এক টুকরো মেঘ,Part : 11

0
4596

এক টুকরো মেঘ,Part : 11
Write : Sabbir Ahmed

-এখন??(শুভ)
-হুমমম(ফারিহা)
-এগুলোর কথা শুনলেই আমার হাত পা কাঁপতে শুরু করে..
-যত কথাই বলো না কেনো কাজ হবে না, এই আমি চোখ বন্ধ করলাম শুরু করো
,,
ফারিহা চোখ বন্ধ করে বসে আছে। শুভ প্রথমে ফারিহার গালে হাত রাখবে, কিন্তু সে সাহস কোথায়? হাত যে আপনা আপনি আটকে গেছে। ফারিহা বার বার হুমম হুমম বলছে।
শুভ সাহস করে ডান হাতটা ফারিহার বাম গালে রাখতেই ফারিহার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি দেখা গেলো।
,,
তারপর শুভ তার দ্বিতীয় হাতটা অপর গালে রাখলো। গালের সাথে লাগনো হাঁত কাঁপছে, তা দেখে ফারিহা বলল..
-এই ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আমি যা যা করেছিলাম তুমি সেটাই করো (ফারিহা)
-আচ্ছা (শুভ)
,,
শুভ ফারিহার কপালে আর গালে একটা করে চুমু খেলো।
-শোনো হাত সরাবে না এভাবেই থাকো (ফারিহা)
-হুমমমম (শুভ)
-এখন শুনি কেমন লেগেছে তোমার?
-…(শুভ কিছু না বলে সে ও ফারিহার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে)
-বলো শুনি তোমার কেমন লাগছে?
-আমি বলে বুঝাতে পারবো না
-অনেক ভালো?
-অনেক মানে অনেক
-এই যে গালে হাত দিয়ে আছো, এই অবস্থায় থাকতে মনে মনে আমাকে নিয়ে কি ভাবছো?
-আপনার গাল অনেক বেশি নরম, আর…
-আর কি?
-কপালে চুমু খাওয়ার সময় আপনার চুল থেকে সুঘ্রাণ আসছিল
-হুমমম আরও একবার সুঘ্রাণ টা নিবে?
-না না আপনি তো আমরই অন্য সময় নিবো
-এহহহ কে বলেছে আমি তোমার? আমি কারও না আমি একাই
-ওকে তাহলে আমি চলে যাই
-এই এই ঠ্যাঙ ভেঙে দিবো একদম বসো এখানে
-আচ্ছা আমি এখন সত্যি সত্যি চলে যাই, আপনাকে ওটা দিয়েই দিলাম
-উহুমম কোথাও যেতে দিবো না, তুমি আমাকে নিয়ে এভাবে বসে থাকবে, বৃষ্টি ছাড়লে ছাদে গিয়ে কথা বলব। তারপর রুমে এসে তোমার বুকে ঘুমাবো
-ম্যাম আমাদের এখানো বিয়ে হয়নি
-আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসলে অন্য জায়গায় ঘুমাবে, তার আগ পর্যন্ত তোমার কাছেই থাকবো
-আপনার খুব ইচ্ছে?
