একটু_ভালোবাসি,১৫,১৬

0
1291

#একটু_ভালোবাসি,১৫,১৬
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব- ১৫

চারিদিকে রোরুদ্যমান। গাছের পাতা বেয়ে শিশির টুপ করে নিচে পড়ে যাচ্ছে।সবাই ব্যস্ত তার আপন গতিতে।পাখির কিচিরমিচির শব্দে পরিবেশের কোলাহলটাও যেনো মধুর লাগছে।এমন সময় একজনের হাতের বারির আঘাতে অর্ণবের ঘুম ভাঙে। অর্ণবের আর বুঝতে বাকি নেই যে তার উপর হাত কে রেখেছে।

কাল সারারাত ইলা এভাবে অর্ণবকে জ্বালিয়েছে যার ফলে অর্ণব সারারাত ঘুমাতে পারে নি।ভোরের দিকে ঘুম আসতেই ইলা আবার এখন অর্ণবকে জড়িয়ে ধরেছে।ইলা অর্ণবের এতো কাছে যে ইলার নিশ্বাস অর্ণবের ঘাড়ে আঁছড়ে পড়ছে।অর্ণব কোনমতে সামনের টেবিলে হাতড়ে নিজের ফোনটা নিয়ে দেখে ৮ঃ৩০ বেজে গেছে।অর্ণব আসতে আসতে ইলাকে ডাকতে শুরু করে কিন্তু মহারাণীর যে ঘুম তা তো ভাঙছেই না।

“ইলা এই ইলা”

“………”

“ইলা অনেক বেলা হয়ে গেছে উঠো প্লিজ।আমাকে ছাড়ো।”

“……….”

“ইলায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া।”

এবার ইলার একটু ঘুম ভাঙলো।ইলা ঘুমুঘুমু চোখে অর্ণবকে নিজের এতো কাছে দেখে কি মনে করে অর্ণবের গালে টুপ করে কিস করে আবার অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।এদিকে ইলার কিস করায় অর্ণব পুরো অবশ চলে গেছে।অর্ণবের হার্টবিট এতো দ্রুত চলছে যে মনে হচ্ছে অর্ণব এখনি হার্ট এট্যাক করবে।

ইলা প্রথমে এটা স্বপ্ন ভেবে পরে চোখ খুলে যখন সত্যি সত্যি অর্ণবকে এতো কাছে দেখলো তখনই এক চিৎকার দিয়ে দূরে সরতে গিয়ে ধপাস করে খাট থেকেই পড়ে গেলো।

“ও মা গোওঅঅ আমার কোমড়।”

ইলার চিৎকারে অর্ণবের হুস ফিরে তাড়াতাড়ি উঠে বসলো।অর্ণব হুড়মুড়ে বসে অর্ণব নিজেও এক চিৎকার দেয়।

“আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া”

অর্ণবের চিৎকারে ইলা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে,”আরে আরে আপনি চিল্লাচ্ছেন কেনো?”

“মানেএএএএ সকাল সকাল তুমি আমার গালে কিস করলে?হে আল্লাহ আমি এ মুখ সবাইকে কি করে দেখাবো?”

অর্ণবের এমন কথায় ইলার লজ্জায় মাটিতে ঢুকে পড়তে ইচ্ছে করছে।ইলার মনে হচ্ছে সে ছেলে আর অর্ণব একটা মেয়ে।ইলা লজ্জা ঢাকতে রাগ প্রকাশ করে বলে,

“কি শুরু করেছেন কাল রাত থেকে?কাল রাতেও রেপ রেপ করে মাথা খেয়েছেন আর সকাল বেলা কিস উফফফফ আর এদিকে যে আমি খাট থেকে পড়ে কোমড় ভেঙেছি তার দিকে কি কোন হুস আছে আদোও?”

