#একটু_ভালোবাসি,২৩,২৪
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব- ২৩
আজ এক সপ্তাহ পরে ইলাকে হসপিটাল থেকে ডিস্টার্জ করা হয়েছে।ইলা এখনো ঠিকমতো হাটাচলা করতে পারে না।হুউল চেয়ারে করে ইলা নিজের বাসায় চলে আসে।ইলা হসপিটালে অনেক ঝগড়া যুদ্ধ করে নিজের বাসায় ফিরে এসে।অর্ণব তখন হসপিটালে ছিলো না তাই ইলা আরও বেশি করে সুযোগ নিয়ে নিজের বাসায় চলে এসেছে।
ইলা নিজের রুমে এসেই আরাম করে শুতেই হটাৎ করে ফোনটা বেজে উঠলো।ইলা দেখলো অর্ণব ফোন করেছে তাই পাত্তা দিয়েও দিলো না।ফোনটা বাজতে বাজতে কেটে গেলো আবার ফোন আসলো।এভাবে ৩/৪ বার ফোন বাজার পরে ইলা বিরক্ত হয়ে ফোনটা ধরতে না ধরতেই রাগী গলার আওয়াজ পায়।
“ফোন ধরতে এতোক্ষণ লাগে?কোথায় তুমি?আমাকে না বলে হসপিটাল থেকে গেলে কোন সাহসে?”
ইলা মুচকি হেসে বলে,”সর্যি হু আর ইউ?”
অর্ণব অবাক হয়ে ফোন চেক করে বলে,”ইলা আমি অর্ণব তোমার মাথা ঠিক আছে তো?”
“আমি অর্ণব বলে কাউকে চিনি না ভাইয়ায়ায়ায়ায়া।”
ভাইয়া ডাক শুনেই অর্ণব আরও বেশি রেগে যায়।
“এই আমি তোমার কোন জন্মের ভাই লাগি হে?”
“কেনো এখন থেকে এই জন্মের।ভাইয়া আমি এখন আপনার সাথে কথা বলতে চাই না।আমি খুব টায়ার্ড।”
অর্ণব আরও কিছু বলতে যাবে তখনই একজন এসে একটা পার্সেল অর্ণবের কাছে দিয়ে যায়।ইলা ফোনে সেই পার্সেল বয়ের সাথে সব কথাই শুনতে পায়। ইলা পুনরায় মুচকি হেসে বলে,
“কি পার্সেল এসে গেছে বুঝি?”
অর্ণব অবাক হয়ে বলে,”পার্সেলটা কি তুমি পাঠিয়েছো?”
“খুলে দেখুন।”
অর্ণব কিউরিওসিটি নিভাতে না পেরে তাড়াতাড়ি পার্সেলটা খোলে।খুলে যা দেখে তাতে অর্ণবের চক্ষু চড়কগাছে উঠে গেছে।অর্ণব দেখে ইলা অর্ণবকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছে।যা দেখে অর্ণব যত না বেশি রাগ হয়েছে তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছে।অর্ণব অবাক হয়ে ইলাকে প্রশ্ন করে,
“ডিভোর্স পেপার?”
“বাহ এতো তাড়াতাড়ি পেয়েও যাবেন ভাবতে পারি নি।হে ডিভোর্স পেপার আপনার আর আমার ডিভোর্স পেপার।কেনো অবাক হচ্ছেন বুঝি?”
“এসব ইয়ার্কির মানে কি ইলা?”
“ওহ এখন ইয়ার্কি?কেনো বৃষ্টি আপুর সামনে আমাকে ইনসাল্ট করার সময় আমার গায়ে হাত তোলার সময় বুঝি ইয়ার্কি ছিলো না।”
“ইলা আমি তোমায় সর্যি বলেছি তারপরেও?”
