একটি_রাতের_গল্প,পর্ব-০৬,০৭,০৮

0
2010

#একটি_রাতের_গল্প,পর্ব-০৬,০৭,০৮
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
০৬

ঘুম ভাঙতেই ধরফর করে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম।এটা কি স্বপ্ন দেখলাম আমি?শিমুল আপু কেনো এমনটা করতে যাবে আমার সাথে!যাক বাবা,স্বপ্নও তো স্বপ্নই হয়।যা কখনোই বাস্তব হবার নয়।হয়তো কাল সারাদিন যে পরিমান ধকল গিয়েছে এরকম উল্টোপাল্টা স্বপ্ন দেখা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আচমকা ভাবির কন্ঠস্বরে চমকে উঠলাম।

—একি আজ এতো তাড়াতাড়ি উঠে গেলে?কি ব্যপার…?

—না এমনি,ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো হঠাৎ।আচ্ছা শিমুল আপু কি ঘুম থেকে উঠেছে?

—হ্যাঁ উঠেছে অনেক আগেই।আজ তোমার শিমুল আপুই চা করেছে।খেয়ে দেখো,কে বেশি ভালো চা বানায়?আমি না,তোমার শিমুল আপু?

—কি যে বলো না,এই ব্যপারে তোমার সাথে টেক্কা দেবে এমন কেউ আছে নাকি।আম্মা উঠেছে ভাবি?

—হ্যাঁ,উঠেছে।তুমি চা টা তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও বরং।আমার হাতে অনেক কাজ পড়ে আছে।

এই বলে সিমরান ভাবি আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।আমি সেদিকে তাকিয়ে চায়ের কাঁপটা হাতে নেই।চায়ের কাঁপে চুমুক দিতে দিতে ভাবতে থাকি কিভাবে যে আম্মা আব্বার সাথে শিমুল আপু আর আমার বিষয়ে কথা বলবো।ওরা সবটা শুনে কি আমাদের এই সম্পর্কটা মেনে নেবে?শিমুল আপু আমার থেকে বয়সে অনেক বড়ো।ওর সাথে আমার খাপ খায়না কখনোই‌।কিন্তু শিমুল আপুকে বাঁচাতে আর আমি যে পাপ করেছি সেদিন রাতে তার প্রায়ঃশ্চিত যে করতেই হবে আমাকে‌।শিমুল আপু যদি সত্যি সত্যি আমার সন্তান ওর গর্ভে ধারণ করে থাকে সে অবৈধ পরিচয়ে পৃথিবীতে জন্ম নিক এটা চাইনা আমি।শুধু আমি কেনো, পৃথিবীর কোনো বাবাই এটা চাইতে পারে না তার সন্তানকে বাইরের জগৎ তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করুক, তাকে একটা জা র জ সন্তান হিসেবে চিনুক।এটা শোনার থেকে মরে যাওয়া অনেক সুখের।
নিজের পরিণতি দেখে আজ নিজেরই প্রতি করুণা হচ্ছে আমার।আমার যে বয়সে চুটিয়ে পড়াশুনা করা কথা,খেলাধূলা,বন্ধু বান্ধব নিয়ে আড্ডা দেবার কথা।সেদিনের একটি রাতের গল্প আমার জীবনটাই যেনো পাল্টে দিয়েছে।এখন কিনা আমাকে বিয়ে সন্তান এগুলো নিয়ে ভাবতে হচ্ছে।আমি জানি না কবে এইসবকিছুর থেকে মুক্তি মিলবে আমার।কবে একটু প্রানভরে বিশুদ্ধ মুক্ত আলোবাতাসে নিঃশ্বাস নেবো‌।সবটাই অধরা এখন।
শিমুল আপু আমাদের বাড়িতে একজন গেস্ট হিসেবেই দেখে যায়।ও এর আগেও আমাদের বাড়িতে বহুদিন।আমার পরিবারের সবার সাথে একটা ভালো পরিচয় ওর।তাই আম্মা আব্বাও অনুমতি দিয়ে দিয়েছেন।শিমুল আপু যতোদিন খুশি এই বাড়িতে থাকতে পারে।এর মাঝে মাঝে সেই ফেইক আইডি থেকে মেসেজ আসে আমার কাছে।আমায় নানাভাবে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে।আমি সমানে ইগনোর করতে থাকি।এভাবে কিছুদিন কেটে যায়।শিমুল আপু ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিয়েছে অনেক আগেই তাজ ভাইয়াকে।তিন মাস হতে এখনো বেশ কিছুদিন বাকি।ভাবছি তিন মাস পরেই যখন আমার শিমুল আপুকে বিয়ে করতে কোনো বাঁধা থাকবে না,সবাইকে সবটা খুলে বলবো।

