এক কাপ কফি,দ্বিতীয় ও শেষ অধ্যায়

0
1311

এক কাপ কফি,দ্বিতীয় ও শেষ অধ্যায়
মৌপর্ণা

আকাশের যখন জ্ঞান এলো, তখন প্রায় সকাল এগোরাটা….প্রথম চোখ খুলে আকাশ দেখলো, আকাশ শুয়ে নিজের ঘরের বেডরুমে……মাথা টা ভীষণ ভারী লাগছে! কোনো রকমে উঠে বসতেই ঘরে এলো মিস্টার চৌধুরী……….

আকাশ, শুয়ে থাকোনা আর একটু…….. শ্যামল…..শ্যামল…..আকাশের জন্যে একটু গরম দুধ আনিস……..

বাবা! তুমি, আজ অফিস যাওনি? অবাক হয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো আকাশ….

না, আজ ঘর থেকেই কাজ করবো….কাল তুমি সেন্সলেস হয়ে পড়েছিলে…..তারপর দুটো মেয়ে নিয়ে আসে তোমাকে….তখন রাত প্রায় বারোটা হবে……তারপর তোমার একটু জ্ঞান এলেও, খুব সম্ভবত তুমি ভীষণ ক্লান্ত ছিলে…তারপর তোমাকে এই ঘরে নিয়ে এসে শুয়েই দিলাম আমরা সবাই! অফিসের চাপ এতো নিও না….এইতো সবে চার বছর হবে কম্পানি তে! এখন থেকেই এতো চাপ নিলে, বাকি জীবন তো পরেই আছে…..

আকাশের মনে মনে খুব অবাক লাগছিলো…..মিস্টার চৌধুরী তাকে নিয়ে এতো ভাবে? দৃষ্টি ঠিকই বলে, বাবা মা – মুখে কিছু না বললেও, তাদের মনে সন্তানের চিন্তা সব সময় থাকে!

আকাশের বাবা একটু থেমে আবার বললেন –
দৃষ্টি বলে মেয়েটি তোমার গার্ল ফ্রেন্ড?

না, মানে বাবা…..ওই আমাদের কোম্পানির সাথে….চুক্তি…….এনজিওর আর ও ওখানে…..

মিস্টার চৌধুরী এর মুখে হালকা হাসির রেখা …..
সব বলেছে, তোমার দৃষ্টি……তোমাদের কি ভাবে আলাপ…..তোমাদের বন্ধুক্ত……! দেখে মনে হলো তোমায় বেশ পছন্দ করে, তোমায় নিয়ে ভীষণ concerned ……..তাই জিজ্ঞেস করলাম…..ঠিক আছে, তোমার খেয়াল রাখে এতো….পিওর সাইন্স গ্রাজুয়েট…..সরকারি চাকরির প্রিপারেশন নিচ্ছে…বাবা না থাকা সত্ত্বেও, এতটা struggle ভালো লাগলো শুনতে………
কাল আমার মেয়েটির কথা শুনে মনে হলো তোমার এই হঠাৎ পরিবর্তনের কারণ মেয়েটি….আমি খুশি আকাশ…..সত্যি কথা তোমার মা মারা যাওয়ার পর আমি তো তোমার খেয়াল রাখতে পারিনি কোনোদিন….

আকাশ মাথা নীচু করে, হেলান দিয়ে চুপ চাপ বসে রইলো খাটে…..ঠোঁটের কোণায় মৃদু হাসি…….দৃষ্টির সাথে বাবার এতো কথা হয়েছে! আর বাবা, অনামিকা দি সবাই কি বলছে এরা – দৃষ্টি পছন্দ করে আমাকে! সত্যি আমায় নিয়ে এতো ভাবে…..আর বাবা….বাবাও আজ আমার এতো খেয়াল রাখছে…..এক রাতে কি সব তবে বদলে গেল?

কথা টা ভাবতে ভাবতে আকাশের ফোন টা বেজে উঠলো…..স্ক্রিন এ দৃষ্টির নাম্বার……

আকাশের ফোন টা বাজতেই মিস্টার চৌধুরী উঠে পড়লো চেয়ার ছেড়ে….শ্যামল দা দুধ টা দিয়ে গিয়েছে….কিছুক্ষণ…..

বাবা, আর একটু বসো না….!

না….আমি উঠি এখন….You people carry on …..

*********************

হ্যালো…..দৃষ্টি…..

হ্যালো আকাশ……এখন কেমন আছো? এখন কেমন লাগছে শরীর টা? কখন উঠেছ ঘুম থেকে? কাল হঠাৎ…..

দৃষ্টি…..ইটস ওকে! ভালো আছি আমি…..এতো অস্থির লাগছে কেন তোমার আওয়াজ টা?

আকাশ ………আই লাভ ইউ……

বিদ্যুৎ খেলে গেল আকাশের শরীর ও মন জুড়ে….হুড়মুড় করে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে , হাতের কুনুইয়ের ধাক্কা লেগে, দুধের গ্লাস টা বেডসাইড টেবিল থেকে নীচে পরে গেল মাটিতে…..

হ্যালো আকাশ, কিসের আওয়াজ?

