একটাই তুমি ??,পর্ব_5+6

0
2815

একটাই তুমি ??,পর্ব_5+6
লেখনীতে: ইনায়াত আহসান (ছদ্মনাম)
পর্ব_5

বিকেল বেলার রক্তিম আভা আকাশের নীলের মাঝে মিশে গিয়ে হালকা বেগুনি রঙ ধারণ করেছে। ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে স্পন্দন। হাতে থাকা জলন্ত সিগারেটটা শেষের দিকে প্রায়।
মনে শুধু একটা কথাই বারবার আওড়াচ্ছে।

‘ আমার ভেতর কেন তোকে হারাবার ভয় ক্রমশ বাড়ছে ইনায়াত।মনে হচ্ছে তুই আমার থেকে দূরে চলে যাচ্ছিস। কিন্তু আমি এটা হতে দিবো না।
কেননা আমি যে তোকে ভালোবা,,’

‘স্পন্দন ভাই!’
পেছন থেকে কারো কন্ঠে নিজের নাম শুনে হালকা চমকে উঠে স্পন্দন।
ইনায়াত অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রয়েছে স্পন্দনের হাতের দিকে। ক্ষীণ কন্ঠে স্পন্দনকে জিজ্ঞেস করে,
ইনায়াত: ‘ স্পন্দন ভাই, আপনার হাতে সিগারেট কেন!’
স্পন্দন এবার কিছুটা ভড়কে যায়। কিছুটা তুতলিয়ে বলতে থাকে,

স্পন্দন: ‘ ক,কই! আর ত,তু, তুই এখানে কি করছিস!’
স্পন্দনের এমন কথা বলার ভঙ্গি দেখে ভ্রু দুটি কুঁচকে যায় ইনায়াতের। এবার সে এগিয়ে যায় স্পন্দনের দিকে। সে তো এসব ছাইপাশ কখনো ছুঁয়েও দেখে না। তাহলে আজ এসব কি!
স্পন্দন ততক্ষণে হাতে থাকা সিগারেট টা পায়ের নিচে ফেলে পিষে ফেলেছে।
কিন্তু তাতেও বিশেষ কোনো লাভ হলো না। ইনায়াত সামনে এসে দাড়িয়ে নাক সিঁটকায়। কেননা আশেপাশে সিগারেটের ধোঁয়ার কিছু অংশ এখনো রয়ে গেছে। যা ইনায়াতের নাকে এসে লাগে।

নাকে হাত দিয়ে বলে,
ইনায়াত: ‘ আপনি খুব খারাপ , স্পন্দন ভাই! আগে তো কখনো দেখিনি আপনাকে এসব খেতে। আমি আজই গিয়ে ফুপিকে বলে দেব।’

একথা বলেই ছাদ থেকে চলে যেতে নেয় ইনায়াত। তখনি পেছন থেকে স্পন্দন ইনায়াতের হাত ধরে টান মারে। আচমকা হাতে টান পড়ায় ঘুরে একদম স্পন্দনের সামনে এসে পড়ে। এতোটা কাছাকাছি এসে যেন নিঃশ্বাস নিতেও ভুলে গিয়েছে ইনায়াত। দুজনের মাঝেই পিনপতন নীরবতা। ইনায়াতের চোখ স্পন্দনের চোখ বরাবর।
‘এ কেমন মাদকতা আপনার চোখে স্পন্দন ভাই’
নিজের অজান্তেই বিড়বিড় করে এ কথা বলে ইনায়াত।
স্পন্দন এবার কিছুটা ঝুঁকে যায় ইনায়াতের দিকে। ফিসফিস করে বলে,
‘তা কি বলবি মাকে, যে আমি সিগারেট খাই, ছাইপাশ খাই?’

স্পন্দনের এমন ফিসফিস করা আওয়াজে ইনায়াতের সারা শরীর জুড়ে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যায়।

পরক্ষনেই ভাবনা থেকে বের হতেই সরে আসে স্পন্দনের কাছ থেকে ইনায়াত। কি বলছিলো এসব সে? আর এই অনুভূতির নাম ই বা কি তাহলে!!

রাতের টিমটিমে আলোয় ব্যালকনিতে কফির কাপ হাতে উদাসীন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিধি। দৃষ্টি তার বাহিরের দিকে। কিন্তু মনের ভেতর চলছে হাজারো চিন্তা-ভাবনা।

‘কেন এলে তুমি আবার! ভালোই তো ছিলাম আমি তুমি বিহীন। নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম সেসব আবেগ, অনুভূতি থেকে! কিন্তু ভাগ্য আমাকে আবারো তোমার সামনেই এনে দিলো কেন, আয়ান!’

