#একটি_রাতের_গল্প,পর্ব-২৩,২৪
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ
শিশিটা আবারও ড্রয়ারের ভেতরে রেখে দেয় পল্লবী।একটু পরেই ঘরের ভেতরে পারিজাত ঢুকে পড়ে।
—তুমি উঠে গেছো?
—হুমমম,তুমি কোথায় চলে গিয়েছিলে?
—এইতো একটু বাইরে হাঁটতে গিয়েছিলাম।কিছু খেয়েছো?
—না এখনো খাইনি,চলো নিচে গিয়ে একসাথে খাবো।
—আচ্ছা আমি গোলসটা সেরে আসি বরং,তুমি একটু অপেক্ষা করো।
এই বলে পারিজাত বাথরুমে চলে যায়।পল্লবী নিচে যাওয়ার জন্য রেডি হতে থাকে।ওর মাথায় এখনো শিশিটার কথা ঘুরপাক খাচ্ছে।এরকম একটা এসিডের শিশি ওর কাছে এলো কিকরে।আচ্ছা ওকে একবার জিজ্ঞেস করে দেখলে কেমন হয়।মনের সন্দেহটা কিছুটা হলেও কমবে তাতে।কিন্তু পল্লবী জিজ্ঞেস করলেই পারিজাত যে সত্যিটাই বলবে তার নিশ্চয়তা কে দিতে পারে।মাথায় হাত দিয়ে বিছানার ওপর বসে পড়লো পল্লবী।শ্বশুরবাড়িতে প্রথম দিন এসেই এরকম একটা সন্দেহজনক ব্যপারের সাথে জড়িয়ে যেতে হবে ভাবতেও পারেনি ও।পারিজাত গোসল সেরে ইতোমধ্যে রুমে চলে এসেছে।
—কি হলো,কি চিন্তা করছো?
(পারিজাত পল্লবীকে প্রশ্ন করে)
—না,কিছু না।চলো নিচে যাই।
—আমার তো মনে হয় তুমি কোনো একটা বিষয় নিয়ে ভাবছো,দেখো আমার সাথে শেয়ার করতে পারো কিন্তু।হয়তো তোমার মনটা তাতে একটু হলেও হালকা হবে।
পারিজাত পল্লবীর পাশে বসে ওর কাঁধের ওপর হাত রেখে বললো।পল্লবী ওর দিকে ঘুরে তাকায়।
—তুমি কি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো পারিজাত,দেখো আমি কিন্তু তোমায় নিজের থেকেও বেশী বিশ্বাস করি।
—জানতাম কিছু একটা হয়েছে,আরে বাবা কি হয়েছে বলো তো?
—থাক,আমরা পরে না হয় এই বিষয় নিয়ে কথা বলবো।যদি দরকার পড়ে।এবার চলো।
দুজনে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।ড্রয়িংরুমে যেতেই কেউ একটা এসে পেছন থেকে পল্লবীর চোখ চেপে ধরে।তার হাতের স্পর্শ পেয়ে পল্লবীর আর চিনতে দেরি হলো না,
—আরে তুই,এতো সকালে কোথা থেকে এলি…??
—কোথা থেকে আবার,বাড়ি থেকে,তুই তো জানিস তোকে ছাড়া একটা দিনও কোথাও থেকেছি আমি।
—সে আমি জানি,তাই বলে এতো সকালে!
–হ্যাঁ,এবার চল তোর সাথে নাস্তা করবো।বাবা তো আসতেই দিতেই চাইছিলো না,আমি একপ্রকার পালিয়ে এসেছি।
—কি,দেখ এটা কিন্তু একদম ঠিক করিস নি।
—তুই চুপ কর বেশ করেছি।এবার চল,খাবো একসাথে।
প্রজ্ঞা পল্লবীর ছোটো বোন।ওদের দুজনের বয়সের ব্যবধান খুব বেশী নয়,মাত্র এক বছর।পল্লবী যেমন শান্ত শিষ্ট প্রজ্ঞা ঠিক তার উল্টো।ও ছোটোবেলা থেকেই দুরন্ত স্বভাবের।তবে দুই বোন একে অপরকে নিজেদের প্রাণের থেকেও বেশি ভালোবাসে।ওরা দুজন সৎ বোন এটা পল্লব বা প্রাচী কখনো জানতে দেয়নি ওদের।প্রাচীও আজ অবধি পল্লবীকে বুঝতে দেয়নি ও ওর নিজের সন্তান নয়,অন্য কারোর সন্তান।দুজনেই সমান স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করেছে।এদিকে পারিজাতরাও দুই ভাই।ও আর সাহিল।সাহিল আগে পড়াশুনার জন্য বাইরে থাকতো,এখন বাড়িতেই শিফট করেছে।
সবাই ব্রেকফাস্ট করার পরে যে যার কাজে চলে গেলো।একটু পরে পল্লবীর ফোনে গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে কেয়ার টেকারের একটা ফোনকল আসলো।
—হ্যাঁ,আজাদ চাচা বলুন!