দর্পণ ভাইয়া আর আব্বা বাড়ির একটা ব্যবসায়ের কাজে বাইরে আছে কিছুদিন ধরে।তাই ভাবি আর আম্মাকে একাই থাকতে হচ্ছে এখন।কয়েকদিন থেকেই শিমুল আপুর শরীরটা খারাপ যাচ্ছিলো,আজ সকালে বমি করেছে কয়েকবার‌।মা তাই ওকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে ডাক্তার দেখানোর জন্য।
ঘরে শুয়ে শুয়ে একটা বই পড়ছি ঠিক তখন আমার ফোনে ভাবির নম্বর থেকে একটা কল আসে।

—হ্যালো ভাবি,কি হয়েছে ফোন করেছো কেনো?

—পল্লব,একটু আমার ঘরে আসো।তাড়াতাড়ি আসো।

ভাবির গলা একেবারেই ঠিক লাগছে না আমার,কথাগুলো বেশ দ্রুত বলছিলো।আমি ফোনটা রেখে দৌড়ে তার ঘরের দিকে যাই।দরজার সামনে গিয়েই বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি।মূহুর্তেই দরজার বাইরের দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম।

—কি হলো ভেতরে এসো…

ভাবি বার বার তার ঘরে যেতে বলছে আমাকে।বুঝতে পারছি না কি হয়েছে তার।বুকের ওপর থেকে শাড়িটা নিচে পড়ে আছে।আর খুব বাজেভাবে বিছানার ওপরে শুয়ে আছে।আমাকে দেখে নিজেকে সামলানোর কোনো তাড়া লক্ষ্য করছি না তার ভেতরে,উল্টো আমাকে তার ঘরের ভেতরে যেতে বলছে।ভাবি তো এরকম আগে কখনো করেনি আমার সাথে,তাহলে আজ হঠাৎ কি হয়ে গেলো।আমি আর তার ডাক উপেক্ষা করতে না পেরে ঘরের ভেতরে ঢুকলাম।

—কি হয়েছে বলো ভাবি?

—আরে এদিক ওদিক তাকাচ্ছো কেনো,আমার কাছে এসে একটু বসো না।

এইভাবে ভাবীর দিকে চোখ তুলে তাকাতে ভীষণ লজ্জা লাগছে আমার।আজ তার মনের ভেতরে কি চলছে সত্যিই তার নাগাল পাচ্ছি না আমি।যাই হোক আমি ধীরে ধীরে গিয়ে তার পাশে বিছানার ওপরে বসলাম।ভাবি আমার হাতটা খপ করে ধরে ফেললো।

—আমার বুকটা ভীষণ ব্যথা করছে পল্লব?মনে হচ্ছে যন্ত্রনায় মারা যাবো,

—তো আমি কি করবো,বুক ব্যথা করছে ওষুখ খাও।দাঁড়াও আমি ওষুধ নিয়ে আসছি তোমার জন্য।

—নাহ,ওষুধ লাগবে না আমার।তুমি একটু কাছে থাকো আমার।

এই বলে ভাবি আমার হাতটা তার বুকের ওপরে নিয়ে গেলো।আমি কোনোপ্রকার রেসপন্স করছি না,ভাবী এটা দেখে ভীষণ হতাশ হয়।

—আমায় একটা কথা বলবে পল্লব,কিছু মনে করবে না তো?

—কি কথা?
(আমি হাতটা ভাবির বুকের ওপর থেকে সরিয়ে এনে বলি)

—তোমার ভাইয়ার কি কোনো প্রবেলেম ছিলো নাকি?বিয়ের আগে থেকেই?

—কিসের প্রবেলেমের কথা বলছো?

—তুমি বুঝতে পারছো না?

—না সত্যিই পারছি না,কিসের প্রবেলেম?

—আমার মনে হয় ওর ভিতরে কোনো সমস্যা আছে।আমরা একদম সুখে নেই পল্লব!

—ভাবি তুমি তোমাদের স্বামী স্ত্রীর পার্সোনাল কথা আমাকে কেনো বলছো,আমার মনে হচ্ছে সকালে শিমুল আপুর সাথে তোমারও ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত ছিলো।অসুস্থ হয়ে যাচ্ছো তুমি!

