#একটুখানি_আশা,পর্ব ৭,৮
#মেহরাফ_মুন(ছদ্মনাম)
#পর্ব ৭
মুনের চিৎকারে আদ্রাফ হতবম্ব।
-‘স্টপপপ।’ আদ্রাফ রেগে ধমক দিয়ে উঠলো।
মুন আদ্রাফের ধমক খেয়ে একটু চুপ হলো আর ততক্ষনে ওর চিৎকারের আওয়াজে সম্পূর্ণ বাড়িতে আলো জ্বলে উঠলো, ফুফিরা সবাই উঠে গিয়েছে হয়তো। মুন এখনো ঐভাবে চোখ বন্ধ করে মুখ কিচে আদ্রাফের হাতে আবদ্ধ রইল। আদ্রাফ তা দেখে রেগে ওর নিজের হাতের বাঁধন ছেড়ে দিল। আদ্রাফ মুনের হাত ছেড়ে দিতেই মুন নিজের ব্যালেন্স হারিয়ে মেঝেতে পড়ে গেল। আদ্রাফ সেদিকে পাত্তা না দিয়ে গটগট করে মুনকে ঐভাবে ফেলে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।
-‘আহহ, আমার কোমর।’ মুন আবারও চিৎকার দিয়ে উঠলো।
-‘আরে মুন মা। এভাবে চিৎকার দিলি ক্যান? আর তুই মেঝেতে ক্যান?’ ফুফি দৌড়ে এসে মুনকে তুলতে তুলতে অবিশ্বাস্য স্বরে বলে উঠলো।
-‘আরে ফুফি, এমনি পা পিছলে পড়ে গেছিলাম।’
-‘আহারে! একটু সাবধানে চলবি না মা? দেখ তো এখন।’ফুফি মুনকে উদ্দেশ্য করে বলল।
-‘বাই দ্যা ওয়ে মুন তুমি এখানে পিছলে কীভাবে পড়লে?’শাফিন ভাবুক স্বরে বলল।
-‘আরে পা মচকে পড়েছে হয়তো বা, না আপু?’অহু বলে উঠল।
-‘তো ‘ভুত’ বলে চিৎকার কেন দিলে মুন?’ শাফিন আবারও বলে উঠলো।
-‘তোমাদের বাসায় ভুতের মত দানব একটা রাত বিরাতে ঘুরে তাই।’ মুন আনমনে বিড়বিড় করে বলে উঠলো।
-‘আরে দূর শাফিন তুই যা তো। মেয়েটা এমনি পড়ে গিয়ে কোমরে ব্যথা পেল আর তুই সিরিয়াস বিষয়েও মজা নিচ্ছিস?’ ফুফি রাগীস্বরে বলে উঠলো।
-‘মা তোমরা এত রাতে এখানে কী?’এসবের মাঝে আদ্রাফ আবার দরজা খুলে বলে উঠলো।
-‘এই দেখ না। মেয়েটা পড়ে গেল ব্যথাও পেয়েছে তাই আসছি।’ফুফি বলল।
-‘তো পড়ে গিয়েছে ব্যথার ওষুধ দিলেই তো হয়। পুরো বাড়ি চিৎকার করে মাথায় তোলার কী আছে?ইডিয়ট!’মুনের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে কথাগুলো বলে আবারও শব্দ করে দরজাটা বন্ধ করে দিল।
-‘আমার ঘুমটার বারোটা বাজায় দিলে।’ শাফিন হায় তুলে চলে গেল রুমের দিকে।
-‘ফুফি আমি ঠিক আছি। তোমরা ঘুমাও গিয়ে। শুভ রাত্রি।’
-‘আচ্ছা, কিছু লাগলে বলিস।’ এই বলে ফুফিরা চলে গেল আর মুন আদ্রাফের রুমের দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে একটা বারি মেরে গালি দিতে দিতে রুমে ঢুকে গেল।
–
–
সূর্যের তির্যক রশ্মি চোখে পড়তেই মুন চোখ খুলে দেখল ফুফি দাঁড়িয়ে আছে।
-‘শুভ সকাল মা। উঠে পর। অনেক বেলা গড়িয়েছে। উঠে নিচে আয়।’ বলেই ফুফি চলে গেল।
মুন হাতের পাশে মোবাইল নিয়ে টাইমটা দেখতেই এক প্রকার লাফিয়ে উঠলো। ‘এত বেলা পর্যন্ত ঘুমালাম!’ মুন বিড়বিড় করে কিছুসময় বসে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে দেখল সোফার উপর অহনা বসে টিভি দেখছে আর কেউ নেই।