—একটা পার্সেল এসেছে তোমার নামে মা!একটু নিচে এসে নিয়ে যেতে পারবে।
—পার্সেল,এখন কিসের পার্সেল,
—সে আমি কি জানি,হয়তো কেউ বিয়ের কোনো গিফট পাঠিয়েছে তোমায়,
—হুমম,তাই হবে।
—আচ্ছা,আপনি রাখুন ওটা।আমি একটু পরে এসে নিয়ে যাবো।
—ঠিক আছে মা।
সারাদিন কাজকর্মের ব্যস্ততায় পার্সেলের কথা ভুলেই গিয়েছিলো পল্লবী,সন্ধ্যাবেলা হঠাৎ মনে পড়তেই পার্সেলটা নিচ থেকে নিয়ে আসলো।ঘরের ভেতরে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে দেয়,তারপর ধীরে ধীরে পার্সেলটা খুলতে থাকে।অদ্ভুত ব্যপার পার্সেলের ওপরে কোনো ডিটেইলস দেয়া নেই,যেটা দিয়ে পল্লবী নিশ্চিত হতে পারে ঠিক কে পাঠিয়েছে এটা।জিনিসটা খুলে বেশ অবাক হয় সে।ভেতরে শুধু একটা চিঠি আর কিছু নয়।পল্লবী চিঠিটা খুলে পড়া আরম্ভ করলো।
“খুব আফসোস হয় নিজের চেহারার জন্য,তাই না।কি চিন্তা করছো,তোমার এই অবস্থার জন্য কে দায়ী।সে তোমার আশেপাশেই আছে, এতোটাই পাশে তোমার তাকে খোঁজার দরকারই পড়বে না!তবে সে কিন্তু ছেড়ে দেবে না তোমায়, সামনে আরোও অনেক বড়ো বিপদ অপেক্ষা করছে তোমার জন্য”
লেখাগুলো পড়ে পল্লবী হতবাক।কে পাঠালো এটা,আর কার কথাই বা বললো সে।তবে কি লোকটা পারিজাতের কথা বললো।কিন্তু পারিজাত ওর সাথে এমনটা কেনো করতে যাবে।না,একটা উড়ো চিঠির ওপর ভিত্তি করে নিজের স্বামীকে সন্দেহ করা ঠিক হবে না।পল্লবী ভালো করেই জানে পারিজাতকে ও যতোটা সন্দেহ করবে,ওদের দুজনের ভেতরের দূরত্ব ততোটাই বাড়তে থাকবে।যা কখনোই চায় না ও।
চিঠিটা উল্টাতেই পল্লবী অপর পাশে একটা মোবাইল নম্বর দেখতে পায়।আর দেরি না করে নম্বরটা তুলে একটু ডায়াল কল দিলো।একটু পরে ওপাশ থেকে কেউ কলটা রিসিভ করে।
—আমি জানতাম,আমি অবশ্যই যোগাযোগ করবেন আমার সাথে।
—এই আপনি কে বলুন তো,আর কেনো এভাবে ভয় দেখাচ্ছেন আমায়।
—আমি তোমাকে ভয় দেখাচ্ছি না, যেটা সত্যি তাই বলছি।
—সত্যি,কোন সত্যির কথা বলছেন আপনি?
—সেদিন রাতে যে এ সি ড নিক্ষেপ করে তোমার লাইফটা বরবাদ করে দিয়েছিলো সে আপনার রখুব কাছের মানুষ।এটাই বলতে চাইছি আমি..
—আমি আপনাকে চিনি না,জানি না। কেনো বিশ্বাস করবো আপনার কথা?
