এক্কা_দোক্কা – ২০,২১

0
960

#এক্কা_দোক্কা – ২০,২১
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
পার্ট-২০

মন্ত্রী আমজাদ হোসেনের মেয়ের সাথে রিয়াদ তালুকদারের কি শত্রুতা? ঢাকা সদরের ইন্সপেক্টর চিন্তায় অস্থির হয়ে মাথার ক্যাপ খুলে টেবিলে রাখলেন। চুলবিহীন মাথা চুলকে বললেন,
-” এটা কেমন করে সম্ভব? এটা হতেই পারে না। আমজাদ হোসেনের মেয়ে রিয়াদকে কেন খুন করবে? ”
-” সম্ভব স্যার। কারণ রিয়াদ তালুকদারের সাথে মিসেস কেয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ”

সিলেটের ইন্সপেক্টরের কথা শুনে মিটিংয়ে বসে থাকা সবার চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার জোগাড়। সিলেটের এই তরুণ ইন্সপেক্টরের নাম, জোহান মন্ডল। মাত্র পাঁচ বছর ধরে এই আত্মরক্ষা প্রোফ্যাশনে যোগ দিয়েছে। ইতিমধ্যে তার কাজের নামডাক সর্বত্র! তিনি একবার যে কেইসে হাত দেন, তাই দুর্দান্তভাবে সলভ হয়ে যায়। কিন্তু ‘রিয়াদ কেইস’ এ তার এই বয়ান সবার কাছে অবিশ্বাস ঠেকলো! কেউ বিশ্বাসই করতে চাইল না তার কথা। ঢাকা সদরের প্রধান ইন্সপেক্টর বললেন,
-” তুমি যা বলছ, ভেবে বলছো তো জোহান? তুমি জানো তোমার কথার পরিণতি কি? ”

জুহান বুক উঁচু করে প্রধান ইন্সপেক্টর সাহেদের দিকে তাকালেন। বললেন,
-” ইয়েস স্যার, আই অ্যাবসলিউট নো এবাউট ম্যাই স্টেটমেন্ট। ”

সাহেদ ক্ষুদ্রশ্বাস ছাড়লেন। জুহানের কথাটা একেবারে ফেলনা নয়। টেবিলের উপর থাকা ফরেনসিক রিপোর্ট এ জ্বলজ্বল করছে কেয়ার ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট। সাহেদ টেবিলের উপরে থাকা পুলিশ ক্যাপটা মাথায় তুলে নিলেন। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সবার ঠিক মাঝখানে এসে দাঁড়ালেন। সবার উদ্দেশ্যে বললেন,
-” মিসেস কেয়াকে নজরবন্দি করা হোক। মন্ত্রী আমজাদ হোসেনকেও তদন্তের আওতায় আনা হোক। এই কেইসের সুরাহা না হওয়া অব্দি কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ইজ দ্যাটস ক্লিয়ার? ”
-” ইয়েস স্যার। ”
সকল পুলিশ অফিসার সম্মিলিত ভাবে সায় দিলেন। অতঃপর সকল ইন্সপেক্টর হাত উঁচু করে সাহেদকে স্যালুট জানালেন। ইন্সপেক্টর সাহেদ চলে গেলেন মিটিং ছেড়ে।
______________________
কেয়া, পুরো নাম মারহাবা জাহান কেয়া। পঁচিশ বছর বয়সী টগবগে এক তরুণী। উপচে পড়া সৌন্দর্য্য এ আধুনিকা নারীতে। উপমহলের নির্দেশে পুলিশ কেয়াকে গ্রেফতার করেছে। আমজাদ হোসেন এতে জ্বলে পুড়ে আগুন হয়েছেন। বাড়ি বয়ে আসা পুলিশকে ধমকি হুমকি দিয়েছেন। তবে পুলিশ তার পরোয়া না করে কেয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে আসে।

কেয়ার হাত শিকল দিয়ে বাঁধা, অতিরিক্ত চিৎকার চেঁচামেচি করার দরুন তার পা অব্দি দড়ি দিয়ে বাধা হয়েছে। এক বদ্দ মাতাল মেয়ের এত তেজ, বিষয়টা বেশ ভাবনা চিন্তার। তবে, মেয়েটার গায়ে আমজাদ হোসেনের রক্ত আছে বলে কথা!

