একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি,35,36,37

0
703

#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি,35,36,37
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৫

নদীর স্রোতের ন্যায় সময় গড়ায়।সময় চলে আপন গতিতে। কারো জন্যে সময় থেমে থাকে না।দেখতে দেখতে কেটে গেছে চার চারটি মাস।বেশ ভালোই চলছে অর্থ,প্রাহি আর হেমন্ত, ইশির দাম্পত্য জীবন।আরাফ আর হিয়া জমিয়ে প্রেম করছে।কারন ওদের প্রেমের মাঝে কোন বাধা নেই।আরাফ নিজের মনের কথা অর্থ’র কাছে প্রকাশ করেছে।যেহেতু আরাফ এখন সাবলম্বি।আর আরাফ খুব ভালো একটা ছেলে।তাই অর্থ আর একপায়ে রাজি।আর রাজি হবেই বা না কেন?যেখানে হিয়াও আরাফকে ভালোবাসে।সেখানে দুটো ভালোবাসার মানুষের কাছে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কোন মানেই আসে না।আর অর্থ খুব ভালোভাবে জানে ভালোবাসার মর্মতা।সেখানে অন্য কারো ভালোবাসার মাঝে ও কিভাবে বাধা সৃষ্টি করবে?অর্থ যেহেতু রাজি তাই পরিবারের কারো কোন দ্বিমত নেই।সবাই বেশ খুশি আরাফ আর হিয়ার জন্যে।এই চারমাসে হেমন্ত,ইশি আর প্রাহির অনার্স ফাইনাল ইয়ার এক্সামও শেষ।বেশ ভালো রেজাল্ট করেছে ওরা।আপাততো কয়েকদিনের জন্যে রেস্টে আছে সবাই।তারপর আবার মাস্টার্সে ভর্তির জন্যে এপ্লাই করবে।তবে এর মাঝে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটেছে বেশ ওদের পরিবারের সাথে।অর্থ’র গাড়ির ব্রেক ফেল করে দিয়েছিলো কেউ।ভাজ্ঞিস গাড়ি চেক করার সময়েই তা দেখে নিয়েছিলো।বেশ আশ্চর্য হয়েছিলো অর্থ কারন গাড়িটা কিনেছে বেশিদিন হয়নি।সেখানে ব্রেকফেল হওয়ার তো কোন কথা নেই।আবার একদিন প্রাহিকে রাস্তায় একটা ট্রাক ধাক্কা দিতে দিতে বেঁচে গিয়েছে প্রাহি।তবে অর্থ সময় মতো পৌঁছে প্রাহিকে সরিয়ে ফেলেছিলো।তা নাহলে তো সর্বনাষ হয়েই যেতো।হিয়াকে কয়েকজন বখাটে ছেলেরা একা পেয়ে ওর সাথে অসভ্যতামো করতে চেয়েছিলো।হিয়া ক্যারাটে জানতো তাই বেশ অনেকক্ষন আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিলো।আর সময় মতো আরাফ আর অর্থ চলে এসেছিলো।কারন হিয়ার ক্লাসমেট হিয়াকে কয়েকজন ছেলে এইভাবে টানাহেঁচড়া করতে দেখেই ও সাথে সাথে অর্থকে কল করে সব জানিয়ে দিয়েছিলো।হেমন্ত’র বাইক এক্সিডেন্ট হয়েছিলো।বেশি একটা ক্ষতি হয়নি।তবে হাত পা ছিলে গিয়েছিলো অনেক।এতো এতো ঘটনা বেশ ভাবিয়ে তুলেছিলো শিকদার বাড়ির প্রতিটি সদস্যদের।তাই অর্থ,আরাফ আর হেমন্ত।বেশ গোপনে ওদের পুরো পরিবারের জন্যে সিকিউরিটি বাড়িয়ে দিয়েছিলো দ্বিগুন।পুলিশদেরও ইনফোর্ম করা হয়েছে।এতো এতো ভয়াবহ ঘটনার মাঝেও বেশ আছে ওরা সবাই।
~~~~~~~~
রুমে বসে টিভি দেখছিলো প্রাহি।ইদানিং অনেক একঘেয়ামি লাগে ওর।সারাদিন বাড়িতে বসে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগে না প্রাহির।কোথাও ঘুরতে যাবে। তারও কোন উপায় নেই।অর্থকে কোন মুখে ও কিছু বলবে?লোকটা সারাটাদিন যেই খাটাখাটুনি করে।রাত্রে ক্লান্ত দেহটা কোনরকম টেনেটুনে এনে বিছানায় শরীর ছেড়ে দেয়।প্রাহি জুতোমুজো খুলে দৌড়ে একগ্লাস ঠান্ডা লেবু পানি বানিয়ে এনে দিলেই যেন একটু শক্তি পায়। তারপর আস্তে ধীরে ফ্রেস হয়ে আসে।প্রাহির খাবার খাইয়ে দিতে হয়।প্রাহির বেশ লাগে অর্থকে খাইয়ে দিতে।তবে এতো এতো ব্যস্ততার মাঝেও লোকটা ওর যত্ন নিতে একদম ভুলে না।প্রাহি আর সাহস পায়না অর্থকে কিছু বলার।নতুন বিজনেসটা বেশ ভালোই চলছে।নতুন নতুন কোম্পানিদের ডিল সাইন করছে অর্থ’রা।তাই কাজের চাপ অনেক বেশি।