অর্ণব খাট থেকে উকি মেরে ইলাকে দেখে হাত নাড়িয়ে বলে,”হাইইইই”

ইলার এবার সত্যি সত্যি রাগ উঠে গেলো।ইলা রেগে বলে,”আমি খাট থেকে পড়ে গেছি আর আপনি উপরে উঠে আমাকে হাই করছেন।বলছি মানবতা বলেও তো একটা কথা আছে তো হাত বাড়িয়ে আমাকে উঠতে সাহায্য তো করতে পারেন।”

“কেন কাল রাতে না বলেছিলে নারীরা পুরুষদের থেকে শোষিত হবে না তাইলে তো এখন তোমায় বাঁচালেও তুমি বলবে আমি অত্যাচার নির্যাতন করছি।”

ইলা কোনমতে খাট ধরে উপরে এসে বসে আর রেগে অর্ণবকে শোনাতে থাকে,

“এই এই সকাল সকাল আপনার সাথে ঝগড়া করতে চাই না।ও মা গো আমার কোমড় টা তো গেলো এ্যাাাাাাাাাাা”

অর্ণব বুঝতে পারে যে ইলার বেশ ভালোই লেগেছে।তাই অর্ণব উঠে গিয়ে একটা ব্যাথার মলম এনে ইলাকে দিয়ে বলে,” এটা লাগিয়ে নেও আর কিছু মেডিসিন নেও তাহলে ব্যাথাটা কিছুটা হলেও কমবে।”

ইলা সত্যিই অনেক ব্যাথা পেয়েছে তাই আর তর্ক না করে সোজা মেডিসিন নিয়ে নিলো।

______________________

আজ বিকেলেই ইলা আর অর্ণব চৌধুরী বাড়ি যাবে।ইলা তো যাবেই না ইলাকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।ইলা তো শুরু করেছে কান্না সে কি কান্না রে আশা চৌধুরী পর্যন্ত ইলাকে নিতে স্বয়ং এসেছে।ইলা আর মিলি দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে কাদঁছে।ইলাকে শান্ত করার জন্য আশা চৌধুরী বলে,

“মামনি তোমার যখন ইচ্ছা তখনই তুমি এ বাসায় চলে এসো।আর ওটাও তোমার নিজের বাড়িই চলো মামনি।”

ইলা আশা চৌধুরীর কথায় একটু শান্ত হয়। তারপর অর্ণব ইলাকে নিয়ে গাড়িতে বসে।অর্ণব মেইনলি ইলাকে হাঁসাতেই বলে,

“ইসসসস কেঁদে কেটে তো সব মেকআপ উঠিয়ে ফেলেছো এখন তো পুরো পেত্নি লাগছে।”

“………”

“এতোও কেউ কাঁদতে পারে পুরো পিচ্চিদের মতো কাঁদছে।”

ইলা এবারও নিশ্চুপ কিছুই বলছে না।অর্ণব আর কিছু বলে না।অর্ণব বুঝেছে এখন যাই বলা হোক না কেনো ইলা কোন রেসপন্স করবে না।প্রচন্ড কান্না করার ফলে ইলার মাথা বাথ্যা প্লাস ঘুম পাছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই ইলা ঘুমিয়ে পড়ল।ইলা জানলার কাঁচের সাথে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে। জানলার কাঁচটাও অর্ধেক খোলা।অর্ণব এটা দেখে ইলার মাথাটা নিজের কাঁধে নিয়ে নেয় আর জানলা আটকিয়ে দেয়।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ইলা চৌধুরী বাড়ি চলে আসে।অর্ণব ইলাকে ডাকা সত্বেও ইলার ঘুম ভাঙে না তাই বাধ্য হয়েই অর্ণব ইলাকে কোলে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

________________________

মেঘার আজ মন টা একটু খারাপ। ইলার বিয়ে হয়ে গেছে ইলা এখন আর আগের মতো ওদের টাইম দিতে পারবে না তাই।মেঘা বেলকুনি দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ঠিক তখনই মেঘার ফোনে এক আননোন নাম্বারে কল আসে।মেঘা রিসিভ করে কিছু বলার আগেই একজন বলে উঠে,

“মন খারাপ?”

মেঘা ব্যক্তিটির কন্ঠস্বর শুনেই চিনে ফেলে।মেঘা একটু গম্ভীর স্বরেই বলে,”আপনি আমার নাম্বার পেলেন কি করে?”

সীমান্ত একটু মুচকি হেসে বলে,”বাহ রে আপনি কি কোন সেলিব্রেটি নাকি যে আপনার নাম্বার পাওয়া যাবে না?”

