আজ কেন আবার হলো এমনটা!
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে মেইন রোডের মাঝ বরাবর এসে পড়েছে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। কোনো গাড়ির হর্ন কানে আসতেই পেছনে তাকিয়ে দেখে একটা বড় মাইক্রোবাস তার দিকেই ছুটে আসছে। কোনো কিছু ভাবার আগেই পাশ থেকে কেউ নিধির বাহুদ্বয় ধরে টান দেয়। সাথে সাথে চিৎকার করে চোখ বুজে ফেলে। এই বুঝি জীবন শেষ!

অনেকক্ষণ পর পিটপিট করে তাকায় নিধি। কারো বাহুর মাঝে আষ্টেপৃষ্ঠে রয়েছে তা ভালোই বুঝেছে সে। নাকে কারো শরীরের চেনা পরিচিত পারফিউম এর সুগন্ধ আসতেই মস্তিষ্ক সজাগ হয়ে ওঠে তার।
সোজা হয়ে দাড়াতেই সামনে থাকা মুখটি দেখে আঁতকে উঠে নিধি।
শুধু অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠে, ‘আয়ান’।

আকাশে মেঘ জমেছে। কোথাও ঘন কালো মেঘ আবার কোথাও স্বচ্ছ শুভ্রতায় ঘেরা। কখন যে মেঘ ভেদ করে টুপ করে বৃষ্টি নেমে যায় তা বোঝা বড় দায়।
ভার্সিটি প্রাঙ্গণে পাশাপাশি হেঁটে চলেছে স্পন্দন আর ইনায়াত। চারপাশের মৃদু হাওয়া এসে বারবার ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে তাদের। স্পন্দন আড়চোখে ইনায়াতের দিকে তাকাচ্ছে। আর ইনায়াত আনমনে হাটছে আর মৃদু কন্ঠে সুর তোলে,

বাহির বলে দূরে থাকুক
ভেতর বলে আসুক না
ভেতর বলে দূরে থাকুক
বাহির বলে আসুক না,,

ঢেউ জানা এক নদীর কাছে…
গভীর কিছু শেখার আছে
সেই নদীতে,,,

পুরোটা শেষ করার আগেই পাশ থেকে স্পন্দন বলে উঠে,
স্পন্দন: ‘ তোর ভাঙা ক্যাসেট থামা। নাহলে কাক, পাখি যা আছে সব উড়ে যাবে। আর আকাশ থেকে বৃষ্টি ঝড়ে পড়বে।’

রাগে দুঃখে কান্না চলে আসছে ইনায়াতের। এই লোকটা তাকে সহ্য করতে পারে না কেন। এত অভিমান কিসের তার।
মনে মনে বলে,
‘আপনি এমন কেন স্পন্দন ভাই। আজকের আপনি আর অতীতের আপনির মাঝে যে বিশাল ব্যবধান। এতোটা বদলে গেলেন কিভাবে। আপনি তো এমনটা ছিলেন না!’
বাইকের কাছে আসতেই আকাশের খন্ডে খন্ডে বিভক্ত তুলোর মত মেঘ থেকে শীতল বৃষ্টির ছোঁয়া নেমে আসলো। বাতাসের ঝাপটায় বৃষ্টির পানি যেন আরো জোড়া লো হয়ে উঠেছে।

কফিশপে একটা টেবিলে মুখোমুখি হয়ে বসে আছে নিধি আর আয়ান। গ্লাসের দেয়াল বেয়ে বৃষ্টির পানি টুপটুপ করে পড়ছে। নিধি আর আয়ানের সামনে ওয়েটার এসে দু’টো কফির কাপ এগিয়ে দেয়। দুজনের মাঝেই পিনপতন নীরবতা। আয়ান কফির কাপে চুমুক দিলেও নিধি বসে বসে শুধু নাড়াচাড়া করছে। একটা সময় পর আয়ান হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে কোমল স্বরে বলে,

আয়ান:’ কেমন আছো নিধি?’
এতো বছর পর আয়ানের মুখে নামটা শুনে মনে মনে ভীষণ মুগ্ধ হয় নিধি । সারা শরীরে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যায়। কিন্তু তা প্রকাশ করে না সে।
চেহারায় হালকা রুক্ষতা প্রকাশ করে বলে,
নিধি:’ সেটা জেনে আপনার কোনো কাজ আছে বলে মনে হয় না মিস্টার আয়ান! আমাকে এই কফিশপে আনার কারণ কি সেটা বলুন। ‘

