একটি_রাতের_গল্প,পর্ব-১৯,২০

0
1480

#একটি_রাতের_গল্প,পর্ব-১৯,২০
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ

সবাইকে অবাক করে দিয়ে নিজের আঙ্গুলটা আমার দিকে তাক করলো!পুলিশ সন্দেহের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাতে থাকে।ভাইয়ার এই কান্ড দেখে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।ওর আঙ্গুল ধীরে ধীরে সরে যেতে থাকে।এক পর্যায়ে সেটা গিয়ে প্রাচী বরাবর গিয়ে থামে।ভাইয়া মুখে কিছু বলতে পারছে না,শুধু প্রাচীর দিকে আঙ্গুল ইশারা করে কাঁপতে লাগলো।ও কিছু একটা বলতে চাইছে,কিন্তু বার বার ব্যর্থ হচ্ছে।আমার বুঝতে বাকি রইলো না কিছুই।তার মানে আমি যা সন্দেহ করেছিলাম তাই সত্যি।এই সবকিছুর মূলে দায়ী প্রাচী।নিজের ওপর অভিযোগের আঙ্গুল উঠতেই প্রাচী বেশ ঘাবড়ে গেলো।

—একি,দর্পণ ভাইয়া তুমি আমার দিকে আঙ্গুল ইশারা করছো কেনো,আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি?

—আপনি কিছু করেননি তো, তিনি আপনাকে দেখাচ্ছে কেনো,ভালোয় ভালোয় সবটা স্বীকার করুন ম্যাডাম।(পুলিশ)

—নাহ, আমি কিছু করি নি। অনেক বড়ো একটা গেম খেলা হচ্ছে আমার সাথে।বিশ্বাস করো সবাই।আপু তুমি অন্তত বিশ্বাস করো আমায়।
(প্রাচী ওর বোন অর্থাৎ আমার সিমরান ভাবীকে উদ্দেশ্য করে বলে,সিমরান ভাবী এগিয়ে আসে।)

—পুলিশ অফিসার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে আমার মনে হয়।আমার বোন এমন কাজ কিছুতেই করতে পারে না।ও নির্দোষ।

আমি এতোক্ষণ চুপ করে ছিলাম।কিন্তু আর নয়, এবার মুখ খুলতেই হবে আমায়।

—তোমার বোন মোটেও নির্দোষ নয় ভাবী?তার প্রমাণ আমি নিজে…

—এসব কি বলছো তুমি?

—পল্লব,তুই কি বলছিস,তোর কাছে কি প্রমাণ আছে তোর ভাইয়াকে প্রাচী খুন করতে চেয়েছিলো।(আব্বা)

—পল্লব সাহেব,আপনি এদের কারো কথায় কান দেবেন না।আপনাকে ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করছে সবাই।যা বলার আমাদের বলুন।(পুলিশ অফিসার)

—আমি গতকাল রাতে নিজের চোখে প্রাচীকে একটা ছুরি লুকোতে দেখেছি।আমার ধারণা ঐ ছুড়িটা দিয়েই ভাইয়াকে খু ন করার চেষ্টা করা হয়েছিলো।

আমার এই কথাটা শোনার জন্য হয়তো কেউ প্রস্তুত ছিলো না।সবাই হতবাক হয়ে গেলো।

—পল্লব,আমি তো সবটা খুলে বলেছিলাম তোমায়।তারপরেও এইভাবে ফাঁসিয়ে দিলে আমায়।
(প্রাচী কাঁদতে কাঁদতে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে।)

—তোমার এই কান্নার কোনো দাম নেই আমার কাছে প্রাচী।আমি এবার বুঝতে পেরেছি,আমার ভাইয়াকে তুমিই খু ন করতে এসেছিলে।ভাইয়া তো আর মিথ্যে বলবে না।ওর কি শত্রুতা আছে তোমার সাথে বলো।

