#একটুখানি_আশা,পর্ব ৯,১০
#মেহরাফ_মুন(ছদ্মনাম)
#পর্ব ৯
মুন বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতেই নিচে কোনো কিছুর অস্তিত্ব অনুভব হতেই সে পায়ের দিকে তাকাতেই খুব সুন্দর একটা পায়েলের দিকে নজর পড়লো। মুন পা থেকে পায়েলটা খুলে নিয়ে চোখের সামনে ধরলো। ছোট ছোট পাথরের পায়েল আর পাথরগুলো জ্বলজ্বল করছে। সব মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর কিন্তু মুনের এমন পায়েল আছে বলে মনে হচ্ছে না আর সে নিজেই তো পায়ে এমন পায়েল দেইনি তাহলে কোথ থেকে আসলো পায়েলটা? কে আসলো তাঁর রুমে! মুন ভাবনায় পড়ে গেল। মুন রুমের আনাচে কানাচে দেখল কিন্তু কোনো কিছুর ছায়াও পেলো না আর রুমের দরজাও ভেতর থেকে আটকানো তাহলে কে আসলো! মুনের এখন ভীষণ ভয় ভয় লাগছে। সে ভীতু চোখে সারা রুমে চোখ বুলিয়ে নিলো। হঠাৎ ব্যালকনির দরজায় চোখ পড়লো। মুনের যতটুকু মনে আছে সে তো ব্যালকনির দরজা আটকে শুয়েছিল। মুন ব্যালকনিতে গিয়ে কিছুই পেল না। মুন নিরাশ হয়ে রুমে এসে পায়েলটা খুলে ড্রেসিং টেবিলে রেখে দিল তবুও ঐটা থেকে চোখ যেন সরতেই চাইছে না, পাথরগুলো জ্বলজ্বল করা অবস্থায় অনেক সুন্দর লাগছে। মুন আর কিছু না ভেবে আবারও ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিনের ন্যয় কলেজে গেল মুন। সারাদিন এরিনদের সাথে ভালোই কাটলো।
কলেজ শেষে বাসায় ঢুকতেই দেখল অহনা সোফার উপর পা দুইটা তুলে হাটু মুড়ে বসে চিপস খেয়ে খেয়ে টিভি দেখছে। মুন ওখানে যেতেই অহনা মিষ্টি করে হাসলো,
-‘হাই আপু। কেমন কাটলো কলেজের এতটা দিন? ইউ নো হোয়াট আ’ম ওয়েটিং ফর ইউ।’
-‘হ্যাঁ ভালোই। কলেজ যাওনি?’
-‘নাহ আজকে ভালো লাগছিল না তাই। তুমি আসো গল্প করি।’
-‘আমি আগে ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর আড্ডা দিব।’
মুন সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে দেখতে পেলো শাফিন ব্রাশ করতে করতে গুন গুন করে গান গেয়ে নামছে। মুনকে দেখেই হাত নেড়ে ‘শুভ সকাল’ জানালো। মুন মুচকি হেসে সম্মতি জানালো।
-‘শুভ দুপুর।’
-‘কলেজ থেকে আসছো বুঝি?’ শাফিন হাসিমুখে বলল।
-‘হ্যাঁ। আমি যায় ফ্রেশ হয়ে আসি।’
-‘আচ্ছা।’
মুন রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে আবারও নিচে আসলো অহনার সাথে গল্প করার জন্য। অহনা তো মুনকে পেয়ে এতদিনের সব গল্প একসাথে জুড়ে দিল। মাঝখানে শাফিন কফি নিয়ে সেও আড্ডায় শামিল হলো। তাঁর আড্ডার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে। মাসে মাসে সে নতুন রিলেশনে জড়ায়। তাঁর কথা অনুসারে বোঝা গেছে সে এগুলো নিয়ে মোটেও সিরিয়াস নয় জাস্ট টাইম পাস। আবার মাসে মাসে নতুন রিলেশনে জড়ানোর জন্য অহনাকে ট্রিট দিতে হয় কারণ ও আদ্রাফ ভাইয়াকে বলে দিবে বলে শাফিনকে ভয়ে দেখায়। এদের কথা অনুসারে বোঝা যাচ্ছে ওই ইতর আদ্রাফ ভাইয়াকে ভীষণ ভয় পায় দুজনেই। উনি না-কি অনেক রাগী।
সেইদিন কলেজে একটা প্রজেক্টের কাজ থাকার কারণে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। ফুফি অবশ্য কয়েকবার বলেছিলো কাউকে মুনকে নেওয়ার জন্য পাঠাবে কিনা! কিন্তু মুন বারণ করেছিল। কেন শুধু শুধু সবাই সবার কাজ ফেলে মুনকে নিতে আসবে?