ফোনের রিংটোন শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখে ফোনটা বেজে চলেছে টেবিলের উপর। আর সেখানে ‘প্রিয়’ নামটা জ্বলজ্বল করছে। ‘প্রিয়’ নামটা দেখে মুহূর্তে চমকে উঠে নিধি। কেননা ‘প্রিয়’ নামটা যে আয়ানের! সে কেন তাকে ফোন করছে! কি চাই তার?
পরপর কয়েকবার বাজার পর আপনাআপনি কেটে গেল। সে ধরবে না ফোন। কেন ধরবে ? তাকে দেয়া কষ্টগুলো এখন ও বুকের গহীনে জমা রয়েছে। জমা রয়েছে তার প্রতি পাহাড় সমান অভিমান। চাইলেই কি তা আদো শেষ করে দেয়া যায় !!

কিছুক্ষণ পর ফোনে টুং করে আওয়াজ হলো। মেসেজেও প্রিয় নামটা সবার আগে। তাতে লেখা ,
‘ প্লিজ, নিধি! একটাবার শুধু আমার ফোনটা রিসিভ করো, প্লিজ।’

তা দেখে ফোনটা আস্তে করে বন্ধ করে ড্রয়ারে রেখে দিলো নিধি। চায়না সে অতীতের সম্মুখীন হতে। অন্তত এটুকু বুঝতে পেরেছে ভালোই যে আজ রাতে ঘুম নামবে না ইজি চেয়ারটাতে চুপটি করে বসে পড়লো।

‘মিট হিম অল! হি ইজ অল অফ ইউর নিউ ইংলিশ প্রফেসর, মিস্টার আদ্র জুহায়ের।’

ভার্সিটির প্রিন্সিপাল স্যার এসে বক্তৃতা দিচ্ছেন অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের। প্রিন্সিপাল চলে যাওয়ার পর আদ্র বলা শুরু করলো,
আদ্র: ‘আই ইন্ট্রোডিউছ্ড মাইসেল্ফ। নাও অল অফ ইউর টার্ন।’

একে একে বাম পাশের সব সারির স্টুডেন্ট দের সাথে পরিচয় হওয়ার পর এলো ডান পাশের স্টুডেন্ট দের পালা। ইনায়াত আর নিধি বসে ছিল মাঝের সারিটায়। নিধির পরিচয় দেয়ার পর যখন ইনায়াত দাঁড়িয়ে নিজের নাম বলবে তখনি আদ্র বলে উঠে,
আদ্র: ‘ ইউ মিস ইনায়াত, রাইট?’
ইনায়াত মাথা নেড়ে সম্মতি দিতেই আদ্র চলে যায়। ইনায়াত বসলে পাশ থেকে নিধি ফিসফিস করে বলে,
নিধি: ‘ এই ইনু, এই প্রফেসর তোকে কিভাবে চিনে রে? আগে থেকেই পরিচিত!’

ইনায়াত ‘না’ বলে কালকের ঘটে যাওয়া ঘটনা সব খুলে বলে। সবটা শুনে নিধি বলে উঠে,
নিধি: ‘ঐ তূর্যরে তো মন চাচ্ছে উগান্ডায় পাঠায় দেই। ভাগ্যিস কালকে আদ্র স্যার ছিল। আর ভালো কথা!
স্পন্দন ভাইয়া কোথায় ছিল?’

স্পন্দন নামটা শুনতেই কাল বিকেলের ঘটনা মনে পড়ে যায় ইনায়াতের। সাথে সাথে লজ্জারা এসে ভীড় জমায় ইনায়াতের মুখে।

টেবিলের উপর হুইস্কির গ্লাস টা হাত দিয়ে কেউ ঘোরাচ্ছে আর দেয়ালে আটকানো দুটো ছবির উপর চোখ দুটো স্থির। কিছুক্ষণ পর হুইস্কিটা এক চুমুকে খেয়ে বলতে থাকে,
এ.ডি: ‘ আর মাত্র কয়েকটা ধাপ। দেন ইউ উইল বি ফিনিস্ড স্পন্দন চৌধুরী। আমার প্ল্যানের প্রথম ধাপ পেরোনো শেষ। হাহা।

দেয়ালে টাঙ্গানো স্পন্দনের ছবিটায় রেড পেন দিয়ে ক্রশ চিহ্ন এঁকে দেয় এ.ডি। তার পাশেই রয়েছে আরেকটা ছবি। ছবিটা হাতে নিয়ে বিড়বিড় করে বলতে থাকে ,

এ.ডি: ‘ এই মেয়েটার মাঝে কিছু তো আছে। যা সব নেশার থেকেও বেশি আর গাঢ়। এই হুইস্কি তো কিছুই না তোমার সামনে মিস ইনায়াত!’

