একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি,41,42

0
802

#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি,41,42
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪১

সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে প্রাহি।হাতে পানি বোতল।এই একটুকুতেই কেমন হাপিয়ে উঠেছে মেয়েটা।শরীরটা প্রায় সময়েই অসুস্থ থাকে ওর।একসাথে এতোগুলো ধাক্কা যে মেয়েটা কিভাবে সামলেছে তা ও নিজেই বলতে পারবে না।মায়ের মৃত্যুর পর থেকে যেন একমুহূর্তের জন্যে চোখের আড়াল হতে দেখলে ওর বুক কাঁপে।হৃদয় অস্থির হয়ে উঠে।নানান কুচিন্তা মাথায় আসে।তখন আর সামলাতে পারেনা নিজেকে।মা, বাবাকে হারিয়ে মেয়েটার মনে প্রচুর ভয় ঢুকে গিয়েছে।এখন অর্থকে নিয়ে সারাক্ষন ভয় হয় ওর।কলিজাটা যেন মনে হয় কেউ চাপ সৃষ্টি করে ওকে মেরে ফেলার তোরজোর করে।অর্থকে হারানোর ভয় হয় ওর প্রতিটা ক্ষনে ক্ষনে। একে একে সব হারিয়ে নিঃস্ব প্রাহি।এখন অর্থই ওর সব।অর্থ’র কিছু হলে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না প্রাহি। ইদানিং লোকটানে নিয়ে নানান কুচিন্তা মাথায় আসে ওর।তাই তো অর্থকে কোথায় যেতে দেয়না।প্রাহির এমন স্বভাব নিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলেছে অর্থ।তিনি জানিয়েছেন,এই সময় মেয়েদের মন খুব নাজুক থাকে।তারা প্রতি ক্ষনে ক্ষনে প্রিয় মানুষটির সান্নিধ্য চায়।নিজের সকল,ভালোলাগা,খারাপ লাগা সব প্রিয় মানুষটিকে ঘিরে থাকে।তাদের প্রতি অল্পতেই অভিমান জমে আবার অল্পতেই তা সরে যায়।আর প্রাহি একে একে এতো দুটো আপন মানুষের মৃত্যু দেখে ওর হৃদয় সর্বদা ভয়ে তটস্থ থাকে অর্থকে নিয়ে।আর এই সময় মুডসুয়িং হয় এটা নরমাল ব্যাপার। কখনো এই কাদঁবে তো কখনো এই হাসবে।কখনো রাগ করবে কখনো অভিমান করবে আবার কখনো বাচ্চাদের মতো আহ্লাদী হবে প্রিয় মানুষটির কাছে। এই সময়টাই এমন।যে মা হয় সেই বুঝতে পারে প্রেগন্যান্সির সময় কতোটা চেঞ্জ হয়ে যায় ক্ষনে ক্ষনে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রাহি।সিড়ি বেয়ে উঠে হয়রান হয়ে গিয়েছে।ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করে দরজা আটকাতেই রুমের লাইট জ্বলে উঠে।চমকে যায় প্রাহি।তৎক্ষনাৎ চাপা স্বরে হালকা আওয়াজ করে ঘুরে দাড়ায়।সাথে সাথে ভয় পেয়ে যায় প্রাহি।অর্থ ওর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।চোখজোড়া লাল হয়ে আছে।চোয়াল শক্ত।ভীতু প্রাহি কি করবে বুঝে উঠতে পারলো নাহ।আমতা আমতা করে কিছু বলবে তার আগেই অর্থ দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে শক্ত হাতে প্রাহিকে কোলে তুলে নেয়।হালকা ব্যাথা পেয়েছে প্রাহি কোমড়ে।মুহূর্তেই আঁখিকোটরে নোনাজলেরা ভীড় জমায়।তাও মুখ দিয়ে টু পরিমান শব্দ করে না মেয়েটা।অর্থ প্রাহিকে নিয়ে বিছানায় বসালো।চোয়াল শক্ত করে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,

-‘ বেশি বাড় বেড়েছে তোমার?পাকনামি শিখে গেছো?একা একা নিচে কেন গেলে?যদি কিছু হয়ে যেতো?কি হলো কথা বলো?’