নিধির এমন প্রশ্নোত্তরে খানিকটা হতাশ হয় আয়ান। ভাবে হয়তো নিধিও তার মতো বদলে গিয়েছে। ব্যাথিত চোখে করুণভাবে থাকা নিধির দিকে । তারপর বলে,
আয়ান: ‘ আমায় কি আর একটা সুযোগ দেয়া যায় না নিধি! বিশ্বাস করো আমি আগের মতো হয়ে গিয়েছি। তোমায় সেদিন ফিরিয়ে দেয়ার পর আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে সেই সিদ্ধান্ত টা আমার জীবনের কত বড় ভুল ছিল। হেরে গিয়েছিলাম আমি ভালোবাসার কাছে। আমি উপলব্ধি করেছি ভালোবাসা কি। কিন্তু ততদিনে আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। অনেক খুঁজেছি কি পাইনি। কিন্তু আজ ক্যান্টিনে তোমাকে দেখে মনে হয়েছিল সব ফিরে পেয়েছি।
প্লিজ ফরগিভ মি নিধি!’

কথাগুলো শুনে বুকটা ধক করে উঠে নিধির। মনের মধ্যে সবকিছু অশান্ত হয়ে যাচ্ছে। না এখানে থাকা যাবেনা আর। অনেক কষ্টে কাঠখড় পুড়িয়ে এতদিন নিজেকে সংযত করেছে সে।

গম্ভীর কন্ঠে বলে,
নিধি:’ দেখুন মিস্টার আয়ান, এভরিথিং হ্যাজ এ পাস্ট। এটাও একটা পাস্ট ইনছিডিয়েন্ট ছিল। সো বেটার হবে আপনি এগুলো ভুলে যান। আর বিশ্বাস! সে শব্দটির অর্থ ও কি আপনি আদো জানেন?
প্লিজ মুভ অন।’

এটুকু বলেই চেয়ার থেকে উঠে হাঁটা দেয় নিধি। পেছনে একবারও তাকায়নি সে । যদি দুর্বল হয়ে পড়ে তাহলে!

এদিকে আয়ান নিধির যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তবে কি আসলেই নিধিকে আর পাবে না কোনোদিন সে?

শাওয়ার শেষ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে ব্যস্ত ইনায়াত। একটু পর হাঁচি দিতে দিতে অবস্থা খারাপ। বুঝতে দেরি নেই যে তার ঠান্ডা লেগে গিয়েছে। বৃষ্টিতে আধভেজা হয়ে একটা ছাউনীর নিচে দাঁড়িয়ে ছিল স্পন্দন আর ইনায়াত। বৃষ্টি থামলে বাইকে করে দুজনে বাসায় চলে আসে।
বর্তমানে ইনায়াতের মনে একটা কথাই চলছে,
স্পন্দন ভাই কেমন আছেন! তার কিছু হয়নি তো?

দরজায় টোকা পড়তেই চমকে উঠে ইনায়াত। দরজা খুলে দেখে ইনায়াতের মা মিসেস তানহা দাঁড়িয়ে আছেন দরজার ওপাশে। হাতে নিয়ে এসেছেন দুধের গ্লাস।
ভেতরে প্রবেশ করে গ্লাস টা টেবিলে রেখে দেয় মিসেস তানহা। মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
মিসেস তানহা: ‘ কি দরকার ছিল বৃষ্টিতে ভেজার। এই বৃষ্টিতে ভিজে নিজে তো ঠান্ডা লাগিয়েছিস। স্পন্দনেরও নাকি জ্বর এসেছে। নাও এই হলদি দুধ খেয়ে নাও।
আমি যাই গিয়ে স্পন্দনকে দেখে আসি।’

স্পন্দনের কথা শুনতেই বুকটা ধক করে উঠল ইনায়াতের। তার জ্বর এসেছে! এখন কি অবস্থা কে জানে।

স্পন্দনের ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইনায়াত। মনের দ্বিধাবোধ করছে এখন যাওয়া উচিত কি না। কিছু ক্ষণ পর খানিকটা সাহস করে কলিং বেলে চাপ দেয়। কয়েক সেকেন্ড পর দরজা খুলে দেয় স্পন্দনের মা মিসেস সাবিনা। ইনায়াতকে দেখে হাসিমুখে বলে উঠেন,

মিসেস সাবিনা:’ আরে ইনায়াত। কেমন আছো মা ! বাহিরে কেন ভেতরে এসো।’
ইনায়াতও গুটি গুটি পায়ে ভেতরে প্রবেশ করে। ঠিক দুই বছর পর আবারও এলো স্পন্দনের ফ্ল্যাটে। ভেতরে আসতেই টুকিটাকি কথা হয় স্পন্দনের মা মিসেস সাবিনার সাথে। কথার এক পর্যায়ে ইনায়াত আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে,
ইনায়াত: ‘ ফুপি, শুনেছি স্পন্দন ভাইয়ের নাকি জ্বর এসেছে। সে এখন কেমন আছে!’

