এক্কা_দোক্কা – ৬,৭

0
912

#এক্কা_দোক্কা – ৬,৭
আভা ইসলাম রাত্রি
পার্ট-৬

রাত আনুমানিক একটা বাজে তখন। জুভানের বন্ধু-বান্ধব বাকি নিয়ম পুঙ্খানপুঙ্খভাবে পালন করে তবে নিস্তার দিল তাদের। তারা চলে যেতেই জুভান সিটকেনি আটকে দিল। ঐশী ততক্ষণে বাথরুমে চলে গেছে। জুভান খানিকটা অবাক হলো। এই মেয়ের আচরন দেখলে কেউই বলবে না, মেয়েটা সদ্য বিবাহিত। লাজ-লজ্জাহীন এক আশ্চর্য্য মেয়ে! এই মুহূর্তে মেয়েটার লজ্জায় কুঁকড়ে যাওয়ার কথা! অথচ তা হলো না। বরং এতক্ষণ অব্দি মেয়েটার মুখে লজ্জার ছিঁটে-ফোঁটাও দেখা যায়নি। জুভান অবাক হলো বেশ! সে ফুস করে এক নিঃশ্বাস ফেলে গা থেকে শার্ট ছাড়িয়ে নিল। বড্ড গরম লাগছে তার। নাকের উপর বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে। জুভান টিস্যু দিয়ে মুখ মুছলো। টিস্যুটা বিনে ফেলে দিয়ে কাবার্ড থেকে একটা টি শার্ট বের কেউ গায়ে গলিয়ে নিল। গরমে অতিষ্ট হয়ে এসি ছাড়তেও ভুলে নি।
একটু পর বাথরুমের দরজা খোলার শব্দ হলো। জুভান তাকালো না সেদিকে। চুপচাপ ল্যাপটপ নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ল্যাপটপ অন করতে করতে বলল,
-” আজ আমার রুমেই ঘুমিয়ে পড়। অনলরা আজ এ বাড়িতে ঘুমাবে। কাল ওরা চলে গেলে অন্য রুমে শিফট করে দেবো তোমায়। ”
ঐশী দ্বিমত প্রকাশ করলো না। লাগেজ থেকে ক্রিম আর ভেসলিন বের করে মুখে-ঠোঁটে দিয়ে দিল। অতঃপর জুভানের পাশে এসে দাঁড়াল। স্পষ্টভাবে প্রশ্ন করলো,
-” আমি কি আপনার সাথে বিছানায় ঘুমাবো? ”
ঐশীর প্রশ্ন শুনে জুভানের ভ্রু কুঁচকে এলো। করলার ন্যায় তিতা রস গলা ভিজিয়ে ফেললো। বিদঘুটে লাগলো ঐশীর কথা! জুভান ভ্রু বাঁকিয়ে ঐশীকে বললো,
-” তুমি কি চাইছ? টিভি সিরিয়ালের মত তুমি বিছানায় ঘুমাবে আর আমি সোফা বা ফ্লোরে ঘুমাবো? ”
ঐশীর রাগ লাগলো। বললো,
-” আমি কখন তা বললাম? ”
-” না, তোমার কথার মানে তো এটাই দাঁড়াচ্ছে। ”
ঐশী দিশেহারা হয়ে পড়ল। জুভান এভাবে তাকে কথার মারপ্যাঁচে হারিয়ে ফেলবে সেটা সে একটুও বুঝতে পারে নি। ঐশীর বেশ রাগ হলো। সেই রাগে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিতে চাইলো জুভানের কন্ঠনালী, যে কন্ঠনালী তার মস্তিষ্ক তারের ন্যায় পেঁচিয়ে দিচ্ছে! ঐশী কিছু একটা বলতে যাবে, তার আগেই জুভান ল্যাপটপে চেয়ে বললো,
-” কাভার্ডে একটা এক্সট্রা কাঁথা আছে। ওটা গায়ে দিয়ে বিছানায় নিশ্চিন্তে শুয়ে পড়। আমার তোমার কাছ ঘেঁষার একটুও ইচ্ছে নেই। সো রিলাক্স! ”
জুভানের কথাটা ঐশীর মনে ধরলো। সে গটগট পায়ে হেঁটে কাবার্ড থেকে কাঁথা বের করে জুভানের পাশে শুয়ে পড়লো।
ঐশীর ঘুমানোর তালে বিছানায় যেনো ভূমিকম্প বেয়ে গেলো। জুভানের কোলের উপর থাকা ল্যাপটপটা অব্দি কেঁপে উঠলো। জুভান ল্যাপটপ শক্ত হাতে চেপে ধরো রক্তলাল চোখে ঐশীর পানে তাকালো। ঐশী যে রেগে আছে সেটা জুভান বেশ বুঝতে পারলো। রাগলে রাগুক, ওর কি? সত্য কথা কি কোনো নারীই সহ্য করতে পারে না? কি জানি। হয়তো না, হয়তো হ্যাঁ! নারী মন বোঝা এ ভুবনের কারো সাধ্য নয়। আল্লাহ তায়ালা নারীকে এমনভাবে রহস্য দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। নারী মনের এই রহস্য পুরুষকে তাদের দিকে আকৃষ্ট করতে বাধ্য করে। পুরুষরা নারীদের রহস্য উন্মোচিত করতে চায়। রহস্যের মায়ায় তারা নারীদের সান্নিধ্যে আসে। ফলে তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় প্রেমের বন্ধন। রহস্য রহস্যই রয়ে যায়। পুরুষরা সেই রহস্য উন্মোচন করতে ব্যর্থ হয়। সেই ব্যর্থতার গ্লানি ঢাকতে গিয়ে তারা নারীদের রহস্যমনের প্রেম পড়ে যায়। এভাবেই পুরুষ-নারীর মধ্যে প্রেম তৈরি হয়। হায়, বিধাতার লীলাখেলা বোঝা মানুষের কাম্য নয়।
______________________
জুভানের বাড়িতে রাতে ঘুমানোর জন্যে অনলদের দুটো কক্ষ দেওয়া হয়েছে। পুষ্পিতা আর অপর্ণা এক কক্ষে, অনল একটা অন্য কক্ষে।
অপর্ণা ঘুমিয়ে পড়বে, ঠিক তখন তার মনে হলো তার ত আজ মেডিসিন নেওয়ার কথা। একদম ভুলে গেছিল সে। অপর্ণা উঠে বসলো। পুষ্পিতার দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-” পুষ্প, তোর কাছে আমার ডিপ্রেশনের মেডিসিন দিয়েছি?”
পুষ্পিতা হাই ছাড়লো। কোলবালিশটা গায়ের সাথে মিশিয়ে পাশ ফিরে বললো,
-” ঘুমা তো অপু। কি লাভ হয় প্রতিদিন এই ডিপ্রেশনের মেডিসিন খেলে? উল্টো তোর নিজেরই ক্ষতি। ঘুমা,আজ খাওয়ার দরকার নেই। জুভানের বিয়ের জন্যে তোর ডিপ্রেসন তো এমনিতেই কেটে যাওয়ার কথা। ”
অপর্ণা রেগে গেলো। থমথমে কণ্ঠে বলল,
-” তুই দিবি কিনা বল। রাগ উঠাস না আমার। ”
অপর্ণার কথায় পুষ্পিতা বেশ বিরক্ত হলো। ঘুমের মধ্যে ডিস্টার্ব তার একটুও পছন্দ না। পুষ্পিতা বিরক্ত হয়ে বলল,
-” আমার কাছে নেই। আমি এখানে আসার আগে অনলের কাছে দিয়েছিলাম। ওকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর। ”
রাগে দুঃখে এবার যেনো অপর্ণা কেঁদে ফেলবে। যার কাছ থেকে সে ক্রমশ পালাতে চায় সে’ই ঘুরেফিরে অপর্ণার কাছে চলে আসে। অপর্ণার মন চাইলো, পুষ্পিতাকে ঘুম থেকে তুলে শক্ত এক আছাড় দিতে। কি করে সে এত বেপরোয়া হতে পারলো? অপর্ণার চোখে জল চলে এল। সে পুষ্পিতার গায়ে জোরে এক থাপ্পড় দিয়ে বললো,
-” পুষ্প, তুই কি করে ঔ মেডিসিনের বাক্স অনলের হাতে দিতে পারলি। তুই আমার সব কথা জানিস, তাও এটা করতে পারলি? ”
অপর্ণার অশ্রুতে টইটুম্বুর কণ্ঠ শুনে পুষ্পিতার ঘুম চলে গেলো। সে উঠে বসে অপর্ণার দিকে ফিরল। অপর্ণার চোখে জল। যেকোন মুহূর্তে মেয়েটা এই কক্ষেই সাগর বইয়ে দিবে।
পুষ্পিতা অপর্ণাকে বোঝানোর ভঙ্গিতে বলল,
-” দেখ অপু। ভালবাসার কাছ থেকে কখনো পালানো যায়না। ভালোবাসাটা হলো অনেকটা শক্তিশালী চুম্বকের মত। তুই তার থেকে যত পালাবি ততই তোর মনের সাথে লেপ্টে যাবে। তুই একটুও পারবি না, একে অবহেলা করতে। আমার কথা বুঝতে পেরেছিস? ”
পুষ্পিতা অনেক ভালো করে অপর্ণাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও অপর্ণা তা বুঝতেই নারাজ। সে এখনো পুষ্পিতার উপর রেগে আছে। এই রাগের কারণে সে পুষ্পিতার সাথে একটাও কথা বললো না। গায়ের হালকা গোলাপী রঙের টিশার্ট টেনেটুনে ঠিক করে অনলের কক্ষের দিকে চলে গেলো। পুষ্পিতা শুধু চেয়ে রইলো তার পথের দিকে।