“তা নয় কিন্তু আপনি পেলেন কোথায়?”

সীমান্ত পুনরায় মুচকি হেসে বলে,”পেয়েছি কোথাও?তার আগে বলুন মন খারাপ?”

মেঘা একটু আমতা আমতা করেই বলে,”আমার কেনো মন খারাপ হবে?”

“বেস্ট ফ্রেন্ড এর বিয়ে হয়ে গেলো তাই?”

“তাতে কি হয়েছে?ও তো আমার ফ্রেন্ডই আছে তাতে।আর আমার মন খারাপ নয় আমি খুব খুব হ্যাপি।”

“ওহ তাই বুঝি বেলকুনি দিয়ে মুখ গোমড়া করে আকাশ দেখা হচ্ছে?”

মেঘা প্রচুর অবাক হয়।ফোনটা কানে ধরেই এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,”আপনি কোথায়?আর আপনি কি করে জানলেন আমি বেলকুনিতে?”

“সিক্রেট। ”

“সিক্রেট মানে বলুন বলছি।”

সীমান্ত মুচকি হেসে নরম গলায় বলে,”আমি আপনার মনের ম্যাজিশিয়ান।তাই কখন কি করেন তা আমি ভালো করেই জানি।”

“মানে?হ্যালো হ্যালো”

মেঘার কথা শোনার আগেই সীমান্ত ফোন কেটে দেয়।এতে মেঘার একটু রাগ হয়।কিন্তু পরক্ষণেই ভাবে সীমান্ত এসব জানলো কি করে?মেঘা আরেকটু বেলকুনিতে খুঁজে তারপর রুমে চলে যায়।

______________________

পিহু আকাশে দিকে তাকিয়ে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।পিহু বুঝতে পারে না কেনো তার ভালোবাসাই পূর্ণ পেলো না।পিহু মনটা আজ ভীষণ খারাপ।মনে হচ্ছে আবহাওয়াটাও আজ তার সঙ্গী হয়ে গেছে।পিহু হাতে একটা গোলাপ ফুল সেটা টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলে দিলো।আজ চতুর্থবারের মতো সে ব্যর্থ হয়েছে।

পিহু ছোটবেলা থেকেই বিহানকে পছন্দ করতো।যেহেতু বিহান অর্ণবের ছোট বেলার বন্ধু তাই পিহুর সাথে বিহান ছোটবেলা থেকেই পরিচিত।ধীরে ধীরে পিহু বড় হয় আর বুঝতে পারে যে সে বিহানকে পছন্দ করে।বিহানের ব্যবহার, আচার-আচরণ সবকিছুতেই পিহু মুগ্ধ।

তাই পিহু কলেজ পড়ুয়া অবস্থায় নিজের মনের কথা জানাতে বিহানকে প্রপোজ করে কিন্তু বিহান সেই প্রপোজাল রিজেক্ট করে দেয়।এতেও পিহু হার মানে না।পিহু পরপর ৩ বার বিহানকে প্রপোজ করে কিন্তু আজ প্রপোজ করায় বিহান শুধু রিজেক্টই করে নি বরং চরম অপমানও করে যা পিহুর মনে লাগে।

পিহু আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি তো শুধু তোমাকে ভালোই বেসেছিলাম কিন্তু তুমি বারবার আমায় অবহেলা করেছো আর আজ তো আমাকে অপমান করতেও দু’বার ভাবলে না।আমি কি এতোই খারাপ যে আমাকে এক্সেপ্ট করা যায় না।”

এসব বলেই পিহু দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কাদঁতে থাকে।কিছুক্ষণ পরে পিহু কাঁদা থামিয়ে বলে,

“না পিহু না আর তুই ওই মানুষটার জন্য কাঁদবি নাহ?যে তোর মূল্য বুঝে না তার কাছে নিজেকে উজার করে দিয়ে নিজেকে আর ছোট করবি না।আমিও ভুলে যাবো বিহানকে।যে আমায় মনে রাখে না তাকে মনে রাখার কোনো মানে নেই।এখন থেকে আমিও কঠোর হবো।”

