একটু_ভালোবাসি,০৫,০৬

0
1642

#একটু_ভালোবাসি,০৫,০৬
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব – ০৫

অর্ণব ঘুমুঘুমু চোখ খুলে দেখে কেউ একজন অতি সযত্নে জানলার পর্দা গুলো দিয়ে দিচ্ছে যাতে অর্ণবের চোখে আলো না পড়ে। অর্ণব হাফ শোয়া অবস্থায় চোখ ঢলতে ঢলতে বলে,

“তুমি?”

অর্ণবের মা আশা চৌধুরী ছেলের পাশে এসে ছেলের মাথায় হাত দিয়ে নাড়তে নাড়তে বলে,”তোর উপর খুব চাপ পড়ে যায় তাই না বাবা।কি করব তোর বাবা ব্যবসার কাজে বেশিরভাগ সময়ই বিদেশে থাকে তাই এদিক টা তোকেই দেখতে হয়।”

অর্ণব নিজের মায়ের কোলে মাথা দিয়ে বলে,”আরে মম নো টেনসন।আমার কোন চাপ পড়ছে না আর না কোন প্রবলেম হচ্ছে। আমি ঠিক আছি।”

“হে কেমন ঠিক আছিস তা তো দেখতেই পাচ্ছি।চোখ নাক মুখ সব ডেবে গেছে।”

“ও কিছু না। রাত জেগে কাজ করার ফলে এমন হয়েছে নো টেনসন।”

“আজ ভার্সিটি যাবি?”

“না, মম। আজ একটু অফিসে যাবো সব ঠিকঠাক আছে কি না দেখতে।”

“আচ্ছা। এখন উঠো।”

“যথা আজ্ঞা মহারাণী।”

বলেই অর্ণব ঝটপট করে উঠে ফ্রেস হয়ে নেয়। আজ তাড়াতাড়ি অফিসে যেতে হবে।

____________________

“ওহ শিট। আ’ম লেট।আম্মু তুমি কেন আমায় আগে ডাকো নি?”

“তোর এটাকে যদি ঘুম বলিস তাহলে ভুল হবে তুই তো ঘুমাস না আফ মরেই যাস।এভাবে কুম্ভকর্ণের মতো কে ঘুমাই শুনি।”

ইলা মায়ের কথা পাত্তা না দিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হতে থাকে। আজ অনেক লেট হয়ে গেছে। এদিকে পারভীন শেখ খাবার হাতে নিয়ে দৌড়াচ্ছেন মেয়ে একবার এদিকে যাচ্ছে তো ওদিকে যাচ্ছে।

“ইলা শান্ত হ। একটু খেয়ে নে।”

“আম্মু আম্মু এখন সময় নেই। আমি ক্যান্টিন থেকে কিছু কিনে খাবো। এখন যাই বাই বাই।”

বলেই একপ্রকার দৌড় দিয়ে বের হলো।ইলা বিড়বিড় করছে আর মেঘাকে কল লাগাচ্ছে।

“যেদিন আমাকে আগে বের হতে হয় ঠিক সেদিনই আমার লেট হয়। হে আল্লাহ বিয়ের পর যে আমার কি হবে আল্লাহই জানে। তাড়াতাড়ি হাট ইলা নইলে আজ তুই কিছুই করতে পারবি না। তাড়াতাড়িইই”

ইলা আর মেঘা তাদের নির্দিষ্ট স্থান পৌছালো সেখালে ইলা আর মেঘা রাস্তার আড়ালে দাড়িয়ে রইল।ইলা খবর পেয়েছে আজ অর্ণব চৌধুরী এই দিক দিয়েই যাবে তাই এই রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইল।অর্ণবের গাড়ি দূর থেকে দেখা গেলে ইলা রাস্তায় কয়েকটা পেরেক ফেলে দেয়।

ব্যস! অর্ণবের গাড়ির টায়ার পেরেকের সাথে লেগে টায়ারের হাওয়া শেষ হয়ে যায়। হটাৎ করেই গাড়ি দাঁড়িয়ে যাওয়ায় অর্ণব ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে,

“কি হয়েছে আংকেল?”

“বাবা মনে হয় গাড়ির কোন সমস্যা তুমি বসো আমি দেখছি।”

বলেই ড্রাইভার আংকেল গাড়ি চেক করে দেখলো টায়ার ব্লাস্ট করেছে।

“বাবা টায়ার তো ব্লাস্ট করেছে।”

“হোয়াট?”