” ৫ অক্ষরের সর্যি শব্দ দ্বারা কোন কিছু উল্টে যায় না মিষ্টার অর্ণব চৌধুরী। এন্ড বায় আপনার সাথে আমি আর সংসার করতে চাই না এট লিস্ট এমন কোন মানুষের সাথে তো নই যে আমায় অসম্মান করে।”
বলেই ইলা গট করে ফোন কেটে দিলো।ইলা ফোন কেটে দেওয়ায় অর্ণব আরও রেগে যায়। অর্ণব ডিভোর্স পেপারটা কুচি কুচি করে ছিড়ে ফেলে বলে,
“মিসেস ইলা চৌধুরী এতোদিন বড্ড ভালো ব্যবহার করে ফেলেছি তাই নাহ?অধিকার জিনিসটা তুমি মনে হয় জানো না ইলা চৌধুরী? ওকে ফাইন এবার দেখবে অর্ণব কি জিনিস আর অধিকার কাকে বলে?”
___________________________________
কারোর উষ্ণ ছোয়ায় ইলার ঘুম ভাঙে। ইলা ঘুমুঘুমু চোখ একটু খুলেই অর্ণবকে দেখতে পায়।সাথে সাথে ইলা হুড়মুড়িয়ে উঠে চোখ ঢলতে থাকে। কিন্তু চোখ এতো ঢলার পরেও অর্ণব সামনে থেকে যায় না।ইলা ভয় পেয়ে নিজের হাতে চিমটি কাটে।তাতে ব্যাথা করে আহ উচ্চারণ করে উঠে।অর্ণব বিরক্ত হয়ে বলে,
“কি হয়েছে ইলা পাগল হয়ে গেলে নাকি?”
ইলা অর্ণবের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে বলে,”এটা তাহলে স্বপ্ন নয় সত্যি?”
আসলে ইলা ফোন কেটে টায়ার্ড থাকার কারণে ঘুমিয়ে পড়ে।আর অর্ণব ইলাকে নিতেই ইলাদের বাসায় আসে।ইলার ঘরে ঢুকে ইলার ঘুমন্ত মুখটা দেখে অর্ণব থমকে যায়।অর্ণবের আর ইচ্ছে হলো না ইলাকে জাগানোর। ইলার পাশে বসে কতোক্ষণ যে ইলার ঘুমন্ত মুখটা দেখেছে তার হিসাব নেই।
হটাৎ কিছু দমকা হাওয়ায় ইলার অবাধ্য চুলগুলো ইলার মুখে চলে আসলো। অর্ণবের খুব ইচ্ছে হলো ইলার অবাধ্য চুলগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। নিজের ইচ্ছাটাকে আর চাঁপা না দিয়ে ইলার চুলগুলো ছড়িয়ে দিতেই ইলার ঘুম ভেঙে গেলো।আর তারপর ইলার এসব কান্ড।
“হেএএএএ কিন্তু তোমার কি হয়েছে পাগল হয়ে গেছো নাকি?”
বলেই অর্ণব ইলার কপালে দিয়ে তাপমাত্রা চেক করতে লাগলো।
ইলা কপট রাগ দেখিয়ে অর্ণবকে জোরে ধাক্কা দেয়।যার দরুন অর্ণব খাট থেকে নিচেই পড়ে যায়।ইলা বিরক্তি আর রাগ দু’টো একসাথে নিয়ে বলে,
“হাও ডেয়ার ইউ টু টাচ মি?আর আপনি কার পারমিশন নিয়ে আমার রুমে ঢুকেছেন?সাহস কি করে হলো আপনার?”
“ইলা তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?তোমার রুমে আসার জন্য আমার পারমিশন লাগবে?”
“হে লাগবে।ডোন্ট ফরগেট মিষ্টার অর্ণব চৌধুরী আমি ইলা শেখ আর ইলা শেখের পারমিশন ছাড়া তার রুমে কেউ এলাউ না।আর সেখানে আপনি আমার রুমে এসে আমার বেডের উপর বসে আছেন।বাহ আপনার তো দেখছি মিনিমাম ম্যানার্স টুকুও নেই।”
“ইলায়ায়ায়ায়ায়া”
“লিসেন মিষ্টার অর্ণব চৌধুরী চিৎকার করলেই আপনার ভুলটা ঠিকে পরিণত হবে না।সো নাও গেট আউট মাই রুম।”
“ইলা আমি তোমার হাজবেন্ট হই?”