লাস্ট বাক্যটা ধমকের সুরে বললো অর্থ।প্রাহি নাজুক হৃদয়ে আঘাত লাগে বড্ড। এইভাবে ধমকানোর কি আছে?ও তো লোকটার ভালোর জন্যেই ডাকেনি।আর ওরও কিছু হয়নি তাও এইভাবে ধমকাধমকির কোন মানে আছে?প্রাহি চোখে জল দেখে আরো রেগে গেলো অর্থ।শক্ত কন্ঠে বলে,

-‘ একফোটা অশ্রু যেন গাল গড়িয়ে না পরে।আর এইভাবে একা একা আমাকে না বলে নিচে যাওয়ার সাহস কোথায় পেলে?পানি তৃষ্ণা পেয়েছে আমায় বলতে। আমি একে দিতাম।কেন আমাকে তো জ্বালাও প্রাহি?কেন এতো অবুঝের মতো করো?’

শক্ত হয়ে বসে রইলো প্রাহি।একটু আওয়াজও করলো নাহ।অর্থকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে চুপচাপ উল্টোদিকে ফিরে সুয়ে পরলো।অর্থ বুঝলো এখন আর কথা বলবে না ওর সাথে।অর্থ চোখ বন্ধ করে লম্বা লম্বা দম নিলো।শ্বাসটা আটকে গিয়েছিলো যখন অনুভব করছিলো ওর বুকটা খালি খালি।ঘুমের ঘোরে পাশ হাতরে কাঙ্খিত মানুষটির অস্তিত্ব অনুভব করতে না পেরে।দ্রুত উঠে রুমের লাইট জ্বালিয়ে দেখে কোথাও নেই প্রাহি বারান্দায়, ওয়াশরুমে না পেয়ে মাথা খারাপ হয়ে যায় অর্থ’র।পাগলপ্রায় হয়ে বাহিরে বের হতে নিলেই দেখে দরজা খোলা।আরো অস্থির হয়ে যায়।একা একা কোথায় গেলো মেয়েটা।অর্থ বাহিরে বের হতে নিতেই দেখে ধীরে ধীরে সিড়ি বেয়ে উপরে আসছে প্রাহি।এইটুকুতেই কেমন হাপিয়ে উঠেছে।অর্থ প্রাহি উপরে উঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করলো।প্রাহি উপরে আসতেই অর্থ রুমে ঢুকে লাইট নিভিয়ে দেয়।যাতে বুঝতে না পারে প্রাহি।চোখ খুললো অর্থ।সুয়ে পরলো নিস্তব্ধে প্রাহির পাশে।প্রাহি কোমড়ে আলতো হাত ছোঁয়াতেই তা ঝটকা মেরে সরিয়ে দেয় প্রাহি।হাসে অর্থ।এইবার প্রাহি সাথে আরেকটু ঘনিষ্ট হয়ে প্রাহিকে পেছন হতে জড়িয়ে ধরে একেবারে বুকের সাথে লাগিয়ে নেয়।প্রাহির কানে ফিসফিস করে অর্থ বলে,

-‘ কথা বলবে নাহ?’

প্রাহি খানিকক্ষন চুপ থাকলো তারপর অভিমানি কন্ঠে বলে,

-‘ আপনি আমাকে ধমকেছেন।আবার আমার কোমড়ে শক্ত করে ধরেছেন।আমি ব্যাথা পেয়েছি।’

প্রাহি মুখে ব্যাথার কথা শুনে আতকে উঠে অর্থ। অস্থির হয়ে দ্রুত উঠে বসে।টেবিলল্যাম্প জ্বালিয়ে জামাটা অল্প উঠিয়ে ভালোভাবে চেক করে।কিছু না দেখতে পেয়ে।অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে,

-‘ কোথায় ব্যাথা লেগেছে?বেশি ব্যাথা পেয়েছো?ডাক্তারকে ফোন করবো?’

প্রাহি দ্রুত উঠে বসে। অর্থ হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,

-‘ অতোটাও ব্যাথা পায়নি।অস্থির হবেন না।তখন একটু শক্ত করে কোলে নিয়েছিলেন তাই হালকা ব্যাথা পেয়েছিলাম কোমড়ে।এখন আর নেই।সত্যি বিশ্বাস করুন।’

অর্থ প্রাহির গাল স্পর্শ করলো।সকল ভালোবাসা ঢেলে চুমু দিলো প্রাহির কপালে।ধরা কন্ঠে বলে,

-‘ আমি সরি প্রাহি তখন রাগের মাথায় তোমাকে ব্যাথা দিয়ে দিয়েছি।আমি আসলে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ঘুম থেকে উঠে তোমাকে না দেখে।’

-‘ ইট্স ওকে।হয়েছে আর সরি বলতে হবে নাহ।আমার ঘুম পাচ্ছে ঘুমাবো।’