—আমার মুখের কথা বিশ্বাস করতে হবে না,প্রমাণ দিলে করবেন তো?
—প্রমাণ,কিসের প্রমাণ?
—সেদিন রাতে আপনার লাইফটা বরবাদ করে দেবার পেছনে কার হাত আছে,সেই প্রমাণ আছে আমার কাছে।
লোকটার কথা শুনে পল্লবী বেশ অবাক হলো।তার মানে সে কি সত্যিই বলছে,কারো কাছে উপযুক্ত প্রমাণ না থাকলে এতোটা কনফিডেন্স সহকারে কিকরে বলতে পারে।
—আগে প্রমাণ দিন,তারপরে বিশ্বাস করবো।
—স্বপ্ন প্লাজার কথা মনে আছে নিশ্চয়ই,আজ থেকে ঠিক ছ মাস আগে যে জায়গায় বসে এ সি ড নিক্ষেপ করা হয়েছিলো আপনার ওপর।আপনি ওখানে চলে আসুন।আপনার সমস্ত প্রমাণ আমি দেবো,সে দিন রাতে আপনাদের চোখের আড়ালে কি ঘটেছিলো সবকিছুর ভিডিও রেকর্ড আছে আমার কাছে।আশা করি সেটা দেখলে আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না আপনার মনে?
—ঠিক আছে,কখন আসতে হবে বলুন।
—এখন তো ছ টা বাজে, আপনি চাইলে একটু পরেই চলে আসতে পারেন।আমি অপেক্ষা করবো আপনার জন্য।যদি না আসেন আমি জোর করবো না,পুরোটা আপনার ওপর।
—না না,কেনো আসবো না আমি।আমিও দেখতে চাই কি এমন প্রমাণ আছে আপনার কাছে,আর আমার কোন কাছের এতো বড়ো সর্বনাশ করেছে আমার সেটাও জানতে চাই আমি।
এই বলে পল্লবী ফোনটা কেটে দিলো।এই মূহুর্তে লোকটাকে বিশ্বাস করা ছাড়া আর কোনো অপশন নেই ওর কাছে।যে প্রশ্ন দিনরাত তাড়িয়ে বেড়াও ওকে আজ তার উত্তরের কাছাকাছি এসেও সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না পল্লবী।ফোনটা রেখে তাড়াতাড়ি রেডি হয়।তারপর কাউকে কিছু না জানিয়ে স্বপ্ন প্লাজার উদ্দেশ্য রওয়না দিলো!
চলবে…….
#একটি_রাতের_গল্প
পর্ব—২৪
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ
স্বপ্ন প্লাজায় পৌঁছে পল্লবী লোকটার নম্বরে আবারও কল দিলো।
—হ্যাঁ,আমি চলে এসেছি।আপনি কোথায়?
—যেখানে আছেন ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকুন,জাস্ট ওখানেই।
পল্লবী রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে থাকে।একটু পরে ওর পেছন থেকে একটা গাড়ি আসলো।গাড়িটা পল্লবীর কাছাকাছি আসতেই থেমে যায়।
—এই যে ম্যাডাম,এই দিকে।
(একটা লোক গাড়ির ভেতর থেকে পল্লবীকে উদ্দেশ্য করে বলে)
পল্লবী ঘুরে তাকাতেই লোকটা পল্লবীর হাতে একটা কাগজে মোড়ানো মেমরি কার্ড ধরিয়ে দিলো।পল্লবী লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে,একে আগে কোথাও দেখেছে বলে তো মনে হয় না।
—কি আছে এতে,আর আপনি কে?