“তোওঅঅঅঅঅঅ তাই বলে আমার পারমিশন ছাড়া আমার বেড রুমে ঢুকে আসবেন।সর্যি আমি এতো ভদ্র বউ নই।”
“আমিও এতো ভদ্র জামাই নই।”
বলেই অর্ণব জোর করে ইলাকে পাঁজকোলে নিয়ে নিলো।ইলা তো অর্ণবের কান্ডে পুরোই অবাক হয়।
“এ’কি আমাকে কোলে উঠিয়েছেন কেন ছাড়ুন। ছাড়ুন বলছি আমাকে নিচে নামান।”
“হাত পা ভেঙে শান্তি হয় নি নাহ এখন কোল থেকে নিচে নামিয়ে কোমড় ভাঙতে চাচ্ছো তাই নাহ যাতে সারাজীবন বর পাজঁকোলে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।”
“কিইই আমার এতো চিপ স্বভাব নাহ।নামান বলছি আমকে।”
বলেই ইলা আরও বেশি হাত পা ছোড়াছুড়ি আর চিৎকার করতে লাগলো।ইলার চিৎকার শুনে পারভীন শেখ অর্ণবের সামনে হাজির হয়।পারভীন শেখ অতি অবাকতার সাথে প্রশ্ন করে,
“বাবা অর্ণব কি হয়েছে?ইলাকে এভাবে কোলে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?”
“আসলে আন্টি ইলা এখন আমার স্ত্রী। আর আমার স্ত্রীর এভানে একা একা বাপের বাড়ি থাকা মানায় না।আর আমারও কিছু কাজ পড়ে গেছে তাই থাকতে পারছি না।তাই আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে যাচ্ছি।”
“কিন্তু ও তো আজই এলো।অন্তত একটা দিন এখানে থাকতে দেও।”
“না আন্টি থাক।আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না।”
পারভীন শেখ আর অর্ণবের কথার মধ্যেই ইলা বলে উঠে, “আম্মু আমি যাবো না।এই লেজকাটা হনুমানের হাত থেকে আমাকে বাঁচাও প্লিজ।”
ইলার এমন কথা শুনে পারভীন শেখ বলে,”বাবা অর্ণব তুমি……”
পারভীন শেখ কিছু বলার আগেই অর্ণব বলে উঠে,
“না আন্টি আমি কিছুতেই ওকে রেখে যেতে পারবো না।আপনাদের মেয়ে ও ঠিক কথা কিন্তু এখন ও আমার স্ত্রী। আর স্ত্রীর উপর স্বামীর হকই বেশি।”
অর্ণবের যুক্তিতে পারভীন শেখ আর কিছুই বলতে পারে না।অর্ণব ইলাকে কোলে করে এনে গাড়িতে বসিয়ে সোজা চৌধুরী বাড়ি নিয়ে আসে।পথিমধ্যে ইলা অর্ণবের সাথে একটা কথাও বলে নি।
চৌধুরী বাড়ি আসা মাত্রই অর্ণব আবার ইলাকে পাজঁকোলে করে নিজের রুমে নিয়ে যায়।ইলাকে খাটে বসিয়ে অর্ণব ইলার কোলের উপর শুয়ে পড়ে।ইলা তেলেবেগুনে জ্বলে বলে,
“উঠুন বলছি আমার কোল থেকে?”
“উফফফফ ইলামনি একটু কোলে শুঁতে দেও তো?সারাটা পথ যে তোমায় কোলে করে নিয়ে এলাম তার বেলা?”
“আমি বুঝি বলেছিলাম আপনাকে কোলে করে নিয়ে আসতে?”
