একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি,16,17,18

0
799

#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি,16,17,18
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১৬

অর্থ কাউচে বসে বসে ল্যাপটপে নিজের অফিসের কাজ করছে।প্রাহি স্টাডি টেবিলে পড়ছে। পড়ার মাঝে মাঝেও আঁড়চোখে অর্থ’র দিকে তাকাতে ভুলছে না ও।কি করে এতো লোকটা ল্যাপটপ নিয়ে।আজ দু’দিন যাবত দেখছে সারাদিন কি যেন করে ল্যাপটপ নিয়ে।ভালো লাগে না প্রাহির এসব আর।দু’দিন যাবত ভালোভাবে কথাও বলে না অর্থ ওর সাথে।মন খারাপ হলো প্রচুর প্রাহির।এই মন খারাপের কারনে আর পড়ায় মন বসলো না ওর।বই খাতা গুছিয়ে রেখে উঠে চলে গেলো বারান্দায়।প্রাহিকে এইভাবে পড়া রেখে উঠে বারান্দায় যেতে দেখে ভ্রু-কুচকে তাকালো অর্থ।হলো কি আবার এই মেয়ের?এমন মুখ গোমড়া করে রেখেছে কেন আশ্চর্য! অর্থ ভাবলো হাতের কাজটা শেষ করেই নাহয় প্রাহির কাছে যাওয়া যাবে।তাই আবারও কাজে মনোযোগ দিলো ও।
অর্থ’র বারান্দাটায় হাফ রেলিং দেওয়া।বাকিটা স্লাইডিং গ্লাস।প্রাহি স্লাইডিং গ্লাসগুলো একটানে খুলে দিলো।স্নিগ্ধ দমকা হাওয়ায় প্রান জুড়িয়ে গেলো ওর।প্রাহি আকাশের দিকে তাকালো।আজ আকাশে চাঁদ তারা কিছুই নেই।আকাশে কালো মেঘের ছড়াছড়ি।থেকে হালকা আওয়াজে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।এই একটু পরেই বোধহয় অঝোরে নামছে বৃষ্টিধারা এই ধরনীতে।এই বৃষ্টির দিনে এরশাদ সাহেব আর প্রাহি কতো বৃষ্টিতে ভিজতো লুকিয়ে লুকিয়ে।আর রাবেয়া বেগম কতো চিল্লাচিল্লি করতেন।তবে স্বামি আর মেয়ের পছন্দমতো ভুনা খিচুরি, নানান পদের ভর্তা আর কষা মাংস করতে ভুলতেন না।সেই দিনগুলোর কথা মনে পরতেই চোখ ভরে এলো প্রাহির।আজ সকালেই মাকে আর বাবার কবরটা দেখে এসেছে ও।মা’কে প্রতিদিন দুবেলা দেখতে যায় ভার্সিটি যাওয়া আসার পথে।আর বাবার কবরটা দু’দিন পর পর যায় দেখতে।উনাদের না দেখলে যে প্রাহির মন ভালো থাকে না।তবে প্রাহি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।ওর মা বাবার এই করুন পরিনতি করার পিছনে যেই থাকুক তাকে কঠোর শাস্তি দিবে প্রাহি।পুলিশ তো এটা এক্সিডেন্ট কেস বলে ধামাচাপা দিয়ে দিয়েছে।কিন্তু প্রাহি আসল সত্যিটা টেনেহিছড়ে বের করে আনবে সবার সামনে।এতে ওর যা করার লাগে ও করবে।শুধু সময়ের অপেক্ষা।ভাবনার মাঝেই হুট করে প্রাহির ফোনে একটা ম্যাসেজ আসলো।প্রাহির ম্যাসেজের আওয়াজ পেয়ে সেটা ওপেন করতেই যেন হাজার বোল্ডের ঝটকা খেলো।
‘ সেদিন আমাকে অপমান করার শাস্তিটা কেমন হলো জান?আমার স্পর্শ ভালোলাগে না তাই নাহ?অথচ একই সাথে আপন দুইভাইয়ের সাথে তো ঠিকই ফষ্টিনষ্টি করতে পারিস।সেদিন আমাকে এইভাবে সবার সামনে অপমান করার শাস্তি হিসেবে তুই হারিয়েছিস তোর বাবাকে হারিয়েছিস।মা’ও একপ্রকার থেকেও নেই।এইবার ওই শিকদার বাড়ির লোকেদের পালা।তিলে তিলে মারবো এক একটাকে।পারলে আমাকে আটকে দেখা।আমি নিজেই সব স্বিকার করলাম।দেখি তুই কি করতে পারিস।শুনলাম বিয়েও না-কি করে ফেলেছিস?তা কি শুধু ওই অর্থ’র সাথেই সাথে সুয়েছিস? না-কি হেমন্ত’,র কাছেও গিয়েছিস?শোননা আমার কাছে একরাত কাটাছে চলে আসিস।আমি কিন্তু খুব ভালোভাবে সেটিস্ফাইড করবো তোকে।বি রেডি প্রাহি।বি রেডি।”