জোহান মন্ডল লকাপ খুলে ভেতরে প্রবেশ করলেন। কেয়ার মস্তিষ্ক তখন কিছুটা সতেজ। দুবার বমি করেছে। কেয়ার পায়ের কাছে এক দলা বমি। ছোটবেলা থেকেই জোহানের বমি সহ্য হয়না। কাউকে বমি করতে দেখলে তার নিজের বমি পায়। একধরনের ছোঁয়াচে। জোহান বমির দিকে একবার চেয়েই চোখ সরিয়ে নিল। চিৎকার করে ডাক দিল কনস্টেবলকে। জোহানের রাগ সম্বন্ধে পূর্ব হতেই ধারণা থাকায় কনস্টেবল শিহাব হন্তদন্ত হয়ে লকাপের ভেতর প্রবেশ করলো।
-” ইয়েস স্যার? ”
-” লকাপের ভেতর এত নোংরা কেন? জলদি কাউকে বলে জায়গাটা পরিষ্কার করাও। কুইক। ”
জোহান মুখে হাত চেপে লকাপ থেকে বেরিয়ে গেল। কনস্টেবল লোক লাগিয়ে জায়গা পরিষ্কার করিয়ে নিল। লকাপ ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে কেয়ার দিকে একবার তাকাল। চেতনা না থাকায় মেয়েটার মাথা বা পাশে হেলে আছে। ঠোঁট থেকে লালা গড়াচ্ছে। মাথার স্ট্রেট চুল সব মুখের উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মুখের এহেন দুর্দশা, অথচ দেহে জড়ানো ব্র্যান্ডের পোশাক। পোশাক হাঁটু অব্দি এসে থেমেছে। হাতে অ্যাপলের ওয়াচ। শিহাব তুচ্ছভরা হাসি হেসে বললো,
-‘ হায়রে বড় মানুষ। মানুষের বুক ছিঁড়ে নিজেদের শরীর সাজাস। ধ্বংস হ তোরা। ”

-” কাজ শেষ হয়েছে, শিহাব? ”
জোহানের চিৎকার শুনে শিহাব দ্রুত বেরিয়ে পড়লো লকাপ থেকে।

জোহান ও কেয়া সামনাসামনি বসে আছে। কেয়ার মাথা নিচু করে রাখা। এলোমেলো চুলের কারণে মুখটা স্পষ্ট না। জোহান তার স্টিক কেয়ার থুতনিতে রেখে মুখটা উচুঁ করলো। কেয়ার চোখ নিভে আসছে। জোহান জিজ্ঞেস করলো,
-” মাথা ঘুরছে? ”
কেয়া মাথা নাড়ালো। অর্থ, হ্যাঁ। জোহান আবারও চিৎকার করে জানালো,
-” শিহাব, এক গ্লাস কড়া লেবু পানি আনো। ”
এক মিনিটের মাথায় শিহাব লেবু পানি নিয়ে হাজির। জোহান একজন মহিলা কনস্টেবলকে বললো কেয়াকে লেবু পানি খাওয়াতে।
লেবু পানি খেয়ে কেয়া দুবার বমি করলো। এখন আগের চেয়ে কিছুটা হালকা অনুভব করছে কেয়া। চোখ দুটো ক্রমশ আলোয় পূর্ণ হচ্ছে। কেয়া মাথা উচুঁ করে জোহানের দিকে তাকাল। নিভুনিভু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
-” ক.কি চ.চাই? ”
জোহান মিষ্টি হাসলো। বললো,
-” তেমন কিছু না। শুধু কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করব। সুন্দর করে তার উত্তর দিয়ে দিলেই তুমি মুক্ত। আর যদি না দাও তবে আমার হাতের থার্ড ডিগ্রি যন্ত্রণা ভোগ করা অতটা সহজ না। বুঝা গেছে? ”