“উহুউউউ আমার বউ বলেছিলো তাই এনেছি।”
“আমি কিন্তু আপনার বউ না?”
“জানি তো তুমি আমার বাবুর আম্মু।”
এবার ইলা অর্ণবকে দূরে সরিয়ে বলে,”কিইইইইইইইইইই তওবা তওবা আস্তাগফিরুল্লাহ কিসব বলছেন আপনি?”
অর্ণব যেনো ইলার কথায় বেশ মজা পেলো।অর্ণব ইলার দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে বলল,”কেনো আগে তো তুমি এসব বলতে তার বেলা?এখন আমি বললেই দোষ।”
“এই দেখুন আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই না।”
বলেই ইলা খাট থেকে উঠে রাগে নিজের পায়ে দাঁড়াতেই ব্যাথা পেলো।সাথে সাথেই ইলা বিছানায় বসে পড়ে। অর্ণব ইলার অবস্থা দেখে কপট রাগ দেখিয়ে ইলার পা নিয়ে বলে,
“সবসময় রাগ আর রাগ।মনে হয় তোমার রাগ নাকের ডগায় বসে থাকে।কিন্তু এটা বুঝো না যে কখনো কখনো রাগ দেখিয়ে তুমি নিজেরই ক্ষতি করছো।এই যে এখন রাগ দেখিয়ে উঠতে গিয়ে নিজেই ব্যাথা পেলে।”
“ব্যাথা পেলে আমি পেয়েছি তাতে আপনার কি?”
“চুপ একদম বেশি কথা বলবে না।”
বলেই অর্ণব ইলার পা ভালো করে দেখতে লাগলো।এদিকে অর্ণবের স্পর্শে ইলার যেমন অস্বস্তি হচ্ছে তেমনি সুরসুরিয়ো লাগছে।ইলা একটু রাগ দেখিয়ে বলে,
“আপনি আমার পা ছাড়ুন। আপনাকে না বলেছি আমাকে ছুঁবেন না তারপরেও ছুঁতে আসসেন।লজ্জা করে না আপনার।”
“না করে না কারণ আমি আমার বউকেই ছুয়েছি কোন পরমহিলাকে নাহ?”
অর্ণবের এমন কথায় ইলা বেয়াক্কেল হয়ে যায়। অর্ণব যে এখন প্রচন্ড রেগে আছে তা অর্ণবের কথার মাঝেই প্রকাশ পাচ্ছে।এখন অর্ণবের সাথে ঝগড়া করা মানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল দেওয়া।
অর্ণব একটা মলম এনে ইলার পায়ে খুব যত্ন করে লাগিয়ে দিলো।মলম লাগানো শেষ হলে ইলা একটা বালিশ নিয়ে সোফার দিকে যাওয়ার জন্য উঠতে নিলেই অর্ণব ইলার হাত ধরে বলে,
“কোথায় যাচ্ছো?”
“সোফায়।আমি সোফায় যাচ্ছি ঘুমাতে।”
“সোফায় ঘুমাতে হবে না এখানেই ঘুমাও।”
“কেনো আপনি না বেড শেয়ার করেন না তাহলে?আমি সোফায় ঘুমাবো এটাই ফাইনাল।”
“ইলা আমার রাগ উঠাবে নাহ।আমি যখন বলেছি তখন তুমি বেডেই ঘুমাবে।”
“না আমি সোফায় ঘুমাবো।”
“তুমি বেডে ঘুমাবে।”
“বলছি না আমি…….”
ইলা আর কিছু বলার আগেই অর্ণব তার ওষ্ঠ ইলার ওষ্ঠের সাথে মিলিয়ে দিলো। ইলা যেনো একেবারে হিমশীতল হয়ে গেছে। নিজেকে ছাড়াতেও চেয়ে ইলা নিজেকে ছাড়াতে পারছে না।এভাবে ২ মিনিট থাকার পরই অর্ণব ইলাকে ছেড়ে দিলো।ইলা এখনো অবাকের চরম সীমায় রয়েছে।ইলা কাঁদো কাঁদো ফেস করে অর্ণবকে বলে,
“এটা আপনি আমার সাথে কি করলেন?”