****************

আধঘন্টা কথা বলার পর, ফোন টা রেখে দিলো আকাশ…..এখনো বুক টা বেশ জোরে ধুকধুক করছে, হাত পা, সব কাঁপছে একটু একটু ……
মনের মধ্যে এক অদ্ভুত খুশির অস্থিরতা……….এতো খুশি, এতো আনন্দ বাঁধ মানছেনা…..ইচ্ছে করছে….চিৎকার করে কোনো এক পাহাড়ে দাঁড়িয়ে বলতে – দৃষ্টি আই লাভ ইউ……… কিন্তু ফোনে এই কথা টা একবারও বলতে পারলো কই?

**************

আজ শুক্রবার…..দৃষ্টির কথা মতন, আজ অফিস যায়নি আকাশ……স্নান খাওয়া দাওয়া করে….
বাড়ি থেকেই করছে অফিসের কাজ…..
দৃষ্টির মতে, ক্লান্ততার জন্যে কাল আকাশ হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো, তাই আজ বাড়ি থেকে বেড়নো বারণ…..কাল শনিবার – রাত অব্দি, আকাশ ঠিক থাকলে, তার অনুমতি আছে এনজিও তে আসার….
কিন্তু কাল রাতে একটা ভালো জেনারেল ফিজিশিয়ান এর এপয়েন্টমেন্ট নিতেই হবে…..
উফফ আকাশ যে কতবার বুঝিয়েছে, হঠাৎ মাথা টা ওরম কত জনের ঘোরে….আবার তার ওপর এখন তো সত্যি খুব চাপ চলছে অফিসে….কাল অনেকক্ষণ না খেয়েও ছিল…..সব মিলিয়ে একটু শরীর খারাপ হয়েছে….এখন তো আকাশ একদম ফিট…..তবু, দৃষ্টি কিছুতেই মানবেনা……

**************
শনিবার রাত…..
আজ ডাক্তারও একই কথা বললেন, বেশি চাপ নেওয়া বারণ…
অতিরিক্ত ক্লান্ততা এবং চাপের কারণেই, মাথা টা ঘুরেছিল ….সেইরকম চিন্তার কোনো কারণ নেই….
তবে নিয়ম মাফিক দিয়েছে বেশ কিছু টেস্ট….সব একবার চেক করে নিলে ক্ষতি কি?

*****************
আজ রবিবার, আকাশ ও দৃষ্টি আজ এনজিও তে যায়নি…..ওরা বসে শ্যামবাজারের এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বাইরে …..

সকাল থেকে শুরু হয়েছে….রুটিন টেস্ট….প্রায় হোল বডি চেক আপ….

“দৃষ্টি, স্ক্যান…..ব্লাড টেস্ট….ECG এতো কিছুর সত্যি দরকার ছিল…আর ডাক্তার তো বললো এখন না করলেও চলবে..আবার অজ্ঞান হয়ে গেলে তারপর করাতে ……ওরম কতজনের হয়!”

“সব দেখে নিতে একবার ক্ষতি কি? আর আকাশ এখন তো তুমি একা নয়!”

“আমার খুব ভয় করছে দৃষ্টি….অনেক দিন বাদে সব ঠিক চলছে….যদি সেরম কিছু ধরা পরে…..”

“চুপ…..একদম….উল্টোপাল্টা কিছু ভাববে না….কিছু হবেনা…..অমি আছি তো!”
বলেই আকাশের হাত টা চেপে ধরে দৃষ্টি……

***************

আজ সোমবার, আকাশ একটু তাড়াতাড়ি বেরিয়েছে অফিস থেকে, শ্যামবাজারে যখন পৌঁছোলে তখন ঘড়ি তে ঠিক রাত আটটা ……দৃষ্টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বাইরে একটা বেঞ্চে বসে, রিপোর্টস গুলো উল্টো পাল্টে দেখছে……

‘দৃষ্টি! সব ঠিক আছে?’

এতক্ষণে আসার সময় হলো তোমার….
দৃষ্টি একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে আবার দেখতে শুরু করলো রিপোর্টস গুলো উল্টে পাল্টে, তারপর বললো

সব কিছু ঠিক আছে! পারফেক্টলি ফিট এন্ড ফাইন !
বলে বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রিপোর্টস গুলো আকাশের হাতে দিয়ে বললো –
নাও দেখো, তবু একবার ডাক্তার কে দেখিয়ে আসবো দুজনে গিয়ে….
ইম্প্রেশনে তো সব নরমাল লেখা……

**************

পাতা ঝরা মরশুমের শেষে, এসেছে বসন্ত! কচি লাল – হলুদ – সবুজ পাতায় ভরে উঠেছে গাছ গুলো, পলাশের থোঁকা আর লাল টুকটুকে শিমুল ফুলে ভরে আছে চারিদিকে, মৌমাছি ও প্রজাপতির দল ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর মধু সঞ্চয়ের কাজে লেগে পড়েছে, বসন্তের দক্ষিণ বাতাস ও কোকিলের ডাকে চারিপাশের পরিবেশ টা বেশ মনোরম………

আকাশ এখন একদম অন্য একটা মানুষ, ভীষণ গোছানো, প্রাণ খোলা, প্রানোচ্ছল, হাসি খুশি ও ভীষণ কেয়ারিং একজন ছেলে ও বয়ফ্রেন্ড……

আকাশ ও মিস্টার চৌধুরী মর্নিং ওয়াক থেকে ফিরে আজ একদম হতবম্ব…..
দৃষ্টি এতো সকালে মিস্টার চৌধুরীর বৈঠকখানা থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে আসছে….