কেয়ার আগুন চোখে চেয়ে রইলো জোহানের দিকে। জোহান সেসব পরোয়া করল না। চেয়ারটা কেয়ার দিকে একটু টেনে গা টানটান করে বসলো। বললো,
-” আমার প্রথম প্রশ্ন হলো, রিয়াদ তালুকদার কে? ”
-” আমি জানিনা। ”
কেয়ার নির্লিপ্ত উত্তর। জোহান ত্যাড়া চোখে তাকালো কেয়ার দিকে। দ্বিতীয় প্রশ্ন করলো,
-” থার্টি ফার্স্ট নাইটে রিয়াদ তালুকদারের বাড়িতে তুমি কি করছিলে? ”
-” আম.আমি জানিনা। ”
-” ওকে, আমার তৃতীয় প্রশ্ন রিয়াদ তালুকদারকে কেন খুন করলে তুমি? ”

কেয়া এবার আঁতকে উঠলো। চিৎকার করে বললো,
-” আমি রিয়াদকে খুন করিনি। ”
কেয়ার চিৎকারে জোহানের কানের পোকা বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। সে কানে আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে কান পরিষ্কার করতে করতে বলল,
-” আরে, কুল মিস কেয়া। ইটস নট অ্যা প্রেশার। কুল,কুল। ”

কেয়া শান্ত হলো না। রাগে ফুশফুশ করছে সে। হাত, পা বাঁধা তাই জোহান নামক অ্যাটিটিউড গুরুর কান ছিঁড়ে ফেলত সে। জোহান তার পাশে দাঁড়ানো মহিলা কনস্টেবলকে বললো,
-” তুলি সরকার, এক গ্লাস পানি দাও ম্যাডামকে। চিৎকার চেঁচামেচি করে ম্যাডাম ক্লান্ত হয়ে গেছেন। তাইনা, ম্যাডাম? ”

মাত্রাতিরিক্ত রাগে কেয়ার মাথা ফেটে যাচ্ছে। মহিলা কনস্টেবল কেয়ার দিকে পানি এগিয়ে দিল কেয়া সেটা মুখ দিয়েই গ্লাস মাটিতে ফেলে দেয়। স্টিলের গ্লাস মাটিতে পড়ে ঝনঝনিয়ে শব্দ করে। জোহান গ্লাসের দিকে তাকিয়ে চোখে হাসে। পুনরায় কেয়ার দিকে চেয়ে বলে,
-” অতি রাগ স্বাস্থের জন্য ভালো না, ম্যাডাম। আচ্ছা যান, এই কাজের জন্যে আমি আপনাকে মাফ করতেই পারি। আমার দয়ার মন। এবার কাজের কথায় আসা যাক। ”

জোহান নিজের পকেট থেকে একটা ট্রান্সপারেন্ট ব্যাগ বের করে। ব্যাগের ভেতরে কেয়ার একটা চুল। জোহান সেটা দেখিয়ে বলে,
-” এই চুলটা আমরা রিয়াদ তালুকদারের বডিতে পেয়েছি। এখন হয়তো আপনি বলবেন, চুলটা আপনার না। কিন্তু লাভ নেই। আজকাল প্রযুক্তি অনেক উন্নত। ফরেনসিক বলে কিন্তু একটা কথা আছে। এবার বলুন, আপনার চুল কি করে রিয়াদ তালুকদারের বডিতে এলো? ”

কেয়া এবার একটুখানি দমে গেল। বললো,
-” এটা সত্যি আমি থার্টি ফার্স্ট নাইটে রিয়াদের বাসায় গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি ওর সাথে দেখা করতে পারিনি। তার আগেই আমার ঘাড়ে কেউ কিছু একটা ইনজেক্ট করে। আমি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যাই। তারপরে আমার আর কিছু মনে নেই। যখন চোখ খুলে তখন রিয়াদের বাড়িতে পুলিশ, মন্ত্রী সবাই ছিল।আমার অনেক কথা ধরেছিল, তাই আমি বিষয়টা আর ঘাটায় নি। চলে এসেছি বাড়িতে। ”

