#একটি_রাতের_গল্প
পর্ব-০৪,০৫
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ
০৪
রাতের বেলায় আমার ফোনে একটা অচেনা নম্বরে ফোনকল আসে।কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা আতংকজনক নারী কন্ঠ ভেসে আসলো।
—হ্যালো পল্লব!পল্লব তুই কোথায় আছিস?
কন্ঠটা ভীষণ পরিচিত মনে হচ্ছে।আরে এটা তো শিমুল আপু।শিমুল আপুর কন্ঠ শুনে চমকে উঠলাম আমি।
—-শিমুল আপু তুমি,কি হয়েছে তোমার?
—আমাকে বাঁচা পল্লব,ওরা মেরে ফেলবে আমায়!
—কি বলছো এসব,কে মেরে ফেলবে তোমায়?
—তোর দুলাভাই!ও আজ শেষই করে ফেলবে আমাকে?
—সর্বনাশ হয়ে গেছে,আমাদের দুজনের গতকাল রাতের ঘটনা কেউ রেকর্ড করে নিয়েছে।আর এখন সেগুলো আমার স্বামী মানে তোর দুলাভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে।আমি জানি না কি হবে এখন।
—-আচ্ছা তুমি কোথায় আছো,ঠিকানাটা পাঠিয়ে দাও।আমি দেখি কি করা যায়।
—প্লিজ কিছু কর।
কলটা কেটে বিছানার ওপর ধপাশ করে বসে পড়লাম।কি করবো বুঝতে পারছি না কিছুই।আর লোক জানাজানির ভয় পাচ্ছি না আমি।লোকে সত্যি কথাই বলে পাপ কোনোদিন চেপে রাখা যায় না।যেকরেই হোক সেটা সবার সামনে প্রকাশ পাবেই।আমার আর শিমুল আপুর শারিরীক সম্পর্কের কথা সারা পৃথিবী জেনে যাবে,সবার সামনে আমি একটা খারাপ নোংরা ছেলে হিসেবে পরিচিত পাবো।নিজের মান সম্মানের বলি দেবার জন্য প্রস্তুত করছি নিজেকে।এই নিয়ে আক্ষেপ নেই,তবে মনে একটাই ভয় ওরা শিমুল আপুর কোনো ক্ষতি না করে ফেলে।
বাসা থেকে যতোদ্রুত সম্ভব বেরিয়ে পড়লাম।কে আমাদের ঘনিষ্ঠমূহুর্ত ভিডিও রেকর্ড করেছে সেই ভাবনা মাথা থেকে পুরোপুরি বের করে দিয়েছে,এই মূহুর্তে শিমুল আপুর কাছে পৌঁছানো সবথেকে বেশী দরকার।যে ঠিকানাটা আমাকে দিয়েছে সেখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত এগারোটা বেজে যায়।শিমুল আপু ওর এক বান্ধবীর বাসায় আশ্রয় নিয়েছে।আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলো।আমি চরম বিরক্ততার সাথে ওকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দেই।আমার ব্যবহারে ভীষণ অবাক হলো শিমুল আপু।আমি বেশ রাগান্বিত স্বরে শিমুল আপুকে প্রশ্ন করি-
—-কেনো আমার সাথে এটা করলে,আমার জীবনটা এইভাবে নষ্ট করে দিলে কেনো তুমি?
—আমি তোর জীবন নষ্ট করেছি….?
—নয়তো কি,তোমার না স্বামী বর্তমান।তুমি তারপরেও একজন পরপুরুষকে অবৈধ সম্পর্কের প্রস্তাব দাও কিকরে?
—তুই পরপুরুষ আমার কাছে?কি বলছিস এসব?
—হ্যা,জানি আমি তোমার খুব কাছের একজন বন্ধু।কিন্তু একজন বিবাহিত নারীর কাছে তার স্বামী ছাড়া সবাই পরপুরুষই হয়।এমনককি তার নিজের ভাইও।
—স্বামী….কে আমার স্বামী?কাকে স্বামী বলছিস তুই?
—কেনো তাজ ভাইয়া!
আমার কথা শুনে শিমুল আপু হাসতে লাগলো।আমি ওর এই অনর্থক হাসার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।
—তুমি এই সময়ে হাসছো?কিকরে পারছো বলবে আমায়?
—তুই কাকে স্বামী বলছিস পল্লব।যে পুরুষ সন্তান না জন্ম না দিতে পারার জন্য তার স্ত্রীকে দিনের পর দিন মারধর করে,তাকে শেষ করে দেবার হুমকি দেয়।সে স্বামী?যে নিজের বাবা মায়ের কথায় বিয়ে করা স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে পারে সে স্বামী?
—আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না তোমার কথা আপু?কি হয়েছে আমাকে খুলে বলো।
—আমার দুখের কথা কি শুনবি তুই?তুই তো আগে থেকেই আমাকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছিস!
লক্ষ্য করছি শিমুল আপু কথাগুলো বলছে আর চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে তার।এইভাবে আগে কখনো কাঁদতে দেখিনি ওকে।আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম।তারপর ওর কাঁধে হাত রেখে বলি-
—কি হয়েছে তুই শুধু একটিবার বল আমায়?প্লিজ আপু বল।
—তুই তো জানিস তাজের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে এতোগুলো বছর।আমি ওদের বংশে একটা সন্তান দিতে পারছি না বলে ওর আর ওর পরিবারের ক্ষোভের শেষ নেই আমার ওপরে।ওরা আমাকে সবকিছুর জন্য দায়ী মনে করে।আমি নাকি অপয়া,আমার পাপের জন্য পেটে সন্তান আসছে না।আমি তাজকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করি কিন্তু ও আমাকে তো বুঝলোই না উল্টো নিজের বাবা মায়ের অন্ধ বিশ্বাসের পক্ষ নিলো।আমি এর প্রতিবাদ করলেই আমার ওপর নেমে আসতো অকথ্য নির্যাতণ।আমাকে ছেড়ে দেবার হুমকি পর্যন্ত দিতো।এখন তুই বল,আমি বাপ মা মরা মেয়ে।তাজ আমাকে ওর পরিবার থেকে তাড়িয়ে দিলে কোথায় যেতাম আমি।আমার যে মরা ছাড়া উপায় ছিলো না।এরপর সবকিছু আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিলাম।তাকে ডাকতে লাগলাম তিনি যেনো একটা সন্তান দেন আমায়।কিন্তু জানি না কোন পাপের জন্য উনি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন আমার থেকে।আল্লাহও দয়া করলেন না আমার ওপর।এরপর আমি ধীরে ধীরে বুঝতে পারি আসলে সমস্যাটা আমার না,তাজের।ওর ভেতরে সন্তান জন্ম দেবার ক্ষমতা নেই।অথচ দিনের পর দিন নিজের অপারগতার দায় আমার ওপর চাপিয়ে এসেছে অমানুষটা।আমি ওর বাবা মার কাছে সবকিছু খুলে বলি।ভেবেছিলাম তারা হয়তো বুঝবে না কিন্তু তার উল্টো ফল হলো।ওরা কেউ আমার কোনো কথা কানে তুললো না।সমানে আমাকে নির্যাতণ আর ছেড়ে দেবার হুমকি দিতে থাকে।একবার আইনেরও আশ্রয় নিয়েছিলাম।কিন্তু চতুর তাজ আর ওর ফ্যামিলি পুলিশদের ঘুষ খাইয়ে আইনের মারপ্যাচ থেকে বেরিয়ে আসে।আমার ওপরে নির্যাতণের মাত্রা বাড়তেই থাকে।তুই বিশ্বাস কর,আমার যদি বাবা মা বেচে থাকতো বা কোথাও যাওয়ার একটা ভালো ঠাঁই থাকতো সেখানেই চলে যেতাম।কিন্তু আমার ভাগ্য এতোটাই খারাপ সেই রাস্তাও বন্ধ ছিলো।এরপর আমার তোর কথা মাথায় আসে।একটা কঠিন সিধান্ত নিয়ে বসি আমি।তাজ আর ওপর পরিবারের সাথে তো শুধু একটা বাচ্চা নিয়ে এতো ঝামেলা।ওদের টর্চারের হাত থেকে বাঁচতে একটা বাচ্চা প্রয়োজন আমার।সেটা যেকোনো প্রকারে।আর সেই মাধ্যমটা ছিলি তুই।তোর দ্বারা আমি মা হবার সিধান্ত নেই।আমি জানতাম তুই ঠিক আমাকে এই মহাসংকট থেকে উদ্ধার করতে পারবি।তাই তোর কাছে ছুটে আসি।আমি এটাও জানি এখন তোর অংশ ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে আমার ভেতরে।তাজ সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে ও এই বাচ্চার দ্বায়িত্ব নিতে পারবে না।উল্টো আমায় আটকে মারধর করেছে।দেখ কি অবস্থা করেছে আমার!
