#এক্কা_দোক্কা – ১৬,১৭
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
পার্ট-১৬
রাত পেরিয়ে নতুন এক ভোর হয়েছে। অদূরের কৃষ্ণচূড়া গাছে লাল রঙা সমুদ্র বইছে। সূর্যের তেজস্বী ক্রমে ক্রমে দ্বিগুণ হচ্ছে। সময়ের প্রহর বৃদ্ধির সাথে বাড়ছে ঐশীর মস্তিষ্কের উষ্ণতা! আজ এই পৃথিবীতে এক অন্যায়ের নিধন হবে! রিয়াদ তালুদকারের পাপের রক্তে মাখামাখি হবে ঐশীর নরম হাত। সকাল থেকে ঐশীর তারই ছক সাজাচ্ছে। কাকতালীয়ভাবে আজ জুভান বাসায় নেই। নাটকের শুটিংয়ের জন্য ঢাকার বাইরে গেছে। সম্পূর্ণ বাড়িতে ঐশী একা। সার্ভেন্টদের সবাইকে ঐশী আজ ছুটি দিয়েছে। ছুটি, সে তো এক বাহানা মাত্র। ঐশী আজ খুন করবে, প্রমাণ লুটপাট করার জন্যে সর্বোচ্চ পরিকল্পনা করেছে ও।
ঐশী ল্যাপটপ নিয়ে বিছানায় বসল। রিয়াদ তালুকদারের বাড়িতে আজ একটা পার্টি হবে। নাইট পার্টি। শহরের সব গণমান্য ব্যক্তিগণ সেই পার্টিতে উপস্থিত হবেন। সে সব মানুষের চোখকে আজ ফাঁকি দিতে হবে ঐশীর। ঐশী হ্যাকিং সফটওয়্যার চালু করল। রিয়াদ তালুকদারের বাড়ীর সিসিটিভি কোড ঐশী জেনে গেছে। সেই সিসিটিভি কোড দ্বারা ঐশী রিয়াদ তালুকদারের বাড়ির হলরুম আর রিয়াদের ব্যক্তিগত বেড রুমের সিসিটিভি ফুটেজ হ্যাক করে ফেলল। ঐশী একটা টাইমার সেট করল। ঐশী যে সময়ে রিয়াদ তালুকদার বাড়িতে প্রবেশ করবে, তখন ঐশীর হ্যাকিং অনুযায়ী সে বাড়ীর সিসিটিভি ক্যামেরায় দশ মিনিট আগের ফুটেজ দেখাবে। দশ মিনিট ধরে সেই একই ফুটেজ বারবার শো করবে। ঐশীর হাতে থাকবে মাত্র দশ মিনিট। এই দশ মিনিটে ঐশীকে রিয়াদ তালুকদারকে খুন করে সেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। অতঃপর, প্ল্যান ওয়ান সাক্সেসফুল!
ঐশী ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। মৃত্যু বার্তা এসে গেছে তবে। রিয়াদ তালুকদারের দোয়ারে অপেক্ষা করছে এক ভয়ঙ্কর মৃত্যু দুস্যু! আপসোস, এবার ঐশীর হাত থেকে কে বাঁচাবে তাকে?
