এক্কা_দোক্কা – ১৮,১৯

0
848

#এক্কা_দোক্কা – ১৮,১৯
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
পার্ট-১৮

সম্পূর্ণ দেশে এই মুহূর্তে হট্টগোল লেগে আছে। নেতাদের মধ্যে হচ্ছে চরম বিশৃঙ্খলা! রিয়াদ তালুকদারের মত জনপ্রিয় এক নেতার হত্যাকান্ড রাজনৈতিক দুনিয়ায় তোলপাড় করে দিচ্ছে। লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। রিয়াদ তালুকদারের লাশ তন্নতন্ন করে আঘাতের কোনো চিন্হ পাওয়া যায়নি। কিন্তু ফরেনসিক ডাক্তারের ভাষ্যমতে,
‘ রিয়াদ তালুকদারের খুন বিষক্রিয়ার মাধ্যমে হয়েছে। সেই বিষক্রিয়ায় তার দেহের হৃদপিণ্ড গলে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে কোনো ইনজেকশন কিংবা পুশিং এর মাধ্যমে উনার দেহে বিষ সঞ্চালন করা হয়েছে। কিন্তু তার দেহে সেরকম কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। শরীরের কোথাও আঘাতের কোনো চিন্হ পাওয়া যায়নি। রিয়াদ তালুকদার একজন মারাত্মক ড্রাগ এডিকটেড মানুষ। হতে পারে তিনি সেদিন রাতে মাতাল অবস্থায় ড্রাগে বিষ ঢুকিয়ে ইনজেকশনের মাধ্যমে তা নিজের শরীরে প্রবেশ করিয়েছেন। ‘

পুলিশের এই বয়ানে আমজাদ হোসেন রেগে অস্থির হয়ে উঠলেন। তার নাকের ডগা তরতর করে কাপছে। তিনি লাথি দিয়ে পুলিশ স্টেশনের চেয়ার নিচে ফেলে দিলেন। অতঃপর পুলিশ ইন্সপেক্টরের কলার চেপে ধরে রগরগিয়ে বললেন,
-” এই পুলিশের বাচ্চা, তোর বা/লে/র মুখ বন্ধ রাখ। কুত্তার মত ভ্যা ভ্যা না করে ভালো করে ভেবে দেখ। এটা একটা প্রি প্ল্যানড মার্ডার। রিয়াদ এমনি এমনি মরে নাই। বুঝলি? তদন্ত আরো জোরদার কর শালার বাচ্চারা। ”
আমজাদ হোসেনের কিরমির করে বলা কথাটা শুনে ইন্সপেক্টর ভয়ে রীতিমত গা কাপতে লাগলো। সে অস্থির হয়ে বলল,
-” জি, আমি দেখছি স্যার। আপনি কোনো চিন্তা নেবেন না। আমি দেখছি বিষয়টা। ”

আমজাদ হোসেন ইন্সপেক্টরের কলার ছেড়ে ধাক্কা দিয়ে তাকে নিচে ফেলে দিলেন। ইন্সপেক্টর মাটিতে পড়ে ভয়ার্ত চোখে আমজাদ হোসেনের দিকে তাকালো। আমজাদ হোসেন ঘাড় দুইদিকে ঘুরিয়ে মটমট শব্দ তুললেন। অতঃপর সকল পুলিশকে তর্জনী তুলে শাসিয়ে পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে গেলেন।

আমজাদ হোসেন বেরিয়ে যেতেই ইন্সপেক্টর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মাটি থেকে উঠে দাঁড়ালেন। সবার দিকে চেয়ে আঙ্গুল উচুঁ করে জানালেন,
-” আমি এই তদন্তের শেষ দেখতে চাই। ছোট থেকে ছোট ক্লু আমাদের খুনি অব্দি পৌঁছে দিতে পারে। রিয়াদ তালুকদারের কাপড, চুল থেকে মাথা সবকিছু সার্চ করো। আমি এর শেষ দেখবো! বুঝেছ সবাই! ”
ইন্সপেক্টরের গর্জন শুনে পুলিশ স্টেশন কেপে উঠলো। সবাই তটস্ত চোখে পরখ করলো চারপাশ। সবার কপালে ঘামের সূক্ষ চিন্হ!
____________________________
জুভান মাত্রই বাড়ি ফিরেছে। তার মাথা আপাতত ফাঁকা। রিয়াদ তালুকদারের এমন হুট করে মৃত্যু সে বিশ্বাস করতে পারছে না। এই মুহূর্তে একটা হট শাওয়ার নেওয়া দরকার। জুভান নিজের রুমে ঢুকে চটপট বাথরুমে চলে গেল।