ম্যাসেজটা পরেই প্রাহির সারাশরীর ভয়ে কাঁপতে লাগলো।জয়ের এতো নোংরা কথা শুনে গা গুলিয়ে আসলো প্রাহির।নিজের আপন ভাইয়ের থেকে বেশি হেমন্তকে নিয়ে এইসব বাজে কথা আর সহ্য করতে পারলো না।মুখে হাত চেপে একদৌড়ে চলে গেলো ওয়াশরুমে।বেসিনের সামনে যেতেই বমি করে দিলো প্রাহি।শেষ হতেই চোখে মুখে পানির ছিটা দিয়ে সেখানেই বসে পরলো প্রাহি।হাতের চাপ লেগে ঝর্না চালু হয়ে ভিজিয়ে দিলো ওর সারা শরীর।কি করলো এটা জয়? তার মানে এইসব কিছুর পিছনে ওই জয় ছিলো।সেদিনের অপমানের কারনে শয়তানটা ওর পুরো পৃথিবী কেড়ে নিলো।এখন যখন আবার একটু সুখের খোঁজ করতে নেমেছে প্রাহি।কুকুরটা সেখানেও ওর নজর দিয়ে ফেলেছে।নাহ,প্রাহি আর কাউকে হারাতে পারবে না। ওই জয়কে এর প্রাপ্য শাস্তি পেতেই হবে। কুকুরের থেকেই নিকৃষ্ট ওই লোকটার বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।

এদিকে প্রাহিকে বারান্দা হতে ওইভাবে দৌড়ে ওয়াশরুমে ছুটে যেতে দেখেই ভয় পেয়ে যায় অর্থ।প্রাহির পিছু যেতে নিলেই প্রাহি ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে দেয়।ভেতর থেকে বমি করার শব্দ পেতেই যেন ভয়টা আরো কয়েকশোগুন বেরে গেলো ওর।ওয়াশরুমের দরজা বার বার ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলছে,
‘ প্রাহি? কি হয়েছে তোমার?দরজা খুলো প্রাহি।আমি কিন্তু নাহলে দরজা ভেঙ্গে ফেলবো। প্রাহি শুনছো তুমি?’
প্রাহির গায়ে একফোটা শক্তি নেই যে ও উঠে দরজাটা খুলে দিবে।শরীরের সমস্ত শক্তি যেন কেউ শুষে নিয়েছে।প্রাহি খানিকটা জোড় প্রয়োগ করেই বললো,
‘ ভেঙ্গে ফেলুন।’
প্রাহির জবাব শুনে ভ্রু-কুচকে ফেললো অর্থ।তবে আর বেশিক্ষন সময় নষ্ট না করে ড্র‍য়ার হতে দরজার চাবিটা এনে দরজা খুলে ফেললো।দরজা খুলতেই অর্থ অবাক।ঝর্নার পানিতে প্রাহির শরীর ভিজে একাকার।মেয়েটা নিভুনিভু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অর্থ’র দিকে।অর্থ তাড়াতাড়ি ঝর্নাটা ওফ করে দিয়ে প্রাহির কাছে গেলো।তারপর একটানে প্রাহিকে বুকে জড়িয়ে নিলো।প্রাহি ধীর কন্ঠে বলে,
‘ আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন অর্থ।আমার প্রচুর শীত করছে।’
অর্থ আর এক মিনিট অপেক্ষা করলো না কথাটা শোনার সাথে সাথে প্রাহিকে কোলে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলো।প্রাহিকে বিছানায় সুইয়ে দিলো।মেয়েটাকে শুকনো কাপড় পরাতে হবে। কিন্তু কিভাবে?এতোরাতে কেউ তো সজাগ নেই।হিয়াকে ডাকলে পাবে বোধহয়।ওতো অনেক রাত পর্যন্ত স্টাডি করে।অর্থ প্রাহির নিস্তেজ শরীরটার দিকে তাকালো।নরম কন্ঠে বলে,
‘ তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি হিয়াকে ডেকে নিয়ে আসছি।তোমাকে শুকনো কাপড় পরাতে হবে।’
অর্থ যেতে নিলেই প্রাহি অর্থ’র হাত ধরে আটকে দিলো।দূর্বল কন্ঠে বলে,
‘ ওকে ডাকার দরকার নেই।আপনি আমার কাপড়গুলো এনে দিন আমি নিজেই চেঞ্জ করে নিতে পারবো।’
অর্থ চিন্তিত স্বরে বলে,
‘ কিন্তু তুমি তো সামান্য উঠতেও পারছো না। তোমার শরীরটা দূর্বল প্রাহি।আমি হিয়াকে ডেকে নিয়ে আসছি।কিছু হবে না।’
‘ লাগবে না বললাম না।আপনি এনে দিন আমি পারবো।’
প্রাহির জেদের কাছে হার মেনে প্রাহির কাপড়গুলো এনে দিলো ওকে। প্রাহির গালে হাত রেখে বললো,
‘ তুমি চেঞ্জ করে নেও।আমি গিয়ে তোমার জন্যে একটু গরম গরম স্যুপ বানিয়ে নিয়ে আসি ওকে?’
প্রাহি ঘড়ির দিকে তাকালো। রাত বারোটা বাজে।এতো রাতে অর্থ ওর জন্যে কিচেনে যাবে? নাহ এটা হবে না।প্রাহি দূর্বল হাসলো।বলে,
‘ তার দরকার নেই।একটু ঘুমালেই আমি ঠিক হয়ে যাবে।আপনি শুধু শুধু কষ্ট কেন করবেন?’