-‘শুভ সকাল আপু।’মুনকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে মিষ্টি হেসে অহনা বলল।
-‘শুভ সকাল। আর কেউ নেই? দেখছি না যে কাওকে?’ মুন অহনার পাশে বসতে বসতে বলল।
-‘ওদেরকে একসাথে দিনে আর দেখা যায় না। রাতেই সবাইকে দেখবি একসাথে। তোর ফুফা আর আদ্রাফ অফিসে চলে যায় আর শাফিনের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। আজ এখন উঠে নাস্তা না করেই কই জানি চলে গেল।’ ফুফি কিচেন থেকে আসতে আসতে মুনের উত্তর দিল।
-‘এগুলো খেয়ে নেয়।’ ফুফি নাস্তার প্ল্যাট দিয়ে আবারও কিচেনে চলে গেল।
-‘একটা কথা জানো আপু?’ অহু পাশ থেকে ফিসফিস করে বলে উঠলো।
-‘হ্যাঁ বলো।’নাস্তা মুখে দিতে দিতে বলে উঠলো মুন।
-‘শাফিন ব্রো তাঁর গার্লফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে গিয়েছে। আজ সারাদিন ট্যুর দিবে তাই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেছে।’ অহু আবারও ফিসফিস করে বলল।
-‘কী বলো?’ মুন অবিশ্বাস্যভাবে বলল।
অহু ‘হ্যাঁ’ সম্বোধনে হাসিমুখে মাথা নাড়লো।
————————
এভাবেই পুরো দিনটা হাসিমুখে কেটে গেল। মুন রুমের ব্যালকনিতে বসে আছে। অহনা তাঁর বফ এর সাথে দেখা করতে গিয়েছে মুনকেও যেতে বলেছিলো কিন্তু মুন কাবাব মে হাড্ডি হতে চায় না আর তাঁদের পার্সোনাল টাইমে না যাওয়াই ভালো তাই মুন যায়নি।
-‘এই যে ভীতুর ডিম।’
কারো পুরুষালি কণ্ঠ শুনে মুন পিছনে তাকিয়ে দেখল তাঁর রুমের দরজায় হেলান দিয়ে আদ্রাফভাইয়া দু’হাত বুকে গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।
-‘আপনি? আর ভীতুর ডিম কে?’ মুন রাগিভাবে আদ্রাফের সামনে গিয়ে বলল।
-‘কে ভীতু সেটা তো কাল রাতেই বোঝা গেছে।’
-‘দেখুন আপনি কিন্তু আমার সহ্যের সীমা লঙ্গন করছেন। রাগ উঠলে আমি কী করব এটা নিজেই জানি না।’মুন হাতের আঙ্গুল আদ্রাফের দিকে তাক করে বলল।
-‘আরে মুন মা। রেডি হয়ে নেয় তাড়াতাড়ি। আমি আদ্রাফকে তোর জন্য অফিস থেকে আসতে বলছিলাম। তোর কী কী লাগবে সব কিনে নিয়ে আসিস। আদ্রাফের কাজ আছে সে তোকে সব কিনে দিয়ে আবার বাইরে যাবে।’ ফুফি রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল।
ফুফি রুমে ঢুকতেই আদ্রাফ ভাইয়া বেরিয়ে গেল।
–
–
মুন দ্রুত একটা নেভি ব্লু কুর্তি পড়ে একপাশে বিনি করে হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো। নিচে সোফায় আদ্রাফ ভাইয়া বসে ফোন দেখছে। মুন নিচে নামতেই ফুফি এগিয়ে এসে মুনের তুটনি ধরে বলল,’মাশ’আল্লাহ! আমার মা টা। নজর না লাঘুক কারো।’