___________________________
‘ তালুকদার মঞ্জিল ‘ ভীষণ ঝমকালো এক বাড়ি! চারিদিকে অর্ধ শতাধিক নিরাপত্তা কর্মী। পার্টিতে ইতিমধ্যে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। ঐশী একটা রঙিন মাস্ক পড়ে নিল। মাস্কটা ঐশীর চোখ-নাক ঢেকে আছে। এটাই আজকের পার্টির থিম। কেউ কাউকে চিনবে না, জানবে নাম শুধু একজন আরেকজনের সাথে নাচে-গানে এনজয় করবে। প্রবেশদ্বারে লম্বা লাইনে। সিক্যুরিটি গার্ড সবাইকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তারপর ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে। ঐশী লাইনের একদম পেছনে দাঁড়াল। ঐশীর সামনে একটা মেয়ে। ঐশী এবার তার প্রথম চাল চাললো। ঐশী মেয়েটার কাধে হাত রেখে ডাক দিল,
-” এক্সকিউজ মি? ”
ঐশীর ডাকে মেয়েটা ভীষণ বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকালো। মেয়েটার এই মুহূর্তে মাতাল হয়ে আছে। শরীরে হেলেদুলে লুটিয়ে পড়ছে ঐশীর গায়ের উপর। ঐশী মেয়েটাকে সামলে সোজা করে দাড় করালো। মেয়েটা আঙ্গুল নাচিয়ে মাতাল কণ্ঠে বললো
-” কি? ”
-” আমাকে একটু সাহায্য করবেন, প্লিজ। আমার জামার পেছনের একটু অংশ লোহায় আটকে কেটে গেছে। একটু ঠিক করে দেন প্লিজ। আমি হাত দিয়ে নাগাল পাচ্ছি না। ”
মেয়েটার বিরক্তি হলো হয়তো। ভ্রু কুঁচকে বললো,
-” ওহ, অক্কে। পেছন ঘুরুন। ঠিক করে দিচ্ছি। ”
ঐশী বাঁধ সাধলো। বললো,
-” আসলে, এখানে সবার সামনে না। একটু ওদিকটায় চলুন, প্লিজ। ”
মেয়েটার এবার রাগ হলো। নাইট পার্টিতে এসে ঢং দেখাচ্ছে। সাধারণত এই পার্টিতে যারা আসে সবাই খুব মডার্ন। এসব লোকে দেখবে, এই মানুষিকতা এদের মধ্যে কারো নেই। মেয়েটা একবার ঐশীকে আগাগোড়া নিরীক্ষণ করে নিল। কামিজ পড়া এক অতি সাধারন মেয়ে। মেয়েটা ভাবলো, হয়ত পার্টির কোনো সার্ভেন্ট। নাহলে এমন সাধারন ড্রেসে রিয়াদ তালুকদারের পার্টিতে কেউ আসে না। মেয়েটা ঐশীর কাধে হাত রেখে মাথা নাচিয়ে বললো,
-” ত ঠিক হে। চলো। ”
ঐশী মাতাল সেই মেয়েটাকে নিয়ে বাড়ীর পেছনে এল। মাতাল মেয়েটা চোখ ঘুরিয়ে আশপাশ দেখছে। এই জায়গায় হয়তো সে আগে আসেনি। ঐশী সেই সুযোগে তার গোপন পকেট থেকে একটা সিরিঞ্জ বের করে মেয়েটার ঘাড়ে পুশ করে দিল। মেয়েটা ব্যথায় মৃদু স্বরে চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। ঐশী এবার মেয়েটার শরীর টেনে হিচড়ে বাড়ির এক পরিত্যক্ত জায়গায় রেখে দিল। আধা ঘন্টা পর মেয়েটার জ্ঞান আসবে। ততক্ষণে ঐশীর কাজ হাসিল করতে হবে।
ঐশী মেয়েটার গায়ে থাকা আইডি কার্ড নিজের কাছে নিয়ে নিল। গলায় ঝুলিয়ে এগিয়ে গেল প্রবেশদ্বারের দিকে।
নিয়মমাফিক ঐশীকে গার্ড পরীক্ষা করলো। কিন্তু সন্দেহজনক কিছুই না পাওয়ায় ঐশীকে ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি দিল।
বিশাল হলরুম। মানুষে একপ্রকার গিজগিজ করছে হলরুমে। এসি চালানো সত্বেও হলরুমটা বেশ গরম। হয়ত মানুষের নিঃশ্বাসের উত্তাপে। ঐশী ধীরে পায়ে এগিয়ে গেল সামনে। তার মাস্কে ঢাকা চোখ দুটো খুঁজছে একজনকে। কোথায় সে?