মিসেস সাবিনা: ‘ হ্যাঁ, এসেছিল। আমিও জলপট্টি দিচ্ছিলাম। এখন হালকা কমেছে। ভেতরে শুয়ে আছে। তুমি চাইলে একবার দেখে আসো।’

স্পন্দনের রুমে যাওয়ার কথা শুনে হালকা ইতস্তত বোধ করে ইনায়াত। মনে শত অভিমান জমা থাকলেও উঠে দাঁড়ায় সে। রুমের দরজা হালকা খুলে ভেতরে একবার পরখ করে নেয় সে।
স্পন্দন ঘুমিয়ে আছে। ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করে সে। রুমটায় প্রবেশ করতে দেখে রুমটা এখনো পূর্বের মতোই সাজানো।
খাটের উপর দেয়ালে বড় করে একটা ফ্রেমে বন্দী স্পন্দনের ছবি। তাছাড়া ঘরের একপ্রান্তে রয়েছে ছোট একটা বুকশেলফ।

ধীর পায়ে খাটের সামনে যেতেই দেখে স্পন্দন ঘুমিয়ে রয়েছে। জ্বরের কারণে চোখ মুখ শুকিয়ে গেলেও তাতে যেন অদ্ভুত আকর্ষণীয় লাগছে। কপালে চুলগুলো এলোমেলো ভাবে পড়ে রয়েছে।
আস্তে আস্তে এক হাত স্পন্দনের কপালে রাখে ইনায়াত। কিছুটা নড়ে উঠলেই কিঞ্চিত ভয় পেয়ে যায় সে। খেয়াল করে স্পন্দন কিছু একটা বিড়বিড় করে বলছে,
আলতো করে কানটা সামনে এগোতেই যা শোনে তাতে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় ইনায়াত……

চলবে ??

একটাই_তুমি ??
লেখনীতে: ইনায়াত আহসান (ছদ্মনাম)
চতুর্থ_পর্ব

বাকরুদ্ধ হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ইনায়াত। কি শুনলো সে! এটা কি আদৌ সত্যি ?

‘ভালোবাসি ইনায়াত। প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাস না। তুই শুধু আমার,,,’
ঘুমের ঘোরে স্পন্দনের বলা কথা গুলো শুনে ইনায়াত এক মুহূর্তের জন্য থমকে যায়।
মনে মনে বলে,

ইনায়াত:’ না না এ হতে পারে না। আমি কি ভুল শুনছি! স্পন্দন ভাই হয়তো জ্বরের কারণে এসব উদ্ভট কথাবার্তা বলছেন। এ ছাড়া আর কিছুই হবে না’
স্পন্দনের বলা কথাগুলো তাকে ভাবালেও তা নিয়ে বেশি মাথা ঘামায় না ইনায়াত।

দাবার গুটি নিয়ে খুব মনোযোগ সহকারে কিছু একটা ভাবছে কেউ। বেশ কিছুক্ষণ পর বিপরীত দলের রাজার গুটিটা নিজ আয়ত্তে আনতেই মুখে বাঁকা হাসি ফুটে উঠে তার।
অচেনা :’ গেম ওভার মিস্টার স্পন্দন!
এই গুটিটার মতো তুমি ও হেরে যাবে। এখনো অনেক হিসেব নিকেশ বাকি রয়েছে। আই এম কামিং সুন , স্পন্দন!
জাস্ট ওয়েট ফর মি!’

সকালের রোদের সোনালী আলোর ঝলকানি পর্দা ভেদ করে চোখে পড়তেই ঘুম ছুটে যায় স্পন্দনের। চোখ পিটপিট করে তাকায় সে। ঘড়ির দিকে খেয়াল করতেই দেখে সকাল বাজে ৯:৩৮ মিনিট। জ্বরের কারণে মাথাটাও বেশ ঝিমঝিম করছে। বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়াতেই কাল রাতের কিছু একটা অস্পষ্ট অবয়ব মনে পড়ে তার!
তবে কি ইনায়াত এসেছিল এখানে? কিন্তু ওর তো আসার কথা না। স্পন্দন আর দেরি না করে নিজের ড্রয়ার খুলে ভালো করে চেক করে নেয়। চেক করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে। না সবকিছু ঠিক আছে।

ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে বাসা থেকে বের হতেই পেছন থেকে ডাক দেয় কেউ,
‘ইনায়াত’
পা দুটো আপনাআপনি থমকে দাঁড়ায় ইনায়াতের। পেছনে তাকিয়ে দেখে স্পন্দন দাঁড়িয়ে আছে। উস্কখুস্ক চুল, পরনে লেমন টিশার্ট আর ব্লু কালার ট্রাউজার।
ইনায়াত ভেবে পায়না এই লোকটা যেমন ই থাক না কেন তার কাছে সবসময় আকর্ষণীয় লাগে। বিশেষ করে স্পন্দনের হাসিটা।

স্পন্দন সামনে এসে দাড়াতেই ভাবনা কেটে যায় ইনায়াতের। স্পন্দন কিছুটা গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করে,

স্পন্দন:’ তুই কি কাল আমার রুমে গিয়েছিলি ইনায়াত?’
ব্যাস এই কথাটারই ভয় পাচ্ছিল ইনায়াত। এখন কি বলবে সে ! এটা যে হ্যাঁ আমি গিয়েছিলাম, যদি আবার ঐ দিনের মত ধমক দিয়ে দেয় তাহলে!
ইনায়াত কিছুটা কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে,

ইনায়াত: ‘ হ্যাঁ, আমি গিয়েছিলাম কালকে। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি শুধু আপনার জ্বর আসার কথা শুনে গিয়েছিলাম। আমি আর যাবো না’

এবার স্পন্দনের বেশ বিরক্ত লাগে। মেয়েটা বেশি বুঝে কেন! সবসময় দুই লাইন বেশি না বুঝলে মনে হয় , হয় না।
কিছুটা দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,

স্পন্দন:’ আমি কি একবারও বলেছি তোকে আমার রুমে না আসতে। সবসময় বেশি বোঝা ভালো না’

ইনায়াত যেন অবাক হওয়ার সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে গিয়েছে। কি বলছে এগুলো স্পন্দন ভাই, যে কিনা দুই বছর আগে নিজেই তার রুম থেকে বের করে দিয়েছিল আর বলেছিল যেন তার রুমের সীমানায় আর কোনোদিন না যাই! সে ব্যক্তিই আজ এসব বলছে। কি করে সম্ভব!

ইনায়াত এবার সোজাসাপ্টা ভাবে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় স্পন্দনের দিকে।
ইনায়াত: ‘ কিন্তু স্পন্দন ভাই, আপনি যে আমায় দুই বছর আগে,,,,’
পুরো বাক্যটি আর পূর্ণ করতে পারলো না ইনায়াত তার আগেই স্পন্দনের রাগান্বিত চোখ দেখে চুপ হয়ে গেল। ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখে আর মাত্র বিশ মিনিট রয়েছে ক্লাসের। তাই কথা না বাড়িয়ে চলে গেল ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। আর স্পন্দন ইনায়াতের যাওয়ার পানে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।

এদিকে নিধির বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে আয়ান। গত দুই ঘণ্টা যাবত ধরে অপেক্ষা করছে কখন নিধি একটু বারান্দায় আসবে। কিন্তু এতক্ষণ পরও না আসায় কিছু টা হতাশ হয় সে। তবে কি নিধিকে এবার পেয়েও হারাতে হবে তার !
কথায় আছে না, ‘সময়ের মূল্য দিতে শেখো’
নাহলে এমন সময় আসবে যেদিন জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান বস্তুটি হারানোর পর আফসোস হতে থাকবে।

আয়ানের ভাবনার আশায় সুপ্ত প্রদীপ জ্বেলে দেখা মিললো নিধির‌। বারান্দায় দাঁড়িয়ে বেলী ফুলের গাছ টায় পানি দিতে ব্যস্ত সে। আয়ান ও সাবধানে লুকিয়ে পড়ে একটা গাছের পেছনে যাতে করে নিধিকে দেখতে পেলেও তাকে যেন দেখা না যায়। এতদিন পর নিজ প্রেয়সীকে দেখে তৃপ্তি সহকারে দেখতে থাকে আয়ান। নিধি যাওয়ার সময় সামনে তাকাতেই আয়ান পেছনে লুকিয়ে পড়ে আর ভাবতে থাকে তাকে দেখে ফেললো কি না নিধি। একটু পরে দেখে যে নিধি চলে গেছে। যাক বাবা বাঁচা গেল!