অর্থ রেগে গেলো প্রাহির কথায় ধমকে বলে,
‘ সেটা তোমার থেকে জিজ্ঞেস করে নিবো না নিশ্চয়ই?আমাকে জ্ঞান দিতে আসবে না।আমি ভালোমন্দ তোমার থেকে ভালো বুঝি।চুপচাপ চেঞ্জ করে নেও।আমাকে রাগিও না।’
অর্থ ধুপধাপ শব্দ করে চলে গেলো।প্রাহি মলিন হাসলো।তারপর জামাকাপড় চেঞ্জ করে নিয়ে কম্বল মুরি দিয়ে সুয়ে পরলো।এতো রাতে ভেজার কারনে জ্বর আসছে বোধহয় ওর।প্রচন্ড শীত করছে।আরেকটা কম্বল হলে ভালো ছিলো।কিন্তু উঠে দাড়ানোর শক্তি নেই ওর মাঝে।অনেক কষ্ট কাপড়গুলো চেঞ্জ করেছে ও।
এদিকে অর্থ স্যুপ বানিয়ে নিয়ে এসে দেখে প্রাহি কম্বল মুরি দিয়ে সুয়ে আছে।বিছানার কিনারে ফ্লোরে ওর জামা কাপড় পরে আছে।অর্থ স্যুপটা টি-টেবিলে রেখে জামাকাপড়গুলো উঠিয়ে বাস্কেটে রেখে দিলো।তারপর প্রাহির কাছে বসে।ওর গা থেকে কম্বল সরাতেই প্রাহি কেঁপে উঠলো।সাথে সাথে কম্বল টেনে ধরে আবারও গায়ে দেয়ার চেষ্টা করলো।কিন্তু পারলো।শীতে ওর কান্না চলে আসছে।এমনিতেই মন ভালো না ওর।প্রাহি ক্রোদন স্বরে বলে,
‘ শীত করছে কম্বলটা ছাড়ুন প্লিজ।’
প্রাহি কথায় অর্থ ভ্রু-কুচকালো।প্রাহির কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর কপালে হাত রাখলো।যা ভাবছে তাই।এতো রাতে ভেজার কারনে জ্বর এসে পরেছে।কিন্তু অতোটাও না হালকা গরম শরীরটা।অর্থ প্রাহিকে ভালোভাবে কম্বল পেচিয়ে দিয়ে খাটের সাথে হেলাম দিয়ে বসালো।তারপর যত্নসহকারে স্যুপ খাইয়ে দিলো।খাওয়া শেষে মেডিসিন দিতেও ভুললো।প্রাহি খাওয়া শেষ করে ধুপ করে সুয়ে পরলো।অর্থ উঠে গিয়ে ফ্রেস হয়ে রুমের লাইট নিভিয়ে নিজেও প্রাহির পাশে এসে সুয়ে পরলো।প্রাহির শরীরের সাথে হাত লাগতেই বুঝতে পারে প্রাহি কাঁপছে।অর্থ ডাকলো,
‘ প্রাহি ঘুমিয়েছো?’
প্রাহি অর্থ’র দিক ফিরলো।নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে থেকে বুঝালো যে ও এখনো জেগে আছে।
অর্থ দুহাত মেলে দিয়ে আদুরে কন্ঠে বলে,
‘ শীত করছে তোমার অনেক। আমার বুকে এসে সুয়ে পরো।শীত কম লাগবে।’
কথাটা বলতে দেরি প্রাহির অর্থ’র বুকে ঝাপিয়ে পরতে দেরি নেই।অর্থ’র শরীরের উষ্মতা পেয়ে প্রাহি একেবারে অর্থ’র বুকের মাঝে বিড়ালছানার মতো লেপ্টে রইলো।অর্থ হাসলো।আদুরেভাবে প্রাহির মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।কিছুক্ষনের মাঝে প্রাহির ঘুমিয়ে পরলেও।অর্থ’র চোখে ঘুম নেই।প্রাহির জন্যে ওর চিন্তা হচ্ছে।মেয়েটা তো ঠিকই ছিলো।হঠাৎ এমন কি হলো যে ও এতোটা অসুস্থ হয়ে পরলো?না এভাবে ভাবলে হবে না।কাল সকালে প্রাহি ঘুম থেকে উঠতেই ওকে সবটা জিজ্ঞেস করতে হবে।নাহলে ওর শান্তি নেই।
অর্থ তাকালো আবারও প্রাহির দিকে।মায়াবি এইমুখটার দিকে একবার তাকালে শুধু তাকিয়েই থাকতে মনচায়।অর্থ প্রাহির গালে আর কপালে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে।নিজেও প্রাহিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর চেষ্টায় লেগে পরলো।

#চলবে________

#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১৭
(১৮+ এলার্ট)
সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই নিভু নিভু চোখে তাকালো প্রাহি।দেখে অর্থ ওর মাথার কাছে বসে আছে আর ক্রমাগত ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আরেক হাত দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে।সকাল সকাল বিরক্ত হলো প্রাহি।সারাদিন কি এতো কাজ করে লোকটা?হালকা রাগ নিয়ে প্রাহি বলে,
‘ সারাদিন কি করেন এতো ল্যাপটপে?কি এতো কাজ আপনার?’
