একটি_রাতের_গল্প,পর্ব-০৯,১০,১১

0
1680

#একটি_রাতের_গল্প,পর্ব-০৯,১০,১১
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

আলোতে একটু পাশে নিতেই একটা অদ্ভুদ জিনিস দেখে চমকে উঠলাম।শিমুল আপুর একটা ভাঙ্গা কাচের চুড়ি রক্তের পাশেই পড়ে আছি।চুড়িগুলো চিনতে এক মূহুর্তও ভুল হলো না আমার,কারণ এগুলো গত পরশুই আম্মা কিনে দিয়েছিলো ওকে‌।স্পষ্ট মনে আছে।
তাহলে কি শিমুল আপুও ছিলো এখানে…ও কোনোভাবে প্রাচীকে….কিন্তু কেনো?

—হায় খোদা,এটা হয় কিকরে?শিমুল আপুর চুড়ি এখানে এলো কিকরে?

ভাঙ্গা চুড়িগুলো আমি মাটি থেকে কুড়িয়ে নিলাম,কিছু টুকরোতে প্রাচীর রক্ত মিশে আছে।তারপরেও কুড়িয়ে নেই।
বাড়ির ভেতরে ঢুকে দেখি ইতিমধ্যে গাড়ি এসে গেছে।ভাইয়া আর ভাবি গাড়িতে তুলে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো।আমাকে বললো যেনো সকাল বেলা হাসপাতালে যাই,এই মূহুর্তে বাড়ি খালি করে সবার বেরিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না।প্রাচীর অবস্থা এতোটাই সাংঘাতিক ওকে জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে নিতে হলো‌।বাড়িতে এখন শুধু মা আর শিমুল আপু।আমি আর দেরী না করে সোজা শিমুল রুমে গেলাম।ও শোবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো,আমি ভেতরে ঢুকতেই চমকে উঠলো।

—আরে কি হলো,তুই এখন আমার ঘরে!আমি তো চমকেই উঠেছিলাম।

—ইদানিং তুমি একটু বেশীই চমকাচ্ছো না শিমুল আপু?

–মানে কি বলতে চাইছিস তুই?

আমি আর কোনো কথা না বলে চুড়ির ভাঙা টুকরোগুলো শিমুল আপুর সামনে ধরলাম।ও কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো সেগুলোর দিকে।

—কি এগুলো?

—এগুলো ভাঙা কাচের চুড়ি…

—তো আমি কি করবো,আমাকে দেখাচ্ছিস কেনো?

—কারণ এগুলো তোমার কাচের চুড়ি!যেগুলো আম্মা কিনে দিয়েছিলো তোমায়।

—মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি তোর?এই চুড়িগুলো আমার কেনো হতে যাবে।দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি।

শিমুল আপু আমাকে অবাক করে দিয়ে ড্রয়ার থেকে ওর নতুন কাচের চুড়িগুলো বের করে আমাকে দেখালো।

—কি হলো,এবার মুখ বন্ধ কেনো,কিছু বল।

—এগুলো তোমার নয় তাহলে,আর আমি কি ভেবেছিলাম,

—ছিহ!তুই আমাকে সন্দেহ করছিস?তুই ভাবছিস আমি প্রাচীকে…ভাবলি কিকরে এসব তুই?ও আমার বোনের থেকে কম নয় কোনো অংশে।

—আচ্ছা সরি‌।আমি বোধহয় একটু বেশীই ভেবে ফেলেছি‌।প্লিজ আমার কথায় রাগ করো না তুমি।

শিমুল আপুর ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।সত্যিই এগুলো আমারই বাড়াবাড়ি,সেদিন তাজ ভাইয়াকে নিয়ে আজ আবার চুড়ি।আমি শিমুল আপুর ওপর অতিমাত্রায় সন্দেহপ্রবণ হয়ে উঠছি।আমার এই ব্যবহার শিমুল আপুকে কষ্ট দিচ্ছে।এরপর থেকে আর কোনো বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে কথা বলবো না ওর বিষয়ে।এই সময়ে আমার ওর প্রতি অনেক বেশী যত্নশীল হওয়া উচিত,সেটা না করে অযথা সন্দেহ করে যাচ্ছি।




