একটু ভালোবাসা,পর্ব_৫
মুন্নি আক্তার প্রিয়া
প্রিয়ু বাড়িতে ফিরে দেখে মনসুর আলী, আলেয়া বেগম কেউই এখনো বাড়িতে ফেরেনি। আশা অসুস্থ শরীর নিয়েই রান্না করছে। একটু পরপর হাঁচি, কাঁশি দিচ্ছে। প্রিয়ু তাড়াতাড়ি করে ব্যাগটা ঘরে রেখে রান্নাঘরে যায়। জোর করে আশাকে ঘরে রেখে নিজে রান্না করতে বসে। আগুন দপদপ করে জ্বলছে। শীতের সময় বলে আগুনের তাপ ভালো লাগছে। গরম হলে সহ্য করা খুব কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু কিছু করার নেই। এতিমদের সবসময় রয়েসয়েই থাকতে হয়। একমনে রান্না করতে করতে অনেক চিন্তাভাবনা মনের ভেতর ঘুরপাক খায়। অরণ্য আর তিতলির কথাটাও মাথায় জেঁকে বসে। দুই ধর্মের ভালোবাসার শেষ পরিণতি কী? পরিবার, সমাজ কখনো কি ওদের ভালোবাসা মেনে নেবে? কী করবে ওরা? সিয়াম ডাক্তারকে প্রিয়ুর বেশ ভালো লাগে। শান্ত আর ইনোসেন্ট একটা লোক। চোখের ভাষাও সহজ-সরল। আশা আপুর সাথে ডাক্তার সিয়ামের বিয়ে হলে আশা আপু ভীষণ সুখে থাকবে। কিন্তু আশা আপু কী চায়? জিজ্ঞেস করতে হবে একবার। সর্বশেষ মাথায় আসে রিশাদের কথা। ওর কথাগুলো মনে পড়লে একা একাই হাসি এসে পড়ে। শপিংমলে রিশাদের বলা ‘আমি কিছু করিনি।’ কথাটা মনে পড়তেই খিলখিল করে হেসে ফেলে।
“কী ব্যাপার? মনে এত ফূর্তি ক্যান?”
রান্নাঘরের সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে আলেয়া বেগম। প্রিয়ু কিছু বলে না। শুধু হাসিটাই থেমে যায়। চেহারায় বিরক্তির ছাপ। প্রিয়ুকে চুপ থাকতে দেখে তিনিও এই বিষয়ে কিছু বলেন না।
“একটু পানি খাওয়া তো।”
প্রিয়ু উঠে গিয়ে আলেয়া বেগমকে পানি দেয়। পানি পান করে আলেয়া বেগম বলেন,
“কালকে পিঠা বানিয়ে দেবো। ঐগুলা নিয়ে আমার ভাইর বাসায় যাবি।”
তৎক্ষণাৎ প্রিয়ু উত্তর দেয়,
“আমি পারব না। ভাইয়াকে বলো গিয়ে।”
“মুখে মুখে তর্ক করা বন্ধ কর। আমিনকে পাঠানোর হলে তোকে তো আর বলতাম না।”
“আমি ঐ বাড়িতে যাব না, মানে যাব না।”
প্রিয়ু রান্নাঘরে চলে যায়। রান্নাবান্না শেষ করে ঘরদোর পরিষ্কার করে ফেলে। রাতে আর খেতে ইচ্ছে করে না বলে না খেয়েই শুয়ে পড়ে। প্রিয়ু খেল কী না খেল তাতে কারো কিছু যায় আসে না। আশাকে আগেই খাইয়ে দিয়েছে। আশা এখন ঘুমিয়ে আছে। জেগে থাকলে জোর করে হলেও প্রিয়ুকে খাওয়াত। মনটা ভালো লাগছে না। ভীষণ অস্থির অস্থির লাগছে। মায়ের সঙ্গে একটু কথা বলা দরকার। ঘরের জানালা খুলে দেয়। শাই শাই করে দল বেঁধে যেন বাতাসেরা ঘরে প্রবেশ করল। শীতে কেঁপে ওঠে প্রিয়ু। মায়ের সঙ্গে একা একা হাজারটা কথা বলে। সবকিছুই বলে। উত্তর পাবে না জেনেও!
.
.