দৃষ্টি এতো সকালে, এখানে কি করছো? আর ওপরে তো বাবার বৈঠকখানা……ওখানে কি করছিলে?
আকাশ জিজ্ঞেস করলো দৃষ্টি কে….এতক্ষণে দৃষ্টি এসে দাঁড়িয়েছে আকাশ ও মিস্টার চৌধুরীরির সামনে…..

‘সরি কাকু! সরি আকাশ…..তোমাদের না বলেই এভাবে হঠাৎ এখানে আসা টা হয়তো আমার একদম উচিত হয়নি আজ…..!
কাকু কাল রাতে আমি ভীষণ বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছি, তারপর আর সারারাত ঘুম হয়নি ঠিকঠাক……আজ সকালে মন টা ভীষণ ছটফট করছিলো……..ভাবলাম একবার আকাশের সাথে একটু দেখা করে নি…..মন টা একটু হালকা হয়ে যাবে…..আর যখন আমি এলাম, তখন শুনলাম তোমরা মর্নিং ওয়াক করতে বেড়িয়েছো…তাই ভাবলাম একটু চারপাশ টা ঘুরে দেখি…..সরি….’

‘আরে না না সরি বলার কিছু নেই….
ভালো করেছো……..আকাশ তুই ওকে আর জেরা করিসনা…এতদিন দৃষ্টি বাড়ি তে আসেনা বলে তোর সমস্যা…..আজ মেয়েটা এতদিন বাদে এসেছে তাতেও তোর সমস্যা , আজ ওকে ব্রেকফাস্ট না করিয়ে ছারবিনা …..আমি আসছি দৃষ্টি মা…. You people carry on …..’

‘আচ্ছা কাকু…….’

***************
কাকু নয়….বাবা বলে ডাকো দৃষ্টি মা…….! হা হা হা…..আহেম! আহেম! হা হা হা…..

উফফ আকাশ! তুমি সিরিয়াসলি এতো ফাজলামি করো আজকাল! দৃষ্টিও হাসছে আকাশের সাথে!
সিরিয়াসলি আকাশ – ইউ আর সো…… চেঞ্জড!

সিরিয়াসলি দৃষ্টি……….
মিস্টার চৌধুরী……..মিস্টার চৌধুরী তোমায় মা বলে ডেকেছে……ওনার মুখ দেখে মনে হয় উনি এটা বলতে পারেন…..I am shocked !

আকাশের হাসি বাঁধ মানছেনা……

আকাশ! এটা আবার কি? তোমায় বলেছিনা মিস্টার চৌধুরী বলে ডাকবেনা…..উনি তোমার বাবা আকাশ!

আকাশ উঠে দাঁড়ালো দৃষ্টির দিকে….দৃষ্টির কাঁধে দুটো হাত রেখে বললো –
‘হমম বুঝলাম…..ছাড়ো এইসব! এবার বলতো আজ সত্যি সকালে আমার জন্যে মন কেমন করছিলো!’

‘হমম মিস করছিলাম তোমায়…..’
বলেই
দৃষ্টি দুহাত দিয়ে আকাশের হাত দুটো সরিয়ে দিলো নিজের কাঁধ থেকে…..

‘সরি….ভুলে গিয়েছিলাম এই কনসেন্ট এর ব্যাপার টা…..দৃষ্টি একটা কাজ করি চলো, বিয়ে করেনি বুঝলে! দেখো…. তোমার নানান রকমের বারণ…..তোমায় রাতে কল করা হবেনা….তোমার কাছাকাছি আসা যাবেনা….এমন কি তোমায় নিয়ে ঘুরতে যাওয়াও যাবেনা….. আজকাল তুমি এইরকম মিস করছো…..আমাকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখছো……ভোর বেলায় এরম ছুটে আসছো এখানে! এর চেয়ে ভালো বিয়ে করে একেবারে……’

‘আবার তাড়াহুড়ো….কতদিন হয়েছে রিলেশনের…..’

‘দু মাস…..দশ দিন…..আর (ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে বললো -) একুশ ঘন্টা!’ বলেই হাসতে শুরু করে আকাশ…..

‘তবে? এতো তাড়াহুড়ো কেন?’

‘সবাই কত ঘুরতে বেড়োয় দৃষ্টি……অনির্বান তো মন্দারমণি চলে গিয়েছে, তিয়াশা কে নিয়ে…..
না না প্লিজ ও ভাবে তাকিয়োনা…..আমি তোমায় মন্দারমণি যেতে বলছিনা…কিন্তু প্রিন্সেপ ঘাট…..ইকো পার্ক….ময়দান…..শুধু হাতে হাত রেখে , খালি পায়ে, ঘাসের ওপর হাঁটবো….বা দক্ষিনেশ্বর? দেখো মন্দির তো যাওয়া যায় বলো…..দক্ষিণেশ্বরে পুজো শেষে….গঙ্গার ঘাটে একটা গিটার, এক কাপ কফি……আর তুমি….! আমার চাওয়া গুলো কি খুব ভুল দৃষ্টি? কলেজ স্ট্রিট থেকে মহাত্মা গান্ধী পাঁচ মাথা….কি ট্রাফিক……’

‘ওহঃ তাই নাকি….এতদিন তো বলতে….এই ট্রাফিকের রাস্তায় হাঁটার জন্যেই নাকি সপ্তাহে পাঁচ দিন, অপেক্ষার দিন গোনো….’