একটু দূরেই মদের গ্লাস হাতে দেখতে পাওয়া গেল রিয়াদ তালুকদারকে। কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলছে সে। ঐশী হাসলো এবার। ওয়েটার ডেকে নিজের হাতে রতা উইস্কির পুরো বোতল নিয়ে নিল। এগিয়ে গেল রিয়াদ তালুকদারের সামনে।
-” হাই, হ্যান্ডসাম! ”
রিয়াদকে সম্বোধন করে ঐশী। রিয়াদ নিভুনিভু চোখে ঐশীর দিকে তাকায়। অত্যধিক মাত্রায় মদ পান করার ফলস্বরূপ রিয়াদ ঠিকঠাক দাড়াতে পারছে না। হেলেদুলে পড়ে যাচ্ছে। রিয়াদ ঐশীর দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বললো,
-” হেলো, হটি। ”
ঐশীর সম্বোধনটা একটুও ভালো লাগলো না। দাঁতে দাঁত খিঁচে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করলো ও। ঐশী সহাস্যে এগিয়ে গেল রিয়াদের দিকে। রিয়াদের গলা জড়িয়ে ধরে উইস্কির বোতল দেখিয়ে বললো,
-” ডু ইউ ওয়ান্না ড্রিংক? ”
রিয়াদ যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল। মাথা ক্রমাগত নেড়ে জানালো, সে উইস্কি পান করতে চায়। ঐশী রিয়াদের হাত থেকে ওয়াইনের বোতল নিয়ে টেবিলে রাখলো। অতঃপর নিজেই উইস্কির বোতলের ছিপি খুলে রিয়াদের মুখে ডুবিয়ে দিল। রিয়াদ ঢকঢক করে উইস্কি খাচ্ছে। একসময় রিয়াদের শ্বাস ফুরিয়ে আসতে লাগলো। সে ছটফট করতে আরম্ভ করলো। ঐশী এতেও রুখে গেল না। বোতলটা আরো একটু দাবিয়ে দিল রিয়াদের মুখে। রিয়াদ এবার ঐশীর হাত খামচে ধরে গোঙাতে লাগলো। ঐশী একসময় ছেড়ে দিল। রিয়াদ যেন দম ফিরে পেল। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে সে। ঐশী ব্যস্ত গলায় বললো,
-” সরি, সরি। আমি বুঝতে পারিনি, আপনার এত কষ্ট হবে! আই অ্যাম এক্সট্রিমলি সরি, মি হ্যান্ডসাম! ”
রিয়াদ মুচকি হাসল। ঐশীর গালে আঙ্গুল বুলিয়ে বলল,
-” ইটস ওকে, ডার্লিং। ডু ইউ ওয়ান্ট টু সি মাই বেড রুম, ডার্লিং? ”
ঐশী মিহি হাসলো। সবকিছু তবে ঐশীর পরিকলনা অনুসারে এগুচ্ছে। ঐশী হেসে বললো,
-” ইয়েস, অফ কোর্স হ্যান্ডসাম। ”
#চলবে
#এক্কা_দোক্কা – ১৭
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
অবশেষে ঐশী পা রাখল রিয়াদ তালুকদারের ব্যক্তিগত বেডরুমে। ঐশী একবার চোখ ঘুরিয়ে পুরো রুমটাতে চোখ বুলিয়ে নিল। রুমটা আভিজাত্যে ভরপুর। একপাশে একটা লেদারের বিছানা। লেদারের সোফা ও ডিভান রুমটাতে সৌন্দর্য্য বর্ধন করেছে। ঐশী বাথরুমটা দেখে নিল একবার। পুরো রুমটা সচক্ষে দেখার পর ঐশী বক্র হাসল।
হঠাৎ করে নিজের হাতে থাকা উইস্কির বোতল থেকে কিছুটা উইস্কি নিজের গায়ে ঢেলে নিল। ঐশীর ড্রেস ভিজে যেতে দেখে রিয়াদ তাড়াহুড়ো করে ঐশীর থেকে সরে দাঁড়াল। ঐশী নিজের জামা ঝাড়তে ঝাড়তে অপরাধী ভঙ্গিতে বলল,