“হ বাবা।তুমি একটু বসো আমি দেখছি।”

গাড়ির ড্রাইভার গাড়ি ঠিক করতে লাগলো।ইলা মেঘার কানে ফিসফিস করে বলতে লাগল,”কি রে,ওই লেজকাটা হনুমানটা কি বের হবে নাহ?”

“কিইই?লেজকাটা হনুমান!”

“আরে হে ওই অর্ণব চৌধুরী একটা লেজকাটা হনুমানই।”

“আমি জানি না তুই যেখানে আমিও তো সেখানেই।”

“হুম।”

অর্ণবের গাড়িতে বসে থাকতে ভালো লাগছিলো না। তাই গাড়ি থেকে বের হয়।

“ওই ওই দেখ লেজকাটা হনুমানটা বের হয়েছে। মাস্কটা পড় তাড়াতাড়ি।”

“হে হে পড়ছি।”

বলে মেঘা আর ইলা মাস্ক পড়ে নিলো তারপর ইলা রহস্যময় চোখে তাকিয়ে বলে,”মিশন স্টার্ট নাও।”

অর্ণব এদিক ওদিক ঘুরছিলো ঠিক তখনই অর্ণব নিজের গায়ে কিছুর আঘাত পেলো। অর্ণব পিছনে হাত দিয়ে দেখে আঠালো কিছু জিনিস।অর্ণব সামনে ফিরলে একটা ডিম পুরো অর্ণবের শার্টে লাগে।

“ইয়াক ছিঃ হোয়াট ইজ দিস।”

অর্ণবের বলতে দেরি কিন্তু পঁচা ডিম আর টমেটো ছুড়তে দেরি হচ্ছে না। অর্ণব চিল্লিয়ে বলতে থাকে,”ড্রাইভার কাকা। ড্রাইভার কাকা এসব কি হচ্ছে?”

“জানি না তো বাবা কোন বিচ্ছুরা এমন করছে?”

কিছুক্ষণের মধ্যেই অর্ণবের পুরো জামা নষ্ট হয়ে গেছে। অর্ণব আশেপাশে তাকিয়ে ইলার দিকে চোখ পড়তেই ইলা আর মেঘা জান নিয়ে পালায়।মুখে মাস্ক পড়ে থাকায় অর্ণব ঠিক করে দেখতে পায় নি।

“এ’মা বাবা গাড়ি তো ঠিক হয়েছে কিন্তু তুমি এ অবস্থায় কি করে যাবে?”

অর্ণব রেগে বলে,”আমি ওই মেয়েগুলোকে ছাড়বো না। এভাবে অর্ণব চৌধুরীকে রাস্তায় হেনস্তা করা এর ফল তো ভোগ করতেই হবে। ”

বলেই অর্ণব রাগে ফুসফুস করতে করতে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয়। এভাবে তো আর অফিসে ঢোকা যায় না।

_________________________

আজও ভার্সিটিতে একটা ক্লাসও হয় নি।মেঘা,ইলা আর পিহু ভার্সিটি ঘুরছে আর আড্ডা দিচ্ছে। আড্ডার মধ্যে মেঘা বলে উঠে,

“আচ্ছা ভার্সিটিতে কোন ইয়াং টিচার নেই?”

পিহু অবুঝ মনে প্রশ্ন করে,”আছে তো কিন্তু কেন?”

“বাহ রে,আমাকে পটাতে হবে না বুঝি?” বলেই দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিলো। মেঘার এমন ব্যবহারে ইলা ফট করে হেসে বলে,

“হে তুই পটাবি আর স্যার পটে যাবে,হা হা হা।”

“এই হাসিস না তো আমি কি কম সুন্দরী নাকি?”

পিহু মেঘার আপাদমস্তক দেখে বলে,”একটু কম।”

ইলা পিহুর কথা শুনে আরও হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

“হে রে পিহু আগে জানতাম ইলা একাই আমার শত্রু এখন কি না তুইও।যাহ সবার সাথে আড়ি কারোর সাথে কোন কথা নেই।”

“এই এই মেঘুরানী দেখি লাগ কলেছে আমাদের উপর। হে রে ইলা মেঘুরানীর রাগ কিভাবে ভাঙাবো রে।”

“কিভাবে আবার আরও রাগিয়ে দিয়ে।”

বলেই ইলা আর পিহু হাসতে লাগলো।মেঘা আরও রাগ দেখিয়ে বলে,”তোদের খুব মজা হচ্ছে না থাকবো না আমি তোদের সাথে।”

বলেই মেঘা সামনের দিকে হাটা শুরু করল।ইলা পিছন থেকে ঠাট্টার সুরে বলে,”এই যে রাগের রাণী দাড়ান।”

মেঘা উল্টো হাটতেই বলে,”আমি রাগী তো দূরে থাক। থাকবো বা তোদের সাথে?”