এই বলে শিমুল আপু ওর পিঠটা আমাকে দেখায়।এক পলক সেইদিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলাম আমি।ইসসসস!মানুষকে মানুষ এইভাবে টর্চার করে।শিমুল আপুকে জা নো য়া র গুলো নিশ্চিত মেরেই ফেলবে।আর এই ঘটনার পরে তো সেটা আরোও নিশ্চিত।শিমুল আপুর চোখের সমস্ত জল ইতিমধ্যে শুকিয়ে গিয়েছে।কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে।
ইতিমধ্যে রুমের দরজায় ধাক্কা মেরে কেউ ভিতরে ঢুকে পড়ে।সে আর কেউ নয়,তাজ ভাইয়া।তাজ ভাইয়া গিয়ে শিমুল আপুর চুলের মুঠি চেপে ধরলো।
—কি রে,মার খেয়েও লজ্জা নেই তোর।এখন আসছিস একটা হাঁটুর বয়সী ছেলের সাথে নষ্টামী করতে।
—মুখ সামলে কথা বলুন,কাকে কি বলছেন…?
(আমি এগিয়ে গিয়ে বলি)
—এই তুমি একদম চুপ থাকো।তোমাদের দুজনের নষ্টামীর সব প্রমাণ আছে আমার কাছে।আর তুমি এই বয়সেই দেখি পাক্কা খেলোয়ার হয়ে উঠৈছো।কে দিয়েছে এতো ভালো ট্রেনিং?শিমুল আপু….?
—-তোমার যা বলার আমাকে বলো,পায়ে পড়ি,ওকে কিছু বলো না!
(শিমুল আপু গিয়ে তাজ ভাইয়ার পা জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো)
—আমার পা ছাড় বলছি,আর তোর কোনো কথা শুনবো না আমি।তোকে তে ডিভোর্স দিতেই হবে এবার।
তাজ ভাইয়া রেগেমেগে শিমুল আপুকে উদ্দেশ্য করে বলে।
—আপু তুমি পা ছাড়ো ওর,ওর মতো একটা মানুষের পা ধরে কেনো নিজেকে ছোটো করছো!
—এতো বড়ো বড়ো কথা বলছো,কী হও তুমি ওর…শুধু দেখো আমি ওর কি অবস্থা করি!
—কি করবে তুমি,ছেড়ে দেবে ওকে?দাও ছেড়ে,তোমার মতো মানুষরুপী জা নো য়া রে র সাথে সংসার করার থেকে না করাই ভালো।
—পল্লব তুই চুপ কর,কি বলছিস এসব?ও আমাকে ছেড়ে দিলে কোথায় যাবো আমি…
—তুমি আমার সাথে যাবে!
আমার কথা শুনে তাজ ভাইয়া হাসতে লাগলো।
—কি বলে এই পুচকে,অন্যের বৌকে তার সামনে নিয়ে যাবার কথা বলছে!হাহাহা,সাহস দেখে হাসি পাচ্ছে আমার।
—কিসের বৌ?তুমি তালাক দেবে ওকে।
—পল্লব তুই চুপ কর।
—হ্যাঁ,তালাক তো ওকে দেবোই আমি।ওর মতো নষ্টা মেয়েকে আমি আর আমার সংসারে রাখবো না।তারপর দেখি ওর কি গতি হয়?রাস্তায় পঁচে গলে ম র তে হবে।
—রাস্তায় পঁচে গরে ম র তে হবে না,সেই ব্যবস্থা আমি করবো।
—তুমি করবে?কি করবে তুমি শুনি?
—আমি ওকে বিয়ে করবো….শুনতে পেলে কি বলেছি আমি।
আমার কথা শুনে শিমুল আপু যেনো স্তম্ভিত হয়ে গেলো,তাজ ভাইয়া হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমার মুখ থেকে উচ্চারিত শব্দ পাথর বানিয়ে দিয়েছে দুজনকে।আসলে ওরা দুজনের কেউ ভাবতেও পারেনি আমি এরকম একটা কঠিন সিধান্তের কথা জানাবো!
চলবে…….
#একটি_রাতের_গল্প
পর্ব—০৫
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ
—ছিহ,এসব কি বলছিস পল্লব?মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর?
—না আমি একদম ঠিক বলছি।আর যা বলছি ভেবে চিন্তেই বলছি।আমি বিয়ে করলে একমাত্র তোকেই করবো।
—বাহ….তাহলে এই ছিলো তোমাদের দুজনের মনে।তলে তলে এতোদূর…(তাজ ভাইয়া)
—-আপনি চুপ করুন তাজ ভাইয়া।আর আপনার এতো প্রবেলেম কেনো হচ্ছে বুঝতে পারছি না।আপনি তো একটু আগেই বললেন শিমুল আপুকে ছেড়ে দেবেন।তাহলে?