রেষ্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছে পূজা সরকার আর অরণ্য। পূজা সরকারকে ভীষণ শান্ত দেখাচ্ছে। তিনিই অরণ্যকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তাই কথার প্রসঙ্গ তিনিই তুলেন। জিজ্ঞেস করেন,
“তিতলির সাথে তোমার সম্পর্ক কত বছরের?”
“তিন বছরের।”
“তুমি জানতে না তিতলি হিন্দু?”
“জানতাম।”
“তাহলে জেনেও কেন সম্পর্কে জড়ালে?”
“এতকিছু ভাবিনি। শুধু জানি ভালোবাসি।”
“দেখো আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। বাস্তবতা ভাবো। তোমাদের সম্পর্কের কোনো ভিত্তি নেই। কখনো সম্ভব না তোমাদের এক হওয়া। আমি তিতলিকেও জোর করে বিয়ে দিতে পারছি না।”
অরণ্য নিশ্চুপ। তিনি আবার বলেন,
“দেখো তোমার কাছে যেমন তোমার ধর্ম বড় তেমনি আমার কাছেও আমার ধর্ম বড়। তুমি কি পারবে তিতলির জন্য হিন্দু হতে? আমি জানি তুমি পারবে না। তেমনি আমরাও পারব না তিতলিকে মুসলিম হতে দিতে। তাছাড়া সমাজে আমাদের অন্য রকম একটা সম্মান আছে। আমার মেয়ে মুসলিম ধর্মের একটা ছেলেকে বিয়ে করবে এটা জানাজানি হলে আমার মান-সম্মান ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। আমি অনেক অসহায় আর নিরুপায় হয়ে তোমার কাছে এসেছি। তুমি প্লিজ তিতলির জীবন থেকে সরে যাও। আমার ভাইপো বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরেছে। আমরা সবাই চাই তিতলির সাথে ওর বিয়ে দিতে। কিন্তু তিতলি রাজি হচ্ছে না।”
“আপনি চাচ্ছেন আমি তিতলিকে বলব অন্য কাউকে বিয়ে করতে?”
“তুমি বোঝার চেষ্টা করো। সবদিক ভেবে বলো বাবা। আমায় এভাবে ফিরিয়ে দিও না। তুমি একবার ভাবো শুধু তিতলির কথা। তুমি চাও না তিতলি সুখী হোক?”
সমুদ্রের অথৈ জলে ভেসে বেড়ানো এক প্রাণী মনে হচ্ছে অরণ্যর নিজেকে। যে না পারছে ডুবতে আর না পারছে পাড়ে ওঠতে। তিতলিকে ছাড়া অরণ্য কীভাবে থাকবে? কীভাবে অন্য কারো সঙ্গে তিতলিকে সহ্য করবে? ভাগ্যের পরিহাসে তিতলিকে হারাতে হবে? অরণ্য চায় তিতলি সুখী হোক। পূজা সরকারকে অরণ্য কথা দিয়েছে। তিতলিকে ঐ বিয়েতে রাজি করাবেই। তারপর নিজে কীভাবে আর কী নিয়ে বাঁচবে তা অরণ্য জানে না। এই মুহূর্তে প্রিয়ুকে দরকার। খুব দরকার। ওর সাথে কথা বললেই মনে শান্তি আসবে। কোথায় পাব এখন প্রিয়ুকে? ওর বোনের ফোনে ফোন দেবো? না, থাক! কাল প্রিয়ু ভার্সিটি যাওয়ার সময়ই দেখা করব।
.
তিনদিন পার হয়ে গেলেও প্রিয়ুর দেখা পায় না অরণ্য। মেয়েটা হঠাৎ গুম হয়ে গেল নাকি। চারদিনের দিন আশার সঙ্গে দেখা হয়। আশার কাছেই জানতে পারে প্রিয়ু মামার বাড়ি গেছে। আজ ফিরে আসবে। অরণ্য জানায় বাড়িতে ফিরলে দেখা করতে।
তিনটা দিন ভীষণ অস্বস্তিতে কেটেছে প্রিয়ুর। সবার কথা খুব মনে পড়লেও রিশাদের কথা বেশিই মনে পড়েছে। কেন এত বেশি মনে পড়েছে প্রিয়ু জানে না। রিশাদের সাথে সময় যে খুব বেশিই কাটিয়েছে তা নয়। খুব অল্প সময় কাটিয়েছে। তবুও মানুষটা যেন মনের অনেকখানি জায়গা দখল করে নিয়েছে। বিকেলে বাড়িতে ফিরেই রিশাদের বাড়িতে চলে যায়। সিকিউরিটি সালাম চাচা প্রিয়ুকে দেখে চিনতে পারে। প্রিয়ু সালাম দিয়ে বলে,
“কেমন আছেন চাচা?”