বলেই সামনে ঘুরতে মেঘা কারোর সাথে বারি খায়। মেঘা রাগে চেঁচিয়ে বলে উঠে,

“এই কোন খাম্বা রে আমার সামনে দাঁড়ায়।”

মেঘা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে সামনে সীমান্তকে আবিষ্কার করে। মেঘার তো এমনিই রাগ ছিলো আরও সীমান্ত কালকে হাত ধরায় বেশ রাগী গলায় বলে উঠে,

“তাই তো বলি সীমান্ত বুড়ো থাকতে আর কোন খাম্বা লাগে নাকি আমাকে আঘাত করতে।”

“কি আমি খাম্বা?”

“ভেবেছিলাম আপনি শুধু খাম্বা কিন্তু না আপনি তো সাথে বয়রাও।”

সীমান্ত এবার বেশ রেগে বলে,”কি আমি বয়রা?”

“আজ্ঞে হে আপনি বয়রাই।”

“তোমার এতো বড় সাহস তুমি তোমার একজন সিনিয়রকে ডিসরেসপেক্ট করছো?”

“ওরে আমার সিনিয়র আপনি আমায় কত্তো রেসপেক্ট করেন সেটা তো দেখতেই পারছি।”

ইলা আর পিহু মুখ চেঁপে হাসছে।ইলা বেশ বুঝতে পারছে মেঘা তার উপরের রাগ সীমান্তের উপর ঝাড়ছে। আর এদিকে বেচারা সীমান্ত মেঘার রাগের কারণ খুঁজে না পেয়ে উল্টো মেঘার ঝাড় খাচ্ছে।

“আজব মেয়ে নিজে এসে আমার সাথে ধাক্কা খেলে আর এখন নিজেই আমায় কথা শুনাচ্ছো?”

“তো আপনি কি চোখ গুলো আকাশে নিয়ে হাটেন যে দেখতে পান নি আমি আসছিলাম।”

“তা আপনি বুঝি আপনার চোখগুলো রসগোল্লার হাড়িতে নিয়ে হাটেন বুঝি?”

“কেন আপনি দেখতে পাচ্ছেন না আমার কাছে কোন রসগোল্লার হাড়ি নেই তাহলে আমি কি করে আমার চোখগুলো রসগোল্লার হাড়ির ভিতরে রাখবো।”

“আপনি তো দেখছি বড্ড বেশি তর্ক করেন।”

“তা আপনি বুঝি খুব শান্ত।”

ইলা বুঝতে পারছে ব্যাপারটা অন্যদিকে যাচ্ছে তাই মেঘাকে শান্ত করতে আসে।

“মেঘু বেবি প্লিজ কুল বেবি কুল।”

“নো বেবি কুল হতে আমি পারবো না।আই এম সো হট।”

সীমান্ত,বৃষ্টি, পিহু,ইলা একসাথে বলে,”এহহহহহহহ”

মেঘা নিজের হুসে ফিরলে বলে,”না মানে হট মানে গরম গরম।যা গরম টাই না পড়েছে।”

বলেই সীমান্ত আর বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে চলে গেল। ইলা আর পিহু বুঝতে পেরেছে মেঘা লজ্জা পেয়েছে। তাই ওরাও পিছু পিছু গেল।

“হে রে বৃষ্টি, ব্যাপারটা কি হলো রে?”

“কি জানি?নিশ্চয়ই এই মেয়ের মাথায় গগন্ডগোল আছে।”

“হয়তো।”

বলেই তারা নিজ নিজ কাজে চলে গেল।মেঘা রাগে গটগট করে সামনে এগিয়ে গিয়ে কতোগুলো বাইক আর একটা গাড়ি দেখলো। মেঘা একটা মেয়ের কাছ থেকে জেনে নিয়েছে যে গাড়িটা সীমান্তের। ব্যস গাড়ি আর কে বাঁচায় মেঘা কিছু না বুঝেই একটা ইট নিয়ে গাড়ির গ্লাসে ছুড়ে মারল।সাথে সাথে গাড়ির গ্লাসে ফাটল ধরল।

ইলা আর পিহু এসে দেখে মেঘা এসব কান্ড বাজিয়ে বসেছে। ইলা ভয়ার্ত গলায় বলে,”মেঘা এটা তুই কি করলি?”