প্রাহি মন খারাপ করে টিভির চ্যানেল বদলাতে থাকে।হঠাৎ একটা নিউজের চ্যানেলে নজর আটকে যায় ওর।যেখানে স্পষ্ট নিউজ রিপোর্টটি বলছে ভারতের মুম্বাই শহরের হোটেল রুমে লাশ পাওয়া গিয়েছে এক যুবকের।গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।পুলিশ কোন প্রমান পায়নি খুনির। তবে খুন হওয়া ব্যাক্তিটির সকল কিছু তদন্ত করে জানা গিয়েছে লোকটি বাংলাদেশি।আর তা আর কেউ না জয়।জয়ের ছবি দেখাতেই হাত পা অসাড় হয়ে আসে প্রাহির।থরথর করে কাঁপছে প্রাহির পুরো শরীর।কি বিভৎস দৃশ্য।প্রাহি সহ্য করতে পারলো না।গা গুলিয়ে আসলো ওর।দ্রুত ওয়াশরুমে ছুটলো প্রাহি।কিছুক্ষন বাদ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ধপ করে বেডে বসে পরলো প্রাহি।এটা কিভাবে হলো?কে করলো এই কাজটা?জয়কে কে খুন করবে?কার হাত এর পিছনে?আচ্ছা,জয়কে যে খুন করেছে সে কি কোনভাবে ওর বাবা’র মৃত্যুর জন্যে আর ওর মায়ের এই অবস্থার জন্যে দায়ী নয়তো?নাহ ভাবতে পারছে না প্রাহি আর কিছু।চোখজোড়া ঝাপ্সা হয়ে আসছে।প্রাহি এলোমেলোভাবে বিছানায় সুয়ে সেইভাবেই চোখ বুজে পরে রইলো।একসময় ঘুমিয়েও গেলো।
————
রাত নয়টা অর্থ আর আরাফ আজ তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরে এসেছে।অর্থ আর হেমন্ত এসে সোফায় এসে সোফায় বসলো।ইশি দুগ্লাস ঠান্ডা পানি এনে ওদের দুজনকে দিলো।অর্থ পানিটুকু খেয়ে ইশিকে জিজ্ঞেস করলো,
‘ প্রাহি কোথায় হিয়া?দেখছি না যে?এই টাইমে তো ও এখানেই থাকে?’
ইশি গ্লাসটা হাতে নিয়ে বলে,
‘ ঘুমোচ্ছে প্রাহি।আমি একটু আগে গিয়ে দেখলাম।’
অর্থ’র ভ্রু-কুচকে এলো।চিন্তিত কন্ঠে বলে,
‘ ও তো এমন সময় ঘুমায় না।আমার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করে।’
হেমন্ত উঠে দাঁড়ায়।ভাইকে বলে,
‘ ভাই তুমি গিয়ে দেখো হয়তো শরীর ভালো নেই।যাও দ্রুত।’
অর্থ হ্যা বলে উপরে চলে গেলো।অর্থ যেতেই হেমন্ত ইশির হাত টেনে ধরলো।ইশি ঘাবড়ে গিয়ে আশেপাশে তাকালো।বললো,
‘ কি করছো?তুমি যাও আমি আসছি তো।’
‘ উহু! তুমি আমার সাথেই চলো।’ হেমন্ত ইশিকে টেনে নিজের সাথে করে নিয়ে গেলো।
ইশি আর হেমন্ত এখন একে-অপরকে তুমি করে বলে।তাও অনেক চেষ্টার পরে অবশেষে দুজন সফল হয়েছে।প্রথম প্রথম কয়েকদিন তো তুমি ডাকলেই দুজন হাসতে হাসতে লুটোপুটি খেতো।আস্তে আস্তে এখন সব ঠিক হয়েছে।
———
কক্ষের দরজা খুলে ভীতরে প্রবেশ করলো অর্থ।বিছানায় এলোমেলো অবস্থায় ঘুমন্ত প্রাহিকে দেখে মুঁচকি হাসলো।প্রাহির কাছে গিয়ে বসলো।অনেকক্ষন নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকলো প্রাহির মুখের দিকে।কি মায়া এই মেয়েটার মুখে?দুনিয়ার সব মায়া যেন উপরওয়ালা এই মেয়েটার মাঝেই ঢেলে দিয়েছে। অর্থ চেয়েও চোখ সরাতে পারে না।অর্থ প্রাহির মুখের উপর এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুলগুলো আলতো করে গুছিয়ে দিলো।তারপর ঝুকে গিয়ে প্রাহির কপালে ভালোবাসার স্পর্শ দিলো।কেঁপে উঠলো প্রাহি।নড়েচড়ে খানিকক্ষন তারপর পিটপিট করে চোখজোড়া মেলে তাকালো।সম্মুখে অর্থকে দেখে ঠোঁট এলিয়ে হাসলো।কি প্রানবন্ত সেই হাসি।অর্থ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো।প্রাহি উঠে বসলো।এগিয়ে গিয়ে অর্থ’র প্রসস্থ বুকটায় লেপ্টে রইলো।অর্থ’ও আগলে নিলো নিজের স্ত্রীকে।প্রাহি ঘুমজড়ানো গলায় বলে,
‘ কখন এসেছেন?আর আজ এতো তাড়াতাড়ি? ‘
অর্থ প্রাহির চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
‘ আজ থেকে তাড়াতাড়িই আসবো। কাজের প্রেসার অনেকটা কমেছে!’
