#একটু_ভালোবাসি,০৭,০৮
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব – ০৭
“কিইইইই বিয়েএএএ”
বলেই একপ্রকার অর্ণব লাফ দিলো।আশা চৌধুরী সোজা এসে অর্ণবকে বলে যে তার বৌমা চাই। আর তাকে এই মাসের মধ্যেই বিয়ে করতে হবে। তা শুনেই অর্ণব লাফ দিয়েছে।
“মম নো আমি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করব না?ইটস মাই ফাইনাম ডিসিশন।”
“আমি কিছু শুনতে চাই না অর্ণব এটাই তোমার বাবার ডিসিশন। আশা করি তুমি তোমার বাবার ডিসিশন অগ্রাহ্য করবে না।”
“বাট মম…….”
“যা বলার তোমার বাবার সাথে কথা বলবে।”
আশা চৌধুরী অর্ণবের কোন কথা না শুনেই চলে যায়। অর্ণব রাগে মাথায় চুল খিঁচে ধরেছে।
“একদিকে ভার্সিটিতে এই মেয়ের জ্বালা আরেকদিকে বাসায় মমের বিয়ের জ্বালা।ওহহহহ আমি নির্ঘাত পাগল হয়ে যাবো।”
বলেই অর্ণব দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।কিচ্ছু ভালো লাগছে না তার।
________________
“একুশ,বাইস,তেইশ,চব্বিশ এই চব্বিশ হয়নি আবার কর।হে এইবার হয়েছে চব্বিশ, পঁচিশ……”
এসব বলছে আর ইলা পেয়ারা খাচ্ছে। আর এদিকে ইলার সামনে মেঘা কান ধরে ইলার সামনে উঠবস করছে।মেঘা কান ধরা অবস্থায় বলল,”ইলা স্টপ দিস। আ’ম সিক ইউ নো দ্যাট।”
“তোওঅঅঅঅঅঅ আজ তোকে দেখতে এসে আমি কতো বড় একটা বিপদে পড়ছিলাম তার বেলা না না সেই শোধ আমি তোর উপর দিয়েই তুলবো।”
মেঘা কান ছেড়ে বলে,”ওই শয়তান গুলোরে যদি আমি পেতাম খুন করতাম ওদের জন্যই এখন আমাকে কান ধরে উঠবস করতে হচ্ছে।”
“তো শুরু কর আবার।”
“ইলা আর না প্লিজ ওলরেডি ২০ বার করেছি।”
“ওকে যা মাফ করলাম।”
মেঘা ইলার পাশে বসতে বসতে বলে,”সিক আমি আর ফল খাচ্ছে সে?”
“কেন তুইও খাঁ আর বাই দ্য ওয়ে আমি অতিথি বুঝলি সো ডোন্ট আন্ডারস্টিমেড মি।”
“এহহহহ তুই আর অতিথি। যে কি না মাসে ২/৩ বার আসে সে কি করে অতিথি এটা আমাকে একটু বুঝা তো?”
ইলা পেয়ারা খেতে খেতে আবার বলে,”এভাবেই বুঝে নে।”
“হইছে আমার আর বুঝা লাগতো না।”
“হুম গুড।তো কাল তো ভার্সিটি যাবি?”
“না রে।পরশু যাবো নি।”
“কিন্তু কাল তো আমাকে ভার্সিটি যেতেই হবে যদিও আমি চাই না বাট কাল বন্ধ দিলে আম্মু নিশ্চয়ই ভাববে কোন সমস্যা আছে তাই যেতেই হবে।”
মেঘা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,”হে তো তুই যা।”
ইলা মেঘার কান ধরে বলে,”সেদিন যে তুমি ওই ভাইয়াটার গাড়ি ভেঙেছিলে তা কি ভুলে গেছো?”
তড়িৎ এর গতিতে মেঘা সমস্ত কিছু মনে পড়ে যায়।
“আরে হে তো আমি তো সেদিন ওই ছেলেটার গাড়ি ভেঙে ছিলাম।এখন কি হবে?”
“কি হবে মানে?কাল তো ছেলেগুলো আমায় ধরবে।ভেবেছিলাম একসাথে বাঁশ খাবো তা না সেই আমায় একাই খেতে হচ্ছে।”
“আহারেএএ”
“এই একদম আফসোসের সুর দিবি না।কে বলেছিলো সেদিন রাগ মিটাতে ওতোগুলো আইস্ক্রিম খেতে।খেয়ে জ্বর বাধাঁলি।”
“ভালোই হয়েছে।কালকের বাঁশটা তুই খাঁ।নেক্সট দিন আমি তোর সাথে আসি।”
“হুম দেখা যাবে বাঁশ খাবো নাকি দিবো?”