কিন্তু পিহু চেয়েও জেনো কঠোর হতে পারছে না।খুব কষ্ট হচ্ছে আজ বিহানের এমন রিজেক্টের।পিহুর চোখের জল যেনো বাধ ভাঙছে না।তখনই কেউ পিহুকে পিছন থেকে ডাক দেয়।

“পিহু।”

পিহু চোখ মুছতে মুছতে পিছন ফিরে বিহানকে দেখে।বিহানকে দেখে পিহুর আর দম ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সে ঠিক করেছে বিহানকে সে ভুলে যাবে তাই নিজের কষ্ট চাঁপা রেখেই পিহু বিহানকে বলে,”আমি বিজি ভাইয়া।আপনার সাথে পরে কথা হবে।”

এই বলেই পিহু এক প্রকার দৌড়ে বিহানের কাছ থেকে পালিয়ে গেলো।

#চলবে

#একটু_ভালোবাসি
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব- ১৬

রাত ৯ টার দিকে ইলার ঘুম ভাঙে। দীর্ঘক্ষন ঘুমানোর ফলে ইলার মাথা বাথ্যা করছে।ইলা চারিপাশে না দেখেই ডাকতে থাকে।

“আম্মু আমার খুব মাথা ব্যাথা করছে, ঝিম ঝিম করছে তুমি…….”

আর কিছু বলার আগেই ইলা চারিদিকে দেখে সব কিছুই মনে পড়ে গেল।ইলা একটু কষ্ট প্লাস লজ্জিত হলো শশুড়বাড়ি আসতে না আসতেই এভাবে চিল্লাতে শুরু করেছে। ইলার ভাবলার মাঝেই অর্ণব দরজা নক করে।

“আসতে পারি?”

ইলা অর্ণবের এমন ফরমালিটি দেখে মনে মনে বলতে থাকে,”এই লেজকাটা হনুমান আবার কবে থেকে এতো ভদ্র হলো।”

“জ্বি আসুন।”

“এই নেও মেডিসিন তোমার তো মাথা ব্যাথা করছে।”

ইলা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,”আপনি জানলেন কি করে?”

অর্ণব ইলার পাশে মেডিসিন রাখতে রাখতে বলে,”একটু আগে তো একজন চিল্লিয়ে বলছিলো আমার মাথা ব্যাথা তাই জানি।”

“ওহহহ”

অর্ণব ইলাকে দেখে ঝেড়ে কেঁসে বলে,”দেখো তুমি আমার বউ ঠিক আছে কিন্তু এটা আমার রুম।আমার রুমের কোন শেয়ার আমি করতে রাজি নই।আর বেড শেয়ার নো ওয়ে পাশেই সোফা আছে সেখানে গিয়ে ঘুমাবে।আর আমার কাছে একদম স্ত্রীর অধিকার ফলাবে না।”

ইলা এতোক্ষণ খুব মনোযোগ দিয়ে অর্ণবের কথা শুনলো।তারপর অর্ণবের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”আমারও কোন শখ জাগে নি যে মি.লেজকাটা হনুমানের কাছ থেকে স্ত্রীর অধিকার আদায় করার।আর রইলো বেড শেয়ারের কথা দরকার নেই আপনার এই নরম বিছানা হে যদিও আমার বিছানা এর চেয়েও বেশি সফট তাও আমি গিয়ে ওই সোফায়ই শুয়ে পড়তে পারবো।”

বলেই ইলা দেরি না করে সোফায় গিয়ে বসে পড়ল।

_________________________

সকাল সকালই অর্ণব অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়েছে।ইলা একেবারেই এ বাড়িতে নতুন তাই সব কিছুতে আশা চৌধুরীকে ডাকতেও পারছে না।ইলা চুপিচুপি গিয়ে ড্রয়িং রুমে বসলো।ইলাকে ঘুম থেকে উঠে আসতে দেখে আশা চৌধুরী এগিয়ে এসে বলে,

“ইলা মা সকালের নাস্তা করতে হবে নাহ?যাও গিয়ে নাস্তা করে নেও।”

“আপনি করেছেন আন্টি?”

