#একটু_ভালোবাসি
#পর্ব -০২
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
ইলা গিয়ে মেইন রোডে দাঁড়ায়। ইতিমধ্যে মেঘাও এসে পড়েছে। মেঘা আজ একটা মেরুন কালারে কুর্তি পড়েছে, মুখে হালকা মেকআপ,চুলগুলো ছাড়া,দেখতে মাশাল্লাহ লাগছে।মেঘাকে এমন দেখে ইলা বলেই ফেলে,”কি রে, তুই কি ভার্সিটিতে যাচ্ছিস নাকি বিয়ে বাড়ি?”
মেঘাও ইলার প্রসঙ্গ দুষ্টু স্বরে উত্তর দেয়,” বিয়ে বাড়ি রে। কারণ আমি তো যাচ্ছি ছেলে পটাতে। আর প্রথম দিনেই যদি কাউকে পটিয়ে ফেলি তাহলে তো তোরই ভালো তুই একটা দুলাভাই পেলি।”বলেই লজ্জার ভান করে মুখ ঢেকে ফেলল।
“হয়েছে আর এক্টিং করতে হবে না।”
তারপর দু’জনে একটা রিকশা ধরে গল্প করতে করতে ভার্সিটিতে পৌঁছে গেল। ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে ইলা আর মেঘা একবার নিজেদের দিকে তাকিয়ে দুজনেই একসাথে কাউন্ট করা শুরু করল,”ওয়ান টু থ্রিইইইইই”
বলেই একসাথে দুজনে পা রাখল। তারপর দুজনে ঝগড়া শুরু করল ইলা বলছে,
“আমি আগে পা রেখেছি।”
সাথে সাথে মেঘাও বলছে,”এই একদম চিটিং করবি না আমি আগে পা রেখেছি।”
“না আমি।”
“বলছি না আমি।”
“দেখ ইলা চিটিং করবি না তুই ওলয়েজ চিটিং করিস।আমি।আগে।”
“মোটেও না।আমি আগে।”
দু’জনের এমন ঝগড়া দেখে ইতিমধ্যে হালকা ভিড় হতে লাগলো। দু’জনে সেটা খেয়াল করে ফট করে হেসে দিল। ক্লাস শুরু হতে আরও কিছুক্ষণ দেরি আছে তাই ইলা আর মেঘা ভাবলো ভার্সিটি টা একটু ঘুরে দেখা যাক।যেই ভাবা সেই কাজ তারা দু’জন মিলে ভার্সিটি ঘুরে দেখতে দেখতে মাঠের দিকে চলে গেল।
পথিমধ্যেই ইলা আর মেঘার সাথে একটা মেয়ের দেখা হয়।মেয়েটার নাম পিহু। সেও ভার্সিটির প্রথম বর্ষের ছাত্রী।কিছুদিন ধরে ভার্সিটিতে এসেছে।পিহুও দেখতে মাশাল্লাহ, চুলগুলো কোমড় ছাড়াবে। পিহুর চোখগুলো খুব সুন্দর, যেকোন পুরুষ তার চোখের নেশায় পড়তে বাধ্য তা নিসন্দেহে বলা যায়।পিহুর সাথে মেঘা আর ইলার ভালোই বন্ধুত্ব হয়ে গেলো।কথার প্রসঙ্গে তারাও এ ও জানতে পারে পিহুর বাসা মেঘা আর ইলার এলাকার পাশের এলাকায়ই।এতে ইলা আর মেঘা আরও খুশির। মেঘা খুশিতেই বলেই দেয়,
“আচ্ছা এরপর থেকে আমরা একসাথে তাহলে ভার্সিটিতে আসবো।তাহলে অনেকক্ষন গল্পও করা যাবে।”
উত্তরে পিহু শুধু মাথা নাড়ায়।ইলা খেয়াল করল সামনে কিছু ছেলে কয়েকজনকে ধরে র্যাগিং করছে।ইলা উৎসাহমূলক দৃষ্টিতে তাকালে পিহু বলে,”ওরা আমাদের ক্লাসেরই স্টুডেন্ট।”
ইশা এতে অবাক হয়ে বলে,”সেম ক্লাস হয়ে ওরা ক্লাসমেটদেরই র্যাগিং করছে।”
পিহু ছোট্ট করে উত্তর দেয়,”হুম।আমাকেও করেছিল।”
ইলা একটু রেগেই বলে,”কিইইই?তুই ও র্যাগিং শিকার হয়েছিলি।ওকে চল তো মেঘা আজকে ওদের বারোটা আমরা বাজাবো।”
ইলা যেতে নিলেই পিহু ইলার হাত ধরে আটকিয়ে বলে,”থাক না এসব। কি দরকার ঝামেলার? ছেড়ে দে।আর ওখানে মারুফ আছে মারুফ খুব বিচ্ছু।”
“ছেড়ে দিবো মানে?যেখানে র্যাগিং করাই অন্যায় সেখানে এরা কি না সেম ক্লাস র্যাগিং করছে।আর মারুফ বিচ্ছু হলে আমিও বিচ্ছু আল্ট্রা প্রো ম্যাক্স। না আমি ছাড়তে পারব না।”
মেঘাও ইলার সাথে তাল মিলিয়ে বলে,”হে ইলা একদম ঠিক বলছে পিহু।দেখাই যাক না কি হয়?”