“মানে?”
ইলা রহস্যময় হেসে বলে,”মানে তো মানেই।”
তারপর দুই বান্ধুবীর মধ্যে কিছুক্ষণ কথা হয়ে ইলা নিজের বাড়ি চলে যায়।
________________________
ইলা রিকশা দিয়ে যাচ্ছে। আজ যেনো ভার্সিটির পথও কম মনে হচ্ছে।মনে মনে একটু ভয়ও কারণ ইলা খুব ভালো করেই জানে অর্ণব জেনে গেছে যে সেদিন অর্ণবের গায়ে ঢিল ইলাই ছুড়ে ছিলো।এই নিয়ে ইলা ভীষণ ভয়ে আছে।
ইলা বিড়বিড় করে বলতে লাগল,”ওহ আল্লাহ গোও,তুমি তো আমার সব কথা শুনো। এবারের মতো আমাকে বাঁচায় নেয় গো প্রমিজ করছি একদম শান্ত মেয়ে হয়ে যাবো।এই নাহ ইলা তুই কখনোই শান্ত হতে পারবি না।নাহ নাহ আল্লাহ আমি ১ সপ্তাহ শান্ত মেয়ে হয়ে থাকবো। কারোর সাথে কোন ঝামেলা করব না প্রমিজ।প্লিজ আল্লাহ আজকে ওই লেজকাটা হনুমানের সাথে যেন দেখা না হয়। প্লিজ আল্লাহ আমার কথা টা একটু রাখো।”
“আফা আইয়া পড়ছি।”
ইলা দেখলো তার ভার্সিটি চলে এসেছে।
“যাহ বাবা এতো তাড়াতাড়ি চলে আসা লাগলো।”
“কিছু কইলেন আফা।”
“না না মামা কিছু কই নাই।”
ইলা রিকশা থেকে নেমে ভাড়াটা মিটিয়ে দিয়ে ভার্সিটির ভিতরে ঢুকে গেলো।মনে মনে শুধু আল্লাহকে ডাকছে যেনো অর্ণবের সাথে আজ কোন মতেই তার দেখা না হয়।
“এই যে মেয়ে শুনো।”
ইলা পিছে ফিরে দেখলো অর্ণবের দলের মেয়েগুলো।হয়তো ছেলেগুলো আশেপাশেই কোথাও আছে।ইলা পিছনে ফিরব সবিনিময়ে সালাম বিনিময় করে বলল,
“জ্বি আপু কিছু বলবেন?”
সুজাতা বলল,”নাম কি তোমার?”
“জ্বি ইলা।”
বৃষ্টি ফট করে বলে উঠল,”তোমার সাথে না আরেকজন থাকে সে কই?”
ইলা বুঝতে পারল বৃষ্টি মেঘার কথা বলছে আর পিহুকে ইলার সাথে তারা এখনো দেখে নি।ইলা একটু আফসোসের সুরে বলে,”কি বলব আপি?দু’দিন ধরে ও জ্বরে ঘর বন্দী তাই তো আসতে পারে নি?”
সীমান্ত পাশ থেকে বলে,”হে আমার শখের গাড়ির গ্লাস ভেঙে এখন সে জ্বর বাধিয়েছে।”
ইলা দেখলো সীমান্ত আর বিহান এসে সুজাতা আর বৃষ্টির সাথে দাঁড়িয়েছে।
“আসলে তা নাহ ভাইয়া রোগ কখন যে আসে তা তো বলা যায় না।”
বিহান বলে উঠে,”তাও ঠিক।”
ইলা ভালো করে লক্ষ্য করল অর্ণব নেই। মুহুর্তেই ইলা খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে পড়ল।ইলা খুশিতে মনে মনে বলতে লাগলো,”আল্লাহ থাংকু থাংকু এই লেজকাটা হনুমানের সাথে দেখা না হওয়ার জন্য।”
“কাকে নিয়ে কথা হচ্ছে রে?”