জুভানের ফোনে রিং হচ্ছে। জুভান উদোম গায়ে, শুধু টাওয়াল পেচিয়ে বাথরুম থেকে বের হলো। বিছানার উপর থেকে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো, হিয়া কল দিয়েছে। জুভান ফোন রিসিভ করলো,
-” হু, বল। ”
-” জুভান, কোথায় তুই? সাতদিন আগে ঐশীকে টেস্ট করালি। এখনো রিপোর্ট আনতে এলি না? ”

জুভানের ভ্রু কুঞ্চিত হলো। সে বেমালুম রিপোর্টের কথা ভুলে গেছে। এ কদিন কম চাপ তো যায়নি তার উপর দিয়ে। শুটিং, গানের রেকর্ডিং আর রিয়াদের এই রহস্যময় খুন। সব নিয়ে জুভান বেশ ব্যস্ত ছিল এ সপ্তাহ! জুভান গায়ে টিশার্ট গলিয়ে বললো,
-” ড্রাইভার পাঠিয়ে দিচ্ছে। রিপোর্ট নিয়ে আসবে। আপাতত তুই মুখে বল, কি এসেছে রিপোর্টে? ”
-” সারোগেট প্রসেসের জন্যে ঐশী প্রিপায়ার্ড না, জুভান। ”
জুভান কিছুটা থমকালো। চোখ ছোট ছোট করে বললো,
-” কেন? ”
-” স্যারোগেসি উপায়ে ওর জরায়ুতে বেবী স্থাপন করলে, সেই বেবী তার জরায়ু ক্যাপচার করতে পারবে না। তার কারণ ঐশীর হরমোনাল প্রবলেম আছে। বেবী পেটে এলে, তার জরায়ু সেই বেবি ক্যারি করতে পারবে না। শি ক্যান গেট অ্যা ম্যাজর মিসক্যারাজ। ”

জুভান বিস্মিত হলো। দাত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে ভাবনায় ডুব দিল। ঐশীকে নিজের কাছে আটকে রাখার একটাই উপায় ছিল, সেটা হলো একটা ফুটফুটে বাচ্চা! কিন্তু এবার সব আশায় ঝরঝর করে পানি গড়ালো। জুভান ক্ষুদ্রশ্বাস ফেলে বললো,
-” ওহ! এর কোনো ট্রিটমেন্ট আছে? ”
-” হ্যাঁ। আমি রিপোর্ট দেখে একটা প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়েছি। ওটা ফলো কর ছ মাস। তারপর দেখ কি হয়! আশা করি, ভালো রেজাল্ট আসবে। ”
-” ওকে, রাখছি তাহলে। ”
-” ওয়েট, জুভান। ”

জুভান ফোন আবার কানে ধরলো।
-” হু, বল। ”
-” জুভান আমি আবারও বলছি, তোরা কেনো ন্যাচারাল পদ্ধতিতে বেবি নিচ্ছিস না? আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, তুই ঐশীকে পছন্দ করিস। তাহলে হোয়াটস দ্য প্রবলেম, ম্যান? ”

জুভান দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। ফোনের অপর পাশ থেকে হিয়ার স্পষ্ট মনে হলো, জুভানের কষ্টের পাল্লা। জুভান ভালো নেই, কথাটা মনে হতেই হিয়ার বুক ভার হলো। সে নিম্ন কণ্ঠে বলল
-” তুই ভালো আছিস তো, জুভান? ”

