একদিন নববর্ষা -৩০,৩১

0
136

একদিন নববর্ষা -৩০,৩১
অদ্রিজা আশয়ারী
৩০

দিনের প্রথম প্রহর। সমুদ্রের আকাশে ঝকঝকে নীল রোদ। নারকেল গাছের পাতায় পাতায় মাখানো ঝিকিমিকি রোদ্দুরের প্রলেপ। আজকের আবহাওয়া মনোরম সুন্দর। সামুদ্রি ঝড়ের মাতাল বৃষ্টি টা ধরে গেছিল শেষ রাত্তিরে। আকাশের কোনো পার্শ্বে তারপর আর ধূসর মেঘেদের দেখা পাওয়া যায়নি।

প্রভাতের প্রথম রোদ্দুরে গা ভাসিয়ে বর্ষা আনমনে বসে রয় ভিলার সম্মুখের পুলের পার্শ্বে। ওর মনে ভাবনা’রা অসম্বদ্ধ হয়ে ফিরে আসতে থাকে।

বর্ষা অনুভব করে, ওর জড় জীবনটা সমুদ্রে এসে অনেকখানি নড়েচড়ে উঠেছে। অচঞ্চল জীবনে জোয়ার কিংবা ভাটা যাহোক কিছু একটা গতিময়তা এসেছে। এখানে এসেই ওর বর্তমান জীবনের চরম এক সত্যের মুখোমুখি হয়েছে সে। কেন আর পাঁচটা সাধারণ মানব মানবীর মতো নয় ওদের বিবাহিত জীবন তার কারণ টা আজ পরিষ্কার।

সহসা কাল রাত্রির কথা স্মরণ হয় বর্ষার । তখনি, সঙ্গে সঙ্গে ক্ষানিক ভীত হয় সে। ওর জেদ যে অমন হালভাঙা জাহাজের ন্যায় দিকবিদিকশুন্য হয়ে ছুটতে পারে, কাল রাত্রির ব্যাপার টা আপতিত না হলে সেকথা কখনোই জানা হতো না ওর!

পুলের কুসুমিত জলে হাত ডোবায় বর্ষা। অনুশোচনায় দগ্ধ হতে থাকে ওর মন! ছোট বেলা থেকেই নিজের ব্যাপারে একটা বিষয় বরাবর খেয়াল করেছে সে। এবং সেই সঙ্গে ক্ষানিক ভীতিও এসে ভর করেছিল মনে। সেই ছেলে বেলা থেকেই, কখনো ওর রাগ হলে, জেদের বসে নিজের ক্ষতি করতে চাইত সে। খুব সাংঘা’তিক বাজে কিছু ঘটাতে মন চাইত। তবে অসংহত জেদটাকে সংবরণ করেই এসেছিল এতকাল। কখনো প্রতিক্রিয়া দেখায় নি। কখনো আপন রাগের উষ্মায় ভস্ম করেনি অন্যকে। কিন্তু কাল যে কি হলো! কেন এমন বেসামাল হয়ে পড়ল ওর অমর্ষিত মস্তিষ্ক টা! ভাবতে গিয়ে চোখের কোণে জল জমে বর্ষার। কালকের আগে কখনো তো ওর মন এত ভয়ানক ভাবে আহতও হয়নি! তাই বুঝি, অধোগামী আঘা’তের প্রথম তীরটা বুকে বিঁ’ধতেই অত লাগামছাড়া হয়ে পড়েছিল ওর ক্রোধটা গতকাল!

এই রাগের বশবর্তী হয়েই কাল কিছু কঠিন কথা শুনিয়েছে সে নাব্যকে। অথচ এমন ক্রোধ আর বিষাক্ত বাক্যবাণ তো বর্ষার আদত চরিত্র নয়। ওর দ্বীন তো কখনো ওকে এমন শিক্ষা দেয় নি। ভুল করে যে নিজের ভুল স্বীকার করে নেয়, তার জন্য তো নিশ্ছিদ্র ক্ষমার চাদর বিছিয়ে দিতে হয়। তাসত্ত্বেও বর্ষা কি অসঙ্গত বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে সেসময়! সন্দেহ নেই ভীষণ স্ববিরোধী কাজ করেছে সে। ভেবে নিজের কাছেই ভারি লজ্জিত আর অনুতপ্ত হয় বর্ষা। রাত্রিতে, ঝড়ের মুখে বেরিয়ে যাবার আগে নাব্যর করা আ’ঘাত টাকে তখন অল্পই মনে হয় নিজের অসংযত আচরণের তুলনায়।

