#একটু_ভালোবাসি,১৯,২০
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব – ১৯
ভার্সিটিতে সীমান্ত উদাস হয়ে বসে আসে।আজ সীমান্ত কারোর সাথে কথা বলছে না।সবাই যে যার মতো সীমান্তের মুড ঠিক করার ট্রাই করছে কিন্তু সীমান্তের মুড ঠিকই হচ্ছে না।সীমান্ত এক এক কোণায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
“এই যে মিস্টার একদিনেই তো দেখছি ছ্যাঁকা খেয়ে ব্যাঁকা হয়ে গেছেন দেখি।”
মেয়েলি কন্ঠস্বর শুনে সীমান্ত পিছনে ফিরে মেঘাকে দেখতে পায়।মেঘাকে দেখেই সীমান্ত চলে যেতে নিলে মেঘা আবারও ডাক দেয়।
“আমি কিন্তু এখান থেকে আপনাকে যেতে বলি নি।”
কথাশুনে সীমান্ত চুপ করে দাঁড়িয়ে যায়।মেঘা সীমান্তের সামনে গেলে দেখে সীমান্ত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।সীমান্তকে এমন দেখে মেঘা একটু মুচকি হেসে বলে,”কাল তো খুব ফুল নিয়ে এসেছিলেন প্রপোজ করতে তা আজ সেই ফুলগুলো কোথায়?”
“ফেলে দিয়েছি।”
কথাটা শুনে মেঘার একটু খারাপ লাগে। কিন্তু তারপর নিজেকে সংযত করে বলে,”৩০ মিনিট সময় দিলাম যান গিয়ে ফুল নিয়ে আসুন।আমার সময় শুরু হয়ে গিয়েছে।”
সীমান্ত মাথা উঁচু করে অবাক দৃষ্টিতে মেঘার দিকে তাকায়।মেঘা সেই তাকানি উপেক্ষা করে বলে,”সময় কিন্তু শুরু ৩০ মিনিটের ১ সেকেন্ডও বেশি দিবো না।”
সীমান্ত মেঘার কথাশুনে দৌড় লাগায় যা দেখে মেঘা হাঁসতে হাঁসতে মাটিতে বসে পড়ে।
মেঘা ফোন করে ইলা আর পিহুকে ডাকে।কাল রাতে মেঘা ফোন হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকে ইলাকে ফোন দিয়ে সব জানায়।মেঘা একটু দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলো।পড়ে ইলা মেঘাকে শান্ত করে বলে যে সীমান্ত ছেলে ভালোই আর তাকে খুশিতে রাখবে।
ইলা পিহু এসে বারবার মেঘাকে খোঁচাচ্ছে যে এভাবে ডাকার কারণ কি কিন্তু মেঘা কিছুই বলছে না।৩০ মিনিটের মধ্যেই সীমান্ত আবার দৌড়াতে দৌড়াতে ভার্সিটিতে ঢুকে মেঘার কাছে এলো।
সীমান্ত হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,”এই নেও তোমার ফুল।”
মেঘা না নিয়েই বলে,”কাল যেনো কি কি বলছিলেন ফোনে আবার বলুন।”
“কি?”
“যা ফোনে বলেছিলেন তাই।”
“আমার মনে নেই।”
“ওহহ তা বুঝি আমাকে গার্লফ্রেন্ড বানাতে চান নাহ?”
“একদমই না।”
মেঘা এবার একটু অবাক হয়।সীমান্ত হাটু গেড়ে বসে মুচকি হেসে বলে,”তোমাকে আমি চাই তবে গার্লফ্রেন্ড হিসেবে নয় লাইফ পার্টনার হিসেবে।তোমাকে চাই বৃদ্ধ বয়সেও একসাথে বসে বৃষ্টি ভ্রমণ উপভোগ করার জন্য।তোমাকে আমি চাই তোমার ওই দুষ্টু মিষ্টি রাগ ভাঙানোর জন্য। এখন বলো আমার সেই সঙ্গী হতে কি তুমি রাজি আছো?”
মেঘা সীমান্তের কথা অনেক খুশি হয়।সাথে সাথে ফুলগুলো নিয়ে বলে,”তাই তবে বাবা-মা’কে রাজি করানোর দায়িত্ব তোমার?”