-হুমমম খুব
-ওকে আপনি যা বলবেন তাই করবো
-ইয়েএএএএ
,,
ফারিহা আর শুভর সব প্ল্যান এক কাহিনীতে ভেস্তে গেলো। ছোট মামা অসুস্থ হয়ে পড়েছে জরুরি ভাবে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
তখনও বৃষ্টি থামেনি। বাড়িতে এত লোক কেউ কিছু করছে না। শুভ আর নয়ন ভাই মিলে মামাকে ভ্যানে করে হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা হয়৷ তখনও ঝুম বৃষ্টি।
,,
একটু দূরে গ্রামের হসপিটাল, মামাকে দ্রুত সেখানে ভর্তি করিয়ে নেয়। শুভ ভিজে একদম চুপসে গেছে, মামা আর নয়ন ভাই ছাতার নিচে ছিলো। কিছুসময় পর বাড়ির লোকজন গুলো এসে হাজির। ছোট মামার বউ কান্না করছে, শুভ তার মামী কে গিয়ে বুঝিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করলো।
,,
ফারিহা হসপিটালের ডক্টর এর সাথে কথা বলে জানতে পারলো প্রেসার হাই তবে এখন স্বাভাবিক হয়ে আসছে৷ বৈরী পরিবেশ থাকায় রাতে মামা কে আর ছাড়লো না৷ কিছু লোক সেখানে থাকলো আর বাকি সবাই বাড়িতে চলে এলো, সাথে শুভ আর ফারিহা ও চলে এলো।
,,
বাড়িতে এসে সবাই একসাথে বসে আলাপ আলোচনা করছে। ঘটনা টা কি হয়েছিলো? দু-একজন শুভর প্রশংসাও করলো সাথে নয়ন এর।
,,
অনেক কথা বার্তা হওয়ার পর যে যার যার রুমে গেলো। শুভ তো ফারিহার পিছু পিছু..
-আচ্ছা আমি কোথায় ঘুমাবো? (শুভ)
-কিসের ঘুম? যেসব প্ল্যান করেছিলাম সেগুলো করার পর ঘুম ওকে? (ফারিহা)
-অনেক রাত হয়েছে কিন্তু?
-তো কি হয়েছে? রাতে জেগে থাকবে দিনে ঘুমাবে
-কাল সকাল সকাল আমার ফিরতে হবে
-সে পরে দেখা যাবে, তুমি যদি আমার কথা না শুনো আমি মন খারাপ করে বসে থাকবো
-আচ্ছা আপনি যা বলবেন
-হুমম ছাদে চলো
,,
দুজন ছাদে আসলো, ছাদের পরিবেশ টা এখন বেশ ঠান্ডা। আকাশ এখন অনেকটাই পরিষ্কার, এক কোণে শুধু হালকা বিদ্যুৎ এর ঝলকানি দেখা যাচ্ছে। দূরে কোথাও হয়তো বৃষ্টি হচ্ছে।
-দুজন কি এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো? (ফারিহা)
-না চলুন কথা বলি (শুভ)
-কি নিয়ে কথা বলা যায় বলো তো
-আকাশ নিয়ে বলি?
-হুমম শুরু করো, দাঁড়াও দাঁড়াও একটা কথা বলে নেই, বিয়ের পর আমি এভাবে সময় চাইবো ঠিক এভাবেই আমাকে সময় দিতে হবে
-আচ্ছা
-এখন তো আচ্ছা আচ্ছা করেই যাচ্ছো পরে যদি কথার একটু হেরফের হয় তোমার বারোটা বাজাবো
-আশা রাখি হবে না
-হুমমমম
-এবার একটু আকাশের দিকে তাকান। বৃষ্টির পর অনেকটা পরিষ্কার হয়ে গেছে, পুরো অক্টোবরের আকাশের মতো একটু ধূলিকণা নেই, আলো দূষণ নেই, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির অনেক তারাও দেখা যাচ্ছে তাই না?
-এই এই তুমি এগুলো জানলে কিভাবে??
-আমার পেপার পড়ার অভ্যাস আছে, বই তো আর পড়া হয়না পেপার টা নিয়মিত পড়ি সেখান থেকেই শিখেছি৷ সেখানে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির পৃষ্ঠা টা মন দিয়ে পড়ি
-বাহহ দারুণ তো
-আচ্ছা আপনি তো অনেক কিছু জানেন, আমি তাহলে একটা প্রশ্ন করি
-করো
-বিজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন করবো না, প্রশ্ন টা একটু ভিন্ন। ভালোবাসা কোথা থেকে আসে?
-আমার ভালবাসা আমার হারানো ফুপির কাছ থেকে হাসছে (কথাটা বলে ফারিহা হেসে উঠলো)
-আপনি না! সত্যি করে বলেন
-সত্যি তো বললাম
-উহুমমম শোনেন ভালবাসা আকাশ থেকেই আসে
-তাই? তোমাকে কে বলল
-বোঝা যায়,
-…(ফারিহা কিছু বলছে এক দৃষ্টিতে শুভর দিকে তাকিয়ে আছে)
-ওভাবে তাকিয়ে কি দেখেন?
