এক্কা_দোক্কা – ১২,১৩

0
748

#এক্কা_দোক্কা – ১২,১৩
আভা ইসলাম রাত্রি
পার্ট-১২

“আজ বাংলাদেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ‘ইজহার জুভান মির্জা’ এর বৌভাত! বিয়েটা বেশ অনাড়ম্বরপূর্ণ হলেও বৌভাতের জাকজমকপূর্ণ এ অনুষ্ঠানে আজ সবার সঙ্গে মির্জা তার স্ত্রীকে পরিচয় করিয়েছেন। তার স্ত্রী ঐশী খন্দকার একজন আইনের স্টুডেন্ট। সম্পূর্ণ দেশবাসী এই সুখী দম্পত্তির প্রতি অঢেল ভালোবাসা জ্ঞাপন করছে! ”

আজকের টিভি নিউজ চ্যানেলের হেডলাইন মূলত জুভান ঐশীর এই বিয়ের রটনা। জুভানের বৌভাতের অনুষ্ঠান টিভিতে লাইভ দেখানো হচ্ছে। জুভানের সব ভক্তরা উৎসুক চোখে বসে আছে টিভির সামনে। অনেকেই জুভানের এই বিয়েতে খুশি হলেও কজন বেশ অসন্তুষ্ট জ্ঞাপন করেছেন। জুভানের এখন উঠতি ক্যারিয়ার। এখনি এই বিয়ে নামক স্ক্যান্ডাল না করলেই কি চলছিল না? তবে সবার মনরক্ষা করে চলা এ ভুবনে কার সাধ্য!

বৌভাতের অনুষ্ঠানে জুভানের নিজের গাওয়া বেশ সফট গান চলছে। ঐশী ও জুভান স্টেজে দাড়িয়ে অতিথিদের সাথে কথা বলছে। কথা বলার ফাঁকে ঐশী জুভানের দিকে মুখ এগিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
-” আপনার এই গানটা বেশ সুন্দর। লিরিক্সটাও ভালো লাগছে। ”
জুভান কিঞ্চিৎ হাসল। সেও ঐশীর মত নিভুনিভু কণ্ঠে বলল,
-” আর গানের গলা? সেটা কেমন? ”
ঐশী চোখ বেঁটে নিল। বললো,
-” নিজের প্রশংসা শুনতে চাইছেন? ”
-” বলতে গেলে তাই। ”
-” তাহলে উত্তরটা আমি দিচ্ছি না। ”
-” কেনো? ”
-” কারো সামনে তার নিজের প্রশংসা করা উচিৎ না। এতে সেই মানুষের মনে অহং এর সৃষ্টি হয়। আর আমি চাইনা আপনার মধ্যে নিজের গলা নিয়ে কোনোরূপ অহং তৈরি হোক। ”
-” হোয়াট? বাট হোয়াই? ”
-” তাহলে আপনার মধ্যে থাকা শ্রেষ্টত্ব হারিয়ে যাবে। আর আপনার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে সেটা আমি কি করে হতে দেই? ”
-” ইউ আর জাস্ট অনবিলিভেবল, ঐশী। ”
জুভান মুখ ফুলিয়ে শ্বাস নিল। ঐশী জুভানের এমন হাল ছাড়া দেখে মুখ টিপে হেসে ফেলল।