হয়তো নাব্য সত্যি ছিল! ভালোবেসে ঠকেছে তো সে নিজেও। সেও নিশ্চয়ই তখন কম কষ্ট পায়নি! কিন্তু ওর ভালোবাসার পদ্ধতিতেই যে মস্ত ভুল ছিল। ভালোবাসা আদায়ের ভ্রান্ত পথ বেছে নিয়েছিল সে। তাই হয়তো শেষ পর্যন্ত ভালোবাসাটা আর অন্তিম গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে নি। মাঝ রাস্তায় ওকে ছেড়ে গেছিল। সেজন্য কি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া গুজার করা উচিত বর্ষার? বুঝেও যেন ঠিক বোঝে না সে। আজ যদি নাব্যর প্রথম প্রেম স্বার্থক হতো তবে কোনো কালহরণেই নাব্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ হতো না ওর। নাব্যকে সে পেতো না অর্ধাঙ্গ রূপে। নাব্য ঠকেছিল, হেরেছিল ভালোবাসার কাছে। তাই তো আজ তার স্ত্রী পুরনো বর্ষা নয়। হয়েছে সে নিজে!

অনুচ্চারিত স্বরে বর্ষা নিজেকেই শুধায়। আপন কর্মের জন্য নাব্য সত্যিই অনুতপ্ত তো? নাকি বর্ষার ক্রো’ধানল কে তৎসময়ের জন্য মাটিচা’পা দেবার অভিপ্রায়েই রাত্তিরে অমন গলে জল হয়ে গেছিল সে? যদি সত্যিই সবটা নাব্যর অভিনয় হয়ে থাকে? ওকে ক্ষণিকের বুঝ দেবার জন্যই, নাব্যর একটা চতুর চাল হয়ে থাকে মাত্র! তখন বর্ষা কি করবে! কিভাবে আরও একবার, আ’ঘাতের কালো ঢেউ এলে, সামলাবে সে নিজেকে?

কাল রাত্তিরে কোনো এক সময়, মুহুর্তের জন্য ওর সত্যিই মনে হয়েছিল নাব্য ওকে ভালবাসতে আরম্ভ করেছে। খুব শীগ্রই হয়তো মন আর মস্তিষ্ক থেকে পুরনো বর্ষার স্মৃতি উগড়ে ফেলে, সেই স্থানে ওকে ঠাই দেবে নাব্য। অথচ এখন, এই দিনের আলোয় সেই সময়ের চিন্তাটা ওর নিজের কাছেই কেমন হাস্যকর ঠেকছে!

কাল রাত্রির প্রথম প্রহরে, খামের ভাঁজে সন্ধান পাওয়া সেই মেয়েটির মুখ আচমকা ভেসে ওঠে বর্ষার মানসপটে। নিসন্দেহে মেয়েটি সুন্দরী! ক্ষুরধার আভিজাত্যের ছোঁয়া মেয়েটির মুখের প্রতিটি ভাঁজে। সেই মেয়েটিকেই তো এককালে ভালোবেসেছিল নাব্য! নাব্যর অস্তিত্ব থেকে এখনো হারিয়ে যায়নি সেই অমীমাংসিত ভালোবাসার রেশ। নাব্যর সবটা জুড়ে এখনো ওই মেয়েটির স্মৃতিগন্ধ উর্ণাজালের মতো ছেঁয়ে আছে।

নাব্যকে পেতে হলে কি তবে ওই মেয়েটির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে বর্ষার? কিন্তু তাহলে তো শুরুতেই গো-হারান হেরে বসে আছে সে! নাব্যর প্রাত্তন প্রেমিকা, বর্ষা নামের সেই মেয়েটির সঙ্গে এই নবীনতম বর্ষার তুলনাই যে দেয়া চলে না কখনো! সেই মেয়ের রূপ অগ্নিশিখার মতো অনুক্ষণ জ্বলজ্বলে।
অথচ ছলাকলা হীন, প্রাচীনপন্থী এই বর্ষার রূপে সে আগুন ধরানো তেজ নেই! নেই কোনো ঐকান্তিক আভার বিশেষণ!