মুচঁকি হেসে বলে প্রাহি।অর্থ হালকা হেসে প্রাহিকে বুকে টেনে নিয়ে সুয়ে পরলো।

________________
সকাল সকাল প্রাহি ঘুম থেকে উঠেই বলছে ওর নাকি খিদে পেয়েছে।আর ও এখন ঝাল ঝাল মরিচ ভর্তা দিয়ে গরম গরম ভাত খাবে।এইটা শুনেই অর্থ’র মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।ধমকে ধামকেও মানাতে পারেনি।অগত্য হেনা বেগম এসে বুঝিয়েছেন সামান্য একটু খেলে কিছু হবে নাহ।এখন প্রাহি খাটের উপর বসে আরামসে খাচ্ছে।আর অর্থ সোফায় বসে অন্যান্য কাজ করছে আর একটু পর পর রাগি দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে প্রাহির দিকে।খাওয়া শেষে চওড়া হাসি দিলো প্রাহি।অর্থকে উদ্দেশ্য করে বলে,

-‘ দেখেছেন আমি কতোগুলো ভাত খেয়েছি?অন্য সময় কি আমি এতোগুলো ভাত খাই?’

অর্থ দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

-‘ হ্যা কতো মহান কাজ করেছো।আমি যেগুলো দিয়ে খাওয়াই তাতে এক দু গাল খেলেও তাতে কিছু পুষ্টি তো ছিলো।কিন্তু তুমি যা দিয়ে খেয়েছো এইগুলো দিয়ে খেলে কিছুই হবে না।এইগুলাতে আরো ক্ষতি শরীরের।’

-‘ হ্যা সবসময় তো আপনি যা করবেন তাই সঠিক।আমি কিছু করলেই দোষ।’

অর্থ কিছুই বললো না।এই মেয়েটাকে বুঝিয়ে লাভ নেই।হঠাৎ কিছুসময় যেতেই প্রাহি উঠে দৌড়ে বাথরুমে চলে যায়।অর্থও ভয় পেয়ে প্রাহির পিছন পিছন যায়।প্রাহি যা খেয়েছিলো সব উগলে দিয়েছে।অর্থ দুহাতে প্রাহির মাথা চেপে ধরে আছে।মুখ ধুয়ে প্রাহি হেলান দিয়ে দাড়ালো অর্থ’র সাথে।অর্থ অসহায় কন্ঠে বলে,

-‘ বেশি খারাপ লাগছে?আর বমি হবে?’

প্রাহি মাথা নাড়াতে দেরি।আবারও বমি করে দেয়।অর্থ প্রাহির হাত মুখ ধুইয়ে দিয়ে আবর্জনাগুলো পরিষ্কার করে দিলো।প্রাহিকে কোলে নিয়ে বিছানায় গিয়ে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসলো।প্রাহি চোখ বুঝে আছে।অর্থ নরম সুরে ডাকলো,

-‘ প্রাহি!’

প্রাহির ক্লান্ত চোখজোড়া মেলে তাকায়।অর্থ বললো,

-‘ বেশি খারাপ লাগছে?’

প্রাহি জোড়পূর্বক হেসে বলে,

-‘ একটু তো খারাপ লাগবেই।ও কিছু না এটা সবারই হয়।আপনি শুধু চিন্তা করবেন নাহ!’

প্রাহির কথায় অর্থ চিন্তা কমলো নাহ একটুও।চিন্তিত স্বরে বলে,

-‘ এমনিতেও তো তোমার চেক-আপের সময় হয়ে এসেছে।এখন থাক।বিকেলে তোমায় নিয়ে একবার হাসপাতালে যাবো।চেক-আপ করিয়ে দেখি আসি সব ঠিক ঠাক আছে কিনা।’

-‘ উফ! আপনি কেন এতো ভাবেন বলুন তো?কিছু হবে নাহ।’

অর্থ প্রাহিকে বুকে টেনে নিলো।প্রাহির কপালে চুমু দিয়ে বলে,

-‘ তোমাকে নিয়ে চিন্তা করবো না তো কাকে নিয়ে করবো বলো?এখন তো আরেকজন আছে।আমার দুটো ভালোবাসা।তাদের কিছু হলে আমি কিভাবে ঠিক থাকবো বলো?তাই তো সবসময় তোমাদের নিয়ে চিন্তায় থাকি।’

প্রাহি বললো,

-‘ আল্লাহ্ ভরসা কিছু হবে না দেখিয়েন।’

-‘ তাই যেন হয়।’

#চলবে__________

#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪২
ডাক্তারের সামনে বসে আছে অর্থ আর প্রাহি।ডাক্তার প্রাহির সব রিপোর্ট্সগুলো চেক করছেন।অর্থ অস্থির হয়ে আছে রিপোর্টে কি লিখা আছে জানার জন্যে।রিপোর্টগুলো দেখা শেষ হতে ডাক্তার তাকাতেই অর্থ প্রশ্ন করে বসে,

-‘ প্রাহি সবকিছু ঠিক আছে তো ডাক্তার?’