পুরুষালী কন্ঠে ইলা পিছনে ফিরতেই অর্ণবকে আবিষ্কার করল।এবার ইলার খুশিত্ব মুখে ভিড় করলো কালো মেঘ। ইলা অর্ণবকে দেখে আবার মনে মনে বলতে লাগলো,”যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যো হয়।কি ভাগ্য আমার?যার ভয়ে সারা দুনিয়ার থেকে পালাই সে স্বয়ং আমায় নিজে থেকে ধরা দেয়। আল্লাহ এটা তুমি কি করলা?ইলা আপ কেয়া হোগা তেরা?”
ইলা ভয়ে ভয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে।ইলার ভয়ার্ত চেহারা দেখে অর্ণবের মুখে কিঞ্চিৎ রহস্যময় হাসির রেখা উঠে।
“আরে মিস.বান্দরনী আপনি এখানে?”
মিস.বান্দরনী নামটা শুনেই ইলার মাথার আগুন ধরে গেলো।কিইই তাকে কি না বান্দরনী নাম দেওয়া হচ্ছে?
“এই যে মি.লেজকাটা হনুমান আপনি এভাবে আমায় বান্দরনী বলতে পারেন না।”
লেজকাটা হনুমান নাম শুনে অর্ণবের ভ্রু কুচকে উঠলো। আর সবাই তো অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বিহান ইলাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“কি লেজকাটা হনুমান?”
“তা নয়তো কি ওনার একটা লেজ থাকলে উনি হনুমানই হতেন। আর উনি তো শুধু লেজকাটা হনুমান নয় এটিটিউড কিং ও বটে।কি এটিটিউড রে বাবা,সেদিন একটু হেল্প করেছে তাই বলে আমাকে থার্ড ক্লাস,রাস্তার মেয়ে কত্তো কিই না বললো।”
“আর তুমি যে আমায় রাস্তায় জানু,বেবি বলে ডাকছিলে তার বেলায়।এসব শুনলে যে কেউ রাস্তার মেয়েই বলবে।”
ইলা অর্ণবের দিকে তেড়ে দিয়ে বলে,”হেই মি.এটিটিউড কিং একদম আমায় তেজ দেখাবেন না।রাস্তার মেয়ে মানে? কি করেছি কি আমি তো শুধু জানু বেবি এসবই বলেছি।আর এসব বলা মানেই রাস্তার মেয়ে না।”
“দেখেছিস তোরা কিভাবে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করছে সাধে কি আর মিস.ঝগড়ুটে নাম দিয়েছি।”
“হে সবাই দেখছে আমি কি করে আপনাকে হেনস্তা করছি।আর মিস.ঝগড়ুটে মানে আমি শুধু নিজেকে ডিফেন্ড করছি।”
“ডিফেন্ড না ছাই তুমি আমার ঝগড়া করছো নিজে ভুল করে নিজেই পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করছো।”
“মোটেও না।আমি কোন ভুল করি নি।আর আমি ডিফেন্ড করছি।”
“মোটেও না ঝগড়া করছো।”
“ডিফেন্ড করছি।”
“ঝগড়া করছো।”
“ডেফিন্ড করছি”
“আমি বলছি ঝগড়া করছো।”
“আমি বলছি ডিফেন্ড করছি।”
“স্টপপপপপপপপপপপপ”
সাথে সাথে অর্ণব আর ইলা চুপ হয়ে যায়। সবাই অবাক হয়ে এতোক্ষন অর্ণব আর ইলার ঝগড়া দেখছিলো।শেষে সুজাতা ওদের থামায়। সুজাতা অবাক কন্ঠে বলে,
“কি শুরু করেছিস তোরা? বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছিস?ডিফেন্ড করছি ঝগড়া করছি ডিফেন্ড করছি ঝগড়া করছি মানে তোরা ডিফেন্ড ঝগড়া করছিস না তোরা যুদ্ধ করছিস। অর্ণব তুই কবে থেকে এতো ঝগড়া করা শিখলি রে?”
অর্ণব ইলার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে,”ঝগড়ুটের সাথে কথা বললেই তো দেখি ঝগড়া লেগে যায়।তাতে আমার কি দোষ?”
ইনোসেন্ট ফেস করে অর্ণব সুজাতাকে বলে।
“হেইইইই……..”
ইলা রেগে অর্ণবকে কিছু বলতেই যাবে তার আগে সুজাতা ইলাকে থামিয়ে বলে,”বোন আমার তোমার ক্লাস নেই।যাও বোন ক্লাসে যাও আর কোন ঝগড়ার দরকার নেই।”
ইলা বিনা বাক্য ব্যয় করে চলে যায়।এদিকে অর্ণব বলে,
“সুজাতা তুই ওকে ছেড়ে দিলি কেন?”