—আমি একদম ভালো নেই পল্লব,আমার তো মাঝে মাঝে মনে তোমার ভাইয়া কোনো পুরুষই না।ওর ভেতরে কিছু নেই।

তাজ্জব বনে যাচ্ছি আমি ভাইয়ার কথা শুনে।এগুলো কোন ধরনের কথা।তবে আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি ভাইয়া হয়তো ভাবিকে সন্তুষ্ট করতে পারে না।কিন্তু সেটা আমাকে বলার কি মানে হয়।

—ভাইয়ার কোনো প্রবেলেম থাকলে ওকে ডাক্তার দেখাতে বলো ভাবি,

—ওর দ্বারা কিচ্ছু হবে না আর,ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছি আমি পল্লব।

লক্ষ্য করলাম ইতিমধ্যে ভাবির হাত আমার পায়ের রানের ওপর।খামছে ধরেছে আমাকে।বুঝতে পেরেছি আমি ধীরে ধীরে কন্ট্রোল হারাচ্ছি।নাহ,এখানে আর এক সেকেন্ড অপেক্ষা করা ঠিক হবে না।হয়তো আবারো কোনো ভুল স্টেপ নিয়ে বসবো।শারিরীক যাতনা এমন এক জিনিস একবার জাগ্রত হলে তাকে নিয়ন্ত্রণ কষ্টকর।তখন আর ভালোমন্দ জ্ঞান থাকে না কারোর মাথায়।ভাবির হাতটা ছাড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়লাম তারপর রুম থেকে বেরিয়ে যাই।সামনের দিকে আসতেই দেখি শিমুল আপু আর মা এইমাত্র বাড়িতে এসে ঢুকলো।শিমুল আপু মুখ মলিন করে দাঁড়িয়ে আছে।মা হাস্যজ্জ্বল দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো-

—-একটা খুশির খবর আছে বাবা?

—কিসের খুশির খবর আম্মা?
(অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।)

—শিমুল মা হতে চলেছে।এই দেখ মেডিকেল রিপোর্ট।

শিমুল আপুর দিকে তাকিয়ে আম্মার হাত থেকে রিপোর্টটা নিলাম।মা শিমুল আপুকে নিয়ে ঘরের ভেতরে চলে যায়।আমি রিপোর্টটা হাতে নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি।কেনো জানি না,খুলে দেখতে ইচ্ছে করছিলো না।একটু আগে বলা মায়ের কথাটা এখনো কানে বাজছে আমার।’শিমুল মা হতে চলেছে’!এটা শোনোর পরে কেমন একটা অনুভূতি হতে লাগলো নিজের ভেতর,যা আগে কখনো হয়নি।এই প্রথম এমন অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত হচ্ছি।এতোদিন মনে মনে এটাই চেয়েছি যেনো বাচ্চাটা না আসে,কিন্তু আজকে তার আসার সংবাদ শুনে আমার উল্টো এতো ভালো কেনো লাগছে বুঝতে পারছি না।আমার তো খুশি হবার কথা নয়।এই বাচ্চাটা আমাদের দুজনের সমস্যা বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুনে।তারপরেও তার ওপর কোনোপ্রকার রাগ বা অভিযোগ উপলব্ধি করতে পারছি না আমি।এই অদ্ভুদ অনুভূতি কারণ জানি নেই আমার।হয়তো এটাই পিতৃত্ব।যে অভিজ্ঞতার সাথে সবাই একটা নির্দিষ্ট সময়ের সাথে পরিচিত হয়।আমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটছে।শিমুল আপুর সাথে এইমূহুর্তে কথা বলা জরুরী।জানি ও পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে।ফাইলটা হাতে নিয়ে শিমুল আপুর রুমে গেলাম।ও নেই রুমে।ওয়াশরুমের দরজা অফ।তারমানে ওয়াশরুমের ভেতরেই আছে।
ফাইলটা রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে আসবো ঠিক তখন শিমুল আপুর ফোনটা বেজে উঠলো।ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে খানিকটা স্তম্ভিত হয়ে গেলাম।এটা তো তাজ ভাইয়ার ফোনকল!?তাজ ভাইয়া শিমুল আপুকে ফোন কেনো করলো,ওর তো এখন শিমুল আপুর সাথে যোগাযোগ করার কোনো কথা নয়।ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকাতে তাকাতে ফোনের কললিস্ট চেক করতে থাকি।হায় আল্লাহ…এটা কি দেখছি আমি!ভেতরে তাজ ভাইয়ার অসংখ্য ফোনকল।রিসিভ,ডায়াল,মিসডকল সবকিছুই রয়েছে।তার মানে শিমুল আপুর যোগাযোগ আছে তাজ ভাইয়ার সাথে।ও ওতো সেটা একবারো আমাকে বুঝতে দেয়নি।কি চলছে ওদের দুজনের ভেতর…
শিমুল আপুর ফোনের কললিস্টের দৃশ্য যেনো ফ্রিজ করে দিয়েছে আমাকে।ফোনটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।ঠিক তখন শিমুল আপু ওয়াশরুমের দরজা খুলেই আমাকে দেখে ফেললো!লক্ষ‌্য করলাম ও যেনো একটু চমকে উঠলো আমাকে দেখে!