বর্ষা প্রবল একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছুড়ে ফেলে পুলের শান্ত সলিলে। এই ভেবে যে, এখনো দিবাস্বপ্ন বিভোর হয়ে আছে সে। আদতে ওর কোনো যোগ্যতাই নেই নাব্যর পাশে দাঁড়ানোর। নাব্য চাইলেই ওকে মুহুর্তে আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলতে পারে। কিছুই করার থাকবে না ওর। নিজের সামান্যতম পারকতা নিয়ে কোন প্রাবল্যের বলে ল’ড়বে সে নাব্যর সঙ্গে? নাব্য যদি এখন ওকে অস্বীকার করে তাহলে নিরবে পথ ছেড়ে সরে দাঁড়ানো ছাড়া আর কিছু করার থাকবে কি বর্ষার? ভেবে সঙ্গে সঙ্গে মনের আনাচে-কানাচে বিষাদ রঙের মেঘেতে ছেঁয়ে যায় বর্ষার।
বর্ষা আবারও ভাবতে চেষ্টা করে , এই অকরুণ জড়ভূমে কেন এতো অসহায় সে? কেন এত বিশেষ ভাবে নিঃসঙ্গ ওর গোটা জীবন?
সঙ্গে সঙ্গে অদৃশ্য কণ্ঠে উত্তর আসে, ‘ জীবন তরীতে যে যত বেশি একা, রব হয় তারই তত বেশি আপন।’
অজান্তেই বর্ষার গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে টুপটাপ।

পেছনে দরজায় তখনি একবার খট করে শব্দ ওঠে। দু’হাতে দুকাপ গরম ধোঁয়া ওঠা কফি নিয়ে ফিরে আসে নাব্য। সে বেশ ভালো কফি বানায়।
বর্ষার মতো পুলের পাশে না বসে, পেছনে রোদ্দুরে পাতা সানবেডে বসে সে। বর্ষা পূর্বেকার ন্যায় স্তিমিত হয়ে বসে রয়। ওর অমন নিস্পন্দ আচরণ আড়চোখে লক্ষ্য করে নাব্য জিজ্ঞেস করে,
–‘ কি হয়েছে? পায়ের ব্যাথাটা কি ফের বেড়েছে? কই দেখি।’ বলে সে বর্ষার ব্যা’ন্ডেজ বাঁধা পায়ের দিকে তাকায়।
নাব্যর দিকে পেছন ফিরে বসায়, বর্ষার মুখখানা অগোচরেই রয়ে যায় ওর। উত্তর না দিয়ে, চোখের অবাধ্য জল বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা সন্তর্পণে মুছে ফেলে বর্ষা স্রেফ মাথা নাড়ে দুপাশে।

-‘ এদিকে উঠে এসো। কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো!’

দ্বিতীয় বার নাব্যর গলার স্বর কর্ণগোচর হতেই বর্ষার মনে হয় এই স্বর রাতের সেই সহজ, আড়ম্বরপূর্ণ স্বর নয়। এর কোথায় যেন একটা অনুষ্ণ ভাব বিরাজমান। বর্ষা বোঝে, অকারণে কাঁদছে সে। এই চোখের জলের কোনো মূল্য নেই ওর বিশিষ্ট লেখক স্বামী নাব্য ইমতিহানের কাছে!

পুলের পার্শ্ব ছেড়ে উঠে নাব্যর পাশাপাশি সানবেডে গিয়ে সে বসে। কফিতে চুমুক দিয়ে, ওর দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থেকে ভ্রুকুটি করে হঠাৎ শুধায় নাব্য,
-‘ কাঁদছিলে কেন? ফের কি হলো? ‘
বর্ষার উত্তর দিতে বিলম্ব হচ্ছে দেখে নাব্য সহসা ওর হাত ধরে। সেই স্পর্শ রিরংসার নাকি ভালোবাসার ঠিক বুঝে উঠতে পারে না বর্ষা। চোখের কার্নিশে ফের জল জমতে শুরু করেছে। এবার নিজের ওপরই বিরক্তি আসে ওর। কোনো কালে এমন ছিঁচকাদুনে মেয়ে তো সে ছিলনা! অথচ আজকাল কথায় কথায় এত কান্না পায়..

-‘সত্যিই বলবে নাকি….’

বর্ষা বোঝে আর লুকোনোর পথ খোলা নেই। কান্নায় বসে যাওয়া গলায় বলে,
-‘ কাল রাতের বাজে ব্যাবহারের জন্য আমি দুঃখীত। আমাকে ক্ষমা করুন। ‘

-‘ এটুকুই! এই সামান্য ব্যাপারের জন্য কাঁদছিলে?
তাহলে আমিও ভীষণ দুঃখীত। ক্ষমাপ্রার্থী তোমার গালে দীর্ঘস্থায়ী এই পাঁচ আঙ্গুলের ছাপ বসানোর জন্য।
অ্যাই অ্যাম রিয়েলি ভেরি সরি!’
বলে কফির কাপ নামিয়ে রেখে বর্ষাকে হঠাৎ আলিঙ্গনবদ্ধ করে নাব্য। ফেনীল জলরাশীতে দৃষ্টি স্থির রেখে চাপা স্বরে বলে,
-‘আজ সমুদ্র ছেড়ে চলে যাচ্ছি আমরা। বিকেলের ফ্লাইটেই।’

চলবে……..