মুনের কাজ শেষে ওদের ফ্রেন্ডস গোলস থেকে এরিন মুনকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য এরিককে পাঠিয়েছিল। অবশ্য মুন বারণ করেছিল কারণ এরিক মুনকে পছন্দ করে এটা মুন বুঝতে পেরেছিলো। কিন্তু এরিন আর এরিক কেউই মুনের কথা শুনেনি। এরিক কোনো বাক্য বিনিময় না করে তাঁর গাড়ি নিয়ে মুনকে বাসায় পৌঁছে দেয়। গাড়ি থেকে নেমেই মুন বাসায় চলে আসতে নিলে পিছন থেকে এরিকের ডাক শুনে মুন থেমে যায়।
-‘মুন, কেন আমাকে এত ইগনোর করছো এভাবে?’ ঠান্ডা স্বরে ইংরেজিতে বলে উঠলো এরিক।
-‘কেন শুধু শুধু ইগনোর করব! তোমার হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে। আর ভুলটা শুধরে নিলেই বন্ধুত্বের বন্ধনটা আবার আগের মত হবে।’ মুন এই বলে আর পিছনে না থাকিয়ে বাসায় ঢুকতে নিলেই উপরের ব্যালকনির দিকে চোখ পড়লো। উপরের ব্যালকনিতে তাকাতেই আদ্রাফ ভাইয়ার সাথে চোখাচখি হলো। আদ্রাফ এক দৃষ্টিতে ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। মুন চোখ নামিয়ে বাসায় ঢুকে গেল।
এরিক কিছুসময় মাথা নিচু করে থেকে মুনের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে গাড়ি নিয়ে ওই স্থানটা প্রস্তান করল।
মুন বাসায় ঢুকে কিচেনে ফুফিকে বলে রুমে যেতেই হাতে টান অনুভব করল। আদ্রাফ তাঁর রুমে মুনকে টান দিয়ে দেয়ালের সাথে দুহাত রেখে মুনকে আবদ্ধ করে নিলো। আদ্রাফের চোখ দুটো লাল বর্ণ ধারণ করেছে। আদ্রাফ মুনের হাত জোরে ধরার জন্য ব্যথায় মুনের চোখ দিয়ে অঝোড়ো ধারায় পানি পড়তে লাগলো। মুন হাত ছাড়াতে নিলে আদ্রাফ আর জোরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো মুনকে।
-‘ভাভাইয়া..ব্যথা পাচ্ছি।”মুন কোনোমতে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠলো।
-‘অন্য ছেলের সাথে আর যেন না দেখি।’ আদ্রাফ রাগিভাবে কথাগুলো বলে মুনকে ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আর মুন স্তব্ধ। সে তাঁর ফ্রেন্ডের সাথে মিশলে আদ্রাফের কী সেটাই মাথায় আসছে না মুনের! সারাদিন প্রজেক্টের কাজ করায় ক্রান্ত মুন রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। মাঝরাতে আবারও সেইরাতের মত কারো অস্তিত্ব তাঁর রুমে আবিষ্কার করল মুন। মুন চোখ খুলে লাইট জ্বালাতেই কাওকে পেলো না। এরপর আর ঘুম না আসার কারণে কিছুক্ষন রুমে হাটাহাটি করল মুন। হঠাৎ মোবাইলে কল আসায় মুন মোবাইল হাতে নিয়ে দেখল অচেনা নাম্বার থেকে আসছে। মুন কল না ধরে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। মোবাইলে পর পর কল আসাতে মুন বিরক্ত হয়ে পাঁচবারের মাথায় কল ধরলো।
মুন কল ধরে ‘হ্যালো’ বলার পরেও ওই পাশ থেকে কোনো প্রতিত্তর আসলো না। মুন বার বার করে ‘হ্যালো’ বলার পরেও ওইপাশ থেকে কোনো উত্তর না আসাতে মুনের রাগ চরম পর্যায়ে উঠে গেল। সে কয়েকটা গালি দিয়ে ফোন রেখে দিতে গেলে ওই পাশ থেকে কারো অট্টহাসি শুনে থেমে গেল।
-‘চিনতে পেরেছো?’