জোহান মুচকি হাসলো। বললো,
-” রিয়াদের বাসায় গিয়েছিলাম,আব… রি.য়া.দ।
সম্বোধনে শুধুমাত্র রিয়াদ বলে আপনি কি বুঝাতে চাইলেন, মিস কে…য়া? ”

কেয়া হকচকিয়ে গেল। জোহানের তখোর নজরদারিতে তার গলা শুকিয়ে এল। কেয়া আমতা আমতা করে বলল,
-” বাবার সুবাদে চিনি আমি ওকে। ”
-” এক মিনিট, “ও..কে’ ? এই ‘ও..কে’ বলতে কি বোঝাতে চাইলেন আপনি মিস কেয়া? রিয়াদ তালুকদারের সাথে আপনার সম্পর্ক কি শুধুই একটা ফর্মালিটি। নাকি এর চেয়েও বেশি কিছু? ”

জোহান ভ্রু নাচালো। কেয়া জিহ্বায় কামড় দিল। একের পর এক কথায় জালে ফেঁসে যাচ্ছে সে। কেয়ার কপাল ঘামতে আরম্ভ করলো। জোহান কিঞ্চিৎ হাসলো। চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে কেয়ার চারপাশে ঘুরতে লাগলো ক্রমাগত। কেয়ার নার্ভাস লাগছে। বুক ধুকপুক করছে। এই পুলিশ ইন্সপেক্টর কিছু ধরে ফেলবে না তো? তার করা সেই ভয়ঙ্কর অন্যায়….জেনে ফেলবে না তো?

#চলবে

#এক্কা_দোক্কা – ২১
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

জোহান ক্রমশ কেয়ার কানের কাছে ঝুঁকে এল। কেয়া স্থিরচিত্তে নিজ স্থানে বসে আছে। রুদ্ধশ্বাস অবস্থা! জোহান কেয়ার কানেকানে বললো,
-” রিয়ার তালুকদার ও আপনার মধ্যকার দ্বন্দ্বযুদ্ধের কথা আপনি মুখে বলবেন নাকি আমি আমার ওয়েতে স্বীকার করিয়ে নেবো, মিস কে…য়া? ”

জোহানের টেনে টেনে বলা সম্বোধনে কেয়ার মুখের রং পাংশুটে হয়ে গেল। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে উঠলো সে,
-” কি সব আজেবাজে বকছেন? তার সাথে আমার কোনোরূপ বিরোধ নেই। বুঝেছেন? ”
-” ওহ, তাই নাকি? তাহলে আপনাকে একটা গান শোনানো যাক, মিস কেয়া। কি বলেন? ”

কেয়া প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকাল জোহানের দিকে। জোহান মিহি হাসল। পুলিশের সরকারি ফোন বের করে একটা ফোন কলের রেকর্ড অন করলো। শুনা যাচ্ছে তাতে,
-” রিয়াদ, তুমি এটা করতে পারো না! ”
রিয়াদের গলা,
-” কেন পারিনা! রোজ রোজ একই স্বাদের বিরিয়ানি খেতে কার ভালো লাগে বলো ত! স্বাদ বদলের প্রয়োজন এখন আমার। ”
-” আমি তোমায় ভালোবাসি, রিয়াদ! ”
-” তো আমিও তো বাসি। কিন্তু ভালোবাসলে যে এক দেহেই আটকে থাকতে হবে, তেমন ত কোনো কথা আমাদের মধ্যে হয়নি। ”
-” প্লিজ, রিয়াদ। পায়ে পড়ি তোমার। ওই মেয়েকে তুমি স্পর্শ করো না। আমার গা জ্বলে ওই মেয়েকে দেখলে। আমি তোমার পাশে ওই মেয়েকে মেনে নেব না। কিছুতেই না। ”
-” তো মেনো না। কে বলছে মানতে? তবে হ্যাঁ, বিয়ে আমি তোমাকেই করব। ঘরে পার্মানেন্ট থাকবে তুমি, আর বাইরেরটা আমি জোগাড় করে নেব। চিল, বেবি। ”
-” তুমি যদি ঐ মেয়েকে স্পর্শ করো, আমি তোমায় সত্যি সত্যি খুন করে ফেলব রিয়াদ। ”
কেয়ার তেজপূর্ণ কণ্ঠ।
-” করতে পারলে করে ফেলো। ”
-” আমি সিরিয়াস, রিয়াদ। ”
-” আমিও সিরিয়াস। তুই আমায় খুন করতে আয়, আমি তোর সামনে ওই মেয়েকে আমি স্পর্শ করব। তুই আমার টিকিটারও কিচ্ছুটি করতে পারবি না, শা/লি। ”