প্রাহি খুব খুশি হলো কথাটা শুনে।ঘুম যেন উধাও হলো চোখ থেকে।ডাগর ডাগর আঁখি জোড়া মেলে তাকালো অর্থ’র দিকে।উচ্ছাসিত কন্ঠে বললো,
‘ সত্যি?’
‘ হ্যা!’
‘ তাহলে আমার একটা কথা রাখবেন?’
‘ কি কথা?’
‘ আমাকে একদিন সময় করে লংড্রাইভে নিয়ে যাবেন?আমি আপনার সাথে এই রাতের শহরে একা একা ঘুরতে চাই।’ বলেই হাসলো প্রাহি।অর্থ প্রাহির হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।কিভাবে বলবে মেয়েটাকে যে ওদের ফ্যামেলির উপর অনেক বড় বিপদ দাঁড়িয়ে আছে।সেটা না শেষ করতে ওদেরকে নিয়ে এইভাবে একা চলাফেরা করা খুব রিস্কি একটা ব্যাপার।অর্থ’র এইসব বলে আর প্রাহির মন খারাপ করতে ইচ্ছে হলো না।তাই সম্মতি জানালো প্রাহির কথায়।যেদিন যাবে সেদিন নাহয় প্রাহির অগোচরে সিকিউরিটি নিয়েই বের হবে ওরা।প্রাহি অর্থ’র সম্মতি পেয়ে খুশি হয়ে অর্থকে আবার জড়িয়ে ধরলো।অর্থ হেসে দিলো।বললো,
‘ তা ম্যাডাম আজ সারাদিন কি কি করলেন?’
মুহূর্তেই প্রাহির একটু আগের ঘটনা মনে পরে গেলো।অর্থকে দেখে ও তো সব ভুলেই গিয়েছিলো।মুহূর্তেই প্রাহি ভয় পেয়ে একদম সিটিয়ে গেলো অর্থ’র সাথে।হালকা কাঁপছে প্রাহির শরীর।অর্থ প্রাহিকে এমন করতে দেখে অস্থির কন্ঠে বলে,
‘ কি হয়েছে প্রাহি?এমন করছো কেন?কাঁপছো কেন তুমি?’
প্রাহি বড় বড় শ্বাস নিলো।অর্থকে জানাতে হবে সবটা।প্রাহি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
‘ জয়…… জয় ভাইয়া খুন হয়েছে অর্থ।কে যে..যেন ওর গ..গলায় ছুড়ি চা..চালিয়ে দিয়েছে। আমি সন্ধ্যার দিকে নি..নিউজে দেখেছি অর্থ।ভীষন ভয়ানক দৃশ্য অর্থ।’

#চলবে____________

#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৬
প্রাহি বেশ ঘাবড়ে আছে সেই ঘটনার পর থেকে।অর্থ প্রাহিকে নিজের মুখোমুখি আনলো।প্রাহির গালে হাত রেখে বলে,
~’ এভাবে ঘাবড়ানোর কি আছে প্রাহি?যে খারাপ তার শাস্তি হবেই।আর তা হয়েছেই।একদিন না একদিন তো ওর কোনভাবে শাস্তি পাওয়ার কথা ছিলো তাই নাহ?আমার ফোর্স, সাথে পুলিশও ওকে খুজছিলো।ও তাদের হাতে পড়লেও ওর সাথে এমনটাই হতো।তাই নাহ?’
প্রাহি বিরস হয়ে বলে,
~’ কিন্তু ওকে এইভাবে মারলো টা কে?’
~’ জয় অনেক মাফিয়াদের সাথে জড়িত ছিলো সেই তথ্য আমরা পেয়েছি।আমার মনে হয় তারাই কিছু করেছে।সো এতো চিন্তা করে লাভ নেই।’ বললো অর্থ। প্রাহি মুখটা একটুখানি করে মাথা নাড়ালো।যাক ভালোই হয়েছে যা হয়েছে।অবশেষে ওর বাবার হত্যাকারির শাস্তি হয়েছে। কিন্তু প্রাহি নিজের হাতে শাস্তি দিতে পারলে ওর মনটা শান্তি পেতো।প্রাহি চোখ বুজে নিশ্বাস ছাড়ালো।হঠাৎ অর্থ হেঁচকা টানে প্রাহিকে বিছানায় সুইয়ে দিয়ে প্রাহির উপর নিজের শরীরের ভর ছেড়ে দিলো।প্রাহি আশ্চর্যজনক চাহনী নিক্ষেপ করলো অর্থ’র দিক।ডাগর আঁখি জোড়া মেলে তাকিয়ে তাকিয়ে ও।অর্থ দুষ্টু হাসলো প্রাহির এমন চাহনী দেখে।বললো,
~’ কি এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন?’