—আমি কে সেটা জানা জরুরী নয়,যেটা দিয়েছি তার ভেতরে আপনার সকল প্রমাণ রয়েছে।এক্ষুনি দেখে নিন।
এই বলে লোকটার গাড়ি সামনের দিকে এগিয়ে গেলো।পল্লবী কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলো না।পল্লবী কাগজটা খুলে দেখে ভেতরে একটা মেমরি কার্ড।মেমরি কার্ডটা মোবাইল ফোনে enter করলো পল্লবী।একটা ভিডিও খুঁজে পায় ও।ঐ ভিডিওটা ছাড়া আর কিছু নেই মেমরি কার্ডে।ভিডিওটা অন করতেই সেদিন রাতের দৃশ্য ভেসে উঠলো।আজ থেকে ঠিক ছয় মাস আগে,যে রাতে ওর ওপর এ সি ড নিক্ষেপ করা হয়েছিলো।ভিডিওর প্রথম দিকটা অপরিষ্কার থাকলেও ধীরে ধীরে সবটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।পল্লবী দেখতে পাচ্ছে ও আর ওর বাবা মা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।একটু পরেই পেছন থেকে একটা লোক চলে আসলো।সে পেছন থেকে পল্লবীর ওপর এ সি ড ছুড়ে দিয়েই দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।লোকটাকে এক পলক দেখে ভীষণ খটকা লাগলো পল্লবীর,ভিডিওটা পস করে জুম করে দেখতে লাগলো।লোকটার চেহারা মোবাইল স্ক্রিনে স্পষ্ট হতেই পল্লবী পুরোপুরি স্তম্ভিত হয়ে গেলো।এটা তো পারিজাত!!
তার মানে সেদিন রাতে পারিজাত ওর ওপর এ সি ড নিক্ষেপ করেছিলো।পল্লবীর মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো।তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে জলের বোতলটা বের করে খানিকটা জল গলধঃকরন করে নিলো।ঠান্ডার ভেতরে ওর সারা শরীর ঘামতে শুরু করেছে।
—নাহ, আমি ভুল দেখছি না তো,এটা কিকরে হয়? পারিজাত আমার সাথে এমনটা কেনো করলো, ও তো এমন মানুষ নয়।আমার সাথে কি এমন শত্রুতা ওর।আর ও যদি আমার সাথে সত্যিই এটা করে থাকে, আমায় বিয়ে করলো কেনো?
এরূপ নানাবিধ প্রশ্নবাণ ধেয়ে আসতে থাকে পল্লবীর দিকে।কিছু ভাবতে না পেরে দিশেহারা হয়ে গেলো।ইতিমধ্যে ওর ফোনে প্রজ্ঞার কল আসে।প্রথমে কলটা কেটে দিলেও, পরেরবার রিসিভ করলো।
—আপু তুই কোথায়,তোকে কখন থেকে খুঁজে মরছি আমি।
—আমি একটু বাইরে এসেছি, কাজ ছিলো।
—তোর গলা এমন লাগছে কেনো,কি হয়েছে বল আমায়।
—কিছু হয়নি রে,তুই ফোনটা রাখ এখন।
—কি হয়েছে বল না,আর তুই কোথায় গিয়েছিস।বাসায় ফিরবি কখন?
—এতো প্রশ্ন করলে আমি কিভাবে উত্তর দেবো…
—আচ্ছা তুই বাসায় আসবি কবে, তাই বল।তোকে কিন্তু একদম ঠিক লাগছে না আমার।
–একটু পরে আসছি।
পল্লবী ফোনটা কেটে দিয়ে একটা ক্যাব বুক করলো।তারপর বাসার উদ্দেশ্য রওয়ানা দেয়।খানিকক্ষণ যেতেই গাড়ি মেইন রোডে প্রবেশ করে।প্রচন্ড জ্যামের কারণে সমস্ত গাড়ি আটকে যায়।এখন এর ভেতরে বসে বসে অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।পল্লবী ক্যাবের গ্লাসটা নামিয়ে বাইরে মাথাটা দিয়ে চারপাশটা দেখতে থাকে।মনে হচ্ছে না এতো তাড়াতাড়ি জ্যাম কাটবে।একরাশ বিরক্ততা নিয়ে ক্যাবের গ্লাসটা তুলে দিতে যাবে ঠিক তখন সামনের গলির দিকে চোখ পড়লো পল্লবীর।পারিজাত আর ওর সাথে দু’জন লোক দাঁড়িয়ে কথা বলছে।