#এক্কা_দোক্কা – ৮,৯
আভা ইসলাম রাত্রি
পার্ট-৮
রান্নাঘর উত্তপ্ত। চুলোর ঝাঁঝালো আঁচ ঐশীর মুখখানা রক্তিম করে তুলছে। নাকে, ঠোঁটে ঘাম জমেছে। শাড়ির আঁচল কোমরে গুটিয়ে রাখা। উন্মুক্ত নারীদেহের আকর্ষণীয় বাঁক। ঐশী আজ সকালেই জুভানের থেকে তার মামার কি কি পছন্দ সব জেনে নিয়েছে। জুভান ঐশীর এই আমূল পরিবর্তন সোজা চোখে না দেখলেও, বাঁকা চোখে যে দেখেছে তা নয়। মামার প্রতি ঐশীর এত যত্ন দেখে সে কিছুটা খুশি হলেও, ভেতরে ভেতরে একটা খচখচ তো থেকেই যায়।
ঐশী রান্নাবান্না শেষ করে নিজ কক্ষে চলে আসে। জুভান বলেছে, তার মামা যেদিন এ বাড়িতে আসবেন সেদিন ঐশী যেন জুভানের সাথেই ঘুমায়। নাহলে মামা সন্দেহ করবেন। ভেবে বসবেন, ঐশী আর জুভানের মধ্যে সব ঠিক না। জুভান মামাকে কষ্ট দিতে পারবে না দেখে, বাচ্চা পয়দা করার জন্যে এই সারোগেসি পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। এ ক্ষেত্রে ঐশীকে না ছুঁয়ে বাচ্চাও হয়ে গেল আর বিয়েও হয়ে গেল। এই সারোগেসি বিষয়টা দারুন। কত সহজে জুভানের সকল সমস্যার সমাধান করে ফেলল।
ঐশী বাথরুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় জুভানের গানের গলার আওয়াজ পেল। জুভান গানের সুর তৈরি করছে। গিটারে টুংটাং আওয়াজ তুলছে আবার গুনগুন করে গানও গাইছে। ঐশী সেদিকে একপল চেয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চাইলো। তবে জুভান পেছন থেকে ডেকে উঠলো,
-” ঐশী, দাঁড়াও। ”
ঐশী দাঁড়াল। জুভান বললো,
-” তোমার সাথে কথা আছে। আমার পাশে এসে বসো। ”
ঐশী বুঝতে পারলো না, জুভান ওকে কি বলতে চাইছে। কৌতুহলবশত সে জুভানের পাশে এসে দাঁড়াল। জুভান গিটারী তার ঠিক করতে করতে জিজ্ঞেস করলো,
-” মামা এ বাড়িতে আসায় তোমার কোনো কষ্ট হচ্ছে? ”
ঐশী কুটিল হাসলো। মনেমনে বললো,’ আমার সব কষ্ট মোচনের জন্যেও তো তাকে এ বাড়িতে আসতে হতো। ” তবে ঐশী মুখে বলল,
-” তেমন কিছু না। আপনার মামা আমাদের গুরুজন। তাকে সেবা করলে সাওয়াব হবে। ”
জুভানের ব্যাপারটা হজম হলো না। সে গিটার হাতে ভ্রুকুটি করে ঐশীর দিকে তাকাল। ঐশী সে তাকানোতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হলো না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সে প্রশ্ন করে বসলো,
-” গান গাওয়া কি আপনার খুব পছন্দের? ”
জুভান ভ্রু কুঁচকে নিজে বলে উঠলো,
-” তুমি খুব অদ্ভুত, ঐশী। আমার মাঝেমধ্যে মনে হয়, তুমি আমার এত কাছে থাকা সত্বেও আমি তোমায় ঠিক চিনতে পারছি না। তোমার চোখটা কেমন যেন, ঐশী। আমি মাঝেমধ্যে তোমার চোখে হিংস্রতা দেখতে পাই। তুমি আসলে কে ঐশী? আমার মনে হয় তুমি নিজেকে যেমন প্রকাশ করো, তেমন তুমি না। কেমন যেনো; একটু অদ্ভুত, অনেকটাই দুর্বোধ্য। ”