চলবে…..

#একটি_রাতের_গল্প
পর্ব—-০৭
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ

—শিমুল আপু,তাজ ভাইয়ার সাথে তোমার যোগাযোগ আছে এটা আগে তো বলোনি আমায়।
—যোগাযোগ আছে মানে,কিসের যোগাযোগ?
—এইফোনগুলো কিসের তাহলে…?
আমি ফোনটা এগিয়ে দেই শিমুল আপুর দিকে।
—তুই জানিস না,তাজ মাঝে মধ্যেই আমায় কল দিতো,এখনো দেয়?
—কেনো,ওনার তোমার সাথে কি এমন কথা থাকতে পারে এখন?
—কি আর কথা থাকবে,আমায় বিরক্ত না করলে ওর পেটের হাত হজম হয়?এখানে আমি ভালো আছি সেটা যে সহ্য করতে পারে না।
—সে না হয় না বুঝলাম,তাজ ভাইয়া মাঝেমধ্যেই তোমায় কল দিয়ে বিরক্ত করে।কিন্তু ডায়াল কলগুলো কিসের?
—তুই কি আমাকে সন্দেহ করছিস পল্লব… এইভাবে পুলিশের মতো জেরা করছিস কেনো?
—ছিহ,আমি তোমাকে সন্দেহ কেনো করবো?আমি জাস্ট জানতে চাইছি,আর কিছু না।
—তাজ যাতে আমায় ফোন দিয়ে বিরক্ত না করে,আমার সাথে যোগাযোগ না রাখে সেটাই বলতাম ওকে।তুই বল ওর সাথে এ ছাড়া আমার আর কি কথা থাকবে।
—-আচ্ছা শোনো,তুমি আর ওনার কল রিসিভ করো না।আর নম্বরটা দরকার হলে ব্লক করে রাখো।
—ঠিক আছে,তাই করবো।আর তুই রাগ করিস না প্লিজ,আমার তোকে আগেই জানানো উচিত ছিলো‌।
—ঠিক আছে।

আমি ঘর থেকে বেরিয়ে যাবো শিমুল আপু পেছন থেকে ডাক দিলো আমায়!
—পল্লব শোন!
—হ্যাঁ,বলো।
—আমার রিপোর্ট দেখেছিস তো?
—হুমমম,দেখেছি।
—এখন কি করবো আমরা!
—আমিও সেটাই ভাবছি,কি করবো।এখন আম্মা আব্বাকে বিষয়টা জানানো ছাড়া কোনো উপায় নেই আমাদের।
—কি জানাবি তুই…?
—কি আর বলবো,সবাইকে এটাই বলতে হবে এই বাচ্চাটা তাজ ভাইয়ার নয়,আমার।
—কিন্তু ওনারা এটা কি মানতে চাইবে,আমার মনে হয় এই বাড়িতে তোর আর আমার দুজনেরই দিন শেষ হতে চলেছে।
—এটা ছাড়া আর কোনো অপশন আছে আমাদের কাছে?কয়েকদিনের মধ্যেই সবাই জেনে যাবে তুমি প্রেগনেন্ট।আর তাজ ভাইয়াও এটা জানে এখন এই বাচ্চাটা তার নয়।সে তো বাচ্চাটাকে স্বীকার করবে না কিছুতেই, উল্টো তখন নিজেকে বাঁচাতে আমাদের সত্যিটা সবাইকে জানিয়ে দেবে।
—সেটাও ঠিক,আমি বুঝতে পারছি না কি করবো।
—উনি সবাইকে জানানোর আগে আমাদের আম্মা আব্বাকে ম্যানেজ করতে হবে।
—কিভাবে ম্যানেজ করবি তুই ওনাদের?
—-দেখো আপু,একটা সত্য যতোই তিক্ত হোক না কেনো,সেটা স্বীকার করার ভেতরে আলাদা প্রশান্তি থাকে,অন্তত মিথ্যার বোঝা বয়ে বেড়ানোর থেকে।আমাদের এই বাচ্চাটাকে নিয়ে আর মিথ্যাচার করা ঠিক হবে না।আমি ঠিক বাড়ির সবাইকে ম্যানেজ করে নেবো।যাতে তারা সবাই তোমার আমার বিয়েটা মেনে নেয়।
—তুই কি বলছিস আমি জানি না,তোর আমার বিয়ে এটা ভাবতেও….আমি জানি না কি হবে?
—এই বাচ্চাটাকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের বিয়ে ছাড়া কোনো অপশন নেই।আর বয়সের ব্যবধান তো কি হয়েছে।আমাদের ধর্মেও জায়েজ আছে এটার।