একটু পরে লোকগুলোর সাথে পারিজাত গলির রাস্তা দিয়ে ভেতরে চলে যায়।ব্যপারটা ভীষণ খটকার মনে হলো পল্লবীর কাছে।ওর মনে একটাই প্রশ্ন পারিজাত এই সময়ে এখানে কি করছে আর লোকগুলোই বা কে?আর কিছু না ভেবে ও গাড়ি থেকে নেমে পড়লো।তারপর সেই গলির দিকে যায়।ওর উদ্দেশ্য পারিজাতকে ফলো করা।কিন্তু এতোক্ষণে হয়তো দূরে চলে গিয়েছে,তাই ওদের নাগাল পাওয়া যাবে কিনা নিশ্চিত নয়।পল্লবী গলির রাস্তার ভেতরে পা বাড়ালো,দ্রুত এগোতে থাকে।এগোতে এগোতে এক পর্যায়ে পারিজাত আর ওর সঙ্গীরা পল্লবীর দৃষ্টিসীমার আওতায় চলে আসলো।পল্লবীর চলার গতি থেমে যায়।ধীরে ধীরে সামনে এগোতে লাগলো।পারিজাতের একেবারে কাছাকাছি চলে আসলে বিপদ।পল্লবী এখনো বুঝে উঠে পারছে না কিছুই,পারিজাতের কি এমন কাজ এখানে।ও একমনে নিজের স্বামীকে ফলো করতে থাকে।হাঁটতে হাঁটতে এক পর্যায়ে পারিজাত আর লোকগুলো একটা বাসার সামনে এসে থেমে যায়।সুযোগ বুঝে পল্লবী লুকিয়ে পড়ে তারপর আড়াল থেকে পারিজাতের সমস্ত কর্মকাণ্ড দেখতে থাকে।বাসার দরজা নক করতেই ভেতর থেকে একটা মেয়ে বেরিয়ে আসে।মেয়েটার বেশভূষা একদম ঠিক লাগছে না পল্লবীর কাছে,পারিজাত মেয়েটার হাত ধরে ভেতরে চলে গেলো।ওর সঙ্গীরা বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো।পল্লবীর আর বুঝতে বাকি রইলো না কি হচ্ছে এখানে।নিজের চোখকে যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না ও।এ কোন পারিজাতকে দেখছে।অবশ্য যে মানুষ লুকিয়ে অন্যের ওপর এ সি ড অ্যাটাক করতে পারে,আবার কিনা তাকেই বিয়ে করে তার মতো বহুরূপীর কাছে এসব কিছুই নয়।
পল্লবী আর একমূহুর্তও অপেক্ষা করলো না সেখানে।আবারো মেইন রোডের দিকে পা বাড়ালো।প্রজ্ঞা আবারও ওকে কল দেয়।
—কি হলো,এতো বারবার ফোন দিচ্ছিস কেনো?
—উফফফফ,তুই আসবি কখন বাড়িতে?
—একটু পরেই আসছি।
—তাড়াতাড়ি আয়,একদম লেইট করিস না।প্লিজ….
পল্লবী নিজেও জানে না প্রজ্ঞা ওকে এতো তাড়া দিচ্ছে কেনো।যদিও ঐ বাড়িতে আর ওর কদিন থাকা হবে একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন।পারিজাতের আসল রুপগুলো দেখার পরে তো এক মূহুর্তও নয়।মেইন রোডে এসে দেখলো জ্যাম কেটে গেছে অনেক আগেই।ক্যাবটাও আর নেই।পল্লবী নতুন একটা গাড়ি নিয়ে পারিজাতের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়না দিলো।বাড়ির গেটের সামনে আসতেই হঠাৎ পল্লবীর খেয়াল হলো আজকে তো ওর জন্মদিন।সারাদিনের ব্যস্ততার ভেতরে ভুলেই গিয়েছিলো।তার মানে প্রজ্ঞা এই কারণেই এতো তাড়া দিচ্ছিলো,হয়তো সেলিব্রেশনের জন্য।মনে মনে এই ধারণা পোষণ করে কলিং বেল প্রেস করলো পল্লবী।একটু পরেই প্রজ্ঞা এসে দরজা খুললো।অমনি সবাই ওকে হ্যাপি বার্থডে টু ইউ পল্লু বলতে বলতে উইশ করতে থাকে।ড্রয়িং রুম ভর্তি লোকজন।হঠাৎ করেই পল্লবী দেখতে পায় পারিজাত কেকের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।ওর মুখে যেনো স্বর্গীয় হাসি ঝলমল করছে।পারিজাতকে এই সময়ে বাড়িতে দেখে পল্লবীর ভেতরে আকাশ থেকে পতিত হবার মতো অনুভুতি হলো!
চলবে….