পাশ থেকে রিধিতা উঠে এ.ডির পাশে দাঁড়ায় আর কাঁধে হাত রেখে বলে,
রিধিতা: ‘ওওউ এ.ডি। আই রিয়েলি মিসড ইউ। লেট্স ডু দ্যাট!’
বাঁকা হেসে রিধিতা তার ঠোঁট দুটো এগিয়ে দেয় এ.ডির দিকে। এ.ডিও এগিয়ে জড়িয়ে ধরে রিধিতার কোমড়। ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায় একে অপরের মাঝে।

গত দেড় ঘণ্টা যাবত ম্যাথমেটিক্স এর একটা টার্ম কিছুতেই বুঝতে পারছে না ইনায়াত। কলমের হেড কামড়াতে কামড়াতে সেটার বেহাল দশা। তবুও কিছু বুঝতে পারছে না সে। কিছুক্ষণ পর ইনায়াতের মা মিসেস তানহা রুমে প্রবেশ করলেন। মেয়েকে চিন্তিত দেখে এগিয়ে গিয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।
হঠাৎ মাথায় কারো স্পর্শ পেয়ে পিলে চমকে উঠে ইনায়াত। মাকে দেখে মুচকি হাসি দেয় সে।
মিসেস তানহা: ‘ কিরে, কিছু কি হয়েছে? তোকে এমন চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?’
ইনায়াত এবার কাঁদো কাঁদো স্বরে মাকে বলে,
ইনায়াত: ‘ আসলে মা একটা ম্যাথ টার্ম কিছুতেই পারছি না। এটা না পারলে ঐ পেট মোটু থুক্কু কবির স্যার নির্ঘাত আমায় বের করে দিবে।’
মেয়ের এমন কথায় হেসে দেন মিসেস তানহা। আর সেটা দেখে ইনায়াত মুখ ফুলিয়ে নেয়।
মিসেস তানহা: ‘ সমস্যা কি তাহলে ? স্পন্দনের কাছে যা। ওর কাছে হেল্প নে।’
মুহূর্তে মুখটা কালো আঁধারে ঢেকে যায়। কেননা এই ম্যাথ নিয়ে স্পন্দনের কাছে যাওয়া আর যমরাজের কাছে যাওয়া একই কথা।

মাথা নিচু করে বসে আছে ইনায়াত। স্পন্দনের কাছে আসার পর এ পর্যন্ত না হলেও পাঁচ ছয় বার ধমক খেয়েছে। বোঝানোর এক পর্যায়ে স্পন্দনের ফোনে কল আসতেই সে চলে যায় বারান্দায়। এদিকে ইনায়াতের হঠাৎ নজর পড়ে টেবিলের কর্ণারে রাখা নীল ডায়েরীটার উপর। কি আছে তাতে!
যদি স্পন্দন ভাইয়ের প্রেমিকার নাম লেখা থাকে তাহলে। অতি সাবধানে আস্তে করে ডায়েরীটা বের করে ইনায়াত। সেটার প্রথম পাতায় কিছু লেখা নেই। দ্বিতীয় পাতা উল্টাতেই সেখানে দেখে গুটি গুটি অক্ষরে লিখা,

একটাই তুমি …

চলবে ?

একটাই_তুমি ??
লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
ষষ্ঠ_পর্ব

লেখাটার উপর কয়েকবার হাত বুলিয়ে নেয় ইনায়াত। কেন জানি লেখাটা ছুয়ে অদ্ভুত প্রশান্তি লাগছে। তৃতীয় পৃষ্ঠা উল্টানোর আগেই কেউ খপ করে কেড়ে নেয় ডায়েরীটি। আচমকা আক্রমণে ভয় পেয়ে যায় ইনায়াত। পাশে তাকিয়ে দেখে স্পন্দন ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। দৃষ্টি তার হিংস্র আর ভয়ংকর। ইনায়াত একটা শুকনো ঢোক গিলে নেয়। একটু পর যে বড় কোনো ঝড় তার উপর দিয়ে বয়ে যাবে তা সে ভালোভাবেই টের পাচ্ছে।
স্পন্দন এবার গর্জে উঠে,