***************

বুধবারের অফিস সেরে, বাড়ি এসে মুখ হাত ধুয়ে, ডিনার করে, দৃষ্টির সাথে মিনিট দশেক কথা বলে যখন আকাশ ঘুমোতে গেলো তখন রাত এগারোটা দশ……

হঠাৎ ঘুমের মধ্যেই আকাশের মনে হলো, বাইরে যেন কথাকাটি হচ্ছে দুজনের মধ্যে…..
দৃষ্টির গলা না? হ্যাঁ ঠিক শুনছে আকাশ….এটা তো দৃষ্টির গলা……দৃষ্টি এতো রাতে কি করছে, এ বাড়িতে…..আর দৃষ্টি এলেও বা কি ভাবে? আর যদি সে এসেও থাকে, তার তো আগে আকাশের ঘরে আসার কথা!

আকাশ লাফ দিয়ে খাট থেকে উঠতে গিয়ে চোট লাগলো পায়ে, এমনিই বাঁ পায়ে জোর কম আকাশের…. কিন্তু তাতেও সে থামলো না…..পায়ে প্রচন্ড জোর দিয়ে, দৌড়োনোর চেষ্টা করলো সে বাইরে ঘরের দিকে….আর যখন সে বাইরে ঘরে গিয়ে পৌঁছলে সে দেখলো –
দৃষ্টি দাঁড়িয়ে শার্ট ও ট্রাউসারে ……..শার্ট এর ওপরে হুডি, হুডির টুপি তে মাথা টা ঢাকা…… মিস্টার চৌধুরীর হাতে রিভলভর….বন্ধুকের নল টা ঠেকানো দৃষ্টির মাথা তে!

আকাশের হাত পা কাঁপছে…..হতবম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে শুনতে পেলো মিস্টার চৌধুরী দৃষ্টি কে বলছে –

‘দৃষ্টি বলো তুমি কে? তোমার আসল পরিচয় টা দাও….এত রাতে কি করছিলে এখানে…..আমি কিন্তু সত্যি শুট করে দেব তোমায়!’

বাবা…কি করছো! দৃষ্টি কে ছেড়ে দাও বাবা!

আকাশ ওকে বলতে বলো এতো রাতে ও এখানে কি করতে এসেছে….

আকাশ….তুমি যে রিং টা আমায় দিয়েছিলে আকাশ! সেটা সকাল থেকে খুঁজে পাচ্ছিনা আকাশ……আকাশ আমি ভাবলাম যদি সকালে তোমাদের বাড়িতে পরে গিয়ে থাকে…..তাই আমি এসেছিলাম……

আকাশ ওকে জিজ্ঞেস করো ঘরের চাবি টা কোথা থেকে পেয়েছে….

আমি তো আপনাকে বললাম মিস্টার চৌধুরী আপনাদের সদর দরজা খোলা ছিল………..

সব সত্যি কথা টা বলো দৃষ্টি…..আমি সত্যি টা শুনতে চাই….বলে বিভৎস্ জোরে চিৎকার করলেন মিস্টার চৌধুরী….আমি কিন্তু সত্যি গুলি চালিয়ে দেব দৃষ্টি….

এরমধ্যে আকাশ রান্নাঘর থেকে কখন ছুরি টা নিয়ে এসেছে, কেউ টের পায়নি……ছুরি টা ডান হাতে ধরে আকাশ বলে – ‘বাবা তুমি দৃষ্টি কে যেতে দাও এক্ষুণি…..আমি কিন্তু শিরা কেটে ফেলবো বাবা! ‘

আকাশ……দৃষ্টি সব মিথ্যে বলছে…..ফ্রড ও…..আমাদের জানতে হবে আকাশ…ও কি উদ্যেশে আজ এসেছে এখানে…

আকাশের চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে…..ভাঙা ভাঙা গলায় আকাশ বললো – আমি কিন্তু সত্যি শিরা টা কেটে দেব বাবা! তুমি ওকে যেতে দাও এখন…..আমি সব পরে শুনবো ওর কাছে……

না আকাশ..তোমার এই ছেলেমানুষির জন্যে আমি ওকে কখনো ছাড়বোনা……

মিস্টার চৌধুরীরির কথা টা শেষ হতে না হতেই….আকাশ কেটে ফেলে বাঁ হাতের শিরা….মিস্টার চৌধুরীরির হাত থেকে পরে যায় বন্দুক….ছুটে আসে আকাশের দিকে…..

আকাশ ……..আকাশ!…এটা কি করলি বাবা?
রক্ত বেরিয়ে টপটপ করে পড়তে থাকে সাদা মার্বেলের মেঝেতে ……. আকাশের কব্জি বেয়ে…..