জুভান বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। বারান্দায় রাখা ইজি চেয়ারে গা হেলান দিল। মাথার উপর ধবধবে আকাশ। তার উপর গাঢ় মেঘের প্রলেপ। মেঘেরা একে অপরের সাথে লুকোচুরি খেলছে। আকাশ মেঘেদের এই দুষ্টুমিতে মিটমিটিয়ে হাসছে। জুভান মুচকি হাসলো। বললো
-” জানিস হিয়া, এই জুভান একবার যা চাইতো চোখের পলকে তাই পেয়ে যেত। যদি না পেত তবে আকাশ বাতাস দূষিত করে তা হাসিল করে নিত। কিন্তু জীবনের ছাব্বিশ বসন্ত পেরিয়ে যাওয়ার পর আমার মনে হলো, আমি বোধহয় এবার হেরেই গেলাম। মনেপ্রাণে যাকে আপন করে চাইলাম, তাকে আমি পেয়েও পেলাম না। কেনো পেলাম না, বলতে পারিস হিয়া? আমার ভালোবাসায় কি কোনো খুঁত ছিল? ”

হিয়ার মুখ মলিন হলো। সে বুঝতে পারলো জুভান কার কথা বলছে। সে বলল
-” কখনো বলেছিস তাকে, তোর মনের কথা? ”
-” নাহ, লাভ নেই বলে। সে মানবে না। আর আমি তাকে এক মিনিটের জন্যেই হারাতে পারব না। মরে যাবো রে আমি। ”
-” চেষ্টা না করে ই হার মেনে নিচ্ছিস জুভান? তুই তো এমন ছিলি না। ছোট থেকে বড় হওয়া অব্দি জয়টা সবসময় তুই-ই ছিনিয়ে নিতিস। তাহলে, এখন কি হলো? কেন এত সহজে হার মেনে নিচ্ছিস? ”

জুভান উঠে বসলো। একহাতে মাথার চুলগুলো খামচে ধরে মাথা নিচু করে বসে রইল। কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকার পর বলে উঠলো,
-” আমি জানিনা! কিছু জানিনা আমি। সে যদি আমায় ফিরিয়ে দেয়, আমি শেষ হয়ে যাবো রে। এই হার আমি জীবনভর বয়ে বেড়াতে পারবো না। সম্ভব না আমার পক্ষে।”

-” জুভান, একবার চেষ্টা তো করে দেখ। তাকে এক ভীষন সুন্দর মুহূর্তে জানিয়ে দে, এই পৃথিবীতে কেউ একজন তাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। তার ভালোবাসার অভাবে সেই নির্দিষ্ট মানুষ ক্রমাগত ছটফটিয়ে মরছে। বলে ফেল, বুঝলি গাধা?”

জুভান ঠোঁট কামড়ে ভাবলো। কাজটা কি করা ঠিক হবে? ঐশী কি বিষয়টা ভালোভাবে নেবে?

-” আপনার কফি! ”
বারান্দার দরজা থেকে ঐশীর গলা পেয়ে জুভানের ধ্যানে পানি পড়লো। সে চমকে উঠে ঐশীর দিকে তাকালো। ঐশী ভ্রু কুঁচকে জুভানের দিকে চেয়ে আছে। সে কি কিছু শুনে ফেললো? জুভান গলা খ্যাকারি দিয়ে ফোন কেটে সোজা হয়ে বসলো। বললো,
-” ভেতরে আসো, ঐশী। ”

ঐশী ভেতরে প্রবেশ করে জুভানের পাশে বসলো। ঐশী চোখ মুখ উজ্জ্বল করে বললো,
-” কবিদের ভাষায় আজ নাকি মন খারাপের দিন। আজকের দিনে মন ভালো থাকা হলো পাপ, ঘোর পাপ। দিনমাফিক আমারও তাই ভীষন মন খারাপ! তাই ভাবলাম, একটু গল্প করি। বাসায় কেউ নেই, তাই আপনাকেই বেছে নিলাম গল্প করার জন্যে। এই নিন আপনার কফি। ”

ঐশী হাস্যোজ্জ্বল মুখের দিকে চেয়ে জুভানের চোখটা যেন জুড়িয়েই গেল। আজ মন খারাপের দিন না হয়ে চোখ জোড়ানোর দিন হলে কেমন হতো? জুভান যদি কখনো কবি হয়, তাহলে সে আকাশ পাতাল মিথ্যে করে আজকের দিনকে মন খারাপের দিন বদলে চোখ জোড়ানোর দিন বানাবে।
জুভান নিজের ভাবনায় নিজে হেসে ফেলল। ঐশী কফির কাপ বাড়িয়ে চেয়ে আছে। জুভান মুচকি হেসে ঐশীর থেকে চায়ের কাপ হাতে নিল। চায়ে চুমুক দিয়ে বললো,
-” ভালো করেছ। গল্প শুরু করো,আমি শুনছি। ”
-” ফোনে কাকে ভালোবাসার গল্প শুনাচ্ছিলেন? ”