ডাক্তার মুচঁকি হাসলেন।বললেন,

-‘ ইয়াহ সি’জ ফাইন।শুধু প্রেসারটা অনেক লো আর উনার স্বাভাবিকের তুলনায় ওজন অনেক কম।উনাকে এখন বেশি বেশি করে খাওয়াতে হবে মিষ্টার শিকদার।তাহলেই হবে।আর কোন সমস্যা নেই।ঠিক আছে সব।’

অর্থ রাগি চোখে তাকালো প্রাহির দিকে।প্রাহি সেই রাগি দৃষ্টি দেখে ভয়ে কাচুমাচু হয়ে বসে রইলো।অর্থ গম্ভীর কন্ঠে বলে,

-‘ আমাদের বেবি কেমন আছে?’

-‘ বেবিও ঠিক আছে।একদম সুস্থ আছে। শুধু মা যদি ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়া করে তাহলে বাচ্চাও রিস্টপুষ্ট হবে বুঝেছেন?’

অর্থ সস্থির নিঃশ্বাস ফেললো।যাক তাহলে সব ঠিক আছে।অর্থ বললো,

-‘ তাহলে আসি ডাক্তার।আসসালামু আলাইকুম! ‘

-‘ ওয়া আলাইকুমুস সালাম!’

ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে আসলো অর্থ আর প্রাহি।অর্থ রেগে প্রাহির দিকে তাকাচ্ছেও না।অথচ প্রাহিকে হাত ওকে সাবধানে নিয়ে যাচ্ছে।প্রাহিও ভয়ে কিছু বলছে না। যদি লোকটা আরো রেগে যায়?গাড়িতে উঠে বসতেই অর্থ ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বললো। আজ অর্থ সাথে করে ড্রাইভার নিয়ে এসেছে।প্রাহি গাড়িতে উঠলে অনেক অসুস্থ হয়ে যায়।ওকে সামলাতে হয় তখন এই কারনেই আনা ড্রাইভারকে।অর্থ এখনো রেগে থম মেরে বসে আছে।প্রাহি এইবার ভয়ে ভয়ে বলে,

-‘ এমন করছেন কেন? আমার সাথে কথা বলুন।’

অর্থ রাগি চোখে তাকালো প্রাহির দিকে।তেজ নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,

-‘ কেন আমি কেন কথা বলবো?তুমি আমার একটা কথাও শোনো?এতো করে বলি একটু পুষ্টিকর খাবার খাও।তা না করে তুমি যতো আজগুবি আনহেলথি খাবার খাওয়ার বায়না ধরো।কেন আমার কথা শুনলে কি সমস্যা তোমার?ডাক্তার কি বলেছে শুনেছো?তোমার ওজন অনেক কম।এমন হলে কিভাবে হবে প্রাহি?’

প্রাহি চোখজোড়া ছলছল করে উঠে।ধরা গলায় বলে,

-‘ আর এমন করবো না প্রমিস।এখন থেকে আপনি যা বলবেন তাই করবো।আপনার সব কথা শুনবো প্রমিস।তাও রাগ করবেন নাহ।’

অর্থ বুঝলো মেয়েটা এইভাবে বলায় কষ্ট পেয়েছে।কিন্তু ওই বা কি করবে?এইসব কথা বললে সবারই রাগার কথা।অর্থ প্রাহি বাহু ধরে প্রাহির মাথা নিজের কাধে নিয়ে আসলো।প্রাহি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,

-‘ হয়েছে আর কান্না করা লাগবে নাহ।এখন থেকে আমি যা বলবো তা শুনবে।আমি তোমার আর আমাদের সন্তানের ভালোর জন্যেই বলি প্রাহি।ঠিক আছে?’

-‘ হুম!’ চোখ বুঝে উত্তর দেয় প্রাহি।

তা দেখে অর্থ প্রশ্ন করলো,

-‘ খারাপ লাগছে?’