আসতে আসতে আলো কম হতে থাকে আকাশের সামনে থেকে, কান দুটোই আবার ধাপ ধরে আসছে….যেন সে এক ঘোরের মধ্যে আছে…..কিন্তু আজ ঘোরের মধ্যেও আকাশ দেখলো….
দৃষ্টি বেরিয়ে গেলো চোখের সামনে দিয়ে…..মিস্টার চৌধুরী পাগলের মতন দৌড়ে বেড়াচ্ছে এঘর থেকে ওঘর…..খুব সম্ভবত গাড়ির চাবি খুঁজছে আকাশ কে হাসপাতাল নিয়ে যাবে বলে…..

************

আকাশের জ্ঞান ফিরলো পরের দিন রাতে…..
চোখ খুলে দেখলো..কোনো এক বিলাসবহুল হাসপাতালের বেডে শুয়ে সে…..
আকাশের চোখের সামনে – অনির্বান, তিয়াশা, মোহিত আর অফিসের দু একজন কলিগ…

দৃষ্টি কোথায়? বাবা কোথায়? ওদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো আকাশ ….

এটা হাসপাতাল…..আকাশ….অ্যাপোলো…..এখন কেমন লাগছে তোর..একটু বেটার লাগছে?

**************

আরো একদিন ঘোরের মধ্যেই থাকলো আকাশ….অনির্বান ছাড়া আর কেউ নেই আকাশের সাথে…….

ঘুম ভাঙতেই অনির্বানের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো আকাশ – ‘অনির্বান প্লিজ বল এবারে দৃষ্টি কোথায়? বাবা কোথায়?’

তারপর অনির্বান যেটা বললো সেইটা শুনে আকাশের মনে হলো হাসপাতালের বেডেই তলিয়ে যাচ্ছে সে……….যেন আবার ঝাপসা হয়ে আসছে চোখের সামনে টা …….
অনির্বান বলেছিলো –

‘দেখ আকাশ….তোকে স্ট্রং হতে হবে কেমন!
দৃষ্টি আন্ডার কভার – ক্রাইম ডিপার্টমেন্টে কাজ করে ……
তোর বাবা একচুয়ালী…… একচুয়ালী…….
…….ড্রাগস্ ও আর্মস পাচার করে বলে পুলিশ জানিয়েছে….মানে পুলিশ অনেক দিন আগে থেকেই, সন্দেহ করছিলো……কিন্তু কোনো শক্ত প্রমান ছিলনা …….দৃষ্টি কে ওরা এই কাজের জন্যে সিলেক্ট করে, কেমন! দেখ আমরা যতটুকু শুনেছি বা বুঝেছি –
সেদিন দৃষ্টি সকালে তোদের বাড়িতে আসে, এবং একটা ক্যামেরা ফিট করে যায় তোর বাবার বসার ঘরে……দৃষ্টিদের কাছে খবর ছিল একুশে ফেব্রুয়ারী তোর বাবার কিছু মিটিং প্ল্যান আছে…..তাই দৃষ্টি ক্যামেরা টা বসিয়ে যায় সকালে….এবং রাতে খুব সম্ভবত ওই রেকর্ডিং আর কিছু ফাইলস নিতেই ঢোকে আবার তোদের বাড়িতে ……….. বাকি টা তুই সব জানিস ………