“যথা আজ্ঞা মহারাণী।”
মেঘা সবার সামনেই সীমান্তকে খুশিতে জড়িয়ে ধরে।এতে ভার্সিটিতে হাত তালির রোল পড়ে যায়।মনে হচ্ছে কোম মুভির রোমেন্টিক সো দেখে সবাই হাত তালি দিচ্ছে।পিহু ইলার কানে কানে বলে,
“আরে বাহ,আমি তো ভেবেছিলাম মেঘাকে আমার ভাবি বানাবো কিন্তু এ তো দেখছি বৃষ্টি না চাইতেই পানি।”
ইলা পিহুর কথায় কিছু বলে না শুধু মুচকি হাসে।এসব ইলারই প্ল্যান ছিলো।এবার ইলার একটাই উদ্দেশ্য বিহান আর পিহুকে এক করা।
__________________________
“কিইইই বিহান আমাকে ভালোবাসে?”
পিহুর চমকে ইলাকে কথাটা বলে।চৌধুরী বাড়ির বাগানে পিহু ইলা আর মেঘা বসে আছে।ইলাই সবাইকে ডেকে এনেছে।প্রথমে তো মেঘা খুব লজ্জা পাচ্ছিলো ইলার শশুড়বাড়ি বলে কথা কিন্তু পরে পিহু এই বলে এনেছে যে কিছুদিন পর এটা তোরও শশুড়বাড়ি হবে।মেঘা এখানে এসেই ইলার কাছে সব জানতে পারে আর ইলা সেদিন বিহানের সাথে সমস্ত কথা পিহুকে খুলে বলে।এতে পিহু চমকিয়ে ইলাকে প্রশ্ন করে।আনন্দে প্রফুল্ল হয়ে পিহু আবার প্রশ্ন করে,
“কি হলো ইলা বল?বিহান আমাকে সত্যিই ভালোবাসে?”
ইলা চা’য়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলে,”না’হলে কি আমি মিথ্যা বলছি।বিহান ভাইয়া এসব করেছে বন্ধুত্বের জন্য। এখন মেঘার কাজ হলো সীমান্ত ভাইয়াকে পটানো।”
মেঘা চা’য়ের কাপ রাখতে রাখতে বলে,”এহহহহ আজই প্রপোজ করলো আর এখনই কি’না তাকে পটাতে হবে?আমি পারবো না।”
পিহু মেঘার হাত ধরে বলে,”ভাবি ও ভাবি আমি তোর একমাত্র ননদীনি আমার জন্য এইটুকুও করতে পারবি না?”
ইলাও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,”হে রে মেঘা তুই এইটুকুও করতে পারবি না আর সীমান্ত ভাইয়াকে বুঝানো তোর তো ২ মিনিটের কাজ। আমি জানি তুই ঠিক পারবি।”
মেঘা ভয়ার্ত গলায় বলে,”যদি সীমান্ত না শুনে।”
পিহু হেসে বলে,”তাহলে তুই তোর গুন্ডিগিরি দেখাবি।”
“ওরে চুন্নি একটু আগে ভাবি ও ভাবি করছিলি আর এখন তুই তোর ভাইকে মারার ট্রিক দিচ্ছিস।”
“তা নয়তো কি করবো প্লিজ মাই কিউট ভাবি মেনে যা।”
“ওকে আমি দেখবো।”
ইলা এবার ওদের কথার মধ্যে বলে,”ওকে ডিল ফাইনাল।মেঘা সীমান্ত ভাইয়াকে পটাবে আর আমি বিহান ভাইয়াকে দেখছি।”
“আরে এ তো দেখি চাঁদের হাট বসেছে।”
মেঘা ইলা পিহু পিছে তাকালে আবেশকে দেখতে পায়।আবেশকে দেখে পিহু আর মেঘা অবাক হলেও ইলা একটু বিরক্তই হয়।ইলা মনে মনে বলে,”এই লোকটা ওলয়েজ এলিয়েনের মতো এন্ট্রি নেয় কেনো?”
আবেশ একটা চেয়ার টেনে মেয়েদের মধ্যে বসে বলে,
“আরে শালী সাহেবা রা কেমন আছেন?”