স্পন্দন: ‘ তোর সাহস কি করে হয় আমার ডায়েরীতে হাত দেয়ার? তোকে বারণ করেছিলাম না আমার পার্সোনাল জিনিসে হাত দিতে। তারপরও তুই আমার ডায়েরী খুলেছিস!’
এমন ধমক খেয়ে ভয়ে কলিজার পানি শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে ইনায়াতের। চোখের কোণে জল এসে জমাও শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যে। স্পন্দনের কথায় কথায় হুঁশ ফিরে তার।

স্পন্দন: ‘ দুই বছর আগে তোকে আমি আমার রুম থেকে বের করে দিয়েছিলাম। সেটাই ঠিক ছিল। তুই আমার রুম থেকে এখনি বের হয়ে যা। গেট লস্ট!’

মৃদু কেঁপে উঠে ইনায়াত। সে কখনো চিন্তাও করেনি যে স্পন্দন এমন করবে। কি ছিলো এমনটা ঐ ডায়েরীতে যে স্পন্দন এমন ব্যবহার করলো তার সাথে। প্রত্যুত্তরে শুধু এক ফোঁটা অশ্রু টুপ করে গড়িয়ে পড়ে চোখের কোণ বেয়ে।
মুহূর্তে মনের ভেতর হাজারো অভিমান এসে নাড়া দেয়।
কিছু না বলেই চুপটি করে নিঃশব্দে বেরিয়ে আসে ইনায়াত।

এদিকে স্পন্দন ইনায়াতের যাওয়ার পর টেবিলে একটা সজোরে ঘুষি মারে। যার ফলশ্রুতিতে হাতের কিছুটা অংশ কেটে যায়।
‘মাফ করে দে আমায় ইনায়াত। কিন্তু আমি কি করবো বল! তুই যদি আমায় ভুল বুঝিস তাহলে!
সঠিক সময় আসলে আমি নিজেই তোকে সবটা বলবো।’

দুদিন পার হয়ে গিয়েছে। ইনায়াত ভুলক্রমেও স্পন্দনের সামনে যায় না। সে কেন যাবে! যেখানে শুধু অবহেলার পাত্র হতে হয় সেখানে যাওয়ার কোনো মানেই হয় না।

ভার্সিটিতে নিধি আর ইনায়াত কথা বলতে বলতে যাচ্ছে লাইব্রেরীর দিকে। যেটুকু খালি সময় পায় সেটুকু সময় লাইব্রেরী তে কাটাতে বেশ পছন্দ করে ইনায়াত আর নিধি। হঠাৎ পেছন থেকে কারো ডাক শুনে দাঁড়িয়ে যায় ইনায়াত। পেছনে ফিরে মুচকি হেসে বলে,
ইনায়াত: ‘ আরে আয়ান ভাইয়া, আপনি! কেমন আছেন?
আয়ান আলতো হেসে বলে,
আয়ান: ‘ এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তা এখানে হঠাৎ?’
ইনায়াত: ‘ ওও , আমি আর নিধি আসলে একটু লাইব্রেরীতে যাচ্ছিলাম। ভাবলাম বসে কিছুক্ষণ সময় ও কাটবে আর ভালো কয়েকটা বই ও কালেক্ট করতে পারবো।
আপনাকে তো বলাই হয় নি, এ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নিধি।
আর নিধি ইনি হলেন আমাদের ভার্সিটির ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট , আয়ান ভাইয়া।
আয়ান মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দেয় নিধির দিকে। তারপর বলে,
আয়ান: ‘ হেই, মিস নিধি। আই এম আয়ান আবরার।’
নিধি দাঁতে দাঁত চেপে হাসার চেষ্টা করে বলে,
নিধি: ‘ জী আয়ান ভাইয়া!’
ভাইয়া ডাক টা শুনে আয়ানের মুখটা পেঁচার মতো হয়ে যায় যা নিধির চোখ এড়ায় না। তা দেখে হাসি আসলেও তা বহুকষ্টে আটকে রাখে।
এদিকে আয়ান বেচারা পকেট থেকে ফোন বের করে কল আসার অযুহাতে সেখান থেকে চলে আসে।

লাইব্রেরীর এক প্রান্তে বসে আছে স্পন্দন। দুদিন ইনায়াত ওকে দেখলেও এড়িয়ে চলেছে, যা দেখে স্পন্দনের মনটা প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। লাইব্রেরীতে প্রবেশ করা মাত্রই ইনায়াতের চোখ পড়ে স্পন্দনের দিকে। একপলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয় সে।

