#একটু_ভালোবাসি,২১,২২
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব- ২১(সারপ্রাইজ)
বেশ কয়েকদিন ধরেই ইলা খেয়াল করছে ভার্সিটিতে গেলেই অর্ণব ইলার গা ঘেঁষে থাকে।ইলা রাগ দেখালেও অর্ণব ইলার রাগকে কোন পাত্তাই দিচ্ছে না।আজও তার ব্যতিক্রম না ইলা পিহু মেঘা ক্যান্টিনে বসে আছে আর অর্ণবও তার গ্যাং নিয়ে ইলার পিছেই বসে আছে।ইলা বিরক্ত হয়ে পিহুকে বলে,
“হে রে পিহু তোর ভাইয়ের কি মাথা খারাপ হয়েছে নাকি?বেশ কয়েকদিন ধরে শুধু আমার সাথে চিপকিয়ে আছে।সে তো নিজেই চাইছিলো না আমাদের বিয়ের খবর কেউ জানুক তাহলে এখন কেনো এতো চিপকিয়ে চিপকিয়ে আছে এতে তো সবাই বুঝে যাবে আমাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে।”
“মনে হয় তোকে ভালোবেসে ফেলেছে?”
“উনি আর ভালোবাসা হা হা হা পিহু হাঁসালি। উনি একটা নিমপাতা যা কখনো মিঠে হয় না।”
মেঘা ডোন্ট কেয়ার ভাবে বলে,”হতেও পারে।যেভাবে ভার্সিটিতে এলে তোর কেয়ার করে এতে সবার নজর লেগে লাগে।”
“কিন্তু বাড়ি গেলেই নিজের আসল রুপে চলে আসে।”
পিহু খুব ভাবুক ভাবে বলে,”তাহলে ভার্সিটিতে এমন কেউ আছে যে কারণে ভাইয়া তোর সাথে খুব ভালো বিহেভ করে।”
“ভার্সিটিতে আবার আমার কোন বাবা দাদা থাকবে যে তাকে দেখানোর জন্য ভালো ব্যবহার করবে।”
“তাও কথা।আচ্ছা বাদ দে এসব।ভালো বিহেভ করছে এই উপলক্ষ্যে ট্রিট দে।”
“এহহহ ঠেকা পড়ে নি।এই মেঘা সীমান্ত ভাইয়ার কি খবর?”
মেঘা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,”তার আবার কি খবর হবে?তাকে বলছি আমার বাসায় বিয়ের প্রপোজাল পাঠানোর জন্য।”
ইলা মেঘার মাথায় একটা চাট্টি মেরে বলে,”ধুর আমি সেই কথা বলি নি আমি বলেছি সীমান্ত ভাইয়াকে বলেছিস বিহান ভাইয়ার কথা।”
বিহানের কথা শুনেই মেঘা নড়বড় করে উঠে বলে,যসর্যি আমি।আসলে ভুলে গেছিলাম। আমি আজই সীমান্তকে সব বলবো।”
পিহু মেঘার কথায় বড্ড ক্ষেপে যায়।তখনই কেউ ইলার কানে কানে বলে,”আমি কি আড্ডায় জয়েন দিতে পারি?”
আকস্মিক কথায় ইলা একটু ঘাবড়েই যায়।ইলা ভুত দেখার মতো আবেশের দিকে চেয়ে থাকে।আবেশ ইলার তাকানিতে একটা মুচকি হাসি উপহার দেয়।আবেশকে দেখে মেঘা সবিনিময়ে বলে,
“আরে আবেশ ভাইয়া আপনি এখানে প্লিজ বসুন।”
আবেশ একটা চেয়ার নিয়ে বসতেই যাবে তখন ঝড়ের বেগে অর্ণব এসে আবেশকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আরে আমার জিগড়ি দোস্ত জানের দোস্ত তুই এতোদিন পর এলি চল আজ পার্টি করবো।”
“কিন্তু আমি এখানে…….”
“আরে এখানে কি চল চল।”
বলেই এক প্রকার জোর করেই অর্ণব আবেশকে নিয়ে যায়।আবেশকে এমন টেনে নিয়ে যাওয়া দেখে মেঘা পিহু আর ইলা সবাই আড়চোখে তাকিয়ে আছে।ইলা বিরক্তি নিয়েই বলে,”যেমন মানুষ তেমন তার বন্ধু।”
মেঘা না বুঝেউ বলে,”মানে?”