আশা চৌধুরী ইলার কাছে এসে বলে,”কিসের আন্টি এখন থেকে আমাকে মম বলে ডাকবে।”

“আসলে আন্টি আমার এই মম ড্যাড একটু ইরিটেড লাগে আমি আপনাকে মামনি বলে ডাকি।”

আশা চৌধুরী মুচকি হেসে বলে,”ঠিক আছে মা।চলো একসাথে নাস্তা করে নেই।”

ইলা আর আশা চৌধুরী নাস্তা করার পরে আশা চৌধুরী জোর করে ইলাকে রুমে পাঠিয়ে দেয়।যদিও ইলা আশা চৌধুরীর সাথে হাতে হাতে মিলিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলো কিন্তু আশা চৌধুরী সেটাও করতে দেয় নি।

ইলা রুমে একা একা বোর হচ্ছে তাই পিহুকে ডেকে নিলো।কিছুক্ষণের মধ্যে পিহু এসে হাজির।যেহেতু পিহু অর্ণবের কাজিন তাই ইলা পিহুকেই ডেকেছে।পিহু আশা চৌধুরীর সাথে হালকা কথা বলে ইলাকে খুঁজতে চলে যায়।এদিকে ইলা বোর হচ্ছিলো দেখে অর্ণবদের বাড়ি ঘুরতে শুরু করে। বেশ বড় অর্ণবদের বাড়ি,অর্ণবদের ছাদটা ভীষণ সুন্দর এক পাশে গাছ গাছালি তে ভরা আরেকপাশে খালি রাখা হয়েছে।

ইলা গিয়া রেলিং বেয়ে দাঁড়ায় ঠিক তখনই পিহু উপস্থিত হয়।পিহুকে দেখে ইলার বুক কেঁপে উঠে।একদিনেই চোখের নিচে কালি পড়েছে,চোখগুলো ফোলা,মুখটাও ফ্যাকাশে লাগছে। ইলা তাড়াতাড়া পিহুর কাছে এসে বলে,

“পিহু এ কি অবস্থা তোর কি হয়েছে?”

পিহু মুখটা গম্ভীর করে ইলার থেকে নজর এড়িয়ে বলে,”কই কিছু না তো?”

“কিছু না মানে চোখ মুখের এ’কি অবস্থা তোর?”

এবার আর পিহু নিজেকে ধরে রাখতে পারল না।ইলাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো।পিহুকে এভাবে কাঁদতে দেখে ইলা নিজেও শকড হয়ে যায়।কারণ সীমান্তের মতো পিহুও খুব শান্ত আর নিজের দূর্বলতা পিহু সহজে প্রকাশ করে না।

কিছুক্ষণ কান্নাকাটির পরে পিহু কিছুটা শান্ত হয়।তখন ইলা জিজ্ঞেস করলে পিহু তার আর বিহানের সম্পর্ক ইলার কাছে প্রকাশ করে।বিহান পিহুকে অপমান করেছে এটা শুনেই ইলা প্রচন্ড রেগে যায়।ইলার ইচ্ছে করছিলো বিহানকে টেনে ধরে এনে পিহুর কাছে ক্ষমা চাওয়ানোর জন্য।ইলা রেগে বলে,

“আমি বিহান ভাইয়ার কাছে জানতে চাই কেন সে তোর সাথে এমন বিহেভ করলো?এর ফল তো বিহান ভাইকে পেতেই হবে।”

পিহু কাতর স্বরে বলে,”ইলা প্লিজ বিহান কে এই নিয়ে কোন কথা শুনাস না। ভুল তো আমারই আমিই বুঝতে পারি নি সে কখনই আমাকে ভালোবাসে নি আর আমি পাগলের মতো তাকে ভালোবেসে তাকে বিরক্ত করেছি।প্লিজ ইলা এই নিয়ে ওকে কথা শুনাস নাহ।”

পিহুর কাতর স্বরে ইলা একটু দমলেও পুরাপুরি দমে নাহ।তারপর ইলা পিহুকে মানসিকভাবে আরও শক্ত হতে বলে। আর ভার্সিটিতে রোজ যেতে বলে কাল থেকে ইলাও ভার্সিটিতে যাবে এভাবে ঘরে বসে থাকতে ইলা বোর ফিল হয় তাই।