একদিন নববর্ষা -৩১
অদ্রিজা আশয়ারী
_____________
কখনো কখনো সবটা অলীক মনে হয় বর্ষার কাছে। এইযে হঠাৎ জাগ্রত হওয়া নাব্যর এই প্রেমান্ধতা। কবোষ্ণ আচরণ ওর প্রতি। এসব যেন সত্যি নয়। তাই অনুরাগের আসঞ্জনে প্রতিবার আরও বেশি ভীত হয় বর্ষা। এক অপরিচিত বিরাগের সুর আতঙ্কের রূপ নিয়ে অনুক্ষণ ওর মনে খচখচ করতে থাকে। নাব্যকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে ওর ভয় হয়! অথচ নাব্যর আচরণ এমন যে, একে মেকি ভাবতেও বর্ষার বাঁধে। এই বিশ্বাস-অবিশ্বাসের বেড়াজালে আটকে অহোরাত্র গোপনে জ্ব’লেপুড়ে খাক হয় আজকাল ওর দ্বিধাগ্রস্ত মন।

কালরাতে ওরা ফিরেছে কক্সবাজার থেকে। পড়াশোনায় নিতিন ব্যাস্ত ছিল বলে রাতে বর্ষার সঙ্গে দেখা হয়নি ওর। সকালে দাদির ঘরে প্রথম দেখা হলো। বর্ষাকে দেখেই নিতিন দৌড়ে কাছে এসে একটা অভাবনীয় কান্ড করল। পালঙ্কে দাদির মুখোমুখি বসে থাকা বর্ষাকে অতর্কিতে জড়িয়ে ধরে সশব্দে চুমু খেল। নিতিনের মন বোঝা দায়। কিছুকাল আগে পর্যন্ত বর্ষাকে নিজের দাভাইয়ের স্ত্রী হিসেবে মানতেই নারাজ ছিল। অথচ বর্ষার অনুপস্থিতিতে এ-কদিন রীতিমতো হাসফাস করেছে সে । বলতে নেই, সেই প্রথম দেখাতেই বর্ষাকে ভালো লেগে গেছিল ওর। অনেকটা আপন মানুষ মনে হয়েছিল শুরুতেই।

নিতিন তিড়িংতিড়িং থামিয়ে ধপ করে বর্ষার পাশে বসে পড়ল। রিনরিনে স্বরে কথার ঝংকার তুলে বলল ,
–” উফফ ভাবি! অবশেষে তুমি ফিরলে। এই কদিন ভীষণ ভীষণ মিস করেছি তোমায় আমি। এক বাক্স কথা জমিয়েছি তোমাকে বলার জন্য।
দাদি, তুমি থাকো। আমি নিয়ে চললাম তোমার নাতবউ কে। বায় বায়….
এসো ভাবি। আমার ঘরে চলো।’ বলে দু’হাতে টেনে নিজের ঘরে নিয়ে চলল সে বর্ষাকে।
বর্ষা বিহ্বল হয়ে ওর পেছন পেছন গেল।

নিতিনের ঘরটা রুপকথার মতো। সাদা-গোলাপি রঙে রাঙানো প্রতিটি আসবাব, বেডশিট, পর্দা, চারপাশের দেয়াল। লাগোয়া বারান্দায় সাদা রঙের দোলনা। যেখানে সবুজ লতা জরানো। এঘরে এলে বর্ষার মনে পড়ে যায় নিজের ছোট কালের অপূরণ শখের কথা…। এককালে ওর ও খুব শখ ছিল এমনি একটি বসতঘরের। ধবধবে সাদা রঙে রাঙানো হবে যার দেয়াল, বিছানা, আসবাব……. সবকিছু।

নিতিন ওকে নিয়ে বসালো বারান্দার সাদা দোলনায়। কথার ফুলঝুরি খুলে বসল সে। সব কথার মাঝে একটা কথাই বর্ষার মনোযোগ কাড়ল। নিতিন ঘুরেফিরে বারবার একটি ছেলের প্রসঙ্গে ফিরে আসছে। যদিও তেমন বিশেষ কিছু নয়। স্কুল শেষে বেরিয়ে গোগ্রা’সে ওরা বন্ধুরা যখন ফুচকা গ’লঃকরণ করে। তখন রোজ রোজ দাঁড়িয়ে হা করে একটি ছেলে ওদের ফুচকা গেলা দেখে! অমন ড্যাপ ড্যাপ, বোকা বোকা চাহনি নিতিন আর কখনো দেখেনি।
বর্ষা মুচকি হেসে শুধালো,
–‘ হা করে কি সবার খাওয়াই দেখে। নাকি শুধু তোমার টা?’
নিতিনের মুখে ঈষৎ র’ক্ত ছলকে উঠল।
–‘ আমাকে একা কেন দেখবে? কিজানি! অতশত খেয়াল করিনি আমি। ‘