“দেখলি না আবেশ কেমন ভুতের মতো উদয় হলো আর অর্ণবও তেমনি ভুতের মতো উদয় হয়ে নিয়ে গেলো।দু’জনেই একেবারে ভুতমানব।”
পিহু ইলার রাগ দেখে বলে,”হা হা হা আচ্ছা ইলা তুই বল তো তুই এই পর্যন্ত ভাইয়ার কতোগুলো নিকনেম দিলি?”
“তা কি জানি?তবে উনি যা তাতে যতই নিকনেম দেও না কেনো সবই কম পড়ে যাবে।”
বলেই তিনজনে হাসতে শুরু করল।
_____________________
সীমান্ত মেঘার বাবা মা’র সামনে বসে আছে।মেঘা বাবা একজন পুলিশ অফিসার।সীমান্ত রীতিমতো ১ ঘন্টা তাদের শুধু বসিয়েই রেখেছে না কিছু বলতে পারছে না তাদের বতে দিচ্ছে।সীমান্তের টেনসনে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ধরছে।মেঘার বাবা বিরক্ত হয়ে বলে,
“আর কতোক্ষণ এভাবে বসিয়ে রাখবে বাবা এবার তো কিছু বলো?”
“জ্বি আংকেল আসলে…….”
তখনই কলিং বেলের আওয়াজ আছে।যা শুনে মেঘার মা দরজা খুলে দিতেই মেঘা বকবক করতে করতে ঘরে ঢুকে।
“জানো মা আজ ভার্সিটিতে কি হয়েছে?ভার্সিটিতে একজন নতুন লেকচারার এসেছে।বেশ ভালোই পড়ায় উনি। আরও জানো আমাদের ভার্সিটিতে কো- কারিকুলারের আয়োজন করা হবে।আচ্ছা বাড়ির পরিবেশ এতো ঠান্ডা কেনো বলো তো?বাবা কোথায় বাবা বাবায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া”
এতোক্ষণে মেঘার ড্রয়িং রুমে বসে থাকা সীমান্ত আর তার বাবার মুখোমুখি দৃশ্য দেখতে পায়।যা দেখে মেঘা একেবারেই হিমশীতল হয়ে যায়।মেঘার বাবা হেসে মেঘাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
” আরে মামনি চলে এসেছো।ও দেখ না এই ছেলেটা ১ ঘন্টা ধরে বসে আছে না কিছু বলছে না আমাদের বলতে দিচ্ছে।আচ্ছা তুমি কি ছেলেটাকে চিনিস?”
১ ঘন্টা ধরে সীমান্ত বসে আছে শুনেই মেঘার রাগ উঠে যায়।সীমান্ত মেঘার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,”না বাবা আমি।এনাকে চিনি না।আর যাকে তাকে তুমি বাসায় ঢুকতে দেও কেনো?পুলিশ হয়ে ঢুকতে দিচ্ছো যদি লোকটা চোর হয়।এখুনি বের করে দেও।”
সীমান্ত মেঘার রাগে কারণটা বুঝতে পেরেছে।সীমান্ত এখনো তার আর মেঘার সম্পর্কে কথা মেঘার বাবা মা’কে বলতে পারে নি দেখেই মেঘার এতো রাগ।বলেই রাগ হয়ে মেঘা চলে যেতে নিলেই সীমান্ত বলে উঠে,
“আংকেল আমি সীমান্ত চৌধুরী। চৌধুরী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির সি ই ও। আমি আর মেঘা একই ভার্সিটিতে পড়ি।আমার পড়াশোনা শেষ এখন। আংকেল আমি মেঘাকে খুব পছন্দ করি।তাকে আমার জীবনসঙ্গী বানাতে চাই।সে’ও আমাকে ভালোবাসে।তাই আমি চাই তাকে বিয়ে করতে। আপনি কি আপনার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিবেন।আমি কথা দিচ্ছি,আমি তাকে অযত্নে রাখবো না।”
এক নিশ্বাসে সীমান্ত কথাগুলো মেঘারা বাবাকে বললো।শেষের কথাটা সীমান্ত মেঘার বাবার হাত ধরেই বললো।মেঘার বাবা সীমান্তের সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়।তারপরও সে নিজের মেয়ের মতামত জানতে মেঘার দিকে তাকালে মেঘা বলে উঠে, “হে এসব সত্যি।”
মেঘার বাবা খুব গম্ভীর গলায় বলে,”আমি তোমার বাবা-মা’র সাথে কথা বলতে চাই।”
কথাটা শোনা মাত্রই সীমান্ত আর মেঘার মুখে আনন্দে হাসি ফুটে উঠে।ওদের মুখের হাসি দেখে মেঘার বাবা মা’ও হেসে দেয়।
___________________________
সীমান্ত ছুটে এসে পিহুকে এক চড় দেয়।পিহু অবাক দৃষ্টিতে সীমান্তের দিকে তাকায় সাথে মেঘাও অবাক হয়।মেঘা ভাবতেও পারে নি সীমান্ত পিহুকে চড় মারবে।মেঘা সীমান্তকে সব বললে সীমান্ত পিহুকে চড় দেয়।পিহু অবাক নয়নে বলে,
“ভাইয়া তুমি আমায় চড় মারলে?”