-” আম সরি, রিয়াদ। ইটস অ্যা মিসটেক। ক্যান আই ইউজ ইউর ওয়াশরুম প্লিজ? ”
রিয়াদ সহাস্যে বললো
-” ইয়েস। ওদিকে আছে। চেঞ্জ করে নাও। ”
ঐশী মৃদু হেসে বাথরুমে চলে গেল। রিয়াদ এবার বাঁকা হাসল। আগুন্তক মেয়েটাকে তার খুব পছন্দ হয়েছে। মেয়েটার রূপের সাথে সাথে শরীরের মধুটাও একবার পরখ করে দেখা দরকার। খাসা মাল বটে! রিয়াদ একবার বাথরুমে টোকা দিল। ঐশী তখন নিজের গুপ্ত পকেট থেকে একধরনের বিষাক্ত ক্যামিকাল সিরিঞ্জে পুশ করছিল। রিয়াদের ডাক শুনে ঐশী হন্তদন্ত হয়ে জবাব দিল,
-” ইয়েস, হ্যান্ডসাম। আম কামিং। জাস্ট ওয়েট ফর টু মিনিটস। ”
রিয়াদের ধৈর্য্যের বাঁধ এবার ভাঙতে লাগল। সে দরজায় বড়বড় হাতে টোকা দিয়ে বললো,
-” কাম ফাস্ট ডার্লিং। ”
-” ইয়াহ, সিওর। ”
কিছুক্ষণ পর ঐশী বাথরুমের সবকিছু ঠিকঠাক করে বাথরুমের দরজা খুলে দিল। ঐশী রিয়াদকে আকর্ষিত করতে এবার বাথরুমের হাতলে হাত দিয়ে অত্যন্ত আবেদনময়ী ভঙ্গিতে বাঁকা হয়ে দাড়াল। রিয়াদের জিহ্বা দিয়ে যেন লালা গড়িয়ে পড়ছে। সে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইল ঐশীর গায়ের উপর। কিন্তু সঙ্গেসঙ্গে ঐশী সরে গেল। যার ফলে রিয়াদ মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল। হাতটা মচকে গেছে তার। রিয়াদ হাতের কনুই চেপে ধরে আগুন চোখে ঐশীর দিকে তাকাল। ঐশী হাঁটুগেড়ে বসলো রিয়াদের পাশে। ঠোঁট দিয়ে অদ্ভুত শব্দ করে বললো,
-” ইস, খুব ব্যথা লেগেছে ডার্লিং? ”
মদের নেশা ইতিমধ্যে বেশ ভালোই চড়ে গেছিল রিয়াদের মাথায়। তার চোখ লাটিমের মত ঘুরছে। শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে যাচ্ছে। আর এমন হবেই না কেন? ঐশী সেই উইস্কির বোতলে কড়া নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে দিয়েছে। রিয়াদ গোঙাতে গোঙাতে অস্ফুটসুরে বললো,
-” ব্লা-ব্লাডি বিচ, তোকে তো আমি….”
রিয়াদের মুখে গালি শুনে ঐশীর মাথায় রক্ত উঠে গেল। তার হাতে গ্লাভস পড়া ছিল। সেই গ্লাভস পড়া হাত দিয়ে ঐশী চেপে ধরলো রিয়াদের শক্ত গাল। ঐশী ক্ষেপা কণ্ঠে বলল,
-” তেজ দেখাস না আমায়। বেশি তেজ আমার পছন্দ না। বেশি তেজ দেখালে একটানে জিহ্বা টেনে ছিঁড়ে ফেলবো, শালা। ”
রিয়াদের গায়ের জোর ক্রমে নিঃশেষে হচ্ছে। ঐশীর মুখে ঝাঁঝালো কথা শুনে রিয়াদ বিস্ময় নিয়ে তাকালো ঐশীর দিকে। নিভুনিভু চোখে ঐশীর আগাগোড়া নিরেক্ষণ করে ধীর কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,
-” ক-কে তুই? ”
ঐশী হাসল এবার। মুচকি হেসে রিয়াদের গালে আস্তে করে দুটো থাপ্পড় দিয়ে বললো,