—একদম ঠিক বলেছেন পল্লব সাহেব।আপনার ভাই যেহেতু কার্লপিট নিজে আইডিনটিফাই করেছে তাছাড়া আপনিও স্বাক্ষী দিলেন আমরা ম্যাডামকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হচ্ছি।

পুলিশের কথা শুনে প্রাচী প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলো।ও রীতিমত হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলো।

—আপু আমাকে বাঁচা,আমি কিছু করি নি।বিশ্বাস কর। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।

—আপনি নিজেই ফেঁসে গেছেন প্রাচী ম্যাডাম।কেউ ফাঁসাচ্ছে না আপনাকে।এবার চলুন আমাদের সাথে।

—বললেই হলো,আমি কোথায় যাবো না।কোথাও যাবো না আমি।

প্রাচী গিয়ে ভাবীকে জড়িয়ে ধরে।সত্যি বলতে আমার নিজেরই ভীষণ খারাপ লাগছে এই দৃশ্য দেখে।কিন্তু কী আর করার।অপরাধীকে যে শাস্তি পেতেই হবে।প্রাচী শুধু আমার ভাইয়ের সাথে নয়,আমার সাথেও অন্যায় করেছে।সেইদিনে ওর রুমে টেবিলের ড্রয়ারে আমি কিছু ছবি পেয়েছিলাম।তার মানে প্রাচী সেদিন মিথ্যে বলেছিলো আমায়।আমার আর শিমুল আপুর অন্তরঙ্গ মূহুর্তের ভিডিও ওই করেছে।ওর ড্রয়ার থেকে ছবি পাওয়া,বাগানে ছুরি পুতে রাখতে দেখা, ভাইয়ার স্বাক্ষী দেওয়া।এতোগুলো বিষয় তো কাকতালীয় হতে পারে না।আর যাই হোক ভাইয়া তো মিথ্যে বলবে না।এই সময়ে ও কেনো মিথ্যে বলবে।প্রাচীকে ও নিজের বোনের মতো মনে করতো।ওকে এমনি এমনি ফাঁসিয়ে দেবার তো কোনো প্রশ্নই আসে না।প্রাচী সমানে নিজেকে নির্দোষ দাবী করে চলছে, কিন্তু সমস্ত প্রমাণের কাছে ওর এই দাবী বড্ড ঠুনকো।পুলিশ অবশেষে ওকে সাথে করে নিয়ে গেলো।সবার সেটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না।ভাবী এখনো নিজের বোনের জন্য কান্না করে চলেছে,বোনের জন্য তার খুব কষ্ট হচ্ছে এইটুকু বুঝতে পারছি আমি।

এরপর পুলিশ আমাদের বাড়ি থেকে ছুরিটা এভিডেন্স স্বরুপ নিয়ে যায়।ভাইয়াকেও দুইদিন পরে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হলো।আমরা ওকে বাড়িতে নিয়ে আসলাম।তবে এখনো একটা বিষয় পরিষ্কার হলো না,প্রাচী কেনো ভাইয়ার এতো বড়ো একটা ক্ষতি করলো,কি উদ্দেশ্য ছিলো ওর।আর আমাদের সেই ভিডিওর ব্যপারে তো আর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করবে না।জানিনা সেই রহস্যের সমাধান কবে হবে।তবে আমি এই মুহূর্তে চাই ভাইয়ার অপরাধী উপযুক্ত শাস্তি পাক।ওর সাথে সবার আগে ন্যায়বিচার হোক।পুলিশের সাথে কথা বলার জন্য একটা ফোনকল দিলাম।

—হ্যালো,আমি পল্লব হাসান বলেছিলাম।

—কোন পল্লব হাসান?

—দর্পন হাসানের ছোটো ভাই… যার সাথে কয়েকদিন আগে…

—জ্বী,জ্বী বলুন।

—একটা ইনফরমেশন জানার ছিলো আপনাদের থেকে।

—বলুন,আমরা কিভাবে সাহায্য করতে পারি আপনাদের।

—প্রাচী,আমার ভাইয়ার শ্যালিকা।ও কী এখন পর্যন্ত কিছু স্বীকার করেছে?কিছু জানতে পারলেন আপনারা?