ঐশীর সরু চোখে ঠোঁট টিপে বলা কথায় জুভানের বিষম লেগে গেল। চায়ের কাপটা পড়ে যেতে গেলে খপ করে ধরে ফেলল সে। মাথার উপর মস্ত আকাশ ভেঙে পড়ার মত বোধ হলো। দুবার খ্যাক খ্যাক করে কাশি দিতেই গলাটা বোধহয় জ্বলে উঠলো। ঐশী জুভানের পিঠে হাত মালিশ করে দুর্বোধ্য চোখে চেয়ে রইলো তার দিকে। হঠাৎ করে জুভানের এমন অসুস্থতায় সে চিন্তিত। সে কি অসুখওয়ালা কোনো কথা বললো? তার কথাতে কি অসুখ নামক বীজ বপন হলো জুভানের গলদেশে? ঐশী উত্তর পেলো না। মন খারাপটা যেন হুরহুর করে বেড়ে গেল। অসহায় হলো দৃষ্টিশক্তি!
জুভান নিজেকে সামলালো। অসহায় এবং বিমূড় অনুভূতির সংমিশ্রণ নিয়ে ঐশীর দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো,
-” তুমি কি সব শুনে নিয়েছ,ঐশী? ”

ঐশী দৃষ্টিসীমা সংকুচিত করলো। ধাম করে জুভানের পাশে বসে পড়লো। অতঃপর ঠোঁট চেপে ভ্রুতে ভাজ ফেলে বললো,
-” হ্যাঁ, শুনে নিয়েছি। ”
সর্বনাশ! জুভানের জিহ্বায় কামড় পড়লো।

#চলবে

#এক্কা_দোক্কা – ১৯
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

-” তা আর কি কি শুনলে তুমি? ”
জুভানের ঠোঁট টিপে কথাটা বলে শ্বাস আটকে বসে রইলো। অন্তঃস্থলে প্রবাহিত চিন্তার নহর তার শ্বাস রোধ করে রেখেছে।

ঐশী অকপটে বললো
-” আপনি ফোনে কাউকে ভালোবাসেন,তাকে ছাড়া আপনার চলবে না! এসব বলছিলেন। এবার বলুন ত, কাকে ভালোবাসেন আপনি? চিন্তা নেই, আমি আপনাদের ভালোবাসায় থার্ড পারসন হবো না। ”

