গল্প-“একদিন নববর্ষা”
পর্ব- ১
অদ্রিজা আশয়ারী।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক বিখ্যাত লেখক প্রেমে জড়িয়েছে ষোলো বছরের এক গ্রাম্য কিশোরীর সাথে। ব্যাপারটা বেশ আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপিত হয়ে ছড়িয়েছিল শহরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। প্রশ্ন উঠেছিল সেই লেখকের চরিত্র নিয়ে।
আমি তখনো ও নিয়ে মাথা ঘামাইনি, এখনো ঘামাই না। বয়ঃসন্ধির বেপরোয়া মাতাল ভালোবাসার প্রথম উপলব্ধি আমি পেয়েছিলাম সাতাশের কোঠায় এসে, শুধু বর্ষারই জন্য। সেটুকুই আমার বাকিসব ক্ষতি পুষিয়ে দিতে যথেষ্ট ছিল। সে ভালোবাসা ভুল হলেও আমি মেনে নিয়েছি নিরব অভিমানে। আজ বলব সেই ভুলে ভরা ভালোবাসার উপাখ্যানের কথা।
বর্ষার সঙ্গে আমার প্রথম দেখাটা হয়েছিল অতি নাটকীয় ভাবে ।
একেবারে অজপাড়াগাঁয়ে তার বাড়ি। গ্রামের আর পাঁচটা মেয়ের মতোই সে সহজ-সরল, কর্মে পটু, নিতান্ত সাধারণ গৃহস্থ ঘরের মেয়ে। এদিকে আমি তখন শহুরে বাবু। শহরের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত জুড়ে আমার সুখ্যাতি। কিশোরী, তরুণী এমনকি গৃহিনী…সকলের কাছেই ‘নাব্য’ তখন এক ঝড়ের নাম।
যে ঝড়ের আগমন কে স্বপ্নবিলাসীরা বার বার তাদের জীবনে স্বাগত জানায়। যদিও সেসব স্বপ্নবিলাসীদের মনের অভিলাষ পূরণ করা আদৌও সহজ নয়। তাছাড়া চাইলেও যে এতো আকাঙক্ষীকে খুশি করা যায় না। আর আমি তখন স্বপ্নের দোরগোড়ায় পৌঁছে আকাশে ওড়া এক মুক্ত বিহঙ্গ। দিনরাত নিজের সকল চাহিদা, প্রয়োজন, আকাঙ্খা আর খেয়ালকে দূরে সরিয়ে শুধুই লিখছি। সে লেখার প্রতিটা পঙক্তি যেন একেকটা মহাকাব্য।
প্রকাশকরা শুধু একটা লেখা চায়। আর সে লেখায় লেখকের স্থানে ‘ইমতিহান নাব্য’ নামটা চায়। কারণ নাব্য মানেই তখন আকাশে ধূলো ওড়ানো, বাতাসে নালিশ জড়ানো সবার মনে ঝড় তোলার মতন একটা কিছু!