—না,সেরকম কিছু জানতে পারলে আমরা নিজেরাই ইনফর্ম করবো আপনাদের।উনি কিছুতেই মুখ খুলতে চাইছেন না,বার বার নিজেকে নির্দোষ দাবী করছেন।অবশ্য সব অপরাধীরা প্রথমে এটাই বলে।

—আচ্ছা ঠিক আছে।কিন্তু জানতে পারলে জানাবেন।ধন্যবাদ।





আজ সন্ধ্যাবেলা আমরা সবাই বাড়ির ড্রয়িংরুমে।শিমুল আপুর প্রেগনেন্সির বয়স প্রায় পাঁচ মাস।তাই আমি সিধান্ত নিয়েছি,সবাইকে সবটা খুলে বলবো।আম্মা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে –

—দেখ বাবা,আমরা তো চেয়েছিলাম প্রাচীর সাথে তোর বিয়েটা দিতে।কিন্তু আমাদের বদনসিব সেটা আর হয়ে উঠলো না।জানিনা প্রাচী এমন একটা কাজ কেনো করলো।ওর কি শত্রুতা ছিলো আমাদের সাথে।

—আম্মা বাদ দাও না।আমরা ওর বিষয়ে এই বাড়িতে আর কথা নাই বলি।তবে আজকে আমার একটা জরুরী কথা বলার আছে সবার সাথে।

—জরুরী কথা,কিসের জরুরী কথা?

ভাইয়া হুইল চেয়ারে বসে আছে।ওর পাশে ভাবী দাঁড়িয়ে।আব্বা আম্মা আমার মুখোমুখি।শিমুল আপু ওর ঘরেতেই আছে।আমিই ওকে এখন এখানে আসতে নিষেধ করেছি।আমি সবার দিকে একপ্রস্থ তাকিয়ে বলতে লাগলাম।

—তোমরা আমার বিয়ে দিতে চেয়েছিলে একজনের সাথে,কিন্তু কোনো কারণে সেটা হয় নি।হয়তো আল্লাহ চান নি।আমরা ওনার ইচ্ছের ওপরে কি করতে পারি।

—তুই আসলে কি বলতে চাইছিস,

—আম্মা আমি বিয়ে করবো, তবে প্রাচীকে নয়।অন্য কাউকে বিয়ে করবো আমি।

—ভালো কথা, তা তোর পছন্দের কি কেউ আছে।যদি থেকেই থেকে এতোদিন জানাসনি কেনো আমাদের?(আব্বা)

—সে এই বাড়িতেই আছে।

—কি,এই বাড়িতেই আছে!কার কথা বলছিস তুই?

—আমি শিমুল আপুকে বিয়ে করতে চাই!

আমার এই কথা শুনে সবাই স্তম্ভিত।একে অপরের মুখের দিকে তাকাতে লাগলো সবাই।বুঝতে পারছি সবার কাছে ভীষণ অদ্ভুত লাগছে হয়তো আমার কথাগুলো।

—কি,মানে তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি পল্লব,কি বলছিস এসব তুই?

—এটা ছাড়া কোনো উপায় নেই আম্মা।এই বিয়েটা করতেই হবে আমাকে।তোমরা যদি না মানো তারপরেও করতে হবে।

—শিমুল আর তোর বয়সের কতো ফারাক জানিস,তাছাড়া ওর একবার বিয়ে হয়েছে,আগের স্বামীর বাচ্চা ওর পেটে।তুই আর কাউকে পেলি না বিয়ে করার জন্য।ছিহ!এতো বড়ো বদ চিন্তা মাথায় আসলো কিকরে তোর শুনি?
(আব্বা বেশ রুক্ষ স্বরে বললেন আমায়)

—তোমাদের সবার শুনতে খুব খারাপ লাগবে,জানিনা এটা শোনার পরে আমার সাথে কি করবে তোমরা,তবে সত্যিটা হলো শিমুল আপুর এই বাচ্চাটা তাজ ভাইয়ার নয়,বাচ্চাটা আমার!