“ভালো আছি মা। তুমি কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ্। রিশাদ বাসায়?”
“না। আজকে সকালেই কোথায় নাকি গেছে।”
“কবে আসবে?”
“তা তো কিছু জানি না।”
“ওহ আচ্ছা।”
প্রিয়ু মন খারাপ করে চলে যায়। রাতেও একবার বাড়ির সামনে দিয়ে ঘুরে যায়। সালাম চাচার কাছে জানা যায় রিশাদ বাড়িতে ফেরেনি। মন খারাপ করে বাড়িতে ফেরার সময় অরণ্য ভাইয়ার সাথে দেখা হয়।
“কী রে কোথায় গিয়েছিলি?” জিজ্ঞেস করে অরণ্য।
“এইতো! এখানেই।”
“তোর মন খারাপ?”
“না তো!”
“সত্যি করে বল।”
“একজনকে খুব মিস করছি।”
“কাকে?”
“রিশাদকে।”
“এই রিশাদ কে?”
প্রিয়ু শুরু থেকে রিশাদের গল্প করে। অরণ্য বুঝতে পারে প্রিয়ু না চাইতেও রিশাদের ওপর দুর্বল হয়ে পড়েছে। এমনিতেই প্রিয়ুর এখন মন খারাপ। তাই নিজের মন খারাপের গল্প শুনিয়ে মন খারাপ বাড়িয়ে দিতে ইচ্ছে হয়নি অরণ্যর। প্রিয়ুকে হাসাতে বলে,
“দেখলি বলেছিলাম না কয়েকদিন পর নিজেই বিয়ের জন্য পাগল হয়ে যাবি?”
প্রিয়ু অবাক হয়ে বলে,
“আমি কখন বিয়ের কথা বললাম?”
“প্রথমে ভালোলাগা, পরে মিস, তারপর ভালোবাসা, তারপরই তো বিয়ে। তুই এখন দ্বিতীয় ধাপে আছিস।”
“ধুর! ফালতু কথা শুধু।”
“হইছে ভাইয়ের কাছে আর লুকাতে হবে না। আমার সাথে দেখা করিয়ে দিস। বোন জামাইকে দেখতে হবে তো?”
“তুমি অনেক অগ্রিম ভেবে ফেলতেছ ভাইয়া। এমন কিছুই নয়।”
“আচ্ছা। বেশ! এখন বল কী খাবি?”
“আইসক্রিম খাব।”
“এই শীতের মধ্যে আইসক্রিম?”
“হুম। শীতের মধ্যেই তো আইসক্রিম খাওয়ার আসল মজা। শীতে কাঁপতে কাঁপতে আইসক্রিম খেয়ে কাঁপুনী বাড়িয়ে দেওয়ার মজাই আলাদা।”
অরণ্য হেসে বলে,
“পাগলী!”
