এক্কা_দোক্কা – ১৪,১৫

0
781

#এক্কা_দোক্কা – ১৪,১৫
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
পার্ট-১৪

‘ খুন’ শব্দটা খুব ভারী! সচরাচর মানুষ খুন শব্দটা শুনলেই ভয়ে কেমন যেন নেতিয়ে যায়। দুর্বলমনা মানুষজন বুকে দুবার বিসমিল্লাহ বলে ফুঁ দিয়ে এই আপদকে এড়িয়ে যেতে চান। তবে খুন করা বিষয়টা ততটা সহজ না। বেশ শক্ত কাজ বটে! খুন সবাই করতে পারে! কিন্তু খুনের প্রমাণ সবাই লুকাতে পারেনা। খুন করার পর হাত কাপা যাবে না, বুকের ভেতরে ধরাশ-ধরাশ করা যাবে না, কপালে ঘাম জমা যাবে না। বরং ঠান্ডা মাথায়, বিন্যস্ত আত্মা কর্তৃক যারা খুন করে প্রমাণ লুটপাট করে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায় তারা হলেন মহামানব। তাদের পায়ের ধূলো নেওয়া উচিত!

‘রিয়াদ তালুকদার’ দেশের শীর্ষনেতাদের একজন! যার গায়ের দুপাশে সবসময় দুজন দেহরক্ষী বুক ফুলিয়ে দাড়িয়ে থাকে। তাকে হত্যা করা চাট্টিখানি কথা নয়। আর এই কঠিন কাজই করতে যাচ্ছে ঐশী! জ্বর একটু কমতেই সে নিজের পার্সোনাল ল্যাপটপ খুলে বসে পড়েছে। উদ্দেশ্যে রিয়াদ তালুকদারের ব্যক্তিগত তথ্য জানা! ঐশী একটা আইডেন্টিফাই সফটওয়্যারে রিয়াদ তালুকদারের নাম্বার লিখে সার্চ দিল। লোডিং হচ্ছে! অপেক্ষা করতে হলো কিছুক্ষণ! সফটওয়্যারটা খুব স্লো। তবে ভালো কাজ করে। ঐশী কয়েক বছর ধরে ব্যবহার করে আসছে এটা। কয়েক সেকেন্ড পেরুতেই স্ক্রিনজুড়ে দৃশ্যমান হলো বলিষ্ট দেহের এক পুরুষ! দেহের সাথে জড়ানো সাদা ধবধবে পাঞ্জাবি! তবে মনটা এই পাঞ্জাবির মতোই ধবধবে কালো! ঐশী সফটওয়্যার ঘেঁটে রিয়াদ তালুকদারের সম্পূর্ণ তথ্য জেনে নিল।
নাম – রিয়াদ তালুকদার
বাবার নাম – মুরশেদ তালুকদার
মায়ের নাম – রাবেয়া বেগম
পেশা – ব্যবসায়ী, বিশিষ্ট নেতা!
বাসস্থান- তালুকদার মঞ্জিল, বনানী- ১০১২
মোবাইল নম্বর – ০১৮………..