চলবে…..

#একটি_রাতের_গল্প
পর্ব—২০
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ

—তোমাদের সবার শুনতে খুব খারাপ লাগবে,জানিনা এটা শোনার পরে আমার সাথে কি করবে তোমরা,তবে সত্যিটা হলো শিমুল আপুর এই বাচ্চাটা তাজ ভাইয়ার নয়,বাচ্চাটা আমার!

আমার কথা শুনে সবাই যেনো আকাশ থেকে পড়লো।কে কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।আমি এরপর আম্মা আব্বাকে সবটা খুলে বললাম।যদিও সেটা আমার জন্য খুব একটা সহজ ছিলো না,কিন্তু নিজের সন্তানের জন্য এইটুকু তো করতেই হবে।আমার দ্বায়িত্ব ছিলো সবাইকে সবটা জানানো,ওরা আমাদের দুজনকে মেনে না দিলে যা করার আমাকেই করতে হবে।আব্বা আম্মা সেদিনের মতো আর কিছু বললো না।এর পরের দিন আব্বা আমাকে তাদের ঘরে ডাকলো।আমি বেশ ভয় আর দ্বিধাদন্দ্বের ভেতরে আছি।না জানি কোন সিধান্ত অপেক্ষা করছে আমার জন্য।আম্মা আব্বার রুমে ঢুকে দেখি তারা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

—হ্যাঁ,আব্বা বলুন।ডেকেছিলেন আমায়।

—হ্যাঁ,কথা আছে বলেই তো ডেকেছি।কাল তুমি আমাদের যা বলার বলেছো,আজকে আমরা বলবো তুমি শুনবে।

—হ্যাঁ,বলুন।

—তুমি যে কাজ করেছো,সেটা কখনো ক্ষমা করতে পারবো না আমরা।আমরা তোমাকে পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ করেছি নিশ্চয় এরকম একটা জীবন দেবার জন্য নয়।এখন তুমি যদি যেচে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনো কি করতে পারি আমরা।

—আমি ঠিক বুঝতে পারছি না তোমাদের কথা,

—তোমার আর শিমুলের ব্যপারটা যতোদূর পর্যন্ত গড়িয়েছে আমরা চাই এই নিয়ে আর যেনো কেউ জল ঘোলা করার সুযোগ না পায়।আর কদিন পরে শিমুলের বাচ্চা হবে তখন আর আমাদের হাতে কিছু থাকবে না। যা বদনাম করার বলার আশেপাশের লোকজনই করবে।তাই এই পরিবারের মান সম্মান বাঁচাতে তোমাদের বিয়েটা দিতে চাই আমরা।এটা ভেবো না আমরা সবটা মন থেকে মেনে নিয়েছি,শুধু এই পরিবারের কথা ভেবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তোমাদের সম্পর্কটা মেনে নিচ্ছি আমরা।

আব্বার কথা শুনে বুঝতে পারছি তাদের বেশ অভিমান আমার ওপরে।আর সেটাই স্বাভাবিক।আমি যে অন্যায় করেছি তাদের সাথে সেটা ক্ষমার অযোগ্য।কিন্তু এতোকিছুর পরেও সবাই সবটা মেনে নিয়েছে এতেই আমি খুশি।এবার শিমুল আপু আর আমাদের সন্তানের ওপর থেকে দুশ্চিন্তার ভার কিছুটা হলেও কমবে আমার। পরিবার মেনে নিবে কি নিবে না,এই চিন্তা এতো দিন ধরে তাড়িয়ে বেড়াতো আমায়।