“তা নয়তো কি?তুই কি করে এই কথা তোর ভাইকে না বলে থাকতে পারিস।আমি যদি জানতাম তুই বিহানকে পছন্দ করিস আমি নিজে বিহানের কাছে যেতাম তোর বিয়ের কথা নিয়ে আর কি’না তুই?তুই আমাকে জানালিও না।দীর্ঘ ৪ বছর তুই কষ্ট পেলি আর আমি ভাই হয়ে কিচ্ছু জানতে পারলাম না আর এই কি না তুই বলিস আমি তোমার সাথে সব শেয়ার করি ভাইয়া এই তার শেয়ারের নমুনা।”
সীমান্ত অনেক কষ্ট পেয়েই কথাগুলো বলল।পিহু সীমান্তকে জড়িয়ে ধরে বলে,”সর্যি ভাইয়া আর কখনো এমন ভুল হবে ন।এরপর থেকে সব শেয়ার করবো।”
সীমান্তও বোনকে জড়িয়ে ধরে। মেঘা ভাই বোনের এমন ভালোবাসা দেখে নিজের চোখের পানি আটকে রাখতে পারে না।মেঘা ভাবতেও পারে নি সীমান্ত এতো ইজিলি বুঝে যাবে।সীমান্ত সাথে সাথেই বিহানকে ফোন দেয় দেখা করার জন্য। বিহানও সীমান্তের কথা মতো সীমান্তের সাথে দেখা করতে আসে।কিন্তু এসে মেঘা আর পিহুকে আবিষ্কার করে।পিহুকে দেখে বিহান বলে উঠে,
“পিহু?”
সীমান্ত বিহান পিঠে হাত দিয়ে বলে,”কি পিহু,শালা এতোদিন আমার বোনকে তুই ভালোবাসিস আর আমি কি না বন্ধু হয়েও জানতে পারলাম না?”
“না দোস্ত এমন কিছু না বিশ্বাস কর।”
“চুপ তুই একদম আমার সাথে কথা বলবি না।আবার মিথ্যা কথা বলছিস।সত্যি করে বল তো তুই পিহুকে ভালোবাসিস না।”
পিহুও টলমল চোখে নিয়ে বিহানের দিকা তাকিয়ে আছে।বিহান যেনো কোনমতেই সেই চোখের চাহুনি উপেক্ষা করতে পারল না।মাথা নিচু করে বলল,
“হুম।”
“তো দেরি কিসের যা এখুনি গিয়ে প্রপোজ কর। আর তুই কি বলদ আমাকে একবার জানাতি বন্ধুত্বের জন্য কি না নিজের ভালোবাসাকে তুই স্যাক্রিফাইস করছিলি?”