বর্ষা চোখ বাঁকিয়ে নিতিনের মুখে তাকায়। গলার স্বরে ঝরে পড়ে আন্তরিক হাসি,
–‘ বেচারাকেই বা দোষ দিই কিভাবে বলো! এমন খরশাণ সুন্দর মুখ খানি মুফতে দেখার সুযোগ মিললে কেউ কি আর ছাড়ে?
কি ভালো হতো যদি তুমি সৌন্দর্যটুকু আচ্ছাদনে আড়াল করে রাখতে! ‘

নিতিন হাসল।
–‘ তাই হবে। আচ্ছাদনেই আড়াল করে রাখবো। কিন্তু এখনি না। এখনো তো আমি বেশ ছোট। তত বড় হইনি। আরও কিছুদিন যাক…।
তাছাড়া আম্মাকে জানো তো? আমি বোরকা পড়লে আম্মা কিরকম বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন ধারনা আছে তোমার?’

শাশুড়ী মায়ের কথা ভেবে খারাপ লাগলেও নিতিনের কথাটা ওর সত্যি মনে ধরল। সমাজের উচ্চ শ্রেণির মাঝে শৈশব, কৈশোর কাটানো নিতিন যে এতো অনায়াসে বোরকার মতো আচ্ছাদনকে স্বীকার করে নিয়ে এবং বিলম্বে হলেও নিজের জন্য সেই আচ্ছাদন কে বেছে নেয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছে সেই বা কম কি!

বর্ষা আদুরে গলায় ওর নাক টেনে দিয়ে বলল,
-‘ তাড়াতাড়ি বড় হও নিতিন পাখি। তোমাকে শশুড়ালয়ে পাঠিয়ে দিয়ে বাড়ি খালি করি।’
তারপর হঠাৎ মনে পড়েছে এমন স্বরে বলল, -‘আচ্ছা, এতদিন সালাত পড়ে পড়ে বাবার জন্য দোয়া করেছিলে তো নিয়মিত?’
নিতিন স্বগর্বে মাথা দোলালো।
বর্ষার উৎসুক হয়ে বলল,
-‘মনের অস্থিরতা কমেছে না?’
বাবার কথা উঠতেই নিতিনের চোখ টলমল করতে লাগল।
-‘ সত্যিই কমেছে ভাবি। তোমাকে থ্যাংকস। এত সুন্দর পথ বলে দেবার জন্য। এখন আর বাবার কথা ভেবে কষ্ট হয়না আমার। মন খারাপ হলেই সঙ্গে সঙ্গে দো’আ করি।’
কথা শেষ করে দু’হাতে চোখ মুছে নিতিন হেসে ফেলল।

প্রসঙ্গ পালটে মাথা নাড়িয়ে বলল
-‘ওসব কথা রাখো। আমাকে এখন বলো সমুদ্রে তোমাদের মধুচন্দ্রিমা কেমন কাটলো? ‘
এরপর সমুদ্রে যাওয়া নিয়ে সহস্র প্রশ্ন ছুড়ে বর্ষাকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলল সে। বলার মতো গল্প যে খুব বেশি তৈরিই হয়নি নিতিন কে সেকথা বোঝানো দায়। নিতিন গল্প শুনতে আগ্রহী। সমুদ্রের তীরে কাটানো সময়ের বিবরণ জানতে আগ্রহী। কিন্তু বর্ষার কাছে বলার মতো খুব বেশি কথা নেই। সমুদ্রের কথা উঠতেই ঘুরেফিরে ওই একটি সন্ধ্যের স্মৃতিই ওর মনে বারংবার ফিরে আসে। ভেতরে ভেতরে কেমন অসুস্থ অনুভব করে সে। প্রতিবার এমন হয়। নাব্যর প্রাত্তন প্রেমিকা মেয়েটির কথা মনে পড়লেই নিজেকে অসুস্থ লাগে ওর।

সহসা বর্ষার মুখের এই লক্ষণীয় পরিবর্তন খেয়াল করে নিতিন চুপসে গেল। এবং সঙ্গে সঙ্গে খেয়াল হলো ওর দাভাই আর বর্ষার মাঝে তৃতীয় সেই একজনের উপস্থিতির কথা। যে না থেকেও সবটা জুড়ে আছে। কিন্তু এখনো কি ওরা সেই দ্বিধা কাটিয়ে উঠতে পারে নি? দাভাইয়ের মনে এতো পোক্ত আসন গে’ড়ে বসে আসে সেই ছলনাময়ী মেয়েটি!