-আবার পাগল যে আমার সাথে বক বক করতে শিখেছে সেটা দেখছি
-তাহলে কি চুপ থাকবো?
-একদম নাহহ, তোমার যত কথা আমার সাথে বলবে
-সব কথাই?
-হ্যাঁ সব কথা
-একটু মজা করি?
-এ জন্য আবার অনুমতি নিতে হবে? কি মজা করবে করো
-আপনার ঠোঁট টা অনেক সুন্দর,
-….(ফারিহা ভ্রু কুঁচকে শুভকে দেখছে)
-….(শুভ ও ভয়ে শেষ)
-আমি জানি না তুমি এই অন্ধকারে আমার ঠোঁট কিভাবে দেখলে
-আগে তো দেখেছি
-এটা কেনো খেয়াল করেছো?
-চোখ পরেছে, ইচ্ছে করে তাকায়নি
-তুমি শয়তান আছো
-উহুমমম আপনি দেখতে একটু বেশি সুন্দরী তো তাই..
-যাও তোমার সাথে কথা নেই
-নাহহ এমন করে না, আমি তো বলেই নিলাম একটু মজা করবো
-তাই বলে এটা নিয়ে কথা বলবা?
-ওটা তো আমার-ই
-আমি কবে বিক্রি করেছি আপনার কাছে হুমম?
-বিক্রি তো করেননি এমনি দিয়েছেন
-কিহহ! আমি এমনি দিয়েছি?
-হ্যা এমনিই তো দিয়েছেন
-হা হা হা তুমি এত সিরিয়াস হচ্ছো কেন? এত ভয়ে ভয়ে বলতে হবে না, তুমি মজা করার কথা বললে তাই আমিও একটু মজা করলাম
-হুহহহ আপনি যে কি না
-তোমার বউ
-হ্যা কিন্তু অনেক প্যারা দেন
-তাই না? রুমে চলো প্যারা কাকে বলে দেখাচ্ছি,
দুজন রুমে আসলো, ফারিহা দরজা বন্ধ করে শুভকে বিছানায় বসলো। রুমে শুধু একটু মোম জ্বলছে, সেটাতে তেমন আলো নেই।
,,
এদিকে ফারিহার মজা করার আবেগ টাও অনেক বেড়ে গেছে..
-তখন কি বললে আমাকে? আমার ঠোঁট তোমার পছন্দ, (ফারিহা)
-আমি পছন্দের কথা বলিনি, আমি বলেছি সুন্দর (শুভ)
-কেনো তুই আমার ঠোঁট পছন্দ করবি না? আমার সবকিছু তোর ভালো লাগতে হবে
-না না পছন্দ তো
-একটু আগে যে মানা করলি
-ওটা তো ভয়ে
-আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না আমার রাগ উঠেছে, আমার যেটা নিয়ে তুই প্রশংসা করেছিস সেখানে আদর দিতে হবে
-কিভাবে?
-তোর ঠোঁট দিয়ে
-না না এটা করা ঠিক হবে না
-তুই বললি কেন? তুই কথা উঠালি কেন? দিতেই হবে না হলো ছাড়বো না
-কথাই তো বলেছি, আর তো কিছু করিনি
-আমি জানি না, যেটা বলেছি সেটা কর
,,
ফারিহার জোরাজুরিতে শুভ কোনো রকম তার ঠোঁট টা নিয়ে ফারিহার ঠোঁটে হালকা স্পর্শ করে..
-এটা কি হলো? (ফারিহা)
-অনেক হয়েছে আর না (শুভ)
,,
ফারিহা শুভর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল
-আমি তো মিথ্যা অভিনয় করে কিছুটা আদায় করে নিলাম। তুমি একটু মন ভরে দাও, আমি আমার ভালবাসার সিঁকেয় তুলে রাখবো… (ফারিহা)

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here