“তো কি করব?যেভাবে বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছিস?তাতে আমার কিছু বলার নেই।তোদের এই ঝামেলায় আমি নেই বাই।”
বলেই সুজাতাও চলে গেল। বৃষ্টি আফসোসের সুর করে বলল,”অর্ণব এবার কি হবে?”
অর্ণব আবার রহস্যময় হেসে বলে,”এবার যা হবে তা ইলার জন্য মোটেই ভালো হবে না।”
#চলবে
#একটু_ভালোবাসি
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব- ০৮
“কি রে এতোদিন কোথায় ছিলি তুই?”
“জামাইবাড়ি।”
“মানে?”
“মানে এই কয়দিন জামাই খুব আদর করছে তো তাই ভার্সিটির নামটাই ভুলে গেছিলাম।আরে মেঘা অসুস্থ ওকে ছাড়া আমি একা একা বাঁশ খাবো তা তো আর হতে পারে না তাই আর আসি নি।”
পিহু একটু অবাক হয়ে ইলার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুই যেভাবে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললি আমি তো ভেবেছিলাম তোর বিয়েই হয়ে যাবে।”
ইলা এবার একটু অভিনয় করে বলে,”তা কি বলবো বান্ধুবী এত্তো বড় হয়েছি কিন্তু মা-বাবার চোখে আমি এখনো সেই পিচ্চিটিই আছি।তারা বুঝে না যে আমারও বিয়ের বয়স হয়েছে। কতোবার যে ইশারা ইঙ্গিতে বুঝিয়েছি কিন্তু তারা বুঝতে নাকোচ।”
পিহু একটু কিউরিওসিটি নিয়ে বলল,”তারপর।”
ইলা দুঃখী দুঃখী ফেস করে বলে,”তারপর আর কি একদিন সরাসরিই বলে দিছি ব্যস আমাকে ম্যারাথনে ফার্স্ট হওয়া থেকে আটকায় কে?”
পিহু হাসতে হাসতে বলে,”হা হা হা যা হয়েছে একদম ঠিক হয়েছে হি হি।”
হে হে হাসো বেশি করে। অবশ্য হাসানো টাও একটা আর্ট যেটা সবাই পারে না বুঝলে।” (পাঠকগণ আমি কি এই আর্টের আর্টিস্ট হতে পেরেছি?)
“হে হে বুঝেছি তুই মহা বড় আর্টিস্ট, হা হা হা।”
তারপর ইলা আর পিহুর মধ্যে টুকটাক কিছু কথা হয়।ইলা ক্লাস শেষ করে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয়।ইলা আজ হেঁটে হেঁটে বাড়ি যাচ্ছে। ইলা ভাবছে আজ অর্ণব তাকে কোন শাস্তি দিলো না বাহ হেনস্তা করলো না ব্যাপারটা কি? লেজকাটা হনুমানটা কি তাহলে ভালো হয়ে গেলো?”
তখনই ইলার সামনে কিছু ছেলে এসে দাঁড়ায়। আর ছেলেগুলোর সামনে অর্ণব এসে দাঁড়ায়। অর্ণবের প্ল্যান ইলাকে কিডন্যাপ করে তার বাড়িতে ১ সপ্তাহ কাজ করানোর নইলে কোন কিছু নিয়ে এমন ভাবে হুমকি দেওয়া যাতে ইলা খুব ভালো করে বুঝতে পারে অর্ণব চৌধুরী কি জিনিস?
ইলার সামনেই হটাৎই অর্ণব উপস্থিত হওয়ায় ইলা অপ্রস্তুত হয়ে যায় আর মনে মনে বলতে থাকে,”নে শয়তানকা নাম লিয়া ওর শয়তান হাজির।”
“এ’কি আপনি এখানে আর এরা কারা?”
“তোমাকে কিডন্যাপ করতে এদের নিয়ে এসেছি।কাল নিউজপেপার বড় বড় অক্ষরে লেখা থাকবে শ্রীমতী ইলা শেখ কিডন্যাপ। তাকে কুচি কুচি করে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
ইলার কাছে প্রথমে মজা লাগলেও এতোগুলো ছেলে দেখে ইলা বুঝতেই পারছে অর্ণব সত্যি সত্যি তাকে কিডন্যাপ করে খুব বাজে কিছু করবে।অর্ণব ইলার কাছে এলেই ইলা একটা ছুড়ি বের করে সোজা অর্ণবের গলায় ধরে।
“এই যে,মি.এটিটিউড কিং।আপনি রেডি তো খবরের হেডলাইন হতে?”