মুন মুচকি হাসলো। ফুফি যখন এসব বলতে ব্যস্ত তখন আদ্রাফ ভাইয়া সোফা ছেড়ে উঠে মুনের দিকে এক নজর তাকিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। বাইরে বের হতে হতে বলে উঠলো,’মা দ্রুত।’
-‘আচ্ছা যা। আদ্রাফের সাথে সাথে থাকিস।’
মুন হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেল বাসা থেকে। বের হতেই দেখল আদ্রাফ গাড়িতে উঠে ড্রাইভিং সিটে আগে থেকেই বসে আছে যেন মুন উঠার অপেক্ষা। মুন গাড়িতে উঠে বসতেই আদ্রাফ গাড়ি চালানো শুরু করল।
শপিং এ পৌঁছাতেই আদ্রাফ গাড়ি থেকে নেমে মুনকে ওর পিছন পিছনে অনুসরণ করতে বলল।
শপিংটা অনেক বড়ো আর অনেক মানুষের আনা-গুনা। কেউ যদি জায়গা না চিনে যে কেউ নিশ্চিত হারিয়ে যাবে। অনেক ভিড়। আদ্রাফ একে একে দোকানে ঢুকছে আর মুনকে এটা ওটা নিবে কিনা জিজ্ঞেস করছে। আদ্রাফ ভাইয়া মুনকে ফেলে অনেক আগে আগে হাটছে। অনেক সময় অনেক দূরেই চলে যাচ্ছে। কিছুসময় পর পর মুন দৌড়ে আদ্রাফের কাছে আসছে। এক পর্যায়ে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরিহিত এক মেয়ে আদ্রাফের কাছে আসলো আর কোশলাদি বিনিময়ের পর মুনের দিকে তাকিয়ে ইংলিশে বলল কে সে। আদ্রাফ মুনের দিকে না তাকিয়েই সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে বলল,’মাই কাজিন।’
বোঝায় যাচ্ছে আদ্রাফের ফ্রেন্ড। এভাবেই কথা বলতে বলতে মুনকে ফেলে অনেক দূর এগিয়ে গেল এরা। মুন এতক্ষন চোখে চোখে রাখছিলো এক পর্যায়ে এত মানুষের ভীড়ে হারিয়ে ফেলল ওদের। মুন দৌড়ে ওদিকেই গেল যেখানে শেষবার আদ্রাফ ভাইয়া আর মেয়েটিকে দেখা গিয়েছিল। ওখানে গিয়েই দেখল তিন-চারদিক থেকে গলি। মুন ভেবে পাচ্ছে না সে কোনদিক দিয়ে যাবে। তবুও নিজেকে যথাসাধ্য শক্ত করে এগিয়ে গেল কিন্তু না ঐদিকে আদ্রাফের ছিটে-ফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। মুন সব গলিই একে একে দেখল। একসময় খুঁজতে খুঁজতে শপিং এর বাইরে বের হয়ে গেল। মুন কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। এই অচেনা জায়গায় কী করবে সে? এত্তো বড়ো শপিংমলে ঘুরেও আদ্রাফকে পেলো না। আদ্রাফ ভাইয়া কী তাঁর কথা একটুও মনে করল না? সন্ধ্যা নেমে আসছে এই অচেনা জায়গাটিতে। সে ফুফির বাসার ঠিকানাটাও এখনো জানে না আর সিম মাত্রই কিনতে এলো আজ। মুন বসে পড়লো রাস্তায়। আশেপাশে কয়েকজন ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে মুনের দিকে কিন্তু সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে আবারও। মুন মাথা চেপে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো। এই প্রথম নিজেকে এত অসহায় লাগছে। কী করবে সে এখন?