প্রাহি অবাক হয়ে বলে,
~’ আ..আপনি হঠাৎ এমন করলেন কেন?’
~’ কারন আমার এখন আদর করতে ইচ্ছে হচ্ছে বউকে!বুঝেছো মেয়ে?’
~’ কিন্তু আপনি তো….!’
প্রাহির কথা মাঝপথেই থেমে গেলো। কারন ততোক্ষনে অর্থ প্রাহির ঠোঁটজোড়া নিজ আয়ত্ত্বে নিয়ে নিয়েছে।ঠোঁট ছেড়ে প্রাহির গলার ভাজে মুখ গুজলো অর্থ।ভালোবাসার আবেশে ভরিয়ে দিতে লাগলো নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীকে।প্রাহিও স্বামির ভালোবাসার জোয়ারে নিজেকে ভাসিয়ে দিলো।যেমনটা ও সর্বদা করে।
°
°
~’ কি খবর এনেছো জলদি বলো?’ হিমশীতল কন্ঠ কানে পৌছাতেই কেঁপে উঠলো রিফাত নামের ছেলেটি।রিফাতের কোন শব্দ না পেয়ে ব্যাক্তিটি হুংকার করলো,
~’ কি হলো বলছো না কেন রিফাত?’
রিফাতের যেন কলিজা বেড়িয়ে আসার জোগাঢ় এমন হংকারে।নিজেকে সামলে নিয়ে কাঁপা গলায় বললো,
~’স্যার,আমরা কোন খবর নিতে পারছি না।ওই অর্থ শিকদার ওদের পরিবারের প্রতিটি মানুষের সেফটির জন্যে সিকিউরিটি দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।তাই আমরা চেয়েও পারছি না কিছু করতে।’
রিফাতের মুখে এহন কথা শুনে যেন রক্ত ছলকে উঠলো ব্যাক্তিটির।রাগে লাল হয়ে যাওয়া হিংস্র চোখজোড়ার বাণ ছুড়ে মারলো রিফাতের দিকে।রিফাত ভয় পেয়ে দু-পা পিছিয়ে যায়।ব্যাক্তিটি চিৎকার করে বলে,
~’আমি এসব শুনতে চাইছি তোদের থেকে।রাস্কে`ল্সগুলা।আ…আমি ওদের মৃত্যু সংবাদ চাই মৃত্যু।বলেছিলাম না আমি?বলেছিলাম না তোদের?যে করে হোক ওদের বোনকে নাহলে প্রাহিকে মেরে ফেল।নাহলে এমন কিছু কর ওদের সাথে যাতে ওই অর্থ পুরোপুরি ভেঙ্গে পরে।তাহলে আমাকে এইসব শুনাচ্ছিস কেন?একটা কাজও তোদের দ্বারা হয়না।যা দূর হো আমার চোখের সামনে থেকে নাহলে আ’ম গোন্না কিল ইউ ড্যাম ইট।জাস্ট গো টু হেল ইডিয়ট!’