প্রাহির কথায় চমকে যায় অর্থ।পরক্ষনে নিজেকে সামলে নিয়ে ল্যাপটপ ওফ করে প্রাহির পাশে আবারও সুয়ে পরলো।প্রাহি নিজের প্রশ্নের জবাব না পেয়ে আবারও জিজ্ঞেস করে,
‘ কি হলো?জবাব দিচ্ছেন না কেন? আর এতো সকালে উঠেই ল্যাপটপ নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছেন?মাত্র ৬ঃ৪৫ বাজে।’
অর্থ প্রাহির ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়েই বলে,
‘ এখন কেমন লাগছে তোমার শরীর?’
প্রাহি চোখমুখ কুচকে ফেললো।তেজি কন্ঠে বলে,
‘ আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনাকে,আপনি আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উলটো আমাকে প্রশ্ন করছেন।এটা কি ঠিক?’
অর্থ মুচঁকি হাসলো।প্রাহি যে রেগে গিয়েছে তা আর বুঝতে বাকি নেই।তাই এইবার সরাসরি উত্তর দেয়,
‘ কোরিয়ার বিজন্যাসটা বাংলাদেশেই স্যাটেল করে নিবো প্লান করেছি।কারন আর বিদেশে থাকতে ভালো লাগে না।আগে তো বউ ছিলো না টেন্সন ছিলো না।এখন বউ আছে ক’দিন পর বাচ্চাও হবে।তাদের ছাড়া কি আর আর এতো দূরে থাকা যায়?তাই এতো দিন রাত লাগিয়ে কাজ করছি।তা এখন বলো তোমার শরীরটা কেমন?’
এইভাবে অর্থ’র , ‘ ক’দিন পর বাচ্চাও হবে।’ কথাটা বলতে শুনে লজ্জা পেলো প্রাহি।আমতা আমতা করে বলে,
‘ ঠিক আছি আমি এখন! একটু শরীর দূর্বল লাগছে শুধু।’
হঠাৎই অর্থ ওর মুখশ্রী বেজায় গম্ভীর করে নিলো।অত্যন্ত শীতল কন্ঠে বলে,
‘ কাল কি হয়েছিলো প্রাহি?আমাকে বলো?কেন তুমি হঠাৎ এতো অসুস্থ হয়ে পরলে?গিভ মি দ্যা আন্সার্স।কোন ভণিতা করবে নাহ!’
প্রাহি ভয় পেলো অর্থ’র এমন শীতল কন্ঠস্বর শুনে।ও তো এমনিতেও বলে দিতো অর্থকে।কালই বলতো শুধু একটু অসুস্থ হয়ে পরার কারনে বলতে পারিনি।প্রাহি মুখ ফুলালো।এইভাব্র বলার কি আছে আজব?ভালোভাবে বললেই তো হতো?প্রাহি গোমড়া মুখে বিছানার পাশে ওর মোবাইল খুজতে লাগলো পরক্ষনে মনে পরলো ওর ফোন তো কাল ব্যালকনিতেই ফেলে দিয়ে আসছিলো প্রাহি।প্রাহির ভাবনার মাঝেই অর্থ ওর দিকে ওর ফোন এগিয়ে দিলো।প্রাহি ভড়কে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো। ছোট্ট কন্ঠে বলে,
‘ ধন্যবাদ!’
তারপর নিজের ফোনে কাল জয়ের করা ম্যাসেজটা এনে অর্থ’র দিকে ফোনটা এগিয়ে দেয়।অর্থ ভ্রু-কুচকে প্রাহির হাত থেকে ফোনটা নিয়ে পুরোটা ম্যাসেজ পড়তে লাগলো।আস্তে আস্তে রাগে অর্থ’র চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো,চোখজোড়া লাল হয়ে গিয়েছে,মুখশ্রীটাও লাল হয়ে আসছে।রাগে ফোনটা আছাড় মারতে নিলেই প্রাহি জলদি অর্থ’র হাত ধরে ফেলে।আতকে উঠে বলে,
‘ আরে কি করছেন?রাগ হয়েছে তো আমার ফোন ভাঙ্গতে যাচ্ছেন কেন?’
অর্থ দাঁড়িয়ে গিয়ে পাশে রাখা ফুলদানিটা এক আছাড়ে ভেঙ্গে চিৎকার করে বলে,
‘ হাও ডেয়ার হি?হাও ডেয়ার হি টু টেক্সট মাই ওয়াইফ ইন সাচ ফিলথি লেংগুয়েজ।আমি ওই জা*নোয়ারকে পেলে ওর শরীরকে এতো এতো টুকরে কাটবো যে ওর শরীরে কোন অংশ কুকুর বিড়ালরাও খুজে পাবে না।’
প্রাহি অনেকটা ভয় পেয়ে গেছে অর্থ’র এমন রাগ দেখে।ভয়মিশ্রিত কাঁপা কন্ঠে প্রাহি বলে,
‘ আপনি এতোটা রাগবেন না প্লিজ।একটু শান্ত হোন।এইভাবে রাগ করলে কি সব ঠিক হয়ে যাবে!’
অর্থ চিৎকার করে বলে,
‘ গো টু হেল উইথ দ্যাট!’