এয়ারপোর্টে সব ফর্মালিটিজ শেষ করে বাহিরে বের হতেই মুখে বাঁকা হাসি দেয় কেউ। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে কেউ হাতের ইশারায় হেলো বলছে। সামনে এগোতেই কেউ এসে জড়িয়ে ধরে তাকে আর বলে,
‘ওয়েল কাম ব্যাক টু বাংলাদেশ এ.ডি।’

লোকটিও তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘থ্যাংকস মাই ডিয়ার ডার্লিং, রিধিতা!’

রিধিতাকে নিয়ে গাড়িতে উঠতেই লোকটি বাঁকা হেসে বলে,

এ.ডি: ‘ আই এম ব্যাক, স্পন্দন! নাও নিউ গেম ইজ স্টার্ট। আই এম কামিং, মিস্টার স্পন্দন চৌধুরী!’
সাথে সাথে দুজনেই ডেভিল হাসি দেয়।

ভার্সিটি ক্যাম্পাসে একা একা বসে আছে ইনায়াত। আজ নিধি আর বাঁধন কেউ আসেনি। তার উপর স্পন্দন ও আজ রেস্ট নেওয়ার জন্য আসলো না। সব মিলিয়ে প্রচুর বিরক্তি লাগছে। এজন্য দুটো ক্লাস করেই বাড়ি যাওয়ার জন্য চলে আসছে। ভার্সিটি পার্কিং এরিয়ায় আসতেই কেউ সামনে এসে দাড়ালো ইনায়াতের। চোখ তুলে তাকাতে দেখে দাঁড়িয়ে বিশ্রী হাসি দিচ্ছে ভার্সিটির রাজনৈতিক দলের লিডারের ডান হাত বলা যায় যাকে। ফয়সাল আহমেদ তূর্য।

ইনায়াতের দিকে তাকিয়ে বিশ্রী হাসি দিয়ে বলে উঠে তূর্য,

তূর্য:’ কি মিস ইনায়াত! এত পালাই পালাই করলে হয় নাকি। ঐ স্পন্দন ছাড়া আমাদের ও তো একটু সময় দিলে পারো তাইনা ?’

তূর্যের এমন কথায় ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয় ইনায়াত। ইনায়াত এবার কিছুটা ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলে,
ইনায়াত: ‘ দেখুন তূর্য ভাইয়া। না জেনে অহেতুক কোনো কথা বলবেন না । আর আমার রাস্তা ছাড়ুন। আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।’
তূর্য: ‘ আরে আরে কোথায় যাচ্ছ। আমি কি ছেড়ে দেয়ার জন্য রাস্তা আটকিয়ে ছি নাকি!’
এটা বলেই তূর্য ইনায়াতের হাত খপ করে ধরে ফেললো। আর ইনায়াতও এখন ভয় পেয়ে যাচ্ছে। নিজের হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করেও বিশেষ কোনো লাভ হলো না। যত যাই হোক সে একজন মেয়ে। তূর্যের এমন আচরণ দেখে রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে সাথে কান্নাও পাচ্ছে।

তখনি পেছন থেকে কেউ সজোরে ঘুষি মারে তূর্যকে। আর তূর্যও ইনায়াতকে ছেড়ে কিছুটা দূরে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে। ইনায়াত পাশে তাকাতেই দেখে একজন সুদর্শন যুবক, পোশাক ও ফর্মালিটি দেখে মনে হচ্ছে ভার্সিটির নিউ কোনো প্রফেসর।
লোকটিকে দেখা মাত্রই তূর্য কোনো মতে উঠে দৌড়ে পালালো, যে ব্যাপারটা ইনায়াতের কাছে খটকা লাগলো।
তূর্য যেতেই লোকটি ইনায়াতকে উদ্দেশ্য করে বলে,
লোকটি: ‘আর ইউ‌ ফাইন মিস!’
ইনায়াত মাথা নেড়ে হ্যাঁ বোঝাতেই লোকটি ইনায়েতের দিকে হাত এগিয়ে দেয় আর বলে,

লোকটি: ‘ হেই, আই এম আদ্র জুহায়ের‌।এই ভার্সিটির নিউ প্রফেসর। ‘
ইনায়াতের ধারণাটি তাহলে সঠিক।
ইনায়াতও হাত বাড়িয়ে বলে,
ইনায়াত: ‘ আমি ইনায়াত আহসান। এ ভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।’

স্পন্দনের ফোনে টুং করে মেসেজের শব্দ আসতেই সে ফোন নিয়ে মেসেজ অপশনে ক্লিক করে। মেসেজ অপশনে গিয়ে মেসেজ দেখতেই রাগে হাতের ফোনটা নিচে আছাড় মারে।
এমন কি ছিল মেসেজ টায়……

চলবে ??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here