একটি বিবাহত্তোর প্রেমের গল্প,পর্ব ২

0
1022

একটি বিবাহত্তোর প্রেমের গল্প,পর্ব ২
তামান্না জেনিফার

একটা নামকরা পত্রিকা অফিসে চাকুরি করে সুমন ৷ টানা দশ বছর তনুর সাথে সম্পর্কের পাট চুকেছে এক মাস আগে ৷ পাগলের মতো ভালোবেসেছিলো সে তনুকে ৷ বন্ধু বান্ধব , আত্মীয় স্বজন সব বাদ দিয়ে শুধু তনুকেই দিয়েছে নিজের সব সময় , সব ভালোবাসা ৷ তীব্র ভালোবাসার ফল হিসেবে সে পেয়েছে প্রতারনা ৷ শুরু থেকেই তনুর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিলো দেশের বাইরে চলে যাওয়া ৷ সুমনকে নানানভাবে চাপ দিয়েছে যাতে সুমন একটা ব্যবস্থা করে ৷ চেষ্টাও করেছে সে ৷ কিন্তু পরপর দুবার অস্ট্রেলিয়ার ভিসা রিজেক্ট হয়ে যায় তার ৷ তনু তাই যখন কানাডা প্রবাসীর বিয়ের প্রস্তাব পায় লুফে নিতে ভুল করেনি ৷ তারপর থেকেই সুমনের পরিবার থেকে চাপ আসতে থাকে বিয়ের জন্য ৷ সুমন কিছুতেই রাজী না ৷ শেষমেশ তার মা যখন বলে বিয়ে না করলে তিনি আত্মহত্যা করবেন তখন সুমন রাজী হয় ৷ কিন্তু জুড়ে দেয় একটা শর্ত ৷ শর্ত হলো প্রথম যাকে দেখতে যাবে তাকেই বিয়ে করবে সে ৷ দ্বিতীয় কাউকে আর দেখবে না ৷ আর সেই প্রথম দেখা কন্যাটিই অপা ৷ অপা কে কি কেমন কিছুই দেখেনি সুমন ৷ ওর পায়ে সমস্যা আছে শুনে সুমনের বাবা মা দেখতে যাবে না ভেবেছিলো , কিন্তু সুমনের এক কথা ৷ হয় এখানেই বিয়ে নয় কোথাও নয় ৷ সুমনের মা খুব ভালো করেই তার জেদ সম্পর্কে জানে ৷ তাই আর রিস্ক নেয়নি ৷ তনুর জন্য গড়া আংটিটা দিয়েই অপাকে সুমনের বাগদত্তা করে এসেছে ৷

এরই মধ্যে বিয়ের আয়োজন শুরু হয়ে যায় ৷ বিয়ের শপিং , আর বাকি সব কাজ ৷ কিন্তু কোন কাজেই সুমনের দেখা নেই ৷ আর অপার হাঁটতে অসুবিধা হবে ভেবে তাকেও নেওয়া হচ্ছে না ৷ বর বউয়ের কোন রকম অংশগ্রহন ছাড়াই বিয়ের প্রস্তুতি শেষ হয় ৷ তারপর ঠিক করে রাখা দিনে আইন ও ধর্মমতে বিয়ে হয়ে যায় সুমন এবং অপার ৷

বিয়ের প্রথম রাতে অপা একা ঘরে বসে ভাবছে “কাকে বিয়ে করলাম ! কার সাথে জীবন কাটাবো ! সেই লোকটাকে তো দেখলামই না ! অপরিচিত একটা লোক এসে এক্ষুনি হামলে পরবে আমার উপর .. কি করবো আমি ! কিসের মধ্যে পরলাম আমি !..”

সুমন ঘরে আসে ৷ তারপর বিছানার পাশে রাখা সোফায় বসে পরে ৷ নাম ধরে ডাকে অপাকে ..

—অপা , তাইতো , এটাই তো আপনার নাম ?

—জ্বি

—আমার নাম সুমন

—জ্বি , জানি

—ঠিক আছে আমি তাও বললাম ৷ এখন কিছু কথা বলবো প্লীজ মন দিয়ে শোনেন ৷

—জ্বি

—বারবার জ্বি জ্বি করতে হবে না ৷ দেখুন অপা , আমি কিছু লুকাতে চাইনা ৷ আমার দশ বছরের সম্পর্ক ছিলো তনু নামের এক মেয়ের সাথে , যে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে ৷

—মারা গেছে ?

—কথা শেষ করতে দেবেন প্লীজ ৷ মারা যায়নি , অন্য একজনকে বিয়ে করে কানাডা চলে গেছে ৷

—আচ্ছা ৷ তারপর ?

—আমার পক্ষে আর কোনদিনও কাউকে আপন করে নেওয়া সম্ভব নয় ৷ শুধুমাত্র বাবা মায়ের দিকে তাঁকিয়ে বিয়েটা করতে হয়েছে ৷ আমি জানি এটা আমার ভুল ৷

—আমার এক পা খাঁটো , আমি সুন্দরী না তাই এমন বলছেন ?

—আপনি যদি বেহেসতের হুর পরীও হতেন আমার কথা একই থাকতো ৷ আপাতত আমার কথা শেষ ৷ আপনার কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন ৷

—আমার কিছু বলার নাই ৷ আমার বড্ড ঘূম পাচ্ছে ৷ কিন্তু আপনার ঘরের বালিশগুলো খুব শক্ত ৷ একটা নরম বালিশ জোগার করে দিবেন প্লীজ ?

সুমন নতুন বউয়ের জন্য নরম বালিশ খুঁজতে যায় ৷ ফিরে এসে দেখে অপা কেমন এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে গেছে ৷ গায়ে বিয়ের ভারী কাতান ৷ গায়ে গহনা , শুধু নাক থেকে নথটা খুলে কানের পাশে ঝুলে আছে ৷ মাথার নিচে বালিশ নেই ৷ সুমনের ইচ্ছে করে মাথার নিচে বালিশটা ঠিক করে দিতে , কিন্তু পারেনা ৷ নিজের মধ্যে প্রবল অপরাধবোধ কাজ করতে থাকে ৷ সুমনের মনে হয় এই মেয়েটার সাথে সে অন্যায় করলো , চরম ক্ষমাহীন অন্যায়…

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here