অর্ণব অবাক এমন পাল্টা আক্রমণে।সে তো ইলাকে ভয় দেখাতে চাইলো আর এখানে ইলা কি নাহ নিজেই তাকে ভয় দেখাতে চাইছে।
“কি মি.এটিটিউড কিং আপনার লোকদের সরতে বলবেন নাকি নাকি দিবো এটা গলায় ঢুকিয়ে।”
অর্ণব কিছুটা ভয় পেয়ে সবাইকে সরে যেতে বলে। ইলা লোকদের সরতে দেখে অর্ণবকে ছুড়িটা দিয়ে দিলো এক দৌড়।এ যেনো ম্যারাথন রেস লেগেছে। অর্ণব ইলার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। পিছন থেকে সীমান্ত আর বিহান এসে অর্ণবকে ডাকে।
সীমান্ত বলে উঠে,”হে রে অর্ণব এটা কি হলো?”
অর্ণব অবুঝ মনে বলে,”সেটাই তো কি হলো?”
বিহান অর্ণবের হাত থেকে ভালো করে দেখে অর্ণবকে বলে,”এই অর্ণব এটা তো নকল ছুড়ি।”
অর্ণব এ কথা শুনে যেনো আকাশ থেকে পড়ে।তাড়াতাড়ি বিহানের হাত থেকে ছুড়ি নিয়ে দেখে সত্যিই এটা নকল ছুড়ি।অর্ণব রেগে ছুড়িটা ভেঙে ফেলে বলল,”মিস.ইলা আই উইল কিল ইউ।এভাবে অর্ণব চৌধুরীকে বোকা বানানো এর রিভেঞ্জ তো আমি নিবোই।”
এদিকে সীমান্ত আর বিহান মুখ চেঁপে হাসছে।তাদের কল্পনার বাহিরে ছিলো যে ইলা এভাবে অর্ণবকে বোকা বানাবে।
______________________
এক ছুটে ইলা তার বাড়ি এসে পৌছালো।ইলা ঘরে ঢুকেই ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে ফেললো।
“ইসসস ইলা তোর না ম্যারাথনে নাম দেওয়া উচিত ছিলো তাহলে নির্ঘাত তুই ফার্স্ট হতি।এই অর্ণবের বাচ্চার জন্য যে কতোবার এভাবে দৌড়াতে হবে আল্লাহই জানে।”
“কি রে কি এতো বিড়বিড় করছিস আর এভাবে ছুটে এলিই বাহ কেন?পিছনে কি বাঘ পড়েছে নাকি?”
পারভীন শেখের কথায় ইলা আবার বিড়বিড় করে বলে,”বাঘ এ তো রাক্ষস সর্যি সর্যি রাক্ষসদের সর্দার।”
“না আম্মু আসলে আমি দেখছিলাম আমি এখনো ছোট বেলার মতো দৌড়াতে পারি কি নাহ?”
“হে দৌড়িয়ে পা ভাঙো তারপর পায়ে ব্যাথা হলে এই আম্মুর কাছেই আসবে।”
ইলা পারভীন শেখের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,”তা নয়তো আর কোথায় যাবো বলো তো?”
“হুম হয়েছে আর আদিক্ষেতা করতে হবে না।যাও ফ্রেস হয়ে আসো।”
“ওকে মাই সুইটি ডার্লিং।”
বলেই ইলা ফ্রেস হতে চলে যায়। তারপর ফোন করে মেঘাকে সব বলে। মেঘা তো সব শুনে হাসতে হাসতে শেষ।
“হে রে ইলা,আজ অর্ণব ভাই তোকে কিডন্যাপ করতে এসেছিল কাল যদি আরও ভয়ংকর কিছু করতে আসে।”
ইলা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,”এহহহহ আমি মনে ওনায় ছেড়ে দিবো।”
“তা বুঝি ধরে রাখবি?”
“আজ্ঞে না ওনাকে ধরে রাখার কোন ইচ্ছা আমার নেই।”
“তাই বুঝি?”