আম্মা আব্বা বিয়েটা মেনে নিয়েছে শুনে শিমুল আপু বেশ খুশি হয়।ভাবীর প্রতিক্রিয়া কি ঠিক বুঝতে পারছি না।সে মনে মনে খুশি হয়েছে নাকি আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিতে পারছে না কে জানে।ভাবীর সাথে এই বিষয়ে কথা বলা দরকার।এমনিতেও প্রাচীর সাথে আমার বিয়েটা হয়নি এই নিয়ে ভাবীর মনে একটা অসন্তোষ কাজ করছে এটা নিশ্চিত।ভাবীদের রুমে গিয়ে দেখলাম সে ভাইয়াকে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে।এক হুইল চেয়ারে বসে আছে ভাইয়া।আমার দিকে এক পলক তাকালো ও।আমি ভাবীকে উদ্দেশ্য করে বললাম।

—ভাবী তোমার সাথে একটু কথা আছে আমার।

—কী কথা বলো।
(ভাইয়াকে খাইয়ে দিতে দিতে বললো,আমার দিকে তাকালো না।)

—আম্মা আব্বা আমার শিমুল আপুর বিয়েটা মেনে নিয়েছে শুনেছো তো?

—হ্যাঁ,শুনেছি।আম্মাই সকালে বলেছে আমায়।

—দেখো আমি জানি প্রাচীর ব্যপারটা নিয়ে তুমি খুব আপসেট।তারপরেও জিজ্ঞেস করবো তুমি কি আমাদের এই বিয়েতে খুশি নও!

—আমার খুশি হওয়া বা না হওয়াতে কি আসে যায় ।আর আম্মা আব্বা রাজি হয়ে থাকলে কি বলার থাকতে পারে আমার বলো তো।

হঠাৎ লক্ষ্য করলাম ভাইয়া আমার আর শিমুল বিয়ের কথা শুনে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লো।বারবার হাত পা নাড়াতে শুরু করলো।যেনো কিছু বলতে চাইছে আমায়।আমি ভাইয়ার দিকে এগিয়ে গেলাম।

—ভাইয়া কিছু বলবি তুই…, বল কি বলতে চাস?

—একটা কাজ করো ভাবী,তুমি একটা খাতা আর কলম নিয়ে আসো।দেখি ভাইয়াকে দিয়ে কিছু লেখানো যায় কিনা।

ভাবী আমার কথামতো একটা খাতা আর কলম এনে আমাকে দিলো।আমি ভাইয়ার হাতে কলমটা ধরিয়ে দিয়ে বললাম।

—ভাইয়া,তুই যা বলতে চাস এখানে লিখে দে।

ভাইয়া আমাকে কিছু বলার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে বুঝতে পারছি,ও বারবার চেষ্টা করছে কাগজে কিছু লেখার।কিন্তু ব্যর্থ হলো।এই সময়ে ওর ওপর এতো স্ট্রেচ দেওয়া উচিত হবে না।এই ভেবে আমি ভাইয়ার হাত থেকে কলমটা নিয়ে নিলাম।তবে মনে একটা খটকা রয়েই যায়, ভাইয়া কি এমন বলার জন্য এতো চেষ্টা করেছিলো।জানি না,এটা তো কেবল ও সুস্থ হবার পরেই জানতে পারবো।

আমি ঘর থেকে বেরিয়ে আসবো ঠিক তখন ভাবী আমাকে পেছন থেকে ডাক দিলো।তারপর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো।

—একটা সময় আমি তোমার সাথে অনেক বাজে ব্যবহার করেছি।এমন কিছু করেছি যা এখন ভাবতেও ঘৃনা লাগছে।সম্ভব হলে ক্ষমা করে দিও আমায়।

—আমার তোমার প্রতি কোনো রাগ বা ক্ষোভ নেই।তুমি যদি সত্যি নিজের ভুল বুঝে ঐ পথ থেকে ফিরে আসতে পারো সেটা সমস্ত রকম ক্ষমার উর্ধ্বে।তোমার এই বদলটা দেখে সত্যিই ভালো লাগছে আমার।তবে একটা কথা কি জানো,

—কি কথা?