ঐশী শব্দ করে হেসে ফেলল। তার হাসি থামছেই না। পেটে খিল ধরে যাচ্ছে ঐশীর। ঐশীর এত হাসির কারণ জুভানের ঠিক বোধগম্য হলো না। সে কপাল কু্ঁচকে হাস্যরত নারীর দিকে চেয়ে। জুভান একসময় বিরক্ত হয়ে বলল,
-” স্টপ লাফিং, ঐশী। ”
ঐশীর হাসি এখনো বিদ্যমান। জুভান একসময় বিরক্ত হয়ে ঐশীর হাত চেপে ধরে তাকে নিজের দিকে টেনে নিল। হঠাৎ জুভানের বক্ষবন্ধনীতে আবদ্ধ হওয়ায় ঐশী এক মুহূর্তের জন্যে হতবম্ব হয়ে পড়ল। হাসি থামলো বটে, তবে মুখে বিস্ময়ের ছাপ। জুভান ঐশীর চোখে চোখ রেখে কড়া কণ্ঠে বলল,
-” অট্টহাসি কি করে থামাতে সেটা আমার ভালো করে জানা আছে। ফারদার, আমার কথার উপর হাসবে না। আমার সেটা পছন্দ নয়। ”
ঐশী মুখ বাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-” করলে কি করবেন? গায়ে হাত তুলবেন? ”
জুভান মিহি হাসলো। ঐশীর কপালের চুলগুলো আলতো হাতে তার কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বললো,
-” স্ত্রীর গায়ে হাত তোলার মত কাপুরুষ আমি নই, ঐশী। হাত তোলা ছাড়া কার্য হাসিল করার পদ্ধতি আমার জানা আছে। ”
ঐশী ডাগর ডাগর চোখে জুভানের দিকে তাকাল। জুভানের ঠোঁটে কুটিল হাস। ঐশী জোরপূর্বক জুভানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। জুভান ছেড়ে দিয়ে ঠিকঠাক হয়ে বসলো। হাতে গিটার তুলে নিল। ঐশী বারান্দা থেকে চলে যেতে নিলে পেছন থেকে জুভান বলে উঠলো,
-” একটা কথা মনে রেখো ঐশী। অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ। অতি অবহেলাও যেমন পীড়াদায়ক তেমনি অতি ভক্তিও বেশ সন্দেহজনক। আমার তোমার প্রতি কিন্তু সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে, ঐশী। ”
ঐশী থেমে গেল। জুভানের কথার অর্থ বুঝতে পেরে তার বুকে কম্পন সৃষ্টি হল। জুভানের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করা ঐশীর একটুও উচিত হবে না। তাহলে সব পরিকল্পনা মাঠে মারা পড়বে। ঐশী আর এক মুহূর্ত সে স্থানে থাকলো না, হনহনিয়ে চলে গেলো কক্ষ ছেড়ে। জুভান এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও গিটার নিয়ে মশগুল হয়ে পড়ল।
____________________
-” মামা, চা খাবেন? ”
জুভানের মামা পেপার পড়ছিলেন। ঐশীর কথা শুনে তিনি পেপার ভাঁজ করে টেবিলে রাখলেন। শোয়া ছেড়ে উঠে বসলেন। ঐশীর উদ্দেশ্যে বললেন,
-” ভেতরে আসো মা। ”
ঐশী মুচকি হেসে ঘরের ভেতর প্রবেশ করলো। আমজাদ হোসেন ঐশীকে সোফায় বসতে বললেন। ঐশী বসলে, তিনি এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
-” জুভান এখন কেমন আছে, ঐশী? ”
