এক টুকরো মেঘ,সূচনা পর্ব
Write : Sabbir Ahmed
-চাচা এভাবে আর কতো?? দিন তো আর চলে না (শুভ)
-কেনো কি হয়েছে? (চাচা)
-পেপার একটু রাখেন তো, আমার কথা শোনোন
-কি হয়েছে বল?
-আর কত? অনেক বড় হয়েছি বয়স তো কম হলো না।
-তো কি হইছে?
-যা কামাই করি সেটা দিয়ে তো চলে না। আর বউ বাচ্চা হলে তাদের খাওয়াবো কি
-ওহহ বুঝেছি বিয়ে করার ইচ্ছে জেগেছে
-না সেটাও না
-তাহলে কি?
-নিজে একটা ব্যবসা করতে চাই তার জন্য কিছু টাকা লাগবে। গ্যারেজে কাজ করে জীবন পার করে দিতে পারবো না
-তুই কি আমার কাছ থেকে টাকা নিবি বলে ঠিক করেছিস?
-তাছাড়া টাকা কই পাবো?
-তোর নানুবাড়ি থেকে
-কি যে বলেন জীবনে বাবা-মা কেই দেখলাম না। আমার নানু বাড়ি কই কে জানে
-শোন তোর বাবা-মা তো পালিয়ে এখানে আসছিলো। তো তখন তোর নানুবাড়ি কোথায় সেটা আমি শুনছিলাম
-কোথায় সেটা?
-…(চাচা,একটা জায়গার নাম বলল, তবে সেটা শহর থেকে অনেক দূরে)
-আপনি যে কি বলেন না, ওখানে গেলে তারা আমাকে চিনবে না।
-একবার গিয়েই দেখ
-অযথা যাওয়া হবে
-আরে এতদিন তোরে কিছু বলিনাই কারণ তুই জোর করিস নাই। তুই যা ভালই হবে
-আমার নানার নাম কি?
-শওকত মুন্সী
-চাচা, নানাই বা বেঁচে আছে কি না? নাম বললে কেউ চিনবে কি না
-তারা ঐ গ্রামের দাপুটে লোক নাম বললে অবশ্যই চিনবে
-তাহলে কি যাবো
-যা ঘুরে আয়
-হ্যা ঘুরেই আসি, কাজ হলে হলো। না হলে শহরের বাইরে থেকে ঘুরে আসা যাবা। চাচা আমি তাহলে কাল সকালেই রওনা হই
-তোর যেমন সুবিধা
,,
শুভ কথা বলল আলী চাচার সাথে। এই আলী শুভর আপন চাচা না। তবে নয়তি আপন চাচার থেকেও বেশি কিছু বানিয়ে ফেলেছে। শুভর বাবা শুভর মা কে নিয়ে পালিয়ে এই শহরটাতে এসেছিলো। আলী চাচা তার বাড়িতে ঠাঁই দেন। এই বাড়িতে শুভর জন্ম হওয়ার প্রথম বছরে বাবা মারা যায়। আর ঠিক পরের বছরেই মা মারা যায়। শুভর দায়িত্ব সেই ছোট থেকে নিয়েছেন তিনি৷ শুভকে বেশি পড়াতে পারেননি কারণ তারও তেমন সামর্থ্য ছিলো। তারউপর ছিলো বউ এর চাপ আর নিজের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানো। দশম শ্রেণিতে উঠে শুভ চাচার দুঃখ টা বুঝতে পারে। নিজে থেকে লেখাপড়া বাদ দিয়ে কাজে মন দেয়৷
,,
শুভর বয়স এখন সাতাশ। আরেকটু বুদ্ধি আর অভিজ্ঞতা হওয়ার পর সে চাচ্ছে টাকা দিয়ে একটা ব্যাবসা দাঁড় করাতে। কিন্তু টাকা তো আর আলী চাচা দিতে পারবে না। আলী চাচার দুই ছেলে বিদেশে থাকে তারা শুধু খরচের টাকা পাঠায়। আরেকটা মেয়ে ছিলো তার অনেক আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। দুই বুড়ো-বুড়ির জীবন এখন মুখস্থ ছেলেমেয়ে টাকা দিচ্ছে সেটা খাচ্ছে। শুভ তার রোজগারের টাকা পুরোটাই চাচার হাতে দেয়। আর আজ হাতে দিতে দিতে উপরের কথা গুলো বলল সে।
,,
পরদিন সকাল বেলা শুভ রওনা হয় নানা-বাড়ির উদ্দেশ্যে। গাড়িতে যেতে যেতে বলে..
