একটু_ভালোবাসি #পর্ব – ০১

0
3923

#একটু_ভালোবাসি
#পর্ব – ০১
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা

“আ’ম সর‍্যি ইলা।প্লিজ চুপ থাকিস না কিছু তো বল।”

প্রখর রোদ্রতার মাঝে মাঠে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে দুই রমনী।যাদের একজনের চোখে আছে অনুতাপ আর এক জনের চোখে ক্রোধ।ইতিমধ্যে মেঘা একশ বারের উপরে ইলাকে সর‍্যি বলেছে কিন্তু ইলা যে মুখে কুলুটি মেরেছে তা খোলার কোন নাম গন্ধ নেই।

ঠিক এক ঘন্টা পরে একজন দারোয়ান এসে বলে,

“আপারা আন্নেগো শাস্তি শেষ হইয়াছে। আন্নেরে এখন এইখান থেইকা যান। যা গরম ডাই না পড়ছে।আহা গো মাইয়া গুলারে স্যারডা এমনে শাস্তি দিল তাও কিনা ওই পোলাগো কথা শুইন্না।”

বলেই দারোয়ান টা চলে গেল।ইলা আর মেঘা কান ছেড়েই সেখানে বসে পড়ল।মেঘা তো এখন ব্যাথায় কুকড়াচ্ছে।

“ও মা গো।আমার হাত আমার পা আমি শেষ রে ইলা। আহ আহ।”

বলেই মেঘা কান্নার অভিনয় করতে লাগলো।

“আমি ওই খবিশ লোকটাকে কিছুতেই ছাড়বো না।”

এই একঘন্টা পরে ইলার মুখে এখন বুলি ফুটেছে।তাও সেটা রাগের আর ক্ষোভের।মেঘা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে ইলা এখন প্রচন্ড মাত্রায় রেগে আছে তার জন্যই এতোক্ষণ নিশ্চুপ ছিলো।তাই মেঘা প্রসঙ্গ ঘুরাতে বলে,

“এ’কি ইলা তোর গালে কি হয়েছে?”

ইলার রোদ একদমই সহ্য হয় না।রোদে বেশিক্ষণ থাকলেই ইলার সানবার্ণ হয়। আর এতোক্ষন কান ধরে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকায় ইলার ফর্সা গাল দু’টো লালে টুই টুম্বর হয়ে গেছে যেনো ছুয়ে দিলেই রক্ত ঝড়বে।ইলা মেঘার কথা অগ্রাহ্য করে বলে,

“ওই খবিশ লোকটাকে যদি আমি কুচি কুচি করে কেটে লঙ্কা হলুদ দিয়ে মেখে না খেয়েছি তো আমার নামও ইলা শেখ না।”

ইলা রাগে ক্ষোভে ভাবতে থাকে কিছুক্ষন আগে কার ঘটনা।

কিছুক্ষন আগে,

আজকে ইলা আর মেঘা প্রথম ভার্সিটিতে যাবে। তো ইলা সেই ভাবেই সাজছে পড়নে নীল আর সাদা জামার কুর্তি, ওড়নাটা সামনে ঝুলানো।মাথার সমস্ত চুলগুলো উঁচা করে একটা পনি টেল করা তবে দু’পাশে কিছু চুল ছেড়ে রেখেছে যাতে দেখতে সুন্দর লাগে,মুখে হালকা মেকআপ আর ড্রেসের সাথে ম্যাচিং করে সাদা কানের দুল।ব্যস ইলার সাঁজ কম্পিলিট। ইলা সঙ্গে সঙ্গে তার বেস্ট ফ্রেন্ড মেঘাকে কল দিল।

“কি রে বেরিয়েছিস?”

“এইতো এখুনি বের হবো।তো তুই বের হ আমিও বের হচ্ছি।”

“ওকে।”

এইটুকুই কথা হয় তারপর ইলা নাস্তা খেয়ে বের হয়।ইলাদের বাসা থেকে মেঘাদের বাসা বেশখানিক দূরেই অবস্থিত। ইলা রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে আছে।আশেপাশে কোন রিকশা পাচ্ছে না এমতাবস্থা ইলার খুব বিরক্ত লাগছে তাই ইলা হাটা শুরু করল।ঠিক করল আজ হেটেই যাবে কিন্তু হাটতে হাটতে ইলা একটা শুনশান রাস্তায় পৌঁছে গেল। ইলা খেয়াল করল এই রাস্তায় মানুষজন খুব কম সাথে আরও খেয়াল করল ইলার পিছে দু’তিনটা ছেলে পড়েছে।মেয়েদের সিক্স সেন্স বলে কিছু একটা থাকে সেটার সাহায্য ইলা বুঝতে পারল অবস্থা খুব একটা ভালো না।ইলা খুব দ্রুত হাটা শুরু করল, ইলা মাথা কাজ করছে না মস্তিস্ক ছন্নছাড়া হয়ে পড়েছে।

এমন সময় ইলা দেখল ছেলেগুলো ইলার খুব কাছে চলে এসেছে। ইলা যেনো আরও নার্ভাস হয়ে পড়ল তখনই সামনে থেকে একটা বাইক এসে ইলার সামনে সজোরে ব্রেক করল।ইলা এতো দ্রুত হাটছিলো আর এতো অন্যমনস্ক ছিলো যে পাশ দিয়ে বাইকে তার এক্সিডেন্ট হতে পারত তা সে বুঝে উঠতেই পারে নি।

বাইকের ছেলেটা হেলমেট মাথায় দিতে রাগান্বিত কন্ঠে বলতে লাগল,”এই মেয়ে মরার শখ জেগেছে নাকি?মরতে হলে অন্য কোথাও গিয়ে মরো আমার বাইকের সামনে কেন এসেছো?”