পরের দিন সকালে হাসপাতালে প্রাচীকে দেখতে গেলাম আমি।ওর শারিরীক অবস্থা এখন অনেকটাই অনুকুলে।ডাক্তার জানিয়েছেন আর একটু ট্রিটমেন্ট নিলেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে।প্রাচীর কেবিনে গেলাম আমি,গিয়ে দেখি দুটো মোটা মালিশ মাথার নিচে রেখে শুয়ে আছে।আমাকে দেখে একটা মুচকি হাসি দিলো প্রাচী।ওর পাশে গিয়ে একটা টুলের ওপরে বসলাম।

—এখন কেমন লাগছে প্রাচী?

—অনেকটা ভালো!

—বাহহহ…তুমি জানো আম্মা গতরাতে চোখের পাতা এক করতে পারেনি তোমার চিন্তায়।

—আর তুমি?

প্রাচীর এই প্রশ্ন একটু হলেও সংকোচে ফেলে দিলো আমায়।কি বলবো ওকে বুঝতে পারছি না।আমার একটা হাত নিজের দিকে টেনে নিলো ও।

—বলো,তোমার চিন্তা হয় নি আমার জন্য?

—কেনো হবে না,নিশ্চয়ই হয়েছে।তুমি অতিথী আমাদের বাড়ির।

—শুধুই অতিথী আর কিছু নই?

—এখন চুপ থাকো,ডাক্তার এমনিতেই তোমার সাথে বেশী কথা বলতে নিষেধ করেছে।পুরোপুরি সুস্থ হওনি তুমি!

—ঠিক আছে,বেশী কথা বলবো না।আমার একটা শেষ প্রশ্নের উত্তর দাও।

—কি প্রশ্ন?

—তুমি আমায় বিয়ে করবে তো?

—এখন এই প্রশ্ন কেনো?

—ভাইয়া বলেছে আমি সুস্থ হলেই নাকি যতোদ্রুত সম্ভব আমাদের কাবিনের ব্যবস্থা করবে।

—কখন বললো এই কথা?

—এইতো একটু আগে…

—আচ্ছা আমি উঠি এখন তুমি রেস্ট নাও!

আমি উঠে বেরিয়ে যাবো ঠিক তখন প্রাচী পেছন থেকে আবারো বলে উঠলো আমায়।

—তুমি কিন্তু এখনো আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না!বলো আমায় বিয়ে করতে তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?

আমি ওর কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে গেলাম।হ্যাঁ,এটা বলাই যেতো এই বিয়েতে আপত্তি আছে আমার।কিন্তু যখন সেই আপত্তির কারণ জিজ্ঞেস করা হতো কি উত্তর দিতাম আমি।এই ভয় আর সংকোচটাই কুড়িয়ে কুড়িয়ে মারে আমায়।উত্তেজনার বশে একটি রাতের করা ভুল আমার জীবনের সবকিছু ওলোট পালোট করে দিলো।নয়তো প্রাচীকে বিয়ে করতে কোনো আপত্তি ছিলো না আমার।ওকে বরাবরই ভালো লাগতো আমার,এখনো সেই ভালো লাগাটা কাজ করে।কিন্তু আমি নিরুপায়, এই মুহুর্তে কিছুই করার নেই আমার।


এরপর হাসপাতাল থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ি।পথিমধ্যে আবারো সেই ফেইক আইডি থেকে একটা মেসেজ আসে।

—আমার আর তোমার মাঝে যে বাঁধা হয়ে আসবে তাকেই সরিয়ে দেবো আমি।

—তার মানে এগুলো তোমার কাজ, প্রাচীকে অ্যাটাক তুমি করেছো…?