#চলবে ইনশাআল্লাহ
(অগোছালো হওয়ার জন্য দুঃখিত। ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন দয়া করে।)
#একটুখানি_আশা
#মেহরাফ_মুন(ছদ্মনাম)
#পর্ব ৮
মুনের কান্না করতে করতে হিচকি উঠে গেল। সে হাটুমুড়ে বসে মাথা নিচু করে চোখের পানি ছাড়তে রইল। এত এত মানুষের আনা-গুনাতে হঠাৎ ওর সামনে দুইটা পা স্থির হলো। মুন মুখ তুলে তাকিয়ে দেখল আদ্রাফ ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। মুন কিছু বুঝে উঠার আগেই আদ্রাফ ওর হাত ধরে টেনে তুললো। আদ্রাফ মুনের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে হাঁটা ধরলো আর আদ্রাফ এটার ব্যাপারে কোনো বাক্য বিনিময় করেনি। শপিং এর বাকি কাজগুলো আদ্রাফ মুনের হাত মুঠোয় নিয়েই করেছিল। গাড়িতে উঠার পরই হাত ছেড়েছিলো। মুন তো কেঁদে-কেটে অবস্থা খারাপ তাই গাড়িতে উঠার পরই ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুম ভাঙলো ফুফির ডাকে। আশেপাশে তাকিয়ে বুঝলো সে গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়েছে আর পাশে ড্রাইভিং সিটে আদ্রাফভাইয়া নেই। গাড়ি ফুফির বাসার সামনে পার্কিং এরিয়াতে। মুন বুঝতে পারলো না আদ্রাফ ভাইয়া তাঁকে পৌঁছার পর ঘুম থেকে জাগালোও না নিজেই চলে গেল।
-‘তুই ঘুমাচ্ছিলি আদ্রাফ আর ডাকেনি, মাত্রই এসে আমাকে বলেছে তুই গাড়িতে ঘুমাচ্ছিস আমি যেন ডেকে তুলি। আয় রুমে গিয়ে ঘুমা।’ ফুফি হাসিমুখে বলল।
মুন বাসায় ঢুকে ফুফিকে বলে রুমে যাওয়ার সময় আদ্রাফ ভাইয়ার রুমে চোখ পড়লো। দরজাটা পুরোপুরি বন্ধ না, ভেতরে ওয়াশরুম থেকে শব্দ আসছে হয়তো ফ্রেশ হচ্ছে। মুন আর কিছু না ভেবে নিজেও রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই দেখল অহনা বসে আছে। অহনা মুনকে দেখেই হাত ইশারায় মিষ্টি করে হাসলো। মুন অহনার সাথে বসতেই সে আজকের দিনের সব গল্প ঝুরে দিল। এর ফাঁকে মুন নতুন সিম মোবাইলে ঢুকিয়ে বাবা-মার সাথেও কথা বলল।
রাতের খাবারের সময় ফুফা বলল কলেজ এডমিশনের কথাটা। তিনি সবকিছু ঠিক করে ফেলেছেন এখন শুধু যাওয়ার পালা। পরদিন থেকে কলেজ শুরু তাই মুনকে তাড়াতাড়ি শুয়ে যেতে হবে নাহলে ক্লাসে যথারীতি পৌঁছাতে পারবে না।
পরদিন সকালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলো মুন। ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই ফুফি বলল,’এই দেখ না। তোর ফুফার কাজ পড়ে যাওয়াতে সে তাড়াতাড়ি অফিসে চলে গিয়েছে নাহলে ও নিয়ে যেত। আদ্রাফ অফিসে যাচ্ছে তুই ওর সাথে যা। ওকে অনেক বলে রাজী করিয়েছি। ও তোকে কলেজ গেটে নামিয়ে দিবে। এখন নাস্তা করে নেয় তারপর রেডি হয়ে আয়। আদ্রাফ অফিসে যাবে আর তোর ভার্সিটির সময় হয়ে আসছে।’
-‘আচ্ছা, ফুফি অহনা আর শাফিনকে দেখছি না যে? তারা কী কলেজে যাবে না?’