জুভান ছোট্ট করে দম ফেললো। ঐশী আর দু সেকেন্ড এই ধোঁয়াশা রাখলে আজ বোধহয় জুভান ছোটখাটো হার্টএ্যাটাক করে বসতো। এতে কোনো সন্দেহ নেই। জুভান কফির কাপটা চেয়ার সংলগ্ন টেবিলে রাখলো। অতঃপর ঐশীর দিকে চেয়ে বলল,
-” কারো নাম শুনেছ? ”
-” নাহ, তা শুনিনি। কিন্তু এবার আপনার মুখ থেকে শুনবো।”
-” সরি, আমি নামটা বলতে পারছি না। ”
-” কেন বলবেন না? ”
-” তার নাম শুনলে তুমি ভালো থাকবে না। ”
-” নাম শোনার সাথে আমার ভালো থাকা আসছে কোথা থেকে? ”
-” ঐশী, আমরা কি এই টপিক বাদ দিয়ে অন্য টপিকে কথা বলতে পারি? ”
জুভানের কণ্ঠ অধৈর্য্য। কেননা ঐশী আর কিছুক্ষণ জুভানের মন ধরে টানাটানি করলে, জুভান হয়ত নামটা বলেই দিত। কিন্তু এখন সব খোলাসা করার সময় না। সময় আসলে সে ঠিকই বলে দেবে ঐশীকে, তার গোপন অনুভূতির কথা। তবে এখন শুধু অপেক্ষা দ্বারা নিজেকে সংযত করতে হবে। জুভানের কঠোর কণ্ঠে বলা কথায় ঐশী আর অমত করলো না। জুভান যখন একবার বলেছে, সে ওই মেয়ের নাম বলবে না, তাহলে শত চেষ্টায় জুভানের কণ্ঠ থেকে সেই মেয়ের নাম বের করা যাবে না। অসম্ভব! তবে কোথায় না কোথায় ঐশীর অবাধ্য মনে সূক্ষ্ম এক খারাপ লাগা থেকেই গেল। ঐশী চাইছিল, জুভান তার শোনা কথাকে মিথ্যে বলুক। যেভাবেই হোক, ঐশী জুভানের বিবাহিত স্ত্রী। আর একজন স্ত্রী কখনোই চাইবে না, তার স্বামীর ঘরের বাইরে কোনো প্রেমিকা থাকুক। ‘ প্রেমিকা’ ঐশী মনেমনে কথাটা ভেবেই আশ্চর্য্য হলো। তাদের এই অনিশ্চিত সম্পর্কে এতটা অধিকারবোধ কোথা হতে এল? ঐশী নিজের চিন্তায় নিজেই হতবম্ব হয়ে পড়ল। মাথাচাড়া দিল আত্মসম্মানের ধারালো সূচ।
ঐশী সমস্ত চিন্তাকে একপাশে ঠেলে হেসে বললো,
-” ঠিকাছে, বাদ দিলাম আপনার নাম টপিক। অন্য কথা বলি এখন? ”
-” বলো। ”
-” আপনি আমায় প্রথম কোথায় দেখেছেন? ”
জুভান মৃদু হাসল। বললো,
-” মেলায়। ”
-” মেলায়? ”
ঐশী খুব অবাক হলো। জুভান বললো,
-” হ্যাঁ। ”
-” কবে?”
-” আজ থেকে এক বছর আগে। ”
-” এক বছর আগে? কিন্তু আপনার সাথে আমার প্রথম দেখা হয় এক মাস আগে। আপনি এক বছর থেকে আমায় চিনতেন? এখন এটা বলবেন না যে আপনি আমায় সে এক বছর থেকে ফলো করতেন। ”
জুভানের ঠোঁটে বাঁকা হাস। বললো,
-” যদি বলি হ্যাঁ? ”
– ” কিন্তু কেন? এত আগে থেকে ফলো করার কারণ কি? ”

ঐশী বিস্ময়ে কথা বলতে ভুলে গেল। ঠোঁট কাপছে তার। জুভান বললো,
-” আপাতত এতটুকুই জানো। একদিন সময় করে বাকিটুকু জানাবো। এখন, অন্য টপিক! ”
ঐশী চোখ ছোট করে চেয়ে রইল জুভানের দিকে। বললো,
-” আপনি খুব কঠিন করে কথা বলছেন। ”
-” হয়তো! ”

ঐশী চুপ করে গেল। জুভানের পায়ের কাছে গিটার রাখা ছিল। জুভান হাত বাড়িয়ে গিটার নিজের কাছে আনলো। গিটারের তার ঠিক করতে করতে ঐশীকে বললো,
-” গান শুনবে, ঐশী? ”

ঐশী নিরুত্তর। জুভানের একটু আগে বলা কথাগুলো ভাবতে বসেছে ঐশী। কথার পসরাগুলো পরপর সাজিয়ে কাঙ্ক্ষিত অর্থ গঠন করার চেষ্টায় মত্ত এ নারী। মন চাচ্ছে, জুভানের বুকটা ছিড়ে তার পুরুশালী বক্ষে চট করে ঢুকে চেটে। তারপর…বুকের মধ্যকার এমন ধোঁয়াশা ভরা কথাগুলো ঠুস করে জেনে ফেলতে। এ কাজ সম্ভব কি? সম্ভব হলে বোধহয় ভালো হতো! ঐশীকে নিরুত্তর থাকতে দেখে জুভান মুচকি হাসল। নিজেই গিটারের সুরে গান ধরলো,.