-‘আআহান..!’
-‘এত দ্রুত চিনে ফেলেছো? বাহ্! আর কতদূরই বা বাঁচতে পারবে এই আহানের হাত থেকে তুমি? খুব দ্রুতই তোমার জীবন নরকে পরিণত করার জন্য আমি আসছি।’
মুন দ্রুত ফোন কেটে দিল। ফোন কেটে দেওয়ার সাথে সাথে একটা টেক্সট আসলো। মুন টেক্সটা ওপেন করতে হার্টবিট বেড়ে গেল। টেক্সটটা আসছে আহানের নাম্বার থেকেই। ওই মেসেজে মুনের জাপানের সব ডিটেলস দেওয়া।
মুন তাড়াতাড়ি করে বাসায় কল দিল। ওই পাশ থেকে বাবা কল ধরেই বলল,’মা সাবধানে থেকো।’
বাবার এই কথা শুনেই মুন যা বোঝার বুঝে গিয়েছে। মুন আরিফাকে কল দিল। আরিফা কল ধরে বলল, আহান আজকেই জামিন পেয়েছে আর কিছুক্ষন আগে এসে হুমকি-ধমকি দিয়ে গিয়েছে বাবা-চাচাদের, যেমনই হোক খুঁজে বের করবে মুনকে।
এরমধ্যে আবারও আহানের মেসেজ আসলো। মুন মেসেজ ওপেন করতেই দেখল,’আ’ম কামিং সুন বেবি।’
মুন স্তব্ধ হয়ে গেল। সে কী করবে ভেবে পাচ্ছে না! একদিকে এই আদ্রাফ ভাইয়া আর অন্যদিকে আহান। এতদূর আসলো সুন্দর একটা ভবিষ্যত এর জন্য তাও কিছুদিনের মধ্যেই আহান জামিন পেয়ে গেল আর কিছুক্ষনের মধ্যেই মুনের খোঁজ পেয়ে গেল। তাঁর মানে আহানের জাপান আসা কোনো ব্যাপার না! মুন মাথা চেপে ধরে মেঝেতে বসে পড়লো। জাপান এসেও শান্তি পেলো না।
#চলবে ইনশাআল্লাহ।
#একটুখানি_আশা
#মেহরাফ_মুন(ছদ্মনাম)
#পর্ব ১০
প্রতিদিনের মত মুন ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নোট নিয়ে বসলো। আহানের খবর জানার পর থেকে মুন এই কয়েকদিন বাসা থেকে বের হয়নি, কলেজের সবকিছু এরিনের কাছ থেকে নোট নিয়ে পড়েছিল। মুন জানেও না আহান কই এখন! এই কয়দিন পরিবারের সাথে মুনের যোগাযোগ হয়নি কারণ আহান যেকোনো ভাবে মুনের খবরের জন্য তাঁর পরিবারকে আক্রমণ করতে পারে। সে-ই অনুসারে মুনের বাবা মুনের মোবাইল আর কয়েকদিন কোনো যোগাযোগ করতে বারণ করেছিল।
মুন ভাবনায় পড়ে গেল। আচ্ছা, আহান কী আসেনি জাপানে? আহান এই দেশে আসলে তো মুনের সব ডিটেলস জানে তাহলে ওর চরিত্র অনুসারে এখানে এসে যাওয়ার কথা কিন্তু ওর তো খবর নেই।
মুনের হঠাৎ করেই তাঁর পরিবারের কথা মনে পড়ে মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল। কতদিন বাবা-মার সাথে কথা বলা হয়নি, কতদিন ওনাদের কণ্ঠটা শোনা হয়নি। শুধুমাত্র মেয়ের ভালোর জন্য নিজেরাও মেয়ের সাথে কথা বলার ইচ্ছেটাকে ধামা-চাপা দিয়ে দিলেন। তাঁর জীবনটা আজ কোথ থেকে কোথায় এসে দাঁড়ালো। প্রথমে আহানের সাথে মুনের জোর করে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো সবাই আবার বিয়ের দিনই ওর মুখোশ বেরিয়ে এলো। বিয়ের বরের কাছ থেকেই বাঁচতে বাবা-চাচা আজ এতদূর পাটালো মুনকে তাঁর উপর মুনের স্বপ্নটাও বাস্তবায়িত হলো। এখন সবকিছুই যখন ঠিক হলো আবারও আহান হাজির। মুন এসব ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