ঐশী খানিক অবাক হলো। জুভানকে আজ সকালেও দেখেছেন তিনি। একসাথে নাস্তা অব্দি করেছে দুজনে। এখন ঐশীকে জিজ্ঞেস করছে, জুভান কেমন আছে? ঐশী বললো,
-” আপনি নিজের চোখে যেভাবে দেখেছেন, সে সেভাবেই আছে। ”
আমজাদ হোসেন হাসলেন। বড়ই বেদনাদায়ক হাস। তিনি বললেন,
-” জুভানের মেয়ে নেশা আছে, জানো তো? ”
ঐশী কিছুর অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। উত্তর দিলো না সে। আমজাদ হোসেন বলেন,
-” অপ্রস্তুত হওয়ার মত কিছু নেই এখানে। জুভানের মেয়ের নেশা দিনদিন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। তাই আমি ভেবেছিলাম, বিয়ে করলে বোধহয় সে ঠিক হবে। আমি শুধু একবার বলেছিলাম বিয়ের কথা। কিন্তু দেখো, সে দুদিনের মাথায় কাউকে না জানিয়ে তোমায় বিয়ে করে আনলো। বড্ড পাগল ছেলে। এত বড় হয়ে গেছে তবুও আমার কথার নড়চড় সে একটুও করে না। তুমি কিন্তু কষ্ট পেও না। তুমিও এ বাড়ীর লক্ষ্মী। জুভানের জন্যে আমার কাছে তুমিই ঠিক, বুঝলে ঐশী? ”
ঐশী সব কথা শুনে প্রশ্ন করে বসলো,
-” মাত্র একদিনে কি করে বুঝে গেলেন, আমি জুভান স্যারের জন্যে ঠিক? ”
আমজাদ হোসেন ঐশীর কথায় বিস্মিত হলেন। পরক্ষণেই হেসে বললেন,
-” অনেক কথা বলতে পারো তুমি। আই লাইক ইট। কিন্তু জানো আমি হলাম এ দেশের মন্ত্রী। একবার দেখেই বুঝে ফেলতে পারি, কে খাঁটি সোনা আর কার মধ্যে গলদভরা। কবিতা হয়ে গেলো, না? হা হা হা। ”
আমজাদ হোসেনের হাসায় তাল মেলালো ঐশী। লোকটা বেশ রসিক। ঐশী উঠে দাঁড়ালো। বললো,
-” আপনি বসুন। আমি আপনার জন্যে চা বানিয়ে আনছি। ”
আমজাদ হোসেন বাঁধ সাধলেন। বললেন,
-” চা না। কফি এনো। ”
ঐশী সায় দিয়ে চলে গেল রান্নাঘরে। মনেমনে ভাবল, এভাবেই সবার বিশ্বাস অর্জন করতে হবে তাকে। সবার বিশ্বাস অর্জন করে তার নিমিষেই চুর্নবিচূর্ণ করে ফেলবে ঐশী।
#চলবে
#এক্কা_দোক্কা – ৯
আভা ইসলাম রাত্রি
হলরুমে ভালোই হট্টগোল চলছে। হট্টগোলের মূল বিষয়বস্তু হলো, জুভান ও ঐশীর বৌভাত। জুভান শুরু থেকে এই নিয়ে অনীহা দেখিয়ে আসছে। তার ভাষ্যমতে, ‘ বিয়েটা যেখানে সাজানো এক নাটক, সেখানে এই অনুষ্ঠানগুলো নিছকই গুরুত্বহীন। ‘ তবে জুভানের এই বারণ শোনার মত তার বাড়িতে কেউই নেই। জুভানের মামা, আমজাদ হোসেন বড় সোফাটা দখল করে বসেছেন। তার চোখেমুখে রাজ্যের আত্মবিশ্বাস। বোনের ছেলে কখনোই তার আদেশ ফেলবে না, তা ভেবেই তিনি মনেমনে আত্মিক সুখ পাচ্ছেন। জুভান নিজ কক্ষে বসে গান গাইছিল। আমজাদ হোসেনের নির্দেশে পুষ্পিতা জুভানকে ধরেবেধে হলরুমে নিয়ে এসেছে। জোরজবরদস্তিতে জুভানের মুখখানা তেতো হয়ে আছে। মনে হচ্ছে কেউ তার গলা টিপে ধরে তার মুখের রক্ত শুকিয়ে নিয়েছে। জুভান বেশ বিরক্ত হয়ে মামার পাশে বসল। শ্লেষপূর্ণ কণ্ঠে বলল,