এরপর ভিডিও কলে মেঘাকে নিয়ে তিন বান্ধবী প্রচুর আড্ডা৷ দেয়।যাতে পিহুর মুডটা কিছুটা হলেও ঠিক হয় এবং সফলও হয়।আড্ডার এক পর্যায়ে ইলা পিহুকে প্রশ্ন করে,

“হে রে পিহু তুই এ বাড়ির মেয়ে হয়েও হোস্টেলে কেন থাকিস?এখান থেকে ভার্সিটি তো খুব একটা দূরেও নয় তাইলে?”

পিহু মুচকি হেসে বলে,”আসলে আমি চাই না কেউ আমকে সীমান্ত ও অর্নব চৌধুরীর বোন জানুক। আমি নিজেই নিজের পরিচয় গড়তে চাই তাই তো ভাইয়াদের বলে দিয়েছি আমি যস তার বোন সেটা কাউকে না বলতে আর আমিও আলাদা বাসায় থাকি।”

মেঘা আর ইলা একসাথে বলে,”ওহহহ।”

মেঘা ইলাকে বলে,”ইলুউউউ আই মিস ইউ।কবে থেকে ভার্সিটি জয়েন দিবি?”

“এই তো কাল থেকেই আবার দেখা হবে চিল ইয়ার।”

“হে রে অর্ণব ভাইয়া তোকে জ্বালাচ্ছে না তো।”

পিহু হেসে বলে,”মেঘু কথাটা উল্টো হবে বল তুই আবার অর্ণব ভাইকে জ্বালাচ্ছিস না তো।”

ইলা একটু রেগে বলে,”পিহু দিস ইজ নট ডান ইয়ার।আমি অনেক শান্ত আর ভালো মেয়ে।”

পিহু আর মেঘা একসাথে বলে,”ওহহহ রিয়েলিইইই?”

ইলা কনফিডেন্সলি বলে,”ইয়াহ আফ কোর্স।”

পিহু আর মেঘা আড়চোখে ইলার দিকে তাকালে ইলা একটা ঢোক গিলে বলে,”আই থিংক।”

ইলার ভয়ার্ত কন্ঠ শুনে পিহু আর মেঘা হেসে দেয়।পরে পিহু আর মেঘার সাথে ইলাও হেসে দেয়।

_________________________

ঝগড়ুটে বাড়ি এখন ঝগড়ায় মগ্ন ওহ সর‍্যি চৌধুরী বাড়ি এখন ঝগড়ায় মগ্ন।অর্ণব বাড়িতে আসতে না আসতেই ইলা আর অর্ণবের ঝগড়া লেগে গেছে।

“এই যে মিস.ঝগড়ুটে ঝগড়া তোমার পেটের ভিতরে গুড়্গুড় করে নাকি?ঝগড়া একটু কম করতে পারো না।”

“এই যে মি.লেজকাটা হনুমান আপনারও বুঝি আমার পায়ের সাথে পা মিলিয়ে ঝগড়া করতে হবে নাকি?”

একটু আগে,

অর্ণব খুব টায়ার্ড হয়ে বাড়ি এসেই বলে,”মম এক গ্লাস লেবুর শরবত বানিয়ে দেও না।”

ইলা টিভিতে ডোরেমন দেখছিলো।ইলা অর্ণবকে দেখেই একটা ভেংচি কেটে টিভিতে মনোনিবেশ করে।অর্ণব ইলাকে ডোরেমন দেখতে দেখেই ইলাকে উদ্দেশ্য করে হাওয়ায় কথা ছুড়ে বলে,

“কি দিনকাল পড়লো রে বাবা,বুইড়া মাইয়াও কার্টুন দেখে।”

ইলাও পালটা উত্তরে বলল,”কি দিনকাল রে পড়ল রে বাবা,রোগা পোলাও ডায়েট করে।”

অর্ণব একটু ক্ষিপ্ত হয়ে বলে,”কি আমি রোগা?”