-” অনল, দরজা খোল। কাজ আছে। ”
অনলের দরজায় দুবার টোকা দিয়ে অপর্ণা ডেকে উঠলো। অনল তখন মানিব্যাগে থাকা ঐশীর ছবির দিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে ছিল। দরজায় করাঘাত আর অপর্ণার কণ্ঠ শুনে সে তাড়াহুড়ো করে মানিব্যাগটা পকেটে পুড়ে নিল। ভেজা চোখজোড়া মুছে নিয়ে দরজার লক খুলে দিল। অনল কণ্ঠানালি স্বাভাবিক করে জিজ্ঞেস করলো,
-” কি কাজ তোর? ”
অপর্ণা শুনতে পেলো না অনলের কথা। সে তখনও ভ্রু কুঁচকে অনলের দিকে চেয়ে। অনল কান্না করছিল, সেটা তার সচেতন মস্তিষ্ক বুঝতে পেরে গেলো ক্ষনিকেই। অপর্ণা নিজের কৌতূহল দমিয়ে রাখতে পারলো না। জিজ্ঞেস করে বসলো,
-” কি হয়েছে তোর? চোখ ভেজা কেনো? কান্না করছিলি নাকি? ”
অনল অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। নজর লুকানোর চেষ্টা করে বললো,
-” বাজে বকিস না তো। কি করতে এসেছিলি, করে বিদায় হ। আমার ঘুম পাচ্ছে, ঘুমাবো। ”
অনলের কথায় অপর্ণা কষ্ট পেলো। তার ঠোঁট থেকে কথা ফুরিয়ে গেল। চাপা কান্না উত্তাল-পাত্তাল করে ফেললো তার সর্বাঙ্গ। অপমানে মুখশ্রী লাল টকটকে হয়ে উঠলো। সে নতমুখে জিজ্ঞেস করলো,
-” আমার মেডিসিনের বক্স তোর কাছে আছে। ওটা দে। ”
অনল একবিন্দুও দাঁড়ালো না। হেঁটে গিয়ে তার ব্যাগ থেকে মেডিসিনের বক্স এনে অপর্ণার হাতে ধরিয়ে দিল। খচখচ কণ্ঠে বলল,
-” এবার যা। শান্তি দে একটু আমায়। ”
অনল অপর্ণার মুখের সামনে দরজা আটকে দিল। অপমানে অপর্ণার গলা তেতো হয়ে গেলো। গালদুটো হয়ে উঠলো সূর্যের ন্যায় উত্তপ্ত। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল দুফোঁটা অবাধ্য জল। এই অনলটা এমন কেনো?