মেঘা সবিনিময়ে বলে,”আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?”
“জ্বি আলহামদুলিল্লাহ। ”
পিহু কিউরিওসিটি নিয়ে প্রশ্ন করে,”আপনি যে শালী সাহেবা বললেন আসলে শালী সাহেবা কারা?”
“কেনো আপনি মেঘা।”
“আর ইলা?”
আবেশ ইলার দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমি একটা হাসি দিয়ে বলে,”এ তো ভাবি সাহেবা।”
ভাবি সাহেবা নাম শুনেই ইলা আবেশের দিকে তাকালে আবেশ ইলাকে দেখে বলে,”জানেন তো ভাবি সাহেবা দেওর আর ভাবির জুটিটা খুব কিউট হয় যেমন আমাদের।”
ইলা একটু রেগেই বলে,”এক্সকিউজ মি,আপনি মনে হয় এটা জানেন না যে দেওর বেশি ভাবির সাথে পিরিত মারতে আসলে ভাবির হাতে ঝাড়ুর বাড়ি আর কানমোলাও খেতে হয়।”
আবেশ হেসে বলে,”আই লাইক ইউর এটিটিউড।”
“বাট আই ডোন্ট লাইক ইউর কথা।”
“বাহ আপনি তো বাংলিশও পারেন।”
“হে মাঝে মাঝে কিছু শয়তানদের দিতে হয় তো তাই শিখে রেখেছি।”
“আবেশ।”
অর্ণবের গলা শুনে সবাই পিছনে তাকায়।ইলা মুখ ফসকে হেসে বলে উঠে,”আরে দেখুন শয়তানের নাম নিয়েছি আর শয়তান হাজির থুরি মি.লেজকাটা হনুমান।”
অর্ণব ইলার এমন কথায় থ মেরে দাঁড়িয়ে পড়ে।বন্ধুর সামনে বউ এমন কথা বলবে এটা অর্ণব ভাবতেও পারে নি।অর্ণব ইলার দিকে রাগী লুক দিলে ইলা বুঝতে পারে সে ভুল জায়গায় সঠিক কথা বলে ফেলেছে।ইলা বুঝতে পেরেই চোখ বুঝে জিভ কামড় দেয়।
আবেশ অর্ণব আর ইলার এমন অবস্থা দেখে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হেসে বলে,
“ভাবি সাহেবাও না প্রচুক জোক্সস মারে হা হা হা।”
ইলাও আবেশের সাথে বলে,”হে হে হে জোক্সসই তো।ভালো না জোক্সসটা দেওর জি হি হি হি।”
“হে ভাবি সাহেবা পুরাই সুপারহিট।”
“আই নো আই নো।”
অনেকটা ভয়ে ভয়েই ইলা কথাটা বলল।অর্ণব ইলার দিক থেকে রাগী লুক ছড়িয়ে আবেশকে বলে,”হোয়াট এ প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ। তুই কি আমাকে সারপ্রাইজ দিয়ে পাগল করতে চাস নাকি?”
“আরে নাহ নাহ এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই ভাবলাম আংকেল আন্টির সাথে দেখা করে যাই।আর এসে দেখি চাঁদের হাট বসেছে।”
অর্ণব অবাক হয়ে বলে,”চাঁদের হাট?”
“হে আসলে ভাবি আর তার ফ্রেন্ডরা আড্ডা দিচ্ছিলো তো ভাবলাম আমিও জয়েন করি।”
কথাটা অর্ণবের একদম ভালো লাগে না।তাও অর্ণব মিথ্যে হাসি দিয়ে বলে,”ওয়াও গ্রেট।ভালো করেছিস। চল ভিতরে যাওয়া যাক।”
বলেই অর্ণব আবেশকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলো।আবেশকে নিয়ে যাওয়া মাত্রই ইলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।কি বাঁচা টাই না বেঁচে গেলো?ইলা পিহুকে খুঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে,”কি রে পিহু এই আবেশটা কে রে বল তো?”