___________________________

সকাল সকাল রান্নাঘরে পেয়াজ, মরিচের সাথে শুটকি তাওয়ায় সেঁকে সেগুলো ভর্তার আয়োজন করছে বর্ষা। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে সেসবের মিশেল ঝাঁঝালো গন্ধ। নিতিনের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে সোজা রান্নাঘরে ছুটে এসেছে। এ বাড়িতে বধূ বেশে পা রাখার পর থেকে ওর প্রিয় খাবার গুলোর আর মুখ দেখা হয়নি।
এবাড়িতে কেউ কোনো কালে শুটকির নাম শুনেছে কিনা সন্দেহ৷ খাবার নিয়ে এদের বিশেষ নখড়া আছে। সকালে ব্রেড, বাটার, সেদ্ধ ডিম আর জুস। দুপুরে অল্প একটু ভাত আর রাতে রুটি।
বর্ষা রীতিমতো হাপিয়ে উঠেছে। এসব ছাইপাঁশ খেতে খেতে। বাবার বাড়িতে রোজ সকালে রাতের ঠান্ডা ভাত আর কোনো একটা ভর্তা কিংবা বাসি তরকারিতে দিন শুরু হতো ওর। সেসব খাবারের স্বাদই যেন মুখে লেগে আছে এখনো।
বর্ষা বিরক্ত হয়ে ভাবে। এতো টাকা দিয়ে কি হবে যদি দুবেলা একটু মনের মতো খাবার খেয়ে সুখ না পাওয়া যায়! তবে এবার আর কোনো চান্স নয়। কক্সবাজার থেকে শুটকি নিয়েই এসেছে সে।

ভর্তা বানিয়ে চুলা থেকে সদ্য রান্না করা গরম ভাত নামাতে যেতেই গালে আরও একবার সশব্দ চুমু পড়ায় এবার প্রায় থমকে গেল বর্ষা। নিতিন মেয়েটাকে বোধহয় পাগলে পেয়েছে আজ। ভেবে পেছন ঘুরতেই অস্ফুট চিৎকার বেরিয়ে এল ওর মুখ দিয়ে। বর্ষা বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইল সামনে। ওর দুপাশে কিচেন কেবিনেটে দু’হাত রেখে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছে নাব্য। বর্ষা মনে মনে ভাবল চুমুটা কি কংক্রিট সাহেব-ই দিয়েছে? ভাইবোনের হলো কি আজ! সকাল থেকেই দুজনে ওকে চুমুর ওপর রাখছে!

-‘কি হলো? ‘ নাব্য নির্বিকার স্বরে বলল।
-‘ কিছু না। আ..আপনি এখানে এসেছেন কেন? কিছু দরকার হলে আমাকে বলতেন। আমিই নিয়ে যেতাম। ‘
নাব্য ভেবে বলল
-‘তুমি পারবে না। কফি লাগবে। আমার কফি আমি নিজে তৈরি করতেই সাচ্ছন্দ্য বোধ করি।’
নাব্য হঠাৎ চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল।
-‘ একটা উৎকট স্মেল আসছে। এটা কিসের?’

বর্ষা ঢোক গিলে আমতাআমতা করে বলল,
-‘ কি…কিসের আবার! খাবারের গন্ধ।’
-‘কি খাবার?’
-‘আপনি চিনবেন না। চুলা খালি আছে। দাঁড়ান আমি কফির জন্য পানি বসাচ্ছি।’
নাব্য তখনো দু’দিকে দুহাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝে আটকে পড়ে বর্ষা মনে মনে বলল,
-“আরে ভাই সরেন না! এমনিতেই আমার শুটকি ভর্তা খাওয়ার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। এখন না সরলে আমি চুলায় পানি বসাবো কি করে?’

নাব্য জায়গা ছেড়ে না সরে ভ্রুকুটি করে বলল,
-‘ কি খাবার বললে না তো?’
-‘শুটকি।’
-‘ ইউ মেইড ইট?’
বর্ষা পানসে মুখে বলল,
-‘হ্যাঁ।’
-‘আমিও খাব!’
-‘কি! ‘ বর্ষার চোখ বড় বড় হয়ে গেল।
-‘ না না। আপনি এসব খেতে পারবেন না। অনেক কাটা আছে। আপনি তো মাছ ই খান না কাটার জন্য। কক্সবাজারে গিয়ে চিংড়ি ছাড়া কোনো মাছ ই খেলেন না।’

-‘কে বলেছে খাইনা? খাই, তবে নিজে কাটা সরিয়ে খেতে পারিনা। তাই আম্মা খাইয়ে দেয়।’