“জ্বি বুঝি।”
এভাবে আরও কিছুক্ষন ইলা আর মেঘার কথা হয়।
________________
আজ আশরাফ চৌধুরী দেশে ফিরেছে। বাবাকে ড্রপ করতে অর্ণব আগে থেকেই এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে আছে।কিছুক্ষন পরে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির সাথে অর্ণবের দেখা হয়।
“হেই স্ট্রং ম্যান।হাও আর ইউ?”
“নট ফাইন ড্যাড। এক ঘন্টা ধরে তোমার জন্য দাড়িয়ে আছি।”
“সর্যি সর্যি স্ট্রং ম্যান আসলে ফ্লাইট টা দেরি করে ফেললো।”
“ইটস ওকে ড্যাড।”
অর্ণব আশরাফ চৌধুরীকে গাড়িতে বসিয়ে তার সব জিনিসপত্র গাড়ির ডেস্কে রাখলো।তারপর নিজে এসে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালাতে লাগলো।গাড়ি চালাতে চালাতেই অর্ণব বললো,
“তা ড্যাড এতোদিন পরে তোমার মম আর আমার কথা মনে হলো।”
“কেনো স্ট্রংম্যান রাগ হচ্ছে বুঝি ড্যাডের উপর।”
“হুম অনেক।”
“এবার এসে পড়েছি এখন খুব সহযে দেশের বাহিরে যাবো না। আর ইউ হ্যাপি অর্ণব।”
“ইয়াহ সিউর ড্যাড।”
কথা বলতে বলতেই অর্ণব চৌধুরী বাড়ি পৌঁছে গেলো।একজন সার্ভেন্টকে দিয়ে আশরাফ চৌধুরীর সব জিনিস ভিতরে নিয়ে নেওয়া হলো।তারপর অর্ণব আর আশরাফ চৌধুরী ডিনার শেষে একটু আড্ডা করতে বসলো।আশরাফ চৌধুরী নিজের ছেলে এবং বউয়ের জন্য কিছু জিনিস নিয়ে এসেছে।
অর্ণব কিউরিওসিটি নিয়ে বাবার ব্যাগ খুলে চেক করতে গেলে দেখে একটা লাল রঙের কুর্তি।অর্ণব কুর্তিটা হাতে নিয়ে অবাক এতো রং চকচকা জামা তার মা পড়ে না তাহলে এটা কার?
অর্ণব কৌতুহল হয়ে প্রশ্ন করে,”ড্যাড এটা কার?”
“ওহ এটা,এটা তো আমার বন্ধুর মেয়ের জন্য এনেছি।”
অর্ণব অবাক হয়ে বলে,”তোমার বন্ধুর মেয়ে!”
“হে,মেয়েটা ভারি মিষ্টি সেদিন ও ছবি পাঠিয়েছিলো দেখলাম।ছোটবেলায় তুই ও দেখেছিস এখন হয়তো মনে নেই।”
“ওহহহ”
“ভাবছি তোর জন্য ওকেই আনবো।”
“ওহহ কিইইইইইইইই নেভার।আমি এখন বিয়ে করছি না।”
“আমার সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত অর্ণব। পরশুই আমরা মেয়ে দেখতে চাচ্ছি।”
“ড্যাড তুমি আমার উপর ফোর্স করতে পারো না।”
“আমি ফোর্স করছি না অর্ণব। আচ্ছা তোমার কি কোন মেয়েকে পছন্দ।”
অর্ণব ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,”না বরং সবাই আমাকে চায়।”
“তাহলে তোমার সমস্যা কোথায়?”
“আমি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাচ্ছি না।”
“আমার সিদ্ধান্তই শেষ সিদ্ধান্ত এর উপর আর কোন কথা হবে না।”
আশরাফ চৌধুরীর কঠিন গলায় অর্ণব আর কিছু বলার সাহস পেলো না।তারপর আশরাফ চৌধুরী চলে গেল।অর্ণবের ভীষণ রাগ হলো নিজের উপর। ড্যাডকে ভয় পেয়ে সে কখনোই ড্যাডের মুখের উপর কথা বলতে পারল না। অর্ণব নিজের মনকে এই বলে সান্তণা দিচ্ছে,”আরে খালি মেয়েই তো দেখতে যাচ্ছে,বিয়ে তো করতে হচ্ছে না। কুল অর্ণব কুল।তোর ফোকাস বিয়ে নয় তোর ফোকাস ইলা।এই মেয়েটাকে তোর শায়েস্তা করতে হবে এট এনি কস্ট।”
#চলবে