—এইবারের মতো ছেড়ে দিলাম,এর পরের বার আর সেই সুযোগ দেবো না।

—কে তুমি,কেনো করছো এসব?আমার মনে হয় এবার আমাদের সামনাসামনি কথা বলা উচিত।

—আমি কে সেটা এক্ষুণি জানা খুব জরুরী নয়,তবে এটা জেনে রাখো আমি যেই হই না আমি প্রাচীর খুব কাছের একজন মানুষ।

—লজ্জা করছে না এটা বলতে,নিজেকে প্রাচীর কাছের মানুষ বলে দাবী করছো আবার তাকেই পেছন থেকে ছুরি মারছো।ছিহ!

হঠাৎ আমার গাড়িটা রাস্তার মাঝে ব্রেক কষলো।সামনে তাকিয়ে দেখি বিশাল বড়ো জ্যাম পড়ে গেছে।এখন এই বিরক্তিকর জ্যামের মাঝে বসে বসে অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।গাড়ির জানালাটা খুলে বাইরের দিকে তাকালাম।ঠিক তখন আমার কয়েকগজ দূরে একটা গাড়ির দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠলাম।যা দেখলাম বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।শিমুল আপু আর তাজ ভাইয়া একটা গাড়ির ভেতরে বসে আছে।?ওদের দুজনের মুখেই হাসির ছাপ স্পষ্ট।দেখে বোঝার উপায় নেই এদের ভেতরে ডিভোর্স হয়েছে কিছুদিন আগে!

চলবে……

#একটি_রাতের_গল্প
পর্ব—১০
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

ইতিমধ্যে গাড়ি ছেড়ে দিলো,শিমুল আপু আর তাজ ভাইয়া আমার চোখের আড়ালে চলে গেলো।বুঝতে পারছি না এরা দুজন একসঙ্গে কি করছে,শিমুল আপু তাজ ভাইয়ার সম্পর্ক এতোটাই তিক্ততায় পর্যবসিত হয়েছে,শিমুল আপুর তাজ ভাইয়ার মুখ দেখবারই কথা নয়।যাই হোক কথাগুলো ভাবতে ভাবতে বাড়িতে পৌঁছলাম আমি।গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে সোজা নিজের রুমে চলে গেলাম।শার্টটা খুলে,ফ্যানের সুইচ অন করে বিছানার ওপরে বসে পড়ি।
হঠাৎ আমাকে চমকে দিয়ে একটা হাত আমার দিকে ঠান্ডা লেবুর শরবত এগিয়ে দিলো।

—অনেক জার্নি করে এসেছিস,এটা খেয়ে নে।

—একি শিমুল আপু তুমি!

শিমুল আপুকে দেখে মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি।ওকে আমি একটু একটু আগে রাস্তায় দেখে আসলাম,আমার আগেই বাড়িতে পৌঁছলে কিকরে ও।

—কেনো,আমাকে দেখে কি ভয় পেয়ে গেলি নাকি?

—তুমি বাসায় আসলে কখন?

—বাসায় আসলাম মানে,কি বলছিস তুই।

—আজ তাজ ভাইয়ার সাথে বেরোয়নি তুমি…?

—পল্লব তুই পাগল হয়েছিস,আমি তাজের সাথে বের হবো‌।তোর কি সত্যি তাই মনে হয়?

—তাহলে আমি রাস্তায় কাদের দেখলাম,স্পষ্ট দেখলাম তুমি আর তাজ ভাইয়া একটা গাড়ির ভেতরে বসে আছো!

শিমুল আপু আমার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো।ও যেনো আকাশ থেকে পড়লো আমার কথা শুনে।আমি নিজেও সংকোচের ভেতরে পড়ে গেলাম।তাহলে কি যা দেখেছি সবটাই মনের ভুল আমার।না,এতো বড়ো ভুল হয় কিকরে।আমি নিশ্চিত চোখের সামনে যা দেখেছি পুরোটাই সত্যি।

—দেখ আমার মনে হয় প্রাচীকে নিয়ে তুই একটু বেশিই ভাবছিস,তাই এসব ভুলভাল জিনিস দেখছিস।আমার কথা বিশ্বাস না হলে তোর আম্মাকে জিজ্ঞেস করে দেখ।আজ কোথাও বের হয়নি আমি।