এমং ভয়ানক হুমকিতে আর একমুহূর্তও অপেক্ষা করলো না রিফাত।দ্রুত পায়ে সেই কক্ষ থেকে বেড়িয়ে আসলো।এতোক্ষনে যেন প্রানটা ফিরে এলো।আর একটু হলে ওর মৃত্যু নিশ্চিত ছিলো।রিফাত কেন যে এই ব্যাক্তির কাছে কাজের জন্যে এসেছিলো।যদি আগে জানতো এই ব্যাক্তি এতো খারাপ রিফাত কোনদিন এই ব্যাক্তির ধারপাশও আসতো না।কিন্তু এখন তো চেয়েও কোন উপায় পাবে না রিফাত।নাহলে যে ওর মৃত্যু ছাড়া আর কোন উপায় নেই।রিফাত দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাজে চলে গেলো।এদিকে ওই কক্ষের ভীতর হতে ক্রমাগত ভাংচুরের শব্দ আর চিৎকারের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
°
°
ঘুমন্ত অর্থ’র মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে আছে প্রাহি।লোকটার খোলা লোমহীন প্রসস্থ বুকের সাথে লেপ্টে আছে ও।অর্থ’ও দু’হাতে জড়িয়ে রেখেছে প্রাহিকে।প্রাহি মুগ্ধ দৃষ্টিতে ওকেই দেখছে।এই লোকটাকে যতোই দেখে মন ভরেনা প্রাহির।ওর ভালোবাসার মানুষ অর্থ।দীর্ঘ সাত বছরের প্রতিক্ষার ফল।যাকে ঘিরে ছিলো প্রাহির কতোশতো পাগলামি।প্রতি নামাজের দোয়ায় অর্থকে চাইতো প্রাহি।কতো শতো নফল নামাজ পরেছে।রোজা রেখেছে।যাতে যে করেই হোক অর্থ যেন ওরই হয়।অবশেষে উপরওয়ালা ওর দোয়া কবুল করেছে।অর্থ’কে স্বামি হিসেবে পেয়েছে।সেই সাথে পেয়েছে অর্থ অর্থ’র অসীম ভালোবাসা।লোকটা ওকে এতো এতো ভালোবাসে যে মাঝে মাঝে প্রাহির মনে হয় ওর এতো বছরের ভালোবাসাও যেন ফিঁকে পরে যায় অর্থ’র ভালোবাসার কাছে।মুচঁকি হাসে প্রাহি।অর্থ’র কপালে,গালে ঠোঁটে নিজের ওষ্ঠ দ্বারা আদর দিয়ে উঠে পরে।ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে।ফ্রেস হয়ে আয়নার সামনে বসলো।একটু সাজঁলে কেমন হয়?মন্দ হয়না।নিজের স্বামির জন্যেই তো সাজঁবে।যেই ভাবা সেই কাজ।চোখে কাজল, আইলাইনার দিলো প্রাহি।ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপগ্লোস,হাতে সাদা চুরি পরলো।কারন আজ প্রাহি সাদা সুতি শাড়ি পরেছে।অর্থ’র সাদা রঙ খুব পছন্দ।আজ শুক্রবার লোকটা বাড়িতেই আছে।তাই ভাবলো একটু শাড়ি পরা যাক।প্রাহির ঠোঁটের কোনে লাজুক হাসি।নিজের লম্বা চুলগুলো আঁচড়াতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।এদিকে চুরির রিনিঝিনি শব্দে ঘুম ভেঙে যায় অর্থ’র।চোখজোড়া খুলে তাকাতেই দৃষ্টি নীবদ্ধ হয় এক শুভ্র পরীতে।অর্থ মুগ্ধ হলো।থমকালো দৃষ্টি।হৃদস্পন্দন বেড়ে দ্বিগুন হলো।ঘোড়ার ন্যায় ছুটতে লাগলো যেন।
চুল আঁচড়ানো শেষে প্রাহি উঠে দাড়ালো।যাওয়ার জন্যে পিছনে ঘুরেই ধাক্কা খেলো কারো বলিষ্ট দেহের সাথে।চোখ তুলে তাকাতেই সম্মুখে একজোড়া মুগ্ধ দৃষ্টি দেখতে পেলো।যা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।অর্থ প্রাহির কোমড়ে একহাত রেখে আরেকহাত প্রাহির গালে রাখলো।প্রাহির সর্বাঙ্গ যেন ভীষনভাবে কেঁপে উঠলো।অর্থ ঘোরলাগা কন্ঠে বলে,
~’ কাঁপছো কেন মেয়ে?কাঁপাকাঁপি করার কথা তো আমার।সকাল সকাল এ কোন রূপে হাজির হলে আমার সামনে বলোতো?নিজের এই বেষামাল হৃদয়টাকে এইবার কিভাবে সামলাবো আমি বলতো?কেন এতো জ্বালাও আমায় মেয়ে?এইভাবে শুভ্রতায় নিজেকে মুরিয়ে স্নিগ্ধ আর মায়াময় রূপে কে আসতে বলেছে বলো তো তোমাকে?এখন তোমার এই রূপের আগুনে যে আমি ভষ্ম হয়ে যাচ্ছি।তার দায় কে নিবে শুনি?’
অর্থ’র প্রতিটি কথায় যেন প্রাহির শিরা-উপশিরা শুদ্ধ কাঁপছে।প্রতিটি বাক্যগুলো এতো নেশাক্ত কেন অর্থ’র? কেন এইভাবে ওর হৃদস্পন্দনের গতি বাড়িয়ে দেয় শতগুনে।
অর্থ প্রাহির গালটা আরেকটু শক্ত করে ধরে ওর বরাবর করলো।অর্থ পলকহীন তাকিয়ে প্রাহির দিকে।অর্থ আবিষ্ট কন্ঠে অওড়ালো,
~’ কি জানি কোন মায়ার গ্রহ থেকে এসেছো তুমি, তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে কখন যে সময় কেটে যায়.. নিজেও বুঝে উঠতে পারিনা। বলতে পারো কি তুমি এত মায়া কিসের?