টুট..টুট…টুট! ফোন কেটে গেছে। জোহান চেয়ে আছে কেয়ার দিকে। কেয়ার চোখ আগুন হয়ে আছে। চোখের মণি ক্রমশ খয়েরী হয়ে যাচ্ছে। মস্তিষ্কে ঘুর্নিপাক খাচ্ছে প্রতিশোধের কালো ঝড়। মনে পড়ছে জীবনের কিছু দুর্বিষহ স্মৃতি! কেয়া পাগলের মত মাথা নাড়ালো। চিৎকার করে বলল,
-” হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমি গিয়েছিলাম ঐ কুকুরের বাচ্চাকে খুন করতে। তার জান আমার এই দুই হাতে কবজ করে ফেলতে চেয়েছিলাম। নিজ হাতে জঘন্যভাবে মারতে চেয়েছিলাম আমি। কিন্তু আমি তাকে মারতে পারিনি। তার আগেই ব্যাটা মরে গেল। কেউ আমার বদলে তাকে খুন করে ফেললো। আমার ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে গেল। আফসোস! ”

কেয়ার চিৎকারে সম্পূর্ণ লকাপ তরতর করে কম্পিত হলো যেন। জোহান স্বাভাবিক চোখে কেয়ার দিকে চেয়ে আছে। এমন কেইস জীবনে সে অনেক দেখেছে। ভালোবাসলে, সেই ভালোবাসার পরাজয় হতে সে দেখেছে। আপনকে নিমিষেই পর হয়ে যেতে দেখেছে। আরো কত কি দেখেছে…

কেয়ার দু চোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে। পাগলের মত কাঁদছে সে। হাত পা দড়ি থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে ক্রমাগত! জোহান কেয়াকে সময় দিল। মহিলা কনস্টেবলকে কেয়ার দেখাশোনা করার দায়িত্ব দিয়ে সে পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে গেল। আজ একবার মিতুর সাথে দেখা করা দরকার। দেখা হওয়ার পর মিতুকে একটা পাঁচ টাকার গোলাপ উপহার দিলে কেমন হয়? খুশিতে মেয়েটা পাগল না হয়ে যায়!
__________________________
জুভান স্টুডিওর উদ্দেশ্যে বেরুবে একটু পরই। আজ একটা মিটিং আছে তার। নিজের একটা মিউজিক ব্যান্ড করার খুব ইচ্ছে জুভানের। সে আপাতত সেই অনুযায়ীই এগুচ্ছে। আজকের মিটিংটা মূলত এই নিয়েই।

-” আসবো? ”
দরজার টোকা দিয়ে বললো ঐশী। জুভান বা হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে গলা উঁচু করে বললো,
-” আসো, ঐশী। ”
ঐশী ভেতরে ঢুকলো। বেশভূষা দেখে মনে হচ্ছে ঐশী কোথাও যাচ্ছে। জুভান আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো। চুলে চিরুনি চালিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-” কোথাও যাচ্ছ, ঐশী? ”
ঐশী উত্তর দিল,
-” একটু আশ্রমে যাব। ”
-” ওহ, গ্যারেজে গাড়ি আছে। নিয়ে যেও। ”
ঐশী বাঁধা দিল,
-” না, গাড়ি লাগবে না। আমি একাই যেতে পারব। ”
জুভান তীক্ষ্ণ চোখে আয়নায় ঐশীর প্রতিবিম্বের দিকে তাকালো। ভ্রু নাচিয়ে বলল,
-” তোমাকে আমি জিজ্ঞেস করেছি? ”
ঐশী ভ্রু কুঁচকালো। বললো,
-” মানে? ”
-” আমি তোমায় আমার ফয়সালা শুনাচ্ছি। একা কোথাও যাচ্ছ না তুমি। গাড়ি থাকবে, গাড়ি দিয়ে যাবে, আর গাড়ি দিয়েই ফিরবে। বুঝা গেছে? ”
ঐশী মনেমনে ভালোই বিরক্ত হলো। বললো,
-” আমি কি আগে একা কোথাও যাইনি, নাকি এই প্রথম? ”