“আমার কাছে সবার আগে আমার বন্ধুত্ব।”
সীমান্ত আর বিহান পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে।সীমান্ত বিহানকে বলে, “এখন তো গিয়ে আমার বোনকে নিজের মনের কথাটা বল নাকি এখনো বন্ধুত্বের জন্য আটকিয়ে আছিস।”
“হুম যাচ্ছি।”
বিহান পিহুর কাছে পিহুকে ডাক দেয়,”পিহু।”
পিহু উল্টো দিকে মুখ ঘুরে ছিলো বিহানের ডাক শোনা মাত্রই বিহানের বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে কাঁদতে শুরু করে।এ কান্না নেই কোন দুঃখ, নেই কোন কষ্ট শুধু আছে প্রিয় মানুষকে পাওয়ার আনন্দ আর তৃপ্তি।
সীমান্ত মেঘাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“আজ আমি খুব খুশি। প্রথমত আমার ভালোবাসা মানুষটিকে পেয়ে দ্বিতীয়ত আমার প্রাণপ্রিয় বোনকে তার ভালোবাসার মানুষকে দিতে পেরে।”
#চলবে
#একটু_ভালোবাসি
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব-২২
অর্ণবের বাবা মা এসে অর্ণবের কাছে সবটা শুনে অর্ণবের মা আশা চৌধুরী ঠাসিয়ে অর্ণবকে একটা চড় মারে।
“আজ তোর জন্য মেয়েটার এই অবস্থা। এই অবস্থা করলি আমার মেয়ের? শেষে কি না বৃষ্টির জন্য তুই ইলার গায়ে হাত পর্যন্ত তুললি?”
“মম ইলা ওভার রিয়েক্ট করে ফেলেছিলো।”
“ওহহ ইলা বুঝি ওভার রিয়েক্ট করেছে তাহলে তুই যেটা করেছিস সেটা তুই কি বলবি?তোর তো রোজ দায়িত্ব ছিলো ইলাকে ভার্সিটি থেকে বাসা পর্যন্ত নিয়ে আসা তাহলে কেন তুই তোর দায়িত্ব পূরণ করতে পারিস নি।”
অর্ণব এতে মাথা নিচু করে রাখে।আশরাফ চৌধুরী অর্ণবকে বলে,
“মাই সন মনে আছে তোমার বিয়ের আগে তোমায় বলেছিলাম যে তোমার ড্যাড তোমার জন্য খারাপ চয়েজ করবে না।আমি।তোমার ড্যাডের জায়গায় ঠিক ছিলাম কিন্তু ইলার বাবা হওয়ার দিক দিয়ে আমি ইলার জন্য মোটেও ভালো চয়েজ করতে পারি নি।”
অর্ণবের সত্যিই এখন নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে।বিহান সীমান্ত,পিহু আর ইলার বাবা এখনো এসে পৌছায় নি।মেঘা আর ইলার মা এসে পৌঁছে সে মেয়ের এমন কথা শুনেই বার বার সেন্সলেস হয়ে পড়ছে তাই তাকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে। মেঘা এক কোণায় দাঁড়িয়ে শুধু কাঁদছে।
দীর্ঘক্ষণ অপারেশন চলার পরে অপারেশন রুমের লাইট অফ হয়।ডক্টর বেরিয়ে এলেই অর্ণব হুমড়ি খেয়ে পড়ে বলে,”ডক্টর পেসেন্টের কি অবস্থা? ”
“নাও সি ইজ আউট অফ ডেঞ্জার।”
ডক্টরের কথা শোনা মাত্রই অর্ণবের কলিজায় যেনো পানি এলো।অর্ণব সাথে সাথেই জিজ্ঞেস করল,”ডক্টর পেসেন্টের সাথে কি দেখা করা যাবে?”
“সর্যি এখন দেখা করা যাবে না।আগে পেসেন্টকে কেবিনে শিফট করা হোক দেন দেখা করতে পারবেন।”
“থ্যাংক ইউ ডক্টর।”
“ইটস মাই প্লেজার।”
বলেই ডক্টর চলে গেলেন।আই সি ইউ রুমের গ্লাস দিয়ে ইলার ফ্যাকাসে মুখটা অর্ণব দেখতে পেলো সাথে সাথে অর্ণবের চোখ অশ্রুতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠল।আশরাফ চৌধুরী অর্ণবের উদ্দেশ্য কঠোর গলায় বলে উঠে,”কোন দরকার নেই ইলার সাথে তোমার দেখা করার?তোমাদের মধ্যে যখন এতো ঝগড়া এতো মান-অভিমান তাহলে আর একসাথে থাকার কোন দরকার নেই।আমি আজই উকিলের সাথে কথা বলছি।”