অর্থ রাগে কাঁপতে কাঁপতে কাকে যেন ফোন করলো।ফোন রিসিভ হতেই দাঁতেদাঁত চিপে বলে,
‘ ওই জয়ের খোজ নেওয়ার জন্যে তোমাদের বলেছিলাম নাহ?এতোদিন লাগে তোমাদের?ওই জা*নোয়ারটা আজাদ হয়ে ঘুরতেছে আবার আমার বউকে থ্রেড দিচ্ছে।ওই কুকুরের বাচ্চাকে জলদি খুজে বের করো নাহলে তোমাদের একটাও আমি আস্ত রাখবো না।গট ইট।’
অর্থ নিজের চুল খামছে ধরে পিছনে ফিরে বড়বড় নিশ্বাস নিয়ে নিজের রাগ সামলানোর চেষ্টা করছে।সব ধ্বংশ করে দিতে পারলে বুঝি ওর রাগটা কমতো।এদিকে অর্থ’র এহন রূপ দেখে প্রাহির অন্তর আত্মা লাফাচ্ছে।প্রাহি আস্তে করে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো।তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে অর্থকে পিছন হতে জড়িয়ে ধরলো।
এদিকে বুকে কারো নরম হাতের ছোয়া আর পিঠের উপর কারো অস্তিত্ব অনুভব করলো অর্থ।বুঝতে একটুও অসুবিধে হলো না যে ওটা প্রাহি।অর্থ প্রাহির হাত ধরে একটানে প্রাহিকে ওর সামনে এনে ওর প্রাহির কোমড়ে হাত রেখে প্রাহিকে নিজের অনেকটা কাছে নিয়ে আসলো।প্রাহির এলোমেলো চুলগুলো কানের পিছনে গুছে দিলো।মেয়েটাকে বুকে নিয়ে এখন রাগটা অনেকখানি কমেছে।অর্থ’র হাত প্রাহির সারামুখশ্রীতে বিচড়ন করতে লাগলো।প্রাহি চোখ বুজে নিলো।হঠাৎ অর্থ’র হাতের ছোঁয়া ওর ঠোঁটে অনুভব করতেই কেঁ পে উঠলো প্রাহির। অর্থ প্রাহির ঠোঁটে ক্রমাগত আলতো করে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে।আর বারবার শুকনো গলায় ঢোক গিলছে।নিজেকে সামলানো বড় কষ্ট হয়ে পরছে।আচ্ছা,এতো কষ্ট কেন করবে ও?মেয়েটা তো ওর স্ত্রী ওর।ওকে ছুঁয়ে দেওয়ার,ভালোবাসার পুরো অধিকার আছে ওর।একটু নাহয় বেহায়া হবে ও তাতে ক্ষতি কি?ভালোবাসতে তো কোন মানা নেই?তাই নাহ?অর্থ ধীর কন্ঠে বলে,
‘ প্রাহি?’
প্রাহির শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি বেড়েছে।জোড়েজোড়ে শ্বাস নিতে নিতে বলে,
‘ হুম!’
‘ তোমার ওই ঠোঁটজোড়ার একটু খানি ছোঁয়া পেতে দিবে আমার এই তৃষ্ণার্থ ঠোঁটজোড়াতে।’
প্রাহি কিছু বললো না লজ্জায় ওর কথাগুলো গলাতেই আটকে আছে।ও নিজেও তো চায় অর্থ একটু কাছে পেতে।একটু না অর্থকে ও পুরোটাই চায়।কিন্তু কিভাবে নিজের মনের কথা বলবে অর্থকে?ও তো লজ্জায় মরেই যাবে!’
প্রাহি অর্থ’র টি-শার্টের কলার ধরে অর্থ’র সাথে আরেকটু মিশে গেলো।পা দুটো উচু করে অর্থ’র গলা জড়িয়ে ধরলো।অর্থ এতে বুঝে ফেলেছে সব।তাই আর এক মুহূর্ত দেরি না করে।ডুব দেয় নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীর ওষ্ঠজোড়ায়।প্রাহি অর্থ’র ঘার শক্ত করে চেপে ধরেছে।ও নিজেও আস্তে আস্তে অর্থ’র ভালোবাসার স্পর্শে সারা দিতো লাগলো।অর্থ প্রাহির কামিজের ভীতর দিয়ে ওর পেটে নিজের হাতের স্পর্শ দিতে লাগলো।এতে যেন প্রাহির সারাশরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেলো।থরথর করে কাঁপতে লাগলো ওর পুরো দেহ।অর্থ যেন নিজের কোন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছে।উন্মাদ হয়ে প্রাহিকে চুঁমু খাচ্ছে অর্থ।প্রাহির যেন শ্বাস নেওয়া কষ্ট হয়ে পরেছে।আর কতোক্ষন এইভাবে চললে ও দম আটকে মারা যাবে।প্রাহি জোড় করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো অর্থ’র থেকে। দৌড়ে বারান্দায় চলে গিয়ে জোড়েজোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলো।অর্থ’ও আস্তে আস্তে প্রাহির পিছন পিছন গেলো।তারপর আলতো করে প্রাহিকে পিছন হতে জড়িয়ে ধরলো।প্রাহির চুলগুলো একপাশে এনে। প্রাহির কাঁনে ঠোঁট ছোয়ালো।তারপর প্রাহির ঘাড়ে গভীরভাবে নিজের ঠোঁটের আবেশ দিতে লাগলো ছোট ছোট করে।প্রাহি চোখ বুঝে অর্থ’র ভালোবাসাগুলো উপভোগ করছিলো।কিয়ৎক্ষন পর নেশাক্ত কন্ঠে বলে,