শিমুল আপু আমার কথা শুনে কাঁদতে লাগলো।ওর কান্নার কারণটা বুঝতে পারছি আমি।এই সময়ে ও মুখে না বললেও ওর ওপর থেকে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে সেটা উপলব্ধি করতে পারি আমি।আমাকে যতোদ্রুত সম্ভব এইসমস্ত পরিস্থিতি ঠিক করতে হবে না।আর কিছুর জন্য না হোক,নিজের সন্তানের জন্য হলেও।
খকএই ভেবে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম।বেরিয়ে মেইন গেটের সামনে আসি,একটু বাইরে যাবো বলে।ঠিক তখন কেউ পেছন থেকে এসে চোখদুটো চেপে ধরলো আমার।আমি একটু হলেও সেই হাতের স্পর্শ অনুমান করতে পারলাম।

—-প্রাচী,তুমি!তুমি কখন এলে?

মেয়েটা আমাকে ছেড়ে দিয়ে হোহো করে হেসে উঠলো।আমি পেছন ঘুরে তাকাই।হ্যাঁ,আমার অনুমানই ঠিক।প্রাচী আমার ভাবীর ছোটো বোন,অর্থাৎ দর্পণ ভাইয়ার শ্যালিকা।ওর সাথে আমার বেশ ভালো বন্ধত্বপূর্ণ সম্পর্ক।যদিও ও আমাদের বাড়িতে খুব একটা আসে না।তবে আমার মাঝে মধ্যেই ভাইয়া আর ভাবীর সাথে ওদের বাড়িতে যেতাম।প্রায় ছয়মাসের ওপরে কোনোপ্রকার যোগাযোগ ছিলো না আমাদের ভেতরে।

—তার মানে এখনো মনে রেখেছেন আমাকে?

—কি যে বলো না,তোমাকে ভুলতে পারি!আর আমি যাকে একবার দেখি সারাজীবনেও ভুলি না।

—তাই নাকি…

—-হঠাৎ এইভাবে না জানিয়ে এলে,আমাদের কাউকে বললে আমরা না হয় তোমাকে গিয়ে নিয়ে আসতাম।

—আমি তো জানাতেই চেয়েছিলাম আপনাকে।কিন্তু আপু আর দুলাভাই এমন জরুরী তলব করলো সঙ্গে সঙ্গেই চলে আসতে হলো।

—ভাবী আর ভাইয়া ডেকেছে তোমায়?

—হুমমম….

—তা কি এমন জরুরী কারণে ডাকলো?

—সে কি জানি আমি…আচ্ছা শুনুন আমি শিমুল আপুর সাথে একটু দেখা করে আসি।পরে না হয় কথা বলবো।

এই বলে প্রাচী চলে গেলো।ও শিমুল আপুকে আগেই থেকেই চেনে।খুব ভালো করেই।কিন্তু একটা ব্যপার খটকা লাগছে আমার কাছে,ভাইয়া আর ভাবী প্রাচীকে জরুরী তলব কেনো করলো,কি করতে চাইছে ওরা।ভাইয়া ভাবির সাথে বিষয়টা নিয়ে কথা বলা দরকার।ওদের রুমের দিকে এগিয়ে যেতেই ভেতর থেকে আম্মার গলার আওয়াজ শুনতে পাই।আম্মা,ভাবী ভাইয়া কোনো একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছে!আমি ভেতরে না ঢুকে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে শোনার চেষ্টা করছি ওরা কি বলছে।

—কাবিনটা তো করে রাখাই যায়….!
(ভাবী)

—হ্যাঁ,আম্মা আমিও তাই ভাবছি।বিয়ের অনুষ্ঠান না করি এখন,অন্তত কাবিনটা করে রাখাই যায়।তারপর ওরা দুজন যে যার মতো থাকবে।
(ভাইয়া)

বুঝতে পারছি না এরা কিসের কাবিন আর বিয়ের কথা বলছে।একটা অদ্ভুদ কৌতূহলের সৃষ্টি হয় আমার মনের ভেতর।

—-আচ্ছা,আমি পল্লবের সাথে কথা বলি আগে।তোরা কি বলিস…?
আম্মা ভাইয়া আর ভাবীকে প্রশ্ন করে‌।

—হ্যাঁ,বলো।তবে আমাদের সিধান্তই কিন্তু বহাল থাকবে আম্মা।পল্লবের সাথেই প্রাচীর কাবিন ফাইনাল।আর সেটা যতো দ্রুত সম্ভব…আমরা জানি ও এই প্রস্তাবে না করতে পারবে না।ওরা একে অপরকে খুব ভালো করেই চেনে।