অর্ণব তার বাবার কথায় কোন রেসপন্স করে না।অর্ণব জানে এখন কিছু বললেও তার ড্যাড তার কথা শুনবে না।ইতিমধ্যেই পিহু বিহান আর সীমান্ত এসে হাজির।বৃষ্টির কাহিনি শুনে বিহান আর সীমান্ত অবাক হলেও পিহু অবাক হয় না।কারণ পিহু সবই জানতো। ইলার বাবা এখন ইলার মা’র পাশে আসে কিছুক্ষণ আগেই ইলার মা’র জ্ঞান ফিরেছে তাকে ইলার বিষয়ে সবই জানানো হয়েছে।
______________________________
ইলা চোখ খুলেই নিজেকে হসপিটালের আবিষ্কার করে।হসপিটালের বেডে নিজেকে আবিষ্কার করে ইলা হুমড়ি খেয়ে উঠতে গেলে মেডিসিনের প্রভাবে ইলার জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে গিয়েও হারায় না।ইলা মাথা চেঁপে নিজেকে ঠিকঠাক মতো বসায়।তখনই পাশে অর্ণবকে দেখতে পায়। অর্ণবকে দেখে ইলা একটু অবাকই হয় বটে পরক্ষণেই তাকে মারার কথা মনে করে ইলার প্রচন্ড রাগ উঠে যায়।
ইলা ঘড়িতে দেখলো এখন ভোর ৪ টা বাজে।তাই ইলা অর্ণবকে ডাকতে চেয়েও ডাকে না। ইলা ভালো করে লক্ষ্য করল অর্ণবের চোখের উপরে কালো হয়ে গেছে হয়তো রাত জাগার ফলে। মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে আর খুব ক্লান্তও দেখাচ্ছে। ইলা আরও খেয়াল করলো অর্ণবের হাতে রক্ত জমাট বেঁধে ফুলে গেছে। ইলা অর্ণবের হাত ভালো করে দেখার জন্য হাতটা ছুঁতেই অর্ণব নড়ে উঠে। ভয়ে ইলা সাথে সাথে আবার চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে।অর্ণব বসে উঠে দেখে ইলার এখনও জ্ঞান ফিরে নি।অর্ণব ইলার মাথা হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
“আর কতদিন এভাবে বিছানায় শুয়ে থাকবে বলো?তোমাকে এভাবে দেখে আমার যে নিজেকে খুব অসহায় লাগছে।আজ তিন দিন হয়ে গেলো এখনও তোমার জ্ঞান ফিরে নি।আমি আর পারছি না ইলা।আমি চাই তুমি আমার সাথে ঝগড়া করো আমাকে মি.লেজকাটা হনুমান, এটিটিউড কিং,বান্দর,নির্বিশ্বাস আলী এসব আজব আজব নিকনেমে ডাকো।আই মিস ইউ ইলা সবাই আমায় ব্লেম করছে তোমার এক্সিডেন্ট এর জন্য।প্লিজ চোখ খুলো আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই প্লিজ ইলা প্লিজ।”
বলেই অর্ণব ইলার হাত ধরে কাঁদতে শুরু করল।অর্ণবের চোখে পানি দেখে ইলা সটাং করে উঠে বসে বলে,
“আপনি কি মেয়ে নাকি যে এভাবে ছিঁচকাদুনির মতো কাদঁছেন?আর হে এতো মরা কান্না কাঁদতে হবে না আমি এখনো বেঁচে আছি।”
ইলাকে এভাবে উঠে বসতে দেখে অর্ণব কান্না থামিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।ইলা আমতা আমতা করে বলে,
“কি….কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?বললাম তো আমি বেঁচে আছি আপনি কোন ভুত দেখছেন নাহ।”
অর্ণব খুশিতে ইলাকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে,”আই এম সো হ্যাপি ইলা।থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ আমার সাথে কথা বলার জন্য ইলা।আই লাভ ইউ ইলা আই লাভ ইউ টুউ ম্যাচ। ইউ ডোন্ট নো তোমাকে ছাড়া আমি কিভাবে থেকেছি প্রতিটা মুহুর্ত আমার বিষাক্ত লেগেছে। বারবার প্রে করেছি তুমি যাতে সুস্থ হয়ে উঠো।”
ইলা আই লাভ ইউ কথা শুনে অর্ণবকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে তাড়াতাড়ি বলে,”এই এই কি বললেন আপনি?”
“কি বললাম আমি?”
“সেটাই তো প্রে করার আগে কি বললেন?”
“কথা বলার কথা?”
“আরে নাহ তারপরে?”
“আই লাভ ইউ ইলা এটা?”
“কিইইইইইইইইইইইইইই।”
“হে আই লাভ ইউ তাই বলেছি আই লাভ ইউ আর এমনিতেও আই লা…….”