“আমি কারোর নাম বলি নি এখন নিজের গায়ে দোষ নিলে আপনি রোগাই।”

অর্ণব নিজেকেই বলতে থাকে,”হাও ষ্টুপিড অর্ণব তুই কি না মিস.ঝগড়ুটের সাথে ঝগড়া করছিস?”

ইলা রেগে বলে,”কি আমি ঝগড়ুটে?”

অর্ণব ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,”আমিও কাউকে নাম দাগিয়ে ঝগড়ুটে বলি নি।”

“কিন্তু আপনি সারাদিন মিস.ঝগড়ুটে আমাকেই বলেন।”

“বাহ তোমাকে আমি বলদ ভেবেছিলাম বাট তোমার মেধা দেখছি খুবই ভালো।”

“কিইইইইই আমি বলদ?”

অর্ণব ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,”উপ্সসসসসসসস সর‍্যি সর‍্যি বলদ নাহ তুমি তো গাভী হবে।মাই মিস্টেক।”

ইলার রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে।ইলা রেগে বলে,”কিইই আমি গাভী?”

“তা নয়তো কি?”

“আপনি তাহলে মহিষ একটা।তাও আবার যে সে মহিষ না শিং ছাড়া মহিষ।”

বর্তমানে,

“এই যে মিস.ঝগড়ুটে ঝগড়া তোমার পেটের ভিতরে গুড়্গুড় করে নাকি?ঝগড়া একটু কম করতে পারো না।”

“এই যে মি.লেজকাটা হনুমান আপনারও বুঝি আমার পায়ের সাথে পা মিলিয়ে ঝগড়া করতে হবে নাকি?”

“শাট আপ।”

“ইউ শাট আপ।”

“তোরা দু’টোই শাট আপ।”

আশা চৌধুরীর কথায় দুজনেই থামে।আশা চৌধুরী ছেলের জন্য লেবুর শরবত করে এনেছিল আর তখন ছেলে বৌমার তুমুল যুদ্ধ তার চোখে পড়ে।আশা চৌধুরী অর্ণবের হাতে গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে বলে,”আমরা জানতাম তোরা পূর্ব পরিচিত কিন্তু তাহলে এতো যুদ্ধ কেনো?”

ইলা আশা চৌধুরীর পাশে দাঁড়িয়ে বলে,”হে আমরা পূর্ব পরিচিত কিন্তু বন্ধু হিসেবে নয় দুশমন হিসেবে।”

অর্ণবও ইলার সাথে তাল মিলিয়ে বলে,”হে আমাদের যতোবার দেখে হয়েছে প্রত্যেকবার ঝগড়া হয়েছে।এই জন্য এই মেয়েকে বিয়ে করতে এতো নাকোচ ছিলাম।”

ইলা তেড়ে গিয়ে বলে,”আর আমি মনে হয় বিয়ে করার জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম?”

“তা তুমি থাকতেই পারো তোমাকে বিশ্বাস নেই।”

“ওরে আমার নির্বিশ্বাস আলী দরকার নাই এমন বিশ্বাসের।”

“হোয়াট দ্য নেম অফ নির্বিশ্বাস আলী।”

“এটা আপনার নিউ নিক নেম।”

“হোয়াট?”

“ইয়াহ অভ্যেস করে নিন।”

বলেই ইলা আবার অর্ণবকে ভেংচি কাটলো।অর্ণব আশা চৌধুরীকে কিছু বলতে গেলেই তিনি বলে,”এখন তোমরা স্বামী স্ত্রী তোমার দুশমন নাকি দোস্ত এটা আমি দেখতে চাই না আর এর মধ্যে আমাকে জড়াবে না কারণ আমি আমার মেয়ের দলে।”

ইলা দৌড়ে এসে আশা চৌধুরীর সাথে হাই ফাইফ করে।অর্ণব রেগে বলে,”দ্যটস নট ফেয়ার মম।”

বলেই রেগে হন্তদন্ত হয়ে ঘরে চলে যায়।আশা চৌধুরী ইলাকে বলে,”কি রে পারবি আমার ছেলেকে সোজা করতে।”

ইলাও সানন্দে বলে,” এ তো মেরি বায় হাতকা খেল হে মেরি জান।”

বলেই ইলা আর আশা চৌধুরী হাসতে শুরু করে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here