কথাগুলো শুনে যেনো বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো আমার।মাথাটা ভনভন করে ঘুরতে লাগলো।ভাইয়া ভাবি হঠাৎ আমার বিয়ে নিয়ে এতো উঠে পড়ে লেগেছে কেনো।ওরা কোনোভাবে আমার আর শিমুল আপুর ব্যপারটা জেনে যায়নি তো?হয়তো এটা ওদের একটা চাল আমাকে বাজেভাবে ফাঁসানোর জন্য।কিন্তু এই মূহুর্তে আমি শিমুল আপুকে ছেড়ে অন্য কারোর সাথে কাবিন করবো কিকরে,যার গর্ভে কিনা আমার সন্তান বড়ো হচ্ছে!
—হে খোদা,এ কোন বিপাকে ফেললে তুমি আমায়….

চলবে….

#একটি_রাতের_গল্প
পর্ব—০৮
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

—-তোর সাথে আমাদের একটা বিষয়ে কথা বলার আছে,আমরা জানি তুই আমাদের কথার সম্মান রাখবি।
ভাইয়া আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,ঘরের ভেতরে আমি ভাইয়া ভাবী আর আম্মা।দরজার বাইরে শিমুল আপুর সাথে প্রাচী দাঁড়িয়ে।ওরা আমাদের ভেতরের বাক্যালাপ মনোযোগ দিয়ে শুনছে।

—হ্যাঁ,বলো কি বলতে চাও।

—দেখ ভাই,তুই হয়তো শুনে অবাক হবি,তোর কাছে এটা তাড়াহুড়ো মনে হতে পারে,তারপরেও বলছি।

আমি খুব ভালো করেই জানি এরা আমাকে কি বলার জন্য ডেকেছে এখানে।তবুও সবটা না জানার নাটক চালিয়ে যাচ্ছি।

—আরোও বলো না ভাইয়া,কি হয়েছে?

—আমরা তোর সাথে প্রাচীর কাবিন করে রাখতে চাই।এক্ষুণি বিয়ের অনুষ্ঠান করবো না,তবে তোদের কাবিটা এক্ষুণি করে রাখতে চাই।তোর কোনো আপত্তি নেই তো?

ভাইয়ার মুখের কথা শুনে আমি দরজার দিকে তাকালাম।শিমুল আপুর মুখ বিষন্নতায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে।সবথেকে বেশী অবাক হচ্ছি প্রাচীর প্রতিক্রিয়া দেখে।তার মানে ও আগে থেকেই জানতো সবটা।নয়তো একটু হলো নিজের বিয়ের কথা অবাক হতো।আমি এই মূহুর্তে ভাইয়া ভাবী আর আম্মাকে কিকরে শিমুল আপু আর আমাদের বাচ্চার বিষয়ে বলবো বুঝতে পারছি না।

—কি হলো,কথা বলছিস না কেনো,তোর প্রাচীকে বিয়ে করতে কোনো আপত্তি নেই তো?
(আম্মা জিজ্ঞেস করে)

—আচ্ছা তোমার বাইরে কোন অ্যাফেয়ার-ট্যাফেয়ার নেই তো?
(ভাবী)

ভাবীর কথা শুনে ভাইয়া হেসে উঠলো হোহো করে।

—কি যে বলো না তুমি,ও করবে অ্যাফেয়ার।তাহলেই হয়েছে।মেয়েদের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলে দেখেছে কোনোদিন ঠিকঠাক।তাছাড়া আমি আমার ভাইকে ভালো করেই চিনি,ওর কারোর সাথে সেরকম কিছু থেকে থাকলো আমাদের নিশ্চয়ই করতো।আর পাঁচটা ছেলে মেয়েদের মতো লুকিয়ে রিলেশন করার শিক্ষা আমরা দিইনি ওকে‌।

সর্বনাশ,ভাইয়া এগুলো এখন কেনো বলছে।ওর এই কথাগুলো আমার সত্যিটা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আরোও বেশী বাঁধা সৃষ্টি করছে।ওরা এতোটা অন্ধের মতো বিশ্বাস করে আমায়,এখন কিকরে জানাবো আমি যে আমার সাথে কারোর অবৈধ সম্পর্ক হয়েছে।এমনকি আমার বাচ্চা তার গর্ভে।আমি ইনোসেন্ট নই,অনেক আগেই নিজেকে নষ্ট করে ফেলেছি।এটা শোনার পরে ওরা কি কখনো ক্ষমা করতে পারবে আমায়,কিকরে মুখ দেখাবো সবার সামনে?যতোটুকু সাহস সঞ্চয় করে এসেছিলাম সবটা ভাইয়ার কথা শুনে ছাই হয়ে গেলো।আর কিছু বলা হলো না আমার।মাথা নিচু করে বসে রইলাম।

—চুপ করে আছিস যে কিছু বল!