প্রাহির ধীর কন্ঠে,

-‘ নাহ! ঘুম পাচ্ছে আমার।’

-‘ আচ্ছা ঘুমাও।আমি আছি।’

প্রাহির আর আওয়াজ পাওয়া গেলো না।ঘুমিয়ে গেছে মেয়েটা।কিয়ৎক্ষন পর অর্থও কেমন যেন চোখে ঝাপ্সা দেখছে।চেয়েও চোখজোড়া খুলে রাখতে পারছে না।ঢলে পরে যাচ্ছে।এমন কেন হচ্ছে বুঝতে পারছে না অর্থ।ভাবলো হয়তো রাতে ঘুম কম হওয়ার কারনে হয়তো হচ্ছে হয়তো।অর্থ আর ওতো একটা কিছু না ভেবে নিজেও চোখ বন্ধ করে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।এদিকে অর্থ আর প্রাহিকে ঘুমিয়ে যেতে দেখে ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে হাসলো।পকেট হতে মোবাইল বের করে ফোন লাগালো কাউকে।সাথে সাথে রিসিভ হতেই অপাশ থেকে ভেসে আসে এক উচ্ছাসিত কন্ঠ,

-‘ কাজ হয়েছে সেলিম?’

সেলিম হেসে জবাব দিলো,

-‘ জি স্যার।হয়েছে।দুজনেই বেহুস।’

-‘ তাহলে জলদি নিয়ে আসো।আমার যে আর তর সইছে না।আমার কতোদিনের স্বপ্ন পূরন হবে আজ।ওই অর্থকে মেরে আজ আমি আমার প্রতিশোধের আগুন নিভাবো ওর রক্ত দিয়ে।’

-‘ আচ্ছা স্যার আসছি।’

__________________
শিকদার বাড়ি……

ড্রয়িংরুমে বসে আছে সবাই।সবাই চিন্তিত বসে আছে।রায়হানা এবার প্রায় কেঁদে দিয়েই বললেন,

-‘ কোথাও গেলো ওরা।এতোক্ষনে তো এসে যাওয়ার কথা।অথচ রাত ১১ টা বাজে এখনো ফিরলো না ছেলে মেয়ে দুটো।সেই বিকেল তিনটায় বাড়ি থেকে বের হয়েছে।আমার অর্থ তো এমন করে না।দেরি হলে অন্তত ফোন করে জানায়।অথচ আজ একটা ফোনও দিলো না।কিন্তু এদিকে একের পর এক ওদের দুজনে ফোন করা হচ্ছে কিন্তু দুজনের ফোনই বন্ধ।আমার মনটা কেমন কু ডাকছে।কিছু একটা ঠিক নেই। আমার ছেলে মেয়ে দুটো নিশ্চয়ই কোন বিপদে আছে।হেমন্ত, আরাফ বাবা তোরা দুজন একটু পুলিশকে ইনফোর্ম কর না।আমার মন যে আর মানে নাহ!’

আরাফ আর হেমন্ত এতোক্ষনে ধুমসে একেরপর এক ফোন দিচ্ছিলো অর্থ আর প্রাহির ফোনে।কিন্তু ওদের দুজনের ফোনই বন্ধ।চিন্তায় মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ওদের।

আরাফ রায়হানা বেগমের পায়ের কাছে বসে বললো,

-‘ একদম চিন্তা করো না মামনি তুমি।আমি আর আরাফ আছি না।আমরা থাকতে ওদের দুজনের কিছু হবে না।’

-‘ তাই যেন হয় বাবা।আমার ছেলে মেয়ে দুটোকে আমার কাছে ফিরিয়ে এনে দে বাবা!’

আরাফ রায়হানা বেগমকে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে শুনিয়ে কান্না থামালেন উনার।তারপর হেমন্তকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।আরাফ গাড়ি ড্রাইভ করছে।হেমন্ত পাশে বসে আছে।শেষবার অর্থ’র ফোনে ট্রায় করে আবারও একই বানি শুনে ব্যর্থতার নিঃশ্বাস ফেলে বলে,

-‘ ভাই তো এমন কোন সময় করে না।কিছু তো একটা খারাপ হয়েছে আরাফ ভাই।আমার মনে হয় ভাই আর প্রাহি কোন বিপদে পরেছে।’