অর্ণব নেশাক্ত গলায় বলে,”এটা তো কিছুই না ইলামনি।আরও অনেক কিছু আমি করতে পারি যদি তুমি সোফায় ঘুমাও এখন বেটার কি হবে বলো সোফায় ঘুমানো নাকি বেডে।তবে যাই বলো এখন কি সোফায় ঘুমালেই আমার জন্য লাভ।”
ইলা ভয়ার্ত কন্ঠে আমতা আমতা করে বলে,”লা…লাভ কিসের লা…লাভ?”
অর্ণব ইলার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,”কেনো বুঝতে পারছো না বুঝি?এখন কিন্তু রাত?চারিদিকে তাকিয়ে দেখো?”
এদিকে অর্ণবের এমন নেশাক্ত কন্ঠে ইলার কলিজার পানি শুকিয়ে গেছে।ইলা তাড়াতাড়ি কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ল।ইলার কান্ডে অর্ণব মুচকি হেসে অর্ণব ইলাকে জড়িয়ে ধরলেই ইলা বলে উঠে,
“এই আমার উপর থেকে হাত সরান বলেছি না আমাকে টার্চ করবেন না।”
“বাহ রে আমি তোমায় কোথায় টার্চ করছি আমি তো কাথার উপরে হাত রেখেছি।”
“কিন্তু সেটা তো আমার উপরেই।”
“তো এটা তোমার দোষ। আমি কাঁথাকে জড়িয়েই ঘুমাবো।”
এই বলে অর্ণব আরও শক্ত করে ইলাকে জড়িয়ে ধরলো।ইলা রাগে মনে মনে বলে,”উফফ কি জ্বালার মধ্যেই না পড়লাম?এই অর্ণব চৌধুরীকে শায়েস্তা করতে এসে তো এখন আমিই কাবু হয়ে যাচ্ছি।ও আল্লাহ রক্ষা করো আমারে এই লেজকাটা হনুমানের থাকে।”
#চলবে
#একটু_ভালোবাসি
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব – ২৪
শুষ্ক আবহাওয়া আর পাখির কিচিরমিচিরে ইলার ঘুম ভাঙলো। সচরাচর ইলার আগে ঘুম ভাঙে না কিন্তু আজ ইলার আগেই ঘুম ভেঙেছে।ইলা চোখ খুলেই প্রথমে অর্ণবকে দেখতে পায়।ঘুমন্ত অর্ণবকে দেখে মুহুর্তেই ইলা এক প্রকার ক্রাস নামক বাঁশ খেলো।
ইলা অর্ণবের দিকে বেশ কতোক্ষন তাকিয়ে ছিলো। হটাৎ করেই ইলার চোখ অর্ণবের ঠোঁটের উপর পড়লো। সাথে সাথেই ইলার কালকে রাতের কথা মনে পড়ল।ইলা তো মুহুর্তেই লজ্জায় লাল,নীল,সবুজ হয়ে গেলো।ইলা মনে মনে বলতে লাগলো,
“ইসসস ইলা এই লোকটার কোন লজ্জা শরম নেই।কিভাবে কালকে আমায় কিস করলো?আর কিসব কথা বললো?হায় হায় আমি তো শেষ।”
“এভাবেই কি লজ্জা পাবেন নাকি উঠবেনও?”