‘ আমি সরি প্রাহি। তোমাকে আমি এইভাবে হার্ট করতে চাইনি।আমি নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেছিলাম।’
প্রাহি সাথে সাথে ঘুরে গিয়ে অর্থকে জড়িয়ে ধরে।কাঁপা কন্ঠে বলে,
‘ এইভাবে বলবেন না।আমি কিন্তু আগেও একবার বলেছি এখনো বলছি।আমি আপনার স্ত্রী, আপনি আমাকে আমাকে যেইভাবে মনচায় ভালোবাসতে পারবেন।এটা আপনার অধিকার।আমি আমার স্বামিকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবো এইটার সাধ্য আমার নেই। আমি গুনাহগার হতে চাই না নিজের স্বামিকে কষ্ট দিয়ে।’
অর্থ তৃপ্তীর শ্বাস নিলো। এই মেয়েটাকে নিজের স্ত্রী করে কোন ভুল করে নি অর্থ।এই মেয়েটাই ওর জন্যে ওর পার্ফেক্ট জীবনসঙ্গীনি।
হঠাৎ দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শোনা গেলো।সাথে হেমন্তর কন্ঠ,
‘ প্রাহি কিরে এখনো উঠিস নি?ভার্সিটি যাবি না?আজ একটা ইম্পোর্টেন্ট ক্লাস আছে।জলদি উঠে রেডি হো।আমি গেলাম।’
প্রাহি ধীর কন্ঠে জবাব দেয়,
‘ আচ্ছা যা তুই।আমি আসছি।’
অর্থ প্রাহিকে এখনো জড়িয়ে ধরেই আছে।সেইভাবে থেকেই বলে,
‘ তুমি যেতে পারবে ভার্সিটিতে?আর ইউ সিউর?’
প্রাহি মিষ্টি হাসলো।বললো,
‘ আপনি চিন্তা করবেন না।আমি ঠিক আছি। চলুম ফ্রেস হয়ে নেই।ক্লাস মিস করা যাবে না।’
অর্থও হাসলো।দুজনে ফ্রেস হয়ে তারপর খাওয়া দাওয়া করে অর্থ প্রাহিকে নিয়ে ভার্সিটি’র উদ্দেশ্য রওনা হলো।হেমন্ত বাইক নিয়ে গিয়েছে ও ইশিকে পিক-আপ করে নিয়ে একেবারে আসবে ভার্সিটিতে।যার যার উদ্দেশ্যে সে সে চলে গেলো।

#চলবে___________

#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১৮
‘ প্রতিদিন আর এসব নোংরামি দেখতে ভালো লাগে না।পারা প্রতিবেশিরা সবাই ছিঃ ছিঃ করছেন।সারাদিন ছেলেদের সাথে নোংরামি করে বেড়ায় আর মান ইজ্জত আমাদের যায়।’ বড় মামির এমন কথায় ইশি চোখ গরম করে তাকালো।রাগটা মাথায় চড়া দিয়ে উঠেছে।ইশি চিৎকার করে বলে,
‘ অনেক হয়েছে।কিসের নোংরামি হ্যা?হেমন্ত আমার ফ্রেন্ড।ও আমাকে রোজ ভার্সিটি নিয়ে দিয়ে আসে এটাতে কি নোংরামি হয়?তাহলে তোমার মেয়েরটা কি বলবে হ্যা?তোমার মেয়ে যে বিয়ের আগে প্রেগনেন্ট হয়ে এসেছে।তারপর তো সেই বাচ্চা নষ্ট করে দিয়ে অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিলে।বিয়ের দু মাস না যেতেই সেই আগের প্রেমিকের সাথে ভেগে গেলো।তাতে তোমাদের মান ইজ্জত যায় নি?হ্যা?আর ছোট মামি তোমার ছেলে যে একটা মেয়েকে ধর্ষন করে সেই কেসে ৭ বছর যাবত জেল খাটছে এতে তোমাদের মান ইজ্জত যায়নি হ্যা?আমার এটুকুতেই তোমাদের এতো সমস্যা?ওকে ফাইন মামা’রা সন্ধ্যায় আসলেই আমি মামাদের বলবো কাল থেকে আমি হোস্টেলে থাকবো।বাবাকেও বলবো আমার খরচপাতির টাকা যেন সব এখন থেকে আমাকেই দেওয়া হয়।তোমরা থাকো তোমাদের মতো।’
এই বলে ইশি হনহন করে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো।বাহিরে এসে দেখে হেমন্ত বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ইশি ধুপ করে ওর পিছনে বসে পরলো।হেমন্ত সব শুনেছে বাহির থেকে।তারপরেও বললো,
‘ কি হয়েছে?এমন মুখ লোটকে আছিস কেন?’