-” হাই, অ্যাই অ্যাম রিয়াদ! রিয়াদ তালুকদার। ”
কাঙ্খিত নামটা শুনে ঐশী তীক্ষ্ম চোখে লোকটার দিকে তাকালো। বেশ লম্বা চওড়া এক বিশাল দেহী পুরুষ। মুখে অহংকারের স্পষ্ট ছাপ। জুভান রিয়াদ নামের লোকটার সাথে হ্যান্ডশেক করলো। ভদ্রতাস্বরূপ লোকের হালচাল জিজ্ঞেস করল। জুভানের সাথে কথা বলা শেষ করে রিয়াদ ঐশীর দিকে তাকাল। ঐশী মুখে হাসি টানলো। রিয়াদ ঐশীর জিজ্ঞেস করল,
-” ঐশী, রাইট? ”
ঐশী কণ্ঠে তীক্ষ্মতা ঢেলে বললো,
-” উহু! ঐশী খন্দকার। ”
ঐশীর কণ্ঠে ত্যাড়া উত্তর শুনে রিয়াদ খানিকটা দমে গেল।
-” সে যাই হোক! কেমন আছো? নতুন জীবনের জন্যে শুভেচ্ছা! ”
ঐশী ঠোঁট টেনে হেসে বললো,
-” ধন্যবাদ। ”
রিয়াদ এবার জুভনের দিকে তাকাল। নিজের পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে জুভানের দিকে এগিয়ে দিল। বললো,
-” হেয়ার ইজ ম্যাই কার্ড। কল মি হোয়েন ইউ নিড। আই অ্যাম অলওয়েজ দেয়ার ফর ইউ বাডি। ”
জুভান কার্ড হাতে নিল। মৃদু হেসে বললো,
-” ম্যাই প্লেজার। ”
জুভান কার্ডটা পকেটে ঢোকানোর আগে ঐশী চোরাচোখে একবার দেখে নিল কার্ডটা। কার্ডে রিয়াদের মোবাইল নাম্বার লেখা আছে। ঐশী নাম্বারটা চটপট মুখস্ত করে নিল। ছোটবেলা থেকে তুখোড় মেধাসম্পন্ন মেয়ে হওয়ায় নাম্বার মুখস্ত করতে একটুও বেগ পেতে হলো না তার।

জুভান-ঐশীর থেকে খানিকটা দূরে বার সেশনে বসে আছে অনল। অনল কখনোই অ্যালকোহল স্পর্শ করে না। জুভান যখন এসব খেত তখন মাঝেমধ্যে তাল মেলানোর জন্য একটু আকটু নেশা করত। জুভান রেগুলার এসব খায় তাই তার মস্তিষ্ক মাতাল হয়না। কিন্তু অনলের এসবে অভ্যাস নেই। তাই যখনই সে এসব ছাইপাঁশ খায় তার মাথা নষ্ট হয়ে যায়। তখন অনলকে সামলানো বেশ মুশকিল হয়ে যায়। আজ জুভান-ঐশীকে একত্রে দেখে অনল রাগে রীতিমত ফুলে ফেঁপে উঠছে। বৌভাতের সবকিছু তছনছ করে দিতে মন চাইছে। সে এই অনুষ্ঠানে আসতে চায়নি। কিন্তু জুভানের অনেক রিকোয়েস্টের পর আসতে বাধ্য হয়েছে। অনল একহাতে ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে আগুণচোখে জুভান-ঐশীর পানে চেয়ে আছে। জুভান যখন ঐশীর কানে কিছু একটা বলছিল, অনলের তা একটুও সহ্য হয়নি। তার মাথাটা টগবগ করে জ্বলছে! সে ভয়ানক ক্রোধে চেপে ধরে হাতে থাকা কাঁচের গ্লাসটা। তার শক্ত হাতের স্পর্শে কাঁচের গ্লাস একটু পরই তার হাতেই শব্দ করে ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। কাঁচের টুকরো অংশ হাতে বিঁধে যেতেই অনলের হুশ এলো। সে ভাঙ্গা গ্লাসটা টেবিলে রেখে নিজের রক্তেমাখা হাত চেপে ধরলো। তার হাত বেয়ে রক্তের ফোয়ারা গড়াচ্ছে। সাদা শার্টের হাতা তাজা রক্তে লাল দাগ পড়ে গেছে। অনল এক হাত চেপে আবারও জুভান-ঐশীর দিকে তাকালো। বিড়বিড় করে বললো,
-” শালার ওয়ান সাইড লাভ! জুতা মারি এমন ভালোবাসারে। ”
দূর থেকে অনলের রক্তে ভেজা হাত লক্ষ্য করতেই অপর্ণার বুক ছেত করে উঠলো। অপর্ণার সম্পূর্ণ দুনিয়া মুহূর্তেই ঘুরে গেল! সে নিজের লেহেঙ্গা সামলে দৌঁড়ে অনলের পাশে এসে দাঁড়াল। অনলের হাত নিজের দিকে টেনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললো,
-” এসব কি করে হলো,অনল? তোর হাতে রক্ত এলো কোথা থেকে? আরে হাততো অনেকখানি কেটে গেছে। অনল, চল ব্যান্ডেজ করবি। ”
অপর্ণা অনলকে টেনে নিয়ে যেতে চাইলে অনল নিজের পা শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকে। অপর্ণার চড়ুইপাখির মত দেহ দ্বারা অনলকে একবিন্দুও তার স্থান থেকে নড়াতে পারল না। অপর্ণা অনলের কাঁধে চাপড় দিল।
-” এই অনল? ”
অপর্ণার ডাকে অনল সম্বিত ফিরে পেল। সে রক্তলাল চোখে তাকালো অপর্ণার দিকে। অনলের লাল চোখে চাওনি দেখে অপর্ণা গুটিয়ে গেল। অনলের হাত ছেড়ে দিয়ে মিনমিনিয়ে বললো,
-” তো-তোর হাত থেকে র-রক্ত পড়ছে। তাই আমি….”
অনল চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
-” তুই কি? বল? কি তুই? সবসময় আমার লাইফে দখলদারি করতে কেনো আসিস , হ্যাঁ? আমার লাইফ থেকে দূরে থাক অপু। নিজের দোষে আমাদের বন্ধুত্ত্ব নষ্ট করিস না। আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে আমার মত ছেড়ে দে, প্লিজ। ”