একটা ছিল সোনার কন্যা
মেঘবরণ কেশ
ভাটি অঞ্চলে ছিল সেই কন্যার দেশ
দু চোখে তার আহারে কি মায়া
নদীর জলে পড়ল কন্যার ছায়া
তাহার কথা বলি
তাহার কথা বলতে বলতে নাও দৌড়াইয়া চলি
কন্যার চিরল বিরল চুল
তাহার কেশে জবা ফুল
সেই ফুল পানিতে ফেইলা কন্যা করলো ভুল
কন্যা ভুল করিস না,
কন্যা ভুল করিস না
আমি ভুল করা কন্যার লগে কথা বলবো না

জুভান চোখ বন্ধ করে গান গাইছে। মনে হচ্ছে প্রতিটা শব্দ, কথা যেন তার প্রেমিকার নামে লেখা। এত আবেগ মিশে আছে তার কণ্ঠে, ঐশী সেই গানের সুরে হারিয়েই যাচ্ছে। ঐশীর বুকের ভেতর ধুকপুক করছিল। ঐশী বুকের বা পাশ খামচে ধরে বসে রইল। কেন এমন হচ্ছে তার? কেন এক সূক্ষ্ম ব্যথা তার হৃদয়টাকে ছিদ্র করে দিচ্ছে? এই বিষাক্ত ব্যথার উৎপত্তি কোথায়?
জুভান গান থামালো। ঐশী নিজেকে সামলে হেসে বললো
-‘ আপনি খুব সুন্দর গান করেন। ”

জুভান মৃদু হেসে বললো,
-” ধন্যবাদ। ”
ঐশী চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। বললো,
-” অনেক হলো। আমি এখন আসি। ”

ঐশী দরজার পানে পা এগুতে চাইলে জুভান দুষ্টুমী করে পা দিয়ে ঐশীকে আটকে দেয়। ভারসাম্য বজায় না রাখতে পেরে ঐশী হুমড়ি খেয়ে মাটিতে পড়ে যেতে নেয়। তবে জুভান সঙ্গেসঙ্গে ঐশীর কোমড়ে হাত গলিয়ে তাকে বাঁচিয়ে নেয়। কোমড়ে জুভানের ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেতেই ঐশীর দেহে যেন বিদ্যুত শক লাগলো। ঐশী ভয়ার্ত চোখে জুভানের দিকে তাকালো। জুভান চোখ টিপে বলল,
-” সাবধানে, মিস ঐশী। আপনি হোচট খাচ্ছেন। ”

ঐশী দৃষ্টিসীমা সংকুচিত করলো। চটপট জুভানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো জুভানের দিকে। জুভানের ঠোঁটে মুচকি হাসি। ঐশী বিড়বিড় করে কি যেন বললো। অতঃপর সেই বারান্দা থেকে গটগট করে বেড়িয়ে গেল। ঐশী চলে যেতেই জুভান মাথা চুলকে মিটমিটিয়ে হাসতে লাগল।
_______________________
রিয়াদ তালুকদারের খুনের ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রায় পঞ্চাশ জন পুলিশ ইন্সপেক্টর গোল মিটিংয়ে বসেছেন। আজ সবাই প্রস্তুত হয়েই এসেছেন। মিটিং শুরু করা হলো।
সিলেটের ইন্সপেক্টর তার বক্তব্য রাখলেন,
-” রিয়াদ তালুকদারের শরীরে আমরা এ মেয়ের চুল পেয়েছি। ওই চুলের ডিএনএ টেস্ট করে এটা জানা গেছে যে, মেয়েটা মন্ত্রী আমজাদ হোসেনের ছোট মেয়ে কেয়া। ”

ইন্সপেক্টর বিজয়ের কথা শুনে গোল মিটিংয়ে বসা সমস্ত পুলিশ অফিসারদের মধ্যে একপ্রকার হইচই লেগে গেছে। সবাই অবাক হয়ে ঘাপটি মেরে বসে আছেন। মন্ত্রী আমজাদ হোসেনের মেয়ের সাথে রিয়াদ তালুকদারের কি শত্রুতা? ঢাকা সদরের ইন্সপেক্টর চিন্তায় অস্থির হয়ে মাথার ক্যাপ খুলে টেবিলে রাখলেন। চুলবিহীন মাথা চুলকে বললেন,
-” এটা কেমন করে সম্ভব? এটা হতেই পারে না। আমজাদ হোসেনের মেয়ে রিয়াদকে কেন খুন করবে? ”
-” সম্ভব স্যার। কারণ রিয়াদ তালুকদারের সাথে মিসেস কেয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here