এবার অর্ণব থামে।অর্ণব যে এতোক্ষণ ইলাকে প্রপোজ করছিলো তা অর্ণব নিজেও জানে না।নিজের অজান্তেই নিজের মনের কথা অর্ণব ইলার সামনে প্রকাশ করে ফেলে।ইলা আফসোসের সুরে বলে,
“হায় মোর কপাল!মানুষ প্রপোজ করে পার্কে নইলে বাগানে আর আমার কি ভাগ্য দেখুন মি.লেজকাটা হনুমান আমায় প্রপোজ করে হসপিটালের বেডে।”
অর্ণব ইলার কথা হা হয়ে থাকে কিছুই বলতে পারে না।ইলা আবারও বলে,”প্রপোজ করেছেন বলে ভাববেন নাহ যে এক্সেপ্ট করবো বরং রিজেক্ট করলাম।আমি তো ঝগড়ুটে তো যান না আপনার ফ্রেন্ড বৃষ্টি রাণীর কাছে যান তাকে গিয়ে প্রপোজ করুন।”
বলেই ইলা চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে।অর্ণব ইলাকে ডাকে,
“ইলা এই ইলা চোখ খুলো এতোক্ষণ পরে চোখ খুলেছে এখন আবার কথা না বলে চোখ বন্ধ করেছে কেনো?চোখ খুলো বলছি।”
“…..…….”
“ইলা এবার কিন্তু আমার রাগ উঠছে। সবসময় জেদ ভালো লাগে না।”
“.………..”
“ধুর তুমি ঘুমাও আমি গিয়ে তোমার সেন্স ফিরার কথা সবাইকে বলে আছি।”
এই বলেই অর্ণব কেবিন ছেড়ে চলে যায়।অর্ণব চলে যাওয়া মাত্রই ইলা উঠে বসে।তারপর ডেভিল হাসি দিয়ে বলে,
“তুমি চলো ডালে ডালে আমিও চলি পাতায় পাতায়।মি.অর্ণব চৌধুরী খুব তো আমায় চড় মেরেছিলে এতো সহজে আমি ভুলে যাবো নো ওয়ে। তোমাকে যদি উচিত শিক্ষা আমি না দিতে পেরেছে,এই এটিটিউড যদি না ভেঙেছি আমার নামও ইলা শেখ থুরি ইলা চৌধুরী নাহ।”
______________________________
“ওহ থ্যাংক গড ম্যাম আপনার জ্ঞান ফিরেছে নাহলে আমাদের যে কি হতো বলার বাহিরে?”
একজন নার্স এসে ইলাকে এসব বললো।কিছুক্ষণ আগেই ইলার বাবা মা আর অর্নবের বাবা মা ইলাকে দেখে গেছে।তারপরই এই নার্স ইলার মেডিসিনের জন্য রুমে এসে এই কথা বলল।ইলা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
“কেনো নার্স ইজ এনিথিং সিরিয়াস?”
“সিরিয়াস মানে তিন দিন ধরে আপনার জ্ঞান নেই স্যার তো প্রচুর প্রেসার দিচ্ছিলেন আপনার জ্ঞান ফিরানোর জন্য। তবে ম্যাম যাই বলুন আপনার লাক কিন্তু অনেক ভালো স্যারের মতো একজন লাইফ পার্টনার পেয়ে।এই তিন দিন স্যার নাওয়া খাওয়াবাদ দিয়ে শুধু আপনার সেবাই করেছেন।”
নার্সের কথাগুলো শুনে ইলা একটু অবাক হয়। অর্ণব কি না তার এতো টেক কেয়ার করেছে?ভাবতেই ইলার কষ্ট হচ্ছে।ইলার ভাবনার মাঝেই নার্সটি বলে উঠে,
“কাইন্ডলি ম্যাম স্যারকে খেয়ে নিতে বলবেন। উনি এই তিন দিন না খাওয়া তারপর আপনাকে দেখতে গিয়ে উনি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়বেন।”
নার্সের কথায় ইলা একের পর এক অবাক হচ্ছে।ইলা নার্সকে অর্ণবকে ডেকে দিতে বলে।নার্স অর্ণবকে ডেকে দিলে অর্ণব এসে ইলাকে বলে,
“ইলা ডাকছিলে?”