এটুকু তথ্যই যথেষ্ট! ঐশী ল্যাপটপ বন্ধ করে দিল। শরীরটা আবার ম্যাজম্যাজ করছে। বোধহয় জ্বর পুনরায় গায়ে আক্রমন করতে চাইছে! শীত লাগছে খুব! গোসল করা দরকার! শীতে শীতে কাটাকাটি হবে! জ্বর কমবে সেইসাথে শরীরটাও চাঙ্গা হবে। একদিনেই কেমন যেন গা থেকে গন্ধ বেরুচ্ছে! ঐশী গায়ের কম্বল সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাড়াল। পা চলছে না। বোধকরি, এখনি লুটিয়ে পড়লো সে। ঐশী গায়ে ওড়না চাপিয়ে বাথরুমে চলে গেল। পানি আগে থেকেই মেশিন কর্তৃক গরম করে রাখা! বড়লোক বাড়ির বড়লোকী কারবার! সারাজীবন ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা মেয়ে বিয়ের পর টাটকা গরম পানি দিয়ে গোসল করছে! একেই হয়তো কপাল বলে!
_________________________
ইউশা চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে মাথায় ঝুলিয়ে রাখল। একটু ম্যামসাহেব ম্যামসাহেব লাগছে ওকে। জুভান তীক্ষ্ম চোখে চেয়ে আছে ইউশার দিকে। মেয়েটির এমন হেয়ালিপনা তার ঠিক সহ্য হচ্ছে না। ইউশা চমৎকার হেসে বললো,
-” এত উত্তেজিত হচ্ছো কেন? তোমার গাড়িতে লিফট দেবে? আমার গাড়িটা আজ ওয়ার্কশপে দিয়েছি।”
জুভান শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে ইউশার দিকে না তাকিয়ে বললো,
-” ইম্পসিবল! গাড়ি না থাকলে রিকশা করে যাও। ”
অতঃপর ইউশাকে একপ্রকার অগ্রাহ্য করে সে চোখে সানগ্লাস পড়ে নিয়ে নিজের গাড়ির দিকে এগুলো। গাড়ি স্টার্ট দিলে হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসা টাইপ ইউশা গাড়ির সামনের সিটে উঠে বসল। জুভান থমকে গেল। রাগে তার কান লাল হয়ে যায়। এবারেও হয়েছে। গৌড়বর্ন হওয়ার কারণে কানের মধ্যে লাল রং খুব চোখে লাগছে। জুভান রুক্ষ কণ্ঠে বলল,
-” এটা কেমন অভদ্রতা ইউশা? নামো আমার গাড়ি থেকে। ”

কথাটা বোধহয় ইউশার কানে গেল না। সে বললো,
-” আজ কি গরম পড়েছে! আমার মেকাপ সব গলে যাচ্ছে, জুভান। দ্রুত গাড়ি চালু করে এসি অন করো। আমি মরে যাচ্ছি গরমে। ”
জুভানের রাগ এবার আকাশ স্পর্শ করলো। হয়তো আকাশ বেরিয়ে মহাকাশও স্পর্শ করে গেল। তার মাথা টগবগ করে ফুটছে। মাথার ভেতর শব্দ হচ্ছে, গুড়ুমগুড়ুম! জুভান ইউশার একহাত চেপে ধরলো। ইউশার নরম কবজি জুভানের শক্ত হাতের স্পর্শে লাল হয়ে গেল। জুভান সেসব পরোয়া না করে দাঁত খিচিয়ে বললো,
-” ক্যান্ট ইউ গেট ইট? আমার অসহ্য লাগছে তোমাকে! গেট লস্ট ফ্রম ম্যাই কার, ড্যাম ইট! ”
ইউশা হাসলো। অতীব সুন্দর নায়িকা হওয়ায় তার এই চমৎকার হাসির জন্যে হাজারো যুবক কুরবান হয়ে যায়। কিন্তু আশ্চর্য্য জুভানের সেই হাসি দেখে গা জ্বলে উঠলো। সে আরো একটু শক্ত করে চেপে ধরলো ইউশার হাত। ইউশা ব্যথায় কুঁকড়ে গিয়ে বললো,
-” আহ্, ব্যথা পাচ্ছি। ছাড়ো, জুভান। ”
-” চুলোয় যাক সব ব্যথা! কি চাস তুই? বল? আমি জানি তুই এমনি এমনি আমার কাছে আসিস নি! তোর কোনো উদ্দেশ্যে আছে। সো ন্যাকামিটা বাদ দিয়ে সোজা পথে আয়!
ইউশা হাসলো। জুভানের কানের কাছে মুখ এগিয়ে এনে ফিসফিসিয়ে বললো,
-” তোমাকে চাই! দেবে আমায়? কথা দিচ্ছি, খুব যত্ন করে রাখবো! ”
জুভান অতিষ্ট হলো। সে নিজের থেকে ইউশাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
-” আমি বিবাহিত, ইউশা! ”
-” আমি ভালোবাসি তোমায়! তোমার সবকিছু জেনেই আমি তোমায় ভালোবাসি, জুভান। আমি কখনো তোমার স্ত্রীর স্থান চাইবো না। তবুও আমায় একটুখানি ভালোবাসো! আমি
মরে যাচ্ছি! একটুখানি রহম করো আমার উপর, প্লিজ! ”