প্রাহির জবাব কোন জবাব নেই।শুধু নির্নিমেষ তাকিয়ে অর্থ’র দিকে।অর্থ আবরও বললো,
~’ তোমাকে এতো দেখি তাও কেন আমার মন ভরে নাহ।কেন আমার হৃদয়টা এমন অস্থির হয় বারবার।’
প্রাহি দৃষ্টি নত করলো।রিনরিনে কন্ঠে বলে,
~’ তাহলে তাকান কেন?এইভাবে তাকিয়ে থাকাটা যে অনেক বড় অপরাধ আপনি জানেন?আপনার এইভাবে তাকিয়ে থাকা যে আমায় ভীষন ভাবে এলোমেলো করে দেয়।লজ্জায় আমি চোখ তুলে চাইতে পারি না।এটা অপরাধ না বলুন?’
অর্থ প্রাহির কপালে কপাল ঠেকালো।ঠোঁটের কোনে অমায়িক হাসি ফুটিয়ে তুলে বললো,
~’তোমার দিয়ে তাকিয়ে থাকাটা যদি বড্ড বড় অপরাধ হয়ে থাকে, তবে আমি এই অপরাধ হাজার বার করার জন্য প্রস্তুত আছি। হোক না তবে শাস্তি আমার।’
প্রাহি অর্থ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।আর কিছু বলার সাহস হলো না ওর।মূলত ওর গলার স্বর যেন কোথাও উধাও হয়ে গিয়েছে।লজ্জা’রা যেন ঘীরে ধরেছে ওর সর্বাঙ্গ।রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েছে ওর গালে।সেই লজ্জা ঢাকতেই মুখ লুকালো অর্থ’র বুকে।অর্থও প্রাহিকে দুহাতে আঁকড়ে নিয়ে।চোখ বুঝে নেশাক্ত কন্ঠে আওড়ালো,
~’আমি তোমার চোখে তাকিয়ে থাকার মধ্যেই পৃথিবীর সব সুখ খুঁজে পাই আমি।সে কি জানো তুমি?’

#চলবে___________

#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৭
ইদানিং শরীরটা ভালো যাচ্ছে না প্রাহির।অনেক দূর্বল লাগে শরীর।হাত পা ম্যাচ ম্যাচ করে কেমন যেন।অস্থির লাগে।অল্প একটু কাজ করলেই হাপিয়ে যায়।কিছু খেলেই বমি হয়ে যায়। আর শুধু ঘুম পায় ওর।এইযে সোফায় বসে আছে প্রাহি।টিভি দেখার জন্যে।কিন্তু কিভাবে দেখবে ঘুমে চোখ ভেঙ্গে আসছে ওর।প্রাহি টিভি বন্ধ করলো।বড় একটা হাই তুলে রুমের দিকে যাওয়ার জন্যে অগ্রসর হলো।কিন্তু অর্ধেক সিড়ি উঠেই হাপাতে লাগলো।যেন কতো ভারি কিছু নিয়ে সে সিড়ি বেয়ে উঠছে।প্রাহি চোখ বুজে বার কয়েকবার জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিলো।তারপর আস্তে আস্তে হেটে রুমে চলে গেলো। কিছু ভালো লাগছে না ওর।মাথাটাও ভীষন ঘুরছে।একটু ঘুমাতে পারলে বোধহয় ভালো লাগবে।যেই ভাবা সেই কাজ প্রাহি বিছানায় সুয়ে চোখ বুজতে দেরি ওর ঘুম আসতে দেরি হয়নি।মাত্রই চোখ লেগে এসেছিলো প্রাহির।কিন্তু ইশির তীব্র কন্ঠের আওয়াজে ধরফরিয়ে উঠে বসলো।বুকটা ধরাস ধরাস করছে।চোখে পানি এসে পরেছে ওর।প্রাহি ইশির দিকে তাকিয়ে দেখে ইশির চোখে জল।প্রাহি ভয় পেয়ে গেলো।জলদি ইশির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘ কি হয়েছে ইশি।তুই কাঁদছিস কেন?’

ইশি কিভাবে কথাটা বলবে ভেবে পাচ্ছে না।ভীতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।প্রাহির দিকে তাকিয়ে ওর ভীতর থেকে ঠ্যালে কান্নারা যেন বেড়িয়ে আসতে চাইছে।নিজেকে এতো শক্ত রাখতে চাইছে প্রাহির সামনে কিন্তু পারছে না।প্রাহি অস্থির হয়ে গিয়েছে।বার বার জিজ্ঞেস করছে,

‘ কি হয়েছে ইশি? কি হয়েছে আমাকে বল প্লিজ।আমার ভয় করছে।এই ইশি বল নাহ?’