সেই আমি হঠাৎ একদিন অজানা খেয়ালে নিজের শহুরে আকর্ষণ ছাড়িয়ে বাংলাদেশের গহীন কোণে, এক অজপাড়াগাঁয়ে উপস্থিত হলাম।
আমি যেখানেই যাই ভক্তের দল চিনির সন্ধান পাওয়া পিঁপড়ের মত পিলপিল করে সেখানে হাজির হয়। এবার আমি তাদের সে সুযোগ একদম দিলাম না। কেউ জানল না নাব্য কোথায় হারিয়েছে। এমনকি আমিও পুরোপুরি জানলাম না কিসের নেশা আমাকে টেনে নিয়ে এসেছে নিজের শেকড় থেকে এত দূর। আমি চলে গেলাম সুন্দরবনের কাছাকাছি একটি অখ্যাত গ্রামে। আমার এই গুপ্ত রোমাঞ্চের একমাত্র সাক্ষী রইল রশু। একসময় সে ছিল আমাদের পরিবারের আশ্রিত। বর্তমানে সে আমার, যাকে বলে পার্সনাল এসিস্ট্যান্ট পদে বহাল আছে। রশু সবে তেইশ বছরের যুবক। আমার চেয়ে কম করে হলেও বছর চার-একের ছোট । রশুকে এই গোপন ভ্রমণে সঙ্গি করার একমাত্র কারণ হলো রশু আদতেই আমাকে অর্থাৎ একজন লেখক সত্বাকে বোঝে। সে পাশে থাকলে আমার বাড়তি ঝামেলা কিছু নেই বরং পুরোপুরি সাহিত্যে মনোনিবেশের সুযোগ আমি পাব। আমার থাকা খাওয়ার চিন্তা পুরোটাই বহন করবে সে একা।
সুন্দর বনের ভেতর ছোট্ট এই গ্রামের নাম গড়ানবন। নামটা পুরোপুরি অচেনা নয় আমার কাছে। ছোট বেলায় দাদার মুখে এই গ্রামের নাম শুনেছি বহুবার। নানান সময়ে আমার মাথায় নানান খেয়াল চাপে। এবার হঠাৎ খেয়াল চাপল অজানা কোথাও হারিয়ে যাওয়ার। বলতে গেলে একরকম ঝোঁকের মাথায় এই গরানবনে তাই চলে আসা।
ভেবেছিলাম গ্রামে আমার আগমনটা খুব আলাদা কিছু হবে। একজন নামি লেখক এসেছে। দেখা করার জন্য হয়তো ঢল নামবে লোকের। শেষমেশ লেখায় মনোনিবেশে ব্যাঘাত ঘটে ঠিকঠাক লিখেই উঠতে পারবো না আমি। কিন্তু সেরকম ব্যাপার কিছুই ঘটল না। রশুর মুখ থেকে শুনলাম মাঝে মধ্যেই নাকি বন বিভাগের বড় অফিসার থেকে শুরু করে নানান উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পর্যন্ত এখানে বেড়াতে আসেন। সব গ্রাম ছেড়ে এই গ্রামই কেন তার কারণ পরে জানলাম। এখানে গুটি চারেক বাংলোও নাকি রয়েছে। ফলে বড় বড় লোকেদের হোমড়াচোমরা দেখে কেউ আর ভয় পায় না এখন। অতএব আমার আগমন তাদের কাছে ডালভাতের পর্যায়েই পরল।
কোনোরকম ঝামেলা ছাড়া খুব সহজেই রশু আমাদের থাকার জন্য একটা বাড়ি ঠিক করে ফেলল। লোকালয় থেকে একটু দূরে, পেছনে জঙ্গল ঘেরা আর সামনে টা প্রচুর গাছপালায় ভরা সে এক মস্ত কুঠি বাড়ি। দূর থেকে বাড়ির চেহারা দেখে ভয় পাওয়ার মতোই বটে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত গাছের জন্য বাড়ির স্বরূপ টাই ঠিকমতো নজরে পরে না বেশিরভাগ সময়। তাছাড়া গাছগুলোর আকৃতি। যেন আরেকটু বাড়লেই তারা আকাশ ছোঁয়ার অধিকার পেয়ে যাবে।
বাড়ি ঠিক করার সাথে সাথে রশু আরও একটা কাজে দক্ষতার পরিচয় দিল। খুব জলদি আমাদের জন্য একটা রান্নার লোক ঠিক করে ফেলল সে।
বরাবরই আমি একটু অস্থির প্রবণ, খেয়ালি স্বভাবের। খুব জলদি ভালোবেসে ফেলি। ভালোবাসা ফুরিয়ে যেতে ছুড়েও ফেলি অকপটে। এইবার আমি সত্যিকার ভাবেই এই জায়গাটার মুগ্ধতায় আটকে গেলাম। প্রথম কিছুদিন লেখালিখিতেও মন রইল না। দিনরাত চরকির মতো ঘুরে বেড়াই। যা দেখি তাতেই ভীষণ মুগ্ধ হই। এদিকের আবহাওয়া বেশ মনোরম, সারাদিন একটা স্নিগ্ধ মিহি বাতাস খেলে, দুপুরের আকাশে তুলোর মতো সাদা মেঘ উড়ে বেড়ায় আর সন্ধ্যেতেই সেই স্থান দখল করে সিদুর বর্ণের জ্বলজ্বলে মেঘ। কখনো আবার গাঢ় ছাই বর্ণের মেঘ, যেগুলো আশু বৃষ্টির ইঙ্গিত জানায় খুব স্পষ্ট ভাবে।
কিন্তু শুধু এটুকুতেই সবকিছু সীমাবদ্ধ থাকলে আজ আমাকে এই উপাখ্যান লিখতে বসতে হতো। প্রকৃতির ওই জড়রূপে ভীষণ ভাবে মুগ্ধ আমি তখনো জানতাম না সামনে কি হতে চলেছে। কি স্বপ্ন অথবা দুঃস্বপ্ন পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছে আমার দিকে। যে দুঃস্বপ্নের রেশ আমার পুরোটা জুড়ে রয়ে গেছে আজও। ক্ষতগুলো এখনো ভেজা…….