“জানি না।”

পিছন থেকে সীমান্তদের গলার স্বর শুনে ইলা তাড়াতাড়ি বলল,”মেঘা পিহু পালায়ায়ায়ায়ায়ায়া।”

বলতে দেরি কিন্তু ছুটতে দেরি না। আর মেঘা পিহু ইলাকে রেখেই দৌড় দিল।ইলাও বলতে বলতে ছুট লাগালো।

“আরেএ আমাকে নিয়ে তো পালাবি।”

#চলবে

#একটু_ভালোবাসি
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব- ০৬

সীমান্ত রাগে ফুলছে আর বিহান সুজাতা বৃষ্টি উৎসুক দৃষ্টিতে দেখছে। সীমান্ত খুবই শান্ত ছেলে সহসা খুব একটা রাগে না সেখানে সীমান্ত রাগে ফুসছে মানে কিছু তো হয়েছে।

তখন কোন কিছু ভাঙ্গার আওয়াজে সীমান্ত সামনে এগিয়ে যায়। তখন নিজের গাড়ির এই অবস্থা আর মেঘা, ইলা, পিহুকে দৌড়াতে দেখে সীমান্তের আর বুঝতে বাকি নেই যে তার গাড়ির গ্লাস কে ভেঙেছে। এইজন্যই সীমান্ত রাগে ফুঁসছে তার এতো শখের গাড়ির কেউ বারোটা বাজায় দিয়েছে এটা তো আর সীমান্ত সহ্য করতে পারে না।এদিকে সীমান্ত রাগে কাউকে কিছু বলছেও না। তাই সুজাতা বুদ্ধি করে অর্ণবকে ফোন দিল।

“হুম বল, আ’ম বিজি পরে কথা হবে।”

“আরে শোন না,ইম্পোর্টেন্ট কথা আছে।”

“ওকে বল।”

“সীমান্তর না কি যেনো হয়েছে তখন থেকে মুখ বন্ধ আবার রাগে ফুঁসছে। কিছু কর তো?”

“মানে?ওর আবার কি হলো দে তো ফোনটা।”

সুজাতা সঙ্গে সঙ্গে সীমান্তকে ফোনটা দিল।

“হে রে কি হয়েছে তোর এমন গোমড়ামুখো করে বসে আছিস কেন?”

সীমান্ত অত্যন্ত গম্ভীর গলায় জবাব দিল, “কিছু না”

“কিছু তো হয়েছে?আচ্ছা ইলারা আজ কিছু করেছে তাই নাহ?”

“ইলা না ওই মেঘ না আকাশ।”

“মানে?”

“আরে ইলার সাথে আর একটা থাকে না সেই মেয়েটা মেঘা।”

অর্ণব অবাক হয়ে বলে,”মেঘাও আবার কিছু করতে পারে।”

“করতে পারে না মানে কি করেছে সেটা শোন।”

বলেই সীমান্ত অর্ণবকে মেঘার করা সমস্ত কাহিনি বলতে লাগলো।
মেঘার কাহিনি শুনে অর্ণব বুঝতে পারলো যে সকালের কাজটা আর কারোর নয় মেঘারই বেস্ট ফ্রেন্ড ইলা।মুহুর্তেই অর্ণবের রাগে গলার রগ ফুলে উঠল।অর্ণবের চোখ দিয়ে রাগে আগুন বের হচ্ছে।

অপরপাশ থেকে অর্ণবের কোন আওয়াজ আসছে না দেখে সীমান্ত বলে উঠল,”কি রে তোকে কি বোবায় ধরেছে?কিছু বলছিস না কেন?”

“ওই মেঘাকে নিশ্চয়ই ইলাই বুদ্ধি দিয়েছে।”

“ইলা!”

“হে,ইলা।জানিস আজ আমার সাথে ওই মেয়েটা কি করেছে?”

“মানে?ইলার সাথে তোর দেখাই বাহ হলো কখন আর ইলা কি করেছে?”

এরপর অর্ণব ওর কাহিনি সীমান্তকে বলছে। সীমান্ত অর্ণবের কথা শুনে কোন মতে নিজের হাসি আটকে রেখেছে। অর্ণব বুঝতে পারছে যে সীমান্ত মিটমিট হাসছে।

“আমাকে ওরা এভাবে হেনস্তা করল আর তুই কি না হাসছিস?”