ইশি চোখ মুছে বললো,

‘ তুই আয় আমার সাথে। আমার সাথে চল।তাহলেই বুঝতে পারবি।আমি এখন কিছু বলতে পারবো না।চল তুই।’

ইশি প্রাহির হাত ধরে প্রাহিকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো তারপর ড্রাইভারকে বললো গাড়ি স্টার্ট দিতে।কিছুক্ষনের মাঝেই ওরা কাঙ্খিত স্থানে পৌছে গেলো।প্রাহি তাকিয়ে দেখে ওরা হাসপাতালে এসেছে।এটাতো সেই হাসপাতাল যেখানে ওর মা’কে রাখা হয়েছে।প্রাহির বুকের ভীতর কেমন যেন করতে লাগলো।হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে অজানা ভয়ে।ইশি প্রাহিকে নিয়ে ওর হাসপাতালে প্রবেশ করলো।ওর মায়ের কেভিনের সামনে আসতেই দেখলো। হিয়া, রায়হানা আর হেনা বেগম কাঁদছেন। উনাদের সামলাচ্ছেন আরাফ,হিয়াজ শিকদার আর হিয়ান্ত শিকদার।ইশিও আর কান্না আটকে রাখতে পারলো না। শব্দ করে কেঁদে দিলো।হেমন্ত এসে ইশির মাথায় হাত রাখলো। হেমন্ত’র চোখ থেকেও টপটপ করে পানি পরছে।হেমন্ত ধরা গলায় বলে,

‘ কাঁদেনা।আমাদের এভাবে কাঁদলে হবে?প্রাহিকে সামলাতে হবে তো?’

প্রাহি ধীর পায়ে হেটে হেমন্ত আর ইশির সামনে আসলো।অবাক কন্ঠে বলে,

‘ কি হয়েছে তোরা কাঁদছিস কেন?আর সবাই কাঁদছে কেন?আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।আর আম্মু ঠিক আছে তো?তোরা সবাই আম্মুর রুমের সামনে এইভাবে কাঁদছিস।আম্মুর সমস্যা হবে।আর এই সময়ে তো আম্মুকে ডাক্তার চেক-আপ করে।তাই এই সময়ে আম্মুর রুমের সামনে এমন করা ঠিক না।’

প্রাহি কিছুই বুঝতে পারছে না কি হয়েছে এখানে?ওর মনটা বড্ড খচখচ করছে।সবার কান্না দেখে ওরও চোখে পানি এসে পরেছে।প্রাহি কাঁদো কন্ঠে বলে,

‘ তোমরা সবাই কান্না থামাও।নাহলে আমিও কেঁদে দিবো।’

হেমন্ত প্রাহির কাছে আসলো।বড় ভাইয়ের মতো আদুরেভাবে প্রাহিকে নিজের বাহুডোরে নিলো।প্রাহি হেমন্ত’র দিকে চোখ তুলে তাকালো।হেমন্ত ভেজা কন্ঠে বলে,

‘ আমি এখন যা বলবো।তা মেনে নিবি।কোনভাবে উত্তেজিত হবি না,ঠিক আছে?আমরা সবাই আছি তো তোর জন্যে?’

‘ কিন্তু কি হয়েছে?’

‘ আন্টি আর নেই প্রাহি।আন্টি আর নেই।তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছেন প্রাহি।আর আন্টি ফিরে আসবেন না এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে।’

বলেই হেমন্ত কেঁদে দিলো।প্রাহি অবিশ্বাস্য চাহনী নিয়ে তাকালো হেমন্ত’র দিকে।এ কোন বিষাক্ত বানি শোনালো হেমন্ত ওকে?কি বলে ফেললো হেমন্ত?প্রাহি দুহাতে নিজের গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে হেমন্তকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।ধাক্কাটা এতো জোড়ে ছিলো যে প্রাহি নিজেকেই ভালোভাবে সামলাতে পারলো না।হেমন্ত এগিয়ে গিয়ে ধরতে নিলেই প্রাহি চিৎকার করে উঠে,

‘ না একদম নাহ।আমার কাছে আসবি না।তু..তুই আর আমার সামনেও আসবি না।তুই মা..মাত্র কি বললি এসব হ্যা?এমন কথা তু…তুই কিভাবে বলতে পারলি?তোর একটু বুক কা…কাপলো নাহ?এই নিষ্ঠুর বাক্যটুকু বলতে তোর একবারও বুক কা…কাপলো না রে?’

প্রাহি চোখ দিয়ে অবিরাম অশ্রু ঝরছে।প্রাহি দুহাতে বারবার চোখের জল মুছছে।তারপর পাগলের মতো করে বলে,

‘ কই আমার আম্মু?আমি আম্মুর কাছে যাবো! তোদের এখনি প্রমান দেবো আমার আম্মু বেঁচে আছে।সে এখনো ঘুমাচ্ছে।তোরা সবাই মিথ্যাবাদি।সব মিথ্যাবাদি।এই মিথ্যা অভিনয়ের কান্না থামা তোরা।আমার এসব সহ্য হচ্ছে না।থামা বলছি।’

হেমন্ত বলে উঠে,

‘ প্লিজ প্রাহি আমার কথাটা শোন।’

‘ নাহ শুনবো না।আমি কারো কথা শুনবো না।আমি আম্মুর কাছে যাবো।’

কথাগুলো বলে প্রাহি একদৌড়ে ওর মায়ের কেভিনের দরজা খুলে ভীতরে প্রবেশ করলো।দেখলো বেডের উপর সাদা চাঁদর দিয়ে কাউকে ঢেকে রাখা হয়েছে।প্রাহি দ্রুত গেলো সেখানে।গিয়েই সাদা চাঁদরটি সরিয়ে দিলো।বিরবির করে বলছে,

‘ এই সাদা কাপড় দিয়ে আম্মুকে ঢেকে রেখেছে কেন ওরা?আমার আম্মুর নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় ওরা বুঝে না?আর আমার আম্মুর অক্সিজেন মাক্স কই?’