জুভান সব শুনেও আজ নিশ্চুপ! কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না সে। জুভান ইউশাকে ছেড়ে দিল। সিটে হেলান দিয়ে খামচে ধরলো নিজের ঘন চুল! ঘাড়ে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হচ্ছে! মন থেকে কি এই ব্যথার উৎপত্তি? হয়তো হ্যাঁ, হয়তো না! কে জানে কার মনের খবর?
কিছুসময় এইভাবেই নিশ্চুপ বসে রইলো জুভান। মাথাটা নত করে, চুল খামচে। আর ইউশা চেয়ে আছে তার দিকে। চোখে মুখে আতঙ্ক! জুভান কি তাকে ফিরিয়ে দিতে চাইছে? হঠাৎ জুভান নিভুনিভু কণ্ঠে বলে উঠলো,
-” আমি ঐশীকে ভালোবাসি, ইউশা! যতটা ভালোবাসলে এই পৃথিবীর আর কাউকে ভালোবাসা যায়না আমি তাকে ঠিক ততটাই ভালোবাসি! আমার বুকের সমস্ত অঞ্চলজুড়ে তার দখল! তাকে ছাড়া আমার চলবে না, একটুও না! তুমি আমার ভালবাসার অভাবে পুড়ছ,, আর আমি তার ভালোবাসার অভাবে ক্রমাগত জ্বলে পুড়ে মরে যাচ্ছি! এভাবে আর বেঁচে থাকা যাচ্ছে না! এমন দহন আর একটুও সহ্য হচ্ছে না! ”

ইউশা কাতর চোখে জুভানের দিকে চেয়ে রইল! এই সে জুভান, যার সাথে ইউশা দুবছর রিলেশনে ছিল। তবে এই রিলেশন শুধু একপাক্ষিক ছিল। জুভানের মধ্যে এই রিলেশন নিয়ে কোনোরূপ তোয়াক্কা ছিল না। তবুও ইউশা হাল না ছেড়ে জুভানের সাথে ছিল! চেয়েছিল তাদের এই নড়বড়ে সম্পর্ক বিয়ে অব্দি এগিয়ে নিয়ে যেতে! তবে জুভান তা দেয়নি হতে। হঠাৎ একদিন ফোন করে সব সম্পর্কের সমাপ্তি টানে সে। তারপর আর কি…… কদিনের মাথায় ঐশীকে বিয়ে করে সে। ইউশা করুন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে জুভানকে,
-” ঐশী তোমায় ভালোবাসে তো জুভান? নাকি তুমিও আমার মত একপাক্ষিক যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছ? একটা কথা কি জানো জুভান? যন্ত্রণার কয়েকপ্রকার হয়! তবে ভালোবাসার বদলে ভালোবাসা না পাওয়ার যন্ত্রণাটা মৃত্যু যন্ত্রণার চেয়েও হাজারগুণ বেশি গভীর, তিক্ত। ”

জুভান থেমে গেল। জুভান কিছুক্ষণ বিমূর দৃষ্টিতে পিচঢালা রাস্তায় চেয়ে রইল। কিছু বলার নেই তার! সে ফেঁসে গেছে! এক কোমলবতি পবিত্র নারী জালে বিশ্রী ভাবে ফেঁসে গেছে সে! বেরুনোর পথ নেই! তবে কে বেরুতে চাইছে? জুভান তো আটকে যেতে চাইছে! সাথে আটকাতে চাইছে এই ভুবন, আকাশ-পাতাল! সম্ভব কি এসব? বোধহয় নাহ!