-আহারে কোথায় যে যাচ্ছি কে জানে। নিজের উপরেই মায়া হচ্ছে। আবার হারিয়ে না যাই।
পাশের ছিটে বসে থাকা লোকটি আড় চোখে শুভর দিকে তাকায়৷ লোকটি শুভকে প্রশ্ন করে বসলো..
-কিরে ভাই কই যাবেন? (লোকটি)
-বাস যেখানে থামবে সেখানে (শুভ)
-তাহলে ভয় পাচ্ছেন কেনো?
-বাস যদি হারিয়ে যায়
-পাগল নাকি?(লোকটি বিড়বিড় করে বলল)
-তুই পাগল তোর বাপ পাগল তোর চৌদ্দ গোষ্ঠীর লোক পাগল৷(শুভ মনে মনে বলল)
,,
গন্তব্যে বাস পৌঁছে গেলো। এখান থেকে গ্রামের মধ্যে যেতে হবে। আলী চাচা শুভকে যে গ্রামটার কথা বলেছিলো সেই গ্রামের নাম ধরে কিছু ভ্যানগাড়িওয়ালা কে জিজ্ঞেস করতে লাগলো। একটা ভ্যান এগিয়ে এসে বলল যে সেই গ্রামে যাবে। শুভ ভাড়া শুনে নিয়ে ভ্যানে চেপে বসলো।
,,
কিছুদূর যেতেই ভ্যানওয়ালা বকবক শুরু করলো..
-ভাই যাইবেন কই?
-যাবো তো শওকত মুন্সীর বাড়ি
-ওহহ তাইলে তো বাজারের কাছেই
-হুমমম
-তা ঐ বাড়িতে ক্যান যাইবেন?
-একটু কাজ আছে
-ওহহ আহ শওকত মুন্সী বাইঁচ্চা থাকলে গ্রামের অবস্থা একটু ভালো হতো। হে কইছিলো গ্রামের রাস্তা ডা পাঁকা বানাই দিবো
-….(শুভ চালকেট কথা শুনে বুঝলো তার নানা বেঁচে নেই)
,,
ভ্যান একদম সেই বাড়িটার সামনে থামলো। শুভ ভাড়া দিয়ে ভ্যান বিদায় করলো। ব্যাগ টা কাঁধে নিয়ে শুভ বাড়িটা দেখতে লাগলো। অনেক পুরোনো একটা দালান গ্রামের মাঝে দাঁড়িয়ে। বাড়িটা যে অনেক বড় একটা জায়গার উপরে দাঁড়িয়ে আছে সেটা বুঝতে বাকি রইলো না শুভর।
,,
বাড়ির শুরুতে একটা গেট রয়েছে তবে দারোয়ান নেই। শুভ ভেতরে প্রবেশ করলো। গেট থেকে দালান টা বেশ দূরে। মাঝখান দিয়ে একটা রাস্তা সোজা দালান পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে।
শুভ বুঝতে পারলো নানার বাবা নয়তো দাদা জমিদার বা অন্যকিছু ছিলো।
,,
শুভ রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। রাস্তার দুই পাশের জায়গাটায় অনেক গাছ আর কিছু ছোট ছোট ঘর আছে। সেগুলো কিসের ঘর শুভ সেটা আন্দাজ করতে পারে না। হাঁটতে হাঁটতে যখন সেই দালান আর কাছাকাছি পৌঁছে গেছে ঠিক তখনই একটা বয়স্ক লোক শুভর সামনাসামনি এসে দাঁড়ালো। তার হাতে একটা বড় লাঠি।
-কি চাই??(বয়স্ক লোকটি)
-আমি একটু বাড়ির ভেতরে যাবো(শুভ)
-কেনো? কি দরকার?
-ইয়ে মানে জমির ব্যাপারে
-আজ ভেতরে যাওয়া যাবে না।
-কেনো?
-বাড়িতে মেহমান এসেছেন
-তো আসুক আমি একটু যাই
-নিষেধ আছে আজ যাওয়া যাবে না
-তাহলে কেমন হলো
-কাল এসো
-আচ্ছা একটা কথা বলি?
-কি?
-আমি শওকত মুন্সীর নাতি
-…(লোকটি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো শুভর দিকে)
-…(শুভও মনে মনে ভাবছে লোকটা তো তাকে চিনবেই উল্টো আরও প্রশ্ন করে বসবে)
,,
কিন্তু শুভকে অবাক করে দিয়ে লোকটি শুভর হাত ধরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলো। বাড়ির ভেতরে বড় একটা উঠান সেটা পাকা করা।
অনেক লোক বাড়িতে কাজ করছে। একপাশে রান্না হচ্ছে অন্যপাশে বাচ্চাদের হৈচৈ।
,,
অপরিচিত মানুষ ভেতরে ঢুকতে দেওয়ায় বয়স্ক লোকটির দিকে একজন তেড়ে আসলো। লোকটি ভয়ে শুধু বলল..