মুন আর এত কিছুর দিকে মাথা না দিয়ে পড়তে বসলো। কারণ এসব ভাবতে গেলেই মুন এখন ইমোশনাল হয়ে পড়বে আর এভাবেই আর কোনো পড়া হবে না। এসব কিছু ঝামেলার জন্য এই কয়দিন মুন পড়তে পারেনি। এরিন ক্লাসের নোট দিয়ে গিয়েছিল সব জমে রয়েছে।
হঠাৎ ফুফি উৎফুল্ল হয়ে রুমে ঢুকে মুনের কাছে এসে মুনের কানে মোবাইল ধরাই দিল।
-‘কে ফুফি?’ মুন বই থেকে মুখ তুলে ফুফির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বলে উঠলো।
-‘আগে কথা বল, এখন আমি যায়।’ এই বলে ফুফি হাসিমুখে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
মুন মোবাইল কানে নিয়ে ‘হ্যালো’ বলতেই ওই পাশ থেকে বাবার কণ্ঠ ভেসে উঠলো।
-‘কেমন আছিস মা?’ বাবার উৎফুল্ল কণ্ঠ।
মুনের এত্তোদিন পর বাবার কণ্ঠ শুনে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেল মনের ভেতর। মুনের আবেগে কান্না এসে গেল। মুন কোনোমতে কান্না চেপে ধরে বাবার কথার প্রতিত্তুর করল,
-‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি বাবা। তুমি কেমন আছো?’
-‘তোর টেনশনে এতদিন কীভাবে ভালো থাকতে পারি মা বল? তবে এখন বাবাও আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি মা।’
-‘এখন হঠাৎ এত ভালো বাবা!’ মুন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বলে উঠলো।
মুনের কথার উত্তর দিতে যাবে তখনই মুনের মা এসে মোবাইল নিয়ে নিলো। ‘হয়েছে মেয়ের সাথে অনেক বলেছো এবার আমাকে বলতে দাও, দেখি।’ ওইপাশ থেকে মোবাইল নিয়ে বাবা-মা দুজনের মধ্যে টানাটানি শুনে মুন হেসে উঠলো।
-‘হ্যালো মুন মা, কেমন আছিস? খাবার-টাবার ঠিকমতো খেয়েছিলি তো এতদিন? আর শরীর কেমন? আর তুর পড়ালেখা…!’
-‘হয়েছে মা একসাথে এত্তোগুলো প্রশ্ন করলে আমি কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দিব বলো?আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, সব আলহামদুলিল্লাহ ঠিক আছে, এইবার তোমাদের খবর বলো মা। তুমি, চাচা-চাচী আর আরিফারা কেমন আছে মা?’ মুন মাঝপথে মাকে থামিয়ে বলে উঠলো।
-‘আমরাও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি রে মা। তোর চাচা-চাচী আর আরিফাও ভালো আছে। এই নেয় আরিফার সাথে কথা বল। মেয়েটা অনেক্ষন ধরে তোর সাথে কথা বলার জন্য বসে আছে।’
-‘হ্যালো আপু কেমন আছো?’ আরিফা হাসি হাসি কণ্ঠে বলে উঠলো।
-‘আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তোর খবর বল, তুই কেমন আছিস আর রিহানের কী খবর?’