-” মনে আছে, হরিপুর গ্রামের সেই জঙ্গল, একটা এগারো বছরের ছোট্ট মেয়ে, পরনে সাদাকালো ফ্রক, চোখে রঙিন রামধনু! মনে পড়ছে? মনে কর, মনে কর। ”
রিয়াদের মনে করতে একটুও বিলম্ব হলো না। সে এবার আঁতকে উঠলো। গা কেপে উঠলো বিদ্যুৎ বেগে। সে দ্রুত ঐশীর থেকে বাঁচতে পেছাতে লাগলো। বললো,
-” ত-ত-তুই ফিরে এসেছিস? ”
ঐশী হেসে বললো,
-” হ্যাঁ আমি। দশ বছর পর আবার ফিরে এসেছি আমি। তোদের মরণ যজ্ঞ করবো আমি। ভয় পাস না! তুই একা না। সব্বাই মরবি তোরা। তোরা তিনজনকে আমি ভয়ংকর মৃত্যু দিব। অপেক্ষা কর, অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়। জানিস না? ”
ঐশীর শান্ত কণ্ঠের বাণী শুনে রিয়াদের গলা শুকিয়ে গেল।তার শরীরের সব শক্তি নিঃশেষের কোঠায়। শরীরের সমস্ত অঙ্গ ধীরে ধীরে অবশ হয়ে যাচ্ছে। রিয়াদ অস্ফুটসুরে বারবার ক্ষমা চাইতে লাগলো ঐশীর কাছে। কিন্তু আজ ঐশী ক্ষমা করবে না কাউকে। আজ ঐশীর মাথা অসুর চেপেছে। তার অন্তরে রক্তের পিয়াস। অন্যায় নিধনের কঠোর ইচ্ছা এ নারীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবাহমান। ঐশীর হাতে একটা সিরিঞ্জ নিল। সিরিঞ্জ ভর্তি লাল রঙা বিষাক্ত দ্রবণ। ঐশী মৃদু হেসে রিয়াদকে জানালো,
-” হ্যাপি জার্নি, মি হ্যান্ডসাম। ”
কথাটা বলে ঐশীর রিয়াদকে দ্বিতীয় কথা বলতে না দিয়ে হুট করে রিয়াদের সর্বাপেক্ষা ছোট আঙ্গুলের নখের একদম কর্নারে সিরিঞ্জটা পুশ করে দিল। রিয়াদ আর্ত চিৎকার করে উঠলো। সম্পূর্ণ গা মরিচের মত জ্বলছে তার। মনে হচ্ছে শরীরের মধ্যে কেউ যেন লাল মরিচ ছিটিয়ে দিয়েছে। রিয়াদ ছটফট করতে লাগলো। ঐশী একহাতে রিয়াদের পা চেপে ধরেছে। পূর্বেই রিয়াদের সকল শক্তি শেষ হওয়ায় সে ঐশীর থেকে নিজের পা সরাতে পারলো না। একসময় এমন করে গলা কাঁটা মুরগির মত ছটফট করতে করতে আচমকা সে থেমে গেল। মুহূর্তেই শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেল তার। ঐশী ধীরে ধীরে সিরিঞ্জটা বের করে আনল। রিয়াদের মুখ থেকে সাদা ফ্যানা বের হচ্ছে। ঐশী একটা টিস্যু দিয়ে সেই ফ্যানাটুকু মুছে দিল। অতঃপর ঐশী উইস্কির বোতলটার সবটুকু দ্রবন হাই কমোডের মধ্যে ফেলে দিয়ে ফ্ল্যাশ করে দিল। এমনভাবে ফ্ল্যাশ করলো যেন ওই দ্রবণের একফোঁটা পানীয় কমোডের চারপাশে না থাকে। ঐশী এবার রিয়াদের মৃতদেহ কমোডের কাছে সন্তপর্নে রেখে দিল। ঐশী এবার রিয়াদের শরীরে সেই মাতাল মেয়েটার একটা ছোট চুল রেখে দিল। রিয়াদের শরীর হাতড়ে দেখলো ঐশীর শরীরের কোনোকিছু রিয়াদের শরীরে আছে কিনা! অতঃপর সব প্রমান লুটপাট করে ঐশী সেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