“আমি যতদূর জানি আবেশ ভাইয়া আর অর্ণব ভাইয়া কলেজ লাইফের ফ্রেন্ড। তবে আমি কখনোই আগে আবেশ ভাইয়াকে দেখি নি এইবারই প্রথম।কিন্তু আবেশ ভাইয়া জানলো কি করে তোর আর অর্ণব ভাইয়ার বিয়ে হয়েছে?এটা তো ভার্সিটির সবার অজানা থাকার কথা।”
মেঘা পিহুর প্রশ্নের উত্তরে বলে,”আরে দেখ জিগড়ি দোস্ত না তাই হয়তো অর্ণব ভাইয়াই আবেশকে বলেছে।”
ইলা ভাবুক মনে বলে,”হয়তো?”
তারপর তিন বান্ধুবী আবার নিজেদের আড্ডায় মগ্ন হয়।
ওদিকে,
আবেশ আর অর্ণবও খুব মজা করছে।কথার এক পর্যায়েই বলে,”দোস্ত তুই কিন্তু খুব লাকী।ভাবি কিন্তু খুব সুইট আর কিউট।”
অর্ণব আবেশের কথায় টিটকানি মেরে বলে,”বন্ধু সংসার আমি করি তুমি না।মেয়েকে বাহির দিক থেকে সুইট আর কিউট কিন্তু ভিতরে ততোটাই শাকচুন্নি আর ঝগড়ুটে।সারাদিন ঝগড়া করে।”
“তোদের কি মিল হয় না?”
“আরে একদম না।আমি যদি উত্তর বলি ও বলে দক্ষিণ আমি বামে গেলে সে ডানে যাবে।ওই যে একটা গান আসে না মেয়েদের মন বোঝা নয়রে নয় সোজা গানটার হুবহু মিল ইলার মধ্যে পাওয়া যাবে।”
“হা হা হা সো ফানি।তোদের না মিললে তোরা ডিভোর্স করে নে।”
আবেশের এই কথায় অর্ণব একটু অবাক সাথে রাগও হয়।আবেশ আমতা আমতা করে বলে,”দেখ আমার ভাবিকে সেই লেগেছে।তুই ভাবিকে ছেড়ে দিলে আমি ভাবিকে তোর ভাবি বানিয়ে দিবো।”
অর্ণব না বুঝেই প্রশ্ন করে,”মানে?”
আবেশ স্ট্রেটলি বলে,”দেখ আমি তোর সাথে সব কিছুই সোজা সোজা বলছি।ভাবি মানে ইলাকে আমার দারুন লেগেছে তুই যদি ইলাকে ছেড়ে দিস তাহলে আমি ইলাকে বিয়ের প্রপোজাল দিবো।”
এটা শুনে অর্ণব অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,”কিইইইইইইইইই?”
“এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।আমি তোর ভালোর জন্যই বললাম।”
“কেনো দুনিয়ায় কি মেয়ের অভাব পড়েছে নাকি?”
“একদমই না।বাট আমার খুব ইচ্ছা একটা ডিভোর্সীকে বিয়ে করা হোক সেটা আমার ভাবি সাহেবা।এনিওয়ে আমার লেট হচ্ছে আমি যাই।তুই কিন্তু আমার ওফারটা ভেবে দেখতে পারিস।”
এই বলেই আবেশ অর্ণবকে বিদায় দিয়ে চলে যায়।এদিকে আবেশের এমন প্রস্তাবে অর্ণব থ মেরে যায়।
#চলবে
#একটু_ভালোবাসি
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব- ২০
বেশ কয়েকদিন ধরেই ইলা খেয়াল করছে ভার্সিটিতে গেলেই অর্ণব ইলার গা ঘেঁষে থাকে।ইলা রাগ দেখালেও অর্ণব ইলার রাগকে কোন পাত্তাই দিচ্ছে না।আজও তার ব্যতিক্রম না ইলা পিহু মেঘা ক্যান্টিনে বসে আছে আর অর্ণবও তার গ্যাং নিয়ে ইলার পিছেই বসে আছে।ইলা বিরক্ত হয়ে পিহুকে বলে,
“হে রে পিহু তোর ভাইয়ের কি মাথা খারাপ হয়েছে নাকি?বেশ কয়েকদিন ধরে শুধু আমার সাথে চিপকিয়ে আছে।সে তো নিজেই চাইছিলো না আমাদের বিয়ের খবর কেউ জানুক তাহলে এখন কেনো এতো চিপকিয়ে চিপকিয়ে আছে এতে তো সবাই বুঝে যাবে আমাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে।”
“মনে হয় তোকে ভালোবেসে ফেলেছে?”