-আপা মণি কে ডাকেন(লোকটি)
,,
কিছুক্ষণ পর সেই আপা মণির দেখা মিলল। সে দোতলা থেকে নিচে নামতেই বাড়ির ভেতরে থমথমে ভাব। বয়সটা বেশি না শুভর মতোই হবে। তবে তাকে এত মান্য করার কারণ শুভর মাথায় আসছে না৷
,,
উনি এসে শুভর দিকো একবার তাকালো আর একটা চেয়ারে বসলো। সাথে কিছু বয়স্ক লোক পাশে থাকা চেয়ার গুলোতে বসলো।
-কি হয়েছে বল এবার (একজন বলল)
-উনার সাথে বাইরে দেখা, উনি বলতেছেন শওকত মুন্সীর নাতি(শুভর পাশে থাকা বয়স্ক লোকটি বলল)
-এই ছেলে তোমার বাবার নাম কি?
-নানুবাড়িতে আসছি বেয়াদবি মনে না নিলে মায়ের নাম দিয়ে শুরু করি। মায়ের নাম আতিয়া বাবার নাম জহুরুল
,,
শুভ এই দুই নাম প্রকাশ করার সাথে সাথে কিছু লোক অবাক হয়ে শুভর দিকে তাকিয়ে আছে। সেই মেয়েটি যাকে সবাই মানে সে মাথা নিচের দিক দিয়ে আছে। তার পাশে বসা কিছু লোক চেয়ার রেখে উঠে কোনদিকে চলে গেলো তার কোনো হদিস নেই।
,,
এবার সেই মেয়েটি মুখ খুলল..
-এখানে এসে বসো (মেয়েটি)
,,
শুভ হাসিমুখেই মেয়েটির পাশের চেয়ারে বসলো।
-তোমার যে যার কাজ করো আমি ব্যাপার টা দেখছি (মেয়েটি)
-…(সবাই যার যার কাজে মন দিলো)
,,
এবার মেয়েটি জিজ্ঞেস করলো…
-ফুপু কই?
-উনারা নেই আমি ছোট থাকতেই মারা গিয়েছে
-আমি ফুপুর ছবি দেখেছি তুমি ঠিক তার মতোই দেখতে হয়েছো। তাই তোমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না।
-জিজ্ঞেস করতে হবে না আমি নিজে থেকেই সব বলছি শোনেন… (শুভ তার আলী চাচার কাছ থেকে বড় হওয়া থেকে এখানে আসা অব্দি যত কথা আছে বলল)
-হুমমম বুঝেছি। আমার পাশে যারা বসেছিলেন উনারা তোমার মামা হয়৷ আমি তোমার বড় মামার মেয়ে। আমার বাবা বছর তিনেক আগে মারা গিয়েছেন। এই বাড়ির সবকিছুর দেখাশোনা আমি তিনবছর হলো করি।
-আমার কয়টা মামা
-চারটা
-ওহহ তার মানে এখন তিনটা আছে?
-হুমমমম
-উনারা আমাকে দেখে উঠে গেলো কেনো?
-তারা ভেবেছে তোমার সাথে তোমার মা ও এসেছে। বোনের উপর তাদের রাগ আছে, ভাবছে তোমার সাথে তোমার মা ও আসছে মুখ দেখাবে না বা কথা বলবে না তাই উঠে গেছে । তারা তো জানে না তাদের বোন আর বেঁচে নেই।
-ওহহ উনারা হয়তো আমার সাথেও কথা বলবে না তাই না?
-আরে নাহহ তোমার উপর তো রাগ নেই তোমার সাথে কথা বলবে। বাড়ির সবাই তোমাকে দেখে অনেক খুশি হয়েছে
-মিথ্যা বলেন কেনো? আমি কাউকে হাসতে দেখি নি। এই যে দেখেন কেউ হাসতেছে না
-এখানে যারা আছে তারা আমাদের বাড়ির কেউ না। সবাই দোতলায় আছে। এখন নিশ্চয়ই সবাই খুশিতে কান্না করে দিয়েছে
-কেনো?
-তুমি আসছো তাই
-আপনারা কি আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন?
-না আমরা এই বাড়ির মেয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। চলো সবার সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেই।
-আবার আমার উপর মামারা রাগ দেখাবে না তো?
-আরে নাহহ কি যে বলো
চলবে