***
গরানবনে সেদিন আমার তৃতীয় সকাল। তখনো আমি গরানবনের রূপে অস্বাভাবিক রকমের মুগ্ধ। খুব ভোরবেলাতেই হাটতে বেড়িয়েছি একা। হাটতে হাটতে হঠাৎ এসে দাঁড়িয়েছি বাড়ির পেছনের জঙ্গলটার অন্যপ্রান্তে। এখান থেকে বাড়ি পৌঁছাতে হলে হাটতে হবে কিছুটা ঘুর পথে। গাছপালার ডাল, ঝোপঝাড় এড়িয়ে আমি হাটছি। সূর্যের আলো এখানে, এই অরণ্যমধ্যে পুরোপুরি প্রবেশ করতে পারে না। অচেনা সব পাখির অস্বাভাবিক ডাকাডাকি বারবার মনোযোগ কেড়ে নেয়।
প্রকৃতির ওই অচেনা ও ভয়াল রূপ আমি তখন দেখছি অপার বিস্ময় নিয়ে। কোন পথে হাটছি, আদৌও এপথে কুঠিবাড়ি পৌঁছাতে পারব কিনা কিছুই খেয়াল নেই। হঠাৎ চোখের পাশ দিয়ে খেয়াল করলাম চলন্ত কিছু একটা থেমে গেল। পাশ ফিরে চাইতেই দেখলাম একজোড়া গাঢ় কৃষ্ণ বর্ণের ভীত চঞ্চল চোখ আমার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আছে। তখনো দিনের আলো পরিষ্কার ভাবে ফোটেনি। তার ওপর মহীরুহর আধিক্যের জন্য এই অরণ্য তখনো আঁধার। আমি পরিষ্কার ভাবে কিছু বোঝার আগেই সে ফিসফিসানি স্বরে বলে উঠল, ‘সালাম সাহেব, আপনি কি পথ হারাইছেন?’ তারপর হাত তুলে তর্জনী উত্তর দিকে নির্দেশ করে বলল, ‘ওইদিকে কুঠিবাড়ি। সোজা চইলা যান।’
আমি তখনো বিহ্বল, সম্বিত ফিরে পাইনি। মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার কথা মেনে নিয়ে হাটতে লাগলাম উত্তরে, কুঠিবাড়ির দিকে।
বাড়ি পৌঁছে লিখতে বসলাম, কিছুক্ষণ বই পরলাম, দুপুরে আবার রশুর সাথে একবার বেরোলাম ঘুরতে। কিন্তু সারাক্ষণ মনটা উশখুশ করতে লাগল। মনের খচখচানি দূর হল না কিছুতেই। এর আগেও দুয়েকবার এ গ্রামের মেয়েদের সাথে চলতিপথে দেখা হয়েছে আমার। অচেনা কাউকে দেখলেই তারা ভয়ে দৌড়ে পালায়। আমার চেহারা দেখে বোধহয় তাদের পালানোর গতি আরও বৃদ্ধি পায়। এমনিতে আমার চেহারা খারাপ না হলেও প্রায় ঘাড় পর্যন্ত নেমে আসা ঝাকরা চুল, গালভর্তি দাড়ি, এবং সাধারণের চেয়ে একটু বেশি উচ্চতার কারণে সর্বদাই আমাকে মাত্রার অতিরিক্ত গম্ভীর আর তার সাথে একটু রুক্ষ বলেও মনে হয়।