-” এসবের কি দরকার, মামা? খামোকা এই অনুষ্ঠান করবো, আর মিডিয়া জানাজানি হবে। এই বিয়ে নিয়ে আমি কোনোপ্রকার মিডিয়া-চর্চা চাইছি না, মামা। ”
আমজাদ হোসেন হাসিহাসি ভাব বর্জন করে মুখে গম্ভীর ভাব টানলেন। বললেন,
-” তোর মিডিয়া নিয়ে আমি কোনো কথা শুনতে চাইছি না। আর আমারও তো একটা সম্মান আছে। ভাগনা বিয়ে করিয়েছি, অথচ কোনো জাকজমক কিছুই হয়নি। বিয়েটা তোর মত সাদামাটা করেছিস কিন্তু বৌভাতটা আমার মত সুন্দর হতে হবে। ”
-” কিন্তু…”
-” স্টপ আরগুয়িং, জুভান। ”
জুভান থেমে গেল। মামার মুখের উপর কখনো তর্ক করে না সে। এই ‘না’ শব্দটার মধ্যে কোনো ভয় নেই, বরং আছে অজস্র শ্রদ্ধা! জুভান কখনো কাউকে ভয় পায়না, তবে সে একজনের কথা কখনো ফেলতে পারে না। আর সেই একজন হলো জুভানের মামা আমজাদ হোসেন। তাই এবারেও জুভান কোনোরূপ বাক্য ক্ষয় না করেই মামার কথায় রাজি হয়ে গেল।
অতঃপর বহু বাক-বিতন্ডা, মত পরিবর্তনের পর সিদ্ধান্ত হলো আগামীকাল বৌভাত অনুষ্ঠিত হবে। এবার আমজাদ হোসেন সরাসরি বলেছেন, বৌভাতের দিন সকল মিডিয়া উপস্থিত থাকবে। জুভান সবার সাথে নিজের স্ত্রী ঐশী খন্দকারকে পরিচয় করিয়ে দেবে। মামার সিদ্ধান্ত শুনে জুভানের চোখ কপালে স্পর্শ করল। সে কঠোরভাবে মানা করল এ বিষয়ে। কিন্তু আমজাদ হোসেন তার কথা আদেশস্বরূপ জুভানের উপর চাপিয়ে দিয়ে হলরুম ছেড়ে চলে গেলেন। রাগে জুভান রীতিমত কাঁপছে। ফর্সা নাকের ডগা রাগের ভাবমূর্তি স্বরূপ রক্তিম হয়ে গেছে। মামা কি করে এমন ফুলিশ একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন? সে বিশ্বাস করতে পারছে না, মামা এরূপ একটা সিদ্ধান্ত তার সাথে পরামর্শ না করে হুট করে নিয়ে নিতে পারলেন। জুভান রাগে জ্বলে উঠলো। সোফায় পা কর্তৃক লাথি দিয়ে হনহনিয়ে নিজের কক্ষে চলে এলো। ভারী লেদারের সোফাটা জুভানের লাথির তালে স্থানচ্যুত হয়েছে। জুভানের বন্ধুরা সব ফ্যালফ্যাল চোখে স্থানচ্যুত সোফার দিকে চেয়ে আছে।
_________________________
নিচে এতক্ষণ কি কথা হচ্ছিল, তার সবই ঐশী শুনেছে। জুভানকে উপরে উঠতে দেখে ঐশী তাড়াহুড়ো করে নিজ কক্ষে চলে গেল। কক্ষে ঐশীকে বিছানা ঠিক করতে দেখে জুভানের রাগ হুরহুর করে বেড়ে গেল। সে পেছন থেকে খচখচ কণ্ঠে বলল,
-” মামা সম্পূর্ণ মিডিয়াকে জানিয়ে আমাদের বৌভাত করতে চাইছেন! ”
ঐশী বিছানা ঝাঁট দিয়ে মৃদু হেসে বললো
-” ভালো তো। ”
‘ভালো তো’ কথাটা শুনে জুভানের মাথা গরম হয়ে গেল। ঐশীকে প্রথম থেকেই সে বলে এসেছে, তাদের বিয়ের ব্যাপারে যেন মিডিয়া না জানে। অথচ আজ তার কথাশুনে মনে হচ্ছে, সে জুভানের কথা বেমালুম ভুলে বসে আছে। জুভান ঐশীর হাত টেনে ধরলো। ঐশীকে নিজের দিকে ফিরিয়ে দাত খিচিয়ে বলল,
