#একটি_রাতের_গল্প,পর্ব-২৫ এবং শেষ
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
রাতে পল্লবী আর পারিজাত ওদের রুমে।পল্লবী পারিজাতকে উদ্দেশ্য করে বললো।
—পারিজাত,একটা কথা বলি তোমায়।সত্যি সত্যি উত্তর দেবে।
—হ্যাঁ বলো।
—তুমি আজ বাইরে কোথাও গিয়েছিলে?
—কই না তো,কি হয়েছে বলো তো?
—আমি দেখেছি,তোমায় দেখেছি আমি।আজ তোমায় আমি কতগুলো লোকজনের সাথে একটা খারাপ জায়গায় ঢুকতে দেখেছি।
—কি বললে,তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে পল্লবী?আমি কোথায় যাবো,আর কিসের খারাপ কথার কথা বলছো তুমি?
—দাঁড়াও এক মিনিট।
পল্লবী ফোনটা বের করে ভিডিওটা পারিজাতকে দেখালো।পারিজাত সেটা দেখে পুরোপুরি স্তম্ভিত।
—আরে এটা তো আমি।আমি তোমার ওপর এ সি ড অ্যাটাক করেছি।না,এটা হতে পারে না।বিশ্বাস করো পল্লবী আমি এরকম কিছু করি নি।
—ঠিক আছে।বুঝলাম তুমি কিছুই করো নি।তাহলে ঐ এ সি ডে র শিশিটা কোথা থেকে এলো?যেটা আমি তোমার ড্রয়ারে পেয়েছিলাম।
—কোন শিশির কথা বলছো তুমি?আমার ড্রয়ারের ভেতরে যেটা রয়েছে?
—হ্যাঁ।
—আরে,ওটা কোনো এ সি ডে র শিশি নয়।তুমি একটা শিশি দেখে আমাকে কিনা সন্দেহ করে বসলে।
—দেখো পারিজাত,আমি তোমাকে শিশিটা দেখে সন্দেহ করছি না।আমি জানি ওটা হয়তো এ সি ডে র শিশি নয়।দেখতে যতোই এক রকম হোক না কেনো।কিন্তু যে ভিডিওটা দেখেছি আমি।এটা কিকরে মিথ্যে হয় বলো।
—আমি সত্যি কিছু বুঝতে পারছি না।আমি তোমার এতো বড়ো একটা ক্ষতি কেনো করবো বলো তো।আচ্ছা এই ভিডিওটা কে দিয়েছে তোমায়?
—আমি দেখি নি তাকে,তবে কেউ একজন তো দিয়েছে।হয়তো সে আমার ভালো চায়।
—আমার মনে হচ্ছে এগুলো সব একটা ষড়যন্ত্র।আমাকে কেউ ফাঁসাতে চাইছে।
—তোমাকে কে ফাঁসাবে পারিজাত,বলো তো আমায়।
—দাঁড়াও,তুমি কি বললে একটু আগে,আমার মতো কাউকে দেখেছো তাই না?দেখো এক রকম দেখতে অনেক মানুষ থাকতে পারে তো দুনিয়ায়।তোমার মনে কি একবারেও এই প্রশ্নটা জাগলো না যে ওটা সত্যি আমি কিনা?
—আমি এভাবে তো ভেবে দেখি নি।আমি তো তোমাকেই মনে করেছিলাম।
—পল্লবী আমাদের পুলিশকে পুরো বিষয়টা জানানো দরকার।পুলিশ আমাদের অবশ্যই সাহায্য করবে।
—ঠিক বলেছো, চলো তবে তাই করি।
এরপর পল্লবী আর পারিজাত পুলিশকে সবটা জানালো।আর ভিডিওটাও দিলো।সাথে পল্লবীর নম্বরে কল আসা সেই ফোন নম্বরটা।পুলিশ ফোন নম্বর ট্র্যাক করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।এরপর পল্লবীর সাহায্য নিয়ে সেই প তি তা পল্লীতে গেলো।সেখানে পারিজাতের মতো দেখতে ব্যক্তিকে হাতেনাতে ধরলো পুলিশ।এতেও পল্লবীও নিশ্চিত হয় যে আসলে পারিজাতের কোনো দোষ নেই,ও নির্দোষ।
লোকটাকে রিমান্ডে নেওয়া হলে সমস্ত গোপন তথ্য বেরিয়ে আসে।তার নাম রাজু।আজ থেকে ঠিক ছয় মাস আগে একজন মহিলার সাথে দেখা হয় তার।সেই মহিলার প্ররোচনায় সে পল্লবীর ওপরে এ সি ড অ্যাটাক করে।আর সেই মহিলা কেউ নয়।পল্লবীর বোন প্রজ্ঞা!হ্যাঁ প্রজ্ঞা।
পুলিশ প্রজ্ঞাকেও গ্রেফতার করে।এরপর তদন্তে আরোও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।আসলে প্রজ্ঞা কোনোভাবে জেনে গিয়েছিলো ও আর পল্লবী দুই আপন বোন নয়।ওদের জন্মেরও আগে প্রজ্ঞার মা প্রাচীকে জেল খাটতে হয়েছিলো।তার পেছনে সম্পূর্ণ ভূমিকা ছিলো পল্লবীর মা শিমুলের।এ জন্য প্রজ্ঞা মনে মনে ঠিক করে ও শিমুলের মেয়েকে শাস্তি দিয়ে নিজের মায়ের অপমান আর অন্যায়ের প্রতিশোধ নেবে।কিন্তু কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিলো না ও। হঠাৎ একদিন পারিজাতের মতো দেখতে রাজু নামে এক গুন্ডার খোঁজ পায় প্রজ্ঞা।রাজুকে দিয়ে পল্লবীর ওপরে এ সি ড অ্যাটাক করানো হলো।এরপর পল্লবীর বিয়ের পরে ওর কাছে সেদিনের রাতের রেকর্ড করা ডিডিও পাঠায়।যাতে পল্লবীর সমস্ত সন্দেহ এসে পড়ে পারিজাতের ওপর। আর ওদের সংসারটাও ভেঙে যায়।কারণ প্রজ্ঞা সেটাই চেয়েছিলো।প্রজ্ঞার প্রথম থেকেই ইচ্ছে ছিলো পারিজাতকে বিয়ে করা,কিন্তু পারিজাত ওকে প্রত্যাখান করে ওর বড়ো বোন পল্লবীকে বিয়ে করে।তাই প্রজ্ঞা- পল্লবী আর পারিজাতের সাথে এই ভয়ানক গেম খেললো।যদিও এসব করে কোনো লাভ হলো না।শেষ পর্যন্ত সবার সামনে ওর আসল রুপটা বেরিয়ে আসে।
–
–
–
–
বর্তমানে রাজু আর প্রজ্ঞা কারাগারে নিজেদের পাপের শাস্তি ভোগ করছে।এদিকে পল্লবী আর পারিজাত আবারো গুছিয়ে ওদের সংসারটা শুরু করেছে।পল্লবীকে বিদেশে নিয়ে সার্জারি করানো হয়,এখন ওর মুখমন্ডল আগের থেকে অনেকটা ঠিক হয়েছে।মুখের দাগ দূর হলেও নিজের প্রিয়জনের থেকে পাওয়া অন্তরের দাগ হয়তো কোনোদিন দূর হবে না।
(?সমাপ্ত?)