অনলের চিৎকার শুনে ইতিমধ্যে অনুষ্ঠানের সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। জুভান-ঐশীও একপল তাকালো অনলের দিকে। জুভান ভ্রু কুঁচকে অনলের দিকে তাকালো। অনলের এরূপ চিৎকার চেঁচামেচি দেখে জুভান সেদিকে এগুতে চাইল। তবে তার আগেই অনল ঐশীর দিকে একপলক চেয়ে বেরিয়ে পড়ল হল থেকে। জুভান থেমে গেল। হঠাৎ অনলের কি হয়ে গেল জুভানের বোধগম্য হলো না। অনলের সাথে কি একবার আলাদা করে কথা বলা উচিৎ?
সবার সামনে অনলের চিৎকার করে কথা বলা দেখে অপর্ণা বিস্ময়ে হতবিহ্বল হয়ে পড়ল। অপমানে মুখশ্রী রক্তিম হয়ে উঠল। সে মাথা নত করে দুহাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজ স্থানে স্থির পায়ে দাঁড়িয়ে রইল। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে। মনে হচ্ছে অনলের এরূপ অপমান সহ্য করার আগে অপর্ণার মরে যাওয়া উচিৎ! কেনো বেচে আছে সে? অনল কি করে সবার সামনে তাকে এভাবে অপমান করতে পারলো? কি দোষ অপর্ণার? অনলকে একটুখানি ভালোবাসাটাই কি তার দোষ? অপর্ণা অনেক চেষ্টা করলো চোখের জল থামানোর। তবুও বেহায়া তার অনুভূতি, তার চোখের জল। অপর্ণার বহু বাঁধা সত্বেও দু ফোঁটা জল তার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল। পুষ্পিতা অপর্ণার পাশে এসে তার কাঁধে হাত রাখলে অপর্ণা আর নিজেকে আটকাতে পারে না। লেহেঙ্গা সামলে দৌঁড়ে বেরিয়ে যায় হল থেকে। পুষ্পিতা ক্লান্ত চোখে জুভানের দিকে তাকায়। জুভান কিছুক্ষণ সদর দরজার দিকে চেয়ে রয়। অতঃপর চোখের ইশারায় পুষ্পিতাকে অপর্ণার পিছু নিতে বলে। পুষ্পিতা মাথা হেলিয়ে সায় দিয়ে অপর্ণার পিছু নেয়।
হলরুমটা এই মুহূর্তে বেশ শান্ত হয়ে আছে। এতবড় সিনক্রিয়েট হয়ে যাওয়ার পর সবাই অনুষ্ঠানের খেই হারিয়ে ফেলে। জুভানের মামা আমজাদ হোসেন সেটা লক্ষ্য করতে পেরে সবকিছু আবারও আগের মত করতে উঠেপড়ে লাগেন। কতগুলো নর্তকী একে একে সবার সামনে দাঁড়ায়। আবেদনময়ী গান চালু হয়। নর্তকীরা নিজেদের দেহ দুলিয়ে সবাইকে নাচ প্রদর্শন করে। অনুষ্ঠানটা পুনরায় জেগে উঠে, মেতে উঠে। তবে জুভানের মন এদিকে নেই। তার মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ অন্য চিন্তা করতে ব্যস্ত। কদিন ধরেই অনল কেমন অদ্ভুত ব্যবহার করছে। অনলের এই বদল আর হালকাভাবে নেয়া যাবে না। কিছু একটা করতে হবে এবার!