ইলা কোন কথা না শুনে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। সাথে সাথে মেঘা আর পিহুও গেলো। ইলা গিয়ে দেখল ৩ টা ছেলে একসাথে কয়েকজনকে র্যাগিং করছে। ইলা গিয়ে একটা ছেলেকে বলল,”এই যে, তোমরা সেম ক্লাস র্যাগিং কেন করছো?”
সবুজ ইলাকে দেখে স্বচ্ছন্দে ইলাকে বলল,”কেন খুকুমনি?তোমার বুঝি সমস্যা হচ্ছে।”
মেঘা পাশ থেকে সেই ছেলেটাকে বলে উঠে, “হে গো মাস্তান গুন্ডি ছেলে কারণ আমরা এসব চোখে দেখতে পারছি আর আমরা এসব খুব ভালো করে শায়েস্তা করতে পারি?রাইট ইলা?”
ইলাকে ডাকার সময় মেঘা খুব ভাব নিয়ে ডাকে।মেঘাও খুব ভাবের সাথে জবাব দেও,”রাইট মেঘু। আমরা এসব খুব ভালো করতেও পারি আর শায়েস্তাও করতে পারি।”
ছেলেগুলো লিডার মারুফ এবার বেরিয়ে এসে বলে,”ওকে ডান। ওইযে সামনে কালো কোর্ট পড়া একটা ছেলে দেখছো তাকে গিয়ে হাগ এন্ড কিস করো?”
কথাটা শুনে পিহু, ইলা আর মেঘা ৩ জনের মাথায়ই আকাশ ভেঙে পড়ল।পিহু তো প্রথম থেকেই না করছে এখন আরও বেশি করে না করছে।
“দেখ ইলা এসবের দরকার নেই চল এখান থেকে।”
মারুফ মিটমিট হাসি দিয়ে বলে,”কি গো খুকুমণিরা ভয় পেয়ে গেলে নাকি।”
“না মারুফ ভয় কেন পাবো?এটা আমার বা হাতের খেলা।”
“তাই বুঝি তোমার জন্য টাস্কটা আরেকটু কঠিন করছি,” ওই যে ভাইয়াটা দেখছো তার কাছ থেকে বিনা পারমিশনে তার ফোন নিয়ে আমার ফোনে একটা মেসেজ করতে হবে।”
এবার যেনো ইলা একটু চিন্তায়ই পড়ে গেল।মারুফ সাথে সাথেই বলে উঠল,”কি গো সোনামনি পারবে?”
“জ্বি পারব আমি যদি পারি তাহলে তোমরা আজ থেকে র্যাগিং ছেড়ে দিবে সাথে এই পুরো মাঠে শার্ট প্যান্ট খুলে হাটতে হবে।”
ইলার এমন কথায় মারুফদের গ্যাং এর সবাই ভয় পেয়ে গেলো।মারুফও সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলল,”ঠিক আছে আর যদি না পারো তো গোটা ভার্সিটির সামনে আমাকে কিস করতে হবে এবং নিজেকে আমার গার্লফ্রেন্ড দাবি করতে হবে।”
এবার পিহু কিছু বলার আগেই ইলা বলে উঠে,”ওকে আমি রাজি।”
“ইলা তুই জানিস উনি কে?কেন বাড়াবাড়ি করচ্ছিস?”
“উফফফ পিহু দুনিয়ায় এতো ভয় পেলে চলবে না। আর আমাকে তো এখন টাস্ক টা কম্পিলিট করতেই হবে।কি রে মেঘা, আমাকে হেল্প করবি না।”
মেঘাও সাথে তাল মিলিয়ে বলে,”একদম৷দুনিয়ার সব অকাম একসাথে করেছি এটায় তোকে একা কি করে ছাড়ি?”