-‘ আম্মার তো প্রেসার বেড়ে গেছে। ঘরে শুয়ে আছেন। তাহলে আর কিভাবে খাবেন? আজ বরং থাক। আপনি কফি নিয়ে চলে যান।’

-‘তুমি খাইয়ে দেবে। নিতিনও কাটা সরিয়ে খেতে পারে না। তাই ওর ও খুব একটা মাছ খাওয়া পড়েনা। ওয়েট, নিতিনকেও ডাকছি। তুমি আমাদের শুটকি দিয়ে ভাত খাইয়ে দাও।’

নাব্যর কথা শুনে বর্ষার রীতিমতো ভিমড়ি খাওয়ার যোগার। একে সামলাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে এর মাঝে আবার অন্যটিকেও ডাকা চাই। পাগল আর কাকে বলে!

বর্ষা বলল,
-‘আপনি বুঝতে পারছেন না। শুটকি একদমই ভালো খাবার নয়। কাটা ভর্তি, বাজে গন্ধ। নিতিন খেতে পারবে না। ‘

-‘আচ্ছা নিতিন থাকুক। তুমি আমাকে খাইয়ে দাও। খেতে ভালো হলে তারপর নিতিন কে ডাকব। ‘ বলে নাব্য সরে দাঁড়াল।

কিছু বলা অর্থহীন বুঝে বর্ষা বিরস মুখে ভাত মাখাতে মাখাতে মনে মনে ভাবল কি চরম ভুলই না সে করেছে সকাল সকাল এই ভর্তা খাবার আয়োজন করে। এরচেয়ে শুটকি গুলো বাক্সবন্দি করে বাপের বাড়ি নিয়ে গিয়ে খেলে কতো ভালো হতো। অন্তত এই উটকো ঝামেলা থেকে রেহাই পাওয়া যেত!

____________________________

বর্ষার পেলব মৃদু মনখানি আজকাল হাওয়ায় ওড়ে সারাক্ষণ। মাটির ছোঁয়া পায় না যেন পা দুটো। নাব্যর মনে ওর জন্য ক্ষানিকটা স্থান আছে। এই অবিশ্বাস্য কথাটা কোনোমতেই বিশ্বাস হতে চায়না ওর! নাব্যময় দিনগুলো কি ভীষণ সুন্দর আর সর্বক্ষণ বিশেষ! এই বিশেষ সুন্দর দিন গুলিকে শার্সির ভেতর কোনো এক অজানা গোপন প্রকোষ্ঠে বন্দি করে রাখতে মন চায় বর্ষার। যেন হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়।
নাব্য যখন হাসে, তীক্ষ্ণ চোখে তাকায়। তখন ওর করা যাবতীয় অন্যায় ফিকে মনে হয় বর্ষার কাছে। অবিচার গুলো চোখে ধূসর হয়ে আসে। বর্ষা চোখের পাতায় নাব্যর জন্য ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু দেখতে পায় না, চাইলেও স্থান দিতে পারে না বিষাদকে। থেকে থেকে মনে হয় নাব্য যদি আর কখনো বিরাগ হয় ওর প্রতি, তবে হয়তো এবার সে সত্যিই মরে যাবে।

বর্ষা ভাবে। ধীরে ধীরে বোধহয় সত্যি নাব্য হয়ে উঠছে ওর মনের মতো ভালো মানুষ! সে এখন নিয়মিত সালাত পড়ে। কখনো কখনো বর্ষার আগে সে-ই উঠে ডেকে দেয় ফজরের সালাতের জন্য। বর্ষা একদিন আন্তরিক হেসে নাব্যকে বোঝালো,
-‘কারো অতীত মনে রেখে প্রতিনিয়ত সেই অতীত অপরাধের জন্য মর্মাঘাতে পিষ্ট করা আমাদের দ্বীন নয়। আপনার যা কিছু অতীত সেসব এখন মৃত।
বর্ষাকে হারাম পন্থায় ভালোবেসে ছিলেন। আল্লাহর অনেক বড় অবাধ্যতা ছিল সেটা। কিন্তু আল্লাহ তো গফুরুর রহিম। সবচেয়ে দয়াবান এবং ক্ষমাশীল। তাই পুরোনো ভুলের জন্য রবের কাছে ক্ষমা চান। তিনি নিশ্চয়ই ক্ষমা করে দেবেন।’
নাব্য সেদিন নিরবে মাথা নেড়ে মেনে নিয়েছিল বর্ষার কথা।