ভাবনার মধ্যে হঠাৎ জুভানের ফোন বেজে উঠল। জুভান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোন রিসিভ করে কানে ধরল! ওপাশ থেকে শাহাদাত হন্তদন্ত হয়ে বললো,
-” স্যার, আপনি কোথায়? এদিকে তো মহাকান্ড ঘটে গেছে। আপনার আর ইউশা ম্যাডামের একটা স্ক্যান্ডাল ফেসবুকে ক্রমশ ভাইরাল হচ্ছে! স্যার, স্যার, আপনি শুনতে পারছেন?”

#চলবে

#এক্কা_দোক্কা – ১৫
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

ওপাশ থেকে শাহাদাত হন্তদন্ত হয়ে বললো,
-” স্যার, আপনি কোথায়? এদিকে তো মহাকান্ড ঘটে গেছে। আপনার আর ইউশা ম্যাডামের একটা স্ক্যান্ডাল ফেসবুকে ক্রমশ ভাইরাল হচ্ছে! স্যার, স্যার, আপনি শুনতে পারছেন?”
জুভান হতবিহ্বল হয়ে পড়ল। মস্তিষ্কে চাপ প্রদান করে মনে করার চেষ্টা করলো ইউশার সাথে তার কোন স্ক্যান্ডাল আছে! তবে তেমন কিছু মনে পড়ল না। জুভান শান্ত সুরে বললো,
-” ঐশী কোথায়, শাহাদাত? ”
-” ম্যাম নিজের রুমে বসে আছেন স্যার। ”
-” ও কি ভিডিওটা দেখেছে? ”
-” আব.. হ্যাঁ স্যার। ”
জুভান নিজের চুল খামচে ধরলো। পরিস্থিতি হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। জুভান বললো,
-” ফোন রাখো, শাহাদাত। ঐশীর কাছে যাও। আমি না আসা অব্দি তার পাশে বসে থাকো। মাথায় রাখবে ও যেন কোনোরূপ গন্ডগোল না করে। আমি শীঘ্রই আসছি। ”
-” জ্বি, স্যার। ”
জুভান ফোন কেটে দিল। পাশে ইউশা আগ্রহ দৃষ্টিতে জুভানের দিকে চেয়ে আছে। জুভান ফোন কাটার সঙ্গেসঙ্গে ইউশা জিজ্ঞেস করল,
-” কি হয়েছে, জুভান? ”
জুভান সিটবেল্ট লাগাতে লাগাতে বললো,
-” একটা প্রশ্ন করব! ঠান্ডা মাথায় উত্তর দিবে। তোমার আর আমার এমন কি কোনো ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল যা নিয়ে স্ক্যান্ডাল হতে পারে? ”
জুভানের কথায় ইউশা নিজেও বেশ চিন্তিত হল। তেমন কিছু মনে পড়ছে না। জুভানের মেয়ে নেশা থাকলেও ইউশাকে জুভানের পছন্দ না হওয়ায় জুভান কখনোই তার সাথে ইন্টিমেন্ট হয়নি। জুভান নিজের পছন্দ অনুযায়ী মেয়েদের সাথে ইন্টিমেট হয়, এটা জুভানের বৈশিষ্ট্য। ইউশা মাথার উপর জোর দেওয়ার চেষ্টা করল। নাহ, তেমন কিছুই মনে পড়ছে না। ইউশা বলল,
-” তেমন কিছুই তো আমাদের মধ্যে হয়নি। তাহলে কিসের স্ক্যান্ডাল ফাঁস হলো? ”
জুভান নিজের চুল এলোমেলো করে শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে নিল। একহাতে কপাল ঘষে কিছু একটা ভাবার চেষ্টা করল। অতঃপর জুভান হুট করে বলে উঠলো,
-” তোমার ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট আছে? ”
-” হ্যাঁ, আছে।”
-” তাহলে সার্চ দাও। রিসেন্ট নিউজ ঘেঁটে দেখো। আমাদের নিয়ে কি দেখাচ্ছে, জানাও আমাকে। ”
ইউশা দ্রুত ফেইসবুক সার্চ করল। বেশ কষ্ট করতে হয়নি তার। রিসেন্ট একটা নিউজে দেখাচ্ছে জুভান আর ইউশার একটা ঠোঁট চুম্বন সিন ফাঁস হয়েছে। যেখানে জুভান আর ইউশার চেহারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। ইউশার যতদূর মনে পড়ে, এটা একটা পার্টির দিন ছিল। জুভান ড্রাংক হয়ে সেদিন ইউশার ঠোঁটে চুম্বন করেছিল। শুধু চুম্বন! এর বেশি জুভান এগুয় নি। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। সেদিনের কথা ইউশা কখনোই ভুলেনি। জীবনের প্রথম চুম্বন! সেই চুম্বনটা যদি হয় একান্ত ভালোবাসার মানুষের ঠোঁটের, তবে তা হয় স্বর্গীয়! ইউশা এখনো সেই ঠোঁটের ছোঁয়া নিজের মধ্যে অনুভব করে। সেই একই শীতলতা, একই নিঃশ্বাসের শব্দ, একই উত্তেজনা! সব একই আছে। পার্থক্যটা তো একটাই। মানুষটা আর নেই। সে তো অন্যতে মত্ত।
-” ইউশা, কি ভাবছো। নামো গাড়ি থেকে। আমাকে শীগ্রই বাসায় ফিরতে হবে। ”
জুভানের কথায় ইউশার ধ্যান ভাঙল। সে বিমর্ষ বদনে গাড়ি থেকে নেমে দাড়াল। জুভানের দিকে চেয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই জুভান গাড়ি চালু করে শো করে পার্কিং থেকে বেড়িয়ে গেল। ইউশা হাসল। মনেমনে দুবার বিড়বিড় করল,
” ঐশী, নামটা কী ভীষণ ভাগ্যবতী! ”
_________________________
-” শাহাদাত, ঐশী কোথায়? ”
বাড়িয়ে প্রবেশ করে এটাই জুভানের প্রথম প্রশ্ন ছিল। শাহাদাত মাথা চুলকে বললো,
-” স্যার, ম্যাম নিজের ঘরে কাজ করছেন। আমি উনার পাশে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে বের করে দিয়েছেন। ”
জুভানের রাগ হলো ভীষণ। সে চেতে উঠে বললো,
-” ও বললো আর তুমি বেরিয়ে গেলে? আমার আদেশ মাথায় ছিল না? ”
শাহাদাত মাথা নত করল,
-” সরি, স্যার।”
-” রাবিশ! ”
জুভান হনহনিয়ে ঐশীর ঘরের দিকে চললো।