ইশি ধমকে হেমন্তকে বলে,
‘ তোর সব শুনতে হবে?জলদি বাইক স্টার্ট দে।ভার্সিটি যেতে লেট হবে।’
হেমন্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাইক স্টার্ট দিলো।আসলেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।প্রাহি কয়েকবার ফোন দিয়ে ফেলেছে।অসহ্য সব।ইশির জন্যে ওর বুকটা ফেটে যাচ্ছে কষ্টে।মেয়েটার এতো কষ্ট ও একদম সহ্য করতে পারে না।কবে যে ওকে নিজের করে নিয়ে আসবে ওর কাছে।ফাইনাল এক্সামটা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছে শুধু ও।তারপরেই ইশিকে বিয়ে করে নিবে ও।আর অপেক্ষা করবে না।
ভার্সিটি পৌছাতেই হেমন্ত আর ইশি দেখে প্রাহি বড় বটগাছটার নিচে বসে আছে।ওরা সেদিকেই এগিয়ে গেলো।ওদের দেখে প্রাহি রাগি গলায় বলে,
‘ আমি গিয়ে আম্মুকেও দেখে আসলাম।তারপর ভার্সিটি আসলাম।আর তোদের এতো দেরি কেন?’
হেমন্ত টিপ্পনি কেটে বলে,
‘ এই পেত্নিটারই তো দেরি হয়েছে।আটা ময়দা মেখে পেত্নি থেকে মানুষ হতে সময় লাগে না বল?’
ইশি দাঁত খিচিয়ে তাকালো হেমন্ত’র দিকে।তেঁজ নিয়ে বলে,
‘ রাগাবি না হেমন্ত।এমনিতেই মন মেজাজ ভালো না।আমি গেলাম ক্লাসে।’
ইশি হনহনিয়ে ক্লাসে চলে গেলো।প্রাহি বুঝলো না ইশির এতো রাগ কেন?তাই ও প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো হেমন্ত’র দিকে।হেমন্ত সেটা বুঝতে পেরে নিজেই বললো,
‘ রেগুলার যা হয়।ওই ওর মামিদের ওইসব আজেবাজে কথা।’
প্রাহি দীর্ঘশ্বাস ফেললো।বাবা,মা না থাকলে নিজেকে কতোটা অসহায় মনে হয় তা এখন ও খুব ভালোভাবেই জানে।তবুও তো ও কপাল গুনে এতো ভালো একটা পরিবার পেয়েছে।কিন্তু ইশির তো তাও নেই।ওই মেয়েটা দিন দিন ধুকরে ধুকরে কষ্ট পাচ্ছে।এই হেমন্ত যে কবে ওর মনের কথা বলবে।প্রাহি এইবার রাগে কটমট করে বলে,
‘ তুই কবে ওকে প্রোপোজ করবি?কুত্তা একটা।’
হেমন্ত মুখ লটকিয়ে বলে,
‘ আমি কি করবো বল।অনেক চেষ্টা করি বলার কিন্তু ভয় হয় যদি ও রাগ করে আমাদের ফ্রেন্ডসীপটাও নষ্ট করে দেয়?’
‘ গাধা এতো ভয় পেলে হয়?ব্যস ওর চোখের দিকে তাকাবি।নিজের মনের সব আবেগ ভালোবাসা ঢেলে বলে দিবি আমি তোমাকে ভালোবাসি।’
‘ তাহলে তুই কেন বলতে পারছিস না যে তুই ভাইকে ভালোবাসিস বিগত সাতবছর যাবত।’
হেমন্ত’র কথায় চমকে তাকায় প্রাহি।বিষ্ময়ে চোখ বড়বড় করে হা করে তাকিয়ে রইলো হেমন্ত দিকে।তুতলিয়ে বললো,
‘ তু…ই,তুই কিভাবে মানে?’
হেমন্ত হাসলো।প্রাহির মাথায় হাত রেখে বলে,
‘ আমার বেষ্টফ্রেন্ড আমারই ভাইকে ভালোবাসে।সেটা আমি কিভাবে জানবো না বল?তুই আমার বেষ্টফ্রেন্ড তোর মনের কথা সব জানা এটা ব্যাপার না কোন।তুই যে আমার ভাইর ছবি তোর ব্যাগে নিয়ে ঘুরতি ওকে নিয়ে নিজের ডায়রীতে অসংখ্য ভালোবাসাময় বাক্য লিখতি। তুই কি বুঝিস?আমি এসব জানবো নাহ?হাহ্ এতোটাই হাবুলুলু না আমি। তুই আমাকে হয়তো বেষ্টফ্রেন্ড মানিস না তাই আমাকে কিছুই বলিস নি।কিন্তু তুইতো আমার বেষ্টফ্রেন্ড,আমার বোন,আমার ভাবি। তাই আমি সবটা তুই না বলতেও জেনে নিয়েছি।’
প্রাহির নিজেকে অপরাধী মনে হলো অনেক।হেমন্ত কি অনেক কষ্ট পেয়েছে ওর লুকানোতে এই কথা?প্রাহি ধরা গলায় বলে,
‘ এইভাবে বলিস না হেমন্ত।তুই আমার ভাই হোস।তোর থেকে আজ অব্দি কিচ্ছু লুকাই নি।শুধু এই কথাটা ছাড়।বিশ্বাস কর আমি যদি উনাকে ভালো না বেসে অন্য কাউকে ভালোবাসতাম আমি নির্দ্বিধায় তোকে সবটা বলে দিতাম।কিন্তু তোর ভাইকে ভালোবাসি এই কথাটা আমি কিভাবে তোকে বলবো বল?আমার ভয় হতো যদি তুই আমাকে খারাপ মনে করিস?যদি আমার সাথে বন্ধুত্ব শেষ করে দিস।এই ভয়ে আমি বলিনি।প্লিজ তুই কষ্ট পাস না প্লিজ।’