#চলবে

#এক্কা_দোক্কা – ৭
আভা ইসলাম রাত্রি

রাত পেরিয়ে ভোর এলো। উত্তপ্ত সূর্য মেঘের আড়ালে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। মেঘের সাথে সূর্যের দুষ্টুমিপূর্ণ লুকোচুরি খেলা চলছে। ঐশী বারান্দায় দাঁড়িয়ে তার পরবর্তী পরিকল্পনার ছক সাজাচ্ছিল। এখন থেকে সে শত্রুর দূর্গে অবস্থান করছে। এই বিয়ে দ্বারা সে শত্রুর দূর্গে নিজের খুঁটি শক্ত করে ফেলেছে। শত্রুর সান্নিধ্যে থেকে একে একে সব দুশমনকে খেয়ে ফেলবে সে। এক জঘন্যতম মৃত্যু প্রদান করবে তাদের। তাদের সে মৃত্যদণ্ডে আসমান-জমিনসহ পুরো ব্রহ্মাণ্ড কেঁপে কেঁপে উঠবে। ঐশী ঠোঁট টেনে হাসলো। সময় তবে এসেই গেল। এগারোটা বছর ঐশী অপেক্ষা করেছে এই দিনের। আজ সব ঐশীর হাতের মুঠোয়। ঐশী ঘাড় ঘুরিয়ে বিছানার দিকে তাকালো। জুভান নিশ্চিন্তে উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত অবস্থায় ছেলেটার চেহারার সৌন্দর্য্য যেন সীমা ছাড়িয়ে যায়। ঐশী আর বিলম্ব করল না। বারান্দা থেকে বেরিয়ে নিজের ব্যাগ থেকে একটা সুতি শাড়ি নিয়ে বাথরুমে চলে গেল।