প্রিয়ুর জন্য আইসক্রিম আর নিজের জন্য সিগারেট কেনে। আইসক্রিম হাতে নিতেই মুখটা মলিন হয়ে যায় প্রিয়ুর। বিষাদিত কণ্ঠে বলে,
“জানো ভাইয়া, ছোটবেলায় মায়ের কাছে যখন আইসক্রিম খাওয়ার বায়না করতাম, মা খুব বকত। হেসে হেসে বকত। রাগ আসত না। মিথ্যে রাগ দেখাত। আমি বুঝে ফেলে খুব হাসতাম। একবার শীতে আমার এমন ঠান্ডা লেগেছিল যে আমি কথাই বলতে পারছিলাম না। ডাক্তার বলে দিয়েছিল গরম পানি ছাড়া কোনে পানি না খেতে। এমনকি তিনবেলা গরম ভাত, গরম তরকারি খেতে বলেছিল।ঐ সময়ে আমি বায়না ধরেছি আইসক্রিম খাব। আব্বা জানলে তো খুব বকবে তাই মা লুকিয়ে কিনে দিয়েছিল। শর্ত দিয়েছিল আমায় ওষুধ ঠিকমতো খেতে হবে। আমার সব আবদার, বায়না পূরণ সবকিছু ঘিরে ছিল ঐ একটাই মানুষ। মা পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার সাথে সাথে সবকিছুই আমায় ছেড়ে চলে গেছে। আমার নিজের বলতে কিছুই রইল না ভাইয়া।”
অরণ্যর বুকের ভেতর ব্যথা হয়। বোনটার কিছু কথায় মুখে যেমন হাসি ফোঁটায় তেমনি কিছু কথা বুকের ভেতরটা ভেঙেচুরে দেয়। প্রিয়ুর মাথায় হাত বুলিয়ে অরণ্য বলে,
“তুইও একদিন সুখী হবি দেখিস। খুব সুখী হবি। তখন সুখও তোকে হিংসে করবে।”
“সুখ আমার কপালে নেই ভাইয়া।”
————————————–
তিতলির সঙ্গে দেখা করতে এসেছে অরণ্য। হয়তো আজই শেষ দেখা হবে দুজনের। পূজা সরকার তিতলির বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন। তার কথাতেই আজ তিতলির সাথে দেখা করতে এসেছে অরণ্য। তিতলি কান্না করছে সামনে বসে। অরণ্যর হাত ধরে বলে,
“প্লিজ অরণ্য কিছু করো। চলো আমরা কোথাও পালিয়ে যাই।”
অরণ্য কিছুক্ষণ ধাতস্থ থেকে বলে,
“আমার পক্ষে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় তিতলি। ঝোঁকের বসে সম্পর্কে জড়িয়ে গেলেও এখন আমি সবটা বুঝতে পারছি। বাড়িতে তোমার কথা জানিয়েছি আমি। তোমার পরিবার যেমন আমায় মেনে নিতে পারেনি। তেমনি আমার পরিবারও তোমায় মেনে নেবে না। আর পরিবারের বিরুদ্ধে যাওয়াও আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
তিতলি অবাক হয়ে অরণ্যর কথা শোনে। বিশ্বাসই করতে পারছে না অরণ্য এসব কথা বলছে। চেনা মানুষটাও এমন হুট করে পরিবর্তন হয়ে গেল? ভাঙা ভাঙা গলায় তিতলি বলে,
“এভাবে বোলো না অরণ্য। আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারব না। তুমি তো জানো আমি তোমায় কতটা ভালোবাসি!”
“আমি নিরুপায় তিতলি। আমার কিছু করার নেই। তোমার জন্য আমার বাবা-মাকে আমি ছাড়তে পারব না। তোমার মা যার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করেছে। তুমি তাকেই বিয়ে করে নাও। সুখী হও তুমি।”
তিতলি রাগে অরণ্যর শার্টের কলার চেপে ধরে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“সম্পর্কে জড়ানোর আগে পরিবারের কথা মনে পড়েনি? এখন যখন তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না তখন তুই আমায় ফিরিয়ে দিচ্ছিস? সুখী হতে বলছিস? বেঈমান, শুধু নিজের কথাটাই ভাবলি তুই।”
অরণ্য তিতলির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। তিতলি কাঁদতে কাঁদতে টেবিলে মাথা ঢেকিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে। অরণ্য নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। এভাবে কখনো তিতলিকে কষ্ট দেবে, কাঁদাবে স্বপ্নেও ভাবেনি অরণ্য। কিন্তু অরণ্যরই বা কী করার আছে? ভাগ্য যে ওদের সহায় নেই। পরিবারকে যে এখন ইস্যু করতে হলো মিথ্যা বলে। সম্পর্কের শুরু থেকেই অরণ্যর পরিবার তিতলির কথা জানতো। তারা সবসময়ই বলত, ‘তুই সুখে থাকলেই আমরা খুশি।’ সেই পরিবারকে নিয়েও আজ মিথ্যা বলতে হলো।
তিতলি আবারও অরণ্যর হাত ধরে বলে,
“প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না অরণ্য প্লিজ। আমি তোমায় ছাড়া বাঁচব না। বাঁচতে পারব না আমি।”
“আমার যা বলার আমি বলে দিয়েছি।”বলে, হাত ছাড়িয়ে নেয় অরণ্য। উল্টো পথে হাঁটা শুরু করে। আরেকটু সময় তিতলির সামনে থাকলেই চোখের পানি দেখে ফেলত তিতলি। তিতলির সামনে দুর্বল হওয়া যাবে না একদম। পিছু ফিরেও তাকানো যাবে না। ঐ মুখের দিকে তাকালে ভুল হয়ে যাবে। খুব বড় ভুল!