“উনি আর ভালোবাসা হা হা হা পিহু হাঁসালি। উনি একটা নিমপাতা যা কখনো মিঠে হয় না।”
মেঘা ডোন্ট কেয়ার ভাবে বলে,”হতেও পারে।যেভাবে ভার্সিটিতে এলে তোর কেয়ার করে এতে সবার নজর লেগে লাগে।”
“কিন্তু বাড়ি গেলেই নিজের আসল রুপে চলে আসে।”
পিহু খুব ভাবুক ভাবে বলে,”তাহলে ভার্সিটিতে এমন কেউ আছে যে কারণে ভাইয়া তোর সাথে খুব ভালো বিহেভ করে।”
“ভার্সিটিতে আবার আমার কোন বাবা দাদা থাকবে যে তাকে দেখানোর জন্য ভালো ব্যবহার করবে।”
“তাও কথা।আচ্ছা বাদ দে এসব।ভালো বিহেভ করছে এই উপলক্ষ্যে ট্রিট দে।”
“এহহহ ঠেকা পড়ে নি।এই মেঘা সীমান্ত ভাইয়ার কি খবর?”
মেঘা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,”তার আবার কি খবর হবে?তাকে বলছি আমার বাসায় বিয়ের প্রপোজাল পাঠানোর জন্য।”
ইলা মেঘার মাথায় একটা চাট্টি মেরে বলে,”ধুর আমি সেই কথা বলি নি আমি বলেছি সীমান্ত ভাইয়াকে বলেছিস বিহান ভাইয়ার কথা।”
বিহানের কথা শুনেই মেঘা নড়বড় করে উঠে বলে,যসর্যি আমি।আসলে ভুলে গেছিলাম। আমি আজই সীমান্তকে সব বলবো।”
পিহু মেঘার কথায় বড্ড ক্ষেপে যায়।তখনই কেউ ইলার কানে কানে বলে,”আমি কি আড্ডায় জয়েন দিতে পারি?”
আকস্মিক কথায় ইলা একটু ঘাবড়েই যায়।ইলা ভুত দেখার মতো আবেশের দিকে চেয়ে থাকে।আবেশ ইলার তাকানিতে একটা মুচকি হাসি উপহার দেয়।আবেশকে দেখে মেঘা সবিনিময়ে বলে,
“আরে আবেশ ভাইয়া আপনি এখানে প্লিজ বসুন।”
আবেশ একটা চেয়ার নিয়ে বসতেই যাবে তখন ঝড়ের বেগে অর্ণব এসে আবেশকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আরে আমার জিগড়ি দোস্ত জানের দোস্ত তুই এতোদিন পর এলি চল আজ পার্টি করবো।”
“কিন্তু আমি এখানে…….”
“আরে এখানে কি চল চল।”
বলেই এক প্রকার জোর করেই অর্ণব আবেশকে নিয়ে যায়।আবেশকে এমন টেনে নিয়ে যাওয়া দেখে মেঘা পিহু আর ইলা সবাই আড়চোখে তাকিয়ে আছে।ইলা বিরক্তি নিয়েই বলে,”যেমন মানুষ তেমন তার বন্ধু।”
মেঘা না বুঝেউ বলে,”মানে?”
“দেখলি না আবেশ কেমন ভুতের মতো উদয় হলো আর অর্ণবও তেমনি ভুতের মতো উদয় হয়ে নিয়ে গেলো।দু’জনেই একেবারে ভুতমানব।”
পিহু ইলার রাগ দেখে বলে,”হা হা হা আচ্ছা ইলা তুই বল তো তুই এই পর্যন্ত ভাইয়ার কতোগুলো নিকনেম দিলি?”