#চলবে

#এক্কা_দোক্কা – ১৩
আভা ইসলাম রাত্রি

ওরা তিনজন, ঐশী একা! পথটা জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে! ঐশী পেচাচ্ছে! ভয়ে গলদেশ শুকিয়ে চৌচির! ঐশী নিজের নখের আঘাতে খামচে ধরলো গায়ের পোশাক! ছেলেগুলোর মুখে বিশ্রী হাসি! সোডিয়াম বাতির ঝলমলে আলোয় স্পষ্ট ছেলেগুলোর চেহারার কামনা! তাদের মধ্যে একজন ঐশীর গায়ের পোশাক টেনে খুলে ফেলল। ঐশী চিৎকার করে উঠল, বাঁচতে চাইল। তবে কেউ তার সাহায্যের জন্যে এল না। ছেলেগুলো ঐশীর উপর হামলে পড়তেই কে যেন পেছন থেকে ডেকে উঠলো,
-” ওকে ছেড়ে দে! ”
কন্ঠটা কেমন যেনো, ভারী ভারী। ছেলেগুলো সেই কণ্ঠ শুনে ভয়ে জমে উঠলো। ঐশী নড়েচড়ে উঠলো! শ্বাস নিতে পারছে না সে! মনে হচ্ছে কে যেন তার গলা টিপে ধরেছে। ঐশী চেঁচালো, কেউ শুনলো না তার কথা! ঐশীর মনে হচ্ছে সে মারা যাচ্ছে। আজই তার জীবনের শেষ দিবস!শেষ মুহূর্তে ঐশী চিৎকার দিল,
-” মা……”
ঐশী ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসল। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে ওর। ঐশী দ্রুত তার ঔষুধের বক্স থেকে ইনহেলার বের করে মুখে চেপে ধরলো। ধীরে ধীরে ঐশীর শ্বাস সহজ হয়ে এল। ঐশী ইনহেলারটা ছুঁড়ে ফেললো মাটিতে। পাগলের মত নিজের চুল খামচে ধরল। তার শক্ত হাতের স্পর্শে চুলের গোঁড়া থেকে কয়েকগোছা চুল তার হাতে চলে এল। ঐশী ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। দু হাঁটুর চেপে ধরে মুখ গুজলো হাঁটুর মধ্যস্থলে! ঐশীর চোখ রক্তজবার ন্যায় লাল হয়ে আছে! দু চোখ বেয়ে যেন লাভা গড়াচ্ছে। সে চিৎকার করে বলে উঠলো,
-” কাউকে ছাড়বো না আমি। কাউকে না। সবাই মরবি তোরা। আমি নিজে তোদের মারব। এ কদিন যত পারিস উড়ে নে, তোদের ডানা চিরতরে কাটবার জন্যে আমি আসছি! আসছি আমি! ”