—-সে তো আমি ছাড়বোই,আর তোমাদের দুজনের ব্যবস্থাও আমি করবো।বিশেষ করে তোমার পুচকে।যখন সারা দুনিয়া তোমার অপকর্মের কথা জানতে পারবে কিভাবে মুখ লুকোবে তুমি?
তাজ ভাইয়ার কথা শুনে হঠাৎ ভিডিওর কথা মাথায় আসলো আমার।হ্যাঁ,এটাই সুযোগ।যদি এখন এই ভিডিওর বিষয়ে কিছু জানা যায়।
—আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলুন,এই ভিডিওটা আপনি পেলেন কোথায়…কে দিয়েছে আপনাকে?
আমার কথা শুনে তাজ ভাইয়া হোহো করে হেসে উঠলো।
—কে দিয়েছে,আমি সেটা বলবো তোমায়?তুমি আমায় ভাবোটা কি?
—দেখুন আমার সাথে কিন্তু আপনার কোনোদিন কোনো শত্রুতা ছিলো না।আপনি শিমুল আপুকে ছেড়ে দিবেন তো।দেন।তারপর আপনি আপনার মতো থাকবেন।আমরা কেউ নাক গলাতে যাবো না।দয়া করে এই ভিডিওটা কে দিয়েছে আপনাকে তার নামটা বলুন?আমারও জানা দরকার আবার এতো বড়ো শত্রুটা কে,কে পেছন থেকে এভাবে আমার পিঠে ছুঁড়ি মারছে?
—-আমার মনে হয় তোমার সেটা না জানাই ভালো।যতোটুকু জানতে পেরেছো তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকো!
—-কি জানতে পেরেছি আমি?
—যে ভিডিওটা দিয়েছে তার নাম বললেও তুমি হয়তো বিশ্বাস করতে পারবে না।সে খুব কাছের মানুষ তোমার…
—কাছের মানুষ….?আমার কোন কাছের মানুষটা এতো বড়ো একটা জঘন্য কাজ করলো আমার সাথে,তার নামটা বলুন প্লিজ।
—-আমি আর কিছু বলতে পারবো না তোমায়,চললাম….
আমার কথার কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে তাজ ভাইয়া হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।শিমুল আপু বেরিয়ে যাবে আমি ঠিক তখন ওর হাতটা ধরি!
—তুমি কোথায় যাচ্ছো?
—কোথায় আর যাবো আমি,আমার ঐ জাহান্নাম ছাড়া যাওয়ার আর জায়গা আছে।
—না,তুমি আর তাজ ভাইয়ার বাড়িতে যাবে না…
—তাহলে কোথায় যাবো?
—তুমি আমার সাথে যাবি…
—দেখ ছেলেমানুষি করিস না।এটা হয় না।আমি কেনো তোর সাথে যেতে যাবো?আমাকে যেতে দে প্লিজ।
—তুমি গেলে ওরা আবার তোমার ওপর টর্চার শুরু করবে।যা বলছি শোনো,যেও না।
—তুই বলছিস আমি তোর সাথে যাবো।ঠিক আছে তা না হয় গেলাম।কিন্তু কতোদিন?কতোদিন আমি তোর বাড়িতে গিয়ে উঠে থাকবো,সেই তো ফিরতেই হবে আমায়!
—তোমাকে আর আমার বাড়ি থেকে ফিরতে হবে না।আমি সেই ব্যবস্থা করবো।বিয়ে করবো তোমাকে আমি।
—এগুলো পাগলামি ছাড়া কিছু না।তোমার আর আমার বিয়ে…এটা হয় কখনো?
—কেনো হয় না?আর একটা কথা বলো,যদি কালকের রাতের জন্য তোমার গর্ভে সত্যিই আমার বাচ্চা আসে তো তখন কি করবে তুমি?তাজ ভাইয়া কোনোদিন মেনে নেবে ঐ বাচ্চা।সে তো এখন সবটা জানে।
—-কেউ আসবে না,আসার আগেই তাকে শেষ করে দেবো আমি।
—ছিহ!কি বলছো কি এসব?তুমি জানো এটা আরোও বড়ো পাপ।আর তার থেকেও বড়ো কথা আমি আমার সন্তানকে ন ষ্ট করতে দেবো না তোমায়।ওকে আমি আমার পরিচয়ে বড়ো করবো।
—বড্ড পাকা পাকা কথা বলছিস,তোর মুখে এতো ভারী ভারী কথা মানায় না।চুপ কর।
—আচ্ছা আর বলবো না,তবে আমি তোমাকে এতো বড়ো একটা অন্যায় করতেও দেবো না।এখন আমার সাথে চলো…
শিমুল আপু কিছুতেই আমার সাথে যেতে চায় না।আমি একপ্রকার জোর করে ওকে আমার গাড়িতে নিয়ে গিয়ে উঠাই।তারপর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেই।জানিনা বাড়ির লোকজনকে কিভাবে সামাল দেবো।যাই হোক কিছু একটা বুঝিয়ে বলতে হবে ওদের।
হঠাৎ ফোনে একটা মেসেজ নোটিফিকেশন আসলো।ফোনটা ওপেন করতেই চোখদুটো ছানাবড়া আমার।আবারো সেই আইডি থেকে মেসেজ।
—কেমন আছো পল্লব?