.
.
গরমে তিরতির করে ঘামছে প্রিয়ু। শীতের মধ্যেও গরম লাগছে। কী অদ্ভুত! জ্যামের কারণে বাস আটকে আছে। সূর্যও আজ প্রখর কিরণ দেওয়া শুরু করেছে। প্রিয়ু বসেছে জানালার পাশে। সূর্যের তাপ প্রিয়ুর চোখেমুখে পড়ছে। এতই গরম লাগছে যে গায়ের শাল খুলে ব্যাগে ভরে রেখেছে। আজ তো প্রথম ক্লাশ মিস যাবেই। সীটের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। জ্যাম ছুটতে শুরু করেছে। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাতেই অপর একটি বাসে দেখতে পায় রিশাদকে। ডাক দেওয়ার আগেই জ্যাম সম্পূর্ণ ছুটে যায়।বাস তার নিজ গতিতে চলতে শুরু করে। প্রিয়ু এখন কী করবে না করবে দিশা খুঁজে পাচ্ছে না। উত্তেজনায় হিতাহিত জ্ঞানটুকুও হারিয়েছে। প্রতিটাদিন প্রিয়ুর চোখ রিশাদকে খুঁজে বেড়িয়েছে। আর আজ এতদিন পর তার দেখা মিলল। মনের ভেতর খুশিগুলো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। দেখা করতে হবে। এখনই রিশাদের সাথে দেখা করতে হবে। ভার্সিটিতে আজ যাবে না প্রিয়ু। নিজের সীট ছেড়ে সামনে এগিয়ে গিয়ে ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বলে,
“মামা বাস থামান। আমি নামব।”
হেল্পার বলে,
“এইহানে কই নামবেন? মাঝ রাস্তায়!”
“আমি এখানেই নামব। বাস থামাতে বলেন আপনি।”
হেল্পার বাসের গায়ের জোরে জোরে বারি দিয়ে বলে,
“ওস্তাদ বাস থামান!”
মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামানোতে হেল্পার ও ড্রাইভার কিছুটা বিরক্ত বটে। কিন্তু তাতে কী? এসব চিন্তা মাথায় নিলে হবে না। রিশাদের সঙ্গে দেখা করতে হবে, কথা বলতে হবে। বাস থেকে নামার পর কোনো গাড়ি দেখতে পায় না প্রিয়ু। সব চলতি বাস। কোনো বাস থামবে বলেও মনে হয় না। সিএনজি যা আসছে তা সবই ভর্তি। গাড়ির আশায় না থেকে প্রিয়ু হাঁটা শুরু করে। হাঁটতে হাঁটতে সামনের বাস স্টপেজে চলে আসে। হয়রান হয়ে গেছে। কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে। বাস আসার পরই বাসে ওঠে পড়ে প্রিয়ু। এইতো আর কিছু পথ। এই অল্প পথই আজ অনেক বেশি মনে হচ্ছে। শেষ হতে চাইছে না যেন।
বাজারে এসে বাস থামে। বাস থেকে নেমে প্রিয়ু রিশাদের বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করে। সালাম চাচাকে কিছু না বলেই ভেতরে চলে যায়। বেশ কয়েকবার কলিংবেল বাজায়। দরজা খুলছে না রিশাদ। দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে। আবার কলিংবেল বাজায়। রিশাদ এসে দরজা খুলে দেয়। মাত্রই গোসল করে বেরিয়েছে। ভেজা চুল থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে কপালে। স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে। ক্লান্ত মুখেই এক গাল হাসে প্রিয়ু।
“আপনি হঠাৎ?” জিজ্ঞেস করে রিশাদ।
রিশাদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে রাগ দেখিয়ে প্রিয়ু বলে,
“জানেন আপনাকে আমি কত খুঁজেছি? বাড়িতে কতবার এসেছি! কোথায় গেছিলেন আপনি?”
“বিয়ে করতে।”
চলবে…