সে রাতে ঐশীর ভীষন জ্বর এল। জ্বরে গা যেনো পুড়ে যাচ্ছে। থার্মোমিটারের পারদ তরতর করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঐশী একা ঘরে ঘুমানোর কারণে তার জ্বর সম্বন্ধে কেউ জানে নাম সকাল হতে জুভান স্টুডিওর জন্যে বেরুবে। অভ্যাসবশত জুভান ঐশীর খোঁজ করলো। সার্ভেন্ট বললো,
-” ম্যাম আজকে নিজের ঘর থেকে বের হন নি, স্যার! ”
জুভানের ভ্রু কুঁচকে এল। সে জিজ্ঞেস করল,
-” খেয়েছে কিছু? ”
-” না, স্যার। ”
জুভান কোনো কথা না বলে ঐশীর ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। দুবার দরজায় টোকা দিল। তবে ওপাশ থেকে ঐশীর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে জুভান কোনো উপায় না পেয়ে বলে উঠলো,
-” ঐশী? ঠিক আছো তুমি? সে সামথিং!
তবুও কেউ সারা দিল না।জুভান আর দেরি করলো না। তার মস্তিষ্ক বলছে ঐশী হয়তো ঠিক নেই। সে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। বিছানার এক কোণে ঐশীকে গুটিশুটি মেরে পড়ে থাকতে দেখে জুভান বেশ খানিকটা অবাক হলো। সে ঐশীর পাশে বসল। মেয়েটার মুখ এত শুকনো লাগছে কেন? একরাতেই চোখের নিচে কালো হয়ে গেছে। জ্বর নেই তো? জুভান ঐশীর কপালে হাত রাখল। সঙ্গেসঙ্গে সে হাত সরিয়ে নিল। খুব জ্বর ঐশীর। জুভান হন্তদন্ত হয়ে গেল। একরাতে কি হয়ে গেল তার? এত জ্বর কিভাবে এল? জুভান ব্যতিব্যস্ত হয়ে ডেকে উঠলো,
-” ঐশী, এই ঐশী? উঠো। ”
জুভানের ডাক শুনে ঐশী নিভুনিভু চোখে তার দিকে তাকালো। মেয়েটা চোখ খুলে তাকাতে অব্দি পারছে না। চোখের পাপড়িতে কেউ বোধহয় পাথর চেপে দিয়েছে। জুভান জিজ্ঞেস করল,
-” এত জ্বর কিভাবে এল? রাতে গোসল করেছিলে তুমি? ”
ঐশী মাথা দুলিয়ে মানা করল। জুভান মুখ ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিল। ঐশীর দিকে চেয়ে বলল,
-” একটু উঠে বসতে পারবে? কিছু খেয়ে মেডিসিন নিতে হবে তো। ”
ঐশী কিছু বললো না। অবশ্য জুভান আর অপেক্ষা করল না। ঐশীর পিঠে হাত রেখে তাকে উঠে বসালো। সার্ভেন্ট ডেকে এনে খাবার আর মেডিসিন দিয়ে যেতে বলল। ঐশী বিছানায় হেলান দিয়ে ক্লান্ত কণ্ঠে বলল,
-” আমি ঠিক আছি। খামোকা এত ব্যস্ত হবেন না। ”
জুভান রেগে গেল। বললো,
-” হ্যাঁ, তা ত দেখতেই পারছি। চুপ করে বসে থাকো। একটাও কথা বলবে না। যা করতে বলছি আপাতত তাই করো। ”
সার্ভেন্ট স্যুপ দিয়ে গেল। জুভান স্যুপের প্লেট ঐশীর দিকে এগিয়ে বললো,
-” খেতে পারবে নাকি খাইয়ে দিতে হবে? ”
ঐশী দুর্বল হতে স্যুপের প্লেট নিজের দিকে টেনে নিল। বললো,
-” পারবো! ”
আত্মবিশ্বাসের সাথে কথাটা বললেও ঐশী পারলো না। চামচ হাতে তুলতেই চামচটা হাত থেকে পড়ে গেল। ঐশী তবুও চেষ্টা করে যাচ্ছে। ঐশীর এমন জেদ দেখে জুভান বিড়বিড় করে বললো, ‘ মেয়ে ভাঙবে তবু মচকাবে না! ‘