প্রাহি ওর মাকে ছেড়ে রুমের চারদিকে চোখ বুলালো।কিন্তু কোথাও অক্সিজেন মাক্স পেলো না।তাই চিৎকার করে বলতে লাগলো,

‘ এই ডাক্তার?ডাক্তার?আমার আম্মুর অক্সিজেন মাক্স কই?তাড়াতাড়ি অক্সিজেন মাক্স দেন আম্মুকে।আমার আম্মুর কষ্ট হচ্ছে।’

ইশি,হেমন্ত,আরাফ আর হিয়া দৌড়ে আসলো।কিন্তু কেউ প্রাহিকে সামলাতে পারছে না।ইশি অর্থকে মেসেজ দিয়ে দিয়েছে যে প্রাহিকে সামলানো যাচ্ছে।অর্থ মেসেজ পেয়েই ছুটে এসেছে।ও গিয়েছিলো ডাক্তারদের সাথে কথা বলতে।সকল ফর্মালিটিস পূরন করার জন্যে।ইশির মেসেজ পেয়ে একমুহূর্তও অপেক্ষা করে না দৌড়ে এসেছে ও।দরজার কাছে আসতেই ডাক দিলো,

‘ প্রাহি?’

প্রাহি অর্থ’র কন্ঠস্বর শুনে দৌড়ে অর্থ’র কাছে গেলো।ঝাপিয়ে পরলো অর্থ’র বুকে।অর্থ ভীষন যত্নে প্রাহিকে বুকে আগলে নিলো।প্রাহি অস্থির হয়ে গিয়েছে।টেনে টেনে শ্বাস নিয়ে বললো,

‘ দেখুন না অর্থ।ওরা কি বলছে?আমার আম্মু নাকি আর নেই।কিন্তু দেখেন ওই তো আম্মু ঠিক আগের মতোই ঘুমিয়ে আছে।ওদের বলুন না, আমাকে এসব বলে যেন ভয় না দেখায়।আমার কিন্তু ভালোলাগছে না।’

অর্থ’র চোখজোড়া লাল হয়ে আছে।চেয়েও কাঁদতে পারছে না অর্থ।ওর কাঁদলে চলবে নাহ।এই মেয়েটাকে এখন সামলাতে হবে।ওকে সবটা মেনে নেওয়ার জন্যে বোঝাতে হবে।অর্থ শীতল কন্ঠে বলে,

‘ ওরা যা বলছে ঠিক বলছে প্রাহি।মা আর বেঁচে নেই।তিনি আর ফিরবেন না আমাদের কাছে।’

প্রাহির শরীর ঝাকি দিয়ে কেঁপে উঠলো।অর্থকে জড়িয়ে ধরে রাখা হাতদুটো হালকা হয়ে আসলো।প্রাহি অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে অর্থকে ছেড়ে দিলো।ওর কানে বারবার অর্থ’র বলা কথাগুলো প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো। আর সবার কথা যেমন তেমন। কিন্তু প্রাহি জানে ওর অর্থ কখনও ওর সাথে মিথ্যে কথা বলতে পারে নাহ।প্রাহি একপা দুপা করে ওর মায়ের কাছে এগিয়ে যায়।কিছু না বলে ওর মায়ের পাশে গিয়ে সুয়ে ওর মায়ের বুকে মাথা রাখে।আহা,কি শান্তি মায়ের বুকটায়।প্রাহির সকল অস্থিরতা একনিমিষে চলে গেলো।প্রাহি আবারও মাথা তুলে ওর মায়ের দিকে তাকালো।কি নিস্পাপ মুখশ্রী ওর মায়ের।কি সুন্দর নিস্পাপ বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে আছে।প্রাহি ওর মায়ের সারামুখে হাত বুলালো আদুরেভাবে।তারপর ওর মায়ের কপালে চুমু খেয়ে আবারও ওর মায়ের বুকে মাথা রাখলো।চোখ ঝাপ্সা হয়ে আসছে প্রাহির।প্রাহি বিরবির করে বলছে,

‘ তুমি ঘুমাও আম্মু।আমি একটু ডিস্টার্ব করবো না তোমায়।শুধু তোমার সাথে আমিও তোমার বুকে ঘুমিয়ে থাকবো।তুমি ঘুমাও আম্মু।ঘুমাও।’

প্রাহি বিরবির করছে।ওর চারপাশ কেমন অন্ধকার হয়ে আসছে।সবকিছু যেন অন্ধকার গ্রাস করে নিচ্ছে।একসময় প্রাহি নিজেই সেই অন্ধকারের মাঝে তলিয়ে গেলো।

#চলবে__________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here