-‘আমিও আলহামদুলিল্লাহ। দাড়াও আপু আমি আগে রুমে যায় তারপর কথা বলছি।’ আরিফা এদিকে বড়ো আম্মু আর বড়ো আব্বুর দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে কথাগুলো বলে মুখের উপর একটা বোকা বোকা হাসি ঝুলিয়ে বেরিয়ে গেল।
আর এদিকে আরিফার কান্ড দেখে শফিক আহমেদ আর মুনের মা দুজনেই মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। মোবাইনের সাউন্ড লাউট থাকার কারণে মুনের কথাটা ওরা দুজনেই শুনেছিল তাই আরিফা কথার প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে মোবাইল নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
আরিফা নিজের রুমে এসে দরজা লক করে বুকে হাত দিয়ে হাঁফাতে লাগলো। আরিফা কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলে উঠলো,’ এটা কী করলে আপু?’
-‘কেমন দিলাম?’ মুন মজা করার কণ্ঠে বলে উঠলো।
-‘আরেকটু হলে বড়ো আব্বু-আম্মুর কাছে ধরা খেয়ে যেতাম। আমার বুক ধরধর করছে আপু।’ আরিফা ইনোসেন্ট কণ্ঠে বলল।
-‘বাহ্ বাহ্! এত ভয় তো মনে হয় রিহানের সাথে ঘুরতে গিয়েও পাসনি। শোন তোর কথা আমি বাবাই-মাকে ইঙ্গিত দিয়েছি। একদিন সময় করে সব বলবো, কারণ আমার রিহানকে ভালো লেগেছে, তোর জন্য পারফেক্ট। এখন যদি বাবাই-মাকে কোনোমতে রাজী করে রাখতে পারি তাহলে পরে চাচা-চাচী ঠিকই রাজী হবে। তখন আর কোনো বাঁধা থাকবে না। বুঝতে পেরেছিস পাগলী?’
-‘আপু তাই তো তোমাকে এত্তো এত্তো ভালোবাসি। আমার কাজে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই, সবকিছুই তুমি সহজ করে দাও। আচ্ছা আপু তোমার জন্য খুশির খবর আছে। আহান সেদিন এয়ারপোর্ট এ গিয়ে আবারও ধরা খেয়েছিলো। ওর সেদিন জামিন হয়নি ও জেল থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। এখন আবারও জেলে। তোমার ভাগ্য ভালো। কিন্তু এইবার শুনেছিলাম বড়ো বাবা না-কি তোমাকে এই কয়েকদিনের ভেতর দেশে আনবে আর বিয়েও দিয়ে দিবে একটা ভালো পাত্র দেখে। কারণ আহানের ক্ষমতারে সাথে বড়ো বাবারা কোনোদিন পেরে উঠবে না সে যেকোনো ভাবে আবারও জেল থেকে বের হবেই আর জেল থেকে বের হলে তো আবারও তোমার খোঁজ নিয়ে ফেলবে,তাই বড়ো বাবা তোমাকে নিয়ে আর কোনো রিস্ক নিতে চাচ্ছে না।’
মুন কী বলবে বুঝতে পারছে না। এতকিছু হয়ে গেল এই কয়দিনের ভেতর! সে ভাবেনি তাঁর বাবা এত্তো তাড়াতাড়ি আবারও বিয়ের প্রসঙ্গটা টানবে। মুন কোনোমতে বলে উঠলো,
-‘বি..বিয়ের কথা চলছে?’
