এক টুকরো মেঘ,12 END PART
Write : Sabbir Ahmed
-আমি তো মিথ্যা অভিনয় করে কিছুটা আদায় করে তুমি একটু মন ভরে দাও, আমি আমার ভালবাসার সিঁকেয় তুলে রাখবো (ফারিহা)
-এক টুকরো মেঘ তো দিয়েই রেখেছি আর কি লাগবে? (শুভ)
-হুহহ আরও কিছু লাগবে
-আর কি লাগবে?
-তোমার বুকের মধ্যে ঘুমাবো, সেখানে শুয়ে থেকে হাজার হাজার গল্প শুনবো আর বলব
-আপনি তো জানেন এখন সেই সঠিক সময় না আগে সম্পর্ক টা হোক তারপর
-কিসের সম্পর্ক?
-স্বামী-স্ত্রী
-ওহহ খুব ভালো বলেছেন, এখন এখানে আপনি শুয়ে পড়েন, আমি মায়ের কাছে ঘুমাবো
-আচ্ছা
-দেখ দেখ আমি বলাতেই আচ্ছা বলে, একটু থাকতেও বলে না
-ঘুমের সময় আপনি থেকে কি করবেন?
-তোমার সাথে থাকতে ইচ্ছে করে, আর কথা বলতে ইচ্ছে করে
-সেই কখন থেকে তো আপনার সাথেই আছি
-আরও থাকতে হবে
-এই আমি শুয়ে পড়লাম দরজা লাগিয়ে চলে যান
-হুমমম গুড নাইট
,,
পরদিন সকালে শুভ তার মামার সাথে হসপিটালে দেখা করে, সাথে ফারিহা ছিলো। সেখান থেকে বের হয়ে এখন শুভর বিদায়ের পালা..
-আজ শুক্রবার তোমার তো কাজ নেই আজ থেকে যাও (ফারিহা)
-নাহহ চাচা কে বলে আসিনি (শুভ)
-হুমম
-আপনার ফোন নাম্বার টা দেন তো আমি কল করবে আপনাকে
,,
সেই সময়ে ফারিহার মা সহ বাড়ির আরও কিছু লোক ফারিহা আর শুভর সামনে আসলে।
-কোথায় যাচ্ছো তুমি?? (ফারিহার মা)
-মামী আমি বাসায় যাচ্ছি (শুভ)
-তোমার কোথাও যেতে হবে না,
-আমি চাচা কে বলে আসিনি
-তোমার চাচার বাড়ির ঠিকানা দিয়ো, লোক পাঠিয়ে তাকে আনার ব্যবস্থা করবো
-মা ও এখানে থাকবে কি জন্য?
-আমাদের বাড়ির মেয়ের জামাই অন্য বাড়িতে কেনো থাকবে? ফারিহা তুই ওরে নিয়ে বাড়িতে যা আমি তোর চাচা কে নিয়ে আসছি
,,
সকালে বাড়ির সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় দুজনের বিয়ে দিবে। যেখানে বাড়ির যেকোনো ইস্যু তে ফারিহাকে ছাড়া সিদ্ধান্ত নেয় না, সেখানে আজ ফারিহা জানতেই পারলো না এত তাড়াতাড়ি তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
,,
ফারিহা শুভ কে নিয়ে বের হয় বাড়ির উদ্দেশ্যে। আজ আর ভ্যানে না পায়ে হেঁটে রওনা হয়েছে দুজন।
-আহা কি যে খুশি লাগছে (ফারিহা)
-আপনি খুশিতে আছেন, আমার তো ভয় করছে, চাচা কি বলবে না বলবে
-আমার বাড়ির লোকজন সবকিছু ম্যানেজ করে নিবে তোমার টেনশন করতে হবে না
-আরও চিন্তা আছে, বিয়ের পর আপনাকে খাওয়াবো কি?
-ফুপির ভাগের জমি নিয়ে তুমি আম লিচুর বাগান করবা, আর তোমার ভাগে পুকুর ও থাকবে সেখানে মাছ চাষ করবে
-কিন্তু..
-আবার কি?
-আপনি তো টিচার যখন তখন আপনার ট্রান্সফার হতে পারে, তখন তো আপনি দূরে থাকবেন
-হ্যা সাথে তুমিও থাকবে
-তাহলে জমি, পুকুর কে দেখবে
-বুদ্ধু কোথাকার, এসব দেখতে লোক রেখে দিবো
-হ্যাঁ ঠিক বলেছেন
-আচ্ছা তোমার খুশি লাগছে না
-খুশির থেকে বেশি লজ্জা পাচ্ছি
-কেনো কেনো?