বাথরুম থেকে ঐশী পুষ্পিতা ও অপর্ণার কণ্ঠ শুনতে পেল। ওরা জুভানের সাথে কথা বলছে। আসলে এদের কথা শুনে কেউ ভাববে না যে তারা শুধু কথা বলছে। মনে হচ্ছে খ্যাকখ্যাকিয়ে ঝগড়া করছে তারা। ঐশী হেসে ফেলল। বন্ধুদের সাথে কথা বললে সেও এমনই করে। চুলে গামছা পেঁচিয়ে ঐশী বাথরুম থেকে বের হল। ঐশীকে লক্ষ্য করতে পেরে পুষ্পিতা এগিয়ে আসল। ঐশীর দিকে চেয়ে বলল,
-” আজ জুভানের মামা এ বাড়িয়ে আসবেন। উনার জন্যে ভালোমন্দ কিছু রাঁধতে হবে। তুমি দেখিয়ে দিবে, আমি চটপট রেঁধে ফেলব। ”
ঐশী হাসলো। ঐশীর এ হাসিটা পুষ্পিতার কাছে আলগা আলগা মনে হল। কেমন করে যেন হাসে মেয়েটা। তবে পুষ্পিতা পাত্তা দিল না। বললো,
-” আচ্ছা, তুমি তৈরি হয়ে নাও। আমি রান্নাঘরে যাচ্ছি। ”
ঐশী বাঁধ সাধলো। বললো,
-” না! আজ সব রান্না আমি একা হাতে রান্না করব। তুমি শুধু আমার হেল্প করবে, তাতেই হবে। ”
পুষ্পিতা বেশ অবাক হল। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
-” আর ইউ সিউর, তুমি রান্না করবে? ”
ঐশী ঠোঁট টেনে হাসলো।
-” হু, আমি আসছি। তুমি অপেক্ষা করো। ”
পুষ্পিতা আর কথা বাড়ালো না। জুভানকে ঘুম থেকে উঠতে বলে রান্নাঘরে চলে গেলো। পুষ্পিতার পিছু পিছু অপর্ণাও বেরিয়ে গেলো। ওরা বেরিয়ে যেতেই ঐশী মাথায় গামছা খুলে বারান্দায় মেলে দিল। শাড়ির আঁচল কাঁধে তুলে বেরিয়ে গেলো কক্ষ থেকে। জুভান পেছন থেকে ভ্রু কুঁচকে ঐশীর দিকে চেয়ে। মেয়েটার হঠাৎ এমন বউ-বউ ব্যবহার করা তার বেশ খটকা লাগছে। হঠাৎ কি হলো এই মেয়ের?
_____________________________
দরজায় করাঘাতের শব্দে ঘুম ভেংগে গেল অনলের। গতকাল ঐশীর চিন্তায় কখন যে ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়াল করেনি। অনল দুহাত দিয়ে চোখ কচলে দেয়ালে ঝোলানো ঘড়ির দিকে তাকালো। দশটা বিশ বাজে। অনল একপল নিজের দিকে তাকালো। বিধ্বস্থ লাগছে তাকে। গায়ের ইন করা শার্ট এলোমেলো হয়ে আছে। চুলগুলো উল্টে পাল্টে বিশ্রী অবস্থা! অনল শার্ট টেনেটুনে ঠিক করার চেষ্টা করলো। কিন্তু শার্ট ঠিক হওয়ার পরিবর্তে আরো এলোমেলো হয়ে গেলো। অনল হাল ছেড়ে দিল। ঘরময় সিগারেের বিশ্রী গন্ধ নাকে লাগছে। সেই গন্ধে তার নিজেরই গা গুলিয়ে আসছে। অনল ঘর ঠিক করতে করতে পুনরায় দরজায় করাঘাত করে উঠলো। ওপাশ থেকে পুষ্পিতা ডেকে উঠলো,
-” অনল, নাস্তা খাবি না? বেরো ঘর থেকে। ”
অনল আর অপেক্ষা করল না। বিধ্বস্থ ঘরকে তার মত করেই ছেড়ে দিয়ে দরজা খুলে দিল। চোখ কচলে বললো,
-” তোরা যা। আমি নাস্তা করবো না। ”
অনলের কথা শুনে পুষ্পিতার ভ্রু অটোমেটিক কুঁচকে এলো। সে হাত বাড়িয়ে অনলের কপাল পরীক্ষা করলো। না, জ্বর নেই। পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো,
-” কি হয়েছে তোর? রাত থেকে এমন করছিস কেন? আর ঘরের এ কি অবস্থা করেছিস? তুইও না। আস্ত এক পাগল। সর, ঘর ঠিক করতে দে আমায়। ”
কথাটা বলে পুষ্পিতা অনলকে পাশ কাটিয়ে তার ঘরে প্রবেশ করলো। ঘরে সিগারেটের গন্ধে পুষ্পিতার গা গুলিয়ে এলো। সে মুখে হাত চেপে সম্পূর্ণ ঘর পরিষ্কার করতে লেগে গেল। অনল দুবার বাঁধা দিতে চাইলো। তবে পুষ্পিতার রক্তলাল চোখ দেখে আর কথা বলতে পারলো না। সেখানেই দমে এলো। পুষ্পিতা একা রুমে রেখে অনল বাথরুমে চলে গেল। পানির টেপ ছেড়ে দু আজলা ভর্তি পানি নিজের মুখে ছিটিয়ে নিল। কষ্টে হাত পা কাঁপছে তার। মনে হচ্ছে এখুনি ফ্লোরে লুটিয়ে পড়বে সে। মুখ থেকে সিগারেটের গন্ধ আসছে। ব্রাশ করার পরও যাচ্ছে না। তাই অনল উপায় না পেয়ে মুখে পারফিউম স্প্রে করে নিল। ইশ, বিদঘুটে টেস্ট। অনলের বমি চলে এলো। মুখে হাত চেপে সে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো। পুষ্পিতা তার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অনল খাবার ঘরে যেতে যেতে গম্ভীর সুরে পুষ্পিতাকে বলল,
-” চল মেরি মা। ”
পুষ্পিতা মুচকি হেসে অনলের পিছু পিছু এগিয়ে এলো।