“তো চল আর পিহু তুই এখানেই দাঁড়িয়ে দেখ আমরা কি করি।”
পিহু শুধু হ্যা সুচক মাথা নাড়ায়। ইলা আর মেঘা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। একপর্যায়ে ইলা ছেলেটার সামনে দাঁড়িয়ে কাধে হাত দেয়। ছেলেটা ফোনে কথা বলছিল। ছেলেটা পিছনে ঘুরলে ছেলেটাকে দেখেই প্রথম দেখায় ইলা ক্রাস নামক বাঁশটি খায়।
ব্রাউনি চোখ,ঘনঘন চোখের পাপড়ি।মেয়েলি চিকন গোলাপি ঠোঁট, ছেলেদের ঠোঁট ও যে গোলাপি হয় তা ইলার অজানা ছিলো।মুখে চাপ দাড়ি। চুলগুলো স্ট্রেট, যা বারবার ছেলেটা বাম হাত দিয়ে পিছনে ঠেলে দিচ্ছে।
অর্ণবের সামনে এমন একটা মেয়েকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে অর্ণব একটু অবাক হয়। ভদ্রতার খাতিরে অর্ণব ইলার দিকে তাকিয়ে বলে,”জ্বি”
ইলা অর্ণবের কন্ঠে হুস ফিরে।অর্ণবের কন্ঠটাও অনেক সুন্দর, যেকোন নারী আকর্ষিত হতে বাধ্য ইলাও তার ব্যতিক্রম না। ইলা ভণিতা না করে ডাইরেক্ট অর্ণবকে জড়িয়ে ধরে পাশাপাশি টুপ করে গালে কিস করে দেয়। এতে যেন অর্ণবের বিস্ময় শেষই হচ্ছে না।
অর্ণব বিস্ময় ও রাগী দুই চোখেই ইলার দিকে তাকাতেই ইলা টুপ করে অর্ণবের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়।
“আরে আরে করছেন কি?আমার ফোন দিন।”
ইলা অর্ণবকে পাশ কাটিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে বলে,”মেঘা ওকে সামলা ফাস্ট।”
অর্ণব ইলার সামনে যেতে ধরলে মেঘা গিয়ে পথ আটকায়।এতে অর্ণব রাগান্বিত স্বরে বলে,”পথ ছাড়ুন।”
“কিছুক্ষনেরই ব্যাপার ভাইয়া।থাকুক না ফোনটা ওর কাছে।”
অর্ণব যতবারই ইলার কাছে যেতে চাচ্ছে মেঘা এসে পথ আটকাচ্ছে। এদিকে অর্ণবের সাথে সীমান্ত,বৃষ্টি, বিহান, সুজাতা সব হা হয়ে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে এখানে লাইভ টেলিকাস্ট মুভি প্লে হয়েছে। অর্ণব রেগে ওদের উদ্দেশ্য বলে,”আরে ইয়ার আমি আটকে গেছি তোরা তো ছাড়া আছিস তোরা ওই মেয়েকে ধর।”
অর্ণবের কথায় সীমান্ত, সুজাতা,বিহান যায় আটকাতে কিন্তু কে পারে ইলার সাথে। ইলা তো সারা মাঠ জুড়ে একবার এদিক দৌড় দিচ্ছে তো আরেকবার অন্যদিক দৌড় দিচ্ছে। একপর্যায়ে ইলাকে ধরতে সুজাতা গেলে ইলা কাবাডি কাবাডি শুরু করে দেয়। বৃষ্টি ইলাকে দু’হাত দিয়ে ধরতে গেলে ইলা বৃষ্টির হাতের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে যায়।
অর্ণব দেখছে কিভাবে ইলা তার সব ফ্রেন্ড দের ঘোল খাওয়াচ্ছে। একজনও ইলাকে ধরতে পারছে না উল্টো এখানে ছোটবেলার মতো ধরাধরি খেলা শুরু হয়ে গেছে।মাঠের সবাই এসব দেখে মজাই পাচ্ছে সবকিছু হ-য-ব-র-ল অবস্থা। অর্ণব এসব দেখে রেগে জোরে চিল্লিয়ে বলে,”স্টপ ইট।”
সাথে সাথে সবাই স্ট্যাচু হয়ে যায়। আর ভয়ে ইলার হাত থেকে ফোনটা……
#চলবে