জুভান আর দেরি করল না। ঐশীর হাত থেকে প্লেট নিয়ে নিয়ে নিজেই খাইয়ে দিতে লাগলো। ঐশী বাঁধা দিতে চাইল। বললো,
-” আমি পারবো তো। ”
জুভান কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। বললো,
-” দেখছিলাম তো কেমন পারছিলে। ”
ঐশী আর কথা বললো না। অসুস্থ না হলে জুভানের এই কথার উত্তরে আরো দুটো কথা শুনিয়ে দিত সে। তবে আজ পারলো না। শরীরটা বোধহয় ব্যথায় পিষে যাচ্ছে। কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। জুভান স্যুপ খাইয়ে মেডিসিন এগিয়ে দিল। সবকিছু শেষ করে জুভান ঐশীকে আবারও বিছানায় শুইয়ে দিল। জুভান উঠে দাঁড়াল। ঐশীর উদ্দেশ্যে বললো,
-” চুপ করে এখন শুয়ে থাকবে। কিছু দরকার হলে সার্ভেন্ট ডাকবে। নিজে পাকামো করতে যাবে না। ঠিকাছে? ”
ঐশী মাথা নাড়ল। আজ ঐশীকে এত নীরব থাকতে দেখে জুভান হেসে ফেলল। ঐশীর দিকে চেয়ে টিটকারী দিয়ে বললো,
-” সারাক্ষণ বকবক না করে এমন করে সবসময় চুপ করেও ত থাকতে পারো। ”
জুভানের কথা শুনে ঐশী ক্ষেপে গেল। তবে মুখ খুললো না। আজ যা বলার বলে নিক। সময় তারও আসবে। জুভান আর জ্বালালো না ঐশীকে। স্টুডিওর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল সে।
___________________________
নতুন গানের লিরিক্সটা আরো একবার দেখে নিল জুভান। ডিরেক্টর একপাশে সেই গানের তদারকি করছেন। গান রেকর্ড করা শেষ হলে জুভান স্টুডিও থেকে বেরিয়ে পড়ল। এখন তার একটা শুটিং সেটে যেতে হবে। একটা নাটকের জন্যে তাকে হায়ার করা হয়েছে। নাটকের প্রধান চরিত্রে রুল তাকে করতে হবে। জুভান প্রথমে রাজী হয়নি তাতে। গান গাওয়া ছাড়া এই একটিং-ফেক্টিন তাকে দিয়ে হয়না। কিন্তু প্রোডিউসারের এক কথা, এবারের নাটকে জুভান না থাকলে তিনি এ নাটকে পয়সা ঢালবেন না। প্রোডিউসারের সাথে জুভানের বেশ সখ্যতা থাকায় সে এই ডিলে রাজি হয়েছে।
স্টুডিও থেকে বের হতেই জুভান ঐশীর ফোনে কল দিল। ওপাশ থেকে ফোন নট রিচেবল আসছে। জুভান বারবার ট্রাই করছে। তবে লাভ হচ্ছে না।

-” হ্যাই জুভান। ”
পেছন থেকে চেনা এক কণ্ঠস্বর শুনে জুভানের মাথা রীতিমত বিগড়ে গেল। সে বিড়বিড় করে বলে উঠল, ‘ শিট, এগেইন দ্য ব্লাডি বিচ! ‘
ইতিমধ্যে মেয়েটা জুভানের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। জুভান দাত খিচিয়ে মেয়েটার দিকে তাকালো। কোনোরূপ ভনিতা না করে সোজাসাপ্টা বললো,
-” হোয়াট ইউ নিড নাও? আমার পিছু কেনো তুমি ছাড়ছ না? আই ডোন্ট লাইক ইউ, এই সামান্য বিষয়টা কেনো তুমি বুঝতে পারছ না ইউশা! ”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here