খাবার টেবিলে একে একে সবাই বসে আছে। জুভান, ঐশী পাশাপাশি বসে আছে। ঐশী বসতে চায়নি। কিন্তু পুষ্পিতার কথায় শেষপর্যন্ত বসতে বাধ্য হলো। জুভান সেই কখন থেকে লক্ষ্য করছে, অপর্ণা শুরু থেকে একটাও কথা বলছে না। জুভানের বেশ খটকা লাগলো। সে অপর্ণার কাঁধে হাত রাখলে অপর্ণা চমকে উঠে। জুভান স্বাভাবিক সুরে জিজ্ঞেস করে,
-” কি হয়েছে তোর? মন খারাপ লাগছে কেন তোকে? ”
অপর্ণা ব্যতিব্যস্ত হয়ে অনলের দিকে তাকালো। অনল তখন ভ্রু কুঁচকে ঐশীর দিকে চেয়ে। অপর্ণা তাড়াহুড়ো করে চোখের কোণার জল মুছে নিল। বললো,
-” আরে কিছু না। বাদ দে। নাস্তা শেষ করে। আমার বাসায় যেতে হবে, মম ফোন করছে বারবার। ”
জুভান বিশ্বাস করলো না অপর্ণার কথা। জুভানের সচেতন মস্তিষ্ক তাকে মুহূর্তেই জানান দিল, ‘ অনল আর অপর্ণার মধ্যে কোনো ম্যাজোর সমস্যা হয়েছে। ‘ তবে অপর্ণা যখন বলতে চাইছে না, তখন বাদ দেওয়াই উচিত। কারো এভাবে প্রাইভেসি নষ্ট করার কোনো অর্থ নেই।

হঠাৎ জুভানের বাড়ির কলিংবেল বেজে উঠলো। সার্ভেন্ট এগিয়ে এসে দরজা খুলে দিল। দেখা গেল এক মধ্যবয়স্ক লোককে। তাকে দেখেই জুভানের চোখ উজ্জ্বল হয়ে গেল। সে খাবার ছেড়ে উঠে গিয়ে লোকটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। লোকটা নিজেও জুভানের পিঠে হাত রেখে চোখ বুজলেন। জুভান সরে এলো লোকটার থেকে। তাকে চেয়ার টেনে বসতে বললো। লোকটা সবাইকে ‘ গুড মর্নিং ‘ বলে চেয়ারে বসে পড়লো। জুভান তাকে ঐশীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল।
-” ঐশী, ইনি আমার মামা হন। আমার মা-বাবা, আমার সবকিছু হলেন আমার মামা আমজাদ হোসেন চৌধুরী। তার কথামতই তোমাকে আমি বিয়ে করেছিলাম। ”

ঐশী হাসলো। উঠে আমজাদ হোসেনের পা ধরে সালাম করলো। আমজাদ হোসেন ঐশীর মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া দিলেন। ঐশী আবারও চেয়ারে বসলো। জুভান আর তার মামা আপাতত একে অন্যের সাথে গল্প করতে মশগুল। আপাতত তাদের কাছে পুরো দুনিয়া অদৃশ্য। ঐশী ওদের দিকে চেয়ে মুচকি হাসল। অনল ঐশীর সে হাসিটা দেখতে পেলো। তবে ঐশীর সে রহস্যময় হাসির রহস্য উদঘাটন করতে পারল না। এমন কি আছে, যা ঐশী লুকাতে চাইছে?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here