আম্মাকে জিজ্ঞেস করি শিমুল কোথাও বের হয়েছিলো কিনা,তাঁর উত্তরে কিছুই পরিষ্কার হলো না।আম্মার বক্তব্য তিনি উপরের রুমে ছিলেন।শিমুল আপু একবার তার ঘরে এসেছিলো,তারপর আর দেখা হয়নি।আমার মনের সন্দেহ সন্দেহই থেকে গেলো,কোনোরকম কুলকিনারা হলো না।

এরপর শিমুল আপু আমার ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।আমি ল্যাপটপটা খুলে বসে পড়ি।আজকে একটা বন্ধুর সাথে কথা হয়েছিলো,ও আমাকে কনফার্ম করেছে যেকরে হোক ঐ ফেইক আইডির আসল মালিককে খুঁজে বের করে দেবে।অর্থাৎ যে নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে সেটা পেয়ে গেলেই আসল কার্লপিট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবো আমি।আমার সেই বন্ধুটাকে নক করতে যাবো ঠিক তখন আবারো সেই ফেইক আইডি থেকে একটা ভিডিও আসলো।ভিডিওটা ওপেন করতেই গা গুলিয়ে উঠলো আমার।

—What the hell?এগুলো আমাকে পাঠানোর সাহস হয় কিকরে তোমার?

—একদিন তুমি আমি এভাবেই সময় কাটাবো!I love you Pallov?

—-এটা কিছুতেই সম্ভব নয়,মরে গেলেও নয়।

—কেনো নয়,আমি তোমাকে না পেলে কি করবো তুমি ভাবতেও পারছো না এই মূহুর্তে!

—আমাকে কিছু ভাবতেও হবে না,যা খুশি করে নাও তুমি।

—ভেবে বলছো তো?

—হ্যাঁ,ভেবেই বলছি।

—তোমার সেই ভিডিও কিন্তু এখনো আছে আমার কাছে,এটা ভাইরাল করতে এক মিনিটও লাগবে না আমার।

—কি চাও তুমি আমার কাছে সত্যি করে বলো,কেনো আমার লাইফটা হেল করে দিচ্ছো, কি চাও তুমি আমার কাছে?

—আমি তোমাকে চাই পল্লব।তোমার এই শরীরটা চাই।তুমি নিজেও জানো না কি জ্বালা জ্বলছে আমার মনের ভেতরে।তোমার দুষ্টু স্পর্শই একমাত্র আমার মনের এই যন্ত্রণা মেটাতে পারে।

—আমি জানি তুমি যেই হও না কেনো, তুমি নিশ্চয়ই কোনো মেয়ে।একজন মেয়ে হয়ে এরকম নির্লজ্জের মতো কথা বলছো কিকরে?

—আমার তোমার জন্য সব বিসর্জন করে দিয়েছি পল্লব।যেদিন তোমার সাথে প্রথম দেখা হয়েছে সেইদিনই তোমার ভালোবাসার লোভে পরে গেছি।না এই ভালোবাসা শুধু মনের নয়,তোমার থেকেও তোমার পুরুষত্বকে বেশী ভালোবেসে ফেলেছি আমি।জানো তো,তোমার মতো পুরুষ দুটো হয় না।তুমি নিজেও জানো না তুমি কি….

—শাট আপ জাস্ট শাট আপ।আরেকটা কথা বলবে না তুমি!

—তার মানে তুমি আমার কথা মানবে না তাই তো?

—প্রশ্নই আসে না।

—ঠিক আছে।তাহলে আমার আর কিছু করার নেই।নিজের চূড়ান্ত সর্বনাশের জন্য প্রস্তুত থেকো।

ল্যাপটপটা অফ করে বিছানার এক কোনায় ছুড়ে মারলাম।ইচ্ছে করছে ভেঙ্গে ফেলি এটা।না জানি সে কি করতে চলেছে।এই ভিডিওটা একবার ফাঁস হয়ে গেলে তখন কি হবে ভেবেই ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।একদিকে আসন্ন বিয়ে,অন্যদিকে শিমুল আপুর প্রেগনেন্সি তারওপর এই ভিডিওর উপদ্রব।জানি না সেদিন রাতে কে এই কাজ করেছিলো,একবার যদি তাকে খুঁজে বের করতে পারি তার সাথে কি করবো আমি নিজেও ভাবতে পারছি না।এসব ভাবনার মধ্যে আমার বন্ধুর ফোনকল আসলো।

—হ্যাঁ গুঞ্জন বল?কিছু করতে পেরেছিস ভাই?