-‘ওদের দুইজনেই দুপুরের আগে ঘুম থেকে উঠেই না। অহনা একটু তাড়াতাড়ি উঠে কলেজ যায় আর শাফিন তো ভুলেই যায় না কলেজ। মাঝে মাঝে একদিন যায়। এতটুক। সারাদিন বাইরে বাইরে ঘুরবে। বললেও শুনে না। তুই খেয়ে নেয় তাড়াতাড়ি, এদের কথা বলতে গেলে শেষ হবে না।’
মুন ‘হ্যাঁ’ বোধক মাথা নেড়ে খাওয়াই মনোযোগ দিল। খেয়ে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য তৈরী হতে সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় দেখল আদ্রাফ ভাইয়া নামছে। মুন সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে আদ্রাফের দিকে তাকালো। আদ্রাফকে দেখে মুনের কালকের কথা মনে পড়ে একরাশ রাগ এসে জন্ম নিলো। মানুষ এতটা কেয়ারলেস কেমনে হতে পারে? অন্তত একজন অতিথি হিসেবে তো খেয়াল রাখা উচিত। এমন একটা ভালো পরিবারে আদ্রাফের মত এমন একটা অসভ্য লোক কীভাবে হলো তা মুন ভেবে পায় না।
আদ্রাফ এক পলক মুনের দিকে তাকিয়ে দ্রুত নিচে নেমে পড়লো। আদ্রাফের দ্রুত নেমে যাওয়া দেখে মুন ভেংচি কেটে রুমে ঢুকে গেল।
মুন রুমে গিয়েই একটা ব্লু কালারের লং কুর্তি, ব্ল্যাক জিন্স আর ব্ল্যাক উড়না গলায় পেঁচিয়ে নিলো পড়ে নিলো। আর চুলগুলো ক্লিপ দিয়ে আটকে নিলো। এরপর ব্যাগ নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
মুন ব্যাগ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে দেখতে পেলো আদ্রাফ সোফায় বসে ফোন স্ক্রলিং করছে। মুন আদ্রাফকে দেখে বিড়বিড় করে গালি দিতে দিতে নিচে নামতেই ফুফি হাসিমুখে এগিয়ে আসলো মুনের দিকে।
-‘মাশ’আল্লাহ মুন মা। তোকে দারুন লাগছে। শ্যামবতী। শ্যামলার মধ্যে ভীষণ মায়াবী তুই।’
এসব বলার মাঝেই আদ্রাফ ভাইয়া ফুফিকে তাঁর কাজ আছে আর যা করার তাড়াতাড়ি করতে বলে বাসার বাইরে বেরিয়ে গেল।
-‘আচ্ছা ফুফি আমি যায় তাহলে।’
-‘সবকিছু ঠিকঠাক নিয়েছিস?’
-‘জি ফুফি।’
মুন ফুফিকে বলে গেটে আসতেই দেখতে পেলো আদ্রাফ ভাইয়া ড্রাইভিং সিটে বসে সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে আছে। আদ্রাফ ভাইয়াকে দেখে গাড়িতে না উঠে মুন আগে কিছুক্ষন গালি দিয়ে নিলো।আদ্রাফের গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার শব্দে মুনের খেয়াল হলো সে গাড়িতে না উঠেই এসব ভাবছিলো। মুন দ্রুত গাড়িতে উঠে পড়লো।
ভার্সিটির গেটে মুন দাঁড়িয়ে আছে। এতদিনের স্বপ্ন তাঁর পূরণ হলো। ভিনদেশের নামকরা ভার্সিটিতে পড়বে আর আজ বাস্তবায়ন হলো।
মুন গেটে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর অস্বস্তি হচ্ছে ভীষণ। স্বপ্ন পূর্ণ হওয়ায় খুশি লাগলেও এখন একরাশ অস্বস্তি এসে ঘিরে ধরলো। এত ভিনদেশি মানুষের মাঝে সে কী মানিয়ে নিতে পারবে! অনেক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর অস্বস্তি নিয়ে ভার্সিটির ভেতরে ঢুকেই গেল মুন। মুনদের ক্লাস কোনটা বুঝতে না পেরে এক মেয়ের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করতেই মেয়েটি খুব সুন্দর করে হাসিমুখে ক্লাস দেখিয়ে দিল। মুন সে অনুযায়ী ক্লাসে যেতেই আরও অস্বস্তি এসে ঘিরে ধরলো। ক্লাসে সব ভিনদেশি। সবাই একেকজনের সাথে গল্প করছে। মুন একপাশে গিয়ে বসে পড়লো চুপচাপ।
-‘হাই ‘
কারো মিষ্টি কণ্ঠে মুনকে সম্বোধন করে ডাক শুনে মুন তাঁর পাশে ফিরে দেখল একটি ফর্সা, সোনালী চুলের মেয়ে তাঁর দিকে জবাবের আশায় হাসিমুখে তাকিয়ে আছে। বোঝায় যাচ্ছে সে এখানকার।
-‘হ্যালো।’ মুনও হাসিমুখে পাল্টা জবাব দিল।
-‘বসতে পারি? আমি এরিন।’ ইংরেজিতে বলে মুনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল মেয়েটি।
-‘ইয়াহ, শিওর! আমি মুন।’
-‘তুমি মনে হয় ভিনদেশি? চুপচাপ একা বসে আছো যে?’