‘লোকটা এমন কেন! কষ্টও দিবে, আবার ঠিক কাছেও টেনে নিবে। কি দরকার চোখের সামনে সারাদিন ঘুরঘুর করার প্রয়োজন কি!’
কথাগুলো বিড়বিড় করতে করতে লাইব্রেরীর পূর্ব দিকে চলে যায় ইনায়াত।

আজকে দুটো ক্লাস থাকায় বেশ তারাতাড়ি ই বাসার জন্য রওনা দেয় ইনায়াত। পথেই দেখা হয় আদ্রের সাথে। ইনায়াতকে দেখে আদ্র এগিয়ে আসে। তারপর হাসিমুখে বলে,

আদ্র:’ আরে ইনায়াত, তুমি? বাসায় চলে যাচ্ছো!’
ইনায়াত: ‘জি,আদ্র স্যার।’
আদ্র: ‘ তোমার যদি কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে আমি কি তোমাকে গাড়িতে লিফট দিতে পারি?’

হঠাৎ আদ্রের এমন আবদারে অস্বস্তিতে পড়ে যায় ইনায়াত। তার কি হ্যাঁ বলা উচিত!

আদ্রের চুটকি বাজানোর শব্দ পেয়ে ইনায়াত হালকা চমকে উঠে।
আদ্র: ‘ কি হলো, কোথায় হারিয়ে গেলে? চলো যাওয়া যাক!’

ইনায়াত মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। তারপর দুজনেই গাড়িতে উঠে পড়ে আর চলে যায় গন্তব্যের দিকে।

স্পন্দন মাত্রই বের হয়েছিল ইনায়াতের সাথে কথা বলার জন্য। কিন্তু তার আগেই আদ্রের গাড়িতে ইনায়াতকে উঠতে দেখে খটকা লাগে স্পন্দনের। সাথে কিছুটা রাগও হচ্ছিল। বলা নেই কওয়া নেই হুট করে আদ্রের সাথে যাওয়ার কি দরকার ছিল। আর এই আদ্রকেও কেন জানি খুব বেশি একটা সুবিধার মনে হয় না স্পন্দনের।

গাড়ি এসে থামে ইনায়াতের বাসার সামনে। ইনায়াত বের হয়ে আদ্রর থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায় বাসায়। আর এদিকে আদ্র গাড়ির ভেতরে বসে বাঁকা হেসে মুখ দিয়ে সিটি বাজাতে থাকে। তারপর ফোন বের করে গ্যালারি থেকে একটা ছবি বের করে বলতে থাকে,
আদ্র: ‘ ওয়েল ডান, মিস্টার এ.ডি। কংগ্রেচুলেশন মাইসেল্ফ। হা হা হা।’

পড়া শেষ করতে করতে রাত প্রায় আড়াইটা বেজে গিয়েছে। এখন চোখ খুলে রাখা ভীষণ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে ইনায়াতের কাছে। তাই সবকিছু ঠিক করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয় ইনায়াত।
ব্যালকনির দরজাটা খট করে খোলার আওয়াজ পেয়ে ঘুম ছুটে যায় চোখ থেকে। চোখে মুখে ভয়ের আতঙ্ক। কে আসবে এতো রাতে তার ঘরে। চোর নয় তো?
এসব ভেবেই ভয় পেয়ে যায় ইনায়াত। আস্তে করে নিঃশব্দে বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ায় সে। এদিকে স্পন্দন ধীরে ব্যালকনির দরজা খুলছে যাতে ইনায়াত টের না পায়।
পর্দার আড়ালে লুকিয়ে অপেক্ষা করছে ইনায়াত। কখন চোর রুমে প্রবেশ করবে আর কখন সে তাকে হাতেনাতে ধরবে। স্পন্দন যখন রুমে প্রবেশ করে তখনই ইনায়াতও পর্দার পেছন থেকে বেরিয়ে আসে।

স্পন্দনকে দেখে ইনায়াত চিৎকার দেয়ার জন্য যেই মুখ খুলবে তখনি স্পন্দন তা খেয়াল করে তড়িৎ গতিতে এসে ইনায়াতের মুখ চেপে ধরে। ঘটনাক্রমে ইনায়াতের চোখ জোড়া কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।
দুজনের নিঃশ্বাস শুধু একে অপরের উপর আছড়ে পড়ছে ঠিক এতোটাই কাছে দুজনে।…….

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here