—হুমমম,প্রসেসিং এ আছে।খুব তাড়াতাড়ি হয়তো পেয়ে যাবো।

—একটু ভালো করে ট্রাই কর।আমাকে বাঁচা ভাই।

—চিন্তা করিস না,আশা করি দুইএকদিনের ভেতর একটা ভালো খবর দিতে পারবো।জাস্ট একবার তার নাগাল পাই।দেখ তারপর কি করি..

গুঞ্জন ফোনটা কেটে দিলো।আমি হাসপাতালে ফোন দিয়ে জানতে পারি প্রাচীকে খুব তাড়াতাড়ি রিলিজ করে দেয়া হবে।আর ভাইয়া নাকি হাসপাতাল থেকে সোজা বাড়িতেই আসছে।ভাবী আম্মাকে বলতে বললো।




এরপর সন্ধ্যাবেলা….
আমি একটা চায়ের কাপ হাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি।আকাশের কোনায় ভারী মেঘ জমেছে,মনে হচ্ছে একটু পরেই বৃষ্টি হবে।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখার প্রতি বরাবরই নেশা কাজ করে,তাই মনে মনে কামনা করছি যেনো বৃষ্টি হয়।নিজের মনের সমস্ত দুশ্চিন্তা,হতাশা বৃষ্টির জলের সাথে ভাসিয়ে দেয়া যাবে।
হঠাৎ অনুভব করলাম কেউ আমার কাঁধের পেছনে হাত রেখেছে।ভাইয়া আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আমার শার্টের কলার ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলো।ভাইয়ার এই অগ্নিরুপ কখনো দেখিনি আমি,বেশ ভয় লাগছে আমার।আমাকে ঘরের ভেতরে ধাক্কা ঢুকিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।তারপর নিজের মোবাইলটা বের করে আমার চোখের সামনে ধরলো।
সর্বনাশ যা ভয় পেয়েছিলাম তাই হলো।আর শেষ রক্ষা হলো না আমার।সেই ব্যক্তি ভাইয়ার কাছে ভিডিওটা পাঠিয়ে দিয়েছ।যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আমি কারোর সাথে শারিরীক সম্পর্ক করছি।যদিও এখানে শিমুল আপুর মুখটা বড্ড অস্পষ্ট।শুধু আমাকেই বোঝা যাচ্ছে।এর কারণ কি আজোও বুঝে উঠতে পারিনি আমি।

আমি ভাইয়াকে কিছু বলতে যাবো ঠিক তখন আমার গালে সপাটে এক চড় বসিয়ে দিলো।একটা প্রচন্ড ধাক্কা খেয়ে মেঝেতে পড়ে যাই আমি।তারপর ভাইয়া আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো‌-

—আজ তোকে শেষ করে দরকার হলে জেলে যাবো আমি।কিন্তু তোর মতো কুলাঙ্গারের কোনো প্রয়োজন নেই আমাদের।

ওর চোখ থেকে যেনো আগুন ঝড়ছে,ভয়ে সেইদিকে তাকানোর সাহস হচ্ছে না আমার!

চলবে….

#একটি_রাতের_গল্প
পর্ব—-১১
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

—-কি হলো পল্লব,এইভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?
ভাইয়ার কথায় ঘোরের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলাম আমি।সত্যি সত্যি এরকম কিছু ঘটলে আর রক্ষা থাকবে না আমার।ভিডিওটার ভয় এতোটাই তাড়া করে বেড়াচ্ছে আমায় সবসময় উল্টোপাল্টা কিছু না কিছু ভাবছি।

—হ্যাঁ বল ভাইয়া,

—একটা ভালো খবর আছে,কালকেই প্রাচী বাড়িতে ফিরবে।

—ও আচ্ছা,

—তুই খুশি হস নি এটা শুনে?