—কি বলবো আমি,আমার মনে হয় প্রাচীর সাথে কথা বলা দরকার তোমাদের সবার আগে।

—আরে তুমি ওর কথা ছাড়ো,তুমি রাজি কিনা সেটা বলো।তবে এটা ঠিক আমার বোনের জন্য তোমার থেকে ভালো জামাই আর দুটো কোথাও পাবো না আমি।

এবার বুঝেছি,ভাবী হয়তো গতকাল নাটক করেছিলো আমার সাথে,দেখতে চেয়েছিলো আমি কেমন ধরনের ছেলে‌।তা না হলে উনি এমন ব্যবহার কেনো করবেন আমার সাথে।এখন বুঝতে পারছি ওনার বলার সমম্ত কথাগুলো মিথ্যে‌।উনি আসলে যাচাই করতে চেয়েছিলো আমায়,নিজের বোনের জন্য।

—কী হলো,তুই কি এখনো চুপ করে থাকবি?

—চুপ করে আছে কেনো বুঝতে পারছো না,বেচারা সবার সামনে বড্ড লজ্জা পাচ্ছে যে।ও এই বিয়েতে রাজি মুখের দিকে তাকিয়ে দেখো ঠিক বোঝা যাচ্ছে।

সবাই নিজেদের মনের কথাগুলো আমার ওপরে চাপিয়ে দিয়ে পরোক্ষভাবে রাজি করিয়ে দিলো আমায়।আমি আর কিছু বললাম না।মাথা নিচু করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসি।দরজার সামনে আসতেই শিমুল আপু আর প্রাচীর মুখোমুখি হই।প্রাচী আমায় দেখে লজ্জায় পালিয়ে গেলো,এদিকে শিমুল আপুর চোখ জলে ছলছল করছে।একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।ওর দিকে একপলক তাকিয়ে চলে গেলাম।




এরপর রাতের বেলা।একটু তাড়াতাড়িই শুয়ে পড়েছি আজকে।এমনিতেই শরীরটা ভালো নেই,তারোপর মাথায় নানাবিধ চিন্তা।বাড়ির সবাই পাগল করে ছাড়বে আমায়।একদিকে শিমুল আপু অন্যদিকে আমার বিয়ে।শাখের করাতের মতো অবস্থায় পড়ে আছি আমি।
দিনের কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই।হঠাৎ একটা অনাকাঙ্খিত স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার।ব্লাঙ্কেটের ভেতরে কারোর অস্তিত্ব অনুভব করছি আমি।দুটো নরম হাত আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে।ধীরে ধীরে ঘুরে তাকালাম আমি।
—আরে এতো প্রাচী,প্রাচী এতো রাতে এখানে কেনো।
আমি কিছু বলতে বলতে যাবো ঠিক তখন ও আমার মুখটা চেপে ধরলো।তারপর কানের কাছের মুখটা নিয়ে ফিসফিস করে বলে লাগলো।

—কোনো কথা বলো না,বাড়ির লোকজন জেগে যাবে‌।

—তুমি এসেছো কেনো এতো রাতে,কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হবে।চলে যাও প্লিজ।

—হোক সর্বনাশ,আজ আমি নিজের সর্বনাশ করতেই এসেছি এখানে।

—মানে,কি বলছো তুমি?

—প্লিজ আমাকে একটু ভালোবাসো না,তোমার ভালোবাসা পেতে বড্ড ইচ্ছে করছে।

—পাগল হয়ে গেছো নাকি,চলে যাও।

—হ্যাঁ,পাগল হয়ে গেছি।আজকের রাতে আমার সমস্ত পাগলামি সহ্য করতে হবে তোমায়।

এই বলে প্রাচী আমার টি-শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো।শার্টটাকে চেয়ারের ওপর ছুঁড়ে ফেলে।তারপর আমার বুকে আলতো করে একটা চুমু দিলো।মুহুর্তেই সারা শরীর কেঁপে উঠলো আমার,একটা ঝাকুনি অনুভব করলাম।প্রাচী এক পর্যায়ে আমার বেল্টে হাত দিলো,হাত দিয়ে খোলার চেষ্টা করছে।আমি ওকে থামিয়ে দিলাম।

—এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে,এসব করবো না এখন।

—করবে না মানে,তুমি কি পুরুষ নও?