-উনারা সামনে এসে বলল এসব কথা কেমন যেন লাগলো আমার।
-হুমম আমি তো তোমার দিকে খেয়াল করেছিলাম কেমন যেন মুখ নিচের দিকে দিয়ে ছিলে..
-হুমম কারও মুখের দিকে তাকানোর সাহস ছিলো না
-হুমম এখন দেখি উনারা কি করে আমাদের নিয়ে
-হুমম
,,
বাড়িতে আসার কিছুক্ষণ পরই আর বাকিস সবাই হসপিটাল থেকে চলে আসে। ফারিহা আর শুভকে নিয়ে একসাথে সবাই আলোচনায় বসে। একজনকে পাঠানো হয় শুভর সেই চাচার বাসায় তাকে নিয়ে আসতে। আর এখানে বসে বিয়ের প্ল্যান করছে সবাই।
,,
শুভ আর ফারিহার একটু আলাদা সময় পার করা তাই তারা সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ছাদে এসে কথা বলছে দুজন৷
-আমাদের বিয়ের কথাটা ইরাকে জানিয়ে দেই নাকি বলো??(ফারিহা)
-হুমম জানিয়ে দেন (শুভ)
,,
ফারিহা ইরাকে কল করলো..
-আপু কেমন আছো? (ওপাশ থেকে ইরা)
-আলহামদুলিল্লাহ, তুই কেমন আছিস?? (ফারিহা)
-ভালো,
-একটা সু-খবর আছে রে
-কি সু-খবর?
-তোর শুভ ভাই তো এখন তোর দুলাভাই হয়ে গেছে
-বলো কি! তুমি তাহারে পটিয়ে ফেলেছো
-এই কথা সাবধানে বলবি,
-সরি সরি আপু একটু মজা করলাম
-হুমম এই নে তোর দুলাভাই এর সাথে কথা বল
-হুমম দাও
,,
শুভ ফোন হাতে নিয়ে হ্যালো বলা মাত্রই…..
-কামরুইল্ল্যা হে হে কি অবস্থা?? (ইরা)
-ভালো, আপনার কি অবস্থা? (শুভ)
-আমার তো সবসময় বিন্দাস
-বাড়ি আসবেন কবে?
-আরে মাত্রই তো হোস্টেলে আসলাম বাড়ি যেতে দেড়ি হবে। তাহলে দুলাভাই আমার বোন কে আপনি কিভাবে কি করলেন?
,,
ইরার কথায় লজ্জা পেয়ে শুভ ফোনটা ফারিহার হাতপ দিয়ে বলল তার কথা শেষ৷ ওপাশ থেকে ইরা হ্যালো হ্যালো করেই চলছে৷ ফারিহা ফোন কানে ধরতেই..
-হ্যা বল(ফারিহা)
-আপু কামরুইল্ল্যা কই? (শুভ)
-এই সাবধান আমার জিনিস যেন তেন নামে ডাকলে তোর খবর আছে
-আরে আপু আমার দুলাভাই তো
-হোক তোর দুলাভাই, ও আমার কাছে অন্য রকম কিছু এরকম নামে ডাকবি না
-হুহহ আচ্ছা ঠিক আছে।
-তুই কিছু বলছিস ওরে?
-না আমি কি বলব?
-আচ্ছা ফোন রাখ পরে কথা হবে..
,,
বিকেলের দিকে শুভর চাচা এসে হাজির হলো এই বাড়িতা। উনিও সবার সাথে পরিচিত হলেন৷ এখানে আসার পর জানতে পারলেন ফারিহা আর শুভর বিয়ের ব্যাপারে৷ তিনি তার মতামত দিলেন যে “এটা অনেক ভালো খবর” এ ব্যাপারে তার কোনো কথা নেই।
,,
চাচা ফারিহার সাথে আলাদা কথা বলতে বাড়ির বাইরে নিয়ে গেলো..