জুভান চমৎকার হাসল। ডান গালে সুন্দর একটা টোল পড়লো তাতে। ঐশী হকচকিয়ে গেল। এত সুন্দরও কারো হাসি হয়? ঐশীর বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেল। জুভান চিরুনি রেখে দিল। ঐশীর দিকে এগিয়ে এসে মুখ রাখলো ঐশীর কানের লতিতে। ঐশীর শরীর শিহরিত হল। পা দিয়ে খামচে ধরলো কার্পেট। জুভান ঐশীর শরীরের কাঁপুনি স্পষ্ট বুঝতে পেরে বক্র হাসল। ঐশীর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,
-” আগে তুমি যেমনই থাকো না কেন, আমার তাতে বিদুমাত্র মাথাব্যাথা নেই। কিন্তু এখন তুমি ইজহার জুভান মির্জার লিগ্যাল ওয়াইফ! আর জুভান তার ব্যাক্তিগত মানুষকে যথাযথভাবে আগলে রাখতে জানে, মিস ঐশী! তাছাড়া, সুন্দরী মেয়েদের একা ছাড়ার নিয়ম নেই। পাপ লাগে। ”

জুভান শিস বাজিয়ে জিন্সের পকেটে দুহাত গুঁজে চলে যাচ্ছে। ঐশী এখনো স্থির হয়ে নিজ স্থানে দাড়িয়ে। গা টা কি কাঁপছে তার? ঐশী বুকে হাত রাখল। বুকটা এমন অদ্ভুত ভাবে লাফাচ্ছে কেন? কানে হাত দিল। ওমা, কান এত গরম হয়ে আছে কেন? ঐশী কি লজ্জা পাচ্ছে? না, না এটা হতেই পারে না। ঐশী দ্রুত নিজের অনুভূতিকে সামলে নিল। ঐশী এখন এমন একটা পরিস্থিতিতে দাড়িয়ে আছে, যেখানে কারো জন্যে তার অনুভূতি জন্মানো পাপ সমান! জুভানের থেকে ঐশীকে আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে!
________________________________
জুভানের বলা সত্ত্বেও ঐশী জুভানের গাড়ি নেয়নি। জুভানের কথা মানা মানেই তার দিকে আরো এক কদম এগিয়ে যাওয়া। সেটা ঐশী চায়না। ঐশীর কাজ শেষ হলেই, সে জুভানকে ছেড়ে চলে যাবে। সত্যি বলতে তো সে জুভানকে নিজের স্বার্থের জন্য বিয়ে করেছে। স্বার্থপর সে! খুব বেশী স্বার্থপর!

ঐশী রিকশায় হুড তুলে বসে ছিল। মাস্ক দ্বারা মুখের বেশিরভাগ অংশ ঢাকা। বৌভাতের পর থেকে ঐশীকে বাংলাদেশের সবাই চেনে। তাই একা একা কোথাও বেরুনো মুশকিল হয়ে পড়েছে ওর জন্যে। মনের ভাবনায় বুদ হয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঐশীর চোখ ভিজে এল, সে খেয়াল কেই-বা রাখল?

আশ্রমের সামনে এসে ঐশী রিকশা থেকে নেমে দাঁড়ালো। রিকশা ভাড়া মিটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতেই কেউ ঐশীর মুখে গন্ধযুক্ত রুমাল চেপে ধরে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ঐশী চোখ তুলে তাকায়। সঙ্গেসঙ্গে সে চমকে উঠে। জ্ঞান হারানোর এক পর্যায়ে নিভুনিভু কণ্ঠে বলে উঠে,
-” অ..ন..ল ”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here