“তা কি জানি?তবে উনি যা তাতে যতই নিকনেম দেও না কেনো সবই কম পড়ে যাবে।”
বলেই তিনজনে হাসতে শুরু করল।
_____________________
সীমান্ত মেঘার বাবা মা’র সামনে বসে আছে।মেঘা বাবা একজন পুলিশ অফিসার।সীমান্ত রীতিমতো ১ ঘন্টা তাদের শুধু বসিয়েই রেখেছে না কিছু বলতে পারছে না তাদের বতে দিচ্ছে।সীমান্তের টেনসনে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ধরছে।মেঘার বাবা বিরক্ত হয়ে বলে,
“আর কতোক্ষণ এভাবে বসিয়ে রাখবে বাবা এবার তো কিছু বলো?”
“জ্বি আংকেল আসলে…….”
তখনই কলিং বেলের আওয়াজ আছে।যা শুনে মেঘার মা দরজা খুলে দিতেই মেঘা বকবক করতে করতে ঘরে ঢুকে।
“জানো মা আজ ভার্সিটিতে কি হয়েছে?ভার্সিটিতে একজন নতুন লেকচারার এসেছে।বেশ ভালোই পড়ায় উনি। আরও জানো আমাদের ভার্সিটিতে কো- কারিকুলারের আয়োজন করা হবে।আচ্ছা বাড়ির পরিবেশ এতো ঠান্ডা কেনো বলো তো?বাবা কোথায় বাবা বাবায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া”
এতোক্ষণে মেঘার ড্রয়িং রুমে বসে থাকা সীমান্ত আর তার বাবার মুখোমুখি দৃশ্য দেখতে পায়।যা দেখে মেঘা একেবারেই হিমশীতল হয়ে যায়।মেঘার বাবা হেসে মেঘাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
” আরে মামনি চলে এসেছো।ও দেখ না এই ছেলেটা ১ ঘন্টা ধরে বসে আছে না কিছু বলছে না আমাদের বলতে দিচ্ছে।আচ্ছা তুমি কি ছেলেটাকে চিনিস?”
১ ঘন্টা ধরে সীমান্ত বসে আছে শুনেই মেঘার রাগ উঠে যায়।সীমান্ত মেঘার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,”না বাবা আমি।এনাকে চিনি না।আর যাকে তাকে তুমি বাসায় ঢুকতে দেও কেনো?পুলিশ হয়ে ঢুকতে দিচ্ছো যদি লোকটা চোর হয়।এখুনি বের করে দেও।”
সীমান্ত মেঘার রাগে কারণটা বুঝতে পেরেছে।সীমান্ত এখনো তার আর মেঘার সম্পর্কে কথা মেঘার বাবা মা’কে বলতে পারে নি দেখেই মেঘার এতো রাগ।বলেই রাগ হয়ে মেঘা চলে যেতে নিলেই সীমান্ত বলে উঠে,
“আংকেল আমি সীমান্ত চৌধুরী। চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির সি ই ও। আমি আর মেঘা একই ভার্সিটিতে পড়ি।আমার পড়াশোনা শেষ এখন। আংকেল আমি মেঘাকে খুব পছন্দ করি।তাকে আমার জীবনসঙ্গী বানাতে চাই।সে’ও আমাকে ভালোবাসে।তাই আমি চাই তাকে বিয়ে করতে। আপনি কি আপনার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিবেন।আমি কথা দিচ্ছি,আমি তাকে অযত্নে রাখবো না।”
এক নিশ্বাসে সীমান্ত কথাগুলো মেঘারা বাবাকে বললো।শেষের কথাটা সীমান্ত মেঘার বাবার হাত ধরেই বললো।মেঘার বাবা সীমান্তের সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়।তারপরও সে নিজের মেয়ের মতামত জানতে মেঘার দিকে তাকালে মেঘা বলে উঠে, “হে এসব সত্যি।”
মেঘার বাবা খুব গম্ভীর গলায় বলে,”আমি তোমার বাবা-মা’র সাথে কথা বলতে চাই।”
কথাটা শোনা মাত্রই সীমান্ত আর মেঘার মুখে আনন্দে হাসি ফুটে উঠে।ওদের মুখের হাসি দেখে মেঘার বাবা মা’ও হেসে দেয়।
___________________________
সীমান্ত ছুটে এসে পিহুকে এক চড় দেয়।পিহু অবাক দৃষ্টিতে সীমান্তের দিকে তাকায় সাথে মেঘাও অবাক হয়।মেঘা ভাবতেও পারে নি সীমান্ত পিহুকে চড় মারবে।মেঘা সীমান্তকে সব বললে সীমান্ত পিহুকে চড় দেয়।পিহু অবাক নয়নে বলে,
“ভাইয়া তুমি আমায় চড় মারলে?”