—কেনো হবো না,কি যে বলো না তুমি

—হুমমম,এবার ভাবছি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব তোদের দুজনের বিয়েটা দিয়ে দেবো।

—ভাইয়া একটা কথা বলি তোমায়,

—বল।

—তোমরা এই বিয়ের ব্যপারটা এখন ঝেড়ে ফেলতে পারো না মাথা থেকে,আমি এই সময়ে প্রিপেয়ারড নই।

—কিসের প্রিপারেশন,তুই আর প্রাচী জাস্ট কাবিন করে রাখবি এখন।এরপর যখন খুশি সংসার করবি।তোকে দিয়ে তো কেউ এখন জোর করে সংসার করাচ্ছে না।

—কিন্তু…

—কোনো কিন্তু নয়,দেখ তোর ভাবী আম্মা আব্বা এমনকি আমি আমরা সবাই চাই কাবিনটা যতো তাড়াতাড়ি হোক।তুই হয়তো জানিস না আম্মাই কিন্তু প্রথমে তোর ভাবী আর আমার কাছে প্রস্তাবটা রেখেছে।তুই এখন শেষ সময় এসে সবটা ভেস্তে দিস না।

ভাইয়া এই বলে বেরিয়ে গেলো।পরিস্থিতি দিন দিন জটিলতর রুপ নিচ্ছে।প্রাচী এখন অসুস্থ।এই সময়ে ও সত্যিটা জানতে পারলে না জানি কি ঘটবে তখন সব দোষ আমার আর শিমুল আপুর ঘাড়ে এসে পড়বে।শিমুল আপু এখন নির্বিঘ্নে এই বাড়িতে থাকতে পারছে কিন্তু সবটা জানাজানি হয়ে গেলে ওর এই বাড়িতেও স্থান হবে না আমি ভালো করেই জানি।এরকম কিছু ঘটার আগে সবটা সামাল দিতে আমায়।সেটা যেকোনো প্রকারে।

এরিমধ্যে আমার ফোনে আবারো সেই বন্ধুটার ফোনকল আসে।

—হ্যাঁ গুঞ্জন বল!

—নম্বরটা পেয়ে গেছি পল্লব।

—সত্যি!?

—হ্যাঁ,এই নম্বর দিয়েই ফেইক অ্যাকাউন্টটা খোলা হয়েছিলো।আমি বলছি তুই টুকে রাখ।

গুঞ্জনের থেকে নম্বরটা নিলাম।ব্যাস,এবার আর কিছু সময়ের অপেক্ষা।এই নম্বরই আমাকে আসল কার্লপিট পর্যন্ত পৌঁছে দেবে।নম্বরে ডায়াল করার আগে নিজের সিমটা চেঞ্জ করে নিলাম যাতে কেউ আমাকে চিনতে না পারে।
ফোনটা হাতে নিয়ে গুঞ্জনের দেওয়া নম্বরটা ডায়াল করতে থাকি।কিন্তু মুহুর্তেই হতাশ হতে হলো আমাকে।নম্বরটা নট রিচেবল বলছে।এতো বেশ মুশকিল হয়ে গেলো।এবার এই নম্বরের আসল মালিককে খুঁজে বের করবো কিকরে আমি।উপায়ান্তর না পেয়ে গুঞ্জনের কাছে আবারো ফোন দিলাম।

—ভাই,এটা তো ব্লান্ডার হয়ে গেলো?

—কি হয়েছে?

—নম্বরটা নট রিচেবল বলছে।এখন কি করবো আমি?

—ওহ, এই ব্যপার।তুই একটা কাজ করতে পারিস কয়েকটা দিন ওয়েট কর।নম্বর আর কতোদিন বন্ধ রাখবে।ঠিক খুলতেই হবে।

—আমার হাতে অপেক্ষা করার মতো এতো সময় নেই গুঞ্জন,তুই প্লিজ হেল্প কর আমায়।

—দেখ আমি কতোটা কাঠখড় পুড়িয়ে এই নম্বর জোগাড় করতে হয়েছে সেটা আমিই একমাত্র জানি।এখন যদি নম্বর নট রিচেবল বলে কি করতে পারি আমি।

—আমার মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে।তুই হেল্প করলে কাজটা একটু তারাতারি করতে পারবো আর তুই হেল্প না করলেও এখন এটাই করতে হবে আমায়।

—কি প্ল্যান,?