-‘উহু, চলছে না। শুধু ভাবছে। এখনো কেউ জানে না, তোমার মত পাওয়ার পর বড়ো বাবারা সবকিছু ঠিক করবেন। তবে তোমাকে এর ভেতর বাংলাদেশে আনবে। যেভাবেই হোক তোমার বিয়েটা পড়িয়ে ফেলবে। তবে তোমার মত না থাকলে হবে না।’
আরিফার সাথে কথা বলা শেষ করে মুন বসে পড়লো। এক ট্রমা থেকে বেরিয়ে আসতেই আবারও..! এই আহানটা মুনের জীবন অতিষ্ট অতিষ্ট করে দিয়েছে।
–
–
রাতে ডিনার করার উদ্দেশ্যে মুন নিচে নামল। কান্না করার ফলে মাথাটা ভীষণ ব্যথা করছে, চোখগুলো লাল আকার ধারণা করেছে। তবুও ফুফির জন্য খেতে নামল। আর কয়দিন-ই বা এখানে আছে মুন! এই কয়েকমাসে এই পরিবারটা মুনের অনেক আপন হয়ে গিয়েছিল। প্রচুর মিস করবে এনাদের।
প্রতিদিনের ন্যয় সবাই খেতে বসলো। আদ্রাফ ভাইয়া, শাফিন-অহনা, ফুফি-সবার দিকেই মুন একবার চোখে বুলিয়ে নিলো। এর মাঝেই ফুফি মুনের ব্যাপারে বলে উঠলো।
-‘মুন বাংলাদেশ চলে যাবে কয়েকদিনের ভেতর।’ ফুফি মলিন মুখে বলে উঠলো।
-‘কী বলো? কেন, কোনো সমস্যা হচ্ছে কী!’ফুফা খাওয়া ছেড়ে অবাক দৃষ্টিতে ফুফির দিকে তাকিয়ে বলল। শাফিন-অহনাও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
-‘না, সমস্যা হচ্ছে না।’ ফুফি শুরু থেকে সবকিছু খুলে বলল। আর সব শুনে সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
আর এদিকে মুনের বিয়ের কথা শুনে আদ্রাফের চোখ-মুখ শক্ত আকার ধারণা করেছে। সে এক দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল। এক পর্যায়ে টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। আদ্রাফের হঠাৎ উঠে যাওয়াতে উপস্থিত সবার দৃষ্টি ওর দিকে নিবদ্ধ হলো।
-‘আমি রুমে যাচ্ছি।’
-‘কিন্তু মাত্রই তো খেতে বসলি!’ ফুফি বলে উঠলো।
-‘খাওয়া শেষ।’ এই বলে সিঁড়ি বেয়ে চলে যাওয়ার আগে মুহূর্তে মুনের দিকে একফলক তাকিয়ে চলে গেল।
মুনও খাওয়া শেষ করে রুমে চলে আসলো। টেবিলে আছে আর অহনা-শাফিন আর মুনের ফুফি-ফুফা।
মুনের ফুফি সুমাইয়া আহমেদ খেতে খেতে তাঁর হাসব্যান্ড আদ্রাফের বাবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
-‘আমি আদ্রাফের বিষয়ে ভাবছি। তুমি কী একমত হবে আমার প্রস্তাবে?’
-‘আগে বলো, শুনি।’ ফুফা উত্তরে বলল। অহনা-শাফিনরাও তাঁদের মা কী বলবে সেটা শোনার জন্য উৎসুক হয়ে তাকিয়ে রইল।
সুমাইয়া আহমেদের প্রস্তাবটা শুনে তাঁর হাসব্যান্ড খুশি হয়ে সম্মতি জানালো।
-‘কিন্তু আদ্রাফ কী রাজী হবে?’ মুনের ফুফা ভাবুক স্বরে বলল।
-‘আদ্রাফের ব্যাপারটা আমার উপর ছেড়ে দাও। আমি জানি আমার এই ছেলেটা আমার মতকে সস্নেহে গ্রহণ করবে। আর আমার বিশ্বাস ভাইজানও দ্বিমত করবে না।’
অহনা-শাফিনরাও সুমাইয়া আহমেদের কথা শুনে উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। প্রস্তাবটা শুনে সবার খুশিমনে সম্মতি দেখে সুমাইয়া আহমেদের মুখেও হাসি ফুটে উঠলো।
#চলবে ইনশাআল্লাহ।