“তা নয়তো কি?তুই কি করে এই কথা তোর ভাইকে না বলে থাকতে পারিস।আমি যদি জানতাম তুই বিহানকে পছন্দ করিস আমি নিজে বিহানের কাছে যেতাম তোর বিয়ের কথা নিয়ে আর কি’না তুই?তুই আমাকে জানালিও না।দীর্ঘ ৪ বছর তুই কষ্ট পেলি আর আমি ভাই হয়ে কিচ্ছু জানতে পারলাম না আর এই কি না তুই বলিস আমি তোমার সাথে সব শেয়ার করি ভাইয়া এই তার শেয়ারের নমুনা।”
সীমান্ত অনেক কষ্ট পেয়েই কথাগুলো বলল।পিহু সীমান্তকে জড়িয়ে ধরে বলে,”সর্যি ভাইয়া আর কখনো এমন ভুল হবে ন।এরপর থেকে সব শেয়ার করবো।”
সীমান্তও বোনকে জড়িয়ে ধরে। মেঘা ভাই বোনের এমন ভালোবাসা দেখে নিজের চোখের পানি আটকে রাখতে পারে না।মেঘা ভাবতেও পারে নি সীমান্ত এতো ইজিলি বুঝে যাবে।সীমান্ত সাথে সাথেই বিহানকে ফোন দেয় দেখা করার জন্য। বিহানও সীমান্তের কথা মতো সীমান্তের সাথে দেখা করতে আসে।কিন্তু এসে মেঘা আর পিহুকে আবিষ্কার করে।পিহুকে দেখে বিহান বলে উঠে,
“পিহু?”
সীমান্ত বিহান পিঠে হাত দিয়ে বলে,”কি পিহু,শালা এতোদিন আমার বোনকে তুই ভালোবাসিস আর আমি কি না বন্ধু হয়েও জানতে পারলাম না?”
“না দোস্ত এমন কিছু না বিশ্বাস কর।”
“চুপ তুই একদম আমার সাথে কথা বলবি না।আবার মিথ্যা কথা বলছিস।সত্যি করে বল তো তুই পিহুকে ভালোবাসিস না।”
পিহুও টলমল চোখে নিয়ে বিহানের দিকা তাকিয়ে আছে।বিহান যেনো কোনমতেই সেই চোখের চাহুনি উপেক্ষা করতে পারল না।মাথা নিচু করে বলল,
“হুম।”
“তো দেরি কিসের যা এখুনি গিয়ে প্রপোজ কর। আর তুই কি বলদ আমাকে একবার জানাতি বন্ধুত্বের জন্য কি না নিজের ভালোবাসাকে তুই স্যাক্রিফাইস করছিলি?”
“আমার কাছে সবার আগে আমার বন্ধুত্ব।”
সীমান্ত আর বিহান পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে।সীমান্ত বিহানকে বলে, “এখন তো গিয়ে আমার বোনকে নিজের মনের কথাটা বল নাকি এখনো বন্ধুত্বের জন্য আটকিয়ে আছিস।”
“হুম যাচ্ছি।”
বিহান পিহুর কাছে পিহুকে ডাক দেয়,”পিহু।”
পিহু উল্টো দিকে মুখ ঘুরে ছিলো বিহানের ডাক শোনা মাত্রই বিহানের বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে কাঁদতে শুরু করে।এ কান্না নেই কোন দুঃখ, নেই কোন কষ্ট শুধু আছে প্রিয় মানুষকে পাওয়ার আনন্দ আর তৃপ্তি।
সীমান্ত মেঘাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“আজ আমি খুব খুশি। প্রথমত আমার ভালোবাসা মানুষটিকে পেয়ে দ্বিতীয়ত আমার প্রাণপ্রিয় বোনকে তার ভালোবাসার মানুষকে দিতে পেরে।”
#চলবে