“আপনি ৩ দিন ধরে না খেয়ে আসেন কেনো?”
“কেনো তোমার বুঝি কষ্ট হচ্ছে?”
“এই একদম ফালতু কথা বলবেন নাহ?আপনি যদি ভেবে থাকেন আমার সেবা করে,নিজে না খেয়ে আমাকে ইম্প্রেস করতে পারবেন তাহলে শুনে রাখুন এসবে ইলা শেখের মন গলবে না।”
“সর্যি টু সে মিসেস ইলা চৌধুরী আপনি এখন আর শেখ নন সেটা মাথায় রাখবেন।আর সে আমি এসব দ্বারা কোন কিছুই বুঝাচ্ছি না আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করবো।”
বলেই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে অর্ণব পাশের একটা সিটে বসে পড়ল।ইলার বড্ড রাগ হচ্ছে অর্ণবের উপর না পারছে কিছু বলতে না পারছে সহ্য করতে।ইলা ঠিক করলো অর্ণবের সাথে ইলা আর কথাই বলবে না।ঠিক তখনই দরজায় কেউ নক দিলো,
“আসতে পারি?”
আবেশ দরজার সামনে একটা বুকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আবেশকে দেখেই ইলার মাথায় শয়তানি বুদ্ধি আছে।অর্ণব কিছু বলার আগেই ইলা বলে উঠে,
“আরে আসতে পারি কি এসো এসো ভিতরে এসো।”
“থ্যাংকস ইলা।তুমি কেমন আছো?”
“এই তো আলহামদুলিল্লাহ তুমি আবেশ?”
“এই তো আলহামদুলিল্লাহ। তোমার জন্য এই বুকেটটা।”
আবেশ ইলাকে বুকেটটা দেয়।ইলা অর্ণবকে দেখানোর জন্য বলে,”ওয়াও হাও কিউট।ইউ নো রোজ ইজ মাই ফেভারিট।ইউ আর সোওওঅঅঅঅঅঅঅঅঅঅ সুইট।”
বলেই আবেশের গাল ধরে ইলা টানলো।অর্ণব দূর থেকে এসব দেখছে আর লুচির মতো জ্বলছে।অর্ণব মনে মনে বলে,
“বাহ ভাই বাহ থুক্কু বাহ বোন বাহ।যেই আবেশ বুকেট এনে দিলো ও হয়ে গেলো হিরো সুইট কিউট। আর আমি যে সারা রাত দিন খাটলাম আমি রয়ে গেলাম জিরো।”
ইলা অর্ণবকে দেখানোর জন্য আবেশের সাথে আরও বেশি বেশি করে হেসে কথা বলছে।আবেশ একটু নম্রভাবেই বলে,
“বাহ ইলা তুমি তো দেখছি খুব তাড়াতাড়িই সুস্থ হয়ে গেছো।”
ইলা অর্ণবকে দেখানোর জন্য আবেশের গায়ে একটা থাপ্পড় মেরে বলে,”আরে কি যে বলো আবেশ এই এক্সিডেন্ট ইলাকে কখনো থামাতে পারে না।ইলা হচ্ছে টর্নেডো যাকে থামানো যায় না।”
ইলার কথা শুনে আবেশ হেসে দেয়।অর্ণব ইলার কথার মাঝেই বলে,”বাই দ্য ওয়ে, এই টর্নেডোকে কিন্তু আমি সেবা করেছি।”
“আবেশ আশেপাশে কাক অনেক বেড়ে গেছে না বলো শুধু অন্যের কথার মধ্যে নিজের ঠোঁট টা ঢুকায় আর কা কা করে।”
আবেশ কিছু বলার আগেই অর্ণব রেগে বলে উঠে,”কিইইইই আমি কাক?”
ইলা অর্ণবকে পাত্তা না দিয়েই জবাব দেয়,”আবেশ আমি কিন্তু কারোর নাম নেই নি।”
ইলার কথায় আবেশ মুচকি মুচকি হাসতে থাকে আর অর্ণব রেগে ফায়ার হয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়।ইলা অর্ণবের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ডেভিল হেসে মনে মনে বলতে থাকে,
“অর্ণব চৌধুরী এবার তুমিও দেখো জেলাস ফিল হতে কেমন লাগে।এখন আমি আর আবেশ চুটিয়ে প্রেম করবো আর তুমি দেখবে লুচির মতো ফুলবে।”
#চলবে