অর্ণবের কন্ঠ শুনে ইলা তাড়াতাড়ি অর্ণবের বাঁধন থেকে উঠে বসলো আর জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলছে।আসলে ইলা এতো বেশি নড়াচড়া করছিলো যে অর্ণবের ঘুম ভেঙে গেছে। আর ঘুম থেকে উঠেই অর্ণব ইলার লজ্জারাঙা আবির মাখা মুখ দেখতে পায়।তাতেই ইলাকে এসব বলে।ইলা আর পিছনে না তাকিয়ে সোজা ওয়াসরুমে ঢুকে যায়।
আয়নার সামনে কয়েকবার পানি ছিটিয়ে ইলা নিজেকেই নিজে বলে,”ইলা কি করছিস তুই এভাবে অর্ণবের মোহে পড়লে তোকে চলবে না।আর ওই লেজকাটা হনুমানটাও হয়েছে।কিভাবে লজ্জা দিছিলো আমাকে?আমি আর কথাই বলবো না।”
এদিকে ইলার কান্ডে অর্ণব হাসতে হাসতে শেষ।
“মিস.ইলা রাণী তোমাকে আমি বুঝাবোই তুমিও আমাকে ভালোবাসো।আর এই অর্ণবের বাধঁন থেকে কখনোই যেতে দিবো না।”
_____________________________
দেখতে দেখতে আরও এক সপ্তাহ কেটে গেছে।এখন ইলা কিছুটা হাটতে পারে।এই কয়দিন অর্ণব ইলার সবরকম ভাবে সেবা করেছে।আর ইলাও সুযোগ পেয়ে অর্ণবকে খুব খাটিয়েছে।এক গ্লাস পানি পর্যন্ত নিজের হাতে খায় নি সেটাও অর্ণবকে দিয়ে আনিয়ে খেয়েছে।আজ পিহু আর মেঘা এসেছে ইলার সাথে দেখা করতে।তিন বান্ধুবী জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে।ঠিক তখনই অর্ণব ফোন টিপতে টিপতে সামনে গেলে ইলা অর্ণবকে ডাকে।
“অর্ণব।”
“হুম বলো?”
“বাসায় মেহমান এসেছে অর্ণব মামনি একটু বাহিরে গেছে।তুমি আমার ফ্রেন্ডের জন্য কিছু নাস্তার ব্যবস্থা করবে?”
অর্ণব অতি অবাকতার সাথে বলে,”আমিইইইইই?”
“হেএএএ তুমি।জানোই তো আমার পায়ে ব্যাথা যদিও হাটতে পারি বাট না হাটাই বেটার তাই তুমিই নিয়ে এসো।”
অর্ণব অসহায় গলায় বলে,”ওকে।”
বলেই অর্ণব চলে গেলো।এদিকে অর্ণব আর ইলার কনভারশেষন শুনে পিহু আর মেঘা অবাক।পিহু রীতিমতো ইলাকে টেনে বলে,
“বইন এ তুই কি অবস্থা করছিস আমার ভাইয়ের?”
ইলা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,”আমি আবার কি করলাম?”
“কি করলাম মানে?ভাইয়া তোর কথা শুনছে।যে ছেলে কোনদিন নিজের কাজ নিজে করে নি সে কি না তোর কথামতো উঠছে আর বসছে।”
“হে তোওঅঅ?”
পিহুর যেনো কিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না।অর্ণব সবার জন্য কফি বানিয়ে এনে সার্ভ করে।সার্ভ করার সাথে সাথেই ইলা বলে,
“অর্ণব আমার জন্য একটু বিস্কুট আনতে পারবে?”
সাথে সাথে অর্ণব কিছু বলার আগেই পিহু বলে উঠে, “কিইইইই একদম না।এই যা তো ভাইয়া আমাদের আর কিছু লাগবে না।লাগলে আমরা নিয়ে নিবো তুমি যাও।”
অর্ণবও না দাড়িয়ে নিজের রুমে চলে যায়।পিহু বিরক্তি নিয়ে বলে,”এসব কি হচ্ছে ইলা?তুই ভাইয়াকে এভাবে খাটাচ্ছিস কেনো?”
“আমি আবার কি খাটালাম তোর ভাই নাকি আমায় ভালোবাসে তাই নিজ থেকেই এসব করছে।”
“দেখ ইলা ভাইয়া তোকে সত্যিই ভালো বাসে।”
পিহুর সাথে মেঘাও বলে উঠে,”হে রে ইলা অর্ণব ভাইয়া কিন্তু চেঞ্জ হয়ে গেছে তা কি তোর চোখে পড়ছে না?”