হেমন্ত বুঝলো আর একটু হলেই প্রাহি কেঁদে দিবে।তাই ও জলদি প্রাহিকে বললো,
‘ ধুর বোকা।আমি তোকে এইভাবেই বলছিলাম।তোর রিয়েকশনটা দেখার জন্যে।প্লিজ মন খারাপ করিস না।আমি জানি তুই আমার থেকে এটা লুকিয়েছিস কারন ছাড়া আর এটা করিস নি।এখন মন খারাপ ছাড়।ক্লাসে চল।গিয়ে দেখে ওই ভুতনী কি করছে।আমাদের তো আবাত ওটার মন ভালো করতে হবে।’
প্রাহি হেসে দিলো হেমন্ত’র কথায়।হেমন্ত’র মতো একটা ফ্রেন্ড থেকে বেশি ভাই পাওয়া অনেক ভাগ্যের ব্যাপার।আর প্রাহি অনেক সৌভাগ্যবতী যে ও হেমন্ত’র মতো এমন বন্ধু পেয়েছে।আর এখন তো ও দেবরও হয় প্রাহির।প্রাহি হাসিমুখে চলে গেলো হেমন্ত’র সাথে।
———————————-
অর্থ অফিসে কাজ করছে এমন টাইমে ওর পি.এ এসে বলে,
‘ স্যার একজন আপনার সাথে দেখা করতে চাইছেন। খুব আর্জেন্ট নাকি এটা।’
অর্থ ভ্রু-কুচকে ফেললো।এমন টাইমে ওর সাথে কেইবা দেখা করতে চাইবে।তাও আবার এমন জরুরি।অর্থ গম্ভীর কন্ঠে বলে,
‘ নাম বলেছে কে সে?’
‘ না স্যার।বলছে আপনি না-কি উনাকে চিনেন খুব ভালোভাবে।’
অর্থ এতো আর মাথা ঘামালো না।ওর পি.এ কে বললো তাকে ভীতরে আসতে দিতে। অর্থ আবারও কাজে ব্যস্ত হয়ে পরলো।হঠাৎ কেউ এসে বলে,
‘ অর্থ?’
অর্থ ভ্রু-কুচকে তাকালো।পরক্ষনে রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো।দাঁতেদাঁত চিপে বললো,
‘ তুমি আবার এখানে কেন এসেছো?সেদিনের মা’রটা কম হয়ে গিয়েছে?আর আরাফ কোথায়?ও থাকতে তুমি এখানে কি করে আসলে?’
ইলফা বাঁকা হেসে বলে,
‘ ও কামন অর্থ?ওর কি সেরকম ক্ষমতা আছে যে ও আমাকে আটকে রাখবে?’
অর্থ রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলে,
‘ আমি নিজের কোন্ট্রোল হারিয়ে ফেলার আগে তুমি এখান থেকে চলে যাও।নাহলে ভালো হবে না কিন্তু।’
ইলফা উঠে দাড়ালো চিৎকার করে বলে,
‘ যাবো না কি করবে তুমি?তুমি এমন কেন অর্থ?বিগত কয়েকবছর ধরে আমি তোমার পিছন পিছন ঘুরছি।আমাকে তুমি একটু ভালোবাসতে পারলে না।আর দুইদিনের ওই মেয়েটাকে দেখার পলকেই তুমি বিয়েও করে নিলে?কি আছে ওই মেয়ের মাঝে হ্যা?যা আমার মাঝে নেই?’
অর্থ’র রাগে মুখশ্রী লাল হয়ে গিয়েছে।পারলে এক্ষুনি ইলফাকে এখনি গলা টিপে মেরে ফেলে ও।অর্থ হিংশ্র দৃষ্টিতে তাকালো ইলফার দিকে।চিবিয়ে বলে,
‘ গেট লস্ট ফ্রোম হিয়ার।আর আমার স্ত্রীর কি আছে না আছে সেটা অন্তত তোর মতো চরিত্রহীন কোন মেয়েকে আমি বলতে যাবো না।বের হয়ে যাহ আরিফ, আরিফ এই মেয়েকে এখুনি ঘার ধাক্কা দিয়ে আমার অফিস থেকে বের করে দেও।’
আরিফ অর্থ’র পি.এ ও কয়েকজন মহিলা স্টাফদের নিয়ে এসে ইলফাকে জোড় করে অফিস থেকে বের করে দিলো।ইলফা যেতে যেতে বলে গেলো,
‘ কাজটা একদম ঠিক করলে না অর্থ।এর জন্যে অনেক পস্তাতে হবে অনেক। অনেক ভয়ংকর হবে এর পরিনাম।’
‘ বের করে দেও একে।জলদি।’অর্থ’র ভয়ংকার চিৎকারে স্টাফরা ইলফাকে দ্রুত অফিস থেকে বের করে দিলো।অর্থ রাগ সামলাতে না পেরে মাথা চেপে ধরে বসে রইলো।এসব ঝামেলা আর ভালো লাগে না ওর।একটু শান্তিতে নিশ্বাস নিতে পারে না ও।নিজের জন্যে না প্রাহির জন্যে অনেক ভয় হয় ওর। যদি মেয়েটার কিছু হয়ে যায় অর্থ পাগল হয়ে যাবে একদম পাগল হয়ে যাবে।এসব কিছু শেষ করতে হবে যতো দ্রুত সম্ভব।যে করেই হোক।

#চলবে_________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here