আমি কোনো রিপ্লাই দিলাম না।
—কি হলো কথা বলছো না কেনো,একটু আগের তোমার ভিডিওটা দেখলাম আবার।?
—হ্যাঁ,আমি জানি।আমাকে এটা মনে করিয়ে দিতে হবে না আমার কোনো সিক্রেট জিনিস আছে আপনার কাছে।
—তুমি কিন্তু বেশ হ্যান্ডসাম।তবে কাপড় ছাড়া আরোও বেশী হ্যান্ডসাম লাগে।
–ছিহ!কি শুরু করেছেন আপনি এসব…?প্লিজ স্টপ।প্লিজ।
—তোমার দেহের ওপর থেকে চোখ ফেরাতে পারছি না আমি পল্লব,প্লিজ একবার ভিডিওর এই গেটাপে ধরা দাও না আমার কাছে।
একবার নিজের চোখে দেখতে চাই তোমায়,
—কি বলতে চাইছেন আপনি?
—তুমি ভালো করেই জানো,আমি কি বলতে চাইছি।তুমি ছাড়া আমার যন্ত্রনা কে বুঝবে!
—শাট আপ,জাস্ট শাট আপ!
—আমি কথা দিচ্ছি এবার তোমার আমার অন্তরঙ্গ দৃশ্যের ভিডিও করবো না আমি,তোমায় আর ব্ল্যাকমেইলও করবো না।একবার জাস্ট…জাস্ট একবার।
—কি একবার…?
—একবারের জন্য হলেও আমি তোমার সাথে সময় কাটাতে চাই।তোমার ছোঁয়া না পেলে আমি নিজেকে শান্ত করতে পারবো না কিছুতেই।মরে যাবো আমি।তোমার যন্ত্রনায় আমি নিজেকে জর্জরিত করে ফেলতে চাই পল্লব।
নাহ,আর পারা যাচ্ছে না।এর নোংরামি রীতিমতো বেড়েই চলছে।ফোনের ডাটাটা অফ করে গাড়ির সিটের ওপরে ছুঁড়ে মারলাম।এমনিতেই তাজ ভাইয়াদের সাথে ঝগড়া করে মুডটা অফ,তারওপর এই বিরক্তিকর মেসেজ মেজাজটাই বিগড়ে দিয়েছে।
বাসায় ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হলো আমাদের।শিমুল আপুকে গেস্ট রুমে রেখে আমি আমার ঘরে শুতে গেলাম।এমনিতেই ভীষণ টায়ার্ড হয়ে আছি,গা হাত পা ছেড়ে দিয়েছে একেবারে।যে পোষাকে ছিলাম,সেভাবেই শুয়ে পড়লাম।
–
–
–
মাঝরাতে একটা অদ্ভুদ শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার।শব্দটা যেনো ঐপাশের ফ্লোরের দিক থেকেই আসছে।কিন্তু ওদিকে তো স্টোর রুম।স্টোর থেকে এতো রাতে কিসের আওয়াজ আসছে?আমি স্টোর রুমের ভেতরে যেতেই কেউ পেছন থেকে লাঠি দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে।একটা অস্ফুট চিৎকার দিকে মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম আমি।চারদিকটা ক্রমশ অন্ধকার হয়ে আসছে আমার।ভীষণ যন্ত্রনা হতে লাগলো মাথায়।বুঝতে পারলাম আমি জ্ঞান হারাচ্ছি।ঠিক তখন নিজের চোখে একটা অস্পষ্ট মুখ দেখতে পাই।যার হাতে একটা শক্ত মোটা লাঠি।নিজের কাছে চরম অবিশ্বাস্য প্রতিভাত হলেও সে আর কেউ নয়,শিমুল আপু নিজেই!ওর হাতের লাঠি বেয়ে এক ফোঁটা উষ্ণ রক্ত আমার গালের ওপরে পড়লো….
চলবে…..