ছেলেটাকে দেখে ইলার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি ভর করল।ইলা কিছু না ভেবেই বাইকের ছেলেটার কাছে গিয়ে ছেলেটার হাত ধরে বলতে লাগল,”বেবি,আই নো কাল আমি তোমার সাথে একটু বেশি রাগারাগি করে ফেলেছি তাই বলে তুমি আমাকে এমন ভাবে ইগনোর করছো।”

বাইকের ছেলেটা যেনো ইলার কথায় অবাকের চরম সীমায় পৌছে গেলো। চেনা নেই জানা নেই এভাবে এসে বেবি বলা শুরু করে দিলো।অবাক কন্ঠেই ছেলেটা বলল,”এই এই আপনার মাথা ঠিক আছে তো?”

“আরে বেবি এতো রাগছো কেন?ওকে সর‍্যি জানু আমি তোমার সাথে আর কখনো রাগ করবো না প্লিজ তাও এমন ইগনোর করো না।”

ছেলেটা যেনো বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল।আবার মেয়েটার উপর রাগও লাগছে। ইলা কথাগুলো খুব জোরে জোরেই বলল। ইলা খেয়াল করল পিছনের ছেলেগুলো আর নেই। ইলা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো কিন্তু পরক্ষণেই দেখল ছেলেটার হাত সে ধরে রেখেছে। ইলা তাড়াতাড়ি করে হাত ছেড়ে ছেলেটাকে বুঝাতে যাবেই তার আগেই ছেলেটি ঝাঝাঁলো কন্ঠে বলে উঠে,

“আর ইউ ম্যাড?পাবনা থেকে ছাড়া পেয়ে রাস্তায় এসে পড়েছেন নাকি। ও মাই গড এখুনি পাগলাগারদে কল করতে হবে যে একটা পাগল ছাড়া পেয়ে আমার রাস্তা আটকিয়েছে।”

ছেলেটার কথার ইলার ভীষণ রাগ উঠে। কিন্তু তাও চুপচাপ সহ্য করে নেয়। ছেলেটা একটু থেমে বলে,

“ওয়েট ওয়েট আমি বুঝেছি তুমি আমাকে কেন বয়ফ্রেন্ড দাবি করেছো।”

ইলা ভাবলো ছেলেটা হয়তো বুঝতে পেরেছে যে ইলা বিপদে পড়ে ছেলেটাকে বয়ফ্রেন্ড দাবি করে সেল্ফ ডিফেন্ড করেছে। ইলা খুশিমনে আবার কিছু বলতেই যাবে তার আগেই ছেলেটি বলে,

“বুঝেছি তোমরা ওই টাইপের মেয়ে যারা রাস্তায় ছেলে ধরে তাদের বদনাম করে রাইট। এখানে আমাকে এখন বয়ফ্রেন্ড দাবি করেছো কিছুক্ষন পরে বলতে তুমি আমার কাছে টাকা পাও। এম আই রাইট।”

ছেলেটা তার আঙুল উঁচিয়ে ইলার দিকে কথা গুলো ছুড়ে দিলো।ইলা এতোক্ষন অনেক সহ্য করেছে কিন্তু আর নয় এবার ইলাও কথার পিঠে কথার তীর ছুড়ে দিলো।

“ও মি.এটিটিউড কিং নিজেকে কি মনে করেন আপনি? যা মুখে আসছে তখন থেকে তাই বলে যাচ্ছেন।আমি আপনার কোন পাকা ধানে মই দিছি শুনি যে এভাবে চেঁত্তাচ্ছেন।”

ইলার কথায় ছেলেটা একটু বিগড়ে যায়।স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে ছেলেটার কথায় ইলা চেঁতে গেছে কিন্তু এখানে ইলা উল্টা বলছে। ছেলেটা কিছু বলতে ধরলেই ইলা বলে উঠে,

“এই আপনি একটা কথাও বলবেন না।এখন আমি বলবো আপনি শুনবেন।৫ মিনিটের জন্য বয়ফ্রেন্ড বানাইছি না বানাই নি তাতে বাবা কি এটিটিউড কত্তো কথা।” ইলা এক আঙুল উঠিয়ে ছেলেটার দিকে তাক করে বলে,”শুনুন মিষ্টার আমি যাকে ইচ্ছা তারে বয়ফ্রেন্ড বানামু বয়ফ্রেন্ড না হইলে জামাই বানামু আর সেটা যদি রাস্তায় আপনি হোন তো তাই।কার মুখ দেখে যে আজ এই এটিটিউডের পাল্লায় পড়লাম কে জানে?”

বলেই ইলা ছেলেটাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রাগে গটগট করে হেটে চলে গেল।এদিকে ছেলেটা পুরো বোকা বনে গেল। কিছুক্ষন পর হুস আসতেই ছেলেটা নিজে নিজে বলতে লাগল, “আজব মেয়ে তো বাবা একেই তো নিজে দোষ করল তার উপর আবার আমার সামনে জোড় গলায় কথা বলল। আরে আমাকে কি বলল এটিটিউড কিং আর নিজে যে এটিটিউড কুইন তার বেলা।ধুর আজ যে কার মুখ দেখে বের হলাম আল্লাহই জানে।”

বলেই ছেলেটা বাইক নিয়ে চলে গেল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here