-মা তোমাকে কিছু কথা বলি শোনো (চাচা)
-জ্বি বলেন (ফারিহা)
-ছেলেটা তো এখন তোমার কাছে থাকবে, ওর কিছু কথা তোমাকে জানানো দরকার। ছেলেটা অনেকটাই গম্ভীর প্রকৃতির, কোনো কারণে যদি কষ্ট পায় সেটা নিজের মধ্যে জমিয়ে রাখে। তোমাকে এসব বলছি কারন তুমি একটু এসব দিকে খেয়াল রাখবে। ও সহজে রাগ করে না, আর সত্যি বলতে ওর রাগ আমরা কেউ দেখিনি
-হ্যা আমি একটু একটু বুঝতে পেরেছি
,,
আরও অনেক কথা বলে চাচা বিদায় নিলো। তাকে নাকি আজকেই ফিরতে হবে তাই দেড়ি করলো না৷ শুভ চাচার সাথেই চলে যেতে চাইছিলো কিন্তু উনি সাথে নেন নি।
,,
উনাকে বিদায় দিয়ে এসে মন খারাপ করে বাড়ির মধ্যে আসে।
-চাচা চলে গেছে তাই মন খারাপ? (ফারিহা)
-নাহহ আমি ঠিক আছি, মন খারাপ নেই (শুভ)
-আমার কাছে মিথ্যে বলা?
-না সত্যি বলছি
-চাচা তো বলেই গেলেন, তুমি কষ্টের কথা কাউকে বলতে চাও না, নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখো
-কই না তো
-সেই জন্য তো তোমার আজ এই অবস্থা
-কি অবস্থা?
-দেখলে মনে হয় কোনো কারণে সবসময় তোমার মন খারাপ থাকে
-না গো আমি সত্যি বলছি আমার মন খারাপ না
-হুমমম চলো তোমার রুম দেখিয়ে দেই,
-আমার জন্য রুম!
-এখন থেকে তো এই বাড়িতেই থাকতে হবে
-খুব একা একা লাগবে
-একা লাগবে কেনো? আমি তো আছি
-চাচা তো নেই
-এটাই শুনতে চাইছিলাম, চাচার জন্য কষ্ট পাচ্ছো। তার কাছে থাকতে পারবে এই জন্য তোমার খারাপ লাগছে
-…..(শুভ চুপ)
-শোনো চান্দু আমি বুঝি, আমি তোমাকে অনেক বুঝি। আমার কাছে যদি না থাকো তো চলো এগিয়ে দিয়ে আসি
-উহুমমম
-না চলো তোমার থাকতে হবে না
-না আমি থাকবো এখানে
-কেনো থাকবে?? তোমার তো এখানে কেউ নেই
-তুমি তো আছে
-এহমম এহমম শরীরে একটু ভাব আসছে আমার, আমার জন্য কেউ একজন এ বাড়িতে থাকতে চায়, আর সে আমাকে তুমি করে বলছে৷
-….(শুভ চুপ)
-আসো বৎস তোমার রুম দেখিয়ে দেই
,,
শুভর সাথে মজা করতে করতে নতুন একটা রুম দেখিয়ে দিলো শুভর জন্য।
-আচ্ছা আমার জন্য আলাদা রুম কেনো? আপনার কাছে থাকলেই তো হয়(শুভ)
-এহহহ শখ কতো, আমার কাছে থাকা হবে না (ফারিহা)
-আপনি তো বললেন যে আমার কাছে থাকবেন
-যা বলেছি ভুলে যান
-আমি সবাইকে বলে দিবো
-এইই নাহহহ (ফারিহা এসে শুভর মুখ চেপে ধরলো)
-তাহলে আপনার কাছে থাকবো
-এ বায়না কোথা থেকে শিখলে?
-আপনার কাছ থেকে শিখেছি, আপনি তো এভাবেই বায়না করেন
-এই এই সবকিছুতে আমাকে ফলো করা যাবে না৷ আমার যা ইচ্ছা আমি করবো, তুমি করতে পারবে না
-আমার সময়ে আইন ভিন্ন কেনো??
-তুমি টাই যে আমার
-আমার জন্য একটু সুযোগ রাখবেন না?
-হুমম যদি আমার মন শক্ত থেকে একটু নরম হয় তাহলে সুযোগ দিতে পারি
-হুমম একটু দিলেই হবে
-আচ্ছা সুযোগ দিলে তুমি কি করবে?
-আপনাকে ভালোবাসবো
-কেনো এখন বাসো না?
-বাসি তখন বুকের মধ্যে নিয়ে বাসবো।
,,
ফারিহা শুভকে জড়িয়ে ধরে বলল…..
-পাগল এই যে তোমার বুকের মধ্যে আসছি এখন ভালোবাসো(ফারিহা)
-হুমম আপনার কি চাই বলেন (শুভ)
-কেনো যানো না তুমি?
-না জানি না
-ঐ যে এক টুকরো মেঘ চাই…….
সমাপ্ত