হলরুমে তখন পার্টি বেশ জমে উঠেছে। ঐশী স্বাভাবিক ভাবে আস্তে করে সেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। যাওয়ার আগে সেই মাতাল মেয়েটার গলায় মেয়েটার আইডি কার্ড ঝুলিয়ে গেল।
________________________________
জুভান মাত্রই নাটকের শুটিং শেষে গাড়িতে উঠেছে। আজ প্রায় ছ ঘণ্টা শুটিং করেছে সে। সাধারণত সে এসব অ্যাক্টিং ফ্যাকটিং করে না। গান গাওয়াই তার খুব পছন্দের। কিন্তু তার চেহারা খুব সুন্দর বলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সে একটিং করে। তবে সবসময় না।
সারাদিন ধরে একটানা শুটিং করায় জুভান ক্লান্ত! ঘাম জমে আছে তার শরীরের এদিক সেদিক। গরম লাগছে ভীষন। জুভান গায়ের জ্যাকেটটা খুলে গাড়ীর অন্য সিটে রাখল। শার্টের সামনের দুটো বোতাম খুলে কলারটা পেছনের দিকে একটু ঠেলে দিল। গাড়ীর এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিল। এবার কিছুটা শান্ত লাগছে তার। জুভান গাড়ি চালাচ্ছে। হঠাৎ তার মনে পড়ল, আজ সারাদিন নাটকের শুটিংয়ের প্রেশারে ঐশীর কোনো খোঁজ নেয়নি সে। এখন একবার খোজ নেয়া দরকার। জুভান ফোন হাতে নিল ঐশীকে কল করার জন্যে। ঐশীর নাম্বার ডায়াল করার পরপরই তার মনে হলো, সে তো ঐশীর উপর রেগে আছে। ঐশীর সেদিনের করা ডোন্ট কেয়ার ভাবটা জুভানের একটুও পছন্দ হয়নি। ঐশীকে ভালোবাসার পর সে সমস্ত মেয়েনেশা ছেড়ে দিয়েছিল। ভেবেছিল, এখন থেকে এক নারীতেই সে তার সুখ খুঁজে নেবে। কিন্তু ঐশীর সেদিনকার অ্যাটিটিউড জুভানের ধৈর্য্যের সমস্ত বাঁধ ভেঙে দিয়েছে। ঐশীকে একটা শিক্ষা না দিলে জুভানের সেই উত্তপ্ত রাগ কিছুতেই পানি হবে না। জুভান ফোন রেখে দিল। এখন ঐশীকে কল করা ঠিক হবে না তার। দেখা যাক, ঐশী আর কত দূর এগুতে পারে?
একা একা গাড়ি চালাচ্ছে জুভান। বিরক্ত লাগছে খুব। আজ ড্রাইভারও সাথে আনেনি। জুভান নিজের বিরক্তভাব কাটাতে গাড়ির রেডিও অন করলো। ভেবেছিল রেডিওতে গান দেবে। কিন্তু আজ রেডিওতে গানের বদলে খবর দিচ্ছে। জুভান রেডিও অফ করে দিতে চাইলো। কিন্তু যখন শুনল রেডিওতে বলছে,
-” বিশিষ্ট নেতা এবং ব্যবসায়ী রিয়াদ তালুকদার আর নেই। আজ দুপুরে এই মানবদরদী নেতাকে তার নিজ বাসভবনে হত্যা করা হয়েছে। কে বা কারা এই হত্যার পেছনে দায়ী সে ব্যাপারে তদন্ত চলছে। রিয়াদ তালুকদারের মৃত দেহ ফরেনসিক রিপোর্টেরর জন্যে মর্গে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি পুলিশ শীগ্রই এই হত্যাদণ্ডের মূল হোতাকে গ্রেফতার করতে পারবে। ”
জুভান হতবম্ব হয়ে গেল। তার কান ভনভন করতে শুরু করলো। সে কি ঠিক শুনলো? রিয়াদ তালুকদার আর নেই? কে মারলো তাকে?
#চলবে