(গুঞ্জন অবাক হয়ে আমাকে প্রশ্ন করে)

—আমরা এই নম্বর থেকে ইউজারের সমস্ত ডাটা তো বের করতেই পারি।আর সেখান থেকেই সব বেরিয়ে আসবে।

—এতো সহজ নয় রে বিষয়টা।এভাবে কারোর ব্যক্তিগত ডাটা কালেক্ট করা যায় না,খুব টাফ সেটা।

—হ্যাঁ আমি জানি টাফ,অসম্ভব তো নয়।আমার সিম অফিসে একজন পরিচিত লোক আছে।ওর কাছে সাহায্য চাইতে পারি আমরা।

—হ্যাঁ,তুই বললেই সে করে দেবে!ছেলের হাতের মোয়া নাকি?

—যাই হোক না কেন ভাই,এটা করতেই হবে আমায়।তুই নিজেও জানিস না আমার এটা জানা কতোটা জরুরী।আমাকে যেরকেই হোক আসল কার্লপিট অবধি পৌঁছাতেই হবে।আমিও জানতে চাই কে পেছন থেকে এতো বড়ো সর্বনাশ করতে চাইছে আমার।কি চাইছে সে?

—তোর কথা কিছুই বুঝতে পারছি না আমি, কি হয়েছে আমায় বল।

আমি গুঞ্জনকে সবটা খুলে বললাম।আমার আর শিমুল আপুর শারিরীক সম্পর্কের কথা,ওর প্রেগনেন্সি,আমাকে ডিডিওর মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল সবকিছু।গুঞ্জন সবটা শুনে আমাকে হেল্প করার আশ্বাস দিলো,আর এটাও কথা দিলো সব রকম পরিস্থিতিতে আমার পাশে থাকবে।সত্যি ওর মতো একজন বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার।আমরা দুজনে সিধান্ত নিলাম আগামীকাল সকালে উঠেই সিম অফিসে যাবো।তারপর সেখানে গিয়েই বাদবাকি কাজ হবে।

আজ ইচ্ছে করেই নিজে সেই ফেইক আইডিতে নক দিলাম।সে হয়তো একটু বেশীই অবাক হবে আমার আচরণে।এই মুহুর্তে এটাই করতে হবে আমায়,তাকে হাতে নাতে ধরার আগে নিজের অনুকূলে রাখতে হবে,যাতে নতুন করে আমার ক্ষতি করার কোনো সুযোগ না পায়।বিষয়টা অনেকটা টোপ দিয়ে মাছ ধরার মতো।আর এই বুদ্ধিটা আমার নয়,গুঞ্জনের।প্রথমেই টাইপ করি —-কি করছো,ঠিক আছো তো?

—আমি ঠিকই আছি,কিন্তু কি ব্যপার বলো তো তুমি আজ নিজে থেকেই নক দিলে আমায় মতলব টা কি?
(একটু পরে রিপ্লাই আসে)

—মতলব কিছুই না।তোমার খোঁজ নিতে ইচ্ছে করলো আজ একটু।

—মজা করছো আমার সাথে?

—একদমই না।

—সত্যি?

—হুমমম,আজকেও ভিডিও টা দেখলে আমার?

—হ্যাঁ,তোমাকে না দেখে থাকা সম্ভব।আর এইভাবে দেখতে কার না ভালো লাগে,ইচ্ছে করে সবসময় দেখতেই থাকি।

—তাই নাকি,যখন তোমার সামনে ধরা দেবো তখন কি করবে তুমি?পালিয়ে যাওয়া চলবে না কিন্তু?

—কেনো পালাবো,তোমাকে পুরোপুরি করে পাবার জন্য সেই কবে থেকে ব্যাকুল আমি, কেনো পালাবো!