—আমার কেনো জানি মনে হয় তুমি এই বিয়েতে খুশি নও।কিন্তু কেনো?

—দেখো আমি আগেই বলেছি আমার খুশি অখুশির ওপর কিছু নির্ভর করে না।তবে আল্লাহর কাছে এটাই চাইবো যেনো কোনো ভুল সিধান্তের দিকে পা না বাড়াও তুমি।তোমার ভালো হোক এটাই চাই।যা করার একটু চিন্তা ভাবনা করে করো।

এটা বলে ভাবী ঘরের ভেতরে চলে গেলো।বুঝতে পারলাম না কিসের ইঙ্গিত দিলো আমায়।ভাবী কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারছে না এইটুকু বুঝতে পারছি আমি।যাই হোক,পরে না হয় আবার কথা বলবো ভাবীর সাথে।এই ভেবে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালাম আমি।
যেতে যেতে একটা অদ্ভুত ব্যপার লক্ষ্য করি আমি।কেউ গায়ে চাদর জড়িয়ে বাড়ির গেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।মুখ ঢাকা থাকার কারণে কিছুই বুঝতে পারছি না।আমি চুপি চুপি তাকে অনুসরণ করতে থাকি।লোকটা ততোক্ষণেও গেট পেরোতে পারে নি।সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমি পেছন থেকে গিয়ে তাকে খপ করে ধরে ফেললাম।

—কি ভেবেছিলে আমায় ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যাবে।সে আর হচ্ছে না।

আমাদের ধস্তাধস্তির আওয়াজ শুনে বাড়ির সবাই বাইরে বেড়িয়ে আসলো।আম্মা আব্বা শিমুল আপু ভাবী সবাই।ভাবী বলে উঠলো।

—আরে কে এটা,এতো রাতে আমাদের বাড়িতে কি করছে?

—চুরি টুরি করতে আসেনি তো?চাদরটা টেনে খুলে দাও ওর।(ভাবী)

ভাবী এগিয়ে এসে আমাকে সাহায্য করে।লোকটার ওপর থেকে চাদরটা সরিয়ে নিতেই সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে দিকে।

—একি,তাজ ভাইয়া তুমি!এতো রাতে আমাদের বাড়িতে চোরের মতো ঢুকে কি করছো?

শিমুল আপু তাজ ভাইয়ার দিকে এগিয়ে আসে তারপর সপাটে তার গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো।উপস্থিত সবাই চমকে উঠলো শিমুল আপুর এই আচরণে!

—তোমাকে না বলেছি এই বাড়িতে আসবে না, তারপরেও কেনো এলে?
(শিমুল বেশ কড়া স্বরে তাজ ভাইয়াকে বললো)

—আমার ভুল হয়েছে,ক্ষমা করো আমায়।আর কখনো তোমায় বিরক্ত করবো না।

—শিমুল আপু কি হয়েছে আমাকে বলো,তাজ ভাইয়া এতো রাতে আমাদের বাড়িতে কি করছে?

—সেটা ওকে জিজ্ঞেস কর। ও কি চায় আমার কাছে।

—কেনো,তাজ ভাইয়াকে কেনো জিজ্ঞেস করতে হবে।এর আগেও তোমাদের এই দুজনকে একসাথে দেখেছি আমি।বলো তোমাদের দুজনের ভেতরে কি চলছে?
আমার মনে হয় তোমরা দুজন কিছু লুকাচ্ছো আমাদের থেকে।

শিমুল আপু কিছু বলতে যাবে ঠিক তখন দর্পণ ভাইয়ার ঘর থেকে একটা আওয়াজ ভেসে আসে।মনে হলো এইমাত্র ভাইয়া আমার নাম ধরে ডাক দিলো….

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here