ঐশী কাপড় ভাজ করছিল। জুভান পেছনে দাঁড়িয়ে উশকুশ করছে। এই প্রথম জুভান নিজের মধ্যে নার্ভাসনেস উপলব্ধি করতে পারছে। কপালে ঘাম জমেছে! বুকের মধ্যে টিপটিপ শব্দ হচ্ছে। ঐশীর এমন হেয়ালিপনা জুভানের বিরক্তির কারন হচ্ছে। জুভান মুখ ফুলিয়ে শ্বাস নিল। ঐশীর পেছনে এসে গলা ছেড়ে কাশলো। ঐশী একটু সময়ের জন্যে পা থামালো। অতঃপর আগের ন্যায় পুনরায় কাজে মন দিল। জুভান আবারও গলা ছেড়ে কাশলো। ঐশী এবার চমকাল না। জুভান একসময় নিভুনিভু গলায় বলল,
-” ঐশী, আসলে… ওই ভিডিও …আমি….”
জুভান তোতলাচ্ছে। বিষয়টা হাস্যকর বটে। ঐশী আড়চোখে জুভানের দিকে তাকাল। কিন্তু কিছু বলল না। জুভান মনেমনে নিজেকে দুবার গালি দিল। এসব কি হচ্ছে তার সাথে। সে কেনো ঐশীর মত এক সামান্য মেয়েকে ভয় পাচ্ছে! সামান্য একটা লিপকিসই তো। এতে এত ভয় পাওয়ার কি আছে? জুভান, রিলাক্স! ওকে, জাস্ট রিলাক্স। জুভান এবার পুরোদমে নিঃশ্বাস নিল। বললো,
-” ঐশী, মেয়েটার নাম ইউশা। আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড। ওর সাথে আমার দু বছরের রিলেশন ছিল। একটা পার্টিতে ড্রাংক হয়ে অ্যাক্সিডেন্টলি লিপকিস হয়। আমরা কখনোই ইন্টিমেন্ট হইনি। বাট মিডিয়ার তো কোনো কাজ নেই। কোথাকার সিম্পল কাহিনী এত ঘটা করে নিউজ করেছে। তুমি কি আমার কথা শুনতে পেরেছ, ঐশী? ”