—যেদিন প্রথম দেখা হবে অনেক কষ্ট দেবো তোমায়,যা সারাজীবনেও ভুলতে পারবে না।

—সেটাই আমার জন্য পরম প্রাপ্তি।আমার কষ্ট আর যন্ত্রণার বিনিময়ে যখন তোমার মুখে আনন্দের হাসি ফুটবে সেটা চেয়ে চেয়ে দেখবো আমি।তোমার সমস্ত হিংস্রতা সেদিন আমাকে উজাড় করে দিবে।

—ভেবে বলছো তো,আমি হিংস্রের থেকেও হিংস্রতর।যার পরিধি তোমার সমস্ত ধারনা ছাপিয়ে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত।

—আমি প্রস্তুত।শুধু একবার ধরা দাও আমার সামনে।তোমার দেহেরভাজে ভাজে সমস্ত অঙ্গ প্রতঙ্গের সাথে নতুন করে পরিচিত হবো আমি।

—আমরা চাইলে এখনো কিন্তু একে অপরের এই মনের ইচ্ছে পূরণ করতে পারি।

—কিভাবে?

—ভিডিও কলে এসো,আজ আমাকে নতুন করে আবার দেখাবো তোমায়।একে অপরের সাথে ভার্চুয়াল ভালোবাসা বিনিময় করবো।

এটা বলার পরে অপর পাশের আইডিটা চুপ হয়ে গেলো।তার তরফ থেকে আর রিপ্লাই আসলো না।চেক করে দেখলাম আবারো ব্লক করে রেখেছে আমায়।হয়তো আমার চালাকিটা ধরতে পেরেছে।আসলে এইভাবে ধরা যাবে না তাকে।আমাকে বাঁকা রাস্তাতেই হাঁটতে হবে।আমি তার রেসপন্সের জন্য ওয়েট না করে ল্যাপটপটা অফ করে শুয়ে পড়লাম।





পরেরদিন সকালবেলা।
গুঞ্জন আর আমি সিম অফিসে গেলাম।এদিকে ভাইয়া হাসপাতালে গিয়েছে প্রাচীকে বাসায় নিয়ে আসার জন্য।আমারও যাবার কথা ছিলো, কিন্তু কাজের বাহানা দিয়ে আটকে দিলাম।
সিম অফিসে পৌঁছতে পৌঁছতে বেশ খানিকটা সময় লেগে গেলো আমাদের।সেখানে আমার পরিচিত ব্যক্তি অর্থাৎ আকাশ ভাইয়ের সাথে কথা বলি।উনি আমাদের বসতে বললেন।
এভাবে অনেকটা সময় কেটে গেলো।জানিনা আজ এখানে এসে কতোটা সফল হবো,ভীষণ দুশ্চিন্তা হতে লাগলো আমার।একটু পরেই আমাদের ভেতরে ডেকে পাঠানো হলো।আকাশ ভাই আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন।
—এটা তো কোনো পুরুষ ব্যক্তির সিম!কিন্তু তুমি আমাকে যে প্রবেলেমের কথা বললে তাতে তো এটা হবার কথা নয়।
(আমরা বেশ অবাক হলাম আকাশ ভাইয়ের কথায়)

—কি বললেন,কোনো পুরুষের সিম এটা?কই
দেখি তো।

—হুমমম,এইযে দেখো।ইউজারের নাম শফিক উদ্দিন তাজ।

তাজ ভাইয়া!মাই গড।?তার মানে তাজ ভাইয়ার নম্বর এটা।কিন্তু উনি আমার সাথে এমনটা কেনো করতে যাবেন।তাহলে শিমুল আপুর কোনো যোগাযোগ নেই তো এর সাথে?এমনটা তো হতেই পারে,তাজ ভাইয়ের সিম ও ইউজ করে।এর আগেও এদের দুজনকে একসাথে দেখেছি,একে অপরকে ফোনকল করতে দেখেছি।তার মানে আমার সেই দেখাগুলো নিছকই মনের ভুল ছিলো না…?

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here