আমি ভেবে পেলাম না সেই মেয়েটা কে হতে পারে। ওই ভোরে, গহীন অরণ্যমধ্যে যে একজন অচেনা পুরুষের সাথে কথা বলার সাহস দেখিয়েছে। বাড়ির সামনে গাছতলায় মাচায় বসে ভাবছিলাম, চোখ ছিল দূরের আকাশে। হঠাৎ কাপ পিরিচের মৃদু ঝংকার আর তারপর ভোরের সেই রহস্যময়ী সুধাকণ্ঠ শুনে আমি প্রায় চমকে তাকালাম। হাতে চায়ের কাপ নিয়ে শাড়ি আবৃত এক কম্পমান মানবী আমার সাথে কিছুটা দূরত্ব রেখে পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। তার মাত্র বলা ‘সাহেব’ কথাটা এখনো আমার কানে বাজছে। সেই সুধাকণ্ঠের অধিকারীণী মানবী আবারো বলল,’এইযে আপনার চা, এইবার ভিতরে চইলা আসেন সাহেব, আকাশে মেঘ জমছে। এহনি বৃষ্টি নামবার পারে।’
আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘তুমি কে?’
কয়েক মুহূর্ত নিশ্চুপ থেকে সে বলল,’ আমি আপনাদের রান্নার লোক। ওইযে আরেকজন সাহেব, তিনি বইলা গ্যাছেন থাউকি বেলাতে আপনাকে চা দিবার জন্যে। সেইজন্যি……
আপনি এইহানে আর থাকবেন না সাহেব। ভিতরে চইলা আসেন। গায়ে বৃষ্টি লাগবার পারে। এহানের বৃষ্টির বড় তেজ। একবার লাগলে অসুখ না দিয়ে যাইব না।’
মেয়েটির একনাগাড়ে বলে চলা শুদ্ধ-অশুদ্ধ মেশানো অনর্গল কথাগুলো কেন যে আমার এত ভালো লাগল তা আমি বলতে পারব না। তবে আমি দ্বিতীয় বারের মতো একদম নিরবে তার কথা মেনে নিলাম। চলে এলাম ঘরে। মনে পড়ল দুপুরে রশু বলেছিল বিকেলে সে বাজারে যাবে। লেখায় ব্যাস্ত ছিলাম তাই অতশত খেয়াল করিনি তার কথাগুলো।
বাইরে তখন সত্যিই প্রকৃতি ঝড়ের পূর্বাভাস দিতে আরম্ভ করেছে। তারপর হঠাৎ নেমে এল ভীষণ আঁধার। আমি আবার সেই মানবীর ভাবনায় ফিরে গেলাম। তিনদিন ধরে এখানে আছি। রশু প্রথম দিনেই ঠিক করেছিল রান্নার লোক। তারমানে তিনদিন ধরে এই মেয়ের হাতের রান্নাই খাচ্ছি। রশুর কাছে শুনেছি এখানে বললেই নাকি রান্নার লোক পাওয়া যায়। গরীব পরিবার গুলো এখানে বেড়াতে আসা লোকেদের রান্না সহ নানান কাজ, টাকার বিনিময়ে করে থাকে৷ এতে তারা কিছুটা আর্থিক সাহায্য পায়।
এই মেয়েটিও কি তাদেরই কেউ? এখানে থাকতে আসা সবাইকে কি সে এভাবেই রান্না করে খাওয়ায়? এই কি তার পেশা? কিন্তু মেয়েটির আচরণ তো একদম নয় তথাকথিত গৃহকর্মীদের মতো! তার কথায় এক ধরনের অধিকার বোধ রয়েছে। কাজের লোকের অধিকার বোধ বলে কিছু কি হয়?