-‘ইয়াহ! আমি বাংলাদেশ থেকে আসছি আর এখনো কারো সাথে পরিচিত হয়নি তাই চুপচাপ।’
-‘ওহ বেঙ্গলি? ওয়াও। আর এইতো এখন আমরা পরিচিত। ফ্রেন্ডস হতে পারি?’ এরিন হাসিমুখে মুনের দিকে আবারও হাত বাড়িয়ে দিল।
-‘ইয়াহ! হোয়াই নট! আই এক্সেপ্টেড ইওর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এরিন।’ মুন হ্যান্ডশেক করে হাসিমুখে বলল।
-‘নাইস টু মিট ইউ মুন। চলো ক্যান্টিনে, ওখানে আমাদের ফ্রেন্ডশিপ গোলস আছে। পরিচয় করিয়ে দিই।’ এরিন ইংরেজিতে আবারও বলল।
মুন হাসিমুখে মাথা নেড়ে এরিনের সাথে ক্যান্টিনের দিকে এগিয়ে গেল।
ক্যান্টিনে গিয়ে এরিন ওদের ফ্রেন্ডস গোলস এর সাথে মুনকে পরিচয় করিয়ে দিল আর ওরাও মুনকে সাদরে গ্রহণ করে নিলো।
-‘গায়’স শি ইজ মুন। শি কাম’স ফর্ম বাংলাদেশ। লেট্’স ইন্ট্রোডিউসড।’ এরিন ওদের মাঝখানে গিয়ে বলে উঠলো।
-‘হাই মুন।’ সবাই সমস্বরে বলে উঠলো।
একে একে সবার সাথেই মুন পরিচিত হলো। সবাই ভীষণ মিশুক। সবার সাথেই হেসে-মেতে সেইদিনটা কেটে গেল। ভার্সিটি যাওয়ার আগে মুনের যতটা অস্বস্তি লেগেছিলো ভার্সিটি যাওয়ার পরে এরিনদের সাথে মিশার পর সেই তুলনায় কোনো অস্বস্তি লাগেনি বরং ভালোই লেগেছিলো। কী সুন্দর করে সবাই মুনকে আপন করে নিলো।
এভাবেই হেসেমেতে কেটে গেল কয়েকটা দিন।
এর ভেতর আদ্রাফের বাইরে কাজ থাকার কারণে কয়েকদিনের জন্য অন্য জায়গায় যেতে হয়েছিল। এই কয়েকদিন মুনের ভালোই কাটিয়েছে কারণ আদ্রাফ ভাইয়ার গুমোট চেহারাটা মুনের দেখতে হলো না।
সেইদিন রাতে খাওয়ার পর সবাই যার যার রুমে ঘুমাতে গেল। ঘুমের মধ্যেই মুনের মনে হলো কেউ একজনের গরম নিশ্বাস মুখের উপর পড়ছে।
কেউ একজন যেন তাঁর দু’চোখের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে।
মুন তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে লাইট জ্বালাতেই স্তব্ধ হয়ে গেল।
#চলবে ইনশাআল্লাহ
(আসসালামু আলাইকুম। ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন দয়া করে।)