“আরে না না হাসবো কেন,হি হি।”

“নাহ তুই হাসবি কেন?হাসছে তো তোর আত্না।”

“তা অবশ্য ঠিক বলেছিস।”

“সীমান্ত এবার কিন্তু আমার রাগ উঠছে।”

“ওকে ওকে সর‍্যি।কিন্তু এখন ওদের শায়েস্তা করতে হবে বড্ড বাড় বেড়েছে মেয়ে গুলোর।”

“হুম কিন্তু কি করবি?”

“তা রাতেই তোকে বলবো এখন একটু বিজি।”

বলেই অর্ণব সীমান্তকে কোন কথার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিল।

“ওহহহ,এই ছেলেটাও না ওলয়েজ বিজি বিজি এন্ড বিজি।”

বৃষ্টি বলে উঠে,”তবে যে যাই বলিস মেয়েগুলোকে কিন্তু শিক্ষা দিতে হবে।”

সুজাতা বলে উঠে,”তা নয়তো কি?তবে তোরা পারবি না আমাদের হাতে ছেড়ে দে। আমরা ম্যানেজ করে নিব।”

বিহান সুজাতাকে টিটকানি মেরে বলে উঠে,”হে হে কত্তো যে পারোস তা তো জানাই আসে সেদিন মেয়েটাকে ধরতে পর্যন্ত পারলি না তোদের নিয়ে কাবাডি খেললো ও আর এখন এসেছে আমরা,ম্যানেজ করে নিব।”

“দেখ বিহান মোটেও আমাদের টিটকানি মারবি না।”

“ঠিক বলেছিস সুজাতা।বিহান একদম টিটকানি মারবি না।আমরা কি পারি আর না পারি তা তোদের কাল দেখিয়েই দিবো।”

“আর কাল যদি মেয়েগুলো না আসে।”

সুজাতা রহস্যময় হেসে বলে,”তো যেদিন আসবে সেদিন মেয়েটাকে বুঝিয়ে দিবো আমরা কি জিনিস?”

__________________

ইলা বিকেলে একটু ঘুরতে বেরিয়েছে। আসলে ঘুরতে বেরিয়েছে বললে ভুল হবে মেঘার বাসার উদ্দেশ্য বেরিয়েছে। মেয়েটা সেদিন রাগে ৫টা আইস্ক্রিম খেয়ে জ্বর বাধিয়েছে।তারপর ২ দিন মেঘা ভার্সিটিতে যায় নি। যেহেতু মেঘা যায় নি তাই ইলাও যায় নি। তাই আজ মেঘাকে দেখতেই ইলা বেরিয়েছে। পথিমধ্যে ইলা খেয়াল করল সেই ছেলেগুলো ইলার আবার পিছু করছে।ইলা এবার যেনো একটু ভয় পেয়ে গেল।ইলা বিড়বিড় করে বলতে লাগল,”এই ছেলেগুলোর কি কোন কাজ নেই?আমাকে রাস্তায় দেখলেই এদের পিছু করতে হবে?উফফ ইলা আপ কেয়া কারেগি।”

ধীরে ধীরে ছেলেগুলো ইলার কাছে আসতে থাকে আর ইলার ভয় আরও তীব্র হতে শুরু করে। ইলা বুদ্ধি করে এবার ফোনটা বের করে জোরে জোরে বলতে লাগে,”হে পুলিশ কাকু তুমি কতো দূরে দেখতে পাচ্ছি না তো?”
………..

“আরে পুলিশকাকু একটু আগাও নাহলে আমি পাবো কি করে?”
………..……

“হে হে আমি জানি তো তুমি আমায় কত্তো ভালোবাসো।আমার কিছু হলে তুমি সহ্যই করতে পারবে না।”
………….….

“আমি জানি তো আমার গায়ে একটা টার্চ ও লাগলে তুমি তাকে খুন করবে ডোন্ট ওয়ারি,আই এম ফাইন।”
……………..