*************
*****************************************************************************************
দৃষ্টির প্রথম সাফল্য!
অফিস জুড়ে লোক – জনে-জনে আজ দৃষ্টি কে অভিনন্দন জানিয়ে গিয়েছে, সবাই দৃষ্টির প্রশংসায় পঞ্চমুখ, সত্যি! এতো…………………অসাধ্য সাধন করা!
পুলিশ যেটা এতদিন ফোর্স নিয়ে করতে পারেনি, একটা বছর চব্বিশের মেয়ে সেটা করে দেখিয়ে , তাক লাগিয়ে দিয়েছে সবাই কে, মিডিয়া থেকে ডিপার্টমেন্ট – সবার আলোচনার বিষয় – দৃষ্টি !
তবুও দৃষ্টির মন টা পরে হাসপাতালে, কে জানে আকাশের জ্ঞান এলো কিনা! অফিস থেকে বেরিয়ে একবার অনির্বান কে ফোন করতে হবে …………..
****************************************************************************************
দশ মিনিট হলো দৃষ্টি ঢুকেছে নিজের কোয়াটারে, ব্লক – A3, 3-C!
আকাশ সত্যি বিশ্বাসও করেছিল সেদিন – বাড়িটা নাকি অনামিকা দির, অবশ্য অনামিকা দিও বেশ তাড়াতাড়ি চলে এসেছিলো দৃষ্টি ফোন করার এক ঘন্টার ভেতর…………………………………………………..
রাতে খাওয়া শেষ করে, দৃষ্টি ফোন করে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললো সুপ্রিয়া দেবী মানে দৃষ্টির মায়ের সাথে, সুপ্রিয়া দেবী জানেন না মেয়ে – ক্রাইম ডিপার্টমেন্টের আন্ডার কভার এমপ্লয়ী ! তিনি জানেন মেয়ে আয়কর দফতরে কাজ করে। দৃষ্টি নাম টা খবরের কাগজে পড়লেও তিনি এখনো জানেন না – চৌধুরী বাবুর ড্রাগস্ ও আর্মস পাচারকারী মামলায় যে ক্রাইম ডিপার্টমেন্ট এর অফিসার অসাধ্য সাধন করেছে সে তারই মেয়ে – দৃষ্টি !
*************************************************************************************************
শেষ দুদিন কিছুতেই ঘুম আসছেনা দৃষ্টির, ডাক্তার বলেছেন , অতিরিক্ত টেনশন ও চাপ নেওয়ার কারণ – ঘুম না হওয়া, কিছু ওষুধও দিয়েছেন তিনি, তবে বলেছেন – ওষুধ ছাড়াই ঘুমের চেষ্টা করতে……………..
শেষ দুদিনে রাতে শুয়ে দৃষ্টি ভেবেছে – শেষ ছ মাসের লম্বা প্ল্যানিং এর কথা –
প্রথমে আকাশের ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে আকাশের মা কে নিয়ে লেখা আকাশের পোস্ট, ওটাই তো ছিল আকাশের দুর্বল জায়গা! তাই দৃষ্টির সাজ গোজ ছিল আকাশের মায়ের মতন………………
তারপর পুরো টীম সাহায্য করে – আকাশ কোথায় যায়, কোন মাধ্যমে আকাশের সাথে যোগযোগ করা যায় এটা নিয়ে, ওরাই তো এই তথ্য এনে দেয় দৃষ্টি কে! এই এনজিওর ব্যাপার টা………………………………..
তারপর ছিল সব চেয়ে কঠিন কাজ, সেই একই এনজিও তে ইন্টারভিউ দিয়ে কাকতি মিনতি করে চাকরি টা পাওয়া, অবশ্য সিনিয়র অফিসার কিংশুক সেইদিন দৃষ্টি কে বোন বলে পরিচয় দিয়ে একটা সিম্প্যাথেটিক কাহিনী না শোনালে এতো সহজে কি চাকরি টা পেত দৃষ্টি, যদিও চাকরি পাওয়ার পর , শিউলি দি বুঝেছিলো দৃষ্টির Efficiency টা!
তারপর কোনো কিছুর জন্যে দৃষ্টি কে সেরম চেষ্টা করতে হয়নি, আকাশ নিজেই – আসতে আসতে ধরা দিলো দৃষ্টির জালে, নিজেই জোর করে এলো দৃষ্টির জন্মদিনে কেক ও ফুল নিয়ে, অনামিকা দিও রেডি ছিল, আকাশের কফি তে মিনিমাম পাওয়ার এর ড্রাগ মেশাল – আকাশ অজ্ঞান হয়ে গেলে – আকাশের ফোন টা ক্লোন করে নিলো এবং আকাশের বাড়ির চাবির ছাপ ও তুলে নিলো সেইদিন , সেই চাবিটা খুলেই তো – দৃষ্টি ফাইনাল এভিডেন্স টা নিয়ে এলো…………………………
ইভেন কফির ব্যাপার টা নিয়ে যাতে আকাশের মনে কোনো সন্দেহ না জন্মায় – তাই ডাক্তার দেখিয়ে, চেক আপের নাটক টাও করতে হলো দৃষ্টিকে! চেক আপ টাও করানো হলো – ঠিক দুদিন পর, আকাশ কে ব্ল্যাক আউট করার জন্যে যে ড্র্যাগ দেওয়া হয়েছিল, সেটা রক্তে আটচল্লিশ ঘন্টার বেশি থাকবেনা, তাই রিপোর্টে কিছু ধরা পড়া অসম্ভব!
সব তো প্ল্যান মাফিক হয়েছে, তবুও দৃষ্টি কেন খুশি নয়, কেন ঘুম হচ্ছে না শেষ দুদিন থেকে, কাল রাত অবধি দৃষ্টির মনে হয়েছিল আকাশের জ্ঞান এলেই দৃষ্টি শান্তি পাবে, মনের গ্লানি টা দূর হয়ে যাবে, আজ তো অনির্বান বললো আকাশের জ্ঞান এসেছে, মোটামোটি ভালোই আছে…….. তবুও কেন মনের ভেতর টা তোলপাড় করছে?
কেন মনে পড়ছে বারবার আকাশের সহজ সরল মুখ টা! আকাশের গিটার বাজিয়ে ফোনে দৃষ্টি কে গান শোনানোর কথা টা – ছেলেটার গান টা শুনে মনে হতো যেন লিরিক্স টা সত্যি সত্যি ভেতর থেকে গাইছে দৃষ্টির জন্যে! সত্যি কি আর কোনো উপায় ছিলোনা আকাশের সাথে এই প্রেমের নাটক টা করা ছাড়া, অবশ্য সব টা তো দৃষ্টির প্ল্যান ছিল, সহজ সরল আকাশ কে বোকা বানানো যে অনেক সহজ ছিল……………………………………………………………………………………………………………………………………….
*********************************************************************************************
দিন দশেক পর……………….
দৃষ্টি ……….পুলিশ আর কোর্ট আমাদের সব এভিডেন্স কে আসল বলে ঘোষণা করেছে, আর মিস্টার চৌধুরী, তার দলবল, আর তার সুপুত্র আকাশ চৌধুরী সবাই….Arrested……& the whole credit goes to you!! দৃষ্টি you’re simply genius………………

What? আকাশ কে ওরা কেন Arrest করেছে? ওর বিরুদ্ধে তো কোনো প্রমান নেই, আরে প্রতি টা এভিডেন্স আমার মুখস্ত……………..
বেশ চিৎকার করেই নিজের সিট থেকে উঠে দৃষ্টি বলে –
স্যার কই? কখন আসবেন? আকাশ কি ভাবে Arrested?