—নাহ,ভালো লাগছে না আমার।

—প্লিজ না করো না,দেখো তোমার ভালো লাগার ব্যবস্থা আমি করছি।

নিরুপায় হয়ে প্রাচীর কাছে নিজেকে সঁপে দিলাম।আমাকে পুরোপুরি বিবস্ত্র করে দিলো ও,তারপরেও নিজেও শরীরের সমস্ত পোশাক একে একে খুলতে থাকে।ড্রিম লাইটের আলোতে এক দৃষ্টে আমি নিরীক্ষণ করে চলছি ওকে।এরপর নিজে থেকে ওকে কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরি।

—কি হলো,শরীর ভালো হয়ে গেলো এখন তোমার?
(প্রাচী)

—শাট আপ,আমায় বাধ্য করলে তুমি।দেখো আজ তোমার কি অবস্থা করি আমি।

—কি করবে শুনি!

—মে রে ই ফেলবো আজ তোমাকে।

—শুধু মুখেই বলবে নাকি কাজে করে দেখাবে?

—ওয়েট,

এক লাফে প্রাচীর ওপরে নিজের আধিপত‌্য বিস্তার করে নিলাম আমি।তারপর ওকে নিজের বাহু দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরলাম।প্রাচীর গোঙানীর আওয়াজে সারা ঘর আন্দোলিত হয়ে উঠলো‌।আমি এক হাত প্রসারিত করে ফ্যানের সুইচটা অন করে দিলাম,যাতে শব্দটা বাইরে না যায়।

—পল্লব,এবার ছাড়ো প্লিজ…প্লিজ…

—আরেকটু সময় অপেক্ষা করো না,

—প্লিজ ছাড়ো,আমার কষ্ট হচ্ছে ভীষণ।

আমি ওর কোনো কথাই কানে তুলছি না।আরোও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।প্রাচী আমার নিষ্ঠুরতা সহ্য করতে না পেরে একটা প্রকান্ড চিৎকার জুড়ে দিলো।অমনি ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার।ধরফর করে বিছানার ওপরে উঠে বসি‌।তারমনে এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম আমি।যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।আবারো প্রাচীর সেই চিৎকারের শব্দ কানে ভেসে আসলো আমার।তবে এবার আর স্বপ্নে নয়,বাস্তবে।বাস্তব আর স্বপ্ন যেনো মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।

বিছানা থেকে উঠে বাইরে ছুটে গেলাম।ভাইয়া আর ভাবীও উঠে এসেছে ইতিমধ্যে।

—প্রাচীর গলার আওয়াজ না?
(ভাইয়া)

—হ্যাঁ,আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম।ও এতো রাতে বাইরে কি করছে।
(আমি বললাম)

—তোমরা প্লিজ এখন এতো কথা না বলে চলো গিয়ে ওকে খুঁজি।আমার কিন্তু খুব ভয় করছে।

—ভাবী তুমি এতো টেনশন করো না,দেখছি আমরা।

শব্দটা অনুসরণ করে আমি ভাবী আর ভাইয়া বাড়ির পেছনের গার্ডেনের দিকে গেলাম।সেখানে যেতেই ভাবী প্রাচীকে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার জুড়ে দিলো।আমরা সবাই ছুটে যাই ওর কাছে।অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে আছে আছে প্রাচী,ওর মাথাটা দিয়ে অসম্ভব রকমের রক্তক্ষরণ হচ্ছে।স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কেউ অ্যাটাক করেছে ওর ওপর।ভাইয়া প্রাচীকে কোলে তুলে দ্রুতগতিতে ভেতরের দিকে চলে গেলো,ভাবিও তার সাথে কান্না করতে করতে এগিয়ে গেলো।আমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।বাড়ির ভেতরে আম্মা শিমুল আপু ভাইয়াদের সবার শোরগোলের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।প্রাচীর রক্তের দিকে চর্টের আলো ফেলে তাকিয়ে আছি সেই দিকে।
বুঝতে পারছি না কে অ্যাটাক করলো ওকে,ওর ওপর কার কিসের এতো রাগ,আর ওকে মেরেই বা তার কি লাভ?
আলোতে একটু পাশে নিতেই একটা অদ্ভুদ জিনিস দেখে চমকে উঠলাম।শিমুল আপুর একটা ভাঙ্গা কাচের চুড়ি রক্তের পাশেই পড়ে আছি।চুড়িগুলো চিনতে এক মূহুর্তও ভুল হলো না আমার,কারণ এগুলো গত পরশুই আম্মা কিনে দিয়েছিলো ওকে‌।স্পষ্ট মনে আছে।
তাহলে কি শিমুল আপুও ছিলো এখানে…ও কোনোভাবে প্রাচীকে….কিন্তু কেনো?
—হায় খোদা,এটা হয় কিকরে??

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here