-” আমার কথা কি ভুলে গেছ? আমি বলেছিলাম তোমায়, আমাদের বিয়ের ব্যাপারে যেন মিডিয়া না জানে। অথচ তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে, পারলে এখুনি নাচতে নাচতে মিডিয়ার সামনে গিয়ে সব বলে দিতে পারলে তোমার শান্তি হবে। ”
ঐশী হাসল। সেই হাসি দেখে জুভান জ্বলে পুড়ে গেল। ঐশী নিজের কোমল হাতখানা জুভানের থেকে ছাড়িয়ে নিল। জুভানের শক্ত হাতের স্পর্শে ঐশীর হাতে কালশিটে হয়ে গেছে। ঐশী সহাস্যে বলল,
-” ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ মি। আপনার মামা, আপনার প্রবলেম। আমি কি তাকে বলেছি, আপনি আমাদের বিয়ের বিষয় মিডিয়াকে জানান? তিনি নিজে যেচে সবাইকে জানাতে চাইছেন, সেখানে আমি কি করতে পারি। আপনার পছন্দ না হলে আপনি গিয়ে তাকে বলুন। খামোকা আমার শরীরে দাগ বসাচ্ছেন কেন? ”
এতক্ষণে জুভানের হুশ এলো। রাগের মাথায় সে ঐশীর হাতে আঘাত করে বসেছে, ভাবতেই অপরাধবোধে ডুবে যেতে লাগল। ঐশী হাত ঝাড়ছে, হয়তো ব্যথা করছে তার। জুভান আর কথা বলল না। খামোকা এতক্ষণ ঐশীর সঙ্গে রাগারাগী করল। উফ, কেনো যে সে নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারে না? একদিন নিশ্চয়ই সে এই রাগের কারণে অনেক বড় কিছু হারাবে। জুভান হেঁটে ড্রয়ার থেকে ফার্স্ট এইড বক্স এনে ঐশীর হাতে ধরিয়ে দিল। বললো,
-” মলম লাগিয়ে নিও। নাহলে ইনফেকশন হয়ে যাবে। ”
ঐশীর ভ্রু কুঁচকে এলো। এতক্ষণ তো রাগে তোতলাচ্ছিল। এখন আবার কি করে এত ভালো হয়ে গেল? জুভান হয়তো কিছু বলতে চাচ্ছে। কিসের যেন একটা সংকোচ তার মুখে বিদ্যমান। ঐশী ভ্রু বাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-” কিছু বলবেন? ”
জুভান স্থির চোখে ঐশীর আঘাতপ্রাপ্ত হাতের দিকে চেয়ে। হঠাৎ জুভান গম্ভীর সুরে বলল,
-” আ’ম সরি ফর এভরিথিং। আমার এভাবে রেগে যাওয়া উচিত হয়নি। ”
ঐশী হাসল। বললো,
-” একটা কথা কি জানেন, রাগ হলো এ সংসারের সবচেয়ে নিকৃষ্ট এক অনুভূতি। এ অনুভূতি নিমিষেই একটা ভালো থেকে ভালো সম্পর্ক জ্বালিয়ে খা খা করে দিতে পারে। সাবধানে থাকবেন। আপনার রাগ সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ” ঐশী কথাটা বলে আর একমুহুর্ত দাঁড়ালো না। ফার্স্ট এইড বক্স বিছানার উপর ফেলে দিয়ে বেরিয়ে গেল কক্ষ ছেড়ে। জুভান নিস্পলক চোখে চেয়ে রইলো মাটিতে। এমন করে জুভানের দোষ কেউ কখনো ধরিয়ে দেয়নি। সবাই সবসময় ভয় পেয়ে এসেছে জুভানকে। জুভানের রাগ থেকে সবাই পালিয়ে বেড়ায়। আজ অন্তত কেউ জুভানের রাগকে ভয় পাইনি। বরং তার শান্তকথার বাণী দ্বারা জুভানের রাগকে শীতল করে দিয়েছে।
#চলবে