“না রে পড়ছে না আমি কানা তো তাই।”
“ইলা দেখ সব সময় মজা ভালো লাগে না।”
ইলা মেঘার কথায় কোন রেসপন্স করে না।মেঘার কথা শেষে পিহু বলে,”তোর যা ইচ্ছা তাই কর।দেখ তো কার্ডটা কেমন হয়েছে?”
পিহু একটা কার্ড ইলার দিকে এগিয়ে দেয়।ইলা কার্ডটা খুলে ভালো করে দেখে এটা পিহু বিহান সীমান্ত আর মেঘার বিয়ের কার্ড।আর ডেট দু’জনেরই এক।ইলা খুশিতে অবাক হয়ে বলে,
“হোয়াট এ প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ। দু’টো বিয়ে একসাথে হবে।”
মেঘা বলে উঠে, “হে বিয়ে টা আগেই হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু তীর এক্সিডেন্টে এক মাস পিছিয়ে গেছে।আর এক সপ্তাহ পরই আমাদের বিয়ে।”
“এক সপ্তাহ পরে এটা আগে হয়ে যাচ্ছে নাহ?”
ইলার প্রশ্নে পিহু বলে,”মোটেও না।এটা মোটেও আগে হয়ে যাচ্ছে না।আর এমনিতেই তুই সুস্থ হয়ে গেছিস।সো মনে হয় না কোন প্রবলেম হবে।”
পিহু মেঘাকে পঁচাতে বলে,”আর এক সপ্তাহ পরেই মেঘা হবে এই বাড়ির বউ আর আমার ভাবি।”
এতে মেঘা লজ্জায় লাল হয়ে যায়।এদিকে পিহু আর ইলা কন্টিনিউসলি মেঘাকে লজ্জায় ফেলছে।এভাবে কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়ার পরে হটাৎ করেই কলিং বেল বেজে উঠে। মেঘা চেক করার জন্য দরজা খুললেই আবেশকে দেখতে পায়।
“আবেশ আপনি এখানে?”
“জ্বি ইলারা সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।”
“ওহ প্লিজ ভিতরে আসুন।”
আবেশ ভিতরে এলেই ইলার কাছে এগিয়ে যায়। এদিকে আবেশকে দেখে ইলা প্রচন্ড অবাক হয়।
“আবেশ আপনি?”
“হে তোমার শরীরের অবস্থা এখন কেমন? সুস্থ তুমি?”
“জ্বি।অর্ণব ওর রুমে আসে। আপনি সোজা ওর রুমে চলে যান।”
“কেনো?”
“আপনি অর্ণবের সাথে দেখা করতে আসেন নি?”
“একদমই না আমি তোমার খোঁজ নিতে এসেছি।”
“ওহ আচ্ছা।”
অর্ণব উপর থেকেই আবেশকে দেখতে পায়।অর্ণব একটু রেগেই আবেশকে উপরে যেতে বলে।আবেশও কোন উপায় না থাকায় ইলার সাথে টুকটাক কথা বলে উপরে চলে যায়।আবেশ যাওয়া মাত্রই পিহু ইলার কানে কানে বলে,
“এই আবেশ ভাইয়া আবার তোর প্রতি কবে থেকে এতো কেয়ারিং হলো?”
“আমি কি জানি?”
মেঘা বিরক্তি নিয়ে বলে,”আমরা যেদিন যেদিন এই বাসায় আসে আবেশ ভাইয়াকেও যেনো আসতে হবে।উফফফ মনে হয় আমাদের ফলো করে।”
পিহু ইলাকে বলে,”দেখ পিহু আবেশ ভাইয়ার হাফভাব আমার ভালো লাগছে না তুই একটু দূরে দুরেই থাকিস।”
ইলা না বুঝেই বলে,”ওকে।”
______________________________
অর্ণব খুব গম্ভীর হয়ে আবেশের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।পরিবেশটা খুবই গুরুগম্ভীর।হটাৎ এমন আর্জেন্টলি অর্ণব আবেশকে ডাকলো তার কারণ আবেশ বুঝতে পারছে না।আবেশ কিউরিওসিটি নিয়ে প্রশ্ন করলো,
“অর্ণব হটাৎ ডাকলি যে?”