তারপরের দুদিন সব নিঝুম। সেই মেয়েটির কোন দেখা নেই। সে কোনো এক ফাঁকে এসে রেঁধে দিয়ে চলে যায়। এই দেখা না হওয়াটা আমার অস্থিরতার কারণ হল। কিসের জন্য অস্থিরতা সে আমি নিজেও জানি না।
পরের দিন বিকেলবেলা। আমি নিজের ঘরে লিখছি। অনেক চেষ্টার পর সেদিন কলমে লেখা এসেছে। হঠাৎ দরজায় ইতস্তত কড়া ঘাতে মুখ ফিরিয়ে তাকালাম। অবাক হয়ে দেখলাম আমার রহস্য মানবী দাঁড়িয়ে আছে জড়োসড়ো হয়ে। মাথায় তার ইয়া বড় ঘোমটা। মুখের খুব কম অংশই নজরে পরে। তার হাত চেপে ধরে পাশেই দাঁড়িয়ে আছে একটি ছ-সাত বছরের বাচ্চা ছেলে। মুখের আদল যতটুকু বুঝলাম রহস্য মানবীরই অনুরূপ।
তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমি তাদের ভেতরে আসতে বলার কথাও ভুলে গেলাম। আমার দিক থেকে কোন সাড়া না পেয়ে একসময় রহস্য মানবী সেখানে দাঁড়িয়ে নিজেই দ্বিধা ভরা ফিসফিস স্বরে বলল,’সালাম সাহেব। আ…আপনি আমার ভাইটারে একটু পড়াইবেন?’
সে কি সত্যিই সেদিন অনুরোধ করেছিল আমার কাছে? এমন কাতর, নির্মল স্বরে! আমি আর কখনো শুনিনি!
আমি তার বলার ধরণে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। উত্তর দিতে ভুলে গেলাম। রহস্য মানবী আমার মুখের বিস্ময়কে তার দুঃসাহসিক প্রস্তাবের কঠোর প্রত্যাখ্যান ভেবে সাফাই গাইল। ‘আ…….আমি আপনারে বলতে চাইনাই সাহেব। আসলে এইগ্রামে কেউ পড়ালেখা ঠিক জানে না তো। তাই রশু ভাইরে কইছিলাম যতদিন এহানে থাকে আমার ভাইটারে একটু পড়াইতে। কিন্তু……রশু ভাই খুব ব্যাস্ত লোক। সে-ই কইল ওরে নিয়া আপনার কাছে আসতে। থাক আমরা যাই। মার্জনা করবেন সাহেব।’
সে চলে যেতে লাগলো। আমি দ্রুত চেয়ার ছেড়ে উঠে তাদের পেছনে গেলাম। আমাকে দেখে ভাই-বোন দুজনে চলার গতি কমিয়ে পিছু ফিরল। রহস্য মানবীর চোখে বিস্ময়ের দৃষ্টি। সে বোধহয় তাদের ফেরানোর জন্য আমার হঠাৎ এই ব্যাকুলতা দেখে অবাক হয়েছে ভীষণ।
নিজের আকুলতা যথাসম্ভব ঢেকে আমি শান্ত গম্ভীর কণ্ঠে বললাম, ‘চলে যাচ্ছিলে কেন? আমি যেতে বলেছিলাম?’
-‘আপনার কাজের সময় আইসা অহেতুক বিরক্ত করতাসি ভাইবাই চইলা যাইতাছিলাম সাহেব। আবারও তার জন্য মাফি মাঙছি।’
প্রতুত্তরে মনে মনে আমি বললাম, ‘কাজ-কর্ম সব চুলোয় যাক। তুমি সারাদিন এসে আমার ঘরে বসে থাকলেও আমি বিরক্ত হবো না। বিশ্বাস না হলে এসে দেখো একবার ……….’
কিন্তু মুখে বললাম একেবারে উল্টো কথা। -‘বিরক্ত যখন করেই ফেলেছ তাহলে আবার ফিরে যাচ্ছিলে কেন? তবুও আবার আমার মতামত না জেনেই! কাল সকালে ওকে পাঠিয়ে দিও। নাম কি ওর?’
-‘বর্ষন।’
-‘আর তোমার?’
রহস্য মানবী চলে যেতে যেতে সহসা পেছন ফিরল। তার সুধাজড়ানো ফিসফিস কণ্ঠে বলল, ‘বর্ষা।’
চলবে……