ঐশীর হাত আটকে। হাতে থাকা অর্ধ ভাজকৃত একটা কামিজ। ঐশী ছোট্ট করে বললো,
-” ওহ, ভালো। ”
জুভানের ভ্রু কুচকে গেল। সে অধিক মাত্রায় বিরক্ত হলো। ঐশীর এ ধরনের ডোন্ট কেয়ার ভাব তার একটুও হজম হলো না। সে আচমকা ঐশীর হাত ধরে ঐশীকে নিজের সাথে চেপে ধরল। ঐশী থমকে গেল। হাতের থাকা ভাজ করা কামিজ পড়ে গেল মাটিতে। ঐশীর এক হাত জুভানের বুকে, অন্যহাত জুভানের কোমরের শার্ট খামচে। ঐশী ফ্যালফ্যাল চোখে জুভানের দিকে চেয়ে আছে। কি হচ্ছে তার কোনো কিছুই ঐশীর বোধগম্য হচ্ছে না। জুভান ঐশীকে নিজের সাথে আরো একটু চেপে ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
-” কি সমস্যা তোমার? কথা বলছ না কেন? এমন ভাব ধরছ যেন আমার এসব কথা তোমার কানেই যাচ্ছে না। নিজেকে সবজান্তা মনে করছ, নাকি? ”
ঐশী হাসল। নিজেকে জুভানের থেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে গেলে জুভান ছাড়ে না। বরং হাতের বাঁধন আরো শক্ত করে সে। ঐশী জুভানের চোখের দিকে চেয়ে স্পষ্ট কণ্ঠে বলে,
-” আপনার লাইফ, আপনার মর্জি। আপনি কাকে কিস করবেন, কাকে বিছানায় আনবেন, এটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যপার। আমাকে এসবে একটুও ইন্টারেস্ট নেই। ”
জুভান ভ্রু উচু করে বললো,
-” সিরিয়াসলি, তোমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই? ”
-” না। একটুও না। ”
জুভান আলতো হাসল। কেমন করা হাসি। সচরাচর সে এমন কি হাসে না। তবে এ কেমন হাস? জুভান ঐশীর কানের পেছনে চুল গুঁজে দিল। শীতল কণ্ঠে বললো,
-” ওকে, দেন। যেহেতু তোমার আমার লাইফ স্টাইল নিয়ে কোনোপ্রকার কোনো ইন্টারেস্ট নেই, রাইট? তো এখন যদি আমি আবার আগের ন্যায় হয়ে যাই, এতেও তোমার কোনো সমস্যা থাকার কথা না, ইজন্ট ইট? আমি মেয়ে নিয়ে আসবো, তুমি পাশে বসে শুধু দেখবে, কিন্তু একটুও জ্বলবে না। কারণ তুমিই তো বললে আমার যা ইচ্ছে তাই করতে। সো, ফ্রম নাও আই উইল ডু হোয়াটএভার আই ওয়ান্ট! গেট রেডি টু বি জেলাস, বেবী! ”

জুভান কথাটা বলে ঐশীকে ছেড়ে দেয়। ঐশীর দিকে চেয়ে অদ্ভুত হাসি দিয়ে কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যায় সে। ঐশী ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে। জুভানের শান্ত কণ্ঠ ঐশীর সুবিধার লাগছে না। কি করতে চাইছে এ ছেলে?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here