“তুই কি চাস আবেশ আমার আর ইলার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাক সেটা?”
“মানে?আমি আবার কি করলাম?”
“কি করেছিস মানে?তুই এমনভাবে ইলার পিছু পিছু ঘুরছিস কেনো?ইলার এতো কেয়ার কেনো?”
আবেশ মুচকি হেসে বলে,”কেনো তোর বুঝি জেলাস হচ্ছে?”
অর্ণব আবেশের কলার ধরে বলে,”ইয়েস আমার জেলাস ফিল হচ্ছে বিকজ আই লাভ হার ড্যামেট।আমার প্রতিনিয়ত ভয় হচ্ছে তুই আমার থেকে ইলাকে কেড়ে নিবি।তাই আমি সোজাসুজি প্রশ্ন করছি তুই কি চাচ্ছিস?”
আবেশ নিজের কলার ছাড়িয়ে শান্ত গলায় বলে,”এখানে আমার বাহ তোর চাওয়ার কিচ্ছু যায় আসবে না।এখানে ইলা কু চায় সেটাই মেইন বিষয়। ইলা যদি তোকে ভালোবাসে তাহলে ইলা তোর আর যদি না ভালোবাসে তাহলে কি হবে সেটা তো তুই বুঝতেই পারছিস।”
“কি হবে?”
“সেটা না হয় পরেই দেখা যাবে।”
বলেই আবেশ চলে যায়।অর্ণবের মনে ভয় ঢুকে যায়।অর্ণব আবেশকে বেশ ভালো করেই চিনে।আবেশের যেটা পছন্দ সেটা আবেশ নিয়েই ছাড়বে।আর অর্ণব ইলাকেও এসব বলতে পারছে না কারণ ইলা তাহলে অর্ণবকে ভুল বুঝবে।
আবেশ নিচে গিয়ে আবার ইলার সাথে দেখা করে।এতোক্ষণে মেঘা আর পিহু চলে গেছে আর ইলা কার্টুন দেখছে।আবেশ গিয়ে ইলার পাশে বসে বলে,
“হাই ইলা তখন তো তোমার সাথে ভালো করে কথাই বলতে পারলাম না।”
“হাই আবেশ হুম বলো।”
“আচ্ছা তুমি কি অর্ণবকে ভালোবাসো?”
“কেনো আবেশ হটাৎ এই কথা?”
“না এমনি এজ এ ফ্রেন্ড আমি তো জানতেই পারি।”
“আসলে আবেশ……”
ইলা কথা বলতে গিয়ে দেখলো অর্ণব আড়াল থেকে উপর থেকে সব শুনছে।ইলা অর্ণবকে জেলাস ফিল করাতে বলে,
“আবেশ কি যে বলো না এই ইলার বিয়ে হয়েছে ঠিকই কিন্তু মন থেকে সে পিউর সিংগেল।আর এটিটিউড কিং আর মিস.ঝগড়ুটে এসব কি আর যায়?”
“ইলা তুমি ভেবে বলছো তো?”
“হে একদম।”
“তাহলে কাল এসে যদি বৃষ্টি অর্ণবকে নিজের করে পেতে চায় তখন?”
এবার ইলা একটু রাগী গলায়ই বলে,”তখন তখন আর কি ওই অর্ণব যার খুশি হোক তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না।”
“ভেবে বলছো তো?”
ইলা রাগী গলাই বলে,”হুম।”
“ওকে ফাইন আমি উঠি।”
বলেই আবেশ চলে যায়।ইলার এমন উত্তরে অর্ণব কষ্ট পেলেও ভেঙে পড়ে না।
#চলবে