আসবো স্যার ?

এসো দৃষ্টি! Congratulations, খবর টা শুনেছ তো? সত্যি দৃষ্টি তুমি না থাকলে…………..

আকাশ চৌধুরী কেন Arrested স্যার ?

দেখো দৃষ্টি আমাদের কাজ এভিডেন্স জোগাড় করা, পুলিশ কাকে Arrest করবে না করবে সেটা পুলিশের ব্যাপার……………………..

কিন্তু একটা এভিডেন্স বলুন যেটা থেকে প্রমাণিত হয় যে আকাশ জড়িয়ে আছে……………..

দৃষ্টি Calm Down! এতো চিৎকার করছো কেন? তুমি emotionally involved নও তো?
সকালে কিংশুক কে বলেছি, তোমাকে একটা ফাইল দিতে, পড়েছো ওটা? নতুন কেস! চোখের জল টা মুছে লেগে পড়ো পরের কেসে…………………

প্লিজ স্যার………………… আকাশ সত্যি involved নয়…………………
দৃষ্টির চোখ দিয়ে দু ফোটা জল গড়িয়ে পরে…………………

শোনো দৃষ্টি শান্ত হও…………….কেস টা কোর্টে উঠলে না হয় তুমি যেও, তখন যদি কিছু হয়………..
আচ্ছা বেশ, আমি নিজে ইন্সপেক্টর রায় কে বলবো, আকাশের কেস টা কে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কোর্টে তুলতে, যাতে রেজাল্ট টা তাড়াতাড়ি আসে কেমন?

কিন্তু স্যার আকাশের ক্যারিয়ার টা নষ্ট হয়ে যাবে!

একটা ক্রিমিনালের জন্যে এত কিসের চিন্তা তোমার?

আগে প্রমান করুন – আকাশ ক্রিমিনাল…………………………………

দৃষ্টি তুমি মুখে মুখে একদম তর্ক করবে না, আকাশ বাচ্চা ছেলে নয়, আকাশের Signature আছে সব business papers-এ!

******************************

টানা আট মাস আঠেরো দিন পর কোর্ট জানিয়েছে – আকাশ দোষী নয়! কালকেই ছেড়ে দেওয়া হবে আকাশ কে………….
ইন্সপেক্টর রায় দৃষ্টি দের অফিসে এসে নিজে দৃষ্টি কে ধন্যবাদ জানিয়ে গিয়েছেন,
একজন নির্দোষ শাস্তি পাক, এটা কেউই চায়না………………………
দৃষ্টির ওপরেও ঝড় গিয়েছে ভীষণ, অফিসের কাজ, কেস স্টাডি তার সাথে আবার কোর্ট, এই আটমাসে আকাশের সাথে বারবার দেখা হলেও, কথা হয়নি দুজনের একবারও………………

আজ ইন্সপেক্টর রায়ের দেওয়া আকাশের পক্ষে reports গুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিলো দৃষ্টি, হঠাৎ বুকের ভেতর টা মোচড় দিয়ে উঠলো একটা ব্যাঙ্ক transaction দেখে…….
24.12.2018 তে P.C.Chandra থেকে 26,281 টাকার একটা transaction – diamond ring!
দৃষ্টির হাত থেকে ফাইল টা পরে গেলো মাটিতে…..
চোখের জ্বলে সামনে টা ঝাপসা হয়ে এলো, ঝাপসা চোখেও দৃষ্টি দেখতে পেল – তার আঙুলে কেমন ঝলমল করছে সেই হীরের আঙঠি……………………….

******************************

দিন দশেক পর, এক শুক্রবারের রাতে দৃষ্টি ফোন করলো আকাশ কে, মনে মনে ভেবেছিলো আকাশ ফোন তুলবেনা, কিন্তু ফোন বাজার দুটো Ring পুরো না হতেই আকাশ ফোন তুলে ধন্যবাদ জানালো দৃষ্টি কে, তার পক্ষে কেস টা লড়ার জন্যে………………….. ধন্যবাদ দেওয়ার পর, দৃষ্টি আকাশ কে দেখা করতে বলে তাদের পুরোনো কফি শপে………………… হীরের আঙঠি টা যে ফেরত দিতে হবে আকাশ কে………………

****************************************

আজ শনিবার……….
সময়ের পাঁচ মিনিট আগেই, দৃষ্টি পৌঁছে, দাঁড়িয়ে রয়েছে, কফি শপের বাইরে, আকাশ আসবে তো?
ভাবতে ভাবতেই দৃষ্টি দেখলো, আকাশ অটো থেকে নেমে এগিয়ে এলো কফি শপের দিকে…………………..
সেই আগেকার আকাশ – ঠিক যেরকম দৃষ্টি দেখেছিলো প্রথম দিন এনজিওর সবুজ দরজার বাইরে , চোখের তলায় কালী, শুকনো অসহায় মুখ, নিষ্পাপ দুটো চোখ, সাথে supporting stick বাঁ হাতে বাঁধা….. খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে এলো – দৃষ্টির দিকে!
ভাগ্যচক্রে আজ ওরা গিয়ে বসলো একই সিটে, সেই প্রথম দিন যেখানে আকাশ Propose করেছিল দৃষ্টি কে……….