ইলা পিছে ফিরে দেখে ছেলেগুলো আর নেই। তাহলে ছেলেগুলো ইলার কথা শুনে পালিয়েছে।ফোনের অপরপ্রান্তে কেউই ছিলো না তাই ইলা এভাবে অভিনয় করে নিজেকে ডিফেন্ড করেছে। ইলা তীব্র রাগে বলে উঠে,”কাপুরষের দল।”

বলেই ইলা রাগে গটগট করে হেটে চলে যায়। দূর থেকে একজন লোক ইলাকে দেখে মুচকি হেসে বলে,”সো ইন্টালিজেন্ট এন্ড ব্রেভ গার্ল।ইম্প্রেস।”

বলেই সেই লোকটি তার উদ্দেশ্য রওনা হয়।

________________

সীমান্ত আর অর্ণব রুমে বসে ভাবছে। আসলে ভাবছে সীমান্ত অর্ণব তো শুধু ল্যাপটপে বসে কাজ করছে। ২ দিন হয়ে গেলে মেয়ে দুটোর কোন পাত্তা নেই।আসলে অর্ণব আর সীমান্ত দুজনেই দুজনের কাজিন। সীমান্ত অর্ণবের ছোট কাকার ছেলে। আর অর্ণবরা জয়েন্ট ফ্যামেলি তাই একসাথেই থাকে।

“হে রে, অর্ণব মেয়েগুলো হটাৎ করেই কোথায় লাপাত্তা হয়ে গেলো রে?”

অর্ণব ল্যাপটপে মুখ গুজে বলে,”আমি কি জানি?এতো ইলোলজিকাল ম্যাটারে অর্ণব চৌধুরী ধার ধারে না।”

“হে তা ধারবে কেন?যখন ইলা ডিম ছুড়ে মেরেছিল তখন তো ঠিকই গায়ে লেগেছিলো?”

অর্ণব রাগ নিয়ে ল্যাপটপ থেকে মুখ সরিয়ে সীমান্তকে বলে “দেখ সীমান্ত, মাথা গরম করবি না।এমনিতেই ওই মেয়েটার কান্ডে মেয়েটাকে যতক্ষন না শাস্তি দিতে পারছি ততক্ষন আমার শান্তি নেই।”

“তাহলে তুই এতো চুপচাপ আছিস কিভাবে?”

“কারণ নিশ্চয়ই ওদের কোন প্রবলেম হয়েছে তাই ওরা আসে নি।এটা নিয়ে এতো প্যারা নিস না।”

“হুম হুম। আচ্ছা বিহানের কি খবর?ও কিছুদিন ধরে আসছে না।”

“জানি না।”

এমন সময়ই আশা চৌধুরী ঘরে ঢুকে অর্ণবের উদ্দেশ্য বলে,”কার এতো হদিস করা হচ্ছে বুঝি?”

সীমান্ত তাড়াতাড়ি উঠে বলে,”আরে বড় আম্মু কখন এলে তুমি?এখানে বসো।”

“আরে থাম থাম এতো যত্ন করতে হবে না।”

“যত্ন করতে হবে না মানে তোমার পায়ের ব্যাথাটা তো বেড়েছে নাকি?”

“হুউ দেখছিস তুই আমার আসল ছেলে আর আমার আপন ছেলে আমার দিকে ঘুরেও তাকাচ্ছে না?”

সীমান্ত তাকিয়ে দেখলো অর্ণব ল্যাপটপে মুখ গুজে কাজ করছে। সীমান্ত অর্ণবের দোষ ঢাকতেই বলে,”আরে বড় আম্মু ও তো বিজি তাই নাহ?”

“হইছে আর বন্ধু অরুপে ভাইয়ের দোষ ঢাকতে হবে না।”

“তোমার ব্যাথার ওষুধ তোমার রুমে ওয়ারড্রবে রয়েছে।”

অর্ণবের আওয়াজে সীমান্ত চমকিয়ে উঠে তারপর হাসিমুখেই বলে,”এটাই আমার আর অর্ণবের মধ্যে পার্থক্য। আমি তোমার কেয়ার করি দেখিয়ে অথচ অর্ণব কিছু বুঝে উঠার আগেই কাজ সেরে ফেলে।”

আশা চৌধুরী নিজেও জানে তার ছেলে তার ব্যাপারে কতো পসিসিভ।তাই তো সে ছেলেকে কিছুই বলতে পারে না তবে আর নয়। এবার তার ছেলেকে কিছু বলতেই হবে।

“সীমান্ত তুমি একটু বাহিরে যাও তো আমার অর্ণবের সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।”

সীমান্ত একটু অবাক হলেও বড় আম্মুর কথা সায় মেনে চলে যায়। আশা চৌধুরী অর্ণবের পাশে এসে বসে।

“অর্ণব আমার তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা ছিলো।”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here