এক সন্ধ্যায় ব্যাগে নাব্যর কাপড়চোপড় গোছগাছ করছিল বর্ষা। রাতেই নাব্য বেরোবে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য। ব্যাবসায়ীক কাজে পুরো বিশ দিনের জন্য চট্টগ্রাম যাচ্ছে সে। ইত্যবসরে সমুদ্র ছেড়ে আসার মাস-দুই পেড়িয়েছে।
ওদের ঘরের চেহারায় ক্ষানিক অদলবদল ঘটেছে এরই মধ্যে। ঘরের এককোণে সযত্নে সাজিয়ে রাখা গিটার টা অদৃশ্য। সাউন্ড বক্স গুলোও নেই। সেসব নাব্য ঘর থেকে সরিয়ে ফেলেছে বর্ষার কথায়। আগে নাব্যর ঘরে গাঢ় রঙ্গের প্রাধান্য ছিল বেশি। এখন বেশিরভাগ জিনিস সাদায় মোড়ানো। বেডশিট, পর্দা, দেয়াল। বর্ষা এবার নতুন মিশনে নেমেছে। নাব্যর সিগারেট ছাড়ানোর মিশন। এই কাজটাই সবচেয়ে কঠিন। নাব্য কিছুতেই রাজি নয় সিগারেট ছাড়তে।

-‘সবকিছু ঠিকঠাক গুছিয়েছো তো?’ বাথরুম থেকে বেরিয়ে আরশিতে চুল ঠিক করতে করতে নাব্য জিজ্ঞেস করল।

বর্ষা ম্লান মুখে তাকাল ওর পাণে।
-‘হ্যাঁ শেষ। আপনি কি এখনি বেরোচ্ছেন?’
-‘হু।’
-‘কবে ফিরবেন?’
-‘বললাম তো কাজ শেষ হলেই। পনেরো বিশ দিন লাগবে। কেন তুমি থাকবে পারবে না একা? এতো বার করে বললাম সাভার থেকে ঘুরে এসো। সে কথাও তো শুনলে না।’
বর্ষা ঈষৎ হাসল।
-‘যাবো। আপনি যান। এর মধ্যে একসময় গিয়ে বেরিয়ে আসবো আমি।’
আরশি ছেড়ে সহসা বর্ষার নিকটে এসে দাঁড়াল নাব্য। গোছানো ব্যাগপত্র বিছানা থেকে নামিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে দুজনের মাঝখানের দূরত্ব ঘোচালো বর্ষা। এবং ওর স্বভাবসুলভ কাজ টা করল। সদ্য পরিপাটি করে আঁচড়ানো নাব্যর কাঁধ ছুই ছুই চুলগুলো হাত দিয়ে এলোমেলো করে দিল। নাব্যর মুখে একটু বিরক্তির আভা ফুটল। ভ্রুকুটি করল সে।
-‘মাত্র ব্রাশ করেছিলাম। এটা কি করলে?’
বর্ষা স্ব দর্পে হেসে বলল
-‘বেশ করেছি। পারলে চুলগুলো কেটে নিজের কাছে রেখে তারপর পাঠাতাম আপনাকে। কিন্তু সেটা তো হতে দেবেন না আপনি।’
-‘ আলবাত না! যখন তখন আমার চুলে হাত দিচ্ছ। অথচ এই বারাবারি মুখ বুজে সহ্য করছি সেইতো ঢের! নইলে কেউ কখনো আমার চুলে হাত দিক সেটা পছন্দ করি না আমি। এমনকি আম্মা ধরলেও না!’
-‘ আমি চুলে হাত দিলেও বুঝি খুব বিরক্ত হন আপনি?’
-‘সেকথা বলেছি কখনো? ‘
-‘না বললেও ঠিক বোঝা যায়! ‘
-‘তাহলে বলব তোমার বোঝাতেই ভুল আছে। শোনো বর্ষা…’
বলে বর্ষাকে দু’হাতের বেষ্টনে আবদ্ধ করে নিল নাব্য।
-‘ যেখানে যাচ্ছি। ওখানে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না সবসময়। কখনো যোগাযোগ বিচ্ছিন হলে বেশি ভেবো না যেন।’
কিছুক্ষণ একদৃষ্টে ওর দিকে তাকিয়ে রইল বর্ষা। পুরুষোচিত সৌন্দর্যের অবাধ্য স্ফুরণ নাব্যর মুখের ভাজে ভাজে। নিজের এই মাত্রাছাড়া রূপবান বরটাকে বিনামূল্যে দেখার সুযোগ মেলে শতশত মেয়ের..। ভাবতেই বর্ষার হিংসে লাগে খুব। বিষন্নভার মাথাটা আলতো করে নাব্যর বুকে নামিয়ে রেখে মন খারাপের সুরে বর্ষা বলল,
-‘ভাববো না। আপনি আমাকে ভুলে যাবেন না তো?’
-‘তাই আবার হয় নাকি?’
-‘কে জানে! আমার ভয় হয়…’

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here