“তোমার সাথে দুটো কথা বলার ছিল আকাশ………”

“হ্যাঁ বলোনা”

দৃষ্টি হাতের আঙ্গুল থেকে বের করে আঙঠি টা খুলে দেয় আকাশের হাতে……….
“নাও…………এটা অনেকদিন ধরে পড়েছিল আমার কাছে, আমি এটার যোগ্য নই আকাশ! এটা অন্য কাউকে দিও, তোমার আসল গার্ল ফ্রেন্ড কে, যে সত্যি তোমাকে ভালোবাসবে….”

“আমাকে কে ভালোবাসবে? ক্রিমিনালের লেংড়া ছেলে” কটাক্ষের হাসি আকাশের মুখে…………….

“আকাশ প্লিজ, তুমি এসব বললে কিন্তু আমি ছেড়ে চলে যাবো তোমাকে……………………………..”

“তুমি কি আছো দৃষ্টি, যে ছেড়ে চলে যাবে?…….”

দৃষ্টি আর কথা বাড়ালো না, খানিকক্ষণ চুপ করে বসে রইলো, তারপর গলা টা পরিষ্কার করে বললো –

“অনির্বানের কাছে শুনলাম, এই সপ্তাহে জয়েন করেছো, শুনলাম কম্পানি ও নাকি টারমিনেশন লেটার ক্যানসেল করে আবার জয়েন করতে রিকোয়েস্ট করেছিল……………………………………………………………..”

হ্যাঁ HR যেদিন টারমিনেশন লেটার টা পাঠিয়েছিল, সেইদিনই বলেছিলো, আমার সাথে কোনো প্রব্লেম নেই কম্পানির, শুধু কোনো ক্রাইম রেকর্ড থাকলে ওরা রাখতে পারবেনা, তাই যদি কোনোদিন আমি বেরিয়ে আসতে পারি, তাহলে যেন আমি কল করে জানায় ওনাকে, আমি তাই কল করেছিলাম ওনাকে ছাড়া পেয়েই।

আর অনির্বান বলছিলো, Psychologist দেখাচ্ছ?

হ্যাঁ….

অনির্বান তো বললো রান্না বান্নাও সব একাই করছো আজকাল…..

হ্যাঁ, একটা কথা বলবো – অনির্বান কে কেন ফোন করো? আমাকে করতে পারতো?

কারণ আমার মনে হয়, তুমি কথা বলবেনা আমার সাথে, এতকিছুর পরে…………….তুমি কেন ফোন করোনি আমায়, ছাড়া পেয়ে ?

কেন কথা বলবনা আমি? দোষী কে শাস্তি দিয়েছো, নির্দোষ কে ছাড়াও পায়িয়ে দিয়েছো, তোমায় ফোন করিনি
কারণ আমার মনে হয়েছিল তুমি একজন ক্রিমিনালের ছেলের সাথে হয়তো আর যোগাযোগ রাখতে চাওনা তাই…………………

আকাশ……………..Just Shutup Okay?

আসতে দৃষ্টি, সবাই দেখছে……………………………………….

কফি শপ থেকে বেরিয়ে ওরা আবার হাঁটলো মহাত্মা গান্ধী পাঁচ মাথার মোড় অবধি –

দৃষ্টি একটা কথা বলবো? মাঝে মাঝে ইচ্ছে হলে, ডেকো কফি শপে…………………. আমি আসবো….

****************************************

আজ বুধবার, ঘড়ি তে ঠিক রাত দশটা…………………..
আকাশ অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে, ডিনার করতে বসেছে, হঠাৎ ফোন টা বেজে উঠলো – স্ক্রিনে দৃষ্টির নাম্বার…………… হাত টা কাঁপছে কেন কে জানে ?

হ্যালো দৃষ্টি……………………………..

হ্যালো আকাশ, কখন ফিরলে অফিস থেকে?

এই তো একটু আগে, সব কাজ আবার নতুন করে করছি তো এতদিন বাদে, তাই সকাল নটায় ঢুকে রাত নটায় বেড়োচ্ছি অফিস থেকে……………………..

আচ্ছা বুঝলাম, তো শনিবারেও ব্যস্ত থাকবে নাকি?

না, কেন বলতো……………………………কফি খেতে যাবে?

প্রিন্সেপ ঘাট…..ইকো পার্ক….ময়দান…..শুধু হাতে হাত রেখে , খালি পায়ে, ঘাসের ওপর হাঁটবো….বা দক্ষিনেশ্বর?…..দক্ষিণেশ্বরে পুজো শেষে….গঙ্গার ঘাটে একটা গিটার, এক কাপ কফি…… আর তুমি?

আধ ঘন্টা পর ফোন টা রেখে আকাশ বসে পড়লো সোফায়, সেই…… প্রথম দিন দৃষ্টির গলায় চেনা গানের লাইন গুলো বেজে উঠলো কানে –
‘হায় মাঝে হল ছাড়াছাড়ি, গেলেম কে কোথায়………………আবার দেখা যদি হলো সখা, প্রাণের মাঝে আয়’

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here