আরাফ কপালে চিন্তার ভাজ ফেললো।আসলেই কি কোন বিপদে পরেছে ওরা?নাহ এইভাবে হাত গুটিয়ে থাকলে হবে নাহ।পুলিশকে ইনফোর্ম করতে হবে।হাসপাতালে খোঁজ নিয়েছিলো ওরা।তারা জানান অর্থ প্রাহিকে নিয়ে নাকি সেখান হতে পাঁচটায় বেড়িয়ে গেছে।আর কোথায় খুজবে ওদের।গার্ডদেরও লাগিয়ে দিয়েছে ওদের খুঁজতে।আরাফ এটা ভেবে পাচ্ছে না।অর্থ কিভাবে পারলো সিকিউরিটি ছাড়া একা একা হাসপাতালে যেতে।সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।মনে মনে একটাই প্রার্থনা করলো যেন অর্থ আর প্রাহি সহি সালামত থাকে।
_____________
আস্তে আস্তে চোখজোড়া মেলে তাকালো অর্থ।চোখের পাতাগুলো ভীষন ভারি হয়ে আছে।অনেক কষ্টে চোখ মেলে তাকিয়েছে অর্থ।নড়াচড়া করতে নিতেই বুঝে যে অর্থ’র হাত, পা সব বাধা।সাথে সাথে বুকটা ধ্বক করে উঠে অর্থ’র।এটা কিভাবে হলো?ওকে এইভাবে কে বাধঁলো।ওতো প্রাহিকে নিয়ে গাড়িতে ছিলো।প্রাহি ঘুমিয়ে যেতে তার কিছুক্ষন পর ও নিজেও ঘুমিয়েছিলো। হঠাৎ প্রাহির কথা মনে পরতেই অস্থির হয়ে যায় অর্থ।চারদিকে দৃষ্টি ফেলেও কিছু দেখতে পারলো না।শুধু ঘুটিঘুটে অন্ধকার।কলিজাটা কেমন যেন কামড় দিয়ে ধরে কিছু।কোথায় ওর প্রাহি?ঠিক আছে তো ওর প্রাহি?অর্থ চিৎকার দিতে নিয়েও থেমে যায়।কিছু একটা ভেবে ওর গলার লকেটটার দিকে নজর দিতেই এতো চিন্তার মাঝেও সস্থির নিঃশ্বাস ফেললো অর্থ।যা করার অতি দ্রুত করলো।মাথাটা ঝুকিয়ে অনেক কষ্টে হাতের কাছে এনে নিজের কাজ সেরে ফেললো।তারপর অন্ধকারের মাঝে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-‘ কেউ আছে এখানে?খুলো আমাকে।এখানে বেধে কেন রেখেছো?আর আমার ওয়াইফ কোথায়?কোথায় রেখেছো ওকে?কার এতো বড় সাহস সামনে আসো বলছি।সাহস থাকলে একবার খুলে দে আমায়।দেখি তোর বুকের পাঠা কতো বড়। ‘

চারদিকে নিস্তব্ধতা বিরাজমান। হঠাৎ সেই অন্ধকার চিরে বেড়িয়ে আসে রূক্ষ একটা কন্ঠস্বর,

-‘ এতো অস্থির হচ্ছিস কেন অর্থ শিকদার।এখনো যে আরো অনেক কিছু বাকি দেখার।এতো তাড়াতাড়ি তোকে মুক্ত করি কিভাবে বল তো?তোকে এখানে আনতে আমাকে কতো কাঠখোড় পুড়াতে হয়েছে।’

অর্থ রাগিস্বরে চিৎকার করলো,

-‘ কে তুই?সামনে আয় বলছি।এইভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে কেন কথা বলছিস।আর প্রাহি কোথায়?আমার প্রাহিকে আমার কাছে এনে দে। ওর কিছু হলে তোকে খুন করে ফেলবো আমি।’

-‘ রিলেক্স। এতো অস্থির হচ্ছিস কেন বলতো?তোর বউকে অনেক খাতির যত্ন নিয়ে রেখেছি। এতো চিন্তা করিস নাহ। আগে তোকে সাথে পরিচয় আদান প্রদান করে নেই কি বল?’

সাথে সাথে লাইট জ্বলে উঠলো।অনেকক্ষন অন্ধকারে থাকার কারনে হঠাৎ আলো জ্বলায় অর্থ চোখ বন্ধ করে ফেলে।আলো সয়ে আসতেই সামনে থাকায় অর্থ।ওর সামনে প্রায় ওরই বয়সী একজন সুঠোমদেহি তাগড়া যুবককে দেখে ভ্রু-কুচকালো অর্থ